Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
                         পঞ্চদশ পর্ব

স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য যে। কোনোমতে কথা বলে অভয়।
হুমম, আমাকে আসতেই হলো ,কিছু কথা জানার আছে।
আমাকে মেরে ফেল এরকম সুযোগ বারবার পাবি না,
মেরেই ফেলতাম কিন্তু তারপর ভাবলাম বাণিজ্যনগরীতে তুই আর তোর লোকেরা আমার সাথে যা করেছিস সেটার প্রতিশোধ না নিয়ে এত সহজে মারবো কেন?
অভয়ের ঠোঁটে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে সে বলে: আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না।
তোর মনে হয় আমি তোকে এখান থেকে বেঁচে বেরোতে দেবো? আচ্ছা একটা কথা বলতো।
কি কথা?
আমার পিছনে পরলি কেন? শুধুমাত্র বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসা ছড়াতে চেয়েছি তাই?
অভয় উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে দেখে আবার জিজ্ঞেস করেন প্রশ্নটা কিন্তু তাও অভয় চুপ করে থাকে।
বলবিনা? আচ্ছা অন্য প্রশ্ন করছি আমার সমস্ত টাকা তুই নিয়েছিস আমি জানি? কোথায় টাকাগুলো?
বিলিয়ে দিয়েছি।
কাদের?
অনেকেই আছে যাদের তুই সর্বনাশ করেছিস।
শিউলী কোথায়?
তোর নাগালের বাইরে।
কোথায়?
অভয় এবার চুপ করে যায়। বীরেন ভট্টাচার্য এবার একহাতে অভয়ের লম্বা চুল টেনে ধরেন "বল কোথায় আছে আমার টাকা, বল"
বললাম তো বিলিয়ে দিয়েছি।
ওত টাকা তুই বিলিয়ে দিয়েছিস এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
সেটা তোর ব্যাপার।
শিউলীকে কোথায় রেখেছিস?
অভয় আবার চুপ হয়ে যায় দেখে বীরেন বাবু বলেন: বলবিনা। আচ্ছা সত্যি বলতো তুই কে?
আমার নাম তো জানিস "এআরসি"
ওটা তো আসল নয়, তোর আসল নাম কি?
আবার অভয় চুপ করে যায়।
এটাও বলবিনা বেশ তোর ইচ্ছা,এবার বীরেন বাবু একজনের হাত থেকে রবারের চ‌ওড়া শক্ত অথচ নমনীয় লম্বা একটা বেল্টের মতো জিনিস হাতে তুলে নেন বোঝাই যায় এগুলো দিয়েই এতক্ষণ ওরা অভয়কে মেরেছে "তবে এটা জেনে রাখ তোকে এখনই মারবো না আরও অনেক হিসাব বাকি আছে আগে তোর মুখ থেকে শিউলীর ঠিকানা আর আমার টাকার হদিস বার করবো তারপর তিলে তিলে মারবো" বলে ওই বেল্ট দিয়ে অভয়কে মারতে শুরু করেন, কিছুক্ষণ পর থেমে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন।
অভয় বিদ্রুপের স্বরে বলে: ভুল করছিস, মেরে ফেল আমাকে। কথাটা বলার সাথেই চোয়াল একটা ঘুষি খেলো অভয় আর ঘুষিটা মেরেছে রকি। এবার রকির পিছনে মাহমুদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে একটা প্রশ্ন করে অভয় "কেন এরকম করলে মাহমুদ, কেন বিশ্বাসঘাতকতা করলে?"
মাহমুদ হেসে বলে "সেটা না জানলেও চলবে"
আমির কোথায় মাহমুদ?
বডিটা নিয়ে উসমান ভাইজান কি করেছে বলা মুশকিল।
দোয়া করো আমি যেন এখান থেকে বেঁচে বেরোতে না পারি, আর যদি পারি তাহলে বীরেন ভট্টাচার্যের আগে তোমাদের দুই ভাইকে মারবো। কথাটা বলার সাথে সাথে পেটে দুটো ঘুষি আছড়ে পরে তারপর রকির গলা শুনতে পায়: মামা বলোতো এটাকে এখানেই খতম করে দিচ্ছি।
সবুড় কর রকি এত তাড়া কিসের, আগে আমার অপমানের জ্বালাটা নেভাই।
আবার বিদ্রুপের হাসি শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে সাথে কিছু কথা "ওই অপেক্ষায় থাকিস না বীরেন ভট্টাচার্য, তাহলে তোর জীবন নিভে যাবে"।
রকি এবার পিস্তল বার করে কিন্তু এবারও বীরেন বাবু তাকে নিরস্ত করেন,তারপর কয়েকজনকে আদেশ দেন "একে সামলে রাখবি যেন পালাতে না পারে, তোরা এর খাতিরযত্ন করতে থাক, কিন্তু দেখিস মেরে ফেলিস না" তারপর অভয়ের দিকে ফিরে বলেন "আমি আসছি বস্তিটা দখল করতে হবে, এতদিন তুই আটকে রেখেছিলি, এখন তুইও ওখানে নেই আর তোর সেই বিশ্বস্ত কুকুর টাও নেই তাই আমাকে আটকানোর কেউ নেই"।
কথাটা শুনেই চমকে ওঠে অভয় ওখানে মা আছে, এই লোকটা মাকে দেখতে পেলে তাকে ছাড়বে না কিন্তু এইমুহূর্তে সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না, কোনোমতে যদি হাতদুটো মুক্ত করতে পারতো, যদিও এই শহরে আসার সাথে সাথেই মায়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে ওখানে বাণিজ্যনগরী থেকে আনা নিজের অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক আছে যার কথা সে আর আমির ছাড়া কেউ জানেনা তাদের কাজ সাধারণ ভাবে বসবাস করা কিন্তু যদি কখনো প্রয়োজনে হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ মাকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে চলে যাবে এইরকমই হুকুম দেওয়া আছে আর অভয় জানে ওই লোকগুলো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। বীরেন বাবু বলে চলেন: ওরা এতদিন আমাকে জ্বালিয়েছে আজ আমি ওদের পুরো বস্তি জ্বালিয়ে দেবো"।
বীরেন ভট্টাচার্য... একটা শান্ত অথচ দৃঢ় স্বর শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে যা করার কর কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রাখিস না।
চিন্তা করিস না, বস্তি দখল করে এসে তোকে মারবো ততক্ষণ আমার লোকেরা তোর খাতিরযত্ন করবে। বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বীরেন বাবু আর তার পিছনে রকি ও ধীরেন বাবু, যাওয়ার আগে ধীরেন বাবু অভয়ের কাছে এসে তাকে বললেন: কে তুই? তোকে আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে।
আপনার দাদা ভুল করলেন আমাকে বাঁচিয়ে রেখে, চিন্তা নেই কথা দিচ্ছি যেদিন আমার পরিচয় পাবেন সেদিন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে।
তার আগে আমি তোকে শেষ করবো।
ধীরেন... বীরেন বাবুর ডাক শোনা যায়, ধীরেন বাবু অভয়কে ছেড়ে বেরিয়ে যান।
দাদা ওকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করছো।
কে বললো ওকে ছেড়ে দেবো, আগে শিউলীর হদিস আর এটা জানি আমার টাকা কার কার কাছে রেখেছে তারপর ওকে মেরে ফেলতে কতক্ষণ।
ওর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে কার সাথে যেন মিল আছে।
হুমম এটা তুই ঠিক বলেছিস, আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল, ঠিক আছে বস্তিতে যে বাড়িতে ও থাকতো সেখানে কিছু না কিছু ঠিক জানা যাবে।
বীরেন ভট্টাচার্য আর তার সাথের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অভয় একটু ধাতস্থ হয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে ঘরে এখন টোটাল চারজন লোক আর চারজন‌ই পুরো গুণ্ডা প্রকৃতির, ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে অভয়ের জিনিসগুলো নিয়ে।
একজন বলে ঘড়িটা নিশ্চয়ই খুব দামী।
হ্যাঁ, মোবাইলটাও।
জুতো জোড়া দেখো, দামি তো বটেই বিদেশি কোম্পানির মনে হচ্ছে।
অভয় ওদের উদ্দেশ্যে বলে: দেখে কি লাভ? বীরেন ভট্টাচার্য ওগুলো কোনোদিন‌ও তোমাদের দেবে না, কিন্তু আমি দিতে পারি।
লোকগুলো এবার একসাথে ওর দিকে তাকায়, একজন বলে: তোর কি মনে হয় আমাদের লোভ দেখালে তোকে যেতে দেবো?
আমি শুধু সত্যিটা বললাম আর সেটা তোমরাও জানো।
তার দরকার নেই তোকে মারার পরে এগুলোই আমরা ভাগ করে নেবো।
ওগুলো আমি এখান থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।
তোর এখনো মনে হয় তুই এখান থেকে পালাতে পারবি?
সেটা দেখতেই পারবে।
তবে রে। বলে লোকগুলো আবার অভয়ের জিনিসগুলো রেখে ঘরের এক কোনে রাখা কয়েকটা নীরেট রবারের ডাণ্ডা হাতে নেয়, অভয় আবার চোখ বন্ধ করে মেডিটেশনে ডুবে যেতে থাকে, জামাটা অনেক আগেই খুলে ফেলা হয়েছে গায়ের গেঞ্জিটাও আগের প্রহারের পরে অক্ষত নেই সেটাও গায়ে নেই, শুধু জাঙ্গিয়া পরে আছে সে, খালি গায়ে পিঠে বুকে পাঁজরের উপর একের পর এক আঘাত পরতে থাকে একটা সময় আবার সে অচেতনতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে আমির, রয় তাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে ভালোবাসে তার আম্মিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে আর এখন সে রয়ের আম্মিকে বাঁচাতে পারছে না, ওই বস্তিতে যদিও আম্মির হেফাজতের জন্য লোক আছে কিন্তু তারা কি সময় মতো আম্মিকে নিয়ে বেরোতে পারবে? আমির আর ভাবতে পারে না সে চোখ বন্ধ করে, হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো, আমির অনুভব করে যারা তার হাত ধরে রেখেছিল তারা মাটিতে পরে গেল আর উসমান ও আরো কয়েকজন পালাচ্ছে, আমিরের পিছন থেকে কেউ বা কারা ওদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
আমির পিছনে ফিরে তাকায় দেখে বশির ও আরও কয়েকজন উসমান আর তার দলের উপর আক্রমণ করেছে, এবার বশির আমিরের কাছে আসে "ভাইজান আপনি ঠিক আছেন?" তারপর বাকিদের উদ্দেশ্যে হুকুম দেয় "এই ওদের পিছু নে সবকটাকে শেষ করবো"।
আমির ওদের থামায়: এখন দরকার নেই বশির কিন্তু.. কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সে তারপর একটু চুপ থেকে বলে তুমি কিভাবে জানলে যে উসমান গদ্দারি করেছে?
ভাইজান ওর উপর অনেকদিন থেকেই আমার নজর ছিল, কিন্তু প্রমাণ পাইনি।
এখন কি এমন প্রমাণ পেয়েছো?
আপনি বলেছিলেন মনে আছে যে বীরেন ভট্টাচার্যের কাছাকাছি থাকবে এমন একজন ফিট করতে?
হ্যাঁ।
সেরকম লোক ছিল সেই বলেছে যে ইদানিং বেশ কয়েকদিন ধরে উসমান আর ওর ভাই মাহমুদ ঘনঘন বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করছে আগে যেত না এখন কয়েকদিন ধরে যাচ্ছে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছে, যদিও কি কথা হতো সেটা সে জানতে পারেনি।
তারপর?
তারপর আজ সে আমাকে জানায় বীরেন ভট্টাচার্য ভয়ংকর কিছু প্ল্যান করেছে তখনই আমি আপনার ওখানে যাই কিন্তু আমি পৌঁছনোর আগেই আপনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান‌
তখনই তুমি আমাদের পিছু নাও এবং আমাকে ম্যাসেজ করো।
না, আমি আপনার অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি র সাথে কথা বলি, সেই বলে আপনি এই কিছুক্ষণ আগে একজনের সাথে বেরিয়ে গেছেন, আমি বুঝতে পারি সে কে তবুও উসমানের ছবি দেখিয়ে শিওর হ‌ই।
তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে?
আমি সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করে জেনে নি‌ই আপনি কোনদিকে গেছেন, তারপর ওইদিকে র‌ওনা দি‌ই ভাগ্য ভালো রাস্তাতেই আপনাদের পেয়ে যাই, নাহলে কোথায় নিয়ে যেতো বলা মুশকিল।
ম্যাসেজটা যে ওকে নিয়ে ছিল সেটা কোনোভাবে ও বুঝতে পারে, কিন্তু তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি ঠিক টাইমে না এলে..
আমি ট্রাফিক সিগন্যালে একটু আটকে পরি তারপর আবার একটা লরি আমাদের সামনে অনেকক্ষণ থাকায় পিছিয়ে পড়ি ,তারপর রাস্তায় আপনার গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে থাকতে দেখি তখনই বুঝি আপনি কাছাকাছি কোথাও আছেন তারপর খুঁজতে খুঁজতে চলে আসি ইস যদি আরেকটু আগে আসতে পারতাম  তাহলে আপনাকে এতটা কষ্ট পেতে হতো না।
যাইহোক বশির এখন তাড়াতাড়ি চলো বস্তিতে হামলা হবে তার আগে আমাদের ওখানে গিয়ে বসকে সব জানাতে হবে,আমাদের ওখানের লোকদের বাঁচাতে হবে আর আরো একজনকে বাঁচাতে হবে তাড়াতাড়ি চলো।
কিন্তু ভাইজান এইমুহূর্তে আপনার চোট লেগেছে আগে ডাক্তারের কাছে চলুন।
তার সময় নেই তাড়াতাড়ি চলো।
গাড়িতে উঠেই আমির বশিরের কাছে ফোন চায় ওর ফোনটা উসমান ভেঙে দিয়েছে, ফোন নিয়ে সে রয়কে ফোন করে কিন্তু এখন রয়ের ফোন সুইচড অফ, আমিরের দুশ্চিন্তা শতগুণ বেড়ে যায়, একটু পরেই তারা বস্তিতে পৌঁছায় তখন সেখানে রীতিমতো ফায়ারিং চলছে, এই এলাকায় আগে থেকেই পুলিশের লোকের ঢোকা বারণ আছে তার উপর বীরেন ভট্টাচার্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে আজ রাতে এদিকে কোনো অবস্থাতেই পুলিশের না আসার ব্যাপারটা আরো পোক্ত ও সুনিশ্চিত করেছেন তাই দুপক্ষই নিশ্চিন্তে গুলি চালাচ্ছে, যদিও বীরেন ভট্টাচার্য উপস্থিত নেই কিন্তু জগা রকি সহ বীরেন ভট্টাচার্যের দলের বেশ কয়েকজন বড়ো বড়ো মাথা আছে সাথে আরও কিছু লোক।
বীরেন ভট্টাচার্য ভেবেছিলেন এআরসি আর আমিরের অনুপস্থিতিতে বস্তিতে তার দলের লোকদের আটকানো তো দূরের কথা সামনে আসতেও কেউ সাহস পাবে না, উসমান ও মাহমুদের সাহায্যে খুব সহজেই এখানকার দখল নিতে পারবেন কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো বশির আগেই এখানের কয়েকজনকে জানিয়ে দিয়েজিল যে উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে তাই মাহমুদকে আসতে দেখেই এলাকার লোক আটকে দেয় ফলে দুপক্ষে ফায়ারিং শুরু হয়ে যায়।
মাহমুদ একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে তার দাদা আমিরকে খতম করে দিয়েছে তাই সে নিশ্চিন্ত মনে সাহসের সাথে বস্তিতে ঢুকে পরেছিল কিন্তু হঠাৎ করেই আমিরকে আসতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, বস্তির দিক থেকে তাদের উপর ফায়ারিং তো হচ্ছিলোই এখন পিছন থেকেও আমির বশিররা গুলি চালাতে লাগলো যদিও লড়াইটা একেবারে খোলা মাঠে হচ্ছিল না পুরো বস্তিটা অনেকটা এলাকা জুড়ে এবং তার মধ্যে অসংখ্য অলিগলি আছে, সেখানেই প্রায় প্রতি গলিতে কারো না কারো লাশ পড়ে আছে বা কোথাও কেউ আহত হয়ে গোঙাচ্ছে।
বস্তিটা এবং এখানকার অলিগলি বশির আর মাহমুদের দলের লোক এবং বস্তির বাসিন্দারা খুব ভালো করে চেনে আমির‌ও এতদিন ঘুরে ভালোই চিনে গেছে কিন্তু রকি জগা আর ওদের নিজস্ব দলের লোকেরা ততটা ভালো চেনেনা তার উপরে রাতের বেলা, ফলে তাদের লুকোনোর জায়গা র‌ইলো না এবং যেখানেই যায় বা লুকোতে চেষ্টা করে সামনে বিপক্ষের লোক তাদের খুঁজে পায়, একে একে তারা মারা মরতে লাগলো মাহমুদ ও বুঝলো এখানে সে আর বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না থাকলে মারা পড়বে ফলে সে পালাতে বাধ্য হলো অপরদিকে রকি জগা এখনো বেঁচে আছে বটে কিন্তু তারাও বুঝলো এখান থেকে না পালালে তারা বাঁচবে না ফলে তারাও পিছু হটলো এবং কোনোমতে বস্তি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে বাঁচলো।
যুদ্ধ জয়ের পর সবাই হর্ষধ্বনি করে উঠলো কেউ সিটি দিচ্ছে, কেউ তালি মারছে শুধু আমির বাদে, সে দ্রুত বাড়ির দিকে গেল পিছু পিছু বশির এবং আরও কয়েকজন গেল। গেট ঠেলে ঢুকেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল "সর্বনাশ হয়ে গেছে" কারণ সেখানে রয়ের গাড়িটা নেই, আর সে খুব ভালো করেই জানে রয় বেরোলে গাড়ি নিয়েই বেরোয় গাড়ি নেই মানে রয় নেই আমির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো, কিন্তু বেশিক্ষণ না আম্মির কথা মনে পড়তেই সে ছুটে বাড়ির ভিতরে গেল কেউ নেই সে জানে এখানে একটা দ্বিতীয় দরজা আছে এমার্জেন্সীতে বেরোনোর জন্য, সে তৎক্ষণাৎ ওটা দিয়ে বেরিয়ে ছুট লাগালো, বাড়ির পিছনের দিকে ওদিক দিয়ে একটা রাস্তা আছে সেটা দিয়ে কিছুদূর গিয়ে বস্তির একেবারে উল্টোদিকে বেরোনোর রাস্তা আছে সেখান থেকে বেরোলে একটা খাল পড়বে সেটা পার করার একটা ছোট্ট কাঠের সাঁকো আছে সেটা পার করলেই আরেকটা কলোনি আছে সেটার ভিতর দিয়ে সোজা অনেকটা গেলে কলোনি ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে একটা হাইওয়ে পরে, আমির ওই রাস্তা দিয়েই ছুটে চলে পিছনে বশির আর কয়েকজন আসছে, বস্তিটা পেরিয়ে খাল পার হয়ে কলোনির ভিতর দিয়ে দৌড়ে হাইওয়ের সামনে আসে কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পায় না, একটু এদিক ওদিক খুঁজতেই দেখে রাস্তার একদম উল্টোদিকে কিছুটা ডানদিকে একটা বাসস্টপে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে চিনতে অসুবিধা হয়না আমিরের এক দৌড়ে রাস্তাটা কোনোমতে পার করে সেখানে পৌঁছে দুই হাঁটতে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁফাতে থাকে, আম্মি, বিন্দু মাসি আর বিদিশা ঠিক আছে, ঠিক সময়ে তাদের বাইরে বার করে আনা হয়েছে।

কতক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে ছিল বুঝতে পারে না অভয় এখন রাত না দিন সেটাও বুঝতে পারে না, ঠিক আগের বারের মতোই তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে নিজের চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্রত হবার অপেক্ষা করতে থাকে, বুঝতে পারে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে তাকে সারা গায়ে ব্যাথা কিন্তু গুপ্ত মেডিটেশনের জন্য সেগুলো সহ্য করে নেয়, আরেকটা জিনিস খেয়াল করে এখন তাকে মেঝেতে উবুড় করে শুইয়ে রাখা হয়েছেহ শেষ বার যখন জ্ঞান ছিল তখন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়ে ছিল, যদিও এখনো তার হাতপা বাঁধা আরেকটা জিনিস তার প্রচণ্ড পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ এবং ক্ষিদেও পেয়েছে সেই মাহমুদের কথা শুনে বেরোনোর আগে খেয়েছিল তারপর কতক্ষণ যে পেটে কিছু পড়েনি তা আন্দাজ করা কঠিন।
এখান থেকে পালাতে গেলে আগে গায়ে কিছুটা শক্তি দরকার তার থেকেও বড়ো কথা অন্তত হাতদুটো মুক্ত করতে হবে, কিন্তু কিভাবে? সে চুপ করে পরে র‌ইলো আবার মেডিটেশনে ডুবে গেল দেহে যতটুকু শক্তি আছে তা একত্রিত করার চেষ্টা করতে থাকে, সাথে মানসিক শক্তিকেও কিন্তু সমস্যা হলো মন তারবশীভূত কিন্তু এইমুহূর্তে শরীরের উপর যা অত্যাচার হয়েছে তাতে তাকে বশে আনা কিছুটা কঠিন তার উপরে অভুক্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আছে সে।
হাতপা বাধা অবস্থাতেই উবুড় হয়ে ছিল অভয় এবার একটু নড়ার চেষ্টা করতেই বুঝলেন শরীরের অবস্থা যতটা ভেবেছিল তার থেকেও খারাপ মারের যন্ত্রণা তো আছেই তার উপর প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে, অভয় আরও কিছুক্ষণ অসাড় হয়ে পড়ে র‌ইলো, একসময় আবার গাঢ় ঘুমে ডুবে গেল যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে কিছুটা চাঙ্গা লাগছে যদিও পেটে ক্ষিদে ,গলায় তৃষ্ণা আর শরীরে ব্যাথা তিনটেই আছে, সে আস্তে আস্তে নিজের হাতদুটো মুক্ত করতে চেষ্টা করে এখান থেকে পালাতে হলে আগে হাতপা বাঁধন মুক্ত করতে হবে। দুটো হাত একসাথে কবজির কাছে দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে বাধা ছিল ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ ধরে দুটো কবজি নাড়িয়ে দাঁত দিয়ে চেষ্টা করে কয়েকটা প্যাচ থেকে মুক্ত করলো কিন্তু এখনো কিছুটা বাকী এদিকে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে আরও কিছুক্ষণ পরে দুটো হাত‌ই বন্ধন মুক্ত করতে সক্ষম হলো, এখানকার গুণ্ডাদের ঘটে তেমন কিছু নেই হ এই দড়িটাই যদি নাইলনের সরু অথচ শক্ত দড়ি হতো তাহলে খুলতে পারতো না কারণ সেক্ষেত্রে দড়িটা চামড়া কেটে মাংসে বসে যেত
অভয় দুহাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পারলো না সারা গায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা সে আবার চেষ্টা করলো কিন্তু এবারও ব্যার্থ হলো, তৃতীয় বারে ব্যাথা সহ্য করে কোনোমতে উঠে বসলো, তারপর আস্তে আস্তে পায়ের বাঁধনটা খুলে নিল এখন সে সম্পূর্ণ বন্ধন মুক্ত, আস্তে আস্তে উঠে ঘরের ভিতরেই পায়চারি করতে থাকে কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপেই মনে হচ্ছে য়যেন কেউ শরীরে বিদ্যুৎ শক্ দিচ্ছে, বেশীক্ষণ থাকতে পারলো না, আবার মেঝেতে বসে হাঁফাতে লাগলো, এখান থেকে পালাতে হলে এখানের গার্ড যারা আছে তাদের মোকাবেলা করতেই হবে আর তার জন্য আগে শরীরের ব্যাথাটার সাথে যুঝতে হবে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে বন্ধ দরজার ওপাশে পায়ের আওয়াজ শুনতে পায় বেশি না একজনের, অভয় বোঝে এটাই সুযোগ সে মেঝেতে পরে থাকা যে দুটো দড়ি দিয়ে তাকে বাধা হয়েছিল সেই দুটো নিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুহাতে দড়ির দুটো প্রান্ত ধরে, একটু পরেই দরজা খুলে একজন ভিতরে ঢুকলো কিন্তু সে কিছু করা বা বোঝার আগেই পিছন থেকে তার গলায় দড়িটা পেঁচিয়ে ধরে অভয়, লোকটা ছটফট করতে থাকে অভয় জানে এইভাবে সে বেশীক্ষণ ধরে থাকতে পারবে না তার শরীর এখন দুর্বল যতটুকু শক্তি সে সঞ্চয় করতে পেরেছে তা মেপে ব্যবহার করতে হবে।
এবার দড়ির দুটো প্রান্ত বাহাতে ধরে ডানহাতের তালুর কোনা দিয়ে লোকটার মাথার পিছনে আঘাত করে, প্রথম আঘাতে কিছু হয় না, লোকটা তখন‌ও নিজেকে মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে এবার অভয় দ্বিতীয়বার আবার আঘাত করে এবার আগেরবারের থেকে একটু বেশি জোড়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটা অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। অভয় এবার দ্রুত লোকটার গা থেকে জামা প্যান্ট খুলে পরে নেয় ঠিকঠাক ফিটিং হয় না কিন্তু আপাতত এতেই কাজ চালাতে হবে। এবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন সময় বাইরে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পায় সে তৎক্ষণাৎ আবার দরজার আড়ালে চলে যায়, আরেকটা লোক টলতে টলতে তার সঙ্গীকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে এবং ঢুকেই মেঝেতে একজনকে পরে থাকতে দেখে ভালো করে দেখার জন্য একটু ঝুঁকতেই অভয় পিছন থেকে একেও মাথায় আঘাত করে সঙ্গে সঙ্গে এও লুটিয়ে পরে এবার এর পকেট সার্চ করে নিজের মোবাইলটা পেয়ে যায় যদিও সেটা সুইচড অফ হয়ে গেছে সাথে কিছু টাকা আর একটা পিস্তল পায়।
এবার আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে, দেখে এক কোনে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে বাকি দুজন মদ খাচ্ছে, নেশার জন্যই বোধহয় ওরা অভয়ের উপস্থিতি এখনো টের পায়নি, অভয় জানে সুস্থ থাকলে এই দুজনকে একসাথে ঝেড়ে ফেলা তার কাছে কিছুই নয়, কিন্তু শরীরের এই দুর্বলতায় সেটা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু উপায় নেই একদিকে সুবিধা ওরা নেশা করে আছে। অভয় প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে একজনের পিছনে গেল তারপর আচমকাই পিস্তলের বাট দিয়ে ওর মাথায় মারলো সঙ্গে সঙ্গে তার মাথাটা টেবিলের উপর পরে গেল আঘাতের জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, প্রথমেই গুলি চালালো না কারণ গুলির আওয়াজে যদি বাইরে কেউ থাকে সে ভিতরে চলে আসবে তখন অভয়ের পালানো আটকে যেতে পারে, এই হটাৎ আক্রমণে অপরজন হতভম্ব হয়ে যায় সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই অভয় তার দিকে পিস্তল তাক করে ইশারায় দুহাত মাথার উপর তুলতে বলে লোকটা তাই করে, অভয় জিজ্ঞেস করে: বাইরে কেউ আছে?
লোকটা ঘাড় নেড়ে না জানায়, অভয় আবার জিজ্ঞেস করে আমার ঘড়ি কোথায়?, লোকটা নিজের পকেট থেকে অভয়ের হাতঘড়িটা বার করে টেবিলের উপর রাখে, "আমার জুতো?" শুনে লোকটা চোখ দিয়ে একটা জায়গায় দেখায়।
"নিয়ে আয়"
লোকটা আস্তে আস্তে এগোতে থাকে অভয় ধীরে ধীরে ওর পিছনে যেতে থাকে এবার  বারান্দার এক কোণে যেতেই অভয় নিজের জুতো জোড়া দেখতে পায় এগুলো বোধহয় সত্যিই ওদের পছন্দ হয়েছিল, লোকটা এতক্ষণ অভয়ের দিকে পিছন ফিরে ছিল এবার সে ঘোরার আগেই অভয় একেও পিস্তলের বাট দিয়ে অজ্ঞান করে,পিস্তল চালালো না কারণ এর কথা সে বিশ্বাস করেনি যদি বাইরে কেউ থাকে তখন? কিন্তু না জুতো পড়ে ঘড়ি নিয়ে বাইরে আসে, আসার আগে প্রথম জনের মতো বাকিদের পকেট থেকেও যত টাকা ছিল সব নিয়ে এসেছে, সেদিন আমিরের বিপদের কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে ওয়ালেটটা আনেনি তারপর মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, গাড়িটাও নেই কাজেই ক্যাশ টাকার প্রয়োজনে হবে বুঝেই সে টাকাগুলো নিয়ে নেয়, বাইরে এসে দেখে কেউ নেই, ঘড়ির সময় দেখে বোঝে রাত হয়ে গেছে কিন্তু এটা সেই জায়গা নয় যেখানে তাকে ধরা হয়েছিল, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় অন্যত্র নিয়ে আসা হয়েছে, আর ওর গাড়িটাও নেই, কোথায় ওকে নিয়ে এসেছে সেটা এই মুহুর্তে বোঝা মুশকিল আন্দাজমতো একটা দিকে সে যত দ্রুত সম্ভব দৌড়াতে থাকে যদিও শরীরের এই অবস্থায় সেটা একটু জোরে হাঁটার‌ই সমান, সে জানে চারজনের জ্ঞান যে কোনো সময় ফিরে আসবে কারণ আঘাতগুলো ঠিক মতো হয়নি আর জ্ঞান ফিরে এলেই ওরা অভয়কে খুঁজতে বেরোবো, তার আগেই একটা সুরক্ষিত জায়গায় যেতে হবে অভয়কে।
অভয় প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে কিন্তু বেশিক্ষণ পারে না একটু পর পর‌ই হাঁফাতে থাকে, কিছুক্ষণ এইভাবে চলার পরে কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের আওয়াজ পায় যদিও খুব কম,মনে হয় সেদিকে রাস্তা আছে। অভয় নতুন উদ্যমে সেদিকে যেতে থাকে সত্যিই একটা হাইওয়ে আছে, গাড়ি চলাচল কম, এদিক ওদিক চাইতেই একদিকে একটা গাড়ি আসতে দেখে অভয় সেদিকে হাত  নাড়াতে নাড়াতে দৌড়াতে থাকে গাড়িটা কে চালাচ্ছে সেটা দেখার সময় নেই, কিন্তু আর পারে না একে খালি পেট, তার উপরে পিপাসায় গলা কাঠ অনেকক্ষণ থেকেই পালানোর তাড়ায় যেখানে বন্দী ছিল সেখানে জল খেতে ভুলে গেছে, সব থেকে বেশি শরীরের যন্ত্রণা নিয়ে এতটা পথ দৌড়ে এসেছে, সে গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায়, ভাগ্য এবারেও ভালো যে গাড়ির ড্রাইভার সঠিক সময়ে গাড়ির ব্রেক কষেছিলেন, অজ্ঞান হবার আগে অভয় কারো একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।

"আমির তুমি এখানে, আর এত হাফাচ্ছো কেন? হঠাৎই আমির এবং সাথে আরো কয়েকজনকে দৌড়ে তাদের দিকে আসতে দেখে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
কিছুনা আম্মি দৌড়াতে দৌড়াতে আসছিলাম যাতে দেরী না হয়ে যায়।
দেরী কিসের আর তোমার বন্ধু কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না, এদিকে এরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
আম্মি সেইজন্যই তো দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম।
মানে।
আসলে প্রথমে ঠিক ছিল আমরা আবার নিজেদের শহরে ফিরে যাবো, রয় ওদিকে একটা মিটিং সেরে।সোজা এয়ারপোর্টে দেখা করবে তাই এদের বলে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছিল।
তা এখন কি হয়েছে?
এখন ওর যাওয়াটা একটু আটকে গেছে আরেকটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং এসে গেছে, বুঝতেই তো পারছেন নতুন কনট্র্যাক্ট পেয়েছি আমরা তাই, এদিকে আপনারা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবেন তাই আমি দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম আরকি।
তুমি সব কথা বলছো না, আমার ছেলের কিছু একটা বিপদ হয়েছে আমি বুঝতে পারছি।
আম্মি আম্মি আমার কথা শুনুন ওর কিছু হয়নি এইতো খানিকক্ষণ আগেও ওর সাথে আমার কথা হয়েছে, মিটিংয়ে ঢোকার আগে মোবাইল বন্ধ করতে হবে তাই আমাকে জানিয়ে দিয়েছে, আপনি চলুন ঘরে গিয়ে রেস্ট নেবেন।
তুমি সত্যি বলছো, আমার ছেলের সাথে তোমার কথা হয়েছে?
হ্যাঁ, আম্মি হয়েছে।
অমৃতাদেবীর কপালে ভ্রুকুটি তাও থেকেই যায় যদিও তিনি মুখে কিছু বলেন না। প্রায় ভোররাতে অমৃতাদেবী ও বিন্দু মাসি ঘুমিয়ে পড়লে বিদিশা আমিরকে চেপে ধরে "আমির এবার সত্যিটা বলো তো, রয় কোথায়?"
বললাম তো একটা মিটিংয়ে।
উঁহু, মিটিং নয়, এখান থেকে যখন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় তখন একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেটা এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য নয়, আসল ব্যাপারটা কি?
কি আবার আসল ব্যাপার? বললাম তো রয় মিটিংয়ে যান আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
বিদিশা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এমন সময় বশির ছুটতে ছুটতে আসে "ভাইজান ভাইজান" ওর গলায় আতঙ্ক দুঃখ সব একসাথে।
কি  হয়েছে বশির?
আপনি একবার চলুন।
কোথায়?
চলুন না।
কোথায় সেটা তো বলবে? শেষের কথাটা বলে বিদিশা। কিন্তু বশির কিছু বলে না।
আমি এখন আম্মিকে একা ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না বশির।
ভাইজান আম্মি এখন ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু..
কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বলবে। এবার বিদিশার গলায় একটু রাগ।
ভাইজান ওইদিকে একটা গাড়ি ওভার ব্রিজ থেকে নীচে রেললাইনের উপরে পরে গেছে মানে গাড়ি পাওয়া গেছে ভাঙাচোরা অবস্থায় আর গাড়িটা বসের গাড়ির মতো লাগছে।
আমির সঙ্গে সঙ্গে বশিরের কলার চেপে ধরে"কি বলছো বশির, ভেবে বলছো?"
ভাইজান সেইজন্যই তো বলছি আপনি একবার চলুন আপনি ঠিক চিনতে পারবেন, আর আম্মির খেয়াল আমার লোকেরা রাখবে তাছাড়া বীরেন ভট্টাচার্য একবার মাত খেয়েছে এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বার অ্যাটাক করবে না।
দ্বিতীয় বার? তারমানে আগে একবার অ্যাটাক হয়েছে? কাল রাতেই তাই না? সত্যি বলো আমির.. রয় কোথায়?
আমির উত্তর দেবে কি তার মাথা কাজ করছে না, বিদিশা আবার বলে "আমির তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি"।
বসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিনমিন করে বশির উত্তর দেয়।
তোমার নাম বশির না? চলো আমি যাবো আমির থাকুক এখানে। বলে হাঁটা লাগায়, পিছনে বশির যায় এবং সব শেষে আমির। যেতে যেতে বিদিশা জিজ্ঞেস করে "এসব কিভাবে হলো আমির?"
আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। সারা রাস্তা আর কেউ কোনো কথা বলে না, স্পটে পৌঁছে সবাই দেখে পুলিশ ঘিরে রেখেছে জায়গাটা আর লোকজন ভীড় করে আছে, ট্রেন চলাচল আপাতত বন্ধ। আমিররা ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়, পুলিশকে বলে গাড়িটা দেখতে গিয়ে দেখে একটা ভাঙা এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া একটা গাড়ির অবশেষ পরে আছে, এবং এদিক ওদিক গাড়ির কিছু পুড়ে যাওয়া বা কিছু আধপোড়া অংশ ছিটকে পরে আছে।
আশেপাশের লোকজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে, পুলিশের একজন আমিরের দিকে এগিয়ে আসেন আমিরকে জিজ্ঞেস করেন "গাড়িটা কি আপনাদের কারো?
অফিসার গাড়িটা তো পুরো পুড়ে গেছে শনাক্ত করা যায় এমন কিছু পেয়েছেন? গাড়ির ভিতরে কেউ ছিল?।
না, গাড়ির ভিতরে কোনো বডি এখনো পাইনি তবে ফরেনসিক এলে আরও ক্লিয়ার হবে,তবে একটা জিনিস পেয়েছি এই দেখুন।বলে অফিসারটি একটা গাড়ির নাম্বার প্লেট দেখায় তারপর বলেন "এটা কোনো কারনে উপর থেকে নীচে পরার সাথে সাথে খুলে ছিটকে অন্য জায়গায় পরে তাই আগুনে তেমন ক্ষতি হয় নি, নাম্বারপ্লেটটা দেখতেই হাত থেকে পরে যায় আমিরের, সে নিজেও কয়েকপা পিছনে পিছিয়ে যায় প্রায় পরে যাচ্ছিল কিন্তু বিদিশা ধরে ফেলে সে হাঁটু মুড়ি বসে পরে, একজন শিশুর মতো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
বিদিশা ওকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েও পারে না কারণ তার‌ও তখন কান্না পাচ্ছে তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে আমিরের সামনে গিয়ে ওর মুখটা ধরে বলে "ছিঃ আমির এভাবে কাঁদছো কেন? শুনলে না অফিসার কি বললেন কোনো বডি পাওয়া যায় নি, তার মানে রয়ের কিছু হয়নি"।
কিন্তু... কিন্তু ওই গাড়িটা রয়ের।
হতে পারে, কিন্তু রয় তো ওর মধ্যে নেই।
আমি আম্মিকে কি বলবো, কি জবাব দেবো?
বিদিশার কাছেও একথার উত্তর নেই আর থাকলেও সে দিতে পারতো না কারণ তখন তার‌ও সংযম ভেঙে গেছে তার‌ও চোখ থেকে জল পরছে, কিন্তু আমিরের অবস্থা তার থেকেও খারাপ, বিদিশা হটাৎ আমিরকে জড়িয়ে ধরে, আর আমিরের যেন এখন হুঁশ নেই সে বিদিশার কাঁধে মাথা থেকে অঝোড়ে কাঁদতে থাকে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Monen2000 - 18-10-2022, 12:19 AM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)