14-10-2022, 02:55 PM
আরেকটি প্রেমের গল্প (ষস্ঠ পর্ব)
ননদের মিষ্টি মুখের শক্ত খোঁচা খেয়েও শান্তস্বভাবের শ্যামলী চুপ করেই ছিলেন সেদিন। সকলে উপভোগ করেছিল কথাগুলো। শান্তনু নতমুখে বসেছিল। কি বলবে না বলবে ভাবতে পারত না সে এসব বিষয়ে।
শান্তনুর আরেক দাদা বলেছিলেন, “না না… কি যে বলিস, শ্যামলী নিশ্চয়ই পায়েস বানাচ্ছে আমাদের সকলের জন্যে? কি শ্যামলী তাই না?” বলে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন ভাইয়ের সুন্দরী বউয়ের দিকে।
শ্যামলীর তখন দু বছর হবে বিয়ে হয়েছে, শুভ্রর প্রথম জন্মদিন। কি করবে, কি বলবে না বুঝে সে শুধু ঘাড় নেড়েছিল। কলেজপড়ুয়া শ্যামলীর একরকম বাড়ি থেকে পালিয়েই বিয়ে হয়েছিল, শান্তনুর সাথে। সে রান্না হেঁসেল কিছুই করেনি কোনদিন। দশ বারোজনের পায়েস রান্না করতে গিয়ে সে রান্নাঘরে হিমশিম খেতে লাগলো। নিঃশব্দে সেদিন হারান সমস্ত করে দিয়েছিল। অবাক হয়ে শ্যামলী শুধু তাকিয়েছিল। হারানও কোন কথা বলেনি, সেও না।
এরকম আর কত, কত ঘটনা মনে পড়ে শ্যামলীর। বিবাহিত জীবনে একটা নীরব সাহায্যের হাত সবসময় সে পেয়েছে পাশে পাশে। মাথায় এসে লাগলো সেই হাতটাই। আলো অন্ধকারে, পাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে তার বউমণি। এখনো তার চোখে সেই আগের বউমণিই আছে সে, আগের মতই সুন্দরী, সেইরকমই শান্ত, শান্তিময়ী।
সংসারে কোন অভিযোগ নেই যার, নিজের কথা কোনদিন মুখ ফুটে কাউকে জানায়নি যে। আস্তে আস্তে হারানের মায়াকোমল হাত ধুয়ে দিতে লাগলো শ্যামলীর মাথার সব ব্যাথা। অন্ধকার ঘরে, আলো আসছে অল্পই, শান্তনু আর শ্যামলীর বিশাল খাটে একলা শুয়ে শ্যামলী, বাইরে ব্যাল্কনিতে তার স্বহস্তে রচিত ঝুমকোলতা ফুলের গাছ হাওয়া ঈষৎ আন্দোলিত।
মাথায় হারানের খাটাখাটুনিতে জীর্ণ শক্ত হাত দুটো ঘুমের পরশ দিয়ে যাচ্ছে, শান্তিতে চোখ বোজে শ্যামলী। কাছের মানুষকে দূরে যেতে দেখা কষ্টের, আর দূরে চলে যাওয়া মানুষকে সর্বক্ষণ কাছে দেখতে পাওয়া আর কষ্টের, আজ থেকে সেই কষ্ট আর হবে না শ্যামলীর।
তার স্বামী যাকে সে আগেই হারিয়েছিল আর নেই। চোখের সামনে থেকেও তিনি হারিয়ে গিয়েছেন। গালে আলতো, পরশ পায় একটি বিনয়ী সেবক হাতের। গাল বেয়ে নেমে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত অশ্রুধারা, মুছিয়ে দিচ্ছে সেই হাত। আজ প্রথম এই বাড়িতে এত বছর বাদে তার গায়ে কেউ ভালবাসা বুলিয়ে দিচ্ছে যেন। চোখ মেলতে নেই এই সময়। মন ভরে উঠছে শ্যামলীর।
সে মনিব, হারান চাকর, এই বিভেদ যেন ক্রমশই গুলিয়ে যাচ্ছে। ন্যায় অন্যায়ের পূর্ণ জ্ঞান তার আছে, সে জানে ভালবাসা কখনই পাপ নয়। হারান প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছে তাকে সুদীর্ঘ তেইশ বছর, আজ যদি সে তার সেই সঞ্চিত ভালবাসা বুকে ধরে রাখতে না পারে, কিছুটা যদি ছলকেও পড়ে তার অনুগত হৃদয়কুম্ভের থেকে তাহলে সেই ছিটেফোঁটা মাথায় করে তুলে নেবে শ্যামলী। এতে তার পূণ্যই হবে। পাপ হবে না।
হারানের চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। সে যেন শ্যামলীর বুকের সমস্ত ভাব বুঝতে পারছে কোন অলীক উপায়ে। কোন স্বর্গীয় বেতার মাধ্যমে। টুপ করে সেই অশ্রুবারি পড়ল শ্যামলীর নরম গালে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল শ্যামলী। ঘুরে শুলেন তিনি। আধো অন্ধকারে বসে আছে হারান, বা তার ছায়ামূর্তি।
“বউমণি…”, ধরা গলায় হারান এইটুকুই শুধু উচ্চারন করতে পারল।
“কেঁদো না হারানদা”, আলতো স্বরে বললেন শ্যামলী, তার হাত দুটো দিয়ে আস্তে করে ধরে নিলেন হারানের কম্পিত দুটি হাত।
“তুমি কষ্ট পেয়ো না বউমণি…” গলায় যেন কান্না ছাপিয়ে উঠছে তার।
“না হারানদা আমি কষ্ট পাইনি, আর কেউ জানুক বা না জানুক, তুমি তো জানো যে আমার নতুন করে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই?” ধীরে ধীরে শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বললেন শ্যামলী।
হারান শুধু চেয়ে রইল তার আদরের বউমণির দিকে। ইচ্ছে করছিল সস্নেহে তাকে আদর করে দেয়। সারা জীবনে যত কষ্ট সে সয়েছে সব ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তাদের মাঝখানের সামাজিক ব্যবধান। চিরাচরিত ভালমন্দ, রীতিনীতি।
চোখে চোখে আলোআঁধারিতে কথা হয়ে গেল হাজার হাজার। শ্যামলীর দুই হাতের ভেতর থেকে একটা হাত বের করে আনল হারান। ওর স্নিগ্ধ কপালের ওপর একটা চুল এসে পড়েছিল, সেটাকে সন্তর্পণে তুলে নিয়ে কানের ধারে গুঁজে দিল পরম যত্নে। আবেশে আর ভালোলাগায় চোখ বন্ধ করলো শ্যামলী। সে চাইছে হারান আরো অনেকক্ষণ তার কাছে বসে থাকুক। যতক্ষণ না শুভ্র ফেরে।
তার যে আর একা থাকতে ভালো লাগছে না, জীবনের অধিকাংশ সময়ই তো সে কাটিয়েছে একা একা। ভীষণ একান্ত ভাবে একা। রোগা শরীরে একটা পাতলা শার্ট গায়ে দিয়ে বসে আছে হারান তার বউমণির শয্যাশিয়রে। একটা ছাপা শাড়ি গায়ে শুয়ে রয়েছেন বউমণি। পাতলা দেহে এখনো যেন অনেকটাই রয়ে গিয়েছে আগের সেই মাধুরী। বাইরে থেকে আসা আলোয় ভালোই দেখা যাচ্ছে, দেহের ওঠানামা।
বুক উঁচু হয়ে রয়েছে ঈষৎ, শাড়িতে ঢাকা। আঁচল ঢেউ খেলে নেমে গিয়েছে, তার পর পেট, সেখানে আঁচল নেই, সরে গিয়েছে, এদিক সেদিক। নাভির ওপরে শাড়ি পরেন শ্যামলী, তাই নাভি দেখা যাচ্ছে না, হারান নিজের অজান্তেই তাকায় পেটের দিকে, যেখানে অল্প আলোয় মসৃণ ত্বক বিনীত ভাবে শুয়ে রয়েছে শরীর জুড়ে। হাওয়া আসছে বাইরে থেকে মৃদুমন্দ, একটুখানি উড়ে যায় আঁচল। বুকের খানিকটা নিরাবরণ করে দিয়ে। ব্লাউজ দেখা যাচ্ছে, নিচের একটা হুক খোলা, বাড়িতে ঘরোয়া ভাবেই থাকেন শ্যামলী, অন্তর্বাসও পরেননা খুব একটা আজকাল, কেই বা দেখে তাকে?
হারান বুঝল বউমণির ঘুম লেগে গিয়েছে, সে তাই আস্তে করে কাপড় টেনে দিল বুকের। বউমণির শরীরের আব্রু, সে তার কাছে অনেক দামী জিনিস।
তার মনে আছে একবার বাবু বউমণির কিসব ছবি আঁকতে চেয়েছিলেন, বিয়ের পরে পরে, সেদিন চিন্তায় হারানের ঘুম হয়নি রাতে। বউমণি যদি রাজি হয়ে যায়? পরে অবশ্য তাদের মনোমালিন্যে বেশ টের পেয়েছিল সে, যে তার ভয়ের কোন কারণ নেই, বউমণি রাজি হননি।…
ঝুমকোলতা ফুলের সুবাস এবার কড়া হয়ে উঠছে, সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসছে, কাজের বাড়িতে এত হই হল্লায় শরীরে ক্লান্তি নেমে এসেছিল বউমণির, এখন তার হাতের আরাম পেয়ে সে শিশুর মতো ঘুমিয়ে গিয়েছে, হারানের একটা হাত ধরে রেখেছেন তিনি তার দুটো ক্ষীণ হাতে। হারানের খুব ভালো লাগছে হঠাৎ… ফুলের গন্ধটা, এই সন্ধ্যেটা, বউমণিকে।
তার মুখ ঝুঁকিয়ে আনে সে বউমণির গালের কাছে, সারা বাড়িতে তারা দুটি প্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই এখন। সব আত্মীয় পরিজন ফিরে গিয়েছেন নিজ নিজ বাসায়। আবার সন্ধ্যের পর হয়তো বা কেউ কেউ আসবেন অফিস ফেরতা। বউমণির চুলের গন্ধ এতবছরেও পাল্টায়নি। অন্ধকারে সে চিনে নিতে পারবে। সেই একই সুগন্ধি তেল ব্যবহার করছে সে বরাবর।
হারানের যে প্রাণে কি উচাটন চলছে সে বর্ণনাতীত। নাক ভরে সে বউমণির এত নিকটে থাকার সুযোগ নেয়। আঘ্রাণ করে সে তার এই পূজ্য ব্যাক্তিটির সুবাস। ভক্তি আর স্নেহ ভরে ওঠে তার মনে। সে কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে দেখে ঘুমন্ত শ্যামলীর বুক, পেট, কোমর।
আঁচল কিছুটা লুটিয়ে গিয়েছে বিছানায় শ্যামলীর পিঠের পেছনদিকে। আর সে ফিরে রয়েছে হারানের দিক করে। ফলে, হাতের চাপে তার মাঝারি বুকে সৃষ্ট হয়েছে একটি খুদ্র বিভাজন। হারানের খুব সুন্দর লাগছে আজ তার বিধবা বউমণিকে।
কপালে সিঁদুরের টিপ নেই, সিঁথি থেকে মুছে গিয়েছে এই দুঃখের সম্পর্কের সমস্ত চিহ্ন। আবার যেন কুমারী মেয়ের মত পবিত্র লাগছে তাকে, যেন তার পুনর্জন্ম হয়েছে!
একটা আঙুল নিয়ে যায় হারান শ্যামলীর বুকের খাঁজের কাছে… চোখে তার অপার ইচ্ছা, আস্তে আস্তে জাগছে মনের গভীরের বহুদিনের সঞ্চিত সুপ্ত বাসনা। তার একদা রূপ যৌবনে পরিপূর্ণ দেহ বিছিয়ে শুয়ে রয়েছে তার বউমণি। এই শরীরে কতদিন কেউ আদর করেনি। এই বুকে ওষ্ঠপরশ লাগেনি কত যুগ। আর ওই কোমর বেয়ে… আঙুল বোলায়নি কোন প্রিয়বাসি…
আর আর গভীরে, বউমণির নারীত্বের গহীন বন্দরে নৌকো ভেড়েনি কতদিন…
আস্তে করে এই সমস্ত ধূলিধূসর অবহেলিত জায়গায় আদর করে দিতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু না, এই সুন্দর ভালবাসা নীরবে সেবা করে যাক তার এই পরমপ্রিয় বউমণির… হাতের স্পর্শে একে কলুষিত করে দিতে পারবে না সে।…
কিন্তু মন চাইছে ভীষণরকম। আজ তো আর কোন বাধা নেই, ঘুমে অচেতন শ্যামলী। ক্লান্ত শরীর তার অসাড়, বুক উঠছে নামছে আলতো ছন্দে নিশ্বাসের তালে তালে। খাঁজ ফুলে ফুলে উঠছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে হারানের নীরব আকাঙ্খাগুলোকে।…
****
বিকেলের আলো কমে গিয়েছে। আবছা দাঁড়িয়ে আছে গাছের সারি, চেনা রাস্তায় অচেনা লোকের আনাগোনা। রিক্সা হর্ন বাজিয়ে ছুটেছে কোথায় কে জানে। টিউশানি বাড়ি চলেছে কিছু মেয়ে। দোকানে ভিড় লোকেদের। যানজটে ভরা সন্ধের মধ্যে এতোটুকু উপায় নেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়বার।
বিদিশার রিক্সাও ছুটেছে এই সন্ধের ভেতর দিয়ে। হলুদ স্কার্টের প্রান্ত উড়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। এক হাত কোলের উপরে রেখেছে বিদিশা যাতে বেশী না উড়তে পায় হলুদ বসনখানি। পায়ের গোছ অনাবৃত হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। একটা পাতলা চটি পরা পায়ে। পায়ের আঙুলগুলো খুব সুডৌল। প্রত্যেকটা নখ গোল করে শেপ করে কাটা, হালকা গোলাপি রঙের নেলপেন্ট লাগানো। ওর একটু চাপা অথচ পরিষ্কার গায়ের রঙে মানিয়েছে বেশ।
সুন্দর পা দুখানি দেখা যাচ্ছে স্কার্ট উড়ে গেলেই। নচেত লং স্কার্ট ভালোই ঢেকে রেখেছে বিদিশার কোমরের তলা থেকে বাকি শরীর। সাদা কুর্তির তলায় লাল ব্রা পরতে হয়েছে বলে একটা শেমিজ পড়েছে সাদা রঙের। সাদা ব্রা দুটোই ভেজানো ছিল কাচার জন্যে।
দুই স্তর জামাকাপড়ে বেশ একটু গরম লাগছে বিদিশার। একটু ঘেমে গিয়েছে ও। সারাদিন কলেজের পর চলেছে শুভ্রদের বাড়ি।
মিস্তিরি লেনে ঢোকার মুখে যে বড় মাঠটা পরে, তার কোনায় আসতেই চার পাঁচজন ছেলে হুট করে এসে পড়ল রিক্সার একেবারে সামনে। ছেলেগুলোকে দেখতে মোটেও ভদ্র সভ্য নয়। তবে বিদিশা জানে এই পাড়ার বখাটে ছেলে এরা, শুভ্র আগে ওকে অনেকবার বলেছে এদের কারণেই ও চায় বিদিশা একেবারে রিক্সা করে এসে যেন বাড়ির সামনে নামে। বিদিশা এও জানত যে এরা শুভ্রকে ভালোই চেনে।
“রিক্সা থামাও, থামাও… এই দাঁড়াও ভাই!”, বলে এগিয়ে এলো ওরা।
একজন বেশ লম্বাটে, লাল শার্ট পরা, দাঁতগুলো লাল লাল।
“কি হয়েছে দাদা?”, বেশ একটু সাহস করেই জিজ্ঞেস করল বিদিশা।
“তোমার নাম বিদিশা তো?”, লাল শার্ট জিজ্ঞেস করলো।
“হ্যাঁ কেন?” বেশ একটু অবাক হল বিদিশা। নামও জেনে গেছে!
“শুভ্রদের বাড়ি পুলিশ এসেছে আবার। খুনি কে জানা গিয়েছে, ওদিকে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। শুভ্র বলেছে তোমাকে ওখানে না যেতে। তাই আমরা তোমার আসবার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।”, ঘার চুলকোতে চুলকোতে বলল লাল শার্ট। বাকি সাঙ্গোপাঙ্গরা দেখছে বিদিশাকে। ওরা চিরকাল ওভাবেই দেখে।
“খুনি কে? পুলিশ তদন্ত করে বের করে ফেলেছে? শুভ্র কেমন আছে? ও এখন কোথায়? ওর সাথে আমার একবার দেখা হবে কি?”, বিদিশা বেশ চিন্তিত হয়ে একসাথেই করলো প্রশ্নগুলো।
রিক্সা সাইড করেছে ততক্ষনে রিক্সা চালক। সে একদিকে দাঁড়িয়ে আছে ঘটনার মীমাংসার অপেক্ষায়।
তার কোমরের গামছাটা খুলে নিয়ে সে গলা আর ঘাড়ের ঘাম মুছতে লাগলো।
“হ্যাঁ, শুভ্র বলে গেছে আমাদের ক্লাবঘরে যেন তোমাকে বসাই। পুলিশ চলে গেলে ও এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।” আরেকটি ছেলে এগিয়ে এলো এবার। এর চেহারাটাও আপেক্ষিক ভাবে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
ছেলেটি একটু যেন বেঁটে, পরনে একটা রঙচঙে টি শার্ট, আর একটা ঢোলা বারমুডা।
বিদিশা কি করবে ভেবে পেল না, অথচ এই এত মানসিক দুর্যোগের পর থেকে শুভ্রর সাথে তার একটিবার দেখাও হয়নি। অথচ এদের ক্লাবঘরে গিয়ে অপেক্ষা করবে সে কি মনে করে? শুভ্রই বা আজ হঠাৎ এদের এত বিশ্বাস করছে কিভাবে? আগে তো বিদিশার কাছেই এই ছেলেগুলোর কত নিন্দা করেছে! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ও নেমে এলো রিক্সা থেকে। ওর সুন্দর পায়ের পাতা বেরিয়ে এলো স্কার্টের ঘেরের থেকে, নামবার প্রচেষ্টায়।
“ভাই কত হয়েছে?”, জিজ্ঞেস করলো বিদিশা, রিক্সাওয়ালাকে।
মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটা পথ ধরেছে ওরা। দূরে ক্লাবঘরে দুয়ার খোলা। একশ ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে, হলুদ আলো বিছিয়ে গিয়েছে দুয়ার ছাড়িয়ে মাঠের কিছুটা জায়গায়। ঘাস বেড়ে গিয়েছে মাঠে। কিছুটা জংলা ভাব। মোটামুটি ঘরের ভেতরের ওই আলোটুকু ছাড়া বাকি জায়গা অন্ধকার। এদিকে স্ট্রিট ল্যাম্প গুলোও জ্বলছে না।
ঢিল মেড়ে মেড়ে ভাঙা হয়েছে বহুবার। কর্পোরেশন থেকেও আর গা করেনি মেরামতের।
বিদিশা চলছে সন্ত্রস্ত পদক্ষেপে। ঠিক বুঝতে পারছেনা কি হতে চলেছে। মনে খুব চিন্তা হচ্ছে। এই ছেলেগুলোর সাথে এসে ও ভুল করছে না তো। পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছে শুভ্রই তো বলে পাঠিয়েছে। এই ভেবে নিশ্চিন্ত হতে চাইছে। বিদিশা হাঁটছে ঘরটার দিকে। ওর পাশে পাশেই হাঁটছে আরো দুটি ছেলে। আগে আগে হাঁটছে লাল শার্ট। চার নম্বর ছেলেটি হয়তো পেছনে রয়েছে, বিদিশা দেখতে পাচ্ছে না তাকে। দরজার কাছে পৌঁছে গেল ওরা।
“নিয়ে এসেছিস?”, ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি মোটা কালো লোক। বয়েস পঁয়ত্রিশের ওপরে হতে পারে। বিশ্রী চেহারা। গোঁফ রয়েছে সরু করে কাটা। একটা প্যান্ট আর একটা হলুদ ছোপ ছোপ শার্ট পরা গায়ে।
বিদিশার কেমন অদ্ভুত লাগলো। এবার ওর মনের দুশ্চিন্তাটা ভয়ের আকার নিল।
“চলে যাও ভেতরে”, পেছন থেকে বলছে কেউ। লাল জামা ঢুকে গিয়েছে ঘরের ভেতরে।
খ্যাক খ্যাক হাসির আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। হলুদ কটকটে আলোর নিচে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে খুব হাসছে লাল জামা আর কালো মোটা লোকটি।
বিদিশার ভালো ঠেকছে না।
“আমি আজ আসি। আমি পরে শুভ্রর সাথে কথা বলে নেব”, বলতে বলতে খোলা দরজার থেকে পেছন ফেরে বিদিশা।
“না আজকেই কথা বলে যাও সোনামণি!” ভেতর থেকে বলে ওঠে কেউ। বিদিশা পেছন ফিরে রয়েছে তার দিকে। তাই দেখতে পেল না কথাটা কে বলল।
ওর সামনে দুটি ছেলে দাঁত বের করে হাসছে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। আর এগিয়ে আসছে ওর দিকে, ওর পেছনে ক্লাবঘরের দরজা। সামনে বিশাল অন্ধকার মাঠ। রিক্সা সাইকেলের আওয়াজ আসছে মাঠের ওই প্রান্ত থেকে। আর যেই হাঁটা পথে মাঠের পাশ দিয়ে ওরা এসেছে সেই পথে কেউ যাচ্ছে না এখন। চেঁচালে মাঠের ওই পাড়ের লোকেরা কি শুনতে পাবে? মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ গতিতে ভাবতে থাকে বিদিশা।
চোখে তার ত্রস্ত হরিণীর তড়িৎ চাহনি। সে দেখে নিতে চায় আসে পাশে বাড়ি ঘর আছে কিনা। আছে তো। মাঠের পাশেই বিশাল উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি সব। আর ক্লাবঘরের পেছন দিকটায় বস্তি। সেখানে নিশ্চয়ই লোকজন রয়েছে। ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে আওয়াজ যাবে না? কেউ কি শুনবে না ও চেঁচালে?
এইসব ভাবতে ভাবতেই বুকের ওপর কনুইয়ের চাপ পড়ল। জোরে। দম প্রায় আটকে গেল। ঘরের ভেতরে পড়ে গেল বিদিশা। ঝটিতে দরজা বন্ধ হল। ছেলে দুটি ঢুকে পড়েছে। চার নম্বর কোথায় গেল তাহলে? ভাবতে পারেনা বিদিশা, মাথা ঘুরতে থাকে।
ছিটকে এসে পড়াতে, স্কার্ট উঠে গিয়েছে অনেকটা। জঙ্ঘার কাছ অব্দি দেখা যাচ্ছে প্রায়। সুন্দর লোমহীন পা। ঢাকবার চেষ্টা করে ও। লাল জামা ঝুঁকে পরে ওর হাত দুটো ধরে নেয়।
“থাক না সোনামণি, দেখি একটু আমরাও। অনেককে তো দেখিয়ে বেড়াস, আমরাও একটু দেখি!”
বলে সে বাকিদের দিকে চোখ মাড়ে।
“কিরে রতন, বোঁচকে, দেখবি না?”
রতন আর বোঁচকেও মাথা নাড়ে। একটু বেঁটে পরিস্কার দেখতে ছেলেটি এগিয়ে আসে এবার। সেই বোধহয় রতন।
বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে এদের স্পর্ধা। মুহূর্তের মধ্যে এত কিছু ঘটে যাওয়ায় সে ঠিক তাল সামলাতে পারছে না যেন।
“কিরে রতন কি করবি? এখনই খুলে দিবি?” লাল জামা জানতে চায় বিদিশার পেছন থেকে।
সে হাঁটু গেড়ে বসেছে বিদিশার পেছনে। বিদিশার হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে। আর বিদিশা পড়ে রয়েছে মেঝেতে। এগিয়ে আসছে রতন।
“আমি চিৎকার করবো। আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।”, বিদিশা কাঁপা কাঁপা বিস্মিত গলায় বলতে থাকে, বলতে গিয়ে অনুভব করে তার গলার স্বর বেরতেই চাইছে না।
গলা শুকিয়ে একবারে কাঠ হয়ে গিয়েছে। যেন কণ্ঠনালীর ভেতরে চামড়ায় চামড়ায় আটকে যাচ্ছে।
“চিৎকার কর না বুলবুলি। কেউ আসে কিনা দেখি!”, এবার খিক খিক করে হেসে হেসে বিশ্রী ভাবে বলে ওঠে রতনের পাশের ছেলেটি, যে এতক্ষন চুপচাপ ছিল।
ভগবান এরা প্রত্যেকটাই কি একইরকম জানোয়ার? কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে বিদিশার। কেন তারা এরকম করছে তার সাথে, শুভ্র থাকলে দেখে নিত এই হার্মাদগুলোকে, ভাবতে থাকে বিদিশা।
রতন এগিয়ে এসে নিচু হয়ে ওর স্কার্টের ঘেরটা হাত দিয়ে ধরতেই চিৎকার করে ওঠে বিদিশা। পা টেনে সরিয়ে আনে নিজেকে। বেশী জোরে আওয়াজ বের হয় না ওর গলা দিয়ে। এই আওয়াজ কি ক্লাবঘরের বন্ধ দরজা পেরিয়ে, মাঠ পেরিয়ে কারুর কানে পৌঁছবে?
“এই দত্তদা, একটা গান লাগিয়ে দাও না তোমার ওই যন্তরটায়।” লাল জামা ঘাড় ঘুরিয়ে একটু দূরে চেয়ারে বসে থাকা মোটা কালো বিশ্রী লোকটাকে অনুরোধ জানায়।
“মাগীটাকে চুপ করতে বলো না তার চাইতে, নইলে আমার এদিকে ফোনের ব্যাটারি পুড়বে।” দত্তদা কুৎসিত ভুঁড়ির তলায় চাপা পড়ে যাওয়া প্যান্টের পকেট হাতড়াতে হাতড়াতে বললেন।
“না না তুমি গান লাগাও, গান হলে বুলবুলিরও ভালো লাগবে। বুলবুলি মস্তি পাবে বেশী। কি বুলবুলি তাই না?” বলতে বলতে রতন বিদিশার স্কার্ট তুলে ধরে, উঁকি মাড়ে ভেতরে।
বিদিশা নিরুপায় হয়ে মেঝেতে পড়ে পড়ে নিজের দুর্দশা ও হয়রানী দেখে মনে মনে মড়ে যেতে থাকে।
পা দিয়ে দাপিয়ে সরিয়ে নিতে চায় নিজেকে। গলা দিয়ে চিৎকার করতে চায়। আওয়াজও বের হয় বেশ কিছুটা কিন্তু ঠিক তক্ষুনি পেছন থেকে অত্যন্ত জোরে একটা রদ্দি হিন্দি গান বেজে ওঠে। কোন একটা সুপারহিট ছিবির আইটেম গান।
বিদিশার মনে আছে, টিভিতে প্রায় দেখাত এক সময় গানটা, স্বচ্ছ পোশাক পড়ে বিশ্রী ভাবে কোমর নাচিয়ে নাচিয়ে একটি মেয়ের যৌন আবেদনে ভরা নাচটির জন্যেই গানটি বিখ্যাত হয়।
পা দাপানোর জন্যে পেছনে শক্ত করে ধরে থাকা হাতে বাজে ভাবে টান খেয়ে গেল বিদিশা, তীক্ষ্ণ একটা ব্যথা নেমে এলো কাঁধ বেয়ে। বিদিশা বুঝতে পারল আজকে ওর কোনমতেই রক্ষে নেই। প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা যা হতে পারে, তাই ওর জীবনে আজ আসন্ন। ও রেপড হতে চলেছে। গ্যাং রেপড।
আচমকা সমস্ত চোখ জুড়ে অন্ধকার নেমে এলো বিদিশার। বুকের ভেতর যেন কেউ ঠাণ্ডা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। স্কার্ট তুলে ধরে উঁকি মারছে রতন। অবশ অসহায় ভাবে পা ছড়িয়ে পড়ে আছে ও। একটা সমত্ত ছেলে সমস্ত লোভ ও লালসা নিয়ে দেখছে ওর স্কার্টের ভেতরে ওর প্যান্টি। ওর নগ্ন পা। ওর আভ্রু, ওর লজ্জা সব নিলাম হয়ে যাচ্ছে…।
“এ মেয়ের তো পিচ ভেজা রে! ব্যাটিং করবি কি করে?”, রতন মাথা বের করে বলল সকলের দিকে তাকিয়ে।
বিদিশার দেহ অবশ হয়ে আসছে। ওর মাসিক হয়েছে গতকাল। আজকে বেশ ভালোরকম ফ্লো হচ্ছে। ওরা তাই নিয়ে মন্তব্য করছে, ভাবতে পারে না বিদিশা নিজের এরকম অপমানজনক পরিস্থিতি। ওর ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো সিথিল হয়ে যেতে লাগে। চোখে একশ ওয়াটের কড়া হলুদ আলো বড্ড কর্কশ মনে হয়। কাঁধের ব্যথায় ভুরু কুঁচকে ফেলে ও। চোখ বুজে ফেলে অপমানের জালায়।
মত্ত উল্লাসে পেছনে বাজছে হিন্দি ছবির আইটেম গান। ওর চিৎকার কেউ শুনবে না এই পান্ডববর্জিত এলাকায়।
“তাহলে কি হবে? সব মজা তো ভোগে চলে গেল রে হিরো?”, রতনের পাশের ছেলেটি লাল জামাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে কথাগুলো। আর বলতে বলতেই রতনের হাতের থেকে বিদিশার স্কার্টের কাপড়টা নিয়ে নেয়।
“কই দেখি, দেখি”, বলে সেও মাথা ঢুকিয়ে দেখে নেয় উঁকি মেড়ে।
“উফফ কি গন্ধ গো! মাসিকের সময়ও মাগীর চাক থেকে কি গন্ধ বের হচ্ছে গো রতনদা, একে কি করে ছেড়ে দেব কিছু না করে? কি গো হিরো কিছু বলো?”, হাঁ করে তাকিয়ে সে একবার দেখে রতনের দিকে, একবার দেখে হিরো অর্থাৎ লাল জামার দিকে।
“উফ বোঁচকে, সাধে কি তোকে বোঁচকে বলি, তোর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই, সব বুদ্ধি বাল তোমার নুঙ্কুতে চলে গেছে! ছেড়ে দেব কে বলেছে? মাগীকে ন্যাংটো করে নাচাবো রে, দেখছিস না কেমন গান চালিয়েছে দত্তদা, কি দত্তদা নাচ দেখবে তো নাকি?”, বলে হিরো একবার চেয়ারে আয়েস করে বসা দত্তদার দিকে একবার ছটফট করা বিদিশার মুখে দিকে দেখে। তারপর মুখ নামিয়ে এনে বিদিশার সুন্দর মুখের ওপর রাখে,
“মাইরি জান, তোমাকে কিছু দেখতে। একটা হামি দাও না জানেমন?”, বলে নিজের ঠোঁটটা বিদিশার নাকে মুখে ঘসে দেয়। বিশ্রী পান মশলা আর বাসি মদের গন্ধ আসে বিদিশার নাকে। বমি উগ্রে আসতে চায়। শরীর মুচড়ে ওঠে ঘৃণা আর অপমানে।
“আআহহহ… হাআআআ”, চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে বিদিশা।
এক দিকে ফিরিয়ে নেয় ওর নিটোল মুখ খানি। সাদা কুর্তিরে মধ্যে বুক ফুলে ওঠে শরীরের এই মোচড়ে। লাল জামা অর্থাৎ হিরোর হাতে ওর হাত দুটো পেছনে আটকে থাকার জন্যে, ওর বুক আরো উন্নত ও ভরাট লাগছে। মনে হচ্ছে একটা সাদা ব্যাগের মধ্যে কেউ তুলো ঠেসে ঠেসে দুটো গোল বল বানিয়ে দিয়েছে। লাল ব্রায়ের স্ট্র্যাপ বেরিয়ে পড়েছে এক পাশ দিয়ে।
রতন ঘুরে বিদিশার ঘাড়ের কাছে এসে, স্ট্র্যাপের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিল, তারপর আঙুলটাকে আঙটার মতো করে স্ট্র্যাপটা টেনে ধরে বললো, “ওঠ রে মাগী, নাচবি না?”
বিদিশা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে পড়ে রইল। কাঁদতে গিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে যন্ত্রণা আর অপমান।
“আহহ… নাহহহ”, এক পাশ থেকে আরেকপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয় বিদিশা, এই জঘন্ন প্রস্তাবে তার অসম্মতি জানায় সে।
রতন টেনে ধরে রাখা লাল স্ট্র্যাপটা ফস করে ছেড়ে দেয় এবার। চটাস করে এসে লাগে বিদিশার কাঁধের নরম তুলতুলে মাংসের ওপর।
“আআআহহহহহ…” যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে ওঠে বেচারি।
“তাহলে ওঠ বলছি,” আবার ঠাণ্ডা গলায় হুকুম দেয় রতন। ওই সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার শয়তান এদের মধ্যে।
বিদিশা উঠতে চায়না কিছুতেই।
“নাআআহহহ”, বলে এক পাশে সরে যেতে চায় ও। হিরোও হঠাৎ করে ছেড়ে দেয় ওর হাত দুটো। বিদিশা ছাড়া পেয়ে এক পাশে সরে যেতে সক্ষম হয়।
ওর স্কার্ট উঠে গিয়েছে বেশ কিছুটা। চুল সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে কপালে আর ঘাড়ে। চুলের বন্ধনি আলগা হয়ে গিয়েছে, ঝুলে রয়েছে এক পাশে। ওর মুখ রক্তিম হয়ে উঠেছে, এই নিপীড়নে। ক্লাবঘরের নোংরা মেঝেতে ও একটা পশুর মত চার হাতে হাতড়ে হাতড়ে কোনমতে তফাতে যাওয়ার চেষ্টা করে, কাঁধে টান লেগে গিয়েছে বলে একটু অসুবিধে হচ্ছে ওর।
“উঠে দাঁড়া মাগী, ওঠ বলছি, নইলে গায়ে মুতে দেব শালি, ওঠ!”, চোখ মুখ খিঁচিয়ে অদ্ভুত হিংস্র ভাবে হুকুম করে রতন।
হিরো হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোঁচকে দাঁত বের করে যেন মজা দেখছে। আর দত্তদা চেয়ারে বসে ফোনে কিসব করছে। বোধয় আরেকটা গান লাগিয়ে দিচ্ছে। তার যেন বিশেষ আগ্রহই নেই কিছুতে।
বিদিশা এই নতুন হুমকিতে কিছুটা ভয় পেল। সত্যিই মনে হয় এরা সব করতে পারে। ও কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ও। বুঝতে পাড়ছে এই হাতাহাতিতে ওর স্যানিটারি ন্যাপকিন সরে গিয়েছে। ওর প্যান্টিতে যেন কেমন ভেজা ভেজা লাগছে।
ঘরের মাঝখানে দাঁড়ানো বিদিশা। মুখ নিচু। চুল আলুথালু। চুলের ক্লিপ একদিকে ঝুলছে। হলুদ স্কার্ট ময়লা হয়ে গিয়েছে। কুর্তি-টপ উঠে রয়েছে কিছুটা। একদিকে লাল ব্রা বেরিয়ে গিয়েছে কাঁধের পাশ থেকে। থরথর করে ঠোঁট কাঁপছে রাগে, দুঃখে, অপমানে। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছে টস টস করে, অবারিত ধারায়। খালি পা। চটি ছিটকে গিয়েছে অনেক আগেই।
“জামাটা খোল রে কুত্তি মাগী”, হিরো এতক্ষনে কথা বলে। “রতন, ভাই এ এত সময় নিলে কি করে হবে বলতো?”, খুব যেন বিরক্ত সে।
“জামা খুলবি, না বোঁচকের পেচ্ছাব খাবি?” বলে হেসে ওঠে রতন। “ওই বোঁচকে তোর নুঙ্কুটা বের করতো!”
বোঁচকে দাঁত বের করে এগিয়ে আসে। সত্যি সত্যিই শার্ট তুলে প্যান্টের চেন খুলতে লাগে ও।
“আপনারা মানুষ না জানোয়ার? ছেড়ে দিন আমায়!”, বিদিশা রাগে কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে এগোয়।
“আপনাদের নামে আমি পুলিশে জানাব। শুভ্রকে বললে ও আপনাদের একজনকেও ছেড়ে দেবে না!”
এই কথাতে হো হো অট্টহাসির রোল উঠল ঘরের মধ্যে।
“খুকি তোমার ওই সাধের নাগরই আমাদের বলে গেছে তোমার খাতির করে দিতে ভালো করে, বুঝেছ?” হিরো এগিয়ে আসে। লাল ছোপ ছোপ দাঁত গুলো হিংস্র ভাবে বেরিয়ে আসে কথা বলার কায়দায়।
বিদিশাকে এগোতে দেখেই রতন দরজা আগলে দাঁড়িয়ে পড়ে। “বোঁচকে আর ভালো লাগছে না, হয় মাগীর জামা খোলা নয় মেয়েটার মুখে মুতে দে!”
এত কিছু এক সঙ্গে নিতে পারেনা বিদিশা, ভয়ে কাঁপতে থাকে সে! শুভ্র নাকি এদের বলে গেছে, এরা এত মিথ্যেবাদি?
“মিথ্যে কথা, শুভ্র একথা কক্ষনো বলতে পারেনা।” এক পা এক পা পিছিয়ে যায় বিদিশা। আর ওর সামনে এগিয়ে আসতে থাকে বোঁচকে। প্যান্টের চেন খুলতে খুলতে।
ক্যারাম বোর্ডটার সাথে ধাক্কা খায় বিদিশা। পেছন ঘুরে দেখতে যায়। আর তখনই অনুভব করে সামনের দিকে ওর শরীরে গরম জল যেন ফোয়ারার মত ছিরিক ছিরিক করে এসে পড়ছে। ধুয়ে যাচ্ছে ওর পেট, স্কার্ট সমস্ত। ভিজে যাচ্ছে সব। সামনে ঘুরতেই, তরল ফোয়ারাটা আর কিছুটা উঁচু হয়ে এলো। পেছনে বর্বর হাসির রোল উঠেছে।
“মুখে দে, বোঁচকে, উঁচিয়ে ধর, উঁচিয়ে ধর। মুখে… দে খাইয়ে!”
“দে বোঁচকে… ভালো করে!”
হিরো আর রতন উৎসাহ দেওয়া যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।
“কি যে করিস তোরা, ক্যারাম বোর্ডটা ভিজিয়ে দিস না দেখিস। এই ঘরটা এবার সাফ করতে আরেক কাণ্ড হবে তোদের!”, দত্তদা যেন নির্বিকার। তার যেন এসব কিছুই গায়ে লাগছে না, কোন উত্তেজনাই হচ্ছে না!
এদিকে পেছন থেকে হিরো আর রতনের বর্বর উৎসাহ পেয়ে বোঁচকেও নিজের প্রত্যঙ্গটা আরেকটু উঁচু করে তুলে ধরে প্রস্রাবধারার দিক নির্ধারিত করে সেটি বিদিশার ভীত, বিস্মিত মুখের দিকে তাক করে। বিদিশার চোখে মুখে এসে লাগে গরম প্রস্রাব।
ওর ভাবনা চিন্তা সব লোপ পেতে লাগলো ধীরে ধীরে। পেচ্ছাবের চোটে নিশ্বাস আটকে আসছে ওর। দম নিতে গিয়ে মুখ খুলে ফেলল। মুখেও ঢুকে গেল, এই নোংরা লোকটার মুত্রজল।
বিদিশা খাবি খেতে লাগলো। জিভে এসে লাগলো কড়া এবং তীক্ষ্ণ একটা কর্কশ স্বাদ, যেন জলে গেল তার অধর ও জিহ্বা।মুখ বন্ধ করতে গেল চটপট, আর অমনি নিশ্বাস আটকে যেতেই ঢোঁক গিলে নিতে হল, সাথে করে কিছুটা প্রস্রাব। বিদিশার সমস্ত চৈতন্য অবলুপ্ত হতে আরম্ভ করলো, ওর আর নিজেকে সামলাবার ক্ষমতা রইল না।
অবশেষে যখন বোঁচকে নামক ছেলেটির এই জঘন্ন উন্মত্ত খেলা থামল ততক্ষনে বিদিশার প্রায় সর্বাঙ্গ পেচ্ছাবে শিক্ত হয়ে গিয়েছে। কাঁচা পেচ্ছাবের গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসছে, গা গুলিয়ে উঠছে। সারা গায়ে একটা জানোয়ারের পেচ্ছাব মেখে দাঁড়িয়ে আছে বিদিশা। ঘর ভর্তি কিছু বিকৃত রুচির লোভী অশিক্ষিত ছেলের সামনে।
এদিকে মাসিকের ধারা নির্গত হচ্ছে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আপন গতিতে। প্যাড সরে গিয়েছে। থাই বেয়ে গরাচ্ছে সেই রক্তের সরু রেখা। স্কার্ট কুর্তি সমস্ত পেচ্ছাবে সপ সপ করছে। নিজেকে নিজের কাছে এত নোংরা মনে হচ্ছে যে নিজের সব অস্তিত্ব ভুলে যেতে বসেছে বিদিশা। আর অন্যদিকে হাসি যেন থামছেই না বোঁচকে আর ওর দলবলের।
“জামা কাপড়গুলো এবারে খুলে ফেল।” শান্ত কণ্ঠে বলে ওঠে নির্বিকার দত্তদা।
রতন, হিরো ওরা এবার একটু অবাকই হল, কারণ বিদিশা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে দুহাত দিয়ে ধরে ওর স্কার্টটা একটু একটু করে নামিয়ে দিতে লাগলো। ভিজে হলুদ কাপড়টা নামতে লাগলো ওর লম্বা ছিপছিপে দুটো পা উন্মুক্ত করে দিতে দিতে।
রক্তের হালকা গোলাপি রেখাও চোখে পড়ে, ওর গমরঙা বাঁ পায়ের ওপর দিয়ে বেয়ে চলেছে। কুর্তি একটু লম্বা বলে ওর কোমরের তলার কিছুটা ঢেকে আছে এখনো। স্কার্ট ঘের দিয়ে পড়ে থাকে পায়ের কাছে। সাদা পরিস্কার দুটি পা, হালকা গোলাপি রঙের আভা সুন্দর করে কাটা নখে।
ভিজে নোংরা স্কার্টটা গা থেকে নামিয়ে যেন একটু ভালোই লাগছে বিদিশার। ফ্যানের হাওয়া এসে লাগছে পায়ের নগ্নতায়, লজ্জা অপমান আর কিছু তেমন নতুন করে টের পাচ্ছে না ও। শুভ্রই এদের এই রকম করতে বলেছে! কথাগুলো ঘুরে চলেছে মাথায়। মাথা যে তেমন একটা কাজ করছে তা নয়, শুধু বোঁ বোঁ করছে কেমন যেন… রিন রিন করছে সমস্ত শরীর।
“জামা খোল না, দেখি ভালো করে, নাকি বোঁচকের মুতমাখা জামা গায়ে দিয়ে থাকতে ভালো লাগছে খুব?”
রতন হাসছে।
“সত্যি, পেচ্ছাবটা আবার যে কেন করতে গেলে বোঁচন!”, দত্তদা আস্তে আস্তে উঠছে চেয়ার থেকে, ফোনটা পাশের টেবিলে রেখে দিল সে।
বিদিশা চোখে ভালো দেখতে পাচ্ছে না। দৃষ্টি কেমন ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছে তার। হলুদ আলো ভরা ঘরটা, সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে যেন। দত্তদা সিগারেট ধরিয়েছে।
“জামা খোলো, ন্যাংটো না হলে নাচ হবে না।” আবার দত্তদার ধীর স্থির শান্ত গলা হুকুম করলো বিদিশাকে। দেশলাই কাঠিটা হাত দিয়ে নাড়িয়ে নিভিয়ে দিয়ে এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিল সে।
বিদিশা বাধ্য মেয়ের মতন দুটো হাত দুদিকে নিয়ে গিয়ে কুর্তি তুলে নিতে লাগলো গায়ের থেকে। সপসপে জামা আটকে আটকে যেতে থাকল গায়ে। মুখের ওপর দিয়ে যখন সে টেনে খুলছে কুর্তি তখন কি জঘন্ন অনুভূতি হল তার। এই নোংরা ছেলেটা যে সত্যি সত্যি পেচ্ছাব করেছে তার গায়ে সেটা আরেকবার উপলব্ধি করলো বিদিশা।
এমন সময় এক কাণ্ড হল।
“ধর ধর”, বলে চেঁচিয়ে উঠল হিরো।
বোঁচন ছুটে এসে পেছন থেকে অর্ধেক খোলা পেচ্ছাব মাখা কুর্তিটা বিদিশার মুখের ওপরেই চেপে ধরল ওর হাত সমেত। ওর হাত তখনও কুর্তির হাতার মধ্যেই রয়েছে, পুরোপুরি বেরও করে নিতে পারেনি বেচারি। মুখের ওপর উল্টো হয়ে থাকা কুর্তি, খুলছিল বিদিশা, কিন্তু এই অবস্থায় পেছন থেকে বাঁধা দিল বোঁচন।
সে ওইভাবেই চেপে ধরল ভিজে কাপড়টা বিদিশার নাকে মুখে। হাত দুটোও ওই পোজে আটকে রইল ওইভাবে। কুর্তির সঙ্গে ভিজে গিয়ে উঠে এসেছে তলার শেমিজও। ফলে লাল ব্রা দেখা যাচ্ছে। ব্রায়ের ওপর দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে সুন্দর নিটোল গড়নের দুটো অর্ধগোলক। আধেক আধেক চাঁদ যেন দুখানি। সরু বিভাজন স্পষ্ট।
অল্প ভিজে গিয়েছে বুক, পেট। থর থর করে কাঁপছে বিদিশার সমস্ত প্রায় নগ্ন শরীর আর তার সাথে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার মেদহীন সুন্দর পেট। আর পেটের মধ্যস্থলে স্থিত ছোট্ট নাভিটি, সেটিও উঠছে নামছে একই ছন্দে। লাল রঙের প্যান্টি ভিজে গিয়েছে রক্তে, প্যাড সরে গিয়ে একদিকে চলে এসেছে।
ননদের মিষ্টি মুখের শক্ত খোঁচা খেয়েও শান্তস্বভাবের শ্যামলী চুপ করেই ছিলেন সেদিন। সকলে উপভোগ করেছিল কথাগুলো। শান্তনু নতমুখে বসেছিল। কি বলবে না বলবে ভাবতে পারত না সে এসব বিষয়ে।
শান্তনুর আরেক দাদা বলেছিলেন, “না না… কি যে বলিস, শ্যামলী নিশ্চয়ই পায়েস বানাচ্ছে আমাদের সকলের জন্যে? কি শ্যামলী তাই না?” বলে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন ভাইয়ের সুন্দরী বউয়ের দিকে।
শ্যামলীর তখন দু বছর হবে বিয়ে হয়েছে, শুভ্রর প্রথম জন্মদিন। কি করবে, কি বলবে না বুঝে সে শুধু ঘাড় নেড়েছিল। কলেজপড়ুয়া শ্যামলীর একরকম বাড়ি থেকে পালিয়েই বিয়ে হয়েছিল, শান্তনুর সাথে। সে রান্না হেঁসেল কিছুই করেনি কোনদিন। দশ বারোজনের পায়েস রান্না করতে গিয়ে সে রান্নাঘরে হিমশিম খেতে লাগলো। নিঃশব্দে সেদিন হারান সমস্ত করে দিয়েছিল। অবাক হয়ে শ্যামলী শুধু তাকিয়েছিল। হারানও কোন কথা বলেনি, সেও না।
এরকম আর কত, কত ঘটনা মনে পড়ে শ্যামলীর। বিবাহিত জীবনে একটা নীরব সাহায্যের হাত সবসময় সে পেয়েছে পাশে পাশে। মাথায় এসে লাগলো সেই হাতটাই। আলো অন্ধকারে, পাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে তার বউমণি। এখনো তার চোখে সেই আগের বউমণিই আছে সে, আগের মতই সুন্দরী, সেইরকমই শান্ত, শান্তিময়ী।
সংসারে কোন অভিযোগ নেই যার, নিজের কথা কোনদিন মুখ ফুটে কাউকে জানায়নি যে। আস্তে আস্তে হারানের মায়াকোমল হাত ধুয়ে দিতে লাগলো শ্যামলীর মাথার সব ব্যাথা। অন্ধকার ঘরে, আলো আসছে অল্পই, শান্তনু আর শ্যামলীর বিশাল খাটে একলা শুয়ে শ্যামলী, বাইরে ব্যাল্কনিতে তার স্বহস্তে রচিত ঝুমকোলতা ফুলের গাছ হাওয়া ঈষৎ আন্দোলিত।
মাথায় হারানের খাটাখাটুনিতে জীর্ণ শক্ত হাত দুটো ঘুমের পরশ দিয়ে যাচ্ছে, শান্তিতে চোখ বোজে শ্যামলী। কাছের মানুষকে দূরে যেতে দেখা কষ্টের, আর দূরে চলে যাওয়া মানুষকে সর্বক্ষণ কাছে দেখতে পাওয়া আর কষ্টের, আজ থেকে সেই কষ্ট আর হবে না শ্যামলীর।
তার স্বামী যাকে সে আগেই হারিয়েছিল আর নেই। চোখের সামনে থেকেও তিনি হারিয়ে গিয়েছেন। গালে আলতো, পরশ পায় একটি বিনয়ী সেবক হাতের। গাল বেয়ে নেমে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত অশ্রুধারা, মুছিয়ে দিচ্ছে সেই হাত। আজ প্রথম এই বাড়িতে এত বছর বাদে তার গায়ে কেউ ভালবাসা বুলিয়ে দিচ্ছে যেন। চোখ মেলতে নেই এই সময়। মন ভরে উঠছে শ্যামলীর।
সে মনিব, হারান চাকর, এই বিভেদ যেন ক্রমশই গুলিয়ে যাচ্ছে। ন্যায় অন্যায়ের পূর্ণ জ্ঞান তার আছে, সে জানে ভালবাসা কখনই পাপ নয়। হারান প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছে তাকে সুদীর্ঘ তেইশ বছর, আজ যদি সে তার সেই সঞ্চিত ভালবাসা বুকে ধরে রাখতে না পারে, কিছুটা যদি ছলকেও পড়ে তার অনুগত হৃদয়কুম্ভের থেকে তাহলে সেই ছিটেফোঁটা মাথায় করে তুলে নেবে শ্যামলী। এতে তার পূণ্যই হবে। পাপ হবে না।
হারানের চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। সে যেন শ্যামলীর বুকের সমস্ত ভাব বুঝতে পারছে কোন অলীক উপায়ে। কোন স্বর্গীয় বেতার মাধ্যমে। টুপ করে সেই অশ্রুবারি পড়ল শ্যামলীর নরম গালে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল শ্যামলী। ঘুরে শুলেন তিনি। আধো অন্ধকারে বসে আছে হারান, বা তার ছায়ামূর্তি।
“বউমণি…”, ধরা গলায় হারান এইটুকুই শুধু উচ্চারন করতে পারল।
“কেঁদো না হারানদা”, আলতো স্বরে বললেন শ্যামলী, তার হাত দুটো দিয়ে আস্তে করে ধরে নিলেন হারানের কম্পিত দুটি হাত।
“তুমি কষ্ট পেয়ো না বউমণি…” গলায় যেন কান্না ছাপিয়ে উঠছে তার।
“না হারানদা আমি কষ্ট পাইনি, আর কেউ জানুক বা না জানুক, তুমি তো জানো যে আমার নতুন করে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই?” ধীরে ধীরে শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বললেন শ্যামলী।
হারান শুধু চেয়ে রইল তার আদরের বউমণির দিকে। ইচ্ছে করছিল সস্নেহে তাকে আদর করে দেয়। সারা জীবনে যত কষ্ট সে সয়েছে সব ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তাদের মাঝখানের সামাজিক ব্যবধান। চিরাচরিত ভালমন্দ, রীতিনীতি।
চোখে চোখে আলোআঁধারিতে কথা হয়ে গেল হাজার হাজার। শ্যামলীর দুই হাতের ভেতর থেকে একটা হাত বের করে আনল হারান। ওর স্নিগ্ধ কপালের ওপর একটা চুল এসে পড়েছিল, সেটাকে সন্তর্পণে তুলে নিয়ে কানের ধারে গুঁজে দিল পরম যত্নে। আবেশে আর ভালোলাগায় চোখ বন্ধ করলো শ্যামলী। সে চাইছে হারান আরো অনেকক্ষণ তার কাছে বসে থাকুক। যতক্ষণ না শুভ্র ফেরে।
তার যে আর একা থাকতে ভালো লাগছে না, জীবনের অধিকাংশ সময়ই তো সে কাটিয়েছে একা একা। ভীষণ একান্ত ভাবে একা। রোগা শরীরে একটা পাতলা শার্ট গায়ে দিয়ে বসে আছে হারান তার বউমণির শয্যাশিয়রে। একটা ছাপা শাড়ি গায়ে শুয়ে রয়েছেন বউমণি। পাতলা দেহে এখনো যেন অনেকটাই রয়ে গিয়েছে আগের সেই মাধুরী। বাইরে থেকে আসা আলোয় ভালোই দেখা যাচ্ছে, দেহের ওঠানামা।
বুক উঁচু হয়ে রয়েছে ঈষৎ, শাড়িতে ঢাকা। আঁচল ঢেউ খেলে নেমে গিয়েছে, তার পর পেট, সেখানে আঁচল নেই, সরে গিয়েছে, এদিক সেদিক। নাভির ওপরে শাড়ি পরেন শ্যামলী, তাই নাভি দেখা যাচ্ছে না, হারান নিজের অজান্তেই তাকায় পেটের দিকে, যেখানে অল্প আলোয় মসৃণ ত্বক বিনীত ভাবে শুয়ে রয়েছে শরীর জুড়ে। হাওয়া আসছে বাইরে থেকে মৃদুমন্দ, একটুখানি উড়ে যায় আঁচল। বুকের খানিকটা নিরাবরণ করে দিয়ে। ব্লাউজ দেখা যাচ্ছে, নিচের একটা হুক খোলা, বাড়িতে ঘরোয়া ভাবেই থাকেন শ্যামলী, অন্তর্বাসও পরেননা খুব একটা আজকাল, কেই বা দেখে তাকে?
হারান বুঝল বউমণির ঘুম লেগে গিয়েছে, সে তাই আস্তে করে কাপড় টেনে দিল বুকের। বউমণির শরীরের আব্রু, সে তার কাছে অনেক দামী জিনিস।
তার মনে আছে একবার বাবু বউমণির কিসব ছবি আঁকতে চেয়েছিলেন, বিয়ের পরে পরে, সেদিন চিন্তায় হারানের ঘুম হয়নি রাতে। বউমণি যদি রাজি হয়ে যায়? পরে অবশ্য তাদের মনোমালিন্যে বেশ টের পেয়েছিল সে, যে তার ভয়ের কোন কারণ নেই, বউমণি রাজি হননি।…
ঝুমকোলতা ফুলের সুবাস এবার কড়া হয়ে উঠছে, সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসছে, কাজের বাড়িতে এত হই হল্লায় শরীরে ক্লান্তি নেমে এসেছিল বউমণির, এখন তার হাতের আরাম পেয়ে সে শিশুর মতো ঘুমিয়ে গিয়েছে, হারানের একটা হাত ধরে রেখেছেন তিনি তার দুটো ক্ষীণ হাতে। হারানের খুব ভালো লাগছে হঠাৎ… ফুলের গন্ধটা, এই সন্ধ্যেটা, বউমণিকে।
তার মুখ ঝুঁকিয়ে আনে সে বউমণির গালের কাছে, সারা বাড়িতে তারা দুটি প্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই এখন। সব আত্মীয় পরিজন ফিরে গিয়েছেন নিজ নিজ বাসায়। আবার সন্ধ্যের পর হয়তো বা কেউ কেউ আসবেন অফিস ফেরতা। বউমণির চুলের গন্ধ এতবছরেও পাল্টায়নি। অন্ধকারে সে চিনে নিতে পারবে। সেই একই সুগন্ধি তেল ব্যবহার করছে সে বরাবর।
হারানের যে প্রাণে কি উচাটন চলছে সে বর্ণনাতীত। নাক ভরে সে বউমণির এত নিকটে থাকার সুযোগ নেয়। আঘ্রাণ করে সে তার এই পূজ্য ব্যাক্তিটির সুবাস। ভক্তি আর স্নেহ ভরে ওঠে তার মনে। সে কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে দেখে ঘুমন্ত শ্যামলীর বুক, পেট, কোমর।
আঁচল কিছুটা লুটিয়ে গিয়েছে বিছানায় শ্যামলীর পিঠের পেছনদিকে। আর সে ফিরে রয়েছে হারানের দিক করে। ফলে, হাতের চাপে তার মাঝারি বুকে সৃষ্ট হয়েছে একটি খুদ্র বিভাজন। হারানের খুব সুন্দর লাগছে আজ তার বিধবা বউমণিকে।
কপালে সিঁদুরের টিপ নেই, সিঁথি থেকে মুছে গিয়েছে এই দুঃখের সম্পর্কের সমস্ত চিহ্ন। আবার যেন কুমারী মেয়ের মত পবিত্র লাগছে তাকে, যেন তার পুনর্জন্ম হয়েছে!
একটা আঙুল নিয়ে যায় হারান শ্যামলীর বুকের খাঁজের কাছে… চোখে তার অপার ইচ্ছা, আস্তে আস্তে জাগছে মনের গভীরের বহুদিনের সঞ্চিত সুপ্ত বাসনা। তার একদা রূপ যৌবনে পরিপূর্ণ দেহ বিছিয়ে শুয়ে রয়েছে তার বউমণি। এই শরীরে কতদিন কেউ আদর করেনি। এই বুকে ওষ্ঠপরশ লাগেনি কত যুগ। আর ওই কোমর বেয়ে… আঙুল বোলায়নি কোন প্রিয়বাসি…
আর আর গভীরে, বউমণির নারীত্বের গহীন বন্দরে নৌকো ভেড়েনি কতদিন…
আস্তে করে এই সমস্ত ধূলিধূসর অবহেলিত জায়গায় আদর করে দিতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু না, এই সুন্দর ভালবাসা নীরবে সেবা করে যাক তার এই পরমপ্রিয় বউমণির… হাতের স্পর্শে একে কলুষিত করে দিতে পারবে না সে।…
কিন্তু মন চাইছে ভীষণরকম। আজ তো আর কোন বাধা নেই, ঘুমে অচেতন শ্যামলী। ক্লান্ত শরীর তার অসাড়, বুক উঠছে নামছে আলতো ছন্দে নিশ্বাসের তালে তালে। খাঁজ ফুলে ফুলে উঠছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে হারানের নীরব আকাঙ্খাগুলোকে।…
****
বিকেলের আলো কমে গিয়েছে। আবছা দাঁড়িয়ে আছে গাছের সারি, চেনা রাস্তায় অচেনা লোকের আনাগোনা। রিক্সা হর্ন বাজিয়ে ছুটেছে কোথায় কে জানে। টিউশানি বাড়ি চলেছে কিছু মেয়ে। দোকানে ভিড় লোকেদের। যানজটে ভরা সন্ধের মধ্যে এতোটুকু উপায় নেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়বার।
বিদিশার রিক্সাও ছুটেছে এই সন্ধের ভেতর দিয়ে। হলুদ স্কার্টের প্রান্ত উড়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। এক হাত কোলের উপরে রেখেছে বিদিশা যাতে বেশী না উড়তে পায় হলুদ বসনখানি। পায়ের গোছ অনাবৃত হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। একটা পাতলা চটি পরা পায়ে। পায়ের আঙুলগুলো খুব সুডৌল। প্রত্যেকটা নখ গোল করে শেপ করে কাটা, হালকা গোলাপি রঙের নেলপেন্ট লাগানো। ওর একটু চাপা অথচ পরিষ্কার গায়ের রঙে মানিয়েছে বেশ।
সুন্দর পা দুখানি দেখা যাচ্ছে স্কার্ট উড়ে গেলেই। নচেত লং স্কার্ট ভালোই ঢেকে রেখেছে বিদিশার কোমরের তলা থেকে বাকি শরীর। সাদা কুর্তির তলায় লাল ব্রা পরতে হয়েছে বলে একটা শেমিজ পড়েছে সাদা রঙের। সাদা ব্রা দুটোই ভেজানো ছিল কাচার জন্যে।
দুই স্তর জামাকাপড়ে বেশ একটু গরম লাগছে বিদিশার। একটু ঘেমে গিয়েছে ও। সারাদিন কলেজের পর চলেছে শুভ্রদের বাড়ি।
মিস্তিরি লেনে ঢোকার মুখে যে বড় মাঠটা পরে, তার কোনায় আসতেই চার পাঁচজন ছেলে হুট করে এসে পড়ল রিক্সার একেবারে সামনে। ছেলেগুলোকে দেখতে মোটেও ভদ্র সভ্য নয়। তবে বিদিশা জানে এই পাড়ার বখাটে ছেলে এরা, শুভ্র আগে ওকে অনেকবার বলেছে এদের কারণেই ও চায় বিদিশা একেবারে রিক্সা করে এসে যেন বাড়ির সামনে নামে। বিদিশা এও জানত যে এরা শুভ্রকে ভালোই চেনে।
“রিক্সা থামাও, থামাও… এই দাঁড়াও ভাই!”, বলে এগিয়ে এলো ওরা।
একজন বেশ লম্বাটে, লাল শার্ট পরা, দাঁতগুলো লাল লাল।
“কি হয়েছে দাদা?”, বেশ একটু সাহস করেই জিজ্ঞেস করল বিদিশা।
“তোমার নাম বিদিশা তো?”, লাল শার্ট জিজ্ঞেস করলো।
“হ্যাঁ কেন?” বেশ একটু অবাক হল বিদিশা। নামও জেনে গেছে!
“শুভ্রদের বাড়ি পুলিশ এসেছে আবার। খুনি কে জানা গিয়েছে, ওদিকে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। শুভ্র বলেছে তোমাকে ওখানে না যেতে। তাই আমরা তোমার আসবার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।”, ঘার চুলকোতে চুলকোতে বলল লাল শার্ট। বাকি সাঙ্গোপাঙ্গরা দেখছে বিদিশাকে। ওরা চিরকাল ওভাবেই দেখে।
“খুনি কে? পুলিশ তদন্ত করে বের করে ফেলেছে? শুভ্র কেমন আছে? ও এখন কোথায়? ওর সাথে আমার একবার দেখা হবে কি?”, বিদিশা বেশ চিন্তিত হয়ে একসাথেই করলো প্রশ্নগুলো।
রিক্সা সাইড করেছে ততক্ষনে রিক্সা চালক। সে একদিকে দাঁড়িয়ে আছে ঘটনার মীমাংসার অপেক্ষায়।
তার কোমরের গামছাটা খুলে নিয়ে সে গলা আর ঘাড়ের ঘাম মুছতে লাগলো।
“হ্যাঁ, শুভ্র বলে গেছে আমাদের ক্লাবঘরে যেন তোমাকে বসাই। পুলিশ চলে গেলে ও এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।” আরেকটি ছেলে এগিয়ে এলো এবার। এর চেহারাটাও আপেক্ষিক ভাবে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
ছেলেটি একটু যেন বেঁটে, পরনে একটা রঙচঙে টি শার্ট, আর একটা ঢোলা বারমুডা।
বিদিশা কি করবে ভেবে পেল না, অথচ এই এত মানসিক দুর্যোগের পর থেকে শুভ্রর সাথে তার একটিবার দেখাও হয়নি। অথচ এদের ক্লাবঘরে গিয়ে অপেক্ষা করবে সে কি মনে করে? শুভ্রই বা আজ হঠাৎ এদের এত বিশ্বাস করছে কিভাবে? আগে তো বিদিশার কাছেই এই ছেলেগুলোর কত নিন্দা করেছে! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ও নেমে এলো রিক্সা থেকে। ওর সুন্দর পায়ের পাতা বেরিয়ে এলো স্কার্টের ঘেরের থেকে, নামবার প্রচেষ্টায়।
“ভাই কত হয়েছে?”, জিজ্ঞেস করলো বিদিশা, রিক্সাওয়ালাকে।
মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটা পথ ধরেছে ওরা। দূরে ক্লাবঘরে দুয়ার খোলা। একশ ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে, হলুদ আলো বিছিয়ে গিয়েছে দুয়ার ছাড়িয়ে মাঠের কিছুটা জায়গায়। ঘাস বেড়ে গিয়েছে মাঠে। কিছুটা জংলা ভাব। মোটামুটি ঘরের ভেতরের ওই আলোটুকু ছাড়া বাকি জায়গা অন্ধকার। এদিকে স্ট্রিট ল্যাম্প গুলোও জ্বলছে না।
ঢিল মেড়ে মেড়ে ভাঙা হয়েছে বহুবার। কর্পোরেশন থেকেও আর গা করেনি মেরামতের।
বিদিশা চলছে সন্ত্রস্ত পদক্ষেপে। ঠিক বুঝতে পারছেনা কি হতে চলেছে। মনে খুব চিন্তা হচ্ছে। এই ছেলেগুলোর সাথে এসে ও ভুল করছে না তো। পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছে শুভ্রই তো বলে পাঠিয়েছে। এই ভেবে নিশ্চিন্ত হতে চাইছে। বিদিশা হাঁটছে ঘরটার দিকে। ওর পাশে পাশেই হাঁটছে আরো দুটি ছেলে। আগে আগে হাঁটছে লাল শার্ট। চার নম্বর ছেলেটি হয়তো পেছনে রয়েছে, বিদিশা দেখতে পাচ্ছে না তাকে। দরজার কাছে পৌঁছে গেল ওরা।
“নিয়ে এসেছিস?”, ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি মোটা কালো লোক। বয়েস পঁয়ত্রিশের ওপরে হতে পারে। বিশ্রী চেহারা। গোঁফ রয়েছে সরু করে কাটা। একটা প্যান্ট আর একটা হলুদ ছোপ ছোপ শার্ট পরা গায়ে।
বিদিশার কেমন অদ্ভুত লাগলো। এবার ওর মনের দুশ্চিন্তাটা ভয়ের আকার নিল।
“চলে যাও ভেতরে”, পেছন থেকে বলছে কেউ। লাল জামা ঢুকে গিয়েছে ঘরের ভেতরে।
খ্যাক খ্যাক হাসির আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। হলুদ কটকটে আলোর নিচে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে খুব হাসছে লাল জামা আর কালো মোটা লোকটি।
বিদিশার ভালো ঠেকছে না।
“আমি আজ আসি। আমি পরে শুভ্রর সাথে কথা বলে নেব”, বলতে বলতে খোলা দরজার থেকে পেছন ফেরে বিদিশা।
“না আজকেই কথা বলে যাও সোনামণি!” ভেতর থেকে বলে ওঠে কেউ। বিদিশা পেছন ফিরে রয়েছে তার দিকে। তাই দেখতে পেল না কথাটা কে বলল।
ওর সামনে দুটি ছেলে দাঁত বের করে হাসছে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। আর এগিয়ে আসছে ওর দিকে, ওর পেছনে ক্লাবঘরের দরজা। সামনে বিশাল অন্ধকার মাঠ। রিক্সা সাইকেলের আওয়াজ আসছে মাঠের ওই প্রান্ত থেকে। আর যেই হাঁটা পথে মাঠের পাশ দিয়ে ওরা এসেছে সেই পথে কেউ যাচ্ছে না এখন। চেঁচালে মাঠের ওই পাড়ের লোকেরা কি শুনতে পাবে? মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ গতিতে ভাবতে থাকে বিদিশা।
চোখে তার ত্রস্ত হরিণীর তড়িৎ চাহনি। সে দেখে নিতে চায় আসে পাশে বাড়ি ঘর আছে কিনা। আছে তো। মাঠের পাশেই বিশাল উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি সব। আর ক্লাবঘরের পেছন দিকটায় বস্তি। সেখানে নিশ্চয়ই লোকজন রয়েছে। ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে আওয়াজ যাবে না? কেউ কি শুনবে না ও চেঁচালে?
এইসব ভাবতে ভাবতেই বুকের ওপর কনুইয়ের চাপ পড়ল। জোরে। দম প্রায় আটকে গেল। ঘরের ভেতরে পড়ে গেল বিদিশা। ঝটিতে দরজা বন্ধ হল। ছেলে দুটি ঢুকে পড়েছে। চার নম্বর কোথায় গেল তাহলে? ভাবতে পারেনা বিদিশা, মাথা ঘুরতে থাকে।
ছিটকে এসে পড়াতে, স্কার্ট উঠে গিয়েছে অনেকটা। জঙ্ঘার কাছ অব্দি দেখা যাচ্ছে প্রায়। সুন্দর লোমহীন পা। ঢাকবার চেষ্টা করে ও। লাল জামা ঝুঁকে পরে ওর হাত দুটো ধরে নেয়।
“থাক না সোনামণি, দেখি একটু আমরাও। অনেককে তো দেখিয়ে বেড়াস, আমরাও একটু দেখি!”
বলে সে বাকিদের দিকে চোখ মাড়ে।
“কিরে রতন, বোঁচকে, দেখবি না?”
রতন আর বোঁচকেও মাথা নাড়ে। একটু বেঁটে পরিস্কার দেখতে ছেলেটি এগিয়ে আসে এবার। সেই বোধহয় রতন।
বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে এদের স্পর্ধা। মুহূর্তের মধ্যে এত কিছু ঘটে যাওয়ায় সে ঠিক তাল সামলাতে পারছে না যেন।
“কিরে রতন কি করবি? এখনই খুলে দিবি?” লাল জামা জানতে চায় বিদিশার পেছন থেকে।
সে হাঁটু গেড়ে বসেছে বিদিশার পেছনে। বিদিশার হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে। আর বিদিশা পড়ে রয়েছে মেঝেতে। এগিয়ে আসছে রতন।
“আমি চিৎকার করবো। আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।”, বিদিশা কাঁপা কাঁপা বিস্মিত গলায় বলতে থাকে, বলতে গিয়ে অনুভব করে তার গলার স্বর বেরতেই চাইছে না।
গলা শুকিয়ে একবারে কাঠ হয়ে গিয়েছে। যেন কণ্ঠনালীর ভেতরে চামড়ায় চামড়ায় আটকে যাচ্ছে।
“চিৎকার কর না বুলবুলি। কেউ আসে কিনা দেখি!”, এবার খিক খিক করে হেসে হেসে বিশ্রী ভাবে বলে ওঠে রতনের পাশের ছেলেটি, যে এতক্ষন চুপচাপ ছিল।
ভগবান এরা প্রত্যেকটাই কি একইরকম জানোয়ার? কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে বিদিশার। কেন তারা এরকম করছে তার সাথে, শুভ্র থাকলে দেখে নিত এই হার্মাদগুলোকে, ভাবতে থাকে বিদিশা।
রতন এগিয়ে এসে নিচু হয়ে ওর স্কার্টের ঘেরটা হাত দিয়ে ধরতেই চিৎকার করে ওঠে বিদিশা। পা টেনে সরিয়ে আনে নিজেকে। বেশী জোরে আওয়াজ বের হয় না ওর গলা দিয়ে। এই আওয়াজ কি ক্লাবঘরের বন্ধ দরজা পেরিয়ে, মাঠ পেরিয়ে কারুর কানে পৌঁছবে?
“এই দত্তদা, একটা গান লাগিয়ে দাও না তোমার ওই যন্তরটায়।” লাল জামা ঘাড় ঘুরিয়ে একটু দূরে চেয়ারে বসে থাকা মোটা কালো বিশ্রী লোকটাকে অনুরোধ জানায়।
“মাগীটাকে চুপ করতে বলো না তার চাইতে, নইলে আমার এদিকে ফোনের ব্যাটারি পুড়বে।” দত্তদা কুৎসিত ভুঁড়ির তলায় চাপা পড়ে যাওয়া প্যান্টের পকেট হাতড়াতে হাতড়াতে বললেন।
“না না তুমি গান লাগাও, গান হলে বুলবুলিরও ভালো লাগবে। বুলবুলি মস্তি পাবে বেশী। কি বুলবুলি তাই না?” বলতে বলতে রতন বিদিশার স্কার্ট তুলে ধরে, উঁকি মাড়ে ভেতরে।
বিদিশা নিরুপায় হয়ে মেঝেতে পড়ে পড়ে নিজের দুর্দশা ও হয়রানী দেখে মনে মনে মড়ে যেতে থাকে।
পা দিয়ে দাপিয়ে সরিয়ে নিতে চায় নিজেকে। গলা দিয়ে চিৎকার করতে চায়। আওয়াজও বের হয় বেশ কিছুটা কিন্তু ঠিক তক্ষুনি পেছন থেকে অত্যন্ত জোরে একটা রদ্দি হিন্দি গান বেজে ওঠে। কোন একটা সুপারহিট ছিবির আইটেম গান।
বিদিশার মনে আছে, টিভিতে প্রায় দেখাত এক সময় গানটা, স্বচ্ছ পোশাক পড়ে বিশ্রী ভাবে কোমর নাচিয়ে নাচিয়ে একটি মেয়ের যৌন আবেদনে ভরা নাচটির জন্যেই গানটি বিখ্যাত হয়।
পা দাপানোর জন্যে পেছনে শক্ত করে ধরে থাকা হাতে বাজে ভাবে টান খেয়ে গেল বিদিশা, তীক্ষ্ণ একটা ব্যথা নেমে এলো কাঁধ বেয়ে। বিদিশা বুঝতে পারল আজকে ওর কোনমতেই রক্ষে নেই। প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা যা হতে পারে, তাই ওর জীবনে আজ আসন্ন। ও রেপড হতে চলেছে। গ্যাং রেপড।
আচমকা সমস্ত চোখ জুড়ে অন্ধকার নেমে এলো বিদিশার। বুকের ভেতর যেন কেউ ঠাণ্ডা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে। স্কার্ট তুলে ধরে উঁকি মারছে রতন। অবশ অসহায় ভাবে পা ছড়িয়ে পড়ে আছে ও। একটা সমত্ত ছেলে সমস্ত লোভ ও লালসা নিয়ে দেখছে ওর স্কার্টের ভেতরে ওর প্যান্টি। ওর নগ্ন পা। ওর আভ্রু, ওর লজ্জা সব নিলাম হয়ে যাচ্ছে…।
“এ মেয়ের তো পিচ ভেজা রে! ব্যাটিং করবি কি করে?”, রতন মাথা বের করে বলল সকলের দিকে তাকিয়ে।
বিদিশার দেহ অবশ হয়ে আসছে। ওর মাসিক হয়েছে গতকাল। আজকে বেশ ভালোরকম ফ্লো হচ্ছে। ওরা তাই নিয়ে মন্তব্য করছে, ভাবতে পারে না বিদিশা নিজের এরকম অপমানজনক পরিস্থিতি। ওর ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো সিথিল হয়ে যেতে লাগে। চোখে একশ ওয়াটের কড়া হলুদ আলো বড্ড কর্কশ মনে হয়। কাঁধের ব্যথায় ভুরু কুঁচকে ফেলে ও। চোখ বুজে ফেলে অপমানের জালায়।
মত্ত উল্লাসে পেছনে বাজছে হিন্দি ছবির আইটেম গান। ওর চিৎকার কেউ শুনবে না এই পান্ডববর্জিত এলাকায়।
“তাহলে কি হবে? সব মজা তো ভোগে চলে গেল রে হিরো?”, রতনের পাশের ছেলেটি লাল জামাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে কথাগুলো। আর বলতে বলতেই রতনের হাতের থেকে বিদিশার স্কার্টের কাপড়টা নিয়ে নেয়।
“কই দেখি, দেখি”, বলে সেও মাথা ঢুকিয়ে দেখে নেয় উঁকি মেড়ে।
“উফফ কি গন্ধ গো! মাসিকের সময়ও মাগীর চাক থেকে কি গন্ধ বের হচ্ছে গো রতনদা, একে কি করে ছেড়ে দেব কিছু না করে? কি গো হিরো কিছু বলো?”, হাঁ করে তাকিয়ে সে একবার দেখে রতনের দিকে, একবার দেখে হিরো অর্থাৎ লাল জামার দিকে।
“উফ বোঁচকে, সাধে কি তোকে বোঁচকে বলি, তোর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই, সব বুদ্ধি বাল তোমার নুঙ্কুতে চলে গেছে! ছেড়ে দেব কে বলেছে? মাগীকে ন্যাংটো করে নাচাবো রে, দেখছিস না কেমন গান চালিয়েছে দত্তদা, কি দত্তদা নাচ দেখবে তো নাকি?”, বলে হিরো একবার চেয়ারে আয়েস করে বসা দত্তদার দিকে একবার ছটফট করা বিদিশার মুখে দিকে দেখে। তারপর মুখ নামিয়ে এনে বিদিশার সুন্দর মুখের ওপর রাখে,
“মাইরি জান, তোমাকে কিছু দেখতে। একটা হামি দাও না জানেমন?”, বলে নিজের ঠোঁটটা বিদিশার নাকে মুখে ঘসে দেয়। বিশ্রী পান মশলা আর বাসি মদের গন্ধ আসে বিদিশার নাকে। বমি উগ্রে আসতে চায়। শরীর মুচড়ে ওঠে ঘৃণা আর অপমানে।
“আআহহহ… হাআআআ”, চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে বিদিশা।
এক দিকে ফিরিয়ে নেয় ওর নিটোল মুখ খানি। সাদা কুর্তিরে মধ্যে বুক ফুলে ওঠে শরীরের এই মোচড়ে। লাল জামা অর্থাৎ হিরোর হাতে ওর হাত দুটো পেছনে আটকে থাকার জন্যে, ওর বুক আরো উন্নত ও ভরাট লাগছে। মনে হচ্ছে একটা সাদা ব্যাগের মধ্যে কেউ তুলো ঠেসে ঠেসে দুটো গোল বল বানিয়ে দিয়েছে। লাল ব্রায়ের স্ট্র্যাপ বেরিয়ে পড়েছে এক পাশ দিয়ে।
রতন ঘুরে বিদিশার ঘাড়ের কাছে এসে, স্ট্র্যাপের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিল, তারপর আঙুলটাকে আঙটার মতো করে স্ট্র্যাপটা টেনে ধরে বললো, “ওঠ রে মাগী, নাচবি না?”
বিদিশা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে পড়ে রইল। কাঁদতে গিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে যন্ত্রণা আর অপমান।
“আহহ… নাহহহ”, এক পাশ থেকে আরেকপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয় বিদিশা, এই জঘন্ন প্রস্তাবে তার অসম্মতি জানায় সে।
রতন টেনে ধরে রাখা লাল স্ট্র্যাপটা ফস করে ছেড়ে দেয় এবার। চটাস করে এসে লাগে বিদিশার কাঁধের নরম তুলতুলে মাংসের ওপর।
“আআআহহহহহ…” যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে ওঠে বেচারি।
“তাহলে ওঠ বলছি,” আবার ঠাণ্ডা গলায় হুকুম দেয় রতন। ওই সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার শয়তান এদের মধ্যে।
বিদিশা উঠতে চায়না কিছুতেই।
“নাআআহহহ”, বলে এক পাশে সরে যেতে চায় ও। হিরোও হঠাৎ করে ছেড়ে দেয় ওর হাত দুটো। বিদিশা ছাড়া পেয়ে এক পাশে সরে যেতে সক্ষম হয়।
ওর স্কার্ট উঠে গিয়েছে বেশ কিছুটা। চুল সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে কপালে আর ঘাড়ে। চুলের বন্ধনি আলগা হয়ে গিয়েছে, ঝুলে রয়েছে এক পাশে। ওর মুখ রক্তিম হয়ে উঠেছে, এই নিপীড়নে। ক্লাবঘরের নোংরা মেঝেতে ও একটা পশুর মত চার হাতে হাতড়ে হাতড়ে কোনমতে তফাতে যাওয়ার চেষ্টা করে, কাঁধে টান লেগে গিয়েছে বলে একটু অসুবিধে হচ্ছে ওর।
“উঠে দাঁড়া মাগী, ওঠ বলছি, নইলে গায়ে মুতে দেব শালি, ওঠ!”, চোখ মুখ খিঁচিয়ে অদ্ভুত হিংস্র ভাবে হুকুম করে রতন।
হিরো হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোঁচকে দাঁত বের করে যেন মজা দেখছে। আর দত্তদা চেয়ারে বসে ফোনে কিসব করছে। বোধয় আরেকটা গান লাগিয়ে দিচ্ছে। তার যেন বিশেষ আগ্রহই নেই কিছুতে।
বিদিশা এই নতুন হুমকিতে কিছুটা ভয় পেল। সত্যিই মনে হয় এরা সব করতে পারে। ও কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ও। বুঝতে পাড়ছে এই হাতাহাতিতে ওর স্যানিটারি ন্যাপকিন সরে গিয়েছে। ওর প্যান্টিতে যেন কেমন ভেজা ভেজা লাগছে।
ঘরের মাঝখানে দাঁড়ানো বিদিশা। মুখ নিচু। চুল আলুথালু। চুলের ক্লিপ একদিকে ঝুলছে। হলুদ স্কার্ট ময়লা হয়ে গিয়েছে। কুর্তি-টপ উঠে রয়েছে কিছুটা। একদিকে লাল ব্রা বেরিয়ে গিয়েছে কাঁধের পাশ থেকে। থরথর করে ঠোঁট কাঁপছে রাগে, দুঃখে, অপমানে। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছে টস টস করে, অবারিত ধারায়। খালি পা। চটি ছিটকে গিয়েছে অনেক আগেই।
“জামাটা খোল রে কুত্তি মাগী”, হিরো এতক্ষনে কথা বলে। “রতন, ভাই এ এত সময় নিলে কি করে হবে বলতো?”, খুব যেন বিরক্ত সে।
“জামা খুলবি, না বোঁচকের পেচ্ছাব খাবি?” বলে হেসে ওঠে রতন। “ওই বোঁচকে তোর নুঙ্কুটা বের করতো!”
বোঁচকে দাঁত বের করে এগিয়ে আসে। সত্যি সত্যিই শার্ট তুলে প্যান্টের চেন খুলতে লাগে ও।
“আপনারা মানুষ না জানোয়ার? ছেড়ে দিন আমায়!”, বিদিশা রাগে কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে এগোয়।
“আপনাদের নামে আমি পুলিশে জানাব। শুভ্রকে বললে ও আপনাদের একজনকেও ছেড়ে দেবে না!”
এই কথাতে হো হো অট্টহাসির রোল উঠল ঘরের মধ্যে।
“খুকি তোমার ওই সাধের নাগরই আমাদের বলে গেছে তোমার খাতির করে দিতে ভালো করে, বুঝেছ?” হিরো এগিয়ে আসে। লাল ছোপ ছোপ দাঁত গুলো হিংস্র ভাবে বেরিয়ে আসে কথা বলার কায়দায়।
বিদিশাকে এগোতে দেখেই রতন দরজা আগলে দাঁড়িয়ে পড়ে। “বোঁচকে আর ভালো লাগছে না, হয় মাগীর জামা খোলা নয় মেয়েটার মুখে মুতে দে!”
এত কিছু এক সঙ্গে নিতে পারেনা বিদিশা, ভয়ে কাঁপতে থাকে সে! শুভ্র নাকি এদের বলে গেছে, এরা এত মিথ্যেবাদি?
“মিথ্যে কথা, শুভ্র একথা কক্ষনো বলতে পারেনা।” এক পা এক পা পিছিয়ে যায় বিদিশা। আর ওর সামনে এগিয়ে আসতে থাকে বোঁচকে। প্যান্টের চেন খুলতে খুলতে।
ক্যারাম বোর্ডটার সাথে ধাক্কা খায় বিদিশা। পেছন ঘুরে দেখতে যায়। আর তখনই অনুভব করে সামনের দিকে ওর শরীরে গরম জল যেন ফোয়ারার মত ছিরিক ছিরিক করে এসে পড়ছে। ধুয়ে যাচ্ছে ওর পেট, স্কার্ট সমস্ত। ভিজে যাচ্ছে সব। সামনে ঘুরতেই, তরল ফোয়ারাটা আর কিছুটা উঁচু হয়ে এলো। পেছনে বর্বর হাসির রোল উঠেছে।
“মুখে দে, বোঁচকে, উঁচিয়ে ধর, উঁচিয়ে ধর। মুখে… দে খাইয়ে!”
“দে বোঁচকে… ভালো করে!”
হিরো আর রতন উৎসাহ দেওয়া যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।
“কি যে করিস তোরা, ক্যারাম বোর্ডটা ভিজিয়ে দিস না দেখিস। এই ঘরটা এবার সাফ করতে আরেক কাণ্ড হবে তোদের!”, দত্তদা যেন নির্বিকার। তার যেন এসব কিছুই গায়ে লাগছে না, কোন উত্তেজনাই হচ্ছে না!
এদিকে পেছন থেকে হিরো আর রতনের বর্বর উৎসাহ পেয়ে বোঁচকেও নিজের প্রত্যঙ্গটা আরেকটু উঁচু করে তুলে ধরে প্রস্রাবধারার দিক নির্ধারিত করে সেটি বিদিশার ভীত, বিস্মিত মুখের দিকে তাক করে। বিদিশার চোখে মুখে এসে লাগে গরম প্রস্রাব।
ওর ভাবনা চিন্তা সব লোপ পেতে লাগলো ধীরে ধীরে। পেচ্ছাবের চোটে নিশ্বাস আটকে আসছে ওর। দম নিতে গিয়ে মুখ খুলে ফেলল। মুখেও ঢুকে গেল, এই নোংরা লোকটার মুত্রজল।
বিদিশা খাবি খেতে লাগলো। জিভে এসে লাগলো কড়া এবং তীক্ষ্ণ একটা কর্কশ স্বাদ, যেন জলে গেল তার অধর ও জিহ্বা।মুখ বন্ধ করতে গেল চটপট, আর অমনি নিশ্বাস আটকে যেতেই ঢোঁক গিলে নিতে হল, সাথে করে কিছুটা প্রস্রাব। বিদিশার সমস্ত চৈতন্য অবলুপ্ত হতে আরম্ভ করলো, ওর আর নিজেকে সামলাবার ক্ষমতা রইল না।
অবশেষে যখন বোঁচকে নামক ছেলেটির এই জঘন্ন উন্মত্ত খেলা থামল ততক্ষনে বিদিশার প্রায় সর্বাঙ্গ পেচ্ছাবে শিক্ত হয়ে গিয়েছে। কাঁচা পেচ্ছাবের গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসছে, গা গুলিয়ে উঠছে। সারা গায়ে একটা জানোয়ারের পেচ্ছাব মেখে দাঁড়িয়ে আছে বিদিশা। ঘর ভর্তি কিছু বিকৃত রুচির লোভী অশিক্ষিত ছেলের সামনে।
এদিকে মাসিকের ধারা নির্গত হচ্ছে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আপন গতিতে। প্যাড সরে গিয়েছে। থাই বেয়ে গরাচ্ছে সেই রক্তের সরু রেখা। স্কার্ট কুর্তি সমস্ত পেচ্ছাবে সপ সপ করছে। নিজেকে নিজের কাছে এত নোংরা মনে হচ্ছে যে নিজের সব অস্তিত্ব ভুলে যেতে বসেছে বিদিশা। আর অন্যদিকে হাসি যেন থামছেই না বোঁচকে আর ওর দলবলের।
“জামা কাপড়গুলো এবারে খুলে ফেল।” শান্ত কণ্ঠে বলে ওঠে নির্বিকার দত্তদা।
রতন, হিরো ওরা এবার একটু অবাকই হল, কারণ বিদিশা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে দুহাত দিয়ে ধরে ওর স্কার্টটা একটু একটু করে নামিয়ে দিতে লাগলো। ভিজে হলুদ কাপড়টা নামতে লাগলো ওর লম্বা ছিপছিপে দুটো পা উন্মুক্ত করে দিতে দিতে।
রক্তের হালকা গোলাপি রেখাও চোখে পড়ে, ওর গমরঙা বাঁ পায়ের ওপর দিয়ে বেয়ে চলেছে। কুর্তি একটু লম্বা বলে ওর কোমরের তলার কিছুটা ঢেকে আছে এখনো। স্কার্ট ঘের দিয়ে পড়ে থাকে পায়ের কাছে। সাদা পরিস্কার দুটি পা, হালকা গোলাপি রঙের আভা সুন্দর করে কাটা নখে।
ভিজে নোংরা স্কার্টটা গা থেকে নামিয়ে যেন একটু ভালোই লাগছে বিদিশার। ফ্যানের হাওয়া এসে লাগছে পায়ের নগ্নতায়, লজ্জা অপমান আর কিছু তেমন নতুন করে টের পাচ্ছে না ও। শুভ্রই এদের এই রকম করতে বলেছে! কথাগুলো ঘুরে চলেছে মাথায়। মাথা যে তেমন একটা কাজ করছে তা নয়, শুধু বোঁ বোঁ করছে কেমন যেন… রিন রিন করছে সমস্ত শরীর।
“জামা খোল না, দেখি ভালো করে, নাকি বোঁচকের মুতমাখা জামা গায়ে দিয়ে থাকতে ভালো লাগছে খুব?”
রতন হাসছে।
“সত্যি, পেচ্ছাবটা আবার যে কেন করতে গেলে বোঁচন!”, দত্তদা আস্তে আস্তে উঠছে চেয়ার থেকে, ফোনটা পাশের টেবিলে রেখে দিল সে।
বিদিশা চোখে ভালো দেখতে পাচ্ছে না। দৃষ্টি কেমন ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছে তার। হলুদ আলো ভরা ঘরটা, সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে যেন। দত্তদা সিগারেট ধরিয়েছে।
“জামা খোলো, ন্যাংটো না হলে নাচ হবে না।” আবার দত্তদার ধীর স্থির শান্ত গলা হুকুম করলো বিদিশাকে। দেশলাই কাঠিটা হাত দিয়ে নাড়িয়ে নিভিয়ে দিয়ে এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিল সে।
বিদিশা বাধ্য মেয়ের মতন দুটো হাত দুদিকে নিয়ে গিয়ে কুর্তি তুলে নিতে লাগলো গায়ের থেকে। সপসপে জামা আটকে আটকে যেতে থাকল গায়ে। মুখের ওপর দিয়ে যখন সে টেনে খুলছে কুর্তি তখন কি জঘন্ন অনুভূতি হল তার। এই নোংরা ছেলেটা যে সত্যি সত্যি পেচ্ছাব করেছে তার গায়ে সেটা আরেকবার উপলব্ধি করলো বিদিশা।
এমন সময় এক কাণ্ড হল।
“ধর ধর”, বলে চেঁচিয়ে উঠল হিরো।
বোঁচন ছুটে এসে পেছন থেকে অর্ধেক খোলা পেচ্ছাব মাখা কুর্তিটা বিদিশার মুখের ওপরেই চেপে ধরল ওর হাত সমেত। ওর হাত তখনও কুর্তির হাতার মধ্যেই রয়েছে, পুরোপুরি বেরও করে নিতে পারেনি বেচারি। মুখের ওপর উল্টো হয়ে থাকা কুর্তি, খুলছিল বিদিশা, কিন্তু এই অবস্থায় পেছন থেকে বাঁধা দিল বোঁচন।
সে ওইভাবেই চেপে ধরল ভিজে কাপড়টা বিদিশার নাকে মুখে। হাত দুটোও ওই পোজে আটকে রইল ওইভাবে। কুর্তির সঙ্গে ভিজে গিয়ে উঠে এসেছে তলার শেমিজও। ফলে লাল ব্রা দেখা যাচ্ছে। ব্রায়ের ওপর দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে সুন্দর নিটোল গড়নের দুটো অর্ধগোলক। আধেক আধেক চাঁদ যেন দুখানি। সরু বিভাজন স্পষ্ট।
অল্প ভিজে গিয়েছে বুক, পেট। থর থর করে কাঁপছে বিদিশার সমস্ত প্রায় নগ্ন শরীর আর তার সাথে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার মেদহীন সুন্দর পেট। আর পেটের মধ্যস্থলে স্থিত ছোট্ট নাভিটি, সেটিও উঠছে নামছে একই ছন্দে। লাল রঙের প্যান্টি ভিজে গিয়েছে রক্তে, প্যাড সরে গিয়ে একদিকে চলে এসেছে।