Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
                             চতুর্দশ পর্ব

শ্মশানের পাশে নদীতে সদ্য ভস্মীভূত করা দেহাবশেষ ভাসিয়ে দিচ্ছে বিদিশা, কিন্তু তার চোখে জলের বদলে আগুন জ্বলছে, একটু দূরে ঘাটের উপরে দাঁড়িয়ে আছে এআরসি, রকির গোডাউন থেকে অনিমেষ বাবুর মৃতদেহটা নিয়ে সটান মিসেস দাশগুপ্তর হাসপাতালে গিয়েছিল, তিনি যতটা সম্ভব গোপনে ফর্মালিটি সারেন তারপর শ্মশানে এসে দেহ জ্বালানো আর এখন অস্থি বিসর্জন, যদিও এগুলো মৃতের ছেলের করার কথা কিন্তু এইমুহূর্তেয়অনিমেষ বাবুর পরিবারে একমাত্র মেয়ে বিদিশা কাছে আছে বলে সেই করলো, পুরো সময়টায় একটা কথাও বলেনি সে।
অস্থি বিসর্জন হয়ে গেলে বিদিশা জলে ডুব দেয় তারপর বাকি আচার অনুষ্ঠান সারে, এরপর এআরসিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে হনহন করে কোথাও যেতে থাকে। রয় ওরফে এআরসি তার পিছু নেয় "বিদিশা শোনো কোথায় যাচ্ছো?" কিন্তু বিদিশা উত্তরের বদলে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়, পিছনে রয় একটু দৌড়ে তার একটা হাত ধরে সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নেয় বিদিশা তারপর তেজের সঙ্গে রয়কে বলতে থাকে "কোন অধিকারে তুমি আমার হাত ধরেছো? আজ আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন শুধু তোমার জন্য, যতদিন তুমি আমার জীবনে আসোনি ততদিন সব ঠিক ছিল"।
রয় চুপ করে সব অভিযোগ মেনে নিতে থাকে, বিদিশা বলে চলে "কেন এলে তুমি আমার জীবনে? 
বিদিশা শান্ত হ‌ও আমি সব বলছি।
আমি আর তোমার কোনো কথা শুনবো না, আমি এখনই যাবো আর ওই রকি আর বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো। বলে বিদিশা আবার এগিয়ে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রয় তার হাতটা ধরে টেনে নেয় বলে "বিদিশা শান্ত হয়ে আমার কথা শোনো"।
কেন শুনবো তোমার কথা, কে তুমি? কখনো রয় কখনো এআরসি, কি তোমার আসল পরিচয়?"
আমি যেই হ‌ই তোমার বন্ধু।
আমি বিশ্বাস করি না, তুমিই বলতে না তোমার মধ্যে তো কোনো ইমোশন নেই, আমি বুঝতে পারছি তুমি শুধু আমাকে ইউজ করেছো, আর আজ তার পরিণাম আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে, আর এবার আমি ওদের মারবো।
হ্যাঁ আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে রয়, তুমি যেতে চাও তবে যাও,  কি ভেবেছো তুমি বীরেন ভট্টাচার্য এখন তোমাকে স্বাগত জানাবে যে আসো বৌমা আমাকে মেরে যাও, তোমাকে দেখতেই গুলি করে মারবে।
বিদিশা এবার চুপ করে রয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, রয় বলে চলে "কি জানো তুমি আমার সম্বন্ধে? তুমি শুধু আমার বাইরেটা দেখেছো ,ভিতরটা না, মানছি যে হয়তো আমার জন্য আজ তোমার বাবা নেই কিন্তু ভেবে দেখো তুমি যেটাকে জীবন বলে মেনে নিয়েছিলে সেই জীবন কি তোমার বাবা তোমাকে দিতে চেয়েছিলেন? না, উনি নিশ্চয়ই দিনরাত তোমার জন্য কষ্ট পেতেন, আর যে কষ্টটা তুমি আজ পাচ্ছো, আমি সেটা ষোলো বছর আগে ভোগ করেছি আজ‌ও করে চলেছি, আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই কারণ সেটাকে ষোলো বছর আগে শেষ করেছে ওই বীরেন ভট্টাচার্য, আমার বাবাকেও আমার চোখের সামনে গুলি করে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক, আমার চোখের সামনে আমার বাবা মারা যান তুমি তাও প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছো, আজ এখানে নির্ভয়ে তোমার বাবার সৎকার করছো কিন্তু তখন আমি প্রতিশোধের ভাবনা তো দূরের কথা বাবার অন্তিম কাজ কিভাবে শেষ করে মাকে নিয়ে সুরক্ষিত পালিয়ে যাবো সেই চিন্তা করছি কারণ তখন‌ও আমাদের পিছনে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক পাগলা কুকুরের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
কে তুমি, কি হয়েছিল তোমার সাথে? বিদিশার স্বর এখন অনেকটাই শান্ত। দুজনে গিয়ে ঘাটের নির্জন এলাকায় গিয়ে বসে তারপর রয় শুরু করে তার কাহিনী, তার অতীতের কাহিনী যেটা সে এতদিন কারো কাছে প্রকাশ করেনি ,
আমার যে দুটো নাম তুমি জানো সেগুলো নকল নয় আমার আসল নামের সাঙ্কেতিক প্রতিরূপ, আমার আসল নাম অভয় রায় চৌধুরী, আমি এই শহরেই থাকতাম আমার বাবা আর মায়ের সাথে। ওই যে জমিতে এখন বীরেন ভট্টাচার্য তার হেড অফিস খুলেছে যেখান থেকে ও এখন ওর সমস্ত লিগ্যাল- ইল্লিগ্যাল বিজনেস অপারেট করে সেটা আমাদের ছিল, খুব সুখেই আমরা তিনজন, আর্থিক স্বচ্ছলতা হয়তো তেমন ছিল না কিন্তু জীবনে সুখ ছিল, আনন্দ ছিল। ভেবেছিলাম এরকম সুখে আনন্দে সারা জীবনটা কেটে যাবে আমি মা বাবা আর...
আর?? রয় থামতেই প্রশ্নটা করে বিদিশা, তার কণ্ঠে তখন রাগের বদলে উৎসুকতা, সে বুঝতে পারলো রয় কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রয় আবার শুরু করে,
কিন্তু আমাদের সেই আনন্দের জীবনে কুদৃষ্টি দিল বীরেন ভট্টাচার্য, তার নজর পরলো আমাদের জমিটার উপর সেখানে সে প্রোমোটিং করতে চায়, কিন্তু আমার বাবা তাকে জমি দিল না, ওই জমিটা যে শুধু আমার বাবা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিনেছিলেন তাই নয় ওই জমিতে আমার মা নিজের হাতে অনেক গাছ লাগিয়ে বাগান করেছিলেন ওই জমিটা আমাদের কাছে সাক্ষাৎ স্বর্গ ছিল, কিন্তু ওই জমিটা তাকে না দেওয়ায় বীরেন ভট্টাচার্য রেগে গেল, অথচ সে বাবাকে বেশি কিছু বলতে বা করতে পারছিল না কারন এলাকায় ভালো পরোপকারী মানুষ হিসেবে আমার বাবার খুব সুনাম ছিল, সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসতো, তারপর একসময় ইলেকশনে বাবাকে দাঁড় করানোর অফার করেন এলাকার নেতারা যদিও আমার বাবা বারন।করেছিলেন কিন্তু এতে বীরেন ভট্টাচার্যের আক্রোশ চরমে পৌঁছায়, সে ঠিক করে আমাদের শেষ করে দেবে, এলাকায় এমন অনেক লোক ছিল যারা পেটের দায়ে বীরেন ভট্টাচার্যের চাকরি করলেও আমার বাবার, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তারা বাবাকে সাবধান করেন, যদিও আমার বাবা এতটাই ভালো মনের মানুষ ছিলেন যে কেউ যে তার এত বড়ো ক্ষতি করতে চাইবে এটা বিশ্বাস করেননি, একরাতে আমার বাবা মা ঘুমিয়ে পরলেও একটা বিশেষ কারণে আমি ঘুমাইনি, গভীর রাতে হটাৎ আমার কানে কিছু আওয়াজ আছে আর সাথে একটা গন্ধ পেট্রোলের গন্ধ আর সেটা বাইরে থেকে আমাদের ঘরে ছেটানো হচ্ছে একটু পরেই আমাদের স্বর্গে আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু আগুন লাগানোর কিছু আগেই বাবার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু ফোন করে আমাদের সতর্ক করে দেন ফলে আমরা আগুন লাগার একটু আগেই আমাদের বাড়ির পিছন দিকের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাই, কিন্তু দুর্ভাগ্য কি জানো? বীরেন ভট্টাচার্যের দলে এমন একজন ছিল যে আমাদের আত্মীয় আমার পিসেমশাই তিনি জানতেন আমাদের বাড়ির পিছনের এই দরজার কথা আর তিনি বীরেন ভট্টাচার্য কে সেটার কথা বলে দেন, ফলে আমরা আগুন থেকে বেঁচে গেলেও বীরেন ভট্টাচার্যের হাত থেকে বাঁচতে পারি না, তারা বুঝতে পারে যে আমরা আগুনে মরিনি তখন তারা আমাদের তাড়া করে।
তারপর? রয় আবার একটু থামতেই প্রশ্ন করে বিদিশা, রয় আবার শুরু করে,
আমার বাবার সেই বন্ধু একটা অটো জোগাড় করে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাতে উঠে আমরা পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারি সেটা সম্ভব নয় কারণ পিছনে আরো দ্রুত গতির গাড়িতে ওরা তাড়া করছে, তখন বাবার সেই বন্ধু আমাদের বাঁচানোর জন্য আমাদের একজায়গায় নামিয়ে নিজে অন্য দিকে অটো নিয়ে গিয়ে বীরেন ভট্টাচার্যের লোকদের ডিস্ট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করেন, এদিকে আমরা অন্য পথে যত দ্রুত পালাতে থাকি, কিন্তু বেশিদূর যাবার আগেই একটা অস্পষ্ট আর্তনাদ ভেসে আসে বাবার বন্ধুর মরণ আর্তনাদ। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার আমাদের পিছু নেয় একটু পরেই পিছন থেকে একটা বুলেট আমার বাবার পিঠে এসে লাগে, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি সেটা বীরেন ভট্টাচার্য চালিয়েছে, আমাদের সৌভাগ্য যে যে রাস্তায় আমরা যাচ্ছিলাম সেখানে একটু দূরেই একটা রেললাইনের ক্রসিং ছিল, আর সেখানে পাশাপাশি দুটো লাইনের একটায় একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, আমরা মানে আমি আর মা কোনোমতে বাবাকে নিয়ে.. প্রথম লাইনটা পার করে ওটাতে উঠলাম কিন্তু ওরা লাইনটা পার করার আগেই সেই লাইনে একটা ট্রেন চলে আসে ফলে ওদের কিছুটা দেরী হয়ে যায়, এদিকে আমার বাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট দরকার, তাই কয়েকটা স্টেশনে পার করে একটা জংশনে নামি, বাবার অবস্থা তখন আরও খারাপ অনেক রক্ত বয়ে গেছে, কোনো মতে একটা ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পৌঁছাই, সেখানে এক লেডি ডাক্তার প্র্যাকটিস করতেন, তিনি ওই চেম্বারেই থাকা নূন্যতম সার্জারি কিট দিয়ে বাবার সার্জারি করেন, বুলেটটা বার করলেও বাবা....
বিদিশা লক্ষ্য করে রয়ের চোখ থেকে জল পড়ছে, সে সত্যিই অবাক হয় সে ভাবতেও পারে না যে এই ছেলেটা কাঁদতেও জানে, সে বলে: তারপর কি করলে?
ওই ডাক্তার মহিলা আর ওনার স্বামী আমাদের পাশে দাঁড়ান, বাবার অন্তিম কাজটা পূরণ করি, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি যে তখনও আমাদের পিছনে পাগলা কুকুর তাড়া করছে, আমার বাবা বা মা কোনোদিকেই কোনো আত্মীয় ছিল না, এক ছিল পিসি আর পিসেমশাই যারা আমাদের মারার জন্য বীরেন ভট্টাচার্যকে সাহায্য করছে,  আমার মা তখনও বাবার শোক কাটাতে পারেননি, আমি ভালো করে কাঁদতেও পারিনি কারণ তখন আমার মাথায় ঘুরছে বাবার শেষ কথা "মাকে দেখিস বাবু", তাই কোনোমতে মাকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলাম ওই ডাক্তার দম্পতি সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু যাবো কোথায়? রাজ্য ছেড়েই চলে গেলাম, সেখানে গিয়ে আবার বাঁচার নতুন সংগ্ৰাম শুরু হলো ততদিনে অভয় মরে গেছে জন্ম নিয়েছে রয়... আর তার অনেক বছর পরে এআরসি।
আয়্যাম সরি, বিদিশার গলা এখন পুরো শান্ত। রয় বলে: আমি তোমাকে সত্যিই ইউজ করবো ভেবেছিলাম কিন্তু যতদিন গেল বুঝলাম তুমিও আমার মতো ওদের অত্যাচারের শিকার তখন আর পারিনি তোমাকে ইউজ করতে, আমি জানি আমাকে বিশ্বাস করা তোমার পক্ষে কঠিন কিন্তু তাও আমি বলছি তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি থাকবো তোমার পাশে একজন বন্ধু হয়ে, কিন্তু এখন যদি তুমি যাও তাহলে মারা পরবে, আর সেটা হলে তোমার প্রতিশোধ তো পূরণ হবেই না তোমার লয়্যার হ‌ওয়াও হবে না, তুমিই বলেছিলে না যে ওটা শুধু তোমার নয় তোমার বাবার‌ও স্বপ্ন ছিল, সেটা পূরণ করবে না?
আয়্যাম সরি রয়, আমি বুঝতে পারিনি যে.. তোমাকে দেখে কখনো বোঝা যায়নি যে তোমার...
আমার অতীত এরকম?
হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তখন কি একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলে?
ওটা আমার নিজস্ব, ওটা আমি কাউকে বলিনি ওটা আমার নিজের‌ই থাক।

বিদিশাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই অমৃতাদেবী হামলে পড়লেন ছেলের উপর "কোথায় গিয়েছিলি তুই? আর.." এটুকু বলে বিদিশার দিকে তাকালেন।
মাসি ওকে ভিতরে নিয়ে যাও আর তোমার একটা শাড়ি দাও ওকে পরতে আমি পরে ওর জন্য ড্রেস এনে দেবো আর কিছু খেতে দাও। তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে রয় বলে: যাও ভিতরে গিয়ে চেঞ্জ করে রেস্ট নাও।
বিদিশা ভিতরে চলে যেতেই মায়ের ৎজিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে পরলো। "তুমি যেটা ভাবছো সেটা একদমই নয়, ও আমার বন্ধু আমাকে অনেক কাজে হেল্প করেছে আর আজ ওর চোখের সামনে ওর বাবাকে... বাইরে থাকলে ওকেও মেরে দেবে তাই এখানে নিয়ে এসেছি" মাকে কথাটা বলেই বাইরে এসে বাগানে রাখা একটা বেতের মোড়ায় বসে, সামনে আমির।
কি হয়েছিল? জিজ্ঞেস করে আমির। একে একে সবকথা তাকে বলে রয়, শেষে বলে "যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আমির, তুমি চাইলে বাণিজ্যনগরী ফিরে যেতে পারো"
হটাৎ একথা কেন বলছো?
বললাম যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, এবার খালি আঘাত-প্রত্যাঘাত হবে।
তাহলে তুমিও জেনে রাখো এই আমির তোমার সাথে সারাজীবন থাকবে, সব পরিস্থিতিতে থাকবে। দুজনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে এই সময় একজন এসে বলে "দাদা, একটা ছেলে আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে"।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে রয় জিজ্ঞেস করে "কি নাম?"
নাম.... অমিয় বললো। নামটা শুনে মোবাইল ঘাটা বন্ধ করে সামনে তাকায় রয়।
এই ছেলেটাই বোধহয় আগে একদিন এসেছিল, একা এসেছে?
হ্যাঁ, ভাইজান।
দেখা করবে তুমি?
না।
তুমি চেনো ওকে?
হ্যাঁ।
তাহলে দেখা করে নাও।
না, আমির তুমি যাও আর ওকে বলে দাও ও যেন আর এখানে না আসে।
একথা কেন বলছো? এই বস্তির উপর বীরেন ভট্টাচার্যের নজর আছে, বিদিশা এখানে ঘনঘন আসতো তাই বিপদে পড়েছিল ও বারবার এলে ওকেও বিপদে পরতে হবে।
ঠিক আছে যাচ্ছি কিন্তু তুমি নিজে ওর সাথে দেখা করলে।
আমি পরে দেখা করে নেবো।

আজ আবার বস্তিতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় অমিয়, তাথৈ বারবার বলছে যে অভয় বেঁচে আছে আর এই বস্তিতেই থাকে, কিন্তু কথাটা বিশ্বাস হয় না অমিয়‌র তাই আবার সে একাই চলে এসেছে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে আজ সে ঠিক করেছে যাকে তাথৈ অভয় বলে ভাবছে তার সাথে দেখা না করে যাবে না, এই সময় সেই আগের দিনের দেখা ছেলেটা এসে বললো: আপনি আবার কেন এসেছেন?
অমিয় বলে: আপনি জানেন আমি কেন এসেছি, আমার প্রিয় বন্ধু এখানে থাকে বলে শুনেছি আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি।
কিন্তু তিনি এখন ব্যস্ত।
প্লিজ ওনাকে একবার বলুন যে
আপনি এখান থেকে চলে যান, আর কখনো এখানে আসবেন না
কিন্তু.
কোনো কিন্তু নয়, আপনি চলে যান।
বাধ্য হয়েই অমিয় ফিরতি পথ ধরে, একটু দূরে আড়াল থেকে সবটাই দেখছিল অভয় সে স্বগোতোক্তি করে "আমাকে ক্ষমা করিস ভাই অমিয় কিন্তু এই মুহূর্তে আমি তোর সামনে যেতে পারবো না, এতে তোর‌ই বিপদ বাড়বে, আমার কাজ শেষ হলে আমি নিজে তোর কাছে যাবো।

রাতে নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে চিন্তা করছে তাথৈ যে এবার সে কি করবে? অমিয় জানিয়েছে তাকে ওই বস্তি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে, বলাইবাহুল্য ওকেও আর ঢুকতে দেওয়া হবে না, এদিকে ক্রমাগত মিস্টার গুপ্তকে ফোনে না পেয়ে সে ওনার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে কিছুদিন আগে এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে ওনার মৃত্যু হয়েছে, যদিও কয়েকজন বললো মৃত্যুটা নাকি সন্দেহজনক। বাড়িতে সবার মুখ গম্ভীর, সে জানতে পেরেছে ওই অতীন সান্যাল মারা গেছে আর তার বৌদি বেপাত্তা, জ্যেঠুমণি আর তার বাপি সবসময় রেগে আছে বাড়িটায় সবসময় একটা থমথমে ভাব। সে ভাবতে থাকে কিভাবে সত্যিটা জানা যায়, একটা সত্যি সে জেনেছে এবার বাকিটা কিন্তু জানবে কার থেকে?
তাথৈ? সরমা দেবী ঘরে ঢুকলেন সাথে আরও একজন মহিলা বয়স সরমা দেবীর থেকে একটু বেশী একটু পৃথুলা এনারো গায়ের রং ফর্সা তবে সরমা দেবীর মতো নয় ইনি শেফালী ভট্টাচার্য বীরেন ভট্টাচার্যের স্ত্রী এবং বৃষ্টির মা।
আসো মা, আরে জ্যেঠিমা আসো।
কি করছিস তুই? জিজ্ঞেস করেন সরমা দেবী।
কিছুনা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, সেগুলোই চিন্তা করছিলাম।
তুই কোনো পরীক্ষা দিচ্ছিস নাকি? প্রশ্নটা করেন শেফালী দেবী।
দিচ্ছি তবে জীবনের পরীক্ষা।
মানে।
কিছুনা তোমরা বলো, কোনো দরকার ছিল?
কেন দরকার ছাড়া আসা যায় না?
সেটা নয়, আসলে এখন হটাৎ আমার রুমে তাই..
একটা কথা জানার ছিল। বলেন শেফালী দেবী।
কি?
বৃষ্টির কি হয়েছে রে? কয়েকদিন থেকে দেখছি মেয়েটা একদম চুপ মেরে গেছে।
ও কিছুনা সামান্য ব্যাপার একটা কয়েকদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
সামান্য ব্যাপার? কিন্তু ব্যাপারটা কি?
তাথৈ বলতে ইতস্তত করছে দেখে এবার সরমা দেবী জিজ্ঞেস করেন: কি হয়েছে বৃষ্টির?
একজন ওর ইগো ওর অহংকারে আঘাত করেছে।
মানে?
তাথৈ বৃষ্টি আর অমিয়র ব্যাপারটা সব বলে এমনকি কলেজে থাকতে বৃষ্টির ওকে রিফিউজ থেকে এখন বৃষ্টির ওকে প্রপোজ আর অমিয়র রিফিউজ অব্দি।
এই ছেলেটা কেমন? সব শুনে প্রশ্ন করেন শেফালী দেবী।
যে ছেলে তোমার মেয়ের মুখের উপর তার প্রপোজাল রিফিউজ করতে পারে, যে তোমার মেয়ের মুখের উপর বলতে পারে আমি আপনার যোগ্য ন‌ই কারণ আপনি টাকা আর নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারেন না, যে বলতে পারে আপনাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম আপনি রিফিউজ করায় আমার জীবন বেঁচে গেছে সেই ছেলে কেমন ভেবে দেখো।
সত্যি আমার মেয়েটা পুরো ওর বাবা আর পিসির মতো কেন হলো কে জানে?
সত্যি জ্যেঠিমা ওর ইগো প্রচণ্ড।
ওই ছেলেটার সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবি?
কেন?
বলতাম যে আমার মেয়েটাকে যদি..
কোনো লাভ নেই, ও আমাদের পছন্দ করে না।
কেন?
বৃষ্টি আর পিসি মিলে একজনের সাথে খুব অন্যায় ব্যবহার করেছে।
তুই কি রুদ্রবাবুর ছেলের কথা বলছিস, যে তোকে..
হ্যাঁ, অভয়, অভয় ওর খুব ভালো বন্ধু ছিল।
কি অবস্থা পাপ করলো বড়োরা আর শাস্তি পাচ্ছে মেয়েদুটো।
কখনো কখনো ইচ্ছা করে এই বাড়ির সবার..
দিদি... শেফালী দেবী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সরমা দেবী আটকালেন।
তাথৈ বুঝলো তার জ্যেঠিমা কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন কিন্তু সে তখন আর পীড়াপীড়ি করলো না কারণ তার মা তাকে বলতে দেবেন না। সে জানে আজ রাতে জ্যেঠিমা একা থাকবেন জ্যেঠুমণি বলে গেছেন তিনি ফিরবেন না, সে অপেক্ষা করতে থাকে, রাতে সবাই যে যার নিজের ঘরে গেলে তাথৈ আস্তে আস্তে জ্যেঠিমার ঘরে যায়, অতো রাতে তাকে দেখে কিছুটা আশ্চর্য হন শেফালী দেবী।
কিছু বলবি তাথৈ?
হ্যাঁ, আমি কিছু জানতে চাই।
কি?
তখন তুমি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলে সেটা কি?।
শেফালী দেবীর বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়, তিনি একটা ঢোঁক গিলে কোনোমতে বলেন: ক‌ই কিছু না তো।
তাথৈ এগিয়ে এসে জ্যেঠিমার দুটোহাত শক্ত করে ধরে তারপর বলে: জ্যেঠিমা প্লিজ বলো, এই বাড়ির লোকেরা কি সত্যিই ভালো নাকি ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘোরে?
চুপ কর তাথৈ, তোর পিসি বাড়িতে আছে, সে শুনতে পেলে সর্বনাশ হবে।
তাহলে বলো।
কি?
ষোলো বছর আগে আমাকে হটাৎ করে এই শহর থেকে দূরে সরানো হলো কেন? শুধু পড়াশোনা কারণ নয় এটা আমি জানি।
শেফালী দেবী একটা বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকেন: যাতে তুই ওই ছেলেটার সাথে মেলামেশা না করতে পারিস।
আমি খবর নিয়েছি ওদের বাড়িতে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যার ফলে ওরা সবাই মারা যায়, এতে কি কারো হাত ছিল?
শেফালী দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন তারপর বলেন কোনো দুর্ঘটনা হয়নি, ওটাকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছিল।
মানে?
রুদ্রবাবু মানে ওই ছেলেটা কি যেন নাম অভয়, ওর বাবার সাথে তোর জ্যেঠুর একটু ঝামেলা ছিল ওদের জমিটা তোর জ্যেঠু্ চাইছিলেন কিন্তু রুদ্রবাবু দিতে রাজী হননি এর সাথে এলাকার লোক তাকে বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করে এগুলো তোর জ্যেঠুর সহ্য হয়নি তার উপরে তোর সাথে ওনার ছেলের সম্পর্ক... তোর জ্যেঠুকে তুই কি ভাবিস জানিনা কিন্তু উনি মোটেই ভালো লোক নন, কত লোকের যে সর্বনাশ করেছেন কত লোকের সর্বস্য কেড়ে নিয়েছেন তার হিসাব নেই।
তাথৈ বুঝতে পারে সেদিন কেন অভয় রেগে গিয়েছিল সে বলে: অভয়দের বাড়িতে আগুনটা তাহলে?
তোর জ্যেঠু, বাবা আর ওদের দলের লোকেরা মিলে লাগিয়েছিল, তোর পিসিও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল, উনি‌ই প্রথম বলেন ওদের মেরে ফেলার কথা।
রাত শুয়েও তাথৈএর ঘুম আসেনা তার চোখ থেকে অবিরাম জল পড়েছে, সে বুঝতে পেরেছে অভয়ের কাছে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ তার, সে জানে অভয় তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো আর সেই বাবাকেই.... সে বুঝতে পারে না যে তার এখন কি করা উচিত? একবার কি অভয়ের কাছে যাবে? কিন্তু ও তো এখন দেখা করতেই চায় না, তাহলে কি করবে তাথৈ? কাঁদতে কাঁদতেই অভয়ের ছবিটা হাতে নেয় কোনো কথা বলে না শুধু ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাথৈ ঠিক করে একবার শেষবারের মতো অভয়ের সাথে দেখা করবে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য আগের বার শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে যেতে পারেনি কিন্তু এবার সে অভয়কে বলেই যাবে, তবে শহর ছেড়ে নয় পৃথিবী ছেড়ে।

বেশ কয়েকবার ফোন করেও যখন আমিরের ফোন বন্ধ পেলো তখন দুশ্চিন্তা হলো এআরসি ওরফে রয় ওরফে অভয়ের, এমন তো হবার কথা নয়, সে আমিরকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছে যাতে কোনো অবস্থাতেই আমির ফোন বন্ধ না করে তাহলে ওর ফোন বন্ধ কেন? রাতে ঘুমিয়ে পরলেও ফোন চালু রাখার কথা তাহলে? মাথায় নানা দুশ্চিন্তা আসতে থাকে আমিরের কোনো বিপদ হয়নি তো? যতই হোক এই শহরে এখন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম চলে, আর আমিরের লড়াই নয় এটা ও শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই এখানে থেকে গেছে এখন ওর কিছু হয়ে গেলে অভয় নিজেকে কোনোদিন‌ও ক্ষমা করতে পারবে না।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো, মাহমুদের ফোন এই মাহমুদ উসমানের ছোটো ভাই, কিন্তু এখন ও ফোন করছে কেন? ফোনটা কানে দেয় অভয় "বলো মাহমুদ"
বস আপনি কোথায়? মাহমুদের গলায় ভীতির ছাপ।
কেন কি হয়েছে?
স্যার আপনি এখনই।একটা জায়গায় আসতে পারবেন?
কোথায় আর কেন?
মনে হয় আমির ভাইজানের খুব বিপদ?
হোয়াট? প্রায় গর্জে ওঠে অভয়।
হ্যাঁ বস আজ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে একটা মেয়ের সে আমাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রমাণ আছে, এবং আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করছি সেটা উনি জানেন, তাই প্রমাণটা আমাদের দিতে চান।
মেয়েটা কে আর আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আছি সেটা জানলো কিভাবে?
কে জানিনা বস তবে বললো উনিও বীরেন ভট্টাচার্যের পিছনে পরে আছেন অনেকদিন ধরে, আমাকে বললো যদি প্রমাণ নিতে চান তাহলে বসকে বলবেন এই নাম্বারে ফোন করতে।
তারপর?
তারপর আমি আমির ভাইজানকে বলি ব্যাপারটা উনি ফোন করেন, মেয়েটা টাকা চায়।
আর তোমরা টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরো তাইতো?
মানে হ্যাঁ বস, এখানে এসে আমির ভাইজান আমাকে একটু দূরে অপেক্ষা করতে বলে নিজে একাই যান, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু উনি ফিরলেন না।
ইউ ফুল আর তুমি এটা এতক্ষণ পরে আমাকে জানাচ্ছো? আমাকে ঠিকানটা দাও আমি আসছি আর অন্যদের বলে দিচ্ছি ওখানে পৌঁছে যেতে।
বস আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন, আমি বাকিদের ডেকে নিচ্ছি।
ঠিক আছে, যতক্ষণ না আমরা পোঁছাচ্ছি তুমি নিজের খেয়াল রাখো।
"এমন বোকামি কেন করলে আমির" স্বগোতোক্তি করে দ্রুত গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয় অভয়। মাহমুদের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখে সেখানে একটা পুরনো কারখানা আছে, কিন্তু সে আর কাউকে দেখতে পারে না তবে কি এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি? মাহমুদ কোথায়? ওকেও কি ধরে নিয়েছে নাকি আমির আর মাহমুদকে.. চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে অভয়ের সে দ্রুত পায়ে কারখানার ভিতরে ঢুকে যায় কিন্তু সেখানেও  অন্ধকার শুধু একটু দূরে একটা ঘরে একটা নাইট বাল্ব জ্বলছে বলে মনে হলো অভয় তাড়াতাড়ি ওই ঘরে যায় কিন্তু সেখানেও ফাঁকা, না ফাঁকা নয় সেখানে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মাহমুদ, তাড়াতাড়ি সে মাহমুদের বাধন খুলে তাকে মুক্ত করে "মাহমুদ মাহমুদ, তুমি ঠিক আছো? আমির কোথায়?"
বস্ ভাইজানকে ওরা অন্য ঘরে আটকে রেখেছে মারধর করছে।
কোথায়?
আসুন। বলে কোনোমতে উঠে দাঁড়ায় মাহমুদ তারপর পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে, কিছুদূর গিয়ে একটা বড়ো ফাঁকা ঘরে পৌঁছায় ওরা, হটাৎ পরপর অনেককটা বড়ো লাইট জ্বলে ওঠে তার কয়েকটা সোজা অভয়ের মুখ লক্ষ্য করে এই অপ্রত্যাশিত আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় হখত দিয়ে মুখটা আড়াল করে অভয় এবার হটাৎ তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠে তাকে বিপদের ইঙ্গিত দেয় সঙ্গে সঙ্গে সে কোমরের পিছনে রাখা পিস্তলটা নিতে চায় কিন্তু পারে না সেই মুহূর্তে ঘাড়ের কাছে একটা সুই ফোটার মতো ইঞ্জেকশন ফোঁটে কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝে শুধু আমির নয় সে নিজেও বোকামি করে ফেলেছে, একটা হাত দিয়ে মাহমুদের গলা টিপে ধরতে যায় কিন্তু তখনই পিছন দিকে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে তারপর আর কিছু মনে নেই।

রয়ের বাড়ি থেকে ফিরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার আগেই থামতে হয় আমিরকে শহরের বিলাশবহুল এই অ্যাপার্টমেন্টটা তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে এখান থেকে কিছুটা দূরেই বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ি এখানে বীরেন বাবুর দলের লোকজন যেমন থাকে তেমনি থাকে তাদের দলের লোকজন। গেটের সামনেই তাকে গাড়ি থামাতে হয় কারণ উসমান এসে দাঁড়িয়েছে, আমির গাড়ি থেকে নামে
কি ব্যাপার উসমান, এখন এখানে?
ভাইজান একটা খবর ছিল আপনাকে ফোন করছিলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না তাই নিজে চলে আসতে হলো।
কি খবর?
আমার ভাই মাহমুদ খবরটা এনেছে, ওর সাথে নাকি একজন মেয়ে দেখা করেছে যার কাছে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে, কিন্তু উনি শুধু আমাদের বসকেই দেবেন এদিকে আপনি তো জানেন আমি বসকে একটু ভয় পাই তাই আপনাকে জানালাম।
মেয়েটা কে?
তা জানিনা মেয়েটা পরিচয় দেয়নি, সে বলেছে যদি প্রমাণ নিতে চায় তাহলে যেন গিয়ে দেখা করে।
কি প্রমাণ?
একটা ভিডিও আছে নাকি।
আমির ফোন বার করেছে দেখে উসমান জিজ্ঞেস করে: বসকে ফোন করছেন?
হ্যাঁ।
ভাইজান যদি কিছু মনে না করেন আমি একটা কথা বলি।
বলো।
ভাইজান আগে চলুন আমরা গিয়ে প্রমাণটা হাতিয়ে নি‌ই তারপর নাহয় সোজা বসের ওখানে যাবো, দেরী করলে যদি ওই মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায় বা ধরুন বীরেন ভট্টাচার্য জানতে পেরে গেল তখন তো ওই মেয়েটার জীবন ডেঞ্জার হয়ে যাবে।
আমির একবার উসমানের দিকে তাকায় একটু দোনোমনো করে, রয়কে না জানিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? শেষমেশ বলে: ঠিক আছে চলো গাড়িতে বসো।
তুমি ঠিক জানো মেয়েটা কোথায় আছে? জিজ্ঞেস করে আমির।
মাহমুদ মেয়েটার পিছু নিয়ে দেখে এসেছে, আপনি চলুন।
গাড়ি চালাতে চালাতে আমিরের ফোনে টুং করে ম্যাসেজ ঢোকে, স্টিয়ারিং এ একটা হাত রেখে অপর হাতে মোবাইলটা নিয়ে মেসেজটা দেখে তার দলের বশিরের ম্যাসেজ "ভাইজান সাবধানে থাকুন উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে", ম্যাসেজটা পড়ে আমির পাশে বসা উসমানের দিকে তাকায় সেও সোজা আমিরের দিকে তাকিয়ে আছে কয়েকসেকেণ্ড তারপর হটাৎ চকিতে উসমান কোমরে গোঁজা একটা ছুরি বার করে আমিরকে আঘাত করতে যায় আর আমির বাহাতের কনুই দিয়ে উসমানকে আঘাত করে কিন্তু এর ফলে স্টিয়ারিং এ আমিরের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে যায় গাড়িটা রাস্তার পাশে কেদরে গিয়ে একটা গাছে ধাক্কা মারে দুজনেই সামনে হুমড়ি খেয়ে পরে।
উসমানের হাত থেকে ছুরিটা গাড়িতে নীচে পরে যায়, আমির এই সুযোগে আরো একটা মোক্ষম ঘুষি মারে উসমানের চোয়ালে সে অচেতন হয়ে যায়, আমার এবার গাড়িটা চালানোর চেষ্টা করে কিন্তু বোঝে গাছে ধাক্কা খেয়ে কিছু একটা খারাপ হয়েছে এ গাড়ি এখন চলবে না, সে গাড়ি থেকে নেমে আসে, তার নিজের মাথায় চোট লেগেছে, বুকেও লেগেছে কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই তাড়াতাড়ি আবার গাড়ি থেকে ফোনটা আনতে গিয়ে পায়না, নীচে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই ফোনটা হাতে ঠেকে সেটা নিয়ে বেরিয়ে আসে, রয়কে জানাতে হবে তাড়াতাড়ি রয়কে ফোন করতে গিয়ে থেমে যায় কারণ তখনই আরও একটা গাড়ি এসে থামে এবং সেটা থেকে যারা নামে তারা যে তার বন্ধু নয় এটা দেখেই বুঝতে পারে, আমির উল্টোদিকে দৌড়াতে শুরু করে কিন্তু বেশীদূর যেতে পারে না ধরা পরে যায়, লোকগুলো এবার হামলে পড়ে, আমির একাই ওদের সাথে লড়ার চেষ্টা করে কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক তাই বেশীক্ষণ যুঝতে পারে না আচমকা চোয়ালে একটা মোক্ষম ঘুষি খেয়ে ছিটকে পড়ে, এবার লোকগুলো তার উপর লাথির বর্ষণ করতে থাকে।
একটু পরে চারজন লোক তার দুটো হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়, সে দেখে ইতিমধ্যে উসমানের জ্ঞান ফিরেছে, সে মুচকি হেসে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমির একটু থুতু ফেলে ঘৃণাভরে বলে: উসমান গদ্দার।
কি করবো ভাইজান? বাইরের শহর থেকে এসে আমাদের উপর হুকুম চালাবে এটা কতদিন সহ্য করবো আর তাছাড়া..
তাছাড়া?
সামনে ইলেকশন বীরেন বাবু নিশ্চিত জিতবেন এবং এবার উনি‌ই সিএম হচ্ছেন, উনি কথা দিয়েছেন আমাকে আর আমার ভাইকে ওনার ক্যাবিনেটে কোনো না কোনো পদ দেবেন বলেছেন।
আর তোরা বোকার মতো ওনার কথায় বিশ্বাস করলি? একটু ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসে আমির, এই হাসিতে উসমানের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় সে এগিয়ে এসে আমিরের তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মারে, আর্তনাদ করে ওঠে আমির।
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছিস তবুও তেজ কমেনা তোর?
আমিরের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখা দেয়, তারপর আবার সে বলে: মেরে দে আমাকে কিন্তু তারপর রয় তোদের কি অবস্থা করবে তোরা ভাবতেও পারছিস না।
রয়... তোকে খুব ভালোবাসে না?
নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।
সেইজন্যই তোর বিপদের কথা শুনে তোকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই বীরেন বাবুর জালে ধরা পড়বে, 
কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় আমির, উসমান আবার বলে: ঠিকই শুনছিস তুই আমার ভাই মাহমুদ ওকে তোর বিপদের কথা জানাবে তারপর ওকে নিয়ে সোজা বীরেন বাবুর হাতে তুলে দেবে তারপর যা করার উনি করবেন।
আমির হিংস্র জন্তুর মতো ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়, ওর এই প্রচেষ্টা দেখে উসমান ও বাকি লোকগুলো হাসতে থাকে।
"গদ্দার, নেমকহারাম" আমির ফুঁসতে থাকে রাগে ঘেন্নায়, কিন্তু বেশীক্ষণ নয় আবার তলপেটে কয়েকটা ঘুষি খেয়ে গোঙাতে থাকে।
আচ্ছা ওর নাম কি সত্যিই রয়? কারণ বীরেন বাবু বলছিলেন ওর নাম এআরসি?
আমির চুপ করে থাকে।
বলবি না? ঠিক আছে। যাক অনেক সময় দিয়েছি তোকে এবার তোকে শেষ করতে হবে আরও অনেক কাজ আছে ,বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে।
ওই বস্তির একটা লোকের গায়েও যদি আঁচড়‌ও পরে তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না উসমান।
তাই বুঝি? কিন্তু তুই সেটা করবি কিভাবে? তোকে তো এখানেই মেরে ফেলে যাবো। এবার উসমান পাশের একজনের হাত থেকে পিস্তলটা নেয় তারপর আমিরের বুকের দিকে তাক করে, কিন্তু তবুও আমির ঘৃণাভরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলতে থাকে "আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো।

গভীর জল থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসার মতো অচেতনতার গভীর অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে চেতনার আলোয় ফিরছিল অভয়, ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরলো, চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্ৰত হলো তবুও তাড়াহুড়ো না করে যেভাবে আছে সেইভাবেই র‌ইলো সে, সব ঘটনা একে একে মনে পরলো, বোঝার চেষ্টা করলো বর্তমানে কোথায় আছে সে, কিভাবে আছে, তার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? আরও একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো আমির কোথায়? কি হয়েছে ওর, ওকে কি এরা মেরে ফেলেছে?
কোথায় আছে সে বোঝা মুশকিল, কিন্তু খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে আছে সেটা বুঝতে পারলো, হাত পা চারটে শক্ত দড়ি দিয়ে বাধা আছে, নড়ার উপায় নেই তার উপরে একটু নড়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা,অভয় বুঝলো অজ্ঞান অবস্থায় তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো সে এক বিশেষ সাধনা বা মেডিটেশনে লিপ্ত হলো ওই বন্দী অবস্থাতেই।
তার গুরু শেখর রাও তাকে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন টেকনিকের সাথে একটি বিশেষ গুপ্ত বিদ্যা শিখিয়েছিলেন নিজের মধ্যেই নিজের আরো এক বিকল্প সত্তাকে জাগ্ৰত করার, এই বিশেষ বিদ্যাটি শেখর রাও শিখেছিলেন এক পাহাড়ি উপজাতির লোকের থেকে, এই বিদ্যাটির ফলে দেহ ও মনের শক্তিকে একত্রিত করে তাদের চেতনাকে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়, তখন দেহের আঘাত যত বড়োই হোক সেটা আহত করে না, শেখর রাও নিজে একজন কম্যাণ্ডো প্লাস এজেন্ট ছিলেন অসংখ্য বার তাকে শত্রুর হাতে আটকা পরে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তখন এই বিশেষ বিদ্যাটির সাহায্যে তিনি আঘাত সহ্য করে নিতেন। পরবর্তীকালে তিনি এই বিদ্যাটি সযত্নে শেখান তার যোগ্যতম শিষ্য অভয়কে যদিও এটা এক দুদিনের ব্যাপার নয় দিনের পর দিন অভ্যাস করতে হয়, সাধনা করে যেতে হয় তবে আয়ত্তে আসে। আহমেদ ভাইয়ের দলে থাকার সময় কয়েকবার তাকে এই বিদ্যা প্রয়োগ করতে হয়েছে আর আজ আবার করতে হবে, আঘাত টা সহ্য করতে হবে
হটাৎ মুখে জলের ঝাপটা এসে লাগে অভয়ের, ধীরে ধীরে চোখ খোলে।সামনে কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য, দুপাশে একটু পিছনে রকি আর ধীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবু তার কাছে এগিয়ে আসেন "অবশেষে আমাদের দেখা হলো, মিস্টার এআরসি, দেখুন আপনার শহরে আপনি দেখা করতে আসেননি কিন্তু আমার শহরে আমি এসেছি"।

বি দ্র: দুটো আপডেট দিলাম আশা করছি সবার ভালো লাগবে। ভালো লাগলে সবাই লাইক এবং রেপু দেবেন এই আশা রাখি আর খারাপ ল গলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Monen2000 - 09-10-2022, 12:06 AM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)