Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
                         ষোড়োদশ পর্ব

তোমাকে আগেই বলেছিলাম মামা ওটাকে বাঁচিয়ে রেখো না, শেষ করে দাও কিন্তু তুমি... সামনের টেবিলে একটা চাপড় মেরে উত্তেজিত ভাবে কথাটা বলে রকি, তারা এখন সেই বাড়িতে আছে যেখানে এআরসিকে বন্দী করে রেখেছিল তারা মানে বীরেন বাবু তার ভাই ধীরেন বাবু, রকি, জগা এবং বাইরে আরো কয়েকজন লোক আছে। বীরেন ভট্টাচার্যের মুখ থমথমে তিনি বুঝতে পারছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে মস্ত ভুল করে ফেলেছেন ,নিশ্চিত জয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন কিন্তু এখন একেবারে দু দুটো ধাক্কা একসাথে খেয়েছেন, দুটো নয় আসলে তিনটে, ওদিকে আমির নামের এআরসির পোষা কুত্তাটা বেঁচে গেছে, দুই বস্তি দখল হতে হতে হয়নি তার দলকে পালিয়ে আসতে হয়েছে আর তিন তার কবল থেকে এআরসি পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রথম শেষেরটাই তাকে বেশী ভাবাচ্ছে বস্তি দখলটা তার ইগোর ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন.. তিনি ভালো করেই জানেন এ খেলার নিয়ম এআরসি তো বলেওছিল "আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না", এখন সেই এআরসি বেঁচে এখান থেকে বেরিয়ে গেছে এবার সে অ্যাটাক করবে কখন কোথায় কিভাবে আন্দাজ করা মুশকিল, এর থেকে মেরে ফেললেই বোধহয় ভালো হতো টাকা উদ্ধারের লোভে এখন তার প্রাণ সংশয় হয়ে গেছে, বীরেন ভট্টাচার্যের চোখে আবার বাণিজ্যনগরীতে ঘটা সেই রাতের ঘটনা মনে পড়লো যখন এআরসির লোকেরা হোটেলে তার চোখের সামনে তাণ্ডব চালিয়েছিল, বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে।
ছোটোমামা ছোটোমামা তুমি কি ভাবছো বলোতো? ধীরেন বাবুকে চুপচাপ দেখে প্রশ্নটা করে রকি।
ধীরেন বাবু চমক ভেঙে জেগে ওঠেন "অ্যাঁ, হ্যাঁ কিছু বলছিস?
বলছি তুমি চুপচাপ কি ভাবছো?
ভাবছি এই এআরসিকে এত চেনা চেনা কেন লাগছে কে ও?
তুমি এখন এইসব ভাবছো? আগে ওকে কিভাবে শেষ করা যায় সেটা ভাবো?
এবারে বীরেন বাবু কথা বলেন "খুলে বলতো তুই কি ভাবছিস?"
দাদা ওর মুখটা ভালো করে দেখেছিলে? আমি দেখেছিলাম কার সাথে যেন একটা মিল আছে, কিন্তু কে সেটাই মনে পড়ছে না।
মামা এখন ওইসব ভেবে কি লাভ? ও আমাদের শত্রু, ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট।
শত্রুতার একটা কারন থাকে রকি, আর এআরসির ক্ষেত্রে সেই কারনটা জানার জন্য ওর পরিচয় জানাটা জরুরী।
কারন আবার কি এই শহরের দখল নেওয়া।
সেটা হলে তোর বড়োমামাকে ওর শহরে পেয়েও ছেড়ে দিত না, বা এখানে নিজে আসতো না নিজের কোনো লোক বা ভাড়া করা সুপারি কিলার দিয়েই আমাদের মেরে দিতে পারতো।
তুই কি বলতে চাইছিস ধীরেন?
দাদা ও যেটা চাইছে সেটা ক্ষমতা নয়, প্রতিশোধ। ভেবে দেখো ও কিন্তু চাইলেই তোমাকে মারতে পারতো কিন্তু মারেনি বা নিজের অন্য লোক পাঠিয়ে এখানেও আমাদের মারতে পারতো কিন্তু সেটা করেনি নিজে এসেছে শুধু তাই নয় আমাদের মারার আগে আমাদের থেকে এক এক করে কিছু না কিছু কেড়ে নিচ্ছে, না দাদা এ শুধু ক্ষমতা বা শহর দখল নয় এটা প্রতিশোধ ও এয়ন কেউ যে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।
কে হতে পারে?
সেটাই তো ধরতে পারছি না দাদা। এইসময় ধীরেন বাবুর ফোন বেজে উঠলো "তোমার আবার কি হলো?
তাথৈ এখনো বাড়ি ফেরেনি। সরমা দেবীর উদ্বিগ্ন গলা।
তাথৈ বাড়ি ফেরেনি মানে?
জানিনা কখন বেরিয়েছে বলে যায়নি, ইদানিং মনটাও ভালো ছিল না ওর।
কেন কি হয়েছে?
জানিনা, জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না, তুমি একবার ফোন করে কথা বলো না।
ঠিক আছে দেখছি।
কি হয়েছে? ধীরেন বাবু ফোন রাখার পরে প্রশ্নটা করেন বীরেন ভট্টাচার্য।
আর বোলো না দাদা মেয়েটাও মায়ের মতো হয়েছে একটু শান্তি দিল না সেই ছোটো থেকেই আমাকে... হটাৎ তিনি চুপ করে গেলেন যেন কিছু একটা মনে পড়েছে তার।
কি হলো চুপ করে গেলি কেন?
ধীরেন বাবু কথা না বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর জগার পিছনে গিয়ে হটাৎ তার মাথা ধরে টেবিলের উপর চেপে ধরলেন, এই দেখে বীরেন বাবু এবং রকি দুজনেই হতবাক হয়ে গেল।
কি হয়েছে দাদা? কোনোমতে কথা বলে জগা।
আমি তোকে একটা প্রশ্ন করবো তার সোজা সত্যি উত্তর দিবি।
কি কথা?
ষোলো বছর আগে রুদ্রের সাথে ওর ছেলে-ব‌উকেও তুই শেষ করে দিয়েছিলি নাকি ওর ছেলে বেঁচে গিয়েছিল?
প্রশ্নটা শুনে বীরেন বাবু, রকি এবং জগা তিনজনেই চমকে ওঠেন, "এটা কি বলছেন দাদা?"গুঙিয়ে ওঠে জগা তার মাথা এখনো টেবিলে চেপে ধরে রেখেছেন ধীরেন বাবু।
সত্যি বল জগা। চেঁচিয়ে ওঠেন ধীরেন বাবু।
বলছি বলছি, ওর ছেলে আর ব‌উ পালিয়ে যায় আমি চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি তাই...
এবার ধীরেন বাবু জগাকে তুলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন "ইচ্ছা করছে তোকে এখনই শেষ করে দি‌ই", তারপর একটা ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বীরেন বাবুর উদ্দেশ্যে বলেন: এই এআরসি আর কেউ নয় ওই।রুদ্রের ছেলে অভয়, আর ও এখানে এসেছে প্রতিশোধ নিতে এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই সেই জন্যই ওর মুখটা চেনা চেনা লাগছিল, রুদ্রের সাথে মুখের আদলের মিল আছে।
এবার বীরেন বাবু জগাকে কাছে ডাকেন, "আমার ভুল হয়ে গেছে দাদা" হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসে জগা, কাছে এলে বীরেন বাবু।হটাৎ নিজের পায়ের এক পাটি জুতো খুলে তাই দিয়ে জগাকে মারতে থাকেন। তারপর বলেন "আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যা জগা, নেহাত এতগুলো বছর আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলি তাই প্রাণে না মেরে আরেকটা চান্স দিচ্ছি, যে করেই হোক এই এআরসি কে আমার চাই জ্যান্ত বা মৃত, যদি পারিস তবেই আমাকে নিজের মুখ দেখাবি নচেৎ নয়"। জগা আর কোনো কথা না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

"বাবু পালা তোর মাকে নিয়ে পালা"
না বাবা, গেলে তিনজনেই যাবো।
বাবু কথা শোন, তোর মাকে নিয়ে যা।
হটাৎ একটা কানফাটানো আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ।
"তোর মাকে দেখিস বাবু, তোর মাকে দেখিস"।
না... বাবা....বাবা...না...বাবা...
"মিস্টার অভয়... মিস্টার অভয়" দূর থেকে কে যেন অস্পষ্ট ভাবে তার নাম ডাকছে কিন্তু...
বাবা...বাবা.... বাবাআআআআআ। হঠাৎই চোখ খুলে উঠে বসে অভয়, কপালে  ঘাম জমে গেছে, বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে,হটাৎ পাশে "মিস্টার অভয়" শুনে পাশে তাকায় দেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, লোক নয় ডাক্তার, তার পিছনে একজন লেডি নার্স, এবার অভয় ভালো করে চারপাশটা দেখে যে কোথায় শুয়ে ছিল সে? তার গায়ের জামাটা খুলে ফেলা হয়েছে, পরনে এখন অন্য একটা পোশাক ইউনিফর্ম জাতীয় কোনো হাসপাতালের পেশেন্ট ড্রেস।
আমি কোথায়? জিজ্ঞেস করে অভয়।
আপনি এখন হাসপাতালে
আমি এখানে কিভাবে এলাম?
আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে এনেছে?
কে এনেছে? অভয়ের স্বরে বিস্ময়।
আপনার ওয়াইফ মিস্টার অভয়।
কে আমার ওয়াইফ? আমার কোনো ওয়াইফ নেই আর আমার নাম রয়।
কিন্তু যে মেয়েটি আপনাকে এখানে এনেছে তিনি তো বললেন আপনি তার হাজব্যান্ড?
অজ্ঞান হবার আগে পর্যন্ত তো ব্যাচেলর ছিলাম, জ্ঞান হবার পরে হাজব্যান্ড কিভাবে হয়ে গেলাম?
কেমন হাজব্যান্ড আপনি? নার্সের কথা আসে এবার,আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে আনার পর থেকে পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে, না খেয়ে না ঘুমিয়ে আপনার পাশে বসে থেকেছে, আপনাকে কত ভালোবাসেন আর আপনি?
অভয় চুপ করে শুনতে থাকে নার্স আবার শুরু করেন: আপনি সেই গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় এখানে এসেছেন তারপর থেকে আজ এই সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরলো, আপনার স্ত্রী আপনার পাশেই বসে ছিলেন সমানে কেঁদে চলেছেন।
তা আমার এই ওয়াইফটি এই মুহূর্তে কোথায়?
বাইরে ঠাকুরের সামনে প্রার্থনা করছেন।
অভয় আস্তে আস্তে বেড থেকে নামছে দেখে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন "কি হলো কোথায় যাচ্ছেন?"
আমার এই ওয়াইফকে দেখতে, এখন তো শুধু হাজব্যান্ড হয়েছি, এখন না গেলে পরে না জানি আরও কত কি হয়ে যাবো। বলে আস্তে আস্তে কেবিনের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, এরপর দেখে একদিকে একটা ছোট ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে প্রার্থনা করছে, যদিও অভয় মেয়েটার শুধু পিছন দিকটাই দেখতে পারছে তবুও কেন যেন তার মনে একজনের মুখের ছবি ভেসে ওঠে এবং কেন যেন মনে হতে থাকে যে সামনে দাঁড়ানো এই মেয়েটি সে ছাড়া আর কেউ নয়, অভয় আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর চিনতে অসুবিধা হবার কথা নয়,  সে কয়েক সেকেণ্ড মেয়েটির প্রার্থনারত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার কঠিন বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি পেটা করতে থাকে, তার ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তে মেয়েটিকে কাছে টেনে নিতে হয়তো নিতো‌ও কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পরে সেই একরাতে রেস্টুরেন্টের বাইরে একটা ছেলের বলা একটা কথা "ও আমার গার্লফ্রেন্ড", নিজেকে সামলে নেয় অভয় "আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?"।

জ্যেঠিমা শেফালী দেবীর কাছ থেকে সত্যিটা জানার পর থেকেই তাথৈএর আর কোনো কিছু ভালো লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি খালি কেঁদেছে, ভোর থাকতে থাকতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে কিছু ঠিক নেই, নিজেই গাড়ি চালিয়ে যায় মাঝে মাঝে যখন খুব কান্না পাচ্ছে তখন গাড়ি থামিয়ে স্টিয়ারিংএ মাথা রেখে কাঁদতে থাকে, একবার ভাবে অভয়ের কাছে যাবে যদিও জানে যে অভয় দেখা করবে না কিন্তু তবুও যাবে, একবার ভেবেছিল সুইসাইড করবে কিন্তু পরক্ষণেই রাতে জ্যেঠিমার কথা মনে পড়লো "এমন কিছু করিস না যাতে তোর মা কষ্ট পায়, তোর মায়ের তুই ছাড়া কেউ নেই", কিন্তু সে করবে কি? অভয় ওকে কাছে টেনে নেবে না আর অভয়কে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
এতদিন তাও একটা বিশ্বাস ছিল যে একদিন অভয়ের কাছে ঠিক ফিরবে কিন্তু এখন তো সেটাও নেই, সারাদিনটা এভাবেই কাটালো তাথৈ, বাড়ি থেকে ফোন করলে ধরেনি কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আসলে কিছু করতেই ইচ্ছা করছে না, সারাদিন কিছু খায়নি, খাওয়ার কথা মনেই হয়নি কখনো রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকে, ছোটোবেলায় অভয়ের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে তারপর আবার গাড়িতে চাপে আবার কখনো মন্দির দেখে সেখানে গিয়ে অভয়ের নামে পূজো দেয়।
সন্ধ্যা প্রায় পার হয়ে গেছে কিন্তু তাথৈএর হুঁশ নেই, শহরের বাইরের দিকে একটা হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছে সে রাস্তাটা ফাঁকাই গাড়ি চলাচল প্রায় নেই সোজা রাস্তা চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে চলেছে সে কোথায় উত্তর নেই কেন সেটার‌ও উত্তর নেই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে "আচ্ছা এই রাস্তায় কি অ্যাক্সিডেন্ট হয় না? এক্ষুনি যদি কোনো লরি ওকে চাপা দিয়ে চলে যায় তাহলে? কি ভালো হয় সব কষ্ট থেকে মুক্তি"।
এইসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় হটাৎ গাড়ির সামনে একজনকে চলে আসতে দেখে সজোড়ে ব্রেক কষে, লোকটা তার গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায় একটু বিরক্ত হয় তাথৈ কোথায় সে মরার কথা ভাবছে তা না অন্য একজন তার গাড়ির সামনে মরতে চলে এসেছে, গাড়ি থেকে নেমে সামনে যায় তাথৈ দেখে একটা ছেলে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে মুখটা লম্বা এলোমেলো চুলে ঢাকা, গায়ে শার্টের বোতাম আটকানো নেই, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তাটা ফাঁকা একটা লোক চোখে পরছে না। তাথৈ ঝুঁকে ডাকে "শুনছেন? হ্যালো" উত্তর না পেয়ে মুখ থেকে চুলগুলো সরায় আর সঙ্গে সঙ্গে যেন ওর মাথায় বজ্রপাত হয়।
অভয়.. আর্তনাদ করে ওঠে তাথৈ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে, অভয়.. অভয় কি হয়েছে তোমার? অভয়...। তাথৈ এবার লক্ষ্য করে অভয়ের খোলা শার্টের নীচে বুকে পেটে অনেকগুলো লম্বা কালশিটে দাগ বুঝতে বাকী থাকে না যে কেউ বা কারা প্রচণ্ড মারধর করেছে অভয়কে,  "অভয় তোমার কিচ্ছু হবে না অভয়.." কোনোমতে অজ্ঞান অভয়কে প্রথমি বসিয়ে তারপর একটা হাত নিজের কাঁধে নিয়ে অনেক কষ্টে দাঁড় করায় তারপর কোনোমতে গাড়ির ব্যাকসিটে শুইয়ে দেয়, এবং তাড়াতাড়ি নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে।
লোকজনকে জিজ্ঞেস করে কাছাকাছি একটা হাসপাতালে পৌঁছে তাথৈএর কান্না আরও বেড়ে যায় কিছুতেই সে অভয়কে ছেড়ে যাবে না, ডাক্তার অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন বারবার বলেন বাইরে যেতে কিন্তু তাথৈ অনড় সে উল্টে এক‌ই কথা বলতে থাকে কোনোমতেই সে তার স্বামীকে ছেড়ে যাবে না, কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান অভয়ের মাথায় হাত বোলাতে থাকে বলতে থাকে "অভয় অভয় প্লিজ চোখ খোলো অভয়, ডাক্তার ওর কি হয়েছে চোখ খুলছে না কেন?"
ওনার শরীরের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে ওনাকে কেউ প্রচণ্ড মারধর করেছে তাতেই জ্ঞান হারিয়েছেন।
ওকে বাঁচান ডাক্তার, ওকে বাঁচান প্লিজ।
আগে আপনি শান্ত হোন।
পুরো রাত এমনকি পরের দিন সকালেও  অভয়ের জ্ঞান ফেরেনি দেখে তাথৈ আরো ভয় পেয়ে যায়।
ডাক্তার আশ্বাস দেন "আপনি চিন্তা করবেন না মারের আঘাত এবং দুর্বলতার জন্যই উনি এখনো অজ্ঞান"
কিন্তু ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
সেরকমই আশা করছি, ইন্টারনাল কোনো আঘাত হয়নি যা হয়েছে বাইরে।খুব সম্ভবত ওনাকে টর্চার করা হয়েছে সাধারণ রাস্তার মারামারি নয় এটা আপনি বরং পুলিশে একটা খবর দিতে পারেন।
ঠিক আছে আমি সেটা পরে ভেবে দেখবো, আপাতত আপনি ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করুন। মাঝে একবার অল্প সময়ের জন্য অভয়ের জ্ঞান ফেরে যদিও সে পুরোপুরি চেতনায় ছিল না, চোখ‌ও খোলেনি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে গিয়ে পারে না তারপর আবার যে কে সেই, তাথৈ আর থাকতে পারে না, কেবিনের বাইরে একটা ছোট্ট ঠাকুরের সিংহাসন দেখেছিল সেখানে গিয়ে হাতজোড় করে এক মনে প্রার্থনা করতে থাকে।

"আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?" প্রশ্নটা শুনেও তৎক্ষণাৎ চোখ খোলে না তাথৈ আরো কিছুক্ষণ পরে প্রার্থনা সেরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অভয়ের দিকে ফেরে অনেকদিন পর দুজনের চোখাচোখি হয় যদিও কেউ কোনো কথা বলে না, তাথৈ কোনো কথা না বলে পিছনে ফিরে কেবিনের দিকে যায় পিছনে অভয়,কেবিনে ঢুকে তাথৈ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে "এখন ওকে কেমন দেখলেন ডক্টর?"
আপনাকে তো আগেই বলেছি ওনার কোনো ইন্টারনাল আঘাত হয়নি, তাই..
আমি ঠিক আছি ডক্টর, থ্যাংকস।
সব কৃতিত্ব আপনার ওয়াইফের তিনিই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন।
আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন, আমাকে যেতে হবে।
আরো কিছুটা সময় থেকে যান।
আমি থাকতে পারবো না ডক্টর, আমাকে যেতে হবে।
ডাক্তার আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যান, কেবিনে এখন অভয় আর তাথৈ অভয় বেডের পাশে টেবিলে একটা জলের বোতল দেখে সেটা হাতে নেয়।
কি হয়েছিল তোমার? তাথৈ প্রশ্ন করে।
বললে বিশ্বাস করবেন? এক নিঃশ্বাসে অনেকটা জল খেয়ে বোতলটা আবার যথাস্থানে রেখে উত্তর দেয় অভয়।
বলেই দেখো।
আপনার জ্যেঠু আর বাবার বন্দী ছিলাম মনের সুখে ঠ্যেঙিয়েছে একেবারে আড়ং ধোলাই যাকে বলে, আরেকটা রাত থাকলে মেরেই ফেলতো।
তাথৈ কোনো কথা বলে না অভয় আবার বলে "কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না?"
কোন প্রশ্ন?
ওই যে আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন?
অভয়.. তুমি বারবার কেন এরকম বলছো, আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে?
আমার নাম রয় আর আমি আপনাকে কি কষ্ট দিলাম?
কষ্ট দাওনি?
কি কষ্ট?
তাথৈ কোনো কথা না বলে অভয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভয় আবার প্রশ্ন করে "আপনি আমাকে কোথায় আর কিভাবে পেলেন?"
তাথৈ তাকে রাস্তায় পাওয়ার পুরো ঘটনাটা বলে সব শুনে অভয় বলে "থ্যাংকস, তারমানে আপনি অনেকক্ষণ বাড়ি থেকে বাইরে আছেন, আপনার এবার বাড়ি ফেরা উচিত"।
আমি তো বাড়ি ফিরবো বলে বেরোইনি, তাই যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আপনার বাড়ির লোক খুঁজবে তারা চিন্তা করবেন সাথে আপনার বয়ফ্রেন্ড‌ও।
তাথৈ বুঝতে পারছে অভয় তাকে ইচ্ছে করে আঘাত করছে অন্য কাউকে তার বয়ফ্রেন্ড বলে, সে বললো: আমি চলে গেলে তুমি খুশী হবে?
আমার খুশীর কথা আপনার ভেবে লাভ নেই।
অভয়..... 
আমার নাম রয়।
তুমি সত্যিই চাও যে আমি চলে যাই?
অভয় চুপ করে আছে দেখে আবার বলে: কি হলো বলো তুমি সত্যিই চাও যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই?
অভয় তাও চুপ করে থাকে, তাথৈ আর থাকতে পারে না তার ভীষণ কান্না পায় কিন্তু কোনোমতে চোখের জল সামলে বলে: বেশ, তুমি যখন চাইছো আমি চলেই যাবো চিরদিনের জন্য আর কখনও তোমার কাছে আসবো না আর কখনও তুমি তাথৈএর মুখ দেখতে পারবে না। বলে এক ছুটে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
তাথৈ বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই অভয়ের মাথায় তাথৈএর কথাটা স্ট্রাইক করলো, কি বলে গেল? চিরদিনের জন্য মানে? বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা চিন্তা ওর মাথায় আসতেই "ওহ্ শিটঃ" বলেই সেও ছুট লাগায়, তাড়াতাড়ি লিফটের কাছে এসে দেখে দুটোই নেই অভয় লক্ষ্য করে একটা লিফট একদম গ্ৰাউণ্ড ফ্লোর থেকে উপরে উঠছে সুতরাং ওটায় তাথৈ যায়নি এত তাড়াতাড়ি সেটা নীচে গিয়ে ফিরতে পারে না, অপর লিফট্ টা উপরের ফ্লোরে উঠেছে অভয়ের বুঝতে বাকী র‌ইলো না তাথৈ উপরে গেছে সে লিফটের জন্য আর সে কি করতে যাচ্ছে সেটা বুঝতেও অসুবিধা হবার কথা নয়, অভয় প্রাণপণে পাশের সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠতে লাগলো।

অভয়ের কেবিন থেকে বেরিয়েই তাথৈ দৌড়াতে লাগলো, সে ঠিক করে নিয়েছে এবার কি করবে, আর নয় অনেক হয়েছে, আর পারছে না সে, অভয় চায় সে চলে যাক বেশ তাহলে তাথৈ চলেই যাবে চিরদিনের জন্য যাবে এবং সেটা অভয়ের চোখের সামনে থেকেই, আজ না হোক একসময় তো অভয় তাকে ভালোবাসতো তাই ওর সামনে দিয়েই ও নিজের জীবন শেষ করবে।
লিফটটা থামতেই সে ঢুকে একদম টপ ফ্লোরের বোতাম টিপে দিল, লিফট থামতেই সে বেরিয়ে এল এটা হাসপাতালের একদম উপরের ভাগ, এখানে পেশেন্টরা থাকে না একসাইডে কয়েকটা রুম বোধহয় স্টাফদের জন্য, আর অন্য দিকে কিছুটা অংশ নিয়ে একটু খোলা ছাদের মতো আছে যদিও চারিদিকে ঘেরা কোমর সমান উঁচু পাঁচিল দেওয়া সেখানে স্টাফরা বা পেশেন্টরা মাঝে মাঝে খোলা হাওয়া খেতে আসে, এই মুহূর্তে ওই জায়গাটায় কেউ নেই তাথৈ দৌড়ে ওদিকে গেল তারপর কোমরের উপরে উঠে দাঁড়ালো, চোখ বন্ধ করে নীচে লাফ মারতে যাবে হটাৎ পিছন থেকে একটা শক্ত হাত তার হাতটা ধরে এক হ্যাঁচকা টানে তাকে  উপর থেকে নীচে নামিয়ে আনলো এবং নীচে যাতে পরার আগে আরেকটা হাত শক্ত করে তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিল তারপর আস্তে করে দাঁড় করালো।
চোখ খুলেই যে তার হাত ধরে টেনে নামালো তাকে দেখেই এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে কয়েকপা পিছনে সরে এল।
কি করতে যাচ্ছিলে এটা?  বলো কি করতে যাচ্ছিলে? অভয় প্রচণ্ড রেগে গেছে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে।
কে আপনি? আপনি এখানে কেন? তাথৈও এবার তেজের সাথে উত্তর দেয়।
আগে বলো কি করতে যাচ্ছিলে তুমি এটা?
আপনি কেন আমার হাত ধরেছেন? কোন অধিকারে ধরেছেন? কোন অধিকারে আমাকে প্রশ্ন করছেন? আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার বা কোনো প্রশ্ন করার বুঝতে পেরেছেন মিস্টার রয়?
আমি জানি আমার কোনো অধিকার নেই, আমার অধিকার এবং আমার যোগ্যতা দুটোই তুমি আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলে ষোলো বছর ধরে আগে আমি আমার যোগ্যতা বা অধিকার কোনোটাই ভুলিনি..
তাহলে অধিকার পার করলেন কেন? আপনি তো আমাকে ঘেন্না করেন তাহলে কেন বাঁচালেন আমাকে? বলুন..আমাকে বাঁচালেন কেন? আপনিই তো বললেন যেন আমি চলে যাই কারণ আপনি আমাকে ঘেন্না করেন, আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম তাহলে আটকালেন কেন? বলুন।
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি, আজ‌ও খুব ভালোবাসি। যে কথাটাকে এতবছর অভয় নিজের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল সেটা হটাৎ সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে বেরিয়ে এল। কথাটা শুনে তাথৈ চুপ করে র‌ইলো কিন্তু অভয় বলে চলে: আমি তোমাকে কোনোদিন ঘেন্না করিনি শুধু ভালোবেসেছি এটা জানার পরেও যে তুমি আমাকে ঠকিয়েছো, তুমি অনেক আগেই আমার বিশ্বাস ভেঙে আমার ভালোবাসাকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে  এগিয়ে গিয়েছিলে, কিন্তু তবুও তোমাকে ভালোবেসে এসেছি, কতবার ভেবেছি তোমাকে ভুলে তোমার মতো এগিয়ে যাবো কিন্তু পারিনি, কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারিনি তাই আজ‌ও তোমার আঘাত লাগলে আমার কষ্ট হয় আর এখন তো তুমি....
ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে অভয়, যেটা আমি করেছিলাম এত বছর তোমার থেকে দূরে থাকার পরেও বিশ্বাস ছিল যে একদিন তোমার কাছে ফিরবো, নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে যে যাওয়ার আগে তোমাকে জানিয়ে যেতে পারিনি তোমার কোনো ধারণা আছে এত বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি? ফিরে এসে শুনলাম তুমি আর নেই মারা গেছো কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি অপেক্ষা করে গিয়েছি তোমার... কিন্তু তুমি..
আমি তোমাকে ভালোবাসিনি? 
ভালোবাসলে অবিশ্বাস করতে না, এটা বিশ্বাস করতে না যে তোমার তাথৈ তোমাকে ঠকাতে পারে।
ওয়াও... এখন সব দোষ আমার? 
হ্যাঁ তোমার দোষ, তুমিই আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে 
আর তোমার সেই ম্যাসেজ সেটা?
কোন ম্যাসেজ? তাথৈ ভীষণ অবাক হয় কারণ এই ম্যাসেজের কথা তাকে অমিয়‌ও বলেনি।
ও মনে নেই বুঝি? ওই ম্যাসেজটা যেটা তুমি আমাকে পাঠিয়েছিলে এটা বলে যে তুমি চলে যাচ্ছো কারণ আমি তোমার যোগ্য ন‌ই।
আমি তোমাকে কোনো ম্যাসেজ পাঠাইনি অভয়..
তাহলে তোমার ফোন থেকে আমাকে কে ম্যাসেজ করেছিল?
আমি জানিনা, 
বেশ.. তাহলে আমি যখন ফোন করছিলাম তখন ধরছিলে না কেন? কেন নিজের দিদিকে দিয়ে দিয়েছিলে ফোনটা?
তাথৈ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে: আমি বললে বিশ্বাস করবে? কারণ তুমি তো অলরেডি ধরেই নিয়েছো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।
আচ্ছা শুনি..
সেদিন আমার সাথে তোমার কথা হয়নি এমনকি কোনো ম্যাসেজ‌ও করিনি কারণ আমার কাছে ফোন ছিল না, সেদিন জ্যেঠু হটাৎ বললেন আমাকে পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হবে আমি যেতে চাইনি কিন্তু কাউকে কিছু বলার উপায় ছিল না, যাওয়ার আগে পিসি আমার থেকে ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল তারপর কি হয়েছিল আমি জানিনা, আমি সত্যিই জানিনা।
এবার অভয়ের অবাক হবার পালা কারণ এটা সে ভাবতেও পারেনি অথচ সেদিন সত্যিই এক মহিলা কথা বলেছিল। তাথৈ বলে চলে: তুমি বুঝবেও না এই কটা বছর আমার কিভাবে কেটেছে যার সাথে কথা না বললে দেখা না করলে আমি থাকতে পারতাম না দিনের পর দিন তার সাথে কথা বলতে পারছি না, দেখা করতে পারছি না, ফিরে এসে শুনি এক দুর্ঘটনায় তুমি... 
শেষ‌ই হয়ে যেতাম নেহাত আয়ু ছিল তাই বেঁচে গেছি কিন্তু আমার বাবা পারেননি.. কিন্তু ওর থেকে আমি মরে গেলেই ভালো হতো অন্তত এত কষ্ট পেতে হতো না।
দুজনের মধ্যে আরো অনেকক্ষণ বাক বিতণ্ডা চললো দুজনের মনের ভিতরে জমা কথাগুলো বেরোতে থাকে দুজনের ভিতরের জমা কথা, রাগ, অভিমান বাঁধ ভেঙ্গে নদীর উচ্ছ্বল স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে থাকে।
একসময় তাথৈ বলে: আমার জ্যেঠু তোমার সাথে যা করেছে তারপরে তুমি তো আমাকে ঘেন্নাই করতে তাহলে আমাকে মরতে দিলে না কেন, বললে তো চলে যেতে, চলেই তো যাচ্ছিলাম
তুমি কোনোদিন‌ও আমাকে বুঝবে না, আমি তোমাকে কখনো ঘেন্না করিনি, করতে পারিনি আর তোমার জ্যেঠু যা করেছে তার জন্যও না, আমার রাগ হয়েছিল কারণ আমি ভাবতে পারিনি যে তোমার থেকে আঘাত পাবো, তুমি আমাকে ঠকাবে খালি ভাবতাম জীবনে একবার তোমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবো কেন করেছিলে এরকম আমার সাথে।
তাহলে জিজ্ঞেস করোনি কেন? মন্দিরের পিছনে তো দেখা হয়েছিল।
হ্যাঁ, বহু বছর পরে তোমাকে সেদিন দেখেছিলাম খুব ইচ্ছা করছিল সেদিন তোমাকে কাছে টেনে নিতে কথা বলতে।
তাহলে বলোনি কেন?
পারিনি কারণ তখন তোমার সেই ম্যাসেজ আর তোমার দিদি আর ওই মহিলার কথা মনে পড়ে তাই আর পারিনি।
সেদিন যদি একবারও আমার দিকে মন দিতে তাহলে শুনতে পেতে যখন তুমি আমার হাত ধরেছিলে তখন তোমার নামটাই বেরিয়েছিল আমার মুখ থেকে।
না শুনিনি, পরে আবার দেখলাম তোমাকে রেস্টুরেন্টে যদিও জানতাম না তোমরা ওখানে যাবে তাহলে যেতাম না পরের দিন তোমার জন্মদিন ছিল সেদিন‌ও খুব ইচ্ছা করছিল তোমার কাছে যেতে তোমাকে উইশ করতে।
তাহলে আসোনি কেন? আমি তো এসেছিলাম তোমার কাছে তুমি নিজের পরিচয় দাওনি, আমাকে সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে এড়িয়ে চলে গিয়েছিলে। তাথৈ এবং অভয় দুজনেই উত্তেজিত স্বরে কথা বলতে থাকে তাথৈ এবার এগিয়ে এসে দুহাতে অভয়ের কলার দুটো চেপে ধরে বলে: বলো কেন সেদিন নিজের পরিচয় দাওনি... কেন?
কেন পরিচয় দেবো? বেশ খুশীতেই তো ছিলে ওই সাম্যর সাথে।
বাইরে থেকে দেখেই বুঝে গেলে আমি খুশী আছি?
বাইরে থেকে কেন বুঝবো? আমার সামনে দাঁড়িয়ে সাম্য আমাকে বলছে তুমি ওর গার্লফ্রেন্ড আর তোমরা দুজনে দুজনকে খুব ভালোবাসো একসাথে সবাই মিলে টাইম এনজয় করতে বেরিয়েছো তাহলে কেন নিজের পরিচয় দেবো, বলো কেন নিজের পরিচয় দিয়ে তোমার খুশিতে বিঘ্ন ঘটাবো? আমি কোনোদিন‌ও তোমার খুশী নষ্ট করতে চাইনি সেদিন বাড়ি ফিরে ইচ্ছা করছিল... যদি মায়ের চিন্তা না থাকতো তাহলে হয়তো সেদিনই নিজেকে শেষ করে দিতাম।
ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?
কেন করবো না, তুমিও তো চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছিলে তাহলে কেন বিশ্বাস করবো না।
আমি ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি ওর কথা শুনিই নি কারণ আমি তোমাকে দেখছিলাম।
যদি শুনতেও তাহলেই বা কি করে নিতে?
তাহলে যে থাপ্পড়টা পরদিন ওকে একাকী মেরেছিলাম সেটা তখনই সবার সামনে মারতাম।
তুমি সাম্যকে থাপ্পড় মেরেছিলে? অভয়ের স্বরে অবাক ভাব।
হ্যাঁ।
কেন?
ও আমার হাত ধরেছিল তাই।
ও হাত ধরেছিল বলে তুমি থাপ্পড় মারলে, কেন? 
কারণ একজন ছাড়া আর কারো আমার হাত ধরার অধিকার নেই।
আর সেই একজনটা কে?
ছিল একজন, এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি কারণ সে খালি আমাকে কষ্ট দিতে জানে, এর থেকে তো..
ওই সাম্য ভালো? তাহলে যাও ওর কাছে আমি তো বললাম যেতে কিন্তু এখানে হাইজাম্প মারতে এসেছো কেন?
বেশ করেছি তুমি কে জিজ্ঞেস করার?
আমি আবার কে? আমাকে তুমি বাঁচিয়েছো তাই আমারও দায়িত্ব..
দরকার নেই তোমার দায়িত্ব পালনের?
সত্যি বলোতো তুমি হাইজাম্প মারতেই এসেছিলে তো? না মানে যে মেয়ে অন্ধকারে ভয় পায় সে এত উঁচু বিল্ডিং থেকে নীচে জাম্প মারবে এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।
তাথৈ শুনে আবার ঘুরে পাঁচিলের উপর উঠতে গেল সঙ্গে সঙ্গে অভয় আবার ওর একটা হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিল, অভয় বুঝতে পেরেছে সে এতবছর একটা ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে ছিল তাথৈ ওকে ঠকায়নি তারা দুজনেই পরিস্থিতি আর কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। হাত টানার সাথে তাথৈ অভয়ের কাছে চলে আসে দুজনে পরস্পরের একদম কাছে চলে এসেছে পরস্পরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়্যাম সরি তাথৈ, আমার তোমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল কিন্তু কি করবো বলো তোমার ফোন থেকে ওরকম ম্যাসেজ তারপর তুমি ফোন ধরছো না, তারপর তোমার দিদি আর ওই মহিলার ওরকম কথাবার্তা অন্য কিছু মাথায় আসেনি।
তাথৈ এতক্ষণ কান্না আটকে রেখেছিল এবার পুরো ভেঙে পরলো, "কেন বলো কেন এটা ভাবলে যে আমি তোমাকে ঠকাবো? কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে মন দেবো? আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি আর আজ‌ও তোমাকেই ভালোবাসি।
আমিও তো শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।
মিথ্যে বলছো তুমি, আমাকে তুমি ভালোবাসোনা সেই জন্যই ওই কলোনিতে তোমার কাছে গেলে তুমি দেখা করতে না, আমাকে তাড়িয়ে দিতে।
তোমার কি মনে হয় প্রথম দিন আমি না চাইলে তোমাকে ওরা আমার বাড়িতে ঢুকতে দিত? আমি তোমাকে কাছ থেকে দেখতে চাইছিলাম, তোমার সাথে একা কিছু সময় কাটাতে চাইছিলাম, কিন্তু নিজের পরিচয় দিতে পারিনি।
আমি তো বারবার বোঝাচ্ছিলাম যে আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি তবুও তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলে আবার তারপর থেকেতো তুমি দেখাই করতে না।
আসলে সেদিন তুমি তোমার জ্যেঠুর কাজকে সাপোর্ট করেছিলে তাই রাগ হয়েছিল..
আমি জানতাম না, সত্যিই জানতাম না, একবার তো পুরো সত্যি বলতে পারতে, বলোনি কেন?
বললাম না পারিনি তোমার মনে তোমার জ্যেঠু আর বাবার যে জায়গাটা আছে সেটা খারাপ করতে পারিনি।
তুমি হয়তো জানোনা আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন যেন কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দি‌ই।
অভয় দুটো হাত দিয়ে তাথৈএর দুটো গাল ধরে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিল তারপর বললো: তাথৈ আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোনো।
কি?
তোমার জ্যেঠু আর আমার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, প্রথমে এটা শুধুমাত্র আমার নিজস্ব প্রতিশোধের লড়াই ছিল কিন্তু এখন অনেক গরীব অসহায় মানুষছর ভাগ্য জড়িয়ে গেছে যারা আমার উপরে ভরসা করে আছে তাই আমি এখানে থেকে পিছনে হটতে পারবো না, আর তোমার বাবাও তোমার জ্যেঠুর সঙ্গ ছাড়বেন না তাই..
তুমি কি বলতে চাইছো?
আমি চাইনা তুমি কোনো রকম দ্বিধা বা কষ্টের মধ্যে কাটাও তাই তুমি ফিরে যাও আর আমাকে ভুলে যাও।
মুহূর্তে তাথৈ নিজেকে ছাড়িয়ে পিছনে সরে গেল তারপর একটু জোর গলায় বললো: এটা তুমি বললে কি করে?
তাথৈ..
আগে বলো এটা বললে কি করে?
অভয় তাথৈএর কাছে গিয়ে দুহাতে ওর দুটো হাত ধরে তারপর বলে: একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি বীরেন ভট্টাচার্য আর ওনার ভাই মানে তোমার বাবাকে ছাড়তে পারবো না, আমি ওনাদের ক্ষমা করতে পারবো না তাই আমি নিজে কি করে আশা করবো যে তুমি তোমার পরিবারের লোকেদের ক্ষতিকারীকে ক্ষমা করবে, তাই আমি চাই।
তুমি তো ক্ষতি করছো না।
মানে?
আমি ছোটো থেকেই দেখেছি জ্যেঠু জ্যেঠিমাকে আর বাবা মাকে অত্যাচার করতো এমনকি মারধর পর্যন্ত, আমি কখনো কিছু বলিনি কারণ মা বারণ করতেন, কিন্তু ওনারা তোমার‌ও ক্ষতি করেছেন শুধু তাই নয় জ্যেঠিমা বলছিলেন ওনারা আরও অনেক লোকের ক্ষতি করেছেন তাই ওনাদের শাস্তি পাওয়া দরকার, আর এই লড়াইতে আমি তোমার সঙ্গে থাকবো।
তাথৈ তুমি তোমার জ্যেঠুকে চেনোনা, উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না আর আমাদের এই লড়াইতে তোমার গায়ে যদি একটাও আঁচড় পরে তাহলে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে? হ্যাঁ এখন তো পারবেই, কিন্তু আমি পারবো না।
তাথৈ তুমি এখনো বোঝোনি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাওয়াটা আমার জন্য কতটা কষ্টকর,আমি তোমাকে..
তুমি আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবে না আর। অভয়কে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো তাথৈ...
বললাম তো না তবুও তুমি যদি জোর করো তাহলে তুমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করবো, বাড়িতে কিন্তু তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না।
তাথৈ... বেশ জোরেই নামটা নেয় অভয়, বলেছিলাম না এরকম কথা বলবে না
তাহলে তুমিও আর আমাকে দূরে যেতে বলবে না, আমি তোমার থেকে দূরে গিয়ে আর থাকতে পারবো না। তাথৈ অভয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে, অভয়‌ও আর কিছু বলে না সেও দুহাতে তাথৈকে বাহুবন্দী করে নেয়, প্রথমবার তারা পরস্পরকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে কিশোর অবস্থায় তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে একটা গণ্ডি টেনেছিল কিন্তু আজ সেই গণ্ডি নেই তাই তাদের বাধাও নেই।

বিদ্র: দুটো পার্ট দিলাম আশা করছি সবার ভালো লাগবে, আগের দুটো পার্টে সবাই ভালো রেসপন্স দিয়েছিলেন যে পছন্দ হয়েছে এটাও জানাবেন কেমন হয়েছে।
আর ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিতে ভুলবেন না, এবং খারাপ লাগলেও কমেন্ট করে জানাবেন।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Monen2000 - 18-10-2022, 12:34 AM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)