20-10-2022, 09:08 PM
পর্ব-২
আমাকে রুম দেখিয়ে দিয়েই কথা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। হয়তো রান্না ঘরের দিকেই গিয়েছে আমার পছন্দসই কোন কিছু রান্না করার তোড়জোড় চালাচ্ছে হয়তো। ওকে তো আমি সেই ছোট থেকে চিনি আগেও যেমন চটপটে স্বভাবের ছিল এখনো সেই ভাবটা রয়ে গেছে সাথে গিন্নীপণা ভাবটা যোগ হয়েছে মাত্র। আমি নিশ্চিত ও আমার জন্য চিড়ে পোলাও বানাচ্ছে কারণ এটা আমার খুব ফেভারিট একটা নাস্তা। কাঁধ ব্যাগ থেকে গামছা আর স্নানের পর পড়ার জন্য জামা প্যান্ট গুলো হাতে নিয়ে বাইরের উঠোনের দিকে চলে গেলাম। উঠোনের একপাশে পাকা কল তলা। কথা আগে থেকেই দু বালতি জল ভরে রেখে গেছে। ওর ভাবসাব দেখলে মনে হয় আমি যেন কল চেপে বালতিতে জল ও ভরতে পারবো না, তবে আগে একটা সময় তো আমি জোর করে ওকে দিয়ে মাঝে মাঝে জল ভরাতাম সেটার জন্য মায়ের কাছে কি কম বকা খেয়েছি নাকি। কিন্তু কথা চোখে মুখে রাগের ভাব দেখালেও মুখে কখনো কিছু বলে নি বরং অনেকদিন তো আমি বলার আগেই বালতি জল ভরতি করে চলে যেত৷ আজ অনেকদিন পর যেন সেই কথা কেই আমি আবার খুঁজে পেয়েছি।
পড়নের টিশার্ট টা খুলতে যাবো ওমনি কারো পায়ের শব্দে পিছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখি কথা এদিকে এগিয়ে আসছে। টিশার্ট টা খুলতে গিয়েও কেন জানি আর খুললাম না, কেমন একটা ইতস্ততা বোধ কাজ করছে মনে ওর সামনে ওমন খোলা শরীরে দাঁড়াতে।
কিরে তুই ওমন করে দাড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি স্নান টা করে নে তোর জন্য চিড়ের পোলাও করেছি বেশি দেরি করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। তুই তো আবার ঠান্ডা কিছুই খেতে পছন্দ করিস না।
(আমি মনে মনে হাসছি, আমার অনুমান সত্য হয়ে গেল তাহলে। সত্যিই ও একটুও বদলায় নি কিস্তু আমি তো অনেক বদলে গেছি, এই যে ওর সামনে বারবার কেমন অস্বস্তি বোধ করছি কিন্তু ও তো আমার নিজের তাহলে কেন এমন হচ্ছে আজ)
হ্যাঁ.. না মানে ঐ.. এখনি স্নান করে নেব ভাবছি। (বালতি থেকে মগ ভর্তি জল তুলে নিলাম আমি)
কিরে তুই কি এই টিশার্ট প্যান্ট পড়েই স্নান করবি নাকি রে! লুঙ্গি এনেছিস? না হলে একটা লুঙ্গি এনে দেই ওটা পড়ে না স্নান করে নে। আর টি শার্ট টা খুলে নে
না না! লাগবে না। এতেই ঠিক আছি।
(ভ্রো দুটো নাচিয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে কেমন একটা ব্যাঙ্গাত্মক চাহনি দিয়ে)
তুই আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছিস! সত্যি! আজ নতুন করে জানলাম রে তোর মত বেহায়া আজকাল লজ্জা পেতে শুরু করেছে, আসলেই দূরত্ব অনেক কিছুই পাল্টে দেয় শুধু আমিই নিজেকে পাল্টাতে পারলাম না৷ নে তুই স্নান করে নে আমি ভেতরে চলে যাচ্ছি (হঠাৎ পেছন ফেরে) আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি স্নান করে নিস নইলে আবার ঠান্ডা লাগবে।
আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, শেষ কথাটায় মনে হলো ও একটু কষ্ট পেয়েছে হয়তো। কিন্তু আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাই নি তাও কেন জানা অজানায় আমি বারবার ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। কথা চলে যাবার পর চারপাশটা আরও বেশি সুনশান লাগছে৷ আমি গায়ের টি শার্ট টা খুলে সামনেই উঠোনের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত টানানো দড়িটায় মেলে দিলাম। বাসায় লুঙ্গি পড়ে স্নান করলেও এখানে কেন জানি সেটা মন চাইলো না। আমি নিশ্চিত মা ব্যাগে লুঙ্গি দিয়েও দিয়েছে সেটা না হয় রাতে পড়ে ঘুমানো যাবে। বালতি থেকে মগ ভর্তি জল নিয়ে মাথায় ঢালতে শুরু করলাম। কলের জলের আরাম টা ট্যাংকের জমানো জলে পাওয়া যায় না। মূহুর্তেই ক্লান্তি ভাবটা দূর হয়ে যায়, শরীরটা চনমনে হয়ে উঠে। সারারাতের ভ্রমনের অবসাদ ভাবটা কেটে গেছে এতোক্ষণে। ছোলায় সাবান মাখিয়ে হাতে পায়ে সাবান দিচ্ছি
আরও জল তুলে দিতে হবে নাকি?
(হঠাৎ কথার গলা শুনে ভূত দেখার মত করে ভীমড়ি খেয়ে উঠি আমি, ও কখন আবার পিছনে এসে দাড়ালো সেটা টেরই পেলাম না। আদুল গায়ে ওর সামনে বসে থাকতে কেমন লজ্জা লাগছে, পারি তো হাত দিয়েই নিজেকে আড়াল করে নেব এমন একটা ভাব কাজ করছে)
তোর আর কষ্ট করতে হবে না আমি তুলে নিতে পারবো তো।
তাহলে তোর পিঠে সাবান দিয়ে দেই? এটা তো নিজে পারবি না।
(কথা যেন কোন একটা বাহানায় এখানে থেকে যাবার অজুহাত খুঁজে চলেছে)
আরে না আমার অভ্যাস আছে। নিজেই দিতে পারবো এতো চিন্তা করছিস কেন? আমি তো একাই স্নান করি সবসময়।
সরাসরি বলে দিলেই পারিস যে তুই চাস না আমি তোকে ছুঁই, তোর কাছে অস্পৃশ্য হয়ে গেছি হয়তো। সেই জন্যেই এতো দূরে সরিয়ে দিলি তোর থেকে।
(যেন ওর ভারী হয়ে আসা গলায় অভিযোগ অনুরাগের সুর বইছে)
সবটার একটা উল্টো মানে না ধরা পর্যন্ত তোর শান্তি হয় না নাকি। কোথাকার বিষয় কোথায় নিয়ে যাস সেটাই বুঝি না। নে তুই সাবান দিয়ে দে তবুও ওসব উল্টাপাল্টা কথা বলবি না আমার একদম ভালো লাগে না কিন্তু।
মূহুর্তে কথার চোখ মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিলো, একটানে আমার হাত থেকে ছোলা টা নিয়ে আলতো করে আমার সারা পিঠে সেটা দিয়ে ঘসে দিচ্ছে। নতুন ছোলার ধার ভাবটার চেয়েও আমার খোলা পিঠে ওর হাতের কোমলতা টা বেশি অনুভব করছি আমি। যতবার ওর হাতটা পিঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সীমানা এঁকে দিয়ে যাচ্ছে ততবারই সারা শরীরের যেন বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে আমার। উপর থেকে নিচে নিচ থেকে উপরে একটা ছন্দে ওর কোমল নরম হাতটা আমার উন্মুক্ত পিঠটা চড়ে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুত এক অনুভূতির জোয়ারে আমি ভেসে যাচ্ছি একটু একটু করে কত বছরের সেই পুরনো স্পর্শ টাই নতুন করে শিহরন জাগিয়ে তুলছে মন শরীর দুটোতেই। দু চোখ বন্ধ করে ওর স্পর্শ টা অনুভব করছি আর হারিয়ে যাচ্ছি আগের সময়টাতে তখন এতো কিছুর বেড়াজালে আটকে থাকতে হতো না হয়তো কিন্তু তখন কি এমন করে কখনো ভেবেছিলাম যেমন করে আজ ভাবছি। ঠিক আগের মত করেই ওর স্পর্শ পাচ্ছি আমি কিন্তু এখনকার অনুভূতির গভীরতা টা মনে হয় অনেকখানি বেশি আকাঙ্খার পরিধি বেড়েছে অনুভবের দুনিয়ায় নতুন পালক লেগেছে। হঠাৎ আমার পিঠের লম্বা কাটা দাগের জায়গাটায় কথার আঙ্গুলের ছোঁয়া পেতেই গা শিউরে উঠলো।
এই কাটা দাগটার স্মৃতি মনে আছে?
(জড়িয়ে আসা গলায় কোন মতন বললাম)
এটা ভুলবো কি করে? তোর দেয়া জিনিস কি করে ভুলে যাবো।
সেটাই তো! এটা ঠিকি মনে থাকবে কিন্তু ভালো স্মৃতি গুলো সব ঠিকই ভুলে যাস৷ ইচ্ছে করছে সকালের মতো আরও কয়েকটা কসে চড় মারি তোকে তবে যদি একটু শান্তি পাই আমি কিন্তু সেটাও তো পারি না। আগে হলেও তবু রাগটা সাথে সাথে দেখিয়ে দিতাম এখন কেন জানি সেটাও পারি না। কেন যে তোর মতো একটা শয়তান কে আমি সহ্য করে যাচ্ছি কে জানে ইচ্ছে করে দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যাই।
কথা হঠাৎ করেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমার অাধ ভেজা ফেনিল শরীরের সাথে জাপটে ধরে আছে নিজেকে। আমার খোলা পিঠে ওর নরম বুকটা মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে লেপ্টে রেখেছে শক্ত করে। আগেও কতবার কথার কাছ থেকে এমন স্পর্শ পেয়েছি কিন্তু আজ ওর স্পর্শ টা একটু অন্যরকম লাগছে আমার কাছে। এটার অনুভূতি সবকিছুর থেকে আলাদা কোমলতা যেন সবকিছু ছাপিয়ে আমাকে ওর নিজের করে নিচ্ছে। প্রতিটা শ্বাসের সাথে ওর বুকের উঠানামা স্পষ্ট অনুভব করে চলেছি আমি। ভিজে মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জলের ধারায় এতোক্ষণে আমার ভিজা পিঠে লেগে থাকা ওর বুক আগলে রাখা ব্লাউজটা ভিজে গিয়ে আরও বেশি করে যেন আমাকে ছোঁয়ে নিজের অবস্থার জানান দিচ্ছে। পিঠের উপর আছড়ে পড়া ওর প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি যেন পুড়ে যাচ্ছি একটু একটু করে। রক্তের গরম পরশে আমার কান দুটো গরম হয়ে উঠেছে শ্বাসের গতি বেড়ে চলেছে।
কথা কি করছিস তুই! যখন তখন দিপু দা এসে যাবে মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
(এমন পাগল করা স্পর্শে আমার নিজেকে ঠিক রাখা কঠিন হয়ে আসলেও পরিবেশ আর পরিস্থিতির চিন্তা করে কোন মতে নিজেকে আটকাবার চেষ্টা করলাম নয়তো আমিও হয়তো এই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতাম)
কি করেছি আমি, কেন আমি কি তোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি না আগে তো কতবার তোকে জড়িয়ে ধরেছি তখন তো না করিস নি। আজ কত বছর পর তোর শরীরের ঘ্রান টা পাচ্ছি জানিস, এটা ছাড়া আমার আর কি চাই বল। কে এসে কি দেখলো সেটা আমার দেখার দরকার নেই ওসব অনেক ভেবেছি আর ভাবতে চাই না।
পাগলামো করিস না প্লিজ, দেখ আমি তো এখনি পালিয়ে যাচ্ছি না। এখন এখানে এই অবস্থায় দেখলে কি মনে করবে বলতো যতই হোক...
কি হবে? আমাকে যা তা বলবে বলুক তাতে আমার কিছুই আসা যায় না। তবুও প্লিজ আজ বারণ করিস না আমাকে একটু তোকে জড়িয়ে থাকতে দে।
কথার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। আমার বুকের উপর ওর হাতের বাঁধনটা আরও শক্ত হয়ে চেপে বসেছে। ওর শরীরের উষ্ণতা টা আমি ভালো করেই ফিল করতে পারছি। ভেতরের উত্তেজনা টা ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে আমার নিজেকে আর ধরে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে না, মন ভেতর থেকে তাগাদা দিচ্ছে আমিও যেন এত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কথা কে একটু জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দেই ওর নরম শরীরের ওম টা আমার সাথে মিলিয়ে দেই। অদ্ভুত রকমের সব চিন্তাভাবনা মস্তিষ্ক জুড়ে খেলতে শুরু করেছে, যেন আজ ঠিক ভুলের কোন হিসেব রাখতে চাইছে না। আমি আর কিছু ভাবতে চাইছি না দুচোখ বন্ধ করে নিলাম সাথে সাথে নিজেকে ছেড়ে দিলাম ভবিতব্যের হাতে।
কিঞ্জল বাবু, কি মশাই কেমন করে এদিকে আসা হলো শুনি....
(একটু দূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসলে। এতো দিপু দার কন্ঠ, কথার স্বামী! মূহুর্তের মাঝে আমার শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো বুকের ধুকপুকানি টা দূর থেকেও যে কেউ শুনতে পারবে হয়তো। মনে হয় হাত পা গুলো ঠান্ডায় জমে গিয়েছে পুরো শরীরে হিম শীতল রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে)
---------------------
ঐ একবারের দেখাতেই আমার পুরো পৃথিবী যেন বদলে গেল এক নিমিষেই। আমি চিনি না জানি না এমনকি নামটাও জানা নেই তবুও এমন কি মায়া জাদুতে আমাকে তাতেই নিবিষ্ট করে নিলো কে জানে। তখন সেই সময় টাতে এতো কিছু বুঝার মত বয়স বা পরিস্থিতি কোনটাই ছিল না আমার তবে এখন এতো বছর পরে এসে বুঝতে পারি তখন কতটা পাগলামিই না করেছি আমি। আর সেই সব কিছু ভাবতে ভাবতে নিজেই হেসে ফেলি মাঝে মাঝে।
ঐ মেয়েটাকে দেখার পর থেকে আমার ধ্যান ধারনা সবকিছু যেন তাকে নিয়ে আবর্তিত হতে লাগলো। সবসময় তার কথা ভেবে চলেছি আজব সব কল্পনার খেয়ালে নিজেকে ভাসাতে শুরু করি। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছি না কেন জানি বারবার সেই মুখটা আরেকবার দেখার জন্য মন টা আনচান করে উঠছে। কিন্তু চাইলেই তো আর ওকে দেখা যাচ্ছে না, গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকার মত সাহস হয়ে উঠেনি কারণ অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা তাদের ইয়ের জন্য সেখানে অবস্থান করে। তাদের চোখে পড়ে গেলে আর রক্ষে নেই, আর যদি বাসায় বিচার আসে তাহলে তো ষোলকলা পূর্ণ। তবে একটাই রাস্তা খোলা থাকলো আমার সামনে সেটা হলো কলেজ থেকে ফেরার পথেই ওকে যকটুকু দেখা যায়। সেটাই করতে হবে জেনে পরদিন কলেজ থেকে এসে আর কোন সময় নষ্ট না করেই স্নান খাওয়া দাওয়া করে সোজা দোকানের জন্য বেড়িয়ে পড়লাম। আমার তাড়াহুড়ো দেখে মা খানিকটা অবাকই হয়েছে সেদিন, যে ছেলেকে ঠেলে ধাক্কিয়ে স্নান করাতে নিয়ে যেতে হয় খাওয়াতে হয় সে আজ নিজ থেকেই সব করে নিচ্ছে কেমন করে। আমার তখন আর অন্যদিকে তাকানোর ফুসরত নেই লক্ষ্য একটাই ওকে আজ দু চোখ ভরে দেখা নেয়া আর কাল পর্যন্ত নিজেকে কল্পনার জগতে ভাসিয়ে রাখার রসদ জোগাড় করা।
আজ যেন অন্যদিনের চেয়ে ঘড়ির কাটা ধীরে ধীরে চলছে, বারবার সময় দেখে চলেছি। ঘড়ির কাটা বলছে ওদের কলেজ ছুটি হয়ে গেছে খানিক আগেই গতকাল যে সময়টাতে ওরা এদিকে এসেছিল সেই সময়টাও পার হয়ে গেছে কিন্তু ওকে তো দেখছি না কোথাও। মনটা কেমন উশখুশ করে চলেছে আজ আসবে তো? এই গলি দিয়ে না গিয়ে যদি উল্টো দিকের গলি দিয়ে চলে যায় তবে কি হবে? না আর বসে থাকতে পারছি না, কাউন্টার ছেড়ে একটু বাইরে বেড়িয়ে এলাম এদিক সেদিক তাকিয়ে কোথাও ওদের দলটাকে চোখে পড়লো না। হাত পায়ে অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছে, স্থির থাকতে পারছি না কোনভাবেই। মনে হচ্ছে এক নজর ওকে না দেখলে আমার বুঝি দম বন্ধ হয়ে আসবে এক্ষুনি। এক কাস্টমারের ডাকে ভাঙা হৃদয় নিয়েই কাউন্টারে ফিরে যেতে হলো, বিমর্ষ বদনে হাতে ধরিয়ে দেয়া লিষ্ট অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিস রেক থেকে নামিয়ে সামনে সাজিয়ে রাখছি। মনটা বিষন্ন হয়ে গেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেকটা সময় পার হয়ে গেল আজ কি তবে আজ ওকে এক পলক দেখা হয়ে উঠবে না। সবকিছু কেমন বদলে গেল হঠাৎ করেই আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব কি ঐ অচেনা মেয়েটাকেই ঘিরে রয়েছে নাকি? না হলে এমন কেন লাগছে সবকিছু অদ্ভুত শূণ্যতায় ঢেকে আছে চারপাশ৷ মনের ভেতরে কি তুফান শুরু হয়েছে সেটা বলে বুঝানোর মত নয়। হাত গুলো আর কাজ করতে চাইছে না কোন রকমে বিল টা লেখার চেষ্টা করছি মাত্র।
হঠাৎ কয়েকজনের হাসির শব্দের সামনের দিকে তাকাতেই দেখি ঐ মেয়েদের দলটা এগিয়ে আসছে এদিকেই। ওর দুদিকে বেনী করা চুল আর দুপাটি দাঁত বের করা হাসি সবার মাঝেও আলাদা করে রেখেছে ওকে৷ মূহুর্তের মাঝেই আমার মাঝে আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করেছে সবকিছু কেমন রঙিন হয়ে উঠেছে৷ দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় একবার ভেতরের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা খুঁজে দেখে আবার সামনের দিকে বাকিদের সাথে হাটতে শুরু করলো। এই কয়েক সেকেন্ডের দেখা পেয়েই আমি সপ্ত স্বর্গের সুখের আভাস পেলাম এমন মনে হতে লাগলো। খানিকের এই আনন্দে পারলে আমার নাচতে ইচ্ছে করছিলো তবে সেটা সেবারের মত সংবরন করে গেলাম কিছু মতো। এখন পর্যন্ত নাম টাই জানা হলো না মেয়েটার। আর এখন যে করেই হোক সেই নামটা জানতে হবে আমাকে। আর এই কাজে বিকাশ আমার সবচেয়ে ভরসার মানুষ আমার কাছের মানুষ আমার বন্ধু আমার ভাই যাই বলুন না কেন ওকে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। আগেও করতাম আর এখনো ও আমার মনে সেই জায়গাটা ধরে রেখেছি৷
প্রথমে ভেবেছিলাম আমার গ্রুপের অন্যদের বিষয়টা জানাবো কিন্তু ওদের কাছে এটা নিয়ে কিছু বললে কিছুটা হাসির পাত্র হতে পারি ভেবে সেটা আর করা হয়ে উঠলো না৷ আর এই বয়সে আমি কারও প্রেমে পড়ে যেতে পারি সেটা তো নিজেই ভাবতে কেমন অবাক লাগে বাকিদের কাছে কেমন লাগবে সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না মোটেই। তবে বিকাশ ব্যাপার ঠিকি গোপনেই সমাধান করতে পারবে। তাই আর দেরি করলাম বিকেল হতেই ওদের বাসার দিকে ছুট দিলাম, বাসায় ঢুকতেই ওকে পেয়ে গেলাম সাথে সাথেই। আমাকে এভাবে ছুটতে দেখে ও একটু অবাকই হলো সাথে কয়েকটা প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দিলো আমার দিকে। তবে ওর প্রশ্নের জবাব দেবার মত সময় সুযোগ এখন নেই তাই আমি আমার কথা গুলোই আগে বলে নিলাম ওকে।
এখন তুই কি চাস? ওর নামটা জানতে হবে তাই তো! কোন ব্যাপার না আমাকে শুধু মেয়েটাকে দেখিয়ে দে তাতেই হবে। বাকিটা আমার হাতে ছেড়ে দে।
আমি আহ্লাদে বিকাশ কে জড়িয়ে ধরলাম, আমি জানতাম ভাই তুই ছাড়া এটা আর কেউ করে দিতে পারবে না। শুধু নামটা জেনে দে তুই যা চাইবি তাই খাওয়াবো।
মনে থাকে যেন সেটা, আমার কিন্তু এটা বা হাতের খেল। ঐ গার্লস কলেজে আমার পরিচিত একজন পড়ে তাকে ধরলেই গুষ্ঠি সহ সব জেনে নেয়া যাবে।
তাহলে কাল সকালে কলেজে যাবার আগে চলে যাবো গার্লস কলেজের সামনের মোড়টায়, সে কথাই রইলো।
পরিকল্পনা মতো পরদিন আমাদের কলেজ শুরু হবার আগেই গার্লস কলেজের মোড়ের রাস্তায় আমরা দুজনে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখি ওদের দলটা আসছে এদিকেই আমি ইশারায় বিকাশ কে মেয়েটাকে দেখিয়ে দিলাম। মেয়েটা দেখে নিয়ে ও মাথা নেড়ে সায় দিলো, বাকিটা এখন ওর কাজ। আমরা কলেজে ফিরে এলাম সেকশান আলাদা হবার কারণে ওর সাথে টিফিন ছাড়া আর দেখা হবে না, টিফিনের সময় ওকে রুমে পেলাম না এর মানে ও কাজে লেগে পড়েছে৷ কিন্তু আমার মনের উচাটন একটুও কমছে না। এখন যেন অস্থিরতা আরও বেড়েই চলেছে কখন যে ওর নামটা জানতে পারবো সেটার তর সইছে না। ভীষণ অস্থির মন নিয়ে কোন ভাবে চারটা ক্লাস শেষ করলাম। আমার যে মনটা আজ ক্লাসে নেই সেটা একজনের নজরে ততোক্ষণে এসে গেছে সেটা তখন বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকি জানতে পেরেছিলাম। ঐ দু চোখ জোড়া যে আমার দিকে আঠার মত লেগে থাকে, আর সেই চোখ এড়িয়ে কিছু করা আমার জন্য খুবই মুশকিলের কাজ। ক্লাস শেষেই আমাকে চেপে ধরতে পারে ঘটনা জানার জন্য তাই কলেজ ছুটির পর আজ আর বাকিদের সাথে না গিয়ে আমি একটু সাইডে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি বিকাশ দৌড়ে আমার দিকে আসছে
কিরে কি হলো নামটা জানতে পারলি কি?
দৌড়ে আসার কারণে ও তখনো হাঁপাচ্ছে। কয়েকবার লম্বা দম নিয়ে একটু শান্ত হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্টু হাসি হেসে বললো, দেবযানী।