13-10-2022, 09:15 PM
(This post was last modified: 15-10-2022, 11:26 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব-১
হাটু গেঁড়ে বসা আমি বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাব্যের খেলনা গুলো নাড়াচাড়া করছি। দূর থেকে ওর পায়ের নূপুরের শব্দটা আমার কানে বাজছে, ধীরে ধীরে শব্দটা আরও নিকটে আসছে আর তীব্র হয়ে উঠছে নূপুরের নিক্কণ ধ্বনি। আমার কাছে এসে শব্দটা স্তিমিত হয়ে যেতেই আমি মুখ তুলে উপরের দিকে তাকাতেই ওর চোখের আগুনে ভস্মীভূত হবার উপক্রম পায়। চোখ মুখ থেকে ছিটকে পড়া স্ফুলিঙ্গের অদৃশ্য তাপ টা আমি খুব করেই অনুভব করছি, হাতের খেলনা গুলো নিচে রেখে দু পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই সপাটে আমার গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। কোন কিছু ভাবার অবকাশ না দিয়েই বেশ জোরেই দেয়া চড় টা আমাকে খানিকের জন্য নির্বাক করে দিয়েছে, তবে ওর নরম হাতেও থাপ্পড়টা খুব জোরেই লেগেছে হয়তো গালে ওর আঙুলের ছাপ টাও বসে গেছে এতোক্ষণে। খুব দ্রুত লম্বা লম্বা শ্বাস ওর এই চড়ের জবাবে ওকে সরাসরি বলার মতো কোন বাক্যালাপ আমার কাছে তৈরী নেই, ঘোলাটে পরিস্থিতিটা কোন ভাবে কাটিয়ে দেবার জন্য আমি চোরের মত পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে মাকে ফোন করছি
হ্যালো মা, তোমার প্যাঁড়াপ্যাড়িতেই কিন্তু আমি ওর সাথে দেখা করতে এসেছি। ও কিন্তু আমাকে অপমান করছে গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে। এটার বিচার করতে হবে কিন্তু....
(এক ঝটকায় আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে)
হ্যালো মামনি, তোমার ছেলের এতো মান অপমান বোধ কবে থেকে হলো? আমার তো জানা ছিল না, ওকে বলে দাও ইচ্ছে হলে ঘরে আসতে না হলে বাইরে থেকেই বিদায় নিক। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে নেই
(আমার হাতে মোবাইলটা ঠুসে দিয়ে রাগে ফুস ফুস করতে করতে ভেতরে দিকে চলে গেল)
(মোবাইলটা কানের কাছে নিতেই)
তুই নিশ্চয়ই কিছু করেছিস নইলে সকাল সকাল মেয়েটা এতো রাগ দেখাবে কেন? তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। যা করেছিস সেটার জন্য মাফ চেয়ে নে গিয়ে তবেই ওর মাথাটা একটু ঠান্ডা হবে। আর পারি না তোকে নিয়ে এতো করে বলে দিলাম সেই তুই..
বাহ! তুমি তো শুধু আমার দোষটাই দেখো। সত্যি করে বলতো
আমি কি তোমার নিজের ছেলে নাকি রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলে হুম! আমার থেকে ঐ শাঁকচুন্নি টা তোমার বেশি আদরের। যা কিছুই হোক না কেন তুমি শুধু আমার দোষ দেখো আর কি করার যাই ওনার মান ভাঙাই, আমার তো এটাই কাজ।
ফোনটা কেটে দিয়ে নিজেই মনে মনে মিচকে শয়তানের মত হাসছি আমি৷ ও যে কেন এতটা রেগে আছে আর রিয়্যাক্ট করেছে সেটা আমার ভালো করেই জানা, এমনিই আগে থেকে আমার উপর চটে ছিল একটু আগে সেটা তে আমি একটু ঘি ঢেলে দিয়েছিলাম। ব্যাস তাতেই যা হবার তাই হলো, ও ছাড়া অন্য কেউ হলে আমি হয়তো হাতটাই ভেঙে দিতাম কিন্তু আমার মা ছাড়া আর কারও যদি আমার গায়ে হাত তোলার অলিখিত অধিকার থাকে তবে সেটা কথা'র আছে আর কারও না। এতক্ষণ যার ব্যাপারে বলছিলাম সে হলো কথা আমার বাল্যকালের বন্ধু না শুধু বন্ধু নয় এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু আমার সব সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না ভালো খারাপ সব সময়ের সঙ্গী, হয়তো আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ ৩ বছর পর ওর সাথে সরাসরি দেখা করতে এসেছি, আগেও আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন জানি সাহস করে উঠতে পারিনি এবার মা জোর করেই আমাকে পাঠালো মায়ের কথা আমি ফেলতে পারি না। রাতের বাসে করে রওনা দিয়েছিলাম এখানের উদ্দেশ্যে কথাদের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সকাল ১০টা বেজে গিয়েছিল। বাসার গেট খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি কাব্য বারান্দায় খেলা করছে, বিদেশী দের মত ধবধবে ফর্সা মিষ্টি একটা ছেলে মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল মায়াবী চোখ জোড়া ঠিক মায়ের মতই হয়েছে। ও কাব্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, কাব্য কথার ছেলে এবার দু বছরে পা দিলো। আমার আর কথার নামের আদ্যক্ষর এক আর সেটার সাথে মিলিয়েই ছেলের নাম রেখেছে। আমি এগিয়ে যেতেই আমাকে দেখে কাব্য একটু এগিয়ে আসে, মোবাইলে হয়তো আমাকে দেখেছে তবে ততোটাও চিনতে পারছে না। পকেট থেকে ওর জন্য আনা চকলেট টা বের করে হাতে দিয়ে বললাম মা কে গিয়ে বলো পাপা এসেছে। সেটা শুনেই কাব্য চকলেট হাতে গুটি গুটি পায়ে দৌড়াতে শুরু করলো আর সুর করে বলতে লাগলো পাপা এসেছে পাপা এসেছে...
এটা শুনেই কথা বুঝতে পেরেছে যে আমি এসেছি কারণ মা কে যতই বারণ করি না কেন আমি ১০০% নিশ্চিত মা ওকে ফোন করে সব বলে দিয়েছে আগে ভাগেই, আমার কোন ব্যাপারে যে পর্যন্ত কথাকে না জানাবে ততোক্ষণ পর্যন্ত মনে হয় পেটের ভাত হজম হয় না। আর আমি জানি কাব্য ওর বাবা কে বাবা বলেই ডাকে তাই ইচ্ছে করেই বলেছিলাম পাপা এসেছে বলতে। আর তাতেই আগে থেকে জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি ঢালার কাজ হয়ে গেছে আর যেটা আউটপুট হিসাবে আজ অনেক বছর পর আমার গালে ওর কোমল হাতের স্পর্শ পেলাম তবে একটু কড়া ভাবেই যার কারনে চড়ের জায়গাটা একটু হলেও জ্বালা করছে। আমি সেটাতেই হাত বুলাচ্ছি ওখানেই দাড়িয়ে।
(কাব্য ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে আমার প্যান্ট টা খামচে ধরে)
আঙ্কেল ও আঙ্কেল মা তোমাকে পিট্টি দিলো কেন? তুমি কি দুষ্টুমি করেছো?
(মুচকি হাসতে হাসতে কাব্য কে কোলে তুলে নিলাম)
হুম আমি তো তোমার মত খুব দুষ্টু তাই একটু দুষ্টুমি করেছি, তবে তোমার মা আমাকে খুব ভালো বাসে তো তাই শাসন ও একটু বেশিই করে।
মা তো আমাকেও পিট্টি দেয় আবার আদরও করে। তোমাকে আদর করলো না কেন?
(ছোট্ট কাব্য মিটিমিটি হাসতে থাকে)
(ভেতরের ঘর থেকে কথার উঁচু গলা শুনা যাচ্ছে)
এখনো বাইরে দাড়িয়ে আছিস যে, তোকে কি এখন হাত পায়ে ধরে ঘরে আসতে বলতে হবে নাকি রে।
চলো চলো আমরা ভেতরে যাই নইলো তোমার মা আবার পিট্টি দেবে।
(কাব্য কে কোলে নিয়েই আমি ভেতরের ঘরের দিকে যেতে থাকি, বসার ঘরের এক পাশে কথা দাঁড়িয়ে আছে। শাড়িতে ওকে পুরো দেবীর মতো দেখতে লাগছে এর আগেও কতবার ওকে শাড়িতে দেখেছি তবে আজ একটু অন্যরকম লাগছে গিন্নিপনা ভাবটা ওর উপর যে বেশ জেঁকে বসেছে সেটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে কথার চোখে মুখে)
আঙ্কেলের কোল থেকে নামো এখন, সারারাত জার্নি করে এসেছে আগে ফ্রেশ হয়ে নিক তারপর তুমি আর আঙ্কেল একসাথে খেতে বসবে।
(কথা এগিয়ে এসে আমার কাছ থেকে কাব্য কে ওর কাছে নিয়ে যায়, মূহুর্তের জন্য ওর হাতের স্পর্শ পেতেই আমার শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। ওর চোখের দিকে তাকাতে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে কিন্তু ঐ চোখে তো আগে আরও কতবার তাকিয়ে কত শত বাক্যালাপ ব্যয় করেছি তখন তো এমন মনে হয় নি)
আমার সাথে আয় তোর ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি, আর কল তলায় সবকিছু রেখে এসেছি বালতিতে জল তোলা আছে স্নান করে নিস, তোর তো আবার কলে স্নান না করলে হয় না। আর শোন ভিজে জামা কাপড় ওখানে রেখে আসিস পরে আমি ধুয়ে শুকাতে দেব।
(আমি তন্ময় হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, সত্যিই ও আমার প্রতিটা শ্বাসের খবর রাখে। এতো বছর ধরে আমরা কাছাকাছি নেই তবুও আমাকে আমার থেকে বেশি চেনে বেশি জানে। আমার অভ্যাস আমার দোষ আমার গুন আমার চলাফেরা সবকিছুই ওর নখদর্পনে। এতো বছর পরেও সেই আগের মতই আমাকে শাসনে রাখছে)
কিরে কি হলো
(হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিলো কথা আমাকে, ব্যাপারটা ঘুরাতে আমি জিজ্ঞেস করলাম)
কিরে কাব্যের বাবাকে দেখছি না কেন?
বাজারে গিয়েছে, তুই আসছিস শুনে তরিতরকারি মাছ মাংস কিনতে গিয়েছে। এখনি এসে পড়বে, যা তুই যা স্নান টা করে নে।
(আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে ওর নরম হাত টা গালে ছুঁইয়ে)
খুব জোরে লেগেছে কি?? তুই মাথা টা ওমন করে গরম দিস না তাই। কেন যে এমন করিস তুই, কখনো আমাকে বুঝারে চেষ্টা করিস না আগেও করিস নি আর এখন তো....
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?
কি?
সত্যি করে বলতো
"কতটা দূরে চলে গেলে আবার ফিরে আসা যায়"
গল্পটা আজকের এই এখানকার ঘটনা থেকেও শুরু হতে পারতো কিন্তু বিধাতা কার জন্য কি ঠিক করে রেখেছেন সেটা উনি ছাড়া আর কারও কি জানা আছে? উনার ইচ্ছে অনুসারেই এই গল্পের শুরুটাও অনেক আগে আজ থেকে অনেক আগের। তবে এতো আগের সবকথা তো আর মনে নেই তাই মাঝামাঝি একটা সময় থেকেই গল্পের যাত্রা শুরু করছি।
মাত্রই মা আমার বিকেলের চা টা টেবিলে দিয়ে গেল আমি যেখানে বসে গল্প লিখি জায়গাটা আমার লেখালেখির জন্য বেশ সুন্দর ছিমছাম শান্ত নিবিড় পরিবেশ। দোতলায় ছাদের সিড়িঘরের পাশে এক কোনে বিশাল কড়ই গাছের ছায়ায় আমার চেয়ার টেবিল রাখা আছে সেটাই আমার বর্তমান ঠিকানা যতক্ষণ গল্প লিখি ততক্ষণ আমাকে সবাই এখানেই পাবে। কড়ই গাছটার দুপাশে আবার আম গাছ কাঁঠাল গাছও আছে আম গাছটা বেশ পুরনো জন্মের পর থেকেই দেখছি আর কাঁঠাল গাছটা এখনো বাড়ছে বাড়তে বাড়তে ছাঁদের রেলিং ছুয়েছে আর একটু দূরে আরেকটা পুরনো কদম ফুলের গাছ। আম গাছের সামনে দক্ষিণে শিউলি ফুলের গাছ থেকে যখন মনোমুগ্ধকর ঘ্রান চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে তখন মনে হয় আমি মর্ত্যের স্বর্গে আছি। ছাদেও নানা জাতের ফুল ফলের বাগান করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। এই গাছ গুলোতে গত কয়েক বছরে কয়েক প্রজাতির শ খানেক পাখির বাসা হয়ে গিয়েছে প্রতিদিন সকালে ওদের জন্য খাবার ছিটিয়ে দেই আমি খোলা ছাদের বুকে, খাবার খাওয়ার জন্য গাছ থেকে নেমে আসার সময় এগুলোর কিচিরমিচির শব্দ আমাকে মাঝে মাঝে অন্য দুনিয়ায় নিয়ে চলে যায় আমি হারিয়ে যাই নিজের এক জগতে লেখালেখির সময় ওরাই আমার সহকর্মী ওদের সাথেই গল্প নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের বাসার পেছনেই ছোট্ট একটা নদী বয়ে গেছে আগে যদিও প্রমত্তা নদী ছিল কিন্তু এখন ভরাট হতে হতে খালের মত হয়ে গেছে নদীর ওপারেই যতদূর চোখের দৃষ্টিসীমা ততটুকুই সবুজ ফসলের ক্ষেত আরও দূরে বিশাল বিশাল গাছের আড়ালে জনবসতির চিহ্ন। আর সামনের দিকে খোলা বিস্তৃত পুবের আকাশ ঐদিকে এখনো তেমন দালান কোঠা উঠেনি বলে আকাশটা পুরোপুরি দেখা যায় এখান থেকে, বিশাল দিগন্তের ক্যানভাসে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টির হরেক ছবির দেখা মিলে। অনেক দূরে কতগুলি রাইস মিল আর ইট ভাটার চুল্লী মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে সগৌরবে যার নিকশ কালো ধোঁয়া সাদা মেঘের ভেলা গুলো প্রায়শই আড়াল করে দেয়। এখানে বসেই আমি আজ আমার জবানবন্দি লেখা শুরু করছি।
সালটা ২০০৬...
আমি সবে মাধ্যমিকের ছষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি, আমি মানে আমরা সবাই একই কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমাদের একটা গ্রুপ আছে ৭ জনের আমরা সেই কে.জি থেকে একসাথে একই কলেজে পড়া শুরু করেছিলাম তারপর প্রাইমারি কলেজ আর এখন এসে হাই কলেজ আমাদের গ্রুপটা এখনো অক্ষত হয়েই আছে। আমাদের গ্রুপের ৭ জনের মাঝে ৩ জন মেয়ে আর আমি সহ বাকিরা ছেলে তবে হাই কলেজে আসার পর ছেলে মেয়েদের পৃথক সেকশন মিলিয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্যে এসে আমারদের গ্রুপে আরও কয়েকজন ছেলে মেয়ের জায়গা হয়েছে তবে আমাদের আগের ৭ জনের বন্ডিং বাকিদের সাথে এখনো ঠিক সেরকম করে জমে উঠে নি।
আমি মোটামুটি একটা যৌথ ফ্যামিলিতে পালিত হচ্ছি, আর তাই একটু বড় হবার সাথে সাথে পরিবারের দায়িত্ব একটু হলেও কাধে এসে পড়ছে। ১১ বছরের একটা ছেলের জন্য পরিবারের দায়িত্ব বলতে ফ্যামিলির কাজে টুকটাক সাহায্য করা ছাড়া তেমন বেশি কিছু হবার কথা না, আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে যেহেতু এখনো মাথার উপর ছাদ হয়ে বাবা নামক বটবৃক্ষ রয়ে গেছে তাই এতো কিসের চিন্তা। তবে সকালে কলেজে যাবার আগে কিংবা কলেজ থেকে ফিরে বাবা কাকাদের দোকানের কাজে হাত লাগানো টা এখন আমার নৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। জীবনের নতুন কিছু আসলে সেটার নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতা নতুন সব অনুভূতি শরীরের নতুন করে রোমাঞ্চ জাগায় আর আমার ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতয় ঘটে নি। আমাদের দোকানটা সেসময়ে বাজারে অন্যতম বড় দোকান ছিল হালের সুপার সপের মত মোটামুটি সবই পাওয়া যেত একই দোকানে। মুদি দোকানের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে কসমেটিকস বিভিন্ন সবজির বীজ আর্য়ুবেদিক ঔষধ থেকে শুরু করে আরও ক্রোকারিজ ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিসপত্র বাচ্চাদের খেলনা বাহারি রকমের পুতুল সহ আরও কত কি।
এই দোকানে বসাকে কেন্দ্র করেই আমার জীবনের অনেক কিছু বদলে যেতে শুরু করে অনেক প্রথমের আগমন ঘটতে থাকে এক এক করে। তখন সেই বয়সে আমার কাছে সবকিছুই ভালোই মনে হতো যা হচ্ছে ভাল কিছুই হচ্ছে ধরে নিয়ে কখনো প্রকাশ্যে কখনো বা একান্তই নিজে নিজেই উল্লাসিত হয়ে পড়তাম, আনন্দের অতিসাজ্যে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটিয়ে ফেলতাম কি ভুল কি ঠিক এসব ভাবার কোন প্রয়োজনই মনে করতাম না। তবে আজ এতো বছর পর জীবনের ২৬ টা বসন্ত কাটিয়ে দিয়ে ঠিক ভুলের হিসেব কষতে বসেছি। কত অংক মেলাবার বাকি আছে তা আগে কখনো ঠাহর করতে না পারলেও এখন সে সবের খতিয়ান দেখে কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ভোরের শিশিরের মতই রোদের আলোতে চিক চিক করছে। যদিও ছাদে গাছের ছায়া তলের হিমেল বাতাসে সেই ঘর্ম বিন্দু গুলোর স্থায়িত্ব কাল বড্ডই কম এ যেন এত আয়োজনে যার জন্ম ক্ষণিকেই সেটার এক অপমৃত্যু। আমার ঠোঁটের কোনে ছোট্ট হাসির প্রারম্ভিক সূচনার মূহুর্তটা ফুটে উঠে, আজ যে আশায় এখানে বসেছি সেটা থেকে পিছু হটার আর কোন সুযোগ আমার কাছে নেই। এখনো যদি আমি সেসবের হিসেব না মিলাতে পারি তবে পরকাল তো বহুদূর এই ইহজগতের সেই মানুষটার সামনে আর দাঁড়াতে পারবো না কখনো এমনিতেই তো আমি ওর কাছ থেকে বহু বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি আর পারছি না এখন নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগছে এবার তো ঘরে ফিরতেই হবে।
কলেজ থেকে ফিরে এসেই একটু টিভির সামনে বসেছিলাম তখন টিভিতে চ্যানেল বলতে সরকারি একটা চ্যানেল ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের এই এলাকাতে এখনো বিদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলো এসে পোঁছাতে পারে নি। সেই চ্যানেল টাতে দুপুরে কার্টুন দেখাতো সেটাই তখন আমাদের কাছে অনেক কিছু, কিন্তু মা সেই তখন থেকে স্নানে যাবার জন্য বকাবকি করছে। শেষমেশ টিভি বন্ধ করে কল পাড়ের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি মা সাবান ছোলা হাতে দাড়িয়ে আছে। এটা মায়ের প্রতিদিনকার রুটিন নিজ হাতে আমাকে স্নান করিয়ে দিবে নাহলে নাকি আমি ঠিকমত সাবান দেই না গায়ে। স্নান শেষে আমার খাওয়া হয়ে যাবার পর দোকানের দিকে বেড়িয়ে গেলাম এক এক করে বাবা কাকাদের দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য। একদম রাস্তা লাগোয়া আমাদের দোকানটা, দোকান থেকেই রাস্তা দিয়ে কে আসা যাওয়া করছে সবটাই দেখা যায়। আমি কসমেটিক আর পুতুল খেলনা গুলো যেদিকে সেদিকের কাউন্টারে বসতেই বেশি ভালো বাসি, আমি দোকানে আসতেই কাকা বাসার দিকে চলে গেল। আমি কাউন্টারে বসে এটা ওটা ঘাটাঘাটি করছি হঠাৎ মনে হলো দোকানের বাইরে দাড়িয়ে কেউ হয়তো এদিকেই তাকিয়ে আছে। আমি তৎক্ষনাৎ চোখ তুলে তাকাতেই বাইরে দাড়ানো মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল, না মেয়েটা একা নয় সাথে আরও কয়েকটা মেয়ে আছে আর পোশাকের ড্রেস কোড দেখেই বুঝতে পারছি ওরা সবাই গার্লস কলেজের মেয়ে। ওরা সবাই কিছু একটা নিয়ে নিজেদের মাঝে কথা বলছে কিন্তু এর মাঝে সেই মেয়েটা দোকানের ভেতরের দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর হাসি মুখে বাকিদের সাথে কথা বলছে। আমার কি হয়েছে আমি জানি না কেন কি কারণে আমার দৃষ্টি ঐ মেয়েটার দিক থেকে সরাতে পারছি না৷ দুপাশে বেনী করা চুল গুলো দু হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে ওর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে। আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর দিকেই তাকিয়ে আছি, এমন নয় যে আমি এই প্রথম কোন মেয়েকে দেখেছি কিন্তু ওর মাঝে কি এমন যে দেখলাম সেটা আজও বলতে পারি না। আজও চোখ বন্ধ করলে সেই হাসি মুখ মায়াবী চোখ জোড়া আর অপরূপ অভিব্যক্তি মনের পর্দায় ভেসে উঠে। আমার কি হয়ে গিয়েছে সেটা জানতে না পারলেও তবুও এতোটুকু জানি ও যতক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়েছিল আমিও ততোটা সময় তন্ময় হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম শতচেষ্টাতেও দুচোখের নজর অচেনা সেই মেয়েটার দিক থেকে ফেরাতে পারছিলাম না আরও তো কয়েকটা মেয়ে একসাথে ছিল কিন্তু তারপরও আমি ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি ওরা সবাই রাস্তা ধরে সামনের দিকে চলতে লাগলো মেয়েটা শেষবারের মত দোকানের ভেতরের দিকে তাকিয়ে ওদের সাথে হাটতে শুরু করলো আর আমিও হ্যাংলার মতো দোকান থেকে যতটুকু রাস্তা দৃষ্টিসীমায় রাখা যায় ততক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।