13-10-2022, 01:24 AM
আরেকটি প্রেমের গল্প (পঞ্চম পর্ব)
দাঁতে দাঁত চেপে সে পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দেখতে থাকে এই অসামাজিক অবৈধ যৌনসঙ্গম। বিদিশার গলার স্বরটা তার কোন নরকের আর্তনাদ বলে মনে হচ্ছে তখন। এত রাগ হচ্ছে তার বিদিশার ওপর, এত প্রতিহিংসা ছাপিয়ে যাচ্ছে মন, যে পিতার সঙ্গমের প্রতাপ বেড়ে গেলে সে যেন মনে মনে খুশিই হলো।
তার তখন মন চাইছে বিদিশা আরো ব্যথা পাক। যোনি তার ফেটে গিয়ে চৌচির হয়ে যাক পিতার জান্তব অবগাহনের প্রচণ্ড ঘাতে প্রতিঘাতে। এত যদি মেয়ের শখ ছিল তো তাকে বললেই তো পারত সে! শুভ্র আর ভাবতে পারেনা, বিদিশাকে তখন তার একটা ভাদ্র মাসের পালে ওঠা কুকুরি ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হয়না, সে ভাবে শুধু সে যদি পারত তবে এই মুহূর্তেই কামপিপাসু বিদিশার শরীরের সমস্ত চুলকুনি ঘুচিয়ে দিত।
শুভ্রর তখন হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। এমন সময় পিতার অশ্রাব্য ভাষা কানে এসে লাগে তার।
“তোমার মত মেয়ে কি করে এত দিন আচোদা আছ গো?”… আরো কি যেন, কিন্তু কিছুটা মিলিয়ে গেল, ফ্যানের শব্দে।
“কাকু… উহহ… “ বিদিশার কথার কিয়দংশ ভেসে এলো।
শুভ্রর মাথায় তখন উন্মাদনার ঘুর্ণিঝড় বইছে। একদিকে পিতার দানবিক স্বেচ্ছাচার, আরেকদিকে বিশ্বাসঘাতিকা প্রেমিকার অবৈধ শারীরিক সংশ্রব, আর সবকিছু ছাপিয়ে নিজের মনের ভেতর ভেঙেচুরে দেওয়া এক অদ্ভুত ব্যর্থতা। তার ইচ্ছা করছে রান্নাঘর থেকে হাত দাটা নিয়ে এসে দুটোকেই শেষ করে দেয় এক এক কোপে। …
যৌন সঙ্গমের এত জঘন্য রূপ যেন সে আর কোথাও কখনো দেখবে না। কি অশ্লীল আর নারকীয় সে দৃশ্য।
বিদিশার ফোলা ফোলা দুধে দলাই মালাই করছে কে না তার নিজের বাবা, আর তার ফুলের মত শরীরের মধ্যে নিজের ওই নোংরা সাত ইঞ্চির কালো বিশ্রী মাংসের টুকরোটা গাদিয়ে গাদিয়ে দিচ্ছে। ছিঃ! নানান দিক থেকে নানা অনুভূতি এসে যেন তার মাথাটা ঘুরিয়ে দিতে লাগলো, একবার মনে হলো বিদিশার আর কি দোষ তার বাবাই তো তাকে হিংস্র পশুর মত ;., করছেন।
পরক্ষনেই বিদিশার ঘরঘরে গলার স্বরে মরণমুখি কামের ছটফটানি শুনে মনে হচ্ছে বেশ্যা এই মেয়েই সব নষ্টের গোড়া। তার মধ্যে যেন শুভ্র সেইদিনকার মহুলকে দেখতে পাচ্ছে। মহুল আর বিদিশার চেহারা দুটি যেন তার বাবার নগ্ন নিষ্পেষণকারী শরীরের তলায় মিলেমিশে যাচ্ছে। তার উলঙ্গ বাবাকে শুভ্রর এখন একটা কিলবিল করতে থাকা শুঁয়োপোকা মনে হয়, আর বিদিশাকে একটা সুন্দরি ডাইনি।
ঘোলা হতে থাকা দৃষ্টিতে সবকিছু যেন একটা কাদামাখা জলছবির মত গুলিয়ে যেতে থাকে। যন্ত্রণায় ফেটে যাবে যেন মস্তিষ্কের শিরাগুলো। হেরে গিয়েছে সে, বিশ্বাসে, ভালবাসায়, প্রেমিকের পদে… অনুভূতি আর চেতনার রঙ বদলে যেতে থাকে রোদ পোহানো গিরগিটির মত, ব্যর্থতা থেকে আসে হিংসা, হিংসার থেকে ঘৃণা আর ঘৃণার থেকে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ… মাথার মধ্যে ঝিন ঝিন করতে থাকে সেই চূড়ান্ত প্রতিহিংসার বীজমন্ত্র।
“দাদাবাবু”, আসতে করে কে ডাক দেয় কানের পাশে।
আলতো একটা হাত এসে লাগে কনুইয়ের ওপর।
মাথায় বাজ পরার মত চমকে ওঠে শুভ্র। হতচকিত দৃষ্টি ফেরায় পাশে।
“আর না, দাদাবাবু, চলো…”, হারান কাতর কণ্ঠে যথাসম্ভব অনুচ্চস্বরে আর্জি রাখে মনিবপুত্রের কাছে। তার মনে ভয় ঘরের ভেতরে না তাদের কথোপকথন শোনা যায়…
শুভ্র যেন ঘুমের মধ্যে হেঁটে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখ একেবারে বিবর্ণ। হাত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। হারান বুঝতে পারে দাদাবাবু তার প্রকৃতস্থ নন। আস্তে আস্তে ধরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে তাকে…
অটো এসে থেমেছে আলিবাগের চৌমাথায়। ভাড়া মিটিয়ে, খুচরো পয়সা না গুণেই পকেটস্থ করে এগিয়ে যায় শুভ্র। মাথার চিন্তাগুলোকে শান্ত করতে হবে। একেকটা জটকে খুলতে হবে কষ্ট করে।
এভাবে উদভ্রান্ত হয়ে সে কাজ হাসিল করতে পারবে না। অন্তত মহুলের কাছে তো নয়ই।
যত সে এগিয়ে চলেছে মহুলের বাড়ির দিকে ততই যেন বুকের মধ্যে একটা চোরা রক্তের স্রোত ধিকিধিকি করে বয়ে যেতে থাকে। মহুলের প্রতি যে জমানো ঘৃণা আর বিকৃত যৌনতা সে পোষণ করে তার থেকে নিজেকে তো আর চাইলেই আড়াল করতে পারবে না সে.. তখন বেলা বারোটা মত হবে।
দরজা মহুল নিজেই খুলে দিল। সে একাই থাকে। পড়নে হলুদ একটা তাঁতের শাড়ি, পাতলা সুতির সাদা ব্লাউজ। চুল অবিন্যস্ত পড়ে ঘাড় বেয়ে বুকের ওপরে কিম্বা পিঠে, এমন ভাবে ভিজে রয়েছে যে স্পষ্ট বোঝা যায় সে সদ্য স্নান করেছে। মুখে একটা উজ্জ্বল ভাব, চোখ দুটি সায়রের মত কিন্তু শান্ত। মহুলের এত লম্বা নিকষ কালো চুল, আগে তো কখনো লক্ষ্য করেনি সে! অবাক লাগে শুভ্রর, আজ কেমন আলাদা লাগছে মহুলকে। তার সেই আগের মতই ভরাট শরীরি আবেদন যথাস্থানেই রয়েছে কিন্তু ওপর থেকে যেন মুড়ি দিয়ে রয়েছে সে একটা স্নিগ্ধতার শীতল চাদর। এভাবে কখনো কাছ থেকে দেখেনি সে মহুলকে। তাদের দূরত্ব এখন এক হাত মত হবে।
“তুমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে না ভেতরে আসবে?’
মহুলের কোথায় শুভ্র লজ্জা পেয়ে যায়, এতক্ষন হাঁ করে সে চেয়েছিল মহুলের মুখের দিকে।
চোখ নামিয়ে সে উদ্যোগী হয় ঘরে ঢুকতে।
“আমি শুনেছি সব, কাগজে দিয়েছে আজকে।”, ঘরের ভেতরে চলতে চলতেই বলে মহুল।
কোমরের কাছে শাড়ির ভাঁজ, কোমরের ঢেউ, চলার দুলুনি, সব দেখতে পায় শুভ্র। সে আসছে পেছন পেছন। সত্যিই এই নারীর মধ্যে কিছু আছে। এর চলন বলন চাহনি সবকিছুই যেন পুরুষকে আকর্ষণ করবার জন্যেই তৈরি হয়েছে।
শুভ্র দেখল ওরা বসার ঘরে এসে ঢুকেছে।
একটা ছোট্ট সোফা রাখা, সামনে একটা টেবিল, তার ওপরে একটা অ্যাশ-ট্রে। এধারে ওধারে আরো দুটো গোল চেয়ার। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো একটা টিভি টেবিল, তার ওপরে একটা মাঝারি সাইজের টিভি। একটা কোনে একটা ছোট্ট গোল টুলের ওপরে রয়েছে একটা সরু ছিপছিপে পেতলের ফুলদানি। তাতে রজনীগন্ধার স্টিক, পাশে ধুপ-কাঠি। ধুপ আর রজনীগন্ধার গন্ধে ঘর ভরে গিয়েছে। সামনে সদ্যস্নাতা মহুল। শুভ্র এরকম একটা পরিবেশ আসাই করেনি।
এর আগে সে কোনদিন এই বাড়িতে ঢোকেনি। মহুলকে ফলো করে করে একদিন এসেছিল কৌতূহলী হয়ে শুধু এইটুকু জানতে যে সে থাকে কোথায়। ভেতরে ঢোকার কোন প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু মনে মধ্যে মহুলের ডেরার যেই ছবিটা এঁকেছিল সে তার সাথে এই সত্যিকারের ছবিটির যেন কোন তুলনাই চলে না।
“বোসো”, সোফা দেখিয়ে দিয়ে বলল মহুল।
কলের পুতুলের মত বসে পড়ল শুভ্রও।
মুখ তুলে মাথা ঘুরিয়ে এবারে আরেকটু ভালো করে সে চারদিক নিরীক্ষণ করতেই চোখে পড়ল দেওয়ালে ঝোলানো বেশ কয়েকটা সুন্দর সন্দর পেণ্টিং। অভিনব সব পোজে এক রমণীই রয়েছেনে বেশিরভাগ ছবিতে। কিছু ছবি খুব স্পষ্ট কিছু ছবি হয়তো বা একটু অ্যাবস্ট্র্যাক্ট। বুঝতে অসুবিধে হয়না যে এগুলো সবই শান্তনুর ছবি। বাবার ছবির ধারা ছেলে চেনে। সেই স্টাইল, সেই রঙের বিন্যাস।
“কি দেখছ?”, জিজ্ঞেস করে মহুল, সে বসেছে একটা গোল চেয়ার টেনে শুভ্রর ঠিক মুখোমুখি নয় তবে সম্মুখেই একটু সরে।
“হুম্ম… এগুলো…”, ছবির দিকে আঙুল তুলে ইতস্তত করে শুভ্র।
“হ্যাঁ তোমার বাবার। ওই যে, হাসছেন তিনি”, হেসে উঠে নির্দেশ করে মহুল একটি কোনে।
রজনীগন্ধার স্টিকের আড়ালেই ছিল, প্রথমে চোখে পড়েনি শুভ্রর।
তার বাবার একটা ছবি, হাসিমুখে চেয়ে আছেন। কি অপার্থিব সেই হাসি, কি শিশুসুলভ সুন্দর।
“বাবার ছবি, মানে… তুম- আপনি…”, শুভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে তার বাবাকে, বেশ অবাক সে।
“আমাকে তুমি বলতে পারো তুমি শুভ্র, তোমার বাবা বলতেন বন্ধুত্তে্বর বয়েস হয়না।”, উঠে গেল মহুল, তার ভারী নিতম্বে দোল দিল তার চলার তালে, “ভালোবাসা, সৌন্দর্যের আরাধনা, সম্পর্কের গভীরতা কিম্বা তার আলাদা আলাদা স্তরগুলো খুব অদ্ভুত, এগুলো বোঝা খুব শক্ত কিন্তু খুব সহজেই এগুলো সবার হৃদয়েই ঢুকে যায়…”, হেসে ফিরে তাকায় রমণী, ভারী বুকের উপর আঁচল থাকতে চায় না তার।
ভিজে চুল থেকে জল পড়ে পড়ে, সাদা ব্লাউজ স্বচ্ছ করে দিয়েছে পিঠের দিকে, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সাদা অন্তর্বাসের রেখা।
“আমার নয় তোমার বাবার কথা সব… শান্তনুদার থেকেই তো শেখা জীবনবোধ।” ছবিটার পাশে এসে থামল মহুল।
চোখে অপার ভালবাসা। সে চেয়ে রয়েছে হাসিমুখটার দিকে, শান্তনু হাসছে। মহুলও হাসছে।
শুভ্র মিনিটখানেক চুপ করে বসে থাকে, হতবাকের মত। তার সমস্ত হিসেব যেন কেমন গুলিয়ে যেতে লাগে। এই মায়াবী মহিলার ছলনায় সে নিজেকে হারাবে না, মনে মনে নিজেকে শক্ত করতে চায় শুভ্র। সে উঠে যায় সোফার থেকে। মহুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে এখন।
বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে মনের জমাট বাঁধা ঘৃণার পুনর্মন্থন করতে চাইল সে। মনে করতে চাইল, বাবাকে আর মহুলকে… সেখানে, সেই দৃশ্যে সব ছাপিয়ে ফুটে উঠল মহুলের রূপ। স্নিগ্ধ, শান্ত, প্রেমে নিমজ্জিতা, সম্পূর্ণ বিবসনা… না সে তো নোংরা, কুৎসিত, খল দুশ্চরিত্রা। কিন্তু কই, অবশ হয়ে এল মনের টানটান উত্ত্বেজনা, শিথিল হয়ে পড়ল মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটি। দুটো কাঁধে অনুভব করলো মহুলের স্পর্শ।
দু হাত দিয়ে তার দিকে ঘোরালো সে শুভ্রকে। কপালে হাত রেখে যেন পরখ করলো তার মাথার ভেতরের উত্তাপ।
“খুব কষ্ট পেয়েছিস না রে? কিচ্ছু না বুঝে ছেলেমানুষের মতন?”, মহুলের এই হঠাৎ করে তুই সম্ভাষণ, এই আশ্রয়দায়িনীর মত পরশ, সবকিছু যেন শুভ্রর তিলে তিলে জমে ওঠা দুঃখ ছটফটানি, আর অবশেষে বিদিশা আর পিতাকে একসঙ্গে দেখে তার মনের চূড়ান্ত উন্মাদনা ও অন্তর্দ্বন্দ্বকে একটা শান্তির হদিস দেখাচ্ছিল।
“আমি আর পারছিনা।” মাথা নিচু, মুখ রাঙা হয়ে গিয়েছে শুভ্রর। ওর কাঁধে রাখা তখনও মহুলের দুই হাত। মসৃণ শ্যামবর্ণ, একটা একটা চুড়ি পরানো দুটি হাতে।
“তোকে কে বলেছে পারতে? ভালবাসার মানে বুঝিস তুই? যে ভালবাসতে চাইলি? ঘৃণা আর ভালবাসার মধ্যে কতটুকু পার্থক্য আছে তা জানিস তুই? যে ঘৃণা করতে চাইলি?” কথার মধ্যে একটা মিষ্টি সুর শুনতে পেল শুভ্র।
“আমি কিছু বুঝিনা, মহুল, তুমি শুধু আমায় এইটুকু বলো, কেন তোমরা আমার মাকে ঠকালে? কেন বাবা আমাকে ঠকাল? আর সে? সে কেন আমার সাথে এই চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করল? তাও আবার আমারই বাবার সাথে? তোমাতে আর ওতে কোন তফাত রইল না যে…” শুভ্র প্রলাপ বকার মত বলে যাচ্ছে, চোখে তার ছলছল করছে এতদিনের বাঁধ দিয়ে রাখা জল। এই যেন বাঁধ ভেঙে যাবে যেকোনো মুহূর্তে।
মহুল এবার শুভ্রর নিচু করে রাখা মাথাটা তার বিশাল দুই বুকের মধ্যে টেনে নিল আলতো করে। হাত রাখল তার মাথার ওপর।
“কেউ আমরা কাউকে ঠকাতে পারিনা রে, নিজেকে ছাড়া কাউকে ঠকানো এই পৃথিবীতে সম্ভব নয়”, শুভ্রর মাথায় ঠোঁট গুজে দেয় মহুল।
“আমি, তোর বাবা… আমাদের কাছে শরীরের ভালবাসা আর মনের ভালবাসা এই দুটো জিনিস যতটা এক, আবার ততটাই আলাদা… শরীর দিয়ে ভালবেসে নারী পুরুষকে পরিপূর্ণ করে, সেই পরিপূর্ণতার খোঁজে তোর বাবাও এসেছিলেন আমার কাছে, আমিও গিয়েছিলাম তার কাছে, আবার আজ তুই ও এসেছিস সেই একই সন্ধানে… পুরুষের এই বহুমুখী সন্ধানে রমণীর প্রয়োজন আছে নানান ভাবে, এই সংসারে তাই কেউ হয় শান্ত সুন্দর মাতৃমূর্তিধারি শ্যামলীদেবী আর কেউ হয় মৌবনের মহুল।”
“আমি জানিনা মহুল, আমি জানতে চাইনা, তুমি শুধু আজ আমার সব জ্বালা যন্ত্রণা ভুলিয়ে দাও, আমাকে একটু শান্তি দাও মহুল, তোমার কাছে আমি যখন এসেই গিয়েছে আমাকেও দাও সেই অমৃতের সন্ধান”, শুভ্র নাক ডুবিয়ে দেয় ব্লাউজের গহনপথে, ভিজে গায়ে ফুলের সুবাস। সেই দূর থেকে দেখা, বহু জল্পিত কল্পিত বিপুল বক্ষে অবশেষে শুভ্র রেখেছে তার ক্লান্ত মুখের ভার।
“সে কথা, সেই গলার স্বর, কেষ্ট ঠাকুর তুমি এলে যদি এ্যাদ্দিন পরে এলে কেন?” নিজেকে ধনুকের মত পেছনে হেলিয়ে দিয়েছে মহুল, বুকের ওপর শুভ্রর সন্ধানী মুখ ঘোরাফেরা করছে, আর মহুল তার সমস্ত অনুভূতি দিয়ে তাই উপভোগ করছে। শাড়ির আঁচল খসে গিয়েছে দুজনের মাঝখান থেকে, মাটিতে লুটোচ্ছে তা। সাদা ব্লাউজের সুতো টানটান…
বিশাল দুই পর্বতের মাঝে শুভ্র যেন দিশেহারা। ব্লাউজ ফেটে বেরিয়ে আসার মত সম্ভার উঁচিয়ে নিজেকে হেলিয়ে দিয়েছে মহুল পেছন দিকে। শান্তনু হাসছেন ছবির থেকে। যেন ছেলেকে দিয়ে গেলেন অমৃতসুধার সন্ধান।…
“শুধু, ফুলের গন্ধ শুঁকবি, না মধুও খাবি রে? পাগল মৌমাছি!”, মহুলের সাজানো দাঁতের পাটিতে খেলে যাচ্ছে ঝকঝকে একটা নির্মল আনন্দের হাসি।
একটা হাতে সস্নেহে সে তার থেকে অন্তত ছ সাত বছরের ছোট এই ছেলেটির মাথায় বিলি কাটছে। ওর বিরাট দুটো ব্লাউজ আবৃত গ্লোবের মত বুকের ওপর সেই মাথাটা যেন অশান্ত হয়ে খুঁজে চলেছে আশ্রয়। টান টান স্বেত ব্লাউজের হেমধার থেকে জেগে উঠেছে দুটি অর্ধগোলক, তারা জায়গার অভাবে পরস্পরের গায়ে ঠাসাঠাসি করে তৈরি করে দিয়েছে এক গভীর বিভাজিকা।
শ্যামলা ত্বকের ওপর এক গাঢ় অন্ধকার খাদ। শুভ্র দেখছে, মুখ ঘসছে, নাক ডুবিয়ে দিচ্ছে, যেন বিভোর হয়ে উঠেছে। সাদা ব্লাউজ প্রায় স্বচ্ছ, ভেতরে সাদা অন্তর্বাস যে ধরে রাখতে পাড়ছে না মহুলের বক্ষের বিপুল ঐশ্বর্য তা শততই প্রকট। উঁচু উঁচু দুটো নিটোল স্তনার্ধ দেখতে যেমন সুগঠিত, পরশে তেমনই নরম। এ যেন এক দুই বিপরিতের মিলন সৌন্দর্য! নিরাভরণ হয়ে জেগে আছে আধোখানি উন্মুক্ততা আর স্বচ্ছ ব্লাউজের ভেতরে ব্রায়ের মধ্যে বাধাপ্রাপ্ত আধোখানি গোপনতা…
গায়ের রঙ আর নিখুঁত সৌষ্ঠব মিলিয়ে তার যেন ঠিক কুমোরটুলির মূর্তির মত বুকের গড়ন। সদ্য স্নানের ফলে হালকা আর্দ্রতা রয়েছে ত্বকে, যেন সদ্য লেপা পলি মাটি… শুভ্র এবার ব্লাউজের হুকে আঙুল রাখল। এ যেন তার স্বপ্নের দেবী। অবাক মস্তিস্কে সে দেখল, যাকে সে যারপরনাই ঘৃণা করে এসেছে এতদিন, তাকেই তার পুজো করতে ইচ্ছে করছে, মনে হচ্ছে সেই যেন তার এতদিনের আরাধিতা অধরা।
মনে হচ্ছে তার কাছেই যেন তার সব অশান্তির সমাধান, সব ক্লেশের সমাপ্তি। মহুল চোখ বুজে ফেলেছিল। অনুভূতি তার অন্যতম প্রিয় জিনিস, সুখকে অনুভব না করলে আবার সুখ কিসে? তাই নিজেকে পেছনে হেলিয়ে দিয়ে সে তার দুয়ারে আসা এই নবাগত প্রেমসন্ধানি কে ছেড়ে দিয়েছিল তার শরীরের মায়াবিতান। এবার সে চোখ খুললো।
“হুক গুলো খুলে দেব, শুভ্র?”, নরম ভেজামাটিতে কুয়াশার আওয়াজের মত আলতো তার গলার স্বর।
শুভ্র উত্তর দিল না, শুধু দুই হাতে একটা একটা করে খুলতে আরম্ভ করল ব্লাউজের হুক।
নিঃশ্বাস যেন ঘন হয়ে আসছে, মুহূর্ত যেন কাটছে এক অন্যরকম ছন্দে। মায়াময় হয়ে উঠেছে সমস্ত কিছু। শুভ্রর চোখে কিশোরের বিস্ময়। আর বুকের ভেতর ভক্ত প্রেমিকের উদ্বেলিত হৃদয়।
সবকটা হুক খুলে দিতে ব্লাউজের দুটো দিক দুপাশে ঝুলে পড়ল। সাদা ব্রায়ে জলের ছাপ, ভিজে গায়ে যেন তাড়াহুড়ো করে পরা। এবারে বিশাল স্তনদ্বয়ের আর বিশেষ কিছুই আবৃত নেই, তবুও যেন কতটাই বাকি রয়ে গেছে অগোচরে! একটা কাপের ওপর দিয়ে আবার অল্প মুখ বেরিয়ে গিয়েছে একটা কালচে খয়েরি বৃন্তবলয়ের…
শুভ্রর যেন নেশা লেগে যাচ্ছে, হাঁটু কাঁপছে, পা অবশ হয়ে পড়ছে। মহুল এখন সোজা হয়ে দাঁড়ানো, কিছুটা বেঁকেছে কোমর। দুহাত দিয়ে সে শুভ্রর বুকের ওপর খেলা করছে, শুভ্র শুধু দেখছে, ব্রা দিয়ে প্রায় না ঢাকা মহুলের তরমুজের মতো নধর ভরাট দুটো বুক। শুভ্রর মনে হল এই বুঝি নারীত্বের পরিপূর্ণতা, এই বুঝি উর্বরতার প্রতিচ্ছবি।
“বাবা তোমার বুকের ছবি আঁকেনি কখনো?” একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে শুভ্র। তার প্যান্টের মধ্যে ধীরে ধীরে যেন কিরকম একটা বদ্ধ ভাব টের পাচ্ছে সে। শরীরে রক্তের সঞ্চালন বাড়ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে উপস্থ।
“হ্যাঁ এঁকেছেন তো! কতবার এঁকেছেন… কিন্তু তুই তোর মত করে আঁক আমায়… সেসব ছবি আর এসব ছবি হবে একেবারে আলাদা… প্রেমিকের চোখেই তো প্রেম নতুনত্ত পায়, নইলে আর প্রেম চিরনবীন কি করে থাকে?”, মহুলের চোখে চকচক করে উঠল কি যেন এক অদ্ভুত হাতছানি, শুভ্র সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবে না।
“আমি দেখব, ওদের…” বলে শুভ্র একটা হাত রাখে মহুলের ডান দিকের স্তনের ওপর। হাত পিছলে যাওয়ার উপক্রম এমনি মসৃণ ত্বক তার। আঙুল চলে গেল স্তনবিভাজনে।
শুভ্রও বাঁধা দিল না, বরঞ্চ আরেকটু প্রশারিত করে তার তর্জনীটি ঠেলে ঢুকিয়ে দিল সেই চাপা খাঁজের মধ্যে। আর অমনি তার আঙুলটিকে গিলে নিল দুপাশ থেকে ফুলে ফেপে ঠেসে থাকা মহুলের দুধের নরম উষ্ণতা। যেন গদির ফাঁকে আঙুল ভরে দিয়েছে সে। সেই ফাঁক বরাবর আঙুলটাকে ওঠানামা করাতে থাকে শুভ্র।
টের পায় আঙুলে লাগে মহুলের বুকের ভাঁজে জমে থাকা অল্প অল্প ঘাম। মহুল এবার দুই হাত পেছনে করে ব্লাউজের অবশিষ্টটুকু অঙ্গ হতে নামিয়ে দিল। সাদা কাপড়টুকু বিনীতভাবে পড়ে রইল তার ভারী রুপোর মল পরা পায়ের পাতার কাছে। এবার সে হাত পেছনে নিয়ে স্তনবেষ্টনী খুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু বুকে সুপুরুষ ও জোয়ান শুভ্রর আঙুলের খেলা আর তার আবেগমথিত চাহনি অবহেলা করে সে কাজে মন দিতে পারল না।
“শুভ্র একটু সাহায্য করবি আমায়?” শেষ মেশ নতুন প্রেমিকের কাছে আর্জি রাখতে হল তাকে।
বলে সে ঘুরে দাঁড়ালো শুভ্রর দিকে পিঠ দিয়ে। শুভ্র এর আগে শুধু একজনের ব্রা খুলেছিল, সে বিদিশা।
বিদিশাদের বাড়ির ছাদের ঘরে, বহুবার দ্রুতহস্তে এই কাজ করেছে সে, অল্প সময়ের মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে চোরের মত একটুখানি আড়াল ছিনিয়ে নিয়ে বিদিশার শরীরটা পেতে চেয়েছে সে। কিন্তু এ যেন অন্য। সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিস্থিতি।
তার স্বপ্নের দেবী তাকে বলছে তার অন্তর্বাস খুলে দিতে, এক মাথা ভিজে আলুথালু চুল এলিয়ে পড়েছে পিঠ বেয়ে, ভিজে গিয়েছে পিঠের ত্বক, ভিজে গিয়েছে অন্তর্বাসও কিছু কিছু জায়গায়। খয়েরী রঙের জলভাঙা পিঠ যেন সর্ষে গরিয়ে যাবে। শুভ্র কাঁপা কাঁপা আঙুল দিয়ে খুলে দিল ব্রায়ের গ্রন্থিবন্ধন। তার পর দুই কাঁধের ওপর থেকে সরিয়ে দিল স্ট্র্যাপ দুটো। ব্রাটা খসে পড়ল মাটিতে, মহুলের সম্পূর্ণ অনাবৃত পিঠ এখন শুভ্রর চোখের সামনে।
এই পিঠে তার বাবাকে তুলি দিয়ে রঙ বোলাতে দেখেছে সে বহুবার। তখন রাগে যন্ত্রণায় তার মনে চলেছে এক বহ্নিজ্বালা আর এখন যেন সেসবের কোন অভিযোগ তার আর বাকি নেই, সে যেন সবটাই হঠাত করে বুঝতে পেরে গিয়েছে।
এ তো এক সুন্দরের আরাধনা, তার পিতাও করেছে, সেও করছে। যুগে যুগে সকলেই করবে। মহুল তো প্রেয়সী নয়, সে হল মানসী। সকলের কামারাধিতা। সকলের মনের সুপ্ত আকাঙ্খার সে হল মূর্তিমতী রূপ! চওরা শ্যামবর্ণ পিঠ আস্তে আস্তে সরু হয়ে গিয়েছে কোমরের কাছে যত নেমেছে।
তার পর বেতের মোড়ার মত সুন্দর বাঁক খেয়ে নেমে গিয়েছে তার নিতম্ব। শাড়ির বাকি অংশ ঢেকে রেখেছে সেইখান থেকে বাকিটুকু। কিন্তু উঁচু হয়ে নিতম্বের গড়ন জানান দিচ্ছে এক বিরাট ভরভরন্ত পশ্চাৎদেশের…
শুভ্র মুখ নিয়ে গেল, মহুলের ঘাড়ের কাছে, যেখানে কালো চুলের রাশি ফোঁটা ফোঁটা জল ফেলে চলেছে মাঝে মাঝে। থুতনি ঠেকে গেল তার কাঁধে, ঠোঁট নিয়ে গেল সে মহুলের কানের লতির কাছে, তার পর আস্তে করে একটা চুমু দিল সেইখানে।
দুই হাত দিয়ে কোথাও সে স্পর্শ করছে না মহুলকে। শুধু তার শরীরের ঘন হয়ে থাকাটুকুই তার সংস্পর্শের আস্বাদ দিচ্ছে, আর এই অতি সংক্ষিপ্ত চুম্বন তাও কানের লতির মতন অত্যন্ত স্পর্শসুখের জায়গায়। মহুল ঝটিতে নিজেকে সরিয়ে নিল কয়েক হাত দূরে, সামনের দিকে ফিরতেই, তার বিপুল বক্ষ সম্ভার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, অনাবৃত, দুটো গোল মাটির তৈরি টিলার মত আহ্বান জানাল শুভ্রকে।
অপলক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে রইল শুভ্র। নিখুঁত গড়ন, শ্যামলা বরন, পুরুষের চিরকালীন মোহের নিবিড় দুটি স্তন। এই স্তনকেই যেন সমগ্র পুরুষজাতি বন্দনা করে এসেছে যুগে যুগান্তে। অবিনীত, উদ্ধত দুটি ভারী দুগ্ধাধার। কালচে খয়েরী রঙের দুটি বৃন্ত।
উন্মুক্ততা পেয়ে, হাওয়ায় শিউড়ে উঠেছে তারা, গোল হয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে রয়েছে বড় বড় দুটি বোঁটা। এরকম গোল বড় বোঁটা শুভ্র আর একজনের বুকেই দেখেছে, নিজের মায়ের, স্নান করতে করতে যখন কখনো টেলিফোন ধরবার জন্যে গায়ে ভিজে কাপড় দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন শ্যামলীদেবী, ভিজে শাড়ির ওপর দিয়ে প্রকট হয়ে থাকতে, বা বেখেয়ালে শাড়ি সরে গিয়ে থাকলে, শুভ্র আড় চোখে দেখে ফেলেছে অনেক সময়, তার ছেলেবেলাকার শান্তিকুঞ্জ মায়ের দুটি বুক।
শুভ্র শুনেছে অনেক বড় বড় মনস্তাত্ত্বিক বা দার্শনিকেরা নাকি বলেন ছেলেদের চেতনায় ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথম যৌনতার স্বাদ জাগে মায়ের শরীরের স্পর্শেই। এসব বিশ্বাস হয়নি তার কখনো। কিন্তু আজ হঠাৎ মহুলের বুকের দানা গুলো নিজের মায়ের দুধের মতো লাগা সত্ত্বেও তার উন্মাদনা যখন আর দ্বিগুন হয়ে গেল সে টের পেল যে নিজের মনমোহিনী নারীর মধ্যে যেন সব ছেলেই দেখতে চায় মায়ের আভাস। মায়ের বুকের গড়ন দেখেও তো তখন ভালো লেগেছিল।
সেই ভালো লাগাকে অস্বিকার তো সে করতে পারবেনা কিছুতেই! মহুল উপভোগ করতে থাকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে শুভ্রর এই চোখ দিয়ে তাকে সম্ভোগ করার খেলা। সব মেয়েই তো চায় পুরুষ তাকে দেখুক, দু চোখ ভরে দেখুক, তার সৌন্দর্যের মর্যাদা দিক সপ্রশংস নয়নে।
নাভির কিছু নিচে শাড়ি পড়ে মহুল। তার পেলব পেটের ছিপছিপে গড়ন এবার নজর কারল শুভ্রর। ভরাট দুটি বুকের তলায় একরত্তি পেট, ঢেউ খেলিয়ে বেঁকে যাওয়া পাতলা কোমর। এ যেন মানবী নয়, কোন কামদেবী, স্বয়ং শ্রীরতি!
আস্তে করে হাত সামনের দিকে আনে মহুল, চোখে তার মায়াবী সম্মোহনী জাদু, দুটি চোখ আটকে রেখেছে শুভ্রর চোখের দিকে।
ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। সে যেন কোন দেবদাসি, কোন রাজ রাজেস্বরের খাস বিনোদিনী। খাজুরাহ গুহায় অঙ্কিত কামস্বরুপা মূর্তির মাঝে একটি গহীন হৃদয়ের প্রতিষ্ঠা করলে আর তাতে সকল ইন্দ্রিয়ের খাদ্যরস মিশিয়ে দিলে যেন তৈরি হবে একটা মহুল।
তার বঙ্কিম দেহের এই চপলতা, এই মাধুরী যেকোনো সন্ন্যাসিকেও বিমোহিত করে দেবার মতন। হাত দুটো দিয়ে মহুল শাড়ির লুটিয়ে যাওয়া আঁচলটা তুলে নেয়। তার নগ্ন গায়ের উপর পাতলা শাড়ির আঁচল বিছিয়ে নেয়। বুকের গড়ন স্পষ্ট হয় পাতলা শাড়ির তলায়। নাভিটিও আবছা দেখা যায়। খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে শুভ্রর দিকে।
“নাগর, এসেছ যখন, কিছু খাও, বিশ্রাম নাও, প্রিয় আমার…” শুভ্রর দিকে এগিয়ে আসে সে। হাত রাখে ওর বুকে। চোখ দিয়ে সমস্ত দ্বিধা জ্বালা যন্ত্রণা যেন প্রশমিত করে দিচ্ছে তার। “কি গো? থাকবে না তোমার মহুলের কাছে আর কিছুক্ষন?” সুসজ্জিত দন্তপাটিতে আবার খেলে যায় বিদ্যুৎ হাসির ঝলকানি।
শুভ্র হাত রাখে মহুলের হাতে। এবার হাসছে সে। কি সুন্দর হাসি তার, চোখে তার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি, মহুলের প্রতি আর যেন কোন রাগ নেই তার, সব অভিমান যেন ধুয়ে মুছে গিয়েছে।
“বাবাকে ভুলে যেও না মহুল… আমিও ভুলব না… তোমাদের বুঝতে গেলে আগে তোমায় বুঝতে হবে। আর তোমায় বুঝতে গেলে প্রেম বুঝতে হবে, মহুল… আমায় বোঝাবে না সেই প্রেম? দেবে না সেই অমৃতসুধার সন্ধান?” শুভ্রর চোখে এক অদ্ভুত বশীভূত ভাব। যেন সে আত্মসমর্পণ করছে এই নারীর কাছে।
বিকেল হয়ে আসছে, বিছানায় বসে আছে বিদিশা। গত দুটো দিন যেন ঝড়ের মতো বয়ে গিয়েছে তার জীবনে। শুভ্রর জন্মদিনের দিন সে গিয়েছিল শুভ্রদের বাড়িতে শুভ্রর রাগ ভাঙ্গাবে বলে।
তার নিজের শরীরটুকু সম্পূর্ণ ভাবে শুভ্রর বাবা শান্তনু কে দিয়ে ফিরে এসেছে সে। শান্তনুকে এ্যাদ্দিন ধরে দেখছে সে, তার দিকে নানা ভাবে তাকাতে দেখেছে শান্তনুকে, শুভ্রকে বলতে গিয়ে একবার দুবার প্রচণ্ড তিরস্কার শুনেছে সে। শ্যামলীদেবীর হাবে ভাবে হয়তো ধরা পড়ত কখনো কখনো যে তিনি এটা খুব একটা ভালো ভাবে গ্রহণ করতেন না কিন্তু সেরকম স্পষ্ট কোন প্রতিবাদও তিনি জানাননি কখনো।
কিন্তু যেটা বিদিশা কোনদিন বুঝতেই পারেনি, সেই রাত্রের আগে, সেটা হল শান্তনুর এধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ রকমসকম তার মনকেও বিচলিত করেছিল যথেষ্ট মাত্রায়। তাই সেদিন যখন শুভ্র বা কাকিমা কেউ ছিল না তখন কাকুর ওই নিষিদ্ধ আদর… না কাকু নয়, শান্তনুর ওই আদর ওই পাগলামি তাকে উরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কোন অজানা সুখের সৈকতে।…
ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে আসে বিদিশার, আর আজ সে নেই। সেই লোকটা, তার সেই নিষিদ্ধ প্রেমিক যার হাতে জীবনের সবচেয়ে দামি জিনিসটা সে তুলে দিয়ে এলো, তার কৌমার্য, সে আজ আর নেই। পরদিন তুলিকাদের সাথে সিনেমা দেখে ফিরে এসে ঘটনাটা শুনে আর বাড়িতে থাকতে পারেনা বিদিশা।
বাড়িতে মায়ের চোখের সামনে থাকলে ঠিক ধরা পড়ে যাবে সে। তার মনে যেরকম নানা অনুভুতির ঝড় উঠতে থাকে তাতে বান্ধবী তুলিকার বাড়ি চলে যাওয়াই সবথেকে নিরাপদ বলে সে বেছে নেয়। মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওখানে গিয়ে একটা ফোন করে বলে দেবে রাতে ফিরবে না…
রঙিন পর্দার চলচ্চিত্রের মত ঘটনাগুলো পুনরায় ভেসে ওঠে একাকিনী বিদিশার ভাসা ভাসা দুটি চোখে। রাত্রে তুলিকা তাকে আদর দিয়ে আশ্রয় দিল, সেও আদর করলো তুলিকাকে। আজ সকালে সে বাড়ি এসেছে, এসেই শুভ্রর ফোন…
“দিশা এদিকে আয় তোর ফোন,” মায়ের গলার আওয়াজ। মা আজ কালকের থেকে অনেক সুস্থ বোধ করছেন। কাল বিদিশার মায়ের মন ভেঙে গিয়েছিল জলজ্যান্ত মানুষ একজনের মৃত্যু সংবাদে।
“নে কথা বল, শুভ্র ফোন করেছে”, বলে জননী মেয়েকে টেলিফোনে এগিয়ে দিলেন।
বিদিশার বুকের মধ্যে কি যেন একটা কেঁপে উঠল। সে তো ঠকিয়েছে শুভ্রকে। কিন্তু কি করে সে বোঝাবে শান্তনুর ভালবাসায় সেদিন কি ছিল, কি করে সে বলবে যে ভালো সে শুভ্রকেই বাসে কিন্তু শরীরের প্রেম শিখিয়েছে তাকে শান্তনু?
কি করে সে বলবে শিল্পী শান্তনু শুধু তার শরীরের ক্যানভাসে সুখের ছবি এঁকেছে কিন্তু মনের ক্যানভাসে একমাত্র শুভ্রকেই রেখেছে সে। সে তো নিজেই বোঝে না তার মন আর শরীরের এই টানাপড়েন, শুভ্রকে কি বা বোঝাবে সে!
“হ্যাঁ বল”, কোনরকমে গলা থেকে স্বর বের করলো সে।
ওদিক থেকে শুভ্র বলেছিল, “আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি আসছিস তো? মায়ের ভালো লাগবে তুই এলে।”
কলেজের জন্যে রেডি হয়ে সে বসে আছে বিছানায়। পড়নে হলুদ রঙের স্কার্ট আর একটা সাদা কুর্তি। কলেজ থেকে শুভ্রদের বাড়ি যেতে হবে, বেশী রঙচঙে পোশাক ইচ্ছে করেই পরেনি। নইলে রঙিন জামাকাপড় পড়তে বিদিশা খুবই ভালবাসে। নিষ্প্রাণ হয়ে থাকা ওর একদম পছন্দ নয়। খুব হাসিখুসি থাকতেই ও ভালবাসত। কিন্তু এই কয়েকদিনের ঘটনাবলীতে যেন উচ্ছল প্রাণবন্ত বিদিশা সন্ধ্যেবেলার মল্লিকাফুলের মতো ঝিমিয়ে পড়েছিল।
“এই নে দিশা, ঠাকুরের ফোঁটাটা নিয়ে নে কপালে, শোকের বাড়িতে যাবি, শান্ত হয়ে থাকবি মা, আর তাড়াতাড়ি ফিরবি।” জননী ঠাকুর পুজোর থালা নিয়ে মেয়ের ঘরে এসে ঢুকলেন।
সকাল থেকেই তার মন যেন কেমন কুডাক ডাকছে। মন থেকে একদম চাইছে না, কেন জানি, বিদিশা কলেজ থেকে শুভ্রদের বাড়ি যাক।
“বাড়ি ফিরে তো যেতে পারতি মা, তাহলে আমিও যেতাম তোর সঙ্গে?” এই নিয়ে এই কথাটা শুভ্রর ফোন আসবার পর থেকে বারকয়েক বলেছেন তিনি।
“মা, তুমি এমনিতেই এসমস্ত নিতে পারনা, তার মধ্যে ওইখানে আর যেতে হবে না তোমাকে। কাল ফোনে খবর পেয়েই তুমি যেমন করছিলে…”, বিদিশা বেশ মুরুব্বির মত মা’কে সামলাতে থাকে।
মনে মনে ভালো লাগে মাতৃদেবীর। মেয়ের এই আন্তরিকতা তার মনকে ছুঁয়ে যায়।
“ঠিক আছে বাবা, সাবধানে যাস, আর শুভ্রকে বলিস কিছুটা এগিয়ে দিয়ে যেতে…”
বিদিশা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
“দুর্গা দুর্গা”, ধ্বনিত হয় পেছনে…
“কি কিছু বলবে?”, শ্যামলীদেবী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন দুয়ারে দণ্ডায়মান ছায়ামূর্তির দিকে। দরজার ওপারের আলো আর ঘরের ভেতরের অন্ধকারের মাঝে পর্দার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে হারান।
“না, বউমণি… তুমি… তুমি এবেলা কিছু খেয়ে নাও বউমণি ওবেলা অত লোক এলো। দুপুরের খাওয়া ঠিকমত হল না, দাদাবাবু সেই যে গেল এখনো ফিরল না, তুমি একটু জলখাবার খেয়ে নাও”, হারান থেমে থেমে বলল কথাগুলো।
বিয়ের পর থেকেই শ্যামলী দেখছে, হারান খুব চাপা স্বভাবের, পাছে ওর মনের ভাব কেউ বুঝে ফেলে এইরকম ভাবে নিজেকে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখে, অথচ সংসারে এই মানুষটি শ্যামলীর জন্যে কতখানি ভাবে তা শ্যামলী ছোটখাটো অনেক কাজের মাধ্যমেই টের পান। তবু ওর পূর্ণমাত্রায় প্রচেষ্টা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই এই শুভার্থীর ভুমিকা পালন করে যাবার।
শ্যামলী মনে মনে হাসে। বিয়ে যখন তার হয়, তখন সে ছিপছিপে তন্বী, আর হারান তখন সবে সবে কাজে নিযুক্ত হয়েছে, কাঁচা বয়স। মনে মনে যে তার প্রতি একটা টান তৈরি হয় এটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু হারান চেষ্টা করত এটা লুকিয়ে রাখার।
“এখন কিছু খাব না হারান, মাথাটা বড্ড ধরেছে, তুমি দুয়ারটাও একটু টেনে দিয়ে যেও…”, বলে পাশ ফিরলেন শ্যামলী।
সংসারের নানা সুখ দুঃখ কাঁধে বইতে বইতে ক্লান্তি এসে ঘিরেছে শরীরের কোনায় কোনায়। একদিন যেই কোমরে ভরভরন্ত যৌবন উছলে পড়ত আজ সেখানে চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে অকাল বার্ধক্যের, তবু সরু কোমরে এখনো যেন কোথাও একদিনকার সেই রূপ যৌবনের চিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
অকালে বুরিয়ে যাওয়া রূপ যেন লেগে রয়েছে এধার ওধার, গাছে লেগে থাকা ঝিমিয়ে যাওয়া ফুলের মত। ঝরেনি, অথচ তাজাও নয় এমন। সুন্দরের ছায়া অথচ স্বতেজ নয়। এক ফুঁয়ে যেন পড়ে যাবে, অথচ যত্ন করলে বেঁচেও যেতে পারে এমন একটা ভাব।…
শ্যামলী অনুভব করল, ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো হারান। মাথার কাছে একটা টুলে বসলো সে। শ্যামলী শ্বাস টেনে রাখে, সে অবাক হয়ে ভাবে আজ হারান এত প্রকট আচরণ করছে কেন? সবসময় যার চেষ্টা নিজের সুন্দর সকলের খেয়াল রাখা মূর্তিটাকে ছায়ার মতন লুকিয়ে রাখার সে আজকে কায়াময় হয়ে উঠল কেন? অথচ কিছু বলে তাকে ছোট করতে বা অপ্রস্তুত করে দিতে চায় না শ্যামলী।
মাথার যন্ত্রণা শুনে যদি তার সেবা করতে মনে হয়েই থাকে তো করুক নাহয়। চিরকাল তো এই প্রাণীটি সত্যিকারের সদিচ্ছা নিয়ে তার জন্যে ভেবেছে। আর তো কেউ এতটা ভাবেনি কখনো। শাশুড়ি বেঁচে থাকাকালীন রান্নাঘরের কাজ করবার সময় সকলের নজর এড়িয়ে তাকে সাহায্য করে দিয়েছে চুপিসারে। এমনকি তার সাথেও কোন কথা বলেনি সেরকম।
একবার শুভ্রর জন্মদিনে তার জামশেদপুরের ননদ ননদাই এসেছিল। শান্তনুর অনেক আত্মীয়স্বজন, পরিবার, পরিজনে সেবার ঘর ভরেছিল দিন কয়েকের জন্যে।
তার ছোট ননদ তাকে সকলের সামনে খেপিয়ে বলেছিল, “দিদিভাই আবার আমার ননীর পুতুল, দাদা তুলি দিয়ে বানিয়েছে তো, তাই অতজনের রান্না করতে পারেননা, শুভ্রর জন্মদিনে তাই দোকান থেকে খাবার আনাচ্চে, না দিদিভাই?”
দাঁতে দাঁত চেপে সে পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দেখতে থাকে এই অসামাজিক অবৈধ যৌনসঙ্গম। বিদিশার গলার স্বরটা তার কোন নরকের আর্তনাদ বলে মনে হচ্ছে তখন। এত রাগ হচ্ছে তার বিদিশার ওপর, এত প্রতিহিংসা ছাপিয়ে যাচ্ছে মন, যে পিতার সঙ্গমের প্রতাপ বেড়ে গেলে সে যেন মনে মনে খুশিই হলো।
তার তখন মন চাইছে বিদিশা আরো ব্যথা পাক। যোনি তার ফেটে গিয়ে চৌচির হয়ে যাক পিতার জান্তব অবগাহনের প্রচণ্ড ঘাতে প্রতিঘাতে। এত যদি মেয়ের শখ ছিল তো তাকে বললেই তো পারত সে! শুভ্র আর ভাবতে পারেনা, বিদিশাকে তখন তার একটা ভাদ্র মাসের পালে ওঠা কুকুরি ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হয়না, সে ভাবে শুধু সে যদি পারত তবে এই মুহূর্তেই কামপিপাসু বিদিশার শরীরের সমস্ত চুলকুনি ঘুচিয়ে দিত।
শুভ্রর তখন হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। এমন সময় পিতার অশ্রাব্য ভাষা কানে এসে লাগে তার।
“তোমার মত মেয়ে কি করে এত দিন আচোদা আছ গো?”… আরো কি যেন, কিন্তু কিছুটা মিলিয়ে গেল, ফ্যানের শব্দে।
“কাকু… উহহ… “ বিদিশার কথার কিয়দংশ ভেসে এলো।
শুভ্রর মাথায় তখন উন্মাদনার ঘুর্ণিঝড় বইছে। একদিকে পিতার দানবিক স্বেচ্ছাচার, আরেকদিকে বিশ্বাসঘাতিকা প্রেমিকার অবৈধ শারীরিক সংশ্রব, আর সবকিছু ছাপিয়ে নিজের মনের ভেতর ভেঙেচুরে দেওয়া এক অদ্ভুত ব্যর্থতা। তার ইচ্ছা করছে রান্নাঘর থেকে হাত দাটা নিয়ে এসে দুটোকেই শেষ করে দেয় এক এক কোপে। …
যৌন সঙ্গমের এত জঘন্য রূপ যেন সে আর কোথাও কখনো দেখবে না। কি অশ্লীল আর নারকীয় সে দৃশ্য।
বিদিশার ফোলা ফোলা দুধে দলাই মালাই করছে কে না তার নিজের বাবা, আর তার ফুলের মত শরীরের মধ্যে নিজের ওই নোংরা সাত ইঞ্চির কালো বিশ্রী মাংসের টুকরোটা গাদিয়ে গাদিয়ে দিচ্ছে। ছিঃ! নানান দিক থেকে নানা অনুভূতি এসে যেন তার মাথাটা ঘুরিয়ে দিতে লাগলো, একবার মনে হলো বিদিশার আর কি দোষ তার বাবাই তো তাকে হিংস্র পশুর মত ;., করছেন।
পরক্ষনেই বিদিশার ঘরঘরে গলার স্বরে মরণমুখি কামের ছটফটানি শুনে মনে হচ্ছে বেশ্যা এই মেয়েই সব নষ্টের গোড়া। তার মধ্যে যেন শুভ্র সেইদিনকার মহুলকে দেখতে পাচ্ছে। মহুল আর বিদিশার চেহারা দুটি যেন তার বাবার নগ্ন নিষ্পেষণকারী শরীরের তলায় মিলেমিশে যাচ্ছে। তার উলঙ্গ বাবাকে শুভ্রর এখন একটা কিলবিল করতে থাকা শুঁয়োপোকা মনে হয়, আর বিদিশাকে একটা সুন্দরি ডাইনি।
ঘোলা হতে থাকা দৃষ্টিতে সবকিছু যেন একটা কাদামাখা জলছবির মত গুলিয়ে যেতে থাকে। যন্ত্রণায় ফেটে যাবে যেন মস্তিষ্কের শিরাগুলো। হেরে গিয়েছে সে, বিশ্বাসে, ভালবাসায়, প্রেমিকের পদে… অনুভূতি আর চেতনার রঙ বদলে যেতে থাকে রোদ পোহানো গিরগিটির মত, ব্যর্থতা থেকে আসে হিংসা, হিংসার থেকে ঘৃণা আর ঘৃণার থেকে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ… মাথার মধ্যে ঝিন ঝিন করতে থাকে সেই চূড়ান্ত প্রতিহিংসার বীজমন্ত্র।
“দাদাবাবু”, আসতে করে কে ডাক দেয় কানের পাশে।
আলতো একটা হাত এসে লাগে কনুইয়ের ওপর।
মাথায় বাজ পরার মত চমকে ওঠে শুভ্র। হতচকিত দৃষ্টি ফেরায় পাশে।
“আর না, দাদাবাবু, চলো…”, হারান কাতর কণ্ঠে যথাসম্ভব অনুচ্চস্বরে আর্জি রাখে মনিবপুত্রের কাছে। তার মনে ভয় ঘরের ভেতরে না তাদের কথোপকথন শোনা যায়…
শুভ্র যেন ঘুমের মধ্যে হেঁটে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখ একেবারে বিবর্ণ। হাত ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। হারান বুঝতে পারে দাদাবাবু তার প্রকৃতস্থ নন। আস্তে আস্তে ধরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে তাকে…
অটো এসে থেমেছে আলিবাগের চৌমাথায়। ভাড়া মিটিয়ে, খুচরো পয়সা না গুণেই পকেটস্থ করে এগিয়ে যায় শুভ্র। মাথার চিন্তাগুলোকে শান্ত করতে হবে। একেকটা জটকে খুলতে হবে কষ্ট করে।
এভাবে উদভ্রান্ত হয়ে সে কাজ হাসিল করতে পারবে না। অন্তত মহুলের কাছে তো নয়ই।
যত সে এগিয়ে চলেছে মহুলের বাড়ির দিকে ততই যেন বুকের মধ্যে একটা চোরা রক্তের স্রোত ধিকিধিকি করে বয়ে যেতে থাকে। মহুলের প্রতি যে জমানো ঘৃণা আর বিকৃত যৌনতা সে পোষণ করে তার থেকে নিজেকে তো আর চাইলেই আড়াল করতে পারবে না সে.. তখন বেলা বারোটা মত হবে।
দরজা মহুল নিজেই খুলে দিল। সে একাই থাকে। পড়নে হলুদ একটা তাঁতের শাড়ি, পাতলা সুতির সাদা ব্লাউজ। চুল অবিন্যস্ত পড়ে ঘাড় বেয়ে বুকের ওপরে কিম্বা পিঠে, এমন ভাবে ভিজে রয়েছে যে স্পষ্ট বোঝা যায় সে সদ্য স্নান করেছে। মুখে একটা উজ্জ্বল ভাব, চোখ দুটি সায়রের মত কিন্তু শান্ত। মহুলের এত লম্বা নিকষ কালো চুল, আগে তো কখনো লক্ষ্য করেনি সে! অবাক লাগে শুভ্রর, আজ কেমন আলাদা লাগছে মহুলকে। তার সেই আগের মতই ভরাট শরীরি আবেদন যথাস্থানেই রয়েছে কিন্তু ওপর থেকে যেন মুড়ি দিয়ে রয়েছে সে একটা স্নিগ্ধতার শীতল চাদর। এভাবে কখনো কাছ থেকে দেখেনি সে মহুলকে। তাদের দূরত্ব এখন এক হাত মত হবে।
“তুমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে না ভেতরে আসবে?’
মহুলের কোথায় শুভ্র লজ্জা পেয়ে যায়, এতক্ষন হাঁ করে সে চেয়েছিল মহুলের মুখের দিকে।
চোখ নামিয়ে সে উদ্যোগী হয় ঘরে ঢুকতে।
“আমি শুনেছি সব, কাগজে দিয়েছে আজকে।”, ঘরের ভেতরে চলতে চলতেই বলে মহুল।
কোমরের কাছে শাড়ির ভাঁজ, কোমরের ঢেউ, চলার দুলুনি, সব দেখতে পায় শুভ্র। সে আসছে পেছন পেছন। সত্যিই এই নারীর মধ্যে কিছু আছে। এর চলন বলন চাহনি সবকিছুই যেন পুরুষকে আকর্ষণ করবার জন্যেই তৈরি হয়েছে।
শুভ্র দেখল ওরা বসার ঘরে এসে ঢুকেছে।
একটা ছোট্ট সোফা রাখা, সামনে একটা টেবিল, তার ওপরে একটা অ্যাশ-ট্রে। এধারে ওধারে আরো দুটো গোল চেয়ার। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো একটা টিভি টেবিল, তার ওপরে একটা মাঝারি সাইজের টিভি। একটা কোনে একটা ছোট্ট গোল টুলের ওপরে রয়েছে একটা সরু ছিপছিপে পেতলের ফুলদানি। তাতে রজনীগন্ধার স্টিক, পাশে ধুপ-কাঠি। ধুপ আর রজনীগন্ধার গন্ধে ঘর ভরে গিয়েছে। সামনে সদ্যস্নাতা মহুল। শুভ্র এরকম একটা পরিবেশ আসাই করেনি।
এর আগে সে কোনদিন এই বাড়িতে ঢোকেনি। মহুলকে ফলো করে করে একদিন এসেছিল কৌতূহলী হয়ে শুধু এইটুকু জানতে যে সে থাকে কোথায়। ভেতরে ঢোকার কোন প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু মনে মধ্যে মহুলের ডেরার যেই ছবিটা এঁকেছিল সে তার সাথে এই সত্যিকারের ছবিটির যেন কোন তুলনাই চলে না।
“বোসো”, সোফা দেখিয়ে দিয়ে বলল মহুল।
কলের পুতুলের মত বসে পড়ল শুভ্রও।
মুখ তুলে মাথা ঘুরিয়ে এবারে আরেকটু ভালো করে সে চারদিক নিরীক্ষণ করতেই চোখে পড়ল দেওয়ালে ঝোলানো বেশ কয়েকটা সুন্দর সন্দর পেণ্টিং। অভিনব সব পোজে এক রমণীই রয়েছেনে বেশিরভাগ ছবিতে। কিছু ছবি খুব স্পষ্ট কিছু ছবি হয়তো বা একটু অ্যাবস্ট্র্যাক্ট। বুঝতে অসুবিধে হয়না যে এগুলো সবই শান্তনুর ছবি। বাবার ছবির ধারা ছেলে চেনে। সেই স্টাইল, সেই রঙের বিন্যাস।
“কি দেখছ?”, জিজ্ঞেস করে মহুল, সে বসেছে একটা গোল চেয়ার টেনে শুভ্রর ঠিক মুখোমুখি নয় তবে সম্মুখেই একটু সরে।
“হুম্ম… এগুলো…”, ছবির দিকে আঙুল তুলে ইতস্তত করে শুভ্র।
“হ্যাঁ তোমার বাবার। ওই যে, হাসছেন তিনি”, হেসে উঠে নির্দেশ করে মহুল একটি কোনে।
রজনীগন্ধার স্টিকের আড়ালেই ছিল, প্রথমে চোখে পড়েনি শুভ্রর।
তার বাবার একটা ছবি, হাসিমুখে চেয়ে আছেন। কি অপার্থিব সেই হাসি, কি শিশুসুলভ সুন্দর।
“বাবার ছবি, মানে… তুম- আপনি…”, শুভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে তার বাবাকে, বেশ অবাক সে।
“আমাকে তুমি বলতে পারো তুমি শুভ্র, তোমার বাবা বলতেন বন্ধুত্তে্বর বয়েস হয়না।”, উঠে গেল মহুল, তার ভারী নিতম্বে দোল দিল তার চলার তালে, “ভালোবাসা, সৌন্দর্যের আরাধনা, সম্পর্কের গভীরতা কিম্বা তার আলাদা আলাদা স্তরগুলো খুব অদ্ভুত, এগুলো বোঝা খুব শক্ত কিন্তু খুব সহজেই এগুলো সবার হৃদয়েই ঢুকে যায়…”, হেসে ফিরে তাকায় রমণী, ভারী বুকের উপর আঁচল থাকতে চায় না তার।
ভিজে চুল থেকে জল পড়ে পড়ে, সাদা ব্লাউজ স্বচ্ছ করে দিয়েছে পিঠের দিকে, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সাদা অন্তর্বাসের রেখা।
“আমার নয় তোমার বাবার কথা সব… শান্তনুদার থেকেই তো শেখা জীবনবোধ।” ছবিটার পাশে এসে থামল মহুল।
চোখে অপার ভালবাসা। সে চেয়ে রয়েছে হাসিমুখটার দিকে, শান্তনু হাসছে। মহুলও হাসছে।
শুভ্র মিনিটখানেক চুপ করে বসে থাকে, হতবাকের মত। তার সমস্ত হিসেব যেন কেমন গুলিয়ে যেতে লাগে। এই মায়াবী মহিলার ছলনায় সে নিজেকে হারাবে না, মনে মনে নিজেকে শক্ত করতে চায় শুভ্র। সে উঠে যায় সোফার থেকে। মহুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে এখন।
বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে মনের জমাট বাঁধা ঘৃণার পুনর্মন্থন করতে চাইল সে। মনে করতে চাইল, বাবাকে আর মহুলকে… সেখানে, সেই দৃশ্যে সব ছাপিয়ে ফুটে উঠল মহুলের রূপ। স্নিগ্ধ, শান্ত, প্রেমে নিমজ্জিতা, সম্পূর্ণ বিবসনা… না সে তো নোংরা, কুৎসিত, খল দুশ্চরিত্রা। কিন্তু কই, অবশ হয়ে এল মনের টানটান উত্ত্বেজনা, শিথিল হয়ে পড়ল মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রটি। দুটো কাঁধে অনুভব করলো মহুলের স্পর্শ।
দু হাত দিয়ে তার দিকে ঘোরালো সে শুভ্রকে। কপালে হাত রেখে যেন পরখ করলো তার মাথার ভেতরের উত্তাপ।
“খুব কষ্ট পেয়েছিস না রে? কিচ্ছু না বুঝে ছেলেমানুষের মতন?”, মহুলের এই হঠাৎ করে তুই সম্ভাষণ, এই আশ্রয়দায়িনীর মত পরশ, সবকিছু যেন শুভ্রর তিলে তিলে জমে ওঠা দুঃখ ছটফটানি, আর অবশেষে বিদিশা আর পিতাকে একসঙ্গে দেখে তার মনের চূড়ান্ত উন্মাদনা ও অন্তর্দ্বন্দ্বকে একটা শান্তির হদিস দেখাচ্ছিল।
“আমি আর পারছিনা।” মাথা নিচু, মুখ রাঙা হয়ে গিয়েছে শুভ্রর। ওর কাঁধে রাখা তখনও মহুলের দুই হাত। মসৃণ শ্যামবর্ণ, একটা একটা চুড়ি পরানো দুটি হাতে।
“তোকে কে বলেছে পারতে? ভালবাসার মানে বুঝিস তুই? যে ভালবাসতে চাইলি? ঘৃণা আর ভালবাসার মধ্যে কতটুকু পার্থক্য আছে তা জানিস তুই? যে ঘৃণা করতে চাইলি?” কথার মধ্যে একটা মিষ্টি সুর শুনতে পেল শুভ্র।
“আমি কিছু বুঝিনা, মহুল, তুমি শুধু আমায় এইটুকু বলো, কেন তোমরা আমার মাকে ঠকালে? কেন বাবা আমাকে ঠকাল? আর সে? সে কেন আমার সাথে এই চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করল? তাও আবার আমারই বাবার সাথে? তোমাতে আর ওতে কোন তফাত রইল না যে…” শুভ্র প্রলাপ বকার মত বলে যাচ্ছে, চোখে তার ছলছল করছে এতদিনের বাঁধ দিয়ে রাখা জল। এই যেন বাঁধ ভেঙে যাবে যেকোনো মুহূর্তে।
মহুল এবার শুভ্রর নিচু করে রাখা মাথাটা তার বিশাল দুই বুকের মধ্যে টেনে নিল আলতো করে। হাত রাখল তার মাথার ওপর।
“কেউ আমরা কাউকে ঠকাতে পারিনা রে, নিজেকে ছাড়া কাউকে ঠকানো এই পৃথিবীতে সম্ভব নয়”, শুভ্রর মাথায় ঠোঁট গুজে দেয় মহুল।
“আমি, তোর বাবা… আমাদের কাছে শরীরের ভালবাসা আর মনের ভালবাসা এই দুটো জিনিস যতটা এক, আবার ততটাই আলাদা… শরীর দিয়ে ভালবেসে নারী পুরুষকে পরিপূর্ণ করে, সেই পরিপূর্ণতার খোঁজে তোর বাবাও এসেছিলেন আমার কাছে, আমিও গিয়েছিলাম তার কাছে, আবার আজ তুই ও এসেছিস সেই একই সন্ধানে… পুরুষের এই বহুমুখী সন্ধানে রমণীর প্রয়োজন আছে নানান ভাবে, এই সংসারে তাই কেউ হয় শান্ত সুন্দর মাতৃমূর্তিধারি শ্যামলীদেবী আর কেউ হয় মৌবনের মহুল।”
“আমি জানিনা মহুল, আমি জানতে চাইনা, তুমি শুধু আজ আমার সব জ্বালা যন্ত্রণা ভুলিয়ে দাও, আমাকে একটু শান্তি দাও মহুল, তোমার কাছে আমি যখন এসেই গিয়েছে আমাকেও দাও সেই অমৃতের সন্ধান”, শুভ্র নাক ডুবিয়ে দেয় ব্লাউজের গহনপথে, ভিজে গায়ে ফুলের সুবাস। সেই দূর থেকে দেখা, বহু জল্পিত কল্পিত বিপুল বক্ষে অবশেষে শুভ্র রেখেছে তার ক্লান্ত মুখের ভার।
“সে কথা, সেই গলার স্বর, কেষ্ট ঠাকুর তুমি এলে যদি এ্যাদ্দিন পরে এলে কেন?” নিজেকে ধনুকের মত পেছনে হেলিয়ে দিয়েছে মহুল, বুকের ওপর শুভ্রর সন্ধানী মুখ ঘোরাফেরা করছে, আর মহুল তার সমস্ত অনুভূতি দিয়ে তাই উপভোগ করছে। শাড়ির আঁচল খসে গিয়েছে দুজনের মাঝখান থেকে, মাটিতে লুটোচ্ছে তা। সাদা ব্লাউজের সুতো টানটান…
বিশাল দুই পর্বতের মাঝে শুভ্র যেন দিশেহারা। ব্লাউজ ফেটে বেরিয়ে আসার মত সম্ভার উঁচিয়ে নিজেকে হেলিয়ে দিয়েছে মহুল পেছন দিকে। শান্তনু হাসছেন ছবির থেকে। যেন ছেলেকে দিয়ে গেলেন অমৃতসুধার সন্ধান।…
“শুধু, ফুলের গন্ধ শুঁকবি, না মধুও খাবি রে? পাগল মৌমাছি!”, মহুলের সাজানো দাঁতের পাটিতে খেলে যাচ্ছে ঝকঝকে একটা নির্মল আনন্দের হাসি।
একটা হাতে সস্নেহে সে তার থেকে অন্তত ছ সাত বছরের ছোট এই ছেলেটির মাথায় বিলি কাটছে। ওর বিরাট দুটো ব্লাউজ আবৃত গ্লোবের মত বুকের ওপর সেই মাথাটা যেন অশান্ত হয়ে খুঁজে চলেছে আশ্রয়। টান টান স্বেত ব্লাউজের হেমধার থেকে জেগে উঠেছে দুটি অর্ধগোলক, তারা জায়গার অভাবে পরস্পরের গায়ে ঠাসাঠাসি করে তৈরি করে দিয়েছে এক গভীর বিভাজিকা।
শ্যামলা ত্বকের ওপর এক গাঢ় অন্ধকার খাদ। শুভ্র দেখছে, মুখ ঘসছে, নাক ডুবিয়ে দিচ্ছে, যেন বিভোর হয়ে উঠেছে। সাদা ব্লাউজ প্রায় স্বচ্ছ, ভেতরে সাদা অন্তর্বাস যে ধরে রাখতে পাড়ছে না মহুলের বক্ষের বিপুল ঐশ্বর্য তা শততই প্রকট। উঁচু উঁচু দুটো নিটোল স্তনার্ধ দেখতে যেমন সুগঠিত, পরশে তেমনই নরম। এ যেন এক দুই বিপরিতের মিলন সৌন্দর্য! নিরাভরণ হয়ে জেগে আছে আধোখানি উন্মুক্ততা আর স্বচ্ছ ব্লাউজের ভেতরে ব্রায়ের মধ্যে বাধাপ্রাপ্ত আধোখানি গোপনতা…
গায়ের রঙ আর নিখুঁত সৌষ্ঠব মিলিয়ে তার যেন ঠিক কুমোরটুলির মূর্তির মত বুকের গড়ন। সদ্য স্নানের ফলে হালকা আর্দ্রতা রয়েছে ত্বকে, যেন সদ্য লেপা পলি মাটি… শুভ্র এবার ব্লাউজের হুকে আঙুল রাখল। এ যেন তার স্বপ্নের দেবী। অবাক মস্তিস্কে সে দেখল, যাকে সে যারপরনাই ঘৃণা করে এসেছে এতদিন, তাকেই তার পুজো করতে ইচ্ছে করছে, মনে হচ্ছে সেই যেন তার এতদিনের আরাধিতা অধরা।
মনে হচ্ছে তার কাছেই যেন তার সব অশান্তির সমাধান, সব ক্লেশের সমাপ্তি। মহুল চোখ বুজে ফেলেছিল। অনুভূতি তার অন্যতম প্রিয় জিনিস, সুখকে অনুভব না করলে আবার সুখ কিসে? তাই নিজেকে পেছনে হেলিয়ে দিয়ে সে তার দুয়ারে আসা এই নবাগত প্রেমসন্ধানি কে ছেড়ে দিয়েছিল তার শরীরের মায়াবিতান। এবার সে চোখ খুললো।
“হুক গুলো খুলে দেব, শুভ্র?”, নরম ভেজামাটিতে কুয়াশার আওয়াজের মত আলতো তার গলার স্বর।
শুভ্র উত্তর দিল না, শুধু দুই হাতে একটা একটা করে খুলতে আরম্ভ করল ব্লাউজের হুক।
নিঃশ্বাস যেন ঘন হয়ে আসছে, মুহূর্ত যেন কাটছে এক অন্যরকম ছন্দে। মায়াময় হয়ে উঠেছে সমস্ত কিছু। শুভ্রর চোখে কিশোরের বিস্ময়। আর বুকের ভেতর ভক্ত প্রেমিকের উদ্বেলিত হৃদয়।
সবকটা হুক খুলে দিতে ব্লাউজের দুটো দিক দুপাশে ঝুলে পড়ল। সাদা ব্রায়ে জলের ছাপ, ভিজে গায়ে যেন তাড়াহুড়ো করে পরা। এবারে বিশাল স্তনদ্বয়ের আর বিশেষ কিছুই আবৃত নেই, তবুও যেন কতটাই বাকি রয়ে গেছে অগোচরে! একটা কাপের ওপর দিয়ে আবার অল্প মুখ বেরিয়ে গিয়েছে একটা কালচে খয়েরি বৃন্তবলয়ের…
শুভ্রর যেন নেশা লেগে যাচ্ছে, হাঁটু কাঁপছে, পা অবশ হয়ে পড়ছে। মহুল এখন সোজা হয়ে দাঁড়ানো, কিছুটা বেঁকেছে কোমর। দুহাত দিয়ে সে শুভ্রর বুকের ওপর খেলা করছে, শুভ্র শুধু দেখছে, ব্রা দিয়ে প্রায় না ঢাকা মহুলের তরমুজের মতো নধর ভরাট দুটো বুক। শুভ্রর মনে হল এই বুঝি নারীত্বের পরিপূর্ণতা, এই বুঝি উর্বরতার প্রতিচ্ছবি।
“বাবা তোমার বুকের ছবি আঁকেনি কখনো?” একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে শুভ্র। তার প্যান্টের মধ্যে ধীরে ধীরে যেন কিরকম একটা বদ্ধ ভাব টের পাচ্ছে সে। শরীরে রক্তের সঞ্চালন বাড়ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে উপস্থ।
“হ্যাঁ এঁকেছেন তো! কতবার এঁকেছেন… কিন্তু তুই তোর মত করে আঁক আমায়… সেসব ছবি আর এসব ছবি হবে একেবারে আলাদা… প্রেমিকের চোখেই তো প্রেম নতুনত্ত পায়, নইলে আর প্রেম চিরনবীন কি করে থাকে?”, মহুলের চোখে চকচক করে উঠল কি যেন এক অদ্ভুত হাতছানি, শুভ্র সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবে না।
“আমি দেখব, ওদের…” বলে শুভ্র একটা হাত রাখে মহুলের ডান দিকের স্তনের ওপর। হাত পিছলে যাওয়ার উপক্রম এমনি মসৃণ ত্বক তার। আঙুল চলে গেল স্তনবিভাজনে।
শুভ্রও বাঁধা দিল না, বরঞ্চ আরেকটু প্রশারিত করে তার তর্জনীটি ঠেলে ঢুকিয়ে দিল সেই চাপা খাঁজের মধ্যে। আর অমনি তার আঙুলটিকে গিলে নিল দুপাশ থেকে ফুলে ফেপে ঠেসে থাকা মহুলের দুধের নরম উষ্ণতা। যেন গদির ফাঁকে আঙুল ভরে দিয়েছে সে। সেই ফাঁক বরাবর আঙুলটাকে ওঠানামা করাতে থাকে শুভ্র।
টের পায় আঙুলে লাগে মহুলের বুকের ভাঁজে জমে থাকা অল্প অল্প ঘাম। মহুল এবার দুই হাত পেছনে করে ব্লাউজের অবশিষ্টটুকু অঙ্গ হতে নামিয়ে দিল। সাদা কাপড়টুকু বিনীতভাবে পড়ে রইল তার ভারী রুপোর মল পরা পায়ের পাতার কাছে। এবার সে হাত পেছনে নিয়ে স্তনবেষ্টনী খুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু বুকে সুপুরুষ ও জোয়ান শুভ্রর আঙুলের খেলা আর তার আবেগমথিত চাহনি অবহেলা করে সে কাজে মন দিতে পারল না।
“শুভ্র একটু সাহায্য করবি আমায়?” শেষ মেশ নতুন প্রেমিকের কাছে আর্জি রাখতে হল তাকে।
বলে সে ঘুরে দাঁড়ালো শুভ্রর দিকে পিঠ দিয়ে। শুভ্র এর আগে শুধু একজনের ব্রা খুলেছিল, সে বিদিশা।
বিদিশাদের বাড়ির ছাদের ঘরে, বহুবার দ্রুতহস্তে এই কাজ করেছে সে, অল্প সময়ের মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে চোরের মত একটুখানি আড়াল ছিনিয়ে নিয়ে বিদিশার শরীরটা পেতে চেয়েছে সে। কিন্তু এ যেন অন্য। সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিস্থিতি।
তার স্বপ্নের দেবী তাকে বলছে তার অন্তর্বাস খুলে দিতে, এক মাথা ভিজে আলুথালু চুল এলিয়ে পড়েছে পিঠ বেয়ে, ভিজে গিয়েছে পিঠের ত্বক, ভিজে গিয়েছে অন্তর্বাসও কিছু কিছু জায়গায়। খয়েরী রঙের জলভাঙা পিঠ যেন সর্ষে গরিয়ে যাবে। শুভ্র কাঁপা কাঁপা আঙুল দিয়ে খুলে দিল ব্রায়ের গ্রন্থিবন্ধন। তার পর দুই কাঁধের ওপর থেকে সরিয়ে দিল স্ট্র্যাপ দুটো। ব্রাটা খসে পড়ল মাটিতে, মহুলের সম্পূর্ণ অনাবৃত পিঠ এখন শুভ্রর চোখের সামনে।
এই পিঠে তার বাবাকে তুলি দিয়ে রঙ বোলাতে দেখেছে সে বহুবার। তখন রাগে যন্ত্রণায় তার মনে চলেছে এক বহ্নিজ্বালা আর এখন যেন সেসবের কোন অভিযোগ তার আর বাকি নেই, সে যেন সবটাই হঠাত করে বুঝতে পেরে গিয়েছে।
এ তো এক সুন্দরের আরাধনা, তার পিতাও করেছে, সেও করছে। যুগে যুগে সকলেই করবে। মহুল তো প্রেয়সী নয়, সে হল মানসী। সকলের কামারাধিতা। সকলের মনের সুপ্ত আকাঙ্খার সে হল মূর্তিমতী রূপ! চওরা শ্যামবর্ণ পিঠ আস্তে আস্তে সরু হয়ে গিয়েছে কোমরের কাছে যত নেমেছে।
তার পর বেতের মোড়ার মত সুন্দর বাঁক খেয়ে নেমে গিয়েছে তার নিতম্ব। শাড়ির বাকি অংশ ঢেকে রেখেছে সেইখান থেকে বাকিটুকু। কিন্তু উঁচু হয়ে নিতম্বের গড়ন জানান দিচ্ছে এক বিরাট ভরভরন্ত পশ্চাৎদেশের…
শুভ্র মুখ নিয়ে গেল, মহুলের ঘাড়ের কাছে, যেখানে কালো চুলের রাশি ফোঁটা ফোঁটা জল ফেলে চলেছে মাঝে মাঝে। থুতনি ঠেকে গেল তার কাঁধে, ঠোঁট নিয়ে গেল সে মহুলের কানের লতির কাছে, তার পর আস্তে করে একটা চুমু দিল সেইখানে।
দুই হাত দিয়ে কোথাও সে স্পর্শ করছে না মহুলকে। শুধু তার শরীরের ঘন হয়ে থাকাটুকুই তার সংস্পর্শের আস্বাদ দিচ্ছে, আর এই অতি সংক্ষিপ্ত চুম্বন তাও কানের লতির মতন অত্যন্ত স্পর্শসুখের জায়গায়। মহুল ঝটিতে নিজেকে সরিয়ে নিল কয়েক হাত দূরে, সামনের দিকে ফিরতেই, তার বিপুল বক্ষ সম্ভার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, অনাবৃত, দুটো গোল মাটির তৈরি টিলার মত আহ্বান জানাল শুভ্রকে।
অপলক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে রইল শুভ্র। নিখুঁত গড়ন, শ্যামলা বরন, পুরুষের চিরকালীন মোহের নিবিড় দুটি স্তন। এই স্তনকেই যেন সমগ্র পুরুষজাতি বন্দনা করে এসেছে যুগে যুগান্তে। অবিনীত, উদ্ধত দুটি ভারী দুগ্ধাধার। কালচে খয়েরী রঙের দুটি বৃন্ত।
উন্মুক্ততা পেয়ে, হাওয়ায় শিউড়ে উঠেছে তারা, গোল হয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে রয়েছে বড় বড় দুটি বোঁটা। এরকম গোল বড় বোঁটা শুভ্র আর একজনের বুকেই দেখেছে, নিজের মায়ের, স্নান করতে করতে যখন কখনো টেলিফোন ধরবার জন্যে গায়ে ভিজে কাপড় দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন শ্যামলীদেবী, ভিজে শাড়ির ওপর দিয়ে প্রকট হয়ে থাকতে, বা বেখেয়ালে শাড়ি সরে গিয়ে থাকলে, শুভ্র আড় চোখে দেখে ফেলেছে অনেক সময়, তার ছেলেবেলাকার শান্তিকুঞ্জ মায়ের দুটি বুক।
শুভ্র শুনেছে অনেক বড় বড় মনস্তাত্ত্বিক বা দার্শনিকেরা নাকি বলেন ছেলেদের চেতনায় ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথম যৌনতার স্বাদ জাগে মায়ের শরীরের স্পর্শেই। এসব বিশ্বাস হয়নি তার কখনো। কিন্তু আজ হঠাৎ মহুলের বুকের দানা গুলো নিজের মায়ের দুধের মতো লাগা সত্ত্বেও তার উন্মাদনা যখন আর দ্বিগুন হয়ে গেল সে টের পেল যে নিজের মনমোহিনী নারীর মধ্যে যেন সব ছেলেই দেখতে চায় মায়ের আভাস। মায়ের বুকের গড়ন দেখেও তো তখন ভালো লেগেছিল।
সেই ভালো লাগাকে অস্বিকার তো সে করতে পারবেনা কিছুতেই! মহুল উপভোগ করতে থাকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে শুভ্রর এই চোখ দিয়ে তাকে সম্ভোগ করার খেলা। সব মেয়েই তো চায় পুরুষ তাকে দেখুক, দু চোখ ভরে দেখুক, তার সৌন্দর্যের মর্যাদা দিক সপ্রশংস নয়নে।
নাভির কিছু নিচে শাড়ি পড়ে মহুল। তার পেলব পেটের ছিপছিপে গড়ন এবার নজর কারল শুভ্রর। ভরাট দুটি বুকের তলায় একরত্তি পেট, ঢেউ খেলিয়ে বেঁকে যাওয়া পাতলা কোমর। এ যেন মানবী নয়, কোন কামদেবী, স্বয়ং শ্রীরতি!
আস্তে করে হাত সামনের দিকে আনে মহুল, চোখে তার মায়াবী সম্মোহনী জাদু, দুটি চোখ আটকে রেখেছে শুভ্রর চোখের দিকে।
ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। সে যেন কোন দেবদাসি, কোন রাজ রাজেস্বরের খাস বিনোদিনী। খাজুরাহ গুহায় অঙ্কিত কামস্বরুপা মূর্তির মাঝে একটি গহীন হৃদয়ের প্রতিষ্ঠা করলে আর তাতে সকল ইন্দ্রিয়ের খাদ্যরস মিশিয়ে দিলে যেন তৈরি হবে একটা মহুল।
তার বঙ্কিম দেহের এই চপলতা, এই মাধুরী যেকোনো সন্ন্যাসিকেও বিমোহিত করে দেবার মতন। হাত দুটো দিয়ে মহুল শাড়ির লুটিয়ে যাওয়া আঁচলটা তুলে নেয়। তার নগ্ন গায়ের উপর পাতলা শাড়ির আঁচল বিছিয়ে নেয়। বুকের গড়ন স্পষ্ট হয় পাতলা শাড়ির তলায়। নাভিটিও আবছা দেখা যায়। খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে শুভ্রর দিকে।
“নাগর, এসেছ যখন, কিছু খাও, বিশ্রাম নাও, প্রিয় আমার…” শুভ্রর দিকে এগিয়ে আসে সে। হাত রাখে ওর বুকে। চোখ দিয়ে সমস্ত দ্বিধা জ্বালা যন্ত্রণা যেন প্রশমিত করে দিচ্ছে তার। “কি গো? থাকবে না তোমার মহুলের কাছে আর কিছুক্ষন?” সুসজ্জিত দন্তপাটিতে আবার খেলে যায় বিদ্যুৎ হাসির ঝলকানি।
শুভ্র হাত রাখে মহুলের হাতে। এবার হাসছে সে। কি সুন্দর হাসি তার, চোখে তার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি, মহুলের প্রতি আর যেন কোন রাগ নেই তার, সব অভিমান যেন ধুয়ে মুছে গিয়েছে।
“বাবাকে ভুলে যেও না মহুল… আমিও ভুলব না… তোমাদের বুঝতে গেলে আগে তোমায় বুঝতে হবে। আর তোমায় বুঝতে গেলে প্রেম বুঝতে হবে, মহুল… আমায় বোঝাবে না সেই প্রেম? দেবে না সেই অমৃতসুধার সন্ধান?” শুভ্রর চোখে এক অদ্ভুত বশীভূত ভাব। যেন সে আত্মসমর্পণ করছে এই নারীর কাছে।
বিকেল হয়ে আসছে, বিছানায় বসে আছে বিদিশা। গত দুটো দিন যেন ঝড়ের মতো বয়ে গিয়েছে তার জীবনে। শুভ্রর জন্মদিনের দিন সে গিয়েছিল শুভ্রদের বাড়িতে শুভ্রর রাগ ভাঙ্গাবে বলে।
তার নিজের শরীরটুকু সম্পূর্ণ ভাবে শুভ্রর বাবা শান্তনু কে দিয়ে ফিরে এসেছে সে। শান্তনুকে এ্যাদ্দিন ধরে দেখছে সে, তার দিকে নানা ভাবে তাকাতে দেখেছে শান্তনুকে, শুভ্রকে বলতে গিয়ে একবার দুবার প্রচণ্ড তিরস্কার শুনেছে সে। শ্যামলীদেবীর হাবে ভাবে হয়তো ধরা পড়ত কখনো কখনো যে তিনি এটা খুব একটা ভালো ভাবে গ্রহণ করতেন না কিন্তু সেরকম স্পষ্ট কোন প্রতিবাদও তিনি জানাননি কখনো।
কিন্তু যেটা বিদিশা কোনদিন বুঝতেই পারেনি, সেই রাত্রের আগে, সেটা হল শান্তনুর এধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ রকমসকম তার মনকেও বিচলিত করেছিল যথেষ্ট মাত্রায়। তাই সেদিন যখন শুভ্র বা কাকিমা কেউ ছিল না তখন কাকুর ওই নিষিদ্ধ আদর… না কাকু নয়, শান্তনুর ওই আদর ওই পাগলামি তাকে উরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কোন অজানা সুখের সৈকতে।…
ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে আসে বিদিশার, আর আজ সে নেই। সেই লোকটা, তার সেই নিষিদ্ধ প্রেমিক যার হাতে জীবনের সবচেয়ে দামি জিনিসটা সে তুলে দিয়ে এলো, তার কৌমার্য, সে আজ আর নেই। পরদিন তুলিকাদের সাথে সিনেমা দেখে ফিরে এসে ঘটনাটা শুনে আর বাড়িতে থাকতে পারেনা বিদিশা।
বাড়িতে মায়ের চোখের সামনে থাকলে ঠিক ধরা পড়ে যাবে সে। তার মনে যেরকম নানা অনুভুতির ঝড় উঠতে থাকে তাতে বান্ধবী তুলিকার বাড়ি চলে যাওয়াই সবথেকে নিরাপদ বলে সে বেছে নেয়। মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওখানে গিয়ে একটা ফোন করে বলে দেবে রাতে ফিরবে না…
রঙিন পর্দার চলচ্চিত্রের মত ঘটনাগুলো পুনরায় ভেসে ওঠে একাকিনী বিদিশার ভাসা ভাসা দুটি চোখে। রাত্রে তুলিকা তাকে আদর দিয়ে আশ্রয় দিল, সেও আদর করলো তুলিকাকে। আজ সকালে সে বাড়ি এসেছে, এসেই শুভ্রর ফোন…
“দিশা এদিকে আয় তোর ফোন,” মায়ের গলার আওয়াজ। মা আজ কালকের থেকে অনেক সুস্থ বোধ করছেন। কাল বিদিশার মায়ের মন ভেঙে গিয়েছিল জলজ্যান্ত মানুষ একজনের মৃত্যু সংবাদে।
“নে কথা বল, শুভ্র ফোন করেছে”, বলে জননী মেয়েকে টেলিফোনে এগিয়ে দিলেন।
বিদিশার বুকের মধ্যে কি যেন একটা কেঁপে উঠল। সে তো ঠকিয়েছে শুভ্রকে। কিন্তু কি করে সে বোঝাবে শান্তনুর ভালবাসায় সেদিন কি ছিল, কি করে সে বলবে যে ভালো সে শুভ্রকেই বাসে কিন্তু শরীরের প্রেম শিখিয়েছে তাকে শান্তনু?
কি করে সে বলবে শিল্পী শান্তনু শুধু তার শরীরের ক্যানভাসে সুখের ছবি এঁকেছে কিন্তু মনের ক্যানভাসে একমাত্র শুভ্রকেই রেখেছে সে। সে তো নিজেই বোঝে না তার মন আর শরীরের এই টানাপড়েন, শুভ্রকে কি বা বোঝাবে সে!
“হ্যাঁ বল”, কোনরকমে গলা থেকে স্বর বের করলো সে।
ওদিক থেকে শুভ্র বলেছিল, “আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি আসছিস তো? মায়ের ভালো লাগবে তুই এলে।”
কলেজের জন্যে রেডি হয়ে সে বসে আছে বিছানায়। পড়নে হলুদ রঙের স্কার্ট আর একটা সাদা কুর্তি। কলেজ থেকে শুভ্রদের বাড়ি যেতে হবে, বেশী রঙচঙে পোশাক ইচ্ছে করেই পরেনি। নইলে রঙিন জামাকাপড় পড়তে বিদিশা খুবই ভালবাসে। নিষ্প্রাণ হয়ে থাকা ওর একদম পছন্দ নয়। খুব হাসিখুসি থাকতেই ও ভালবাসত। কিন্তু এই কয়েকদিনের ঘটনাবলীতে যেন উচ্ছল প্রাণবন্ত বিদিশা সন্ধ্যেবেলার মল্লিকাফুলের মতো ঝিমিয়ে পড়েছিল।
“এই নে দিশা, ঠাকুরের ফোঁটাটা নিয়ে নে কপালে, শোকের বাড়িতে যাবি, শান্ত হয়ে থাকবি মা, আর তাড়াতাড়ি ফিরবি।” জননী ঠাকুর পুজোর থালা নিয়ে মেয়ের ঘরে এসে ঢুকলেন।
সকাল থেকেই তার মন যেন কেমন কুডাক ডাকছে। মন থেকে একদম চাইছে না, কেন জানি, বিদিশা কলেজ থেকে শুভ্রদের বাড়ি যাক।
“বাড়ি ফিরে তো যেতে পারতি মা, তাহলে আমিও যেতাম তোর সঙ্গে?” এই নিয়ে এই কথাটা শুভ্রর ফোন আসবার পর থেকে বারকয়েক বলেছেন তিনি।
“মা, তুমি এমনিতেই এসমস্ত নিতে পারনা, তার মধ্যে ওইখানে আর যেতে হবে না তোমাকে। কাল ফোনে খবর পেয়েই তুমি যেমন করছিলে…”, বিদিশা বেশ মুরুব্বির মত মা’কে সামলাতে থাকে।
মনে মনে ভালো লাগে মাতৃদেবীর। মেয়ের এই আন্তরিকতা তার মনকে ছুঁয়ে যায়।
“ঠিক আছে বাবা, সাবধানে যাস, আর শুভ্রকে বলিস কিছুটা এগিয়ে দিয়ে যেতে…”
বিদিশা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
“দুর্গা দুর্গা”, ধ্বনিত হয় পেছনে…
“কি কিছু বলবে?”, শ্যামলীদেবী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন দুয়ারে দণ্ডায়মান ছায়ামূর্তির দিকে। দরজার ওপারের আলো আর ঘরের ভেতরের অন্ধকারের মাঝে পর্দার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে হারান।
“না, বউমণি… তুমি… তুমি এবেলা কিছু খেয়ে নাও বউমণি ওবেলা অত লোক এলো। দুপুরের খাওয়া ঠিকমত হল না, দাদাবাবু সেই যে গেল এখনো ফিরল না, তুমি একটু জলখাবার খেয়ে নাও”, হারান থেমে থেমে বলল কথাগুলো।
বিয়ের পর থেকেই শ্যামলী দেখছে, হারান খুব চাপা স্বভাবের, পাছে ওর মনের ভাব কেউ বুঝে ফেলে এইরকম ভাবে নিজেকে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখে, অথচ সংসারে এই মানুষটি শ্যামলীর জন্যে কতখানি ভাবে তা শ্যামলী ছোটখাটো অনেক কাজের মাধ্যমেই টের পান। তবু ওর পূর্ণমাত্রায় প্রচেষ্টা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই এই শুভার্থীর ভুমিকা পালন করে যাবার।
শ্যামলী মনে মনে হাসে। বিয়ে যখন তার হয়, তখন সে ছিপছিপে তন্বী, আর হারান তখন সবে সবে কাজে নিযুক্ত হয়েছে, কাঁচা বয়স। মনে মনে যে তার প্রতি একটা টান তৈরি হয় এটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু হারান চেষ্টা করত এটা লুকিয়ে রাখার।
“এখন কিছু খাব না হারান, মাথাটা বড্ড ধরেছে, তুমি দুয়ারটাও একটু টেনে দিয়ে যেও…”, বলে পাশ ফিরলেন শ্যামলী।
সংসারের নানা সুখ দুঃখ কাঁধে বইতে বইতে ক্লান্তি এসে ঘিরেছে শরীরের কোনায় কোনায়। একদিন যেই কোমরে ভরভরন্ত যৌবন উছলে পড়ত আজ সেখানে চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে অকাল বার্ধক্যের, তবু সরু কোমরে এখনো যেন কোথাও একদিনকার সেই রূপ যৌবনের চিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
অকালে বুরিয়ে যাওয়া রূপ যেন লেগে রয়েছে এধার ওধার, গাছে লেগে থাকা ঝিমিয়ে যাওয়া ফুলের মত। ঝরেনি, অথচ তাজাও নয় এমন। সুন্দরের ছায়া অথচ স্বতেজ নয়। এক ফুঁয়ে যেন পড়ে যাবে, অথচ যত্ন করলে বেঁচেও যেতে পারে এমন একটা ভাব।…
শ্যামলী অনুভব করল, ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো হারান। মাথার কাছে একটা টুলে বসলো সে। শ্যামলী শ্বাস টেনে রাখে, সে অবাক হয়ে ভাবে আজ হারান এত প্রকট আচরণ করছে কেন? সবসময় যার চেষ্টা নিজের সুন্দর সকলের খেয়াল রাখা মূর্তিটাকে ছায়ার মতন লুকিয়ে রাখার সে আজকে কায়াময় হয়ে উঠল কেন? অথচ কিছু বলে তাকে ছোট করতে বা অপ্রস্তুত করে দিতে চায় না শ্যামলী।
মাথার যন্ত্রণা শুনে যদি তার সেবা করতে মনে হয়েই থাকে তো করুক নাহয়। চিরকাল তো এই প্রাণীটি সত্যিকারের সদিচ্ছা নিয়ে তার জন্যে ভেবেছে। আর তো কেউ এতটা ভাবেনি কখনো। শাশুড়ি বেঁচে থাকাকালীন রান্নাঘরের কাজ করবার সময় সকলের নজর এড়িয়ে তাকে সাহায্য করে দিয়েছে চুপিসারে। এমনকি তার সাথেও কোন কথা বলেনি সেরকম।
একবার শুভ্রর জন্মদিনে তার জামশেদপুরের ননদ ননদাই এসেছিল। শান্তনুর অনেক আত্মীয়স্বজন, পরিবার, পরিজনে সেবার ঘর ভরেছিল দিন কয়েকের জন্যে।
তার ছোট ননদ তাকে সকলের সামনে খেপিয়ে বলেছিল, “দিদিভাই আবার আমার ননীর পুতুল, দাদা তুলি দিয়ে বানিয়েছে তো, তাই অতজনের রান্না করতে পারেননা, শুভ্রর জন্মদিনে তাই দোকান থেকে খাবার আনাচ্চে, না দিদিভাই?”