21-10-2022, 06:14 PM
ত্রয়স্ত্রিংশৎ অধ্যায়
সুধীন ধাড়া সীতেশ চক্রবর্তী দুজনেই এসে গেছে।চারের কোঠায় বয়স দুজনেই সেক্টার ফাইভে চাকরি করেন।মেসেও ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ কর্ম করে।একদিন কলেজ থেকে ফিরে সুখ দেখল বাসুদির সঙ্গে সুধীনবাবুর তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে।কিছুক্ষন শোনার পর বোঝা গেল সাবিদি জানলার ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছিল।এরকম বরাবর করেন দেখেছি,আমল দিইনি।সুধীনবাবু তাতে আপত্তি করেছে।সাবিদি বলছে কন্ট্রাক্টে লেখা আছে যেকোন সময়ে তিনি ভিতরে কি হচ্ছে খোজ নিতে পারেন।সুধীনবাবুর বক্তব্য দরজা দিয়ে ঢুকে দেখতে পারেন জানলার ফাক দিয়ে কেন উকি দিচ্ছেন?
উপর থেকে আওয়াজ এল,মুন্নি কা হইল বা?
সাবিদি বললেন,কুছু নেহি ফালতু ঝামেলা।সাবিদি উপরে চলে গেলেন।
উনি হয়তো ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলেন সাবিদি কৌতূহল বশত চুপিচুপি দেখছিলেন।ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।সন্ধ্যেবেলা আবার পড়াতে যেতে হবে, একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক।চৌকিতে শুয়ে পড়ল গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিল।শরীরটা ঢাকা নাদিলে কেমন অস্বস্তি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর রাতে ছাদে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়।নজরে পড়ল এক কোনে সুধীনবাবু ল্যাপটপ নিয়ে কিসব করছেন।মনে পড়ল নেটে আজকাল অনেকে চ্যাটিং ফ্যাটিং করে। কাজ হয়।সুধীনবাবু ম্যারেড লোক ঐসব হয়তো করেন না।শেখোয়াত ম্যাডাম সারাক্ষন সবার উপর নজর রাখে?
নাদিয়া বেগম দেখল হিমিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।এত খুশির কারণ কি?
আপু কি খাবা চা না সরবৎ?
কিছু না তুই বোস।সেদিন তুই যে ডাক্তারের কাছে গেছিলি কি বলল ডাক্তার?
সাদিয়া হেসে বলল,পজিটিপ।
পজিটিভ কথাটা ডাক্তারের কাছ থকে আনিস এবং আনিসের কাছ থেকে হিমির শেখা।
নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন সেইটা আবার কি?
আন্দাজে বলিছিলাম মিলে গেছে।টেস্টে বেরোয়ছে আমি সত্যি সত্যি পেগনেণ্ট।
নাদিয়া অবাক চোখে হিমিকে দেখেন,তাহলে এই হচ্ছে খুশির কারণ।স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন,যাক মনু একটা কামের কাম করছে।
সেইটা তুমি বলতি পারো না।
কেন?নাদিয়ার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।
ঐরাতে উনিও আমারে করিছিল।
এতকাল হল না ঐরাতে হয়ে গেল?নাদিয়ার গলায় উষ্মা।
আপু তুমিই তো বলিছো আল্লামিঞার মর্জি হলি কুমারী মেয়েও পোয়াতি হয়।
নাদিয়া একথার উত্তর দিতে পারে না।হিমিটা খুব সেয়ানা বুঝতে পারেন।অন্যের ধাতে বাচ্চা হয়েছে সেইটা স্বীকার করতে চায় না।এতকাল আপু বলতে অজ্ঞান পেটে বাচ্চা আসতি হাবভাব বদলে গেছে।
মিঞা সাহেব এখন আমারে খুব যত্ন করে।সারারাত পেটে হাত বুলোয় দেয়।
সাদি করার কি হল?
বলে আরেকটা পেট খাওন দিতে হবে না? জানো আপু একটা ব্যাপারে খুব খারাপ লাগতিছে।
এর মধ্যে আবার কি ব্যাপার হল নাদিয়া চোখ তুলে তাকায়।
একটু ইতস্তত করে সাদিয়া বলল,উনি বলতিছিলেন এত দূর থেকে দোকানে যাতায়াত খুব ধকল হয়।আমরা কলকাতায় চলে যাব।
নাদিয়া বেগম উদাস হয়ে ভাবেন হিমির জীবনটা বদলে গেল।কদিন আগেও অনিশ্চয়তায় ভুগছিল।কিছুকাল পরে সন্তানের মা হবে কলকাতায় থেকে শহরবাসী হবে।তার নসিবই খারাপ।
আপু তুমি জান না তোমারে আমি কত ভালবাসি।
কথাগুলো নাদিয়া বেগমের গায়ে ছ্যাকা দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,আজ আসিরে।উঠে দড়ালেন।
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে গেছিল।মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে দেখল সুধীনবাবু নেই।চৌকির উপর ল্যাপটপ খোলা পড়ে আছে।সুখ চৌকি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখে পা টিপে টিপে ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেল।ল্যাপটপের পর্দায় চোখ পড়তে সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল।টেবিলে দু-হাতের ভর রেখে এক মহিলা পাছা উচু করে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে একটা লোক মহিলার কোমর জড়িয়ে ধরে প্রাণপণ ঠাপিয়ে চলেছে।তাড়াতাড়ি নিজের চৌকিতে এসে শুয়ে পড়ল।এক্টু পরেই সুধীনবাবু এলেন।সম্ভবত বাথরুমে গিয়ে থাকবেন।
রঞ্জনবাবু ঘুমোচ্ছেন?--রঞ্জনবাবু--।
সুধীনবাবুর গলা পেল।ঘুমোচ্ছে কিনা বুঝতে চায়।সুখ কোনো সাড়া দেয় না। ছিঃ ছিঃ বয়স্ক লোক বাড়িতে বউ ছেলে মেয়ে আছে।এখানে বসে এইসব ছবি দেখছেন।দরজা ভেজানো ল্যাপটপ খোলা রেখে এভাবে কেউ যায়।ভাগ্যিস ম্যাডামের চোখে পড়েনি। ম্যাডামের সঙ্গে কেন গোলমাল বুঝতে অসুবিধে হয় না।বাইরে থেকে দেখে কে বলবে ভদ্রলোক এইরকম।টিসিএস না কোথায় ভালো চাকরি করেন।প্রতি শনিবার দেশে যান।ম্যাডাম যদি দেখতে পেতেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন।
একে একে উপেনবাবু সীতেশবাবু ঢুকলেন,চাদর মুড়ি দিয়েও বুঝতে পারে সুখ।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে পুতুলদিও এসে গেছে।চা হলে উঠবে সুখ মটকা মেরে পড়ে থাকে।
উপেনবাবু চৌকিতে সুখকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বললেন,নিশাচর--দিনে ঘুমায় রাতে জাগে।
পুতুলদি একটা ট্রেতে চার কাপ চা রেখে বলল,চা দিয়ে গেলাম।বারবার গরম করতি পারবো না।
উপেনবাবু ডাকলেন,রঞ্জন ওঠো চা দিয়ে গেছে।
সুখ যেন ঘুমোচ্ছিল এমনভাব করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো।চাদর সরিয়ে উঠে বসে বলল,কাকু এসে গেছেন?
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।এরপর রুটি আলু চচ্চড়ি কিম্বা চাওমিন আসবে।আজ পড়ানো আছে সুখ রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমার টিফিন করতে হবে না।
লাজুদের বাসায় ভালো টিফিন দেয়।যেদিন পড়ানো থাকে সেদিন টিফিন খায় না।কাজু আখরোট কিসমিস প্রভৃতি টিফিন দেয়।মাড়ায়ারীরা এজন্য নাদুস নুদুস হয়।
তোর কাজ হয়েছে?সীতেশবাবু জিজ্ঞেস করে।
কাজ সেরেই তো ফিরে এসে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছিলাম।বাড়ীওলার বোনটা হেভি ত্যাদোড়।
কেন কি করলো?
কিছু করেনি।ঘরে আমরা কি করছি না করছি সারাক্ষন স্পাইং করে যাচ্ছে।কেন রে আমরা কি চোর ছ্যাচোড়?
সীতেশ বাবু হাসল বলল,সময় মতো বিয়ে না হলে ওরকম হয়।
দুপুরের ঘটনা চেপে গেল।চোর ছ্যাচোড় নয় তুমি কি আজ দেখেছি। সুখ মনে মনে ভাবে।
তুই হাসছিস--।
সীতেশবাবু কি ইশারা করতে সুধীনবাবু আড় চোখে সুখর দিকে দেখল।
এই সব কথাবার্তায় উপেনবাবু কিছুটা বিরক্ত তিনি বললেন,বিশ্বাসবাবুর সঙ্গে দেখা হয়?
হ্যা কাকুর সঙ্গে শনি-রোব্বার দেখা হয়।আমি তো ওর মেয়েকে পড়াই।সুখ বলল।
হি ওয়াজ আ গুড কম্পানিওন।
কাকু আমি আসছি।চুলটা আচড়ে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় নামতে দেখি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন।সুখকে দেখে বললেন,রঞ্জন চলো।
আপনি ওখানে যাবেন?
না আমার ওদিকে কাম আছে।রঞ্জন ওই ধেড়া লোকটা আচ্ছা নেই সাবধানে থাকবে।
ধেড়া মানে সুধীন ধাড়া। দুপুরের ঘটনাটা মনে পড়ল কিন্তু সে ঘটনা প্রকাশ করে না।
জানো লোকটা রেণ্ডি বাড়ি যায়?রেণ্ডিবাড়ি মতলব ব্রথেল।
সুখদার এখন এসব ভাল লাগছে না।অন্যকে নিয়ে আলোচনায় তার তেমন রুচি নেই।
গলির মুখে এসে উনি চলে গেলেন বড়বাজারের দিকে।সুখ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে গেল।সামনে হাসি মুখে লাজবন্তী।উন্নত বক্ষ গুরু নিতম্ব, বয়স অনুপাতে শারীরি গড়ণ অনেক পরিণত।লাজুর সঙ্গে স্টাডিতে চলে গেল।
সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন তাই মনে পড়েনা।সন্ধ্যা হলে আলো কমে এলে সুমনার ছেলের কথা মনে পড়ে।ছেলেটা চোখের আড়ালে কি করছে কে জানে।সামনে দিয়ে একটা মিছিল চলে গেল।
গিরিবালা এসে বলল,বৌদি কি করছেন?
বোসো, চা খাবে?
আমার জন্যি বানাতি হবে না।
সুমনা জানে ইচ্ছে আছে লজ্জায় আপত্তি করছে হেসে বললেন,বোসো।
রান্না ঘরে গিয়ে চা গরম করে দু-কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন।চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,কিসের মিছিল গেল?
শনিবার ঘোনোর মাঠে পার্টির মিটিং সেই জন্যি মিছিল।
এখন কোথা থেকে আসছো?
গিরিবালা হেসে বলল,আমি তো মিছিলে ছিলাম।আপনেরে দেখে চলে আসলাম।বৌদি আপনের চেহারা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
বয়স হচ্ছে না।
এই রকম টুকটাক কথা হয় কাজের কথা তেমন কিছু না তবু সারাদিনের ক্লান্তির ফাকে একটু কথাবার্তা বলে বেশ হাল্কা লাগে।
সময়ের সঙ্গে অন্ধকার ঘন হয়ে আসে।রাস্তায় আলো জ্বলে ওঠে। পাখিরা ফিরে গেছে নীড়ে। মনে মনে হিসেব করেন আর প্রায় মাস ছয়েক।
পড়ানো শেষ সুখ উঠি উঠি করছে,ভাবে আজ তো চা দিল না।ভুলে গেছে মনে হয়।হতাশ হয়ে উঠে দাড়াতে লাজো বলল,বসুন স্যার টিফিন আসছে।
সুখদা বসে পড়ল।কিছুক্ষন নীরবতার পর সুখ বলল,লাজো তোমাকে একটা কথা বলি।
আফকোর্স।
তুমি যথেষ্ট মেধাবী।আমি পড়ালে তো হবে না।তোমাকে বাড়ীতেও পড়তে হবে।
লাজোর মুখে দুষ্টু হাসি।
দেখো তুমি ভাবছো তোমাদের যা অবস্থা চাকরি করার কি দরকার।পড়াশোনা শুধু চাকরির জন্য নয়।চলার পথে ইটস আ লাইক টর্চ।অন্ধকারে পথিক পথ চলে টর্চের আলোয় তেমনি শিক্ষাও আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করে।
ইতিমধ্যে কাজের মহিলা এক থালা লুচি দিয়ে গেল।পাশে বেশ বড় একটা সন্দেশ।সুখর জিভে জল এসে গেল।
ইফ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হোয়াই নট?আমি তোমার টিউটর আমাকে তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হবে।সুখ এক টুকরো লুচি তরকারি সহ মুখে পুরতে গেলে লাজো ইতস্তত করে বলল,স্যার আপনার কোনো গার্ল ফ্রেণ্ড নেই?
লুচি গলায় আটকে যাবার উপক্রম।কোনোমতে লুচির গ্রাস গিলে সুখ বলল,ইটস আউট অফ সাব্জেক্ট।তাহলেও বলি,দেখো আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে।গ্রাম থেকে শহরে এসেছি পড়াশোনা করতে।এইসব নিয়ে ভাবার সময় কোথা?
বাঙ্গালী ভেরি সফট হার্টেড আই লাইক দেম ভেরি মাচ--।
লাজো এসব আলোচনা থাক।
ওকে স্যার।আপনি খান।
সুধীন ধাড়া সীতেশ চক্রবর্তী দুজনেই এসে গেছে।চারের কোঠায় বয়স দুজনেই সেক্টার ফাইভে চাকরি করেন।মেসেও ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ কর্ম করে।একদিন কলেজ থেকে ফিরে সুখ দেখল বাসুদির সঙ্গে সুধীনবাবুর তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে।কিছুক্ষন শোনার পর বোঝা গেল সাবিদি জানলার ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছিল।এরকম বরাবর করেন দেখেছি,আমল দিইনি।সুধীনবাবু তাতে আপত্তি করেছে।সাবিদি বলছে কন্ট্রাক্টে লেখা আছে যেকোন সময়ে তিনি ভিতরে কি হচ্ছে খোজ নিতে পারেন।সুধীনবাবুর বক্তব্য দরজা দিয়ে ঢুকে দেখতে পারেন জানলার ফাক দিয়ে কেন উকি দিচ্ছেন?
উপর থেকে আওয়াজ এল,মুন্নি কা হইল বা?
সাবিদি বললেন,কুছু নেহি ফালতু ঝামেলা।সাবিদি উপরে চলে গেলেন।
উনি হয়তো ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলেন সাবিদি কৌতূহল বশত চুপিচুপি দেখছিলেন।ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।সন্ধ্যেবেলা আবার পড়াতে যেতে হবে, একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক।চৌকিতে শুয়ে পড়ল গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিল।শরীরটা ঢাকা নাদিলে কেমন অস্বস্তি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর রাতে ছাদে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়।নজরে পড়ল এক কোনে সুধীনবাবু ল্যাপটপ নিয়ে কিসব করছেন।মনে পড়ল নেটে আজকাল অনেকে চ্যাটিং ফ্যাটিং করে। কাজ হয়।সুধীনবাবু ম্যারেড লোক ঐসব হয়তো করেন না।শেখোয়াত ম্যাডাম সারাক্ষন সবার উপর নজর রাখে?
নাদিয়া বেগম দেখল হিমিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।এত খুশির কারণ কি?
আপু কি খাবা চা না সরবৎ?
কিছু না তুই বোস।সেদিন তুই যে ডাক্তারের কাছে গেছিলি কি বলল ডাক্তার?
সাদিয়া হেসে বলল,পজিটিপ।
পজিটিভ কথাটা ডাক্তারের কাছ থকে আনিস এবং আনিসের কাছ থেকে হিমির শেখা।
নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন সেইটা আবার কি?
আন্দাজে বলিছিলাম মিলে গেছে।টেস্টে বেরোয়ছে আমি সত্যি সত্যি পেগনেণ্ট।
নাদিয়া অবাক চোখে হিমিকে দেখেন,তাহলে এই হচ্ছে খুশির কারণ।স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন,যাক মনু একটা কামের কাম করছে।
সেইটা তুমি বলতি পারো না।
কেন?নাদিয়ার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।
ঐরাতে উনিও আমারে করিছিল।
এতকাল হল না ঐরাতে হয়ে গেল?নাদিয়ার গলায় উষ্মা।
আপু তুমিই তো বলিছো আল্লামিঞার মর্জি হলি কুমারী মেয়েও পোয়াতি হয়।
নাদিয়া একথার উত্তর দিতে পারে না।হিমিটা খুব সেয়ানা বুঝতে পারেন।অন্যের ধাতে বাচ্চা হয়েছে সেইটা স্বীকার করতে চায় না।এতকাল আপু বলতে অজ্ঞান পেটে বাচ্চা আসতি হাবভাব বদলে গেছে।
মিঞা সাহেব এখন আমারে খুব যত্ন করে।সারারাত পেটে হাত বুলোয় দেয়।
সাদি করার কি হল?
বলে আরেকটা পেট খাওন দিতে হবে না? জানো আপু একটা ব্যাপারে খুব খারাপ লাগতিছে।
এর মধ্যে আবার কি ব্যাপার হল নাদিয়া চোখ তুলে তাকায়।
একটু ইতস্তত করে সাদিয়া বলল,উনি বলতিছিলেন এত দূর থেকে দোকানে যাতায়াত খুব ধকল হয়।আমরা কলকাতায় চলে যাব।
নাদিয়া বেগম উদাস হয়ে ভাবেন হিমির জীবনটা বদলে গেল।কদিন আগেও অনিশ্চয়তায় ভুগছিল।কিছুকাল পরে সন্তানের মা হবে কলকাতায় থেকে শহরবাসী হবে।তার নসিবই খারাপ।
আপু তুমি জান না তোমারে আমি কত ভালবাসি।
কথাগুলো নাদিয়া বেগমের গায়ে ছ্যাকা দেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,আজ আসিরে।উঠে দড়ালেন।
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে গেছিল।মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে দেখল সুধীনবাবু নেই।চৌকির উপর ল্যাপটপ খোলা পড়ে আছে।সুখ চৌকি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখে পা টিপে টিপে ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেল।ল্যাপটপের পর্দায় চোখ পড়তে সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠল।টেবিলে দু-হাতের ভর রেখে এক মহিলা পাছা উচু করে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে একটা লোক মহিলার কোমর জড়িয়ে ধরে প্রাণপণ ঠাপিয়ে চলেছে।তাড়াতাড়ি নিজের চৌকিতে এসে শুয়ে পড়ল।এক্টু পরেই সুধীনবাবু এলেন।সম্ভবত বাথরুমে গিয়ে থাকবেন।
রঞ্জনবাবু ঘুমোচ্ছেন?--রঞ্জনবাবু--।
সুধীনবাবুর গলা পেল।ঘুমোচ্ছে কিনা বুঝতে চায়।সুখ কোনো সাড়া দেয় না। ছিঃ ছিঃ বয়স্ক লোক বাড়িতে বউ ছেলে মেয়ে আছে।এখানে বসে এইসব ছবি দেখছেন।দরজা ভেজানো ল্যাপটপ খোলা রেখে এভাবে কেউ যায়।ভাগ্যিস ম্যাডামের চোখে পড়েনি। ম্যাডামের সঙ্গে কেন গোলমাল বুঝতে অসুবিধে হয় না।বাইরে থেকে দেখে কে বলবে ভদ্রলোক এইরকম।টিসিএস না কোথায় ভালো চাকরি করেন।প্রতি শনিবার দেশে যান।ম্যাডাম যদি দেখতে পেতেন তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতেন।
একে একে উপেনবাবু সীতেশবাবু ঢুকলেন,চাদর মুড়ি দিয়েও বুঝতে পারে সুখ।রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে পুতুলদিও এসে গেছে।চা হলে উঠবে সুখ মটকা মেরে পড়ে থাকে।
উপেনবাবু চৌকিতে সুখকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বললেন,নিশাচর--দিনে ঘুমায় রাতে জাগে।
পুতুলদি একটা ট্রেতে চার কাপ চা রেখে বলল,চা দিয়ে গেলাম।বারবার গরম করতি পারবো না।
উপেনবাবু ডাকলেন,রঞ্জন ওঠো চা দিয়ে গেছে।
সুখ যেন ঘুমোচ্ছিল এমনভাব করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো।চাদর সরিয়ে উঠে বসে বলল,কাকু এসে গেছেন?
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিল।এরপর রুটি আলু চচ্চড়ি কিম্বা চাওমিন আসবে।আজ পড়ানো আছে সুখ রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমার টিফিন করতে হবে না।
লাজুদের বাসায় ভালো টিফিন দেয়।যেদিন পড়ানো থাকে সেদিন টিফিন খায় না।কাজু আখরোট কিসমিস প্রভৃতি টিফিন দেয়।মাড়ায়ারীরা এজন্য নাদুস নুদুস হয়।
তোর কাজ হয়েছে?সীতেশবাবু জিজ্ঞেস করে।
কাজ সেরেই তো ফিরে এসে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছিলাম।বাড়ীওলার বোনটা হেভি ত্যাদোড়।
কেন কি করলো?
কিছু করেনি।ঘরে আমরা কি করছি না করছি সারাক্ষন স্পাইং করে যাচ্ছে।কেন রে আমরা কি চোর ছ্যাচোড়?
সীতেশ বাবু হাসল বলল,সময় মতো বিয়ে না হলে ওরকম হয়।
দুপুরের ঘটনা চেপে গেল।চোর ছ্যাচোড় নয় তুমি কি আজ দেখেছি। সুখ মনে মনে ভাবে।
তুই হাসছিস--।
সীতেশবাবু কি ইশারা করতে সুধীনবাবু আড় চোখে সুখর দিকে দেখল।
এই সব কথাবার্তায় উপেনবাবু কিছুটা বিরক্ত তিনি বললেন,বিশ্বাসবাবুর সঙ্গে দেখা হয়?
হ্যা কাকুর সঙ্গে শনি-রোব্বার দেখা হয়।আমি তো ওর মেয়েকে পড়াই।সুখ বলল।
হি ওয়াজ আ গুড কম্পানিওন।
কাকু আমি আসছি।চুলটা আচড়ে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তায় নামতে দেখি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন।সুখকে দেখে বললেন,রঞ্জন চলো।
আপনি ওখানে যাবেন?
না আমার ওদিকে কাম আছে।রঞ্জন ওই ধেড়া লোকটা আচ্ছা নেই সাবধানে থাকবে।
ধেড়া মানে সুধীন ধাড়া। দুপুরের ঘটনাটা মনে পড়ল কিন্তু সে ঘটনা প্রকাশ করে না।
জানো লোকটা রেণ্ডি বাড়ি যায়?রেণ্ডিবাড়ি মতলব ব্রথেল।
সুখদার এখন এসব ভাল লাগছে না।অন্যকে নিয়ে আলোচনায় তার তেমন রুচি নেই।
গলির মুখে এসে উনি চলে গেলেন বড়বাজারের দিকে।সুখ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।দরজার সামনে দাড়াতে দরজা খুলে গেল।সামনে হাসি মুখে লাজবন্তী।উন্নত বক্ষ গুরু নিতম্ব, বয়স অনুপাতে শারীরি গড়ণ অনেক পরিণত।লাজুর সঙ্গে স্টাডিতে চলে গেল।
সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন তাই মনে পড়েনা।সন্ধ্যা হলে আলো কমে এলে সুমনার ছেলের কথা মনে পড়ে।ছেলেটা চোখের আড়ালে কি করছে কে জানে।সামনে দিয়ে একটা মিছিল চলে গেল।
গিরিবালা এসে বলল,বৌদি কি করছেন?
বোসো, চা খাবে?
আমার জন্যি বানাতি হবে না।
সুমনা জানে ইচ্ছে আছে লজ্জায় আপত্তি করছে হেসে বললেন,বোসো।
রান্না ঘরে গিয়ে চা গরম করে দু-কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন।চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,কিসের মিছিল গেল?
শনিবার ঘোনোর মাঠে পার্টির মিটিং সেই জন্যি মিছিল।
এখন কোথা থেকে আসছো?
গিরিবালা হেসে বলল,আমি তো মিছিলে ছিলাম।আপনেরে দেখে চলে আসলাম।বৌদি আপনের চেহারা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
বয়স হচ্ছে না।
এই রকম টুকটাক কথা হয় কাজের কথা তেমন কিছু না তবু সারাদিনের ক্লান্তির ফাকে একটু কথাবার্তা বলে বেশ হাল্কা লাগে।
সময়ের সঙ্গে অন্ধকার ঘন হয়ে আসে।রাস্তায় আলো জ্বলে ওঠে। পাখিরা ফিরে গেছে নীড়ে। মনে মনে হিসেব করেন আর প্রায় মাস ছয়েক।
পড়ানো শেষ সুখ উঠি উঠি করছে,ভাবে আজ তো চা দিল না।ভুলে গেছে মনে হয়।হতাশ হয়ে উঠে দাড়াতে লাজো বলল,বসুন স্যার টিফিন আসছে।
সুখদা বসে পড়ল।কিছুক্ষন নীরবতার পর সুখ বলল,লাজো তোমাকে একটা কথা বলি।
আফকোর্স।
তুমি যথেষ্ট মেধাবী।আমি পড়ালে তো হবে না।তোমাকে বাড়ীতেও পড়তে হবে।
লাজোর মুখে দুষ্টু হাসি।
দেখো তুমি ভাবছো তোমাদের যা অবস্থা চাকরি করার কি দরকার।পড়াশোনা শুধু চাকরির জন্য নয়।চলার পথে ইটস আ লাইক টর্চ।অন্ধকারে পথিক পথ চলে টর্চের আলোয় তেমনি শিক্ষাও আমাদের পথ চিনতে সাহায্য করে।
ইতিমধ্যে কাজের মহিলা এক থালা লুচি দিয়ে গেল।পাশে বেশ বড় একটা সন্দেশ।সুখর জিভে জল এসে গেল।
ইফ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
হোয়াই নট?আমি তোমার টিউটর আমাকে তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হবে।সুখ এক টুকরো লুচি তরকারি সহ মুখে পুরতে গেলে লাজো ইতস্তত করে বলল,স্যার আপনার কোনো গার্ল ফ্রেণ্ড নেই?
লুচি গলায় আটকে যাবার উপক্রম।কোনোমতে লুচির গ্রাস গিলে সুখ বলল,ইটস আউট অফ সাব্জেক্ট।তাহলেও বলি,দেখো আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে।গ্রাম থেকে শহরে এসেছি পড়াশোনা করতে।এইসব নিয়ে ভাবার সময় কোথা?
বাঙ্গালী ভেরি সফট হার্টেড আই লাইক দেম ভেরি মাচ--।
লাজো এসব আলোচনা থাক।
ওকে স্যার।আপনি খান।