23-10-2022, 08:28 PM
গল্প - সেই রাত্রি
লেখক ও ছবি - বাবান
ভৌতিক কিছু লেখার ইচ্ছে তো ছিলো। তার ওপর পাঠক বন্ধুদের ইচ্ছেও ছিল আরেকটা কিছু লিখি। তাই এই ছোট্ট গল্পটা লিখলাম। ভূত চতুর্দশী স্পেশাল বলাই যায়।
তাহলে এবার কে বলবে? অতনু? তুই বল নাকি? তুই তো বলেছিলি তোর মামার সাথে কি যেন একটা হয়েছিল না? ওটাই বল।
কার্তিক দার কথা শুনে অতনু একটু সোজা হয়ে বসলো। তারপরে চাদরটা একবার খুলে পুনরায় ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলো। ডিসেম্বরের ২৭। শীত একেবারে জাঁকিয়ে পড়েছে। পাড়ার আমরা সবাই আমাদের আড্ডা স্থলে এসে জমা হয়েছি। একবার চায়ের কাপে থুড়ি কফির কাপে তুফান তোলা হয়ে গেছে। আবারো তোলা হবে কিন্তু তার আগেই হটাৎ কার্তিকদা প্রস্তাব রাখলো আজ নাকি আড্ডার বিষয় হবে ভুত! তবে তার অস্তিত্ব আছে কি নেই ও বিজ্ঞান সমাজ ভুত নিয়ে কি ভাবে এসব মহান তাত্ত্বিক জ্ঞানের আলোচনার মধ্যে না গিয়ে সরাসরি দারুন ভুতের গল্প হয়ে যাক। নানা.... গল্প নয়,একেবারে সত্য ঘটনা। এখানে বলে রাখি এই প্রস্তাব উঠতে আমিই সবার আগে আমার অফিস কলিগ সুভাষ দার থেকে শোনা ওনার ঘটনাটা সবাইকে বলি। বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট হবার কারণে অন্যের বাড়িতে সাময়িক ভাড়া থাকতে গিয়ে সে যে কি কি সহ্য করতে হয়েছিল সেটাই। এমনকি আমিও একবার বেড়াতে গিয়ে হয়তো কিছু অনুভব করেছিলাম। সেই পায়ের আওয়াজ।এখনো সুভাষ দা রা ওই বাড়িতেই আছে আর দিব্বি আছে। মাঝে মাঝে একটু আধটু সমস্যা হলেও আগের থেকে অনেকটা কমেছে।
অতনু সোজা হয়ে বসতেই আমরাও নিজেদের প্রস্তুত করলাম ভৌতিক কিছুর সাক্ষী হবার জন্য। আমাদের মধ্যে অসীম খালি একটু যা ভীতু। তাই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠলেই সে একটু বাঁধা দেবার চেষ্টা করে, কিন্তু এইবার দেখলাম তার ভুরু কুচকোলেও বাঁধা দিলোনা। একটা শোনার পর আরেকটা শোনার বোধহয় তারও আজ ইচ্ছে জেগেছে। বাঙালী বলে কথা..... ভুত কে নিজের থেকে আলাদা করে রাখা যায় নাকি? আমি কৌস্তভকে ধাক্কা দিয়ে অসীমকে দেখালাম। সেও ব্যাপারটা বুঝে মুচকি হাসলো। দরজা জানলা সব বন্ধ। তাও যেন কোথা থেকে শীতল বাতাস ঢুকে আমাদের হালকা কাঁপিয়ে তুলছে। এই সুখের মজাই আলাদা। যাইহোক আমরা মনোযোগ দিলাম অতনুর ঘটনায়। সে বলতে শুরু করলো -
আমার বড়ো মামার সাথে বেশ কয়েকটা ভৌতিক ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে একটা তোদের বলেওছিলাম। মনে আছে নিশ্চই তোদের ওই মামার ওই মাছ ধরার গল্পটা। সে এক কান্ড হয়েছিল বটে। দেখে কিনা একটা উলঙ্গ বাচ্চা মামার পিছু পিছু আসছে। উফফফ! তবে আজ যে ঘটনাটার কথা বলবো সেটা ঘটেছিলো আমার ছোট মামার সাথে। তা প্রায় ১৭ বছর হয়ে গেলো। ঘটনাটা যখন মামা আমায় বলে তখন আমিও বেশ একটু ভয় পেয়েছিলাম। যদিও আহামরি ভয়ঙ্কর কিছু নয়। তবু কেমন যেন গায়ে কাঁটা দেবার মতন ক্রিপি একটা ব্যাপার আছে। শোন তাহলে।
আমার মামার এক বন্ধু তার নিজের মামার বাড়িতে কদিন কাটিয়ে যাবার জন্য মামাকে আর তার অন্য বন্ধুদের ডাকে। সবাই কলেজ ফ্রেন্ড ওরা। অনেকদিন একসাথে ঘুরতে বেরোনো হয়না তাদের। তাই ওই সুযোগ পেয়ে ছোট মামাদেরও ডেকে নেন তিনি। সেখানে তার এক মামা আর তার স্ত্রী সন্তান ছাড়া কেউই থাকেনা। আরেক মামা ছিলেন, তিনি নাকি কম বয়সেই মারা জান আর দাদু দিদিমাও অনেকদিন আগেই চলে গেছেন। তাই তিনতলা বাড়িটার প্রায় পুরোটাই কেমন ফাঁকা থাকে। মাঝে একবার একতলা ভাড়াও দিয়েছিলো কিন্তু তারাও একসময় বিদায় নেয়। তারপরে থেকে আর ভাড়া দেয়নি। তাই একবার ভাগ্নেকে ডেকে পাঠান সেই মামা। বলে এসে ঘুরে যেতে। অনেকদিন নাকি দেখা হয়নি এইসব আরকি। তা সেই ডাক পেয়ে উনি মানে আমার মামার বন্ধু আমার ছোট মামাকে আমন্ত্রণ জানান ওনার সাথে ঘুরতে যেতে। মামা আর আরেকজন বন্ধু যায় সেই বন্ধুর বাড়ি। ওহ! মামার ওই বন্ধুর নামটাই বলা হলোনা,ওনার নাম হলো রণজয়। আমি নিজেও ওনাকে দেখেছিলাম মামার ছেলের জন্মদিনে একবার এসেছিলো। বেশ বলিষ্ঠ চেহারার আর বেশ মজার মানুষ। তো.....এর আগেও কয়েকবার ওই বন্ধুটি মামাকে বলেছিলেন ঘুরতে যেতে কিন্তু মামার ব্যাবসার তখন শুরুর দিকে। তাই যাওয়া হয়নি। এইবারে একটা সুযোগ পেয়ে নিজের হাতে দুতিন দিন মতো সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মামা। সকালে বেরোন আর দুপুরের আগেই পৌঁছেও জান। একটু ভেতরের দিকে ওনার ওই বন্ধুর মামার বাড়িটা। এটা আমি ***** এর দিকের ঘটনা বলছি। অতটাও যেন শহুরে বাতাস লাগেনি তখনও ওদিকে। মামা বলেছিলো যত ওরা এগোচ্ছিলো ততো যেন আধুনিকতার জগৎ থেকে বেরিয়ে চারিপাশে লম্বা লম্বা নারকেল তাল আর সবরকম গাছ আর ধান ভরা জমি দেখতে পাচ্ছিলেন। আহা এসব দৃশ্য দেখার মধ্যেও যেন অদ্ভুত ভালোলাগা আছে। এখন তো যেদিকে তাকাও সবুজের বদলে উঁচু নিচু ফ্ল্যাটের জঙ্গল। মামা আর তার সঙ্গে আরেক বন্ধু এবং রণজয় মামা.... আমি মামা হিসেবেই সম্বোধন করছি ওনাকে.... হ্যা তো ওরা তিনজন দুপুরের আগেই গিয়ে পৌঁছন ওই বাড়িতে। প্রথমে ট্রেন, সেখান থেকে নেমে দুটো রিকশা। মামারা পৌছতেই দেখে দরজা খুলে হাসিমুখে বেড়িয়ে আসছেন রণজয় মামার মামাবাবু,মামী আর ছেলে। ওরা বোধহয় জানলা দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন মামাদের। ভাড়া মিটিয়ে নেমে সবাই একে একে গিয়ে প্রণাম করে ওনাদের। ওনার নাম বোধহয় উদয় না কি যেন ছিল যাকগে তো তিনি মামাদের সকলকে নিয়ে ভেতরে আসেন। প্রথমে একতলাতেই বসার আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু মামাবাবুরা নিজেরা থাকেন দোতলাতে আর তিনতলা ফাঁকাই থাকে। সত্যিই বেশ বড়ো বাড়িটা। পুরানো দিনের বলে ঘরের জানলা গুলো কেমন ছোট ছোট কিন্তু এক একটা ঘর নাকি বেশ বড়ো। তো.......
এর মাঝেই হটাৎ অতনুকে থামিয়ে অসীম হটাৎ বলে উঠলো - ইয়ে মানে এ... এক মিনিট ভাই। তুই বললি ওতো বড়ো বাড়ি তারওপর ফাঁকাই থাকে একতলা আর তিনতলা। তার ওপর আবার ওনার এক মামা মানে ওই বাড়ির ছেলে কম বয়সে মারা গেছিলেন....... আবার বললি ভাড়াটেরাও বেশিদিন থাকেনি......তা ঐবাড়িটাতেই কি......?
আমাদের অসীম বাবুর প্রশ্ন শুনে অতনু হেসে বললো - আরেবাবা নানা! ফাঁকা ঘর বাড়ি হলেই কি সেটা ভুতুড়ে হয়ে যায় নাকি? এটা একদম ভুল কথা। আমাদের একটা মাইন্ড সেট হয়ে গেছে যে ফাঁকা বাড়ি বা পরিত্যাক্ত বাড়ি মানেই নির্ঘাত সেখানে ভুত থাকবে। ওতো সহজ নয় ব্যাপারটা। ওই বাড়ির সাথে কোনো অতৃপ্ত শক্তির একপ্রকার আকর্ষণ বা টান থাকার প্রয়োজন। আরেকটা থিওরি বলে যে এসব ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হওয়া প্রয়োজন। তার আগে পর্যন্ত ফাঁকা বাড়ি হলেও তাতে আত্মা কব্জা করবেনা। যদি সেই নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরেও কেউ সেই স্থানে বসবাস শুরু না করে তবেই আত্মারা ওখানে ডেরা দেয়। বুঝলি? আসলে এই ভূত আত্মা নিয়ে অনেক ভুলভাল কথা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই রণজয় মামাদের বাড়িটা সম্পূর্ণ ভুত মুক্ত ছিল বুঝলি? হেহেহেহে.... শান্তি? নে এবার বাকিটা শোন। মামারা ঘরে গিয়ে বসতেই রণজয় মামার মামীমা সকলের জন্য জল খাবারের ব্যবস্থা করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষন মামা মামীদের সাথে গল্প করার পরে ছোট মামা আর বন্ধুরা সবাই তিনতলায় চলে এলেন। যদিও দোতলাতেই ঘর ছিল কিন্তু রণজয় মামাই বলেছিলো তিনতলাতে থাকার ব্যবস্থা করতে। এতে কোনোরকম অসুবিধা হবেনা মামা মামীদের। তারা তাদের মতো থাকতে পারবে আর তাছাড়া মামারা নিজেদের মতো কিছু একান্তে সুখের সময় কাটাতে পারবে....... মানে কি বললাম বুঝলি তো হেহেহে। রণজয় মামার মামাবাবু বোধহয় সেটা বুঝেই আর বাঁধা না দিয়ে ওপরের ঘরে থাকার আয়োজন করেছিলেন। ওনার ছেলে সন্দীপ তখন ক্লাস এইটে পড়ে। সেও বেশ ছটফটে। মামাদের সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছিলো তার। দুপুরে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সেও নিচে চলে যায় আর মামারাও ভাত ঘুম দেয়। বিকেলের দিকে মামা আর মামার বন্ধুরা ও সন্দীপ সবাই মিলে আসে পাশের থেকে ঘুরে এলো। ওখান থেকে গঙ্গার ঘাট খুব দূরে নয়। সেখানেও কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে সন্ধের অন্ধকার নামার আগেই ফিরে আসে সবাই। মামাবাবু সকলের জন্য বেরিয়ে চপ ফুলুরি এসব নিয়ে এসেছিলেন। সবাই একসাথে বসে খেয়ে একটা দারুন আড্ডা দেয়। রণজয় মামাই বলেন একবার ছাদ থেকে ঘুরে আসা যাক। এই প্রস্তাবে সবাই মিলে ছাদে যাওয়া হয়। শুধু ওনার মামিমা বাদে। উনি যাননি........ নানা ভয় পাস না অসীম ... ছাদে ভূত নেই যে সেই জন্য মামীমা যাননি।
অসীম - আমি কিছু বলেছি তোকে?
অতনু হেসে আবার বলতে লাগলো - যাইহোক সবাই ছাদে যায়। বিরাট ছাদ। ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা যেতে পারে যেন। তার ওপর সন্ধের নীলাভ অদ্ভুত আকাশ আর শীতল হাওয়া। সব মিলে যেন মায়াবি এক পরিবেশ। সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে হাটাহাটি করতে লাগলো। মামাও.... মানে আমার মামাও সবার থেকে আলাদা হয়ে একটু পেছনের দিকে আসে, পশ্চিমের দিকটায়। ওদিকটায় নাকি বেশ অনেক গুলো নারকেল গাছের সারি ছিল আর একটা বড়ো পুকুরও ছিল। এ বাড়ির একদম গা ঘেঁষেই আরেকটা দোতলা বাড়ি আর তার উল্টোদিকে পর পর আরও দুটো একতলা আর দোতলা বাড়ি। মাঝে একটা সরু গলি চলে গেছে। ওই গলি ধরে গেলে হয়তো আরও বাড়ির খোঁজ মিলবে। মামাদের মতন ওই উল্টোদিকের বাড়িগুলোর একটাতেও দুজন মতো ছাদে উঠে হাটাহাটি করছিলো। মামা আবার ফিরে নিজের বন্ধুদের জয়েন করেন আর কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ফিরে আসেন ঘরে। এরপর রাতে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার মতো ঘরে ফিরে আসে। মামারাও ওপরে এসে অনেক্ষন আড্ডা মারে, ইয়ার্কি ঠাট্টা চলে আর সুখটানও চলে। তারপরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে একে একে শুয়ে পড়ে সবাই। অসীম বাবু... প্রস্তুত হও...... আসল গল্প শুরু হচ্ছে এবার।
আমি একবার তাকিয়ে দেখে নি অসীম অতনুর কথা শুনে একটা ঢোক গিলে ফেলে কিন্তু চোখে মুখে কোনো ভয়ের ছাপ আসেনি। অতনু বলতে থাকে - মামার একটা প্রব্লেম ছিল রাতের দিকে একবার ওনাকে উঠতেই হবে বাথরুমে যেতে। এবারও তাই হলো। ঘুমটা গেলো ভেঙে আর প্রেসারের চাপ হুকুম করলো কলঘরের দিকে ছুটতে। মামা একবার হাত ঘড়িটা দেখে নেয়। ১টা বাজে। আজকের দিনে ১টা এমন কিছু না হলেও তখন ওই রকম একটা জায়গায় একটা মানে ভালোই গভীর রাত। কি আর করা। উঠে দরজা খুলে বাথরুমের দিকে যেতেই হলো মামাকে। কাজ সেরে যখন ফিরে আসছে ততক্ষনে ঘুম বাবাজি পালাতে শুরু করেছে। এক তো নতুন জায়গা তার ওপর মশার কামড় দুইয়ে মিলে পুনরায় জাগ্রত করে তুলেছে ছোট মামাকে। ঘরে ফিরে এসে মামা দেখে তার দুই বন্ধু ততক্ষনে ঘুমিয়ে কাদা। মামা ভাবলেন যে গিয়ে আবার শুয়ে পড়বে কিন্তু আবার ভাবলেন আরেকটা টান দিলে কেমন হয়। আগে মামা খুবই নাকি স্মোকিং করতো, পরে কমিয়ে দিয়েছে। তো প্যাকেট থেকে একটা বার করে জ্বালিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে মামা। এগিয়ে যায় বারান্দার দিকে। চাঁদের আলোয় বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে বাইরের পরিবেশ। বেশ শান্ত নিরিবিলি এলাকা। ঘুমাতে যাবার আগে কয়েকবার কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে থাকলেও এখন আর একটাও ডাক শোনা যাচ্ছেনা। তবে ঘন ঝিঁঝির ডাকে যেন পরিবেশটা আরও বেশি শান্ত লাগছে। বারান্দায় রাখা একটা পুরানো চেয়ার ছিল। সেটায় বসে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে সুখটান দিচ্ছিলেন মামা। চাঁদ একেবারে এ বাড়ির যেন মাথার ওপর। পুরো আলোটা বারান্দায় পড়ে মেঝেটা আলোকিত করে তুলেছে। নারকেল গাছ গুলোর পাতা নড়ছে হাওয়ায়। দুটো চামচিকেও যেন উড়ে গেলো যেন। এসব দেখতে দেখতে এক সময় খুব স্বাভাবিক ভাবেই মামার চোখ যায় ওই পশ্চিমের দিকে যেদিকে ওই বাড়ি পুকুর এসব ছিল। তোদের তখন বলেই ছিলাম ঐদিকে রণজয় মামার এই মামার বাড়ির গা ঘেঁষে একটা বাড়ি আর তার উল্টো দিকে আরও দুটো বাড়ি। একটা একতলা আরেকটা দোতলা। সেই দোতলা বাড়ির দিকে চোখ যেতেই চোখটা আটকে যায় মামার। ওনার মনে হয় ওই বাড়ির ছাদে কেউ যেন রয়েছে। প্রথমে চোখের ভুল ভাবলেও একটু ভালো করে লক্ষ করতে উনি দেখেন সত্যিই ওই ছাদে কেউ রয়েছে আর যে রয়েছে সে একজন মহিলা। কারণ লম্বা খোলা চুল বোঝা যাচ্ছে। এতো রাতে ছাদে একজন মহিলা হাঁটছে এটা ভেবে প্রাথমিক ভাবে মামা একটু অবাক হলেও পরে ভাবে তার নিজের বাড়িতে সে কি করবে না করবে সেটা তার ব্যাপার। তার ইচ্ছে হয়েছে তাই হাটছে। মামা আবার ওদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দেন। কিছুক্ষন পর আবারো চোখ যায় মামার ওদিকে। হ্যা এখনো সেই মহিলা হাঁটাহাঁটি করে চলেছে। মামার কি মনে হতে উনি উঠে একটু এগিয়ে জান গ্রিলের সামনে আর ভালো করে একটা জিনিস লক্ষ করতে থাকেন। একটু ভালো করে মহিলার হাঁটা চলা পর্যবেক্ষণ করে মামা বুঝতে পারেন মহিলাটি ঠিক স্বাভাবিক নন। মানসিক ভারসাম্যহীন। কারণ তার হাঁটা চলাতেই আর বডি ল্যাঙ্গুয়েয অদ্ভুত। একবার সে একহাতে নিজের চুল ধরে টানাটানি করছে তো একবার মাতালের মতো টলতে টলতে হাটছে তো একবার যেন আনন্দে হাততালি দিচ্ছেন। আবার যেন নিজের সাথেই কথা বলছেন। মামার বুঝতে বাকি রইলোনা এটা মেন্টাল কেস। কিন্তু এমন একজন মানুষ এতো রাতে ছাদে এলো কিকরে? বাড়ির লোক কি খেয়াল রাখেনা নাকি? এটা তো সাংঘাতিক হয়ে যেতে পারে যে কোনোদিন। মামা এমন ভাবছে আর তখনি মামা দেখলো সেই মহিলা যেন মামার কথা সত্যি প্রমান করার জন্যই ছাদের ধারে এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকে নিচে দেখতে লাগলো। এদিকে ছোট মামাও যেন চোখ সরাতে পারছেনা। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দেখে চলেছে। যেন ভয়ানক কিছুর একটা সাক্ষী হবার নেশা চেপে বসেছে তাকে। সে দেখছে ওই মহিলা ঝুঁকে ঝুঁকে দেখছে আর কি যেন দেখে হাততালি দিচ্ছে। কিন্তু নিচে শুন্য গলি ছাড়া কিছুই নেই। এমন সময় মামা দেখলো ওই মহিলা সত্যিই যেন একটা পা তুলে দিচ্ছে ছাদের রেলিং এর ওপর! আরেক পা তুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সে!
এমন ভয়ানক দৃশ্যর সাক্ষী হয়ে ছোট মামার মুখ দিয়ে অজান্তেই এই! জাতীয় কিছু একটা শব্দ বেরিয়ে আসে। মামা নিজেও বুঝতে পারেনি উনি এমন কিছু বলে ফেলবেন। যদিও সেটা আস্তেই ছিল। কিন্তু রাতের শান্ত পরিবেশে হওয়ার সাথে ভেসে চলে যায় সম্মুখে মানে সে আওয়াজ যার শোনার সে ঠিক শুনে ফেলে। মামা দেখে সেই মহিলার নজর এবারে এবাড়ির বারান্দায়! হ্যা সে দেখে ফেলেছে এ বাড়িতে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা সিগারেট হাতে মানুষটাকে! সে নিজের পা নামিয়ে কিছুক্ষন একদম শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে এদিকেই দেখতে থাকে। কোনো নরণ চরণ নেই। তারপরে হটাৎই দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে বাড়ির অন্য দিকের কর্নারে মানে যে দিক থেকে মামাকে দেখা যাচ্ছে সেদিকে। ছোট মামার বুকটা ভয় ধক করে ওঠে! যদিও দুটো বাড়ির মাঝে বেশ ভালোই দূরত্ব কিন্তু এমন কিছু একটা কারো সাথে ঘটলে যেন দূরত্ব মুছে গিয়ে ভয় একদম নিকটে চলে আসে। মামার সাথেও যেন তাই হলো। মামা দেখলেন মহিলা একেবারে সোজা ওনার দিকে তাকিয়ে। এতক্ষনে যেন কিছুটা হলেও স্পষ্ট হলো মহিলার মুখটা। আশ্চর্য! এ কিনা মানসিক রোগী? কিন্তু দেখে তো একদমই মনে হচ্ছেনা। বেশ ভালোই একজন মহিলা।বেশি বয়সও হবেনা তার।সুন্দরীই বলা চলে। যারা মানসিক রোগী হন তাদের চোখ মুখেও সেটা প্রকাশ পায়। স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের থেকে তাদের একটু হলেও ভিন্ন দেখতে লাগে। কিন্তু এ তো একেবারে স্বাভাবিক। অন্তত দূর থেকে যতটা বোঝা যাচ্ছে তাই। তবে কি কোনোভাবে পরে মস্তিস্ক বিকার হয়েছে? কালচে অথবা গাঢ় কোনো রঙের কিছু একটা জড়ানো গায়ে। হয়তো চাদর হবে। মাথাটা একপাশে একস্ট্রিম ঝুকিয়ে একেবারে কাঁধের সাথে ঠেকিয়ে এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে ছোট মামার দিকে। বিস্ফারিত চোখ আর ঠোঁটে অদ্ভুত এক হাসি। যেন জোর করে যতটা সম্ভব নিজের মুখে হাসি আনার চেষ্টা। দাঁত গুলো যেন সব বেরিয়ে এসেছে। মামার কেমন শিহরণ খেলে যাচ্ছিলো শরীরে। সেটা ভয় নাকি ঠান্ডা বাতাস তা জানেনা সে। কিন্তু কেমন যেন লাগছিলো। মামা বলেছিলো যে তার বার বার মনে হচ্ছিলো আমি এখানে এখনো কেন দাঁড়িয়ে আছি? আমার এখানে থাকাটা উচিত নয়! কিন্তু এই প্রশ্নের পরেও আমি নড়ছিলাম না! দাঁড়িয়ে সব দেখে চলেছি। যেন দেখতে ইচ্ছে করছে আর কিকি হয়। ওই মহিলার প্রতি যেন আকর্ষণ বেড়ে চলেছে। নানা! কোনো খারাপ আকর্ষণ নয়, কিন্তু এক অজানা কিছু একটা মামাকে যেতে দিচ্ছেনা ওখান থেকে।
- বাপরে বাপ! তোর মামার সাহস আছে মাইরি! আমি হলে এতো কিছুর পর আর দাঁড়াতাম না ভাই!
কার্তিক দা বললেন। অতনু হেসে একবার অসীমের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো - কিরে? তুই হলে কি করতি? লাইন মারতিস নাকি? মামা বলেছিলো হেব্বি সুন্দরী কিন্তু হেহেহেহে। শুনে আমরা একটু হালকা হাসলেও আমাদের অসীম বাবু একটু ভয় ভয় রাগী চোখে অতনুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো - মার খাবি কিন্তু তুই! এ..... এসব নিয়ে ইয়ার্কি আমার ভালো লাগেনা। তুই বাকিটা বলতো ব্যাটা। এদিকে যে অন্ধকার নেমে এলো। অতনু শুনে মুচকি হেসে তারপরে গলা ঝেড়ে নিয়ে আবারো বলতে শুরু করলো -
কোনো মানুষ যে ঐভাবে অতটা মাথা বেঁকিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারে প্রথম এক্সপেরিয়েন্স করেছিল ছোট মামা। সে যে স্বাভাবিক নয় সেটা সুস্পষ্ট। সে ঐভাবেই অন্ধকারে দাঁড়ানো মামাকে দেখতে দেখতে নিজের চুল টানাটানি করছে আর হয়তো হাসছে। মামার মনে হলো আর দাঁড়ানো ঠিক নয়, এবার ফেরা উচিত। ও থাকুক বাবা নিজের মতো। এই ভেবে মামা শেষ টান দিয়ে সিগারেটটা গ্রিল দিয়ে গলিয়ে ফেলে ফিরে যাবে বলে প্রস্তুত হচ্ছেন। কয়েক পা পিছিয়েও এসেছেন এমন সময় দেখলেন ও বাড়ির সেই মহিলাটি হাত তুলে ইশারায় মামাকে ডাকছে! হ্যারে ডাকছে! এমন ভাবেই হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে যেন বলতে চাইছে - এই তুই! যাসনা! আয়! এখানে আমার কাছে আয়! দুজনে মিলে খেলবো! আয়না আয়! হিহিহিহি!
পরের অংশ এখুনি আসছে