Thread Rating:
  • 176 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
#50
[Image: deb4368a-5d46-4057-99f1-3861953ed797.png]
খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজের বুক দুটো।

হাঁসড়া গ্রামটা জনবিচ্ছিন্ন পাহাড়ি একটা ছোট্ট গ্রাম হলেও, এখানকার লোকেদের রাঁচি শহরের সঙ্গে একটা সংযোগ রয়েছে। আর সেটার সংযোগ দূরের একটা খনি এলাকা। খনিটা যদিও বেশি বড় নয়, তবু কাঠ কাটা ছাড়া মুন্ডাদের জীবিকার অন্যতম আশ্রয়। খনি এলাকায় কাজ করে মুন্ডারাই। সারা দিন বড় দুটো ট্রাকে করে কয়লা যায়। মুন্ডাদের প্রয়োজনে ওই ট্রাকে করেই ওরা শহরে যায়। ওই দুটো যানবাহনই হাঁসড়ার মানুষদের বিশ্ব সংসারের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম।

রান্না সেরে হাত মুছে বারান্দায় এসে বসল কাবেরী। কানে এলো ট্রাক দুটো যাওয়ার শব্দ। অনেকটা দূরে বড় রাস্তায় হলেও নির্জন অরণ্যে বেশ গম গম করে শব্দটা জানান দেয়। হেমেন দা আর অসিত বেরিয়েছে সেই সকালে। কাবেরী এই কদিন রান্না-বান্নায় হাত লাগাতে কুন্তীটাও বেশ গা-ছাড়া দিয়েছে। বেলা বাড়তে গরমটা তেতে উঠেছে। ভাগ্যিস এই বাড়িটা বেশ একটা গাছ-গাছালিময় হিমশীতল পরিবেশে, তা নাহলে গা পুড়ে যেত, রোদের দিকে একাকী নেড়া পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে ভাবলো কাবেরী।
বাথরুমের কাঠের দরজায় পুরোনো আমলের লোহার শেকলের খিল। সেটা আটকে আবার তার মধ্যে একটা শঙ্কু আকৃতির হুড়কো ঢুকিয়ে দিতে হয়, তা নাহলে বাইর থেকে টানলেই খুলে যায়। চৌবাচ্চা থেকে জল তুলে স্নান করার এই পদ্ধতিটা বেশ চমকপ্রদ লেগেছে কাবেরীর। মান্ধাতার এই বাথরুমে একটা অস্বচ্ছ বড় আয়না আছে। কাবেরী একদিন ভেবেছিল ওটা পরিষ্কার করে নেবে। কিন্তু পরক্ষণে বাথরুমে ঢুকলে মনে হয়, থাক না। ক'টাতো দিন, এই পুরাতন বাড়িতে চকচকে আয়না বরং বেমানান লাগবে। শাড়িটা গা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পাশে রাখতে গিয়ে দেখল একটা ইঁদুর ছোটাছুটি করছে। একসময় এই ইঁদুর-আরশোলা দেখলে কাবেরী কি ভীষণ ভয় পেত, অরুণাভর তা নিয়ে মজা করার বাড়বাড়ন্তও ছিল বেশ। বয়স বাড়তে বাড়তে কাবেরীর এখন এসবের বালাই নেই। বরং তাতানটা ছোট বেলায় বেশ ভীতু ছিল। একবার অরুণাভদের পুরোনো বাড়িতে একটা ঘরচিতি সাপ ঢুকে পড়েছিল সন্ধ্যা বেলা। তাতান তখন ক্লাস সেভেন, পাপান ক্লাস ফোর। শ্বাশুড়ি মা তখন শয্যাশায়ী, সিঁড়ি ভেঙে নামতে পারতেন না। তাতান ভয়ে চিৎকার জুড়ে সারা ঘর মাথায় তুলতে লাগলো। কাবেরী নিজেই সাপটাকে মেরেছিল লাঠি দিয়ে। অরুণাভ অফিস থেকে ফিরে মৃত সাপটাকে দেখে বলেছিল--দেখেছিস তাতান, তোর মা কত বীরাঙ্গনা দেখেছিস, একটা নির্বিষ সাপকে মেরে ফেলেছে।
সাপটা নির্বিষ; কাবেরী অবশ্য জানতো না। পরে ওই সাপটার জন্য কাবেরীর এমন দুঃখ হয়েছিল, অরুণাভ মন্তব্য করেছিল; খুনের পর আসামীর অনুতাপ করবার মত।
ইঁদুরটা পালাবার পথ না পেয়ে বাথরুমের এক কোনায় ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। কাবেরী চাইলে এখুনি এটাকে শেষ করে ফেলতে পারে, তবু সাপটার কথা মনে পড়ায় কেমন মায়া পড়ে গেল।

ব্লাউজ, ব্রেসিয়ারের হুকটা আলগা করে খুলে ফেলল গা থেকে। ইঁদুরটা তখনও রয়েছে। যেন অনাহুত অতিথির মত তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। বাইরে বেরোনো ছাড়া, বাড়িতে থাকলে ব্রেসিয়ার পরার অভ্যাস নেই কাবেরীর। এখন সারাদিন ব্লাউজের ভিতর এঁটে বসে থাকা বস্ত্রখণ্ডটিকে মুক্তি দিতে পেরে যেন শান্তি হল তার। পেটে মৃদু মাংস, মোটেই দৃষ্টিকটু নয় বরং পরিণত বয়সের মধ্যবয়স্কা মহিলাদের আকর্ষণের এক অনবদ্য জায়গা। শরীরে ইতিউতি মাংস বাড়ায় স্তনও বেড়েছে। খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজের বুক দুটো। সন্তান লালন করতে গিয়ে কখনো দেখা হয়নি তার। কাবেরীর সেই ফর্সা কোমল স্তন, যা দুটি শিশুকে লালন করেছে, এখন চুয়াল্লিশ বছরের বুকে নুইয়ে পড়েছে কিছুটা। বাদামী বৃন্ত দুটি যেন শুকনো মরচে ধরা, ডানদিকেরটা খানিকটা ভেতরে ঢুকে আছে। তবু তার স্তনদ্বয়ের মাংসল পুষ্টতা যেন আবার খরস্রোতা হয়ে উঠবার ক্ষমতা জাহির করছে।

স্নান থেকে বেরিয়ে দেখল কুন্তী এসে পৌঁছেছে। বারান্দায় ঝাঁট দিয়ে তকতকে করে রেখেছে জায়গাটা। হেমেন দার ইজি চেয়ারে বসে রয়েছে একটা আদিবাসী বাচ্চা মেয়ে। একটা ময়লা ফ্রক তার গায়ে। কাবেরী বুঝতে পারলে মেয়েটি কুন্তীর সাথে এসেছে। মুখের আদলেও কুন্তীর মুখটাই যেন কেটে বসানো।
বাচ্চা মেয়েটার চিবুকে হাত দিয়ে কাবেরী জিজ্ঞেস করল---ভারী মিষ্টি মেয়ে তো, কে হয় তোর?
---বইন।
---কী নাম?
মেয়েটা ভয় পেয়ে সিঁধিয়ে গেল কুন্তীর আড়ালে।
কুন্তী নিজেই লাজুক, তবু বোনের ভয় কাটাতে বলল----নাম বইলে দে দিদিমণিকে।
মেয়েটা এবার অস্পষ্ট ভাবে কি একটা বলল কাবেরীর কান অবধি পৌছালো না---শুনতে পেলুম না তো।
অগত্যা কুন্তীকেই বলতে হল--কুশি।
---কুন্তীর বোন কুশি, বাঃ।

কলকাতা থেকে কয়েকটা ফল এনেছিল কাবেরী। এখনো সেগুলো ব্যাগে রয়ে গেছে। ব্যাগ খুলে একটা আপেল এনে দিল কুশির হাতে, আরেকটা কুন্তীকে। মেয়েটা আপেলটা লুফে নিল আনন্দে। কামড় দিয়ে হাসি মুখে তাকালো কাবেরীর দিকে।

এখনও হেমেন দা বা অসিতের আসার নাম নেই। কুশির ভয় কেটে গেছে। কুশির সাথে গল্প করতে লাগলো কাবেরী। কুশির একটা ছোট বোন আছে তার নাম টুনি। কুশির বাবা-মা খনিতে কাজ করে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

হেমেন দা আর অসীম খানিকক্ষনের মধ্যে ফিরল।অসীমের হাতে ধরা একটা জ্যান্ত মোরগ। মোরগটার ডানা ঝাপটানি দেখে ব্যথাতুর হয়ে কাবেরী বলল--এটাকে কোথায় পেলে?
হেমেন দা বললেন---গ্রামের আজ হাটের দিন, এটা পাহাড়িয়া মোরগ। এর স্বাদই আলাদা। কয়েকটা দিন দানা-পানি দিলে, আরো ঝরঝরে হয়ে উঠবে।
----ওমা! এটাকে মেরে ফেলবে?
অসীম হেসে বলল---পুষতেও পারো। বারান্দা জুড়ে নোংরা করবে ছাড়া তেমন কিছু ক্ষতি করবে না।
কাবেরী কথা না বাড়িয়ে বলল---যাও তোমারা স্নান করে এসো, আমি খাবার বাড়ছি।

কাবেরী স্নানে ঢুকলে সারা বাথরুম ফেনিল হয়ে থাকে। অরুণাভ মাঝে মধ্যেই বিরক্ত হয়। অসীম ঢুকে দেখল বাথরুমের ইতিউতি ফেনা। সঙ্গে সাবানের চমকপ্রদ সুগন্ধ। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে কতবার বাথরুমে ঢুকেছে অসীম। ললিতার কাছে যা দাবী করে, ললিতা তা আনুগত্যশীল রমণীর মত পূরণ করে। এইতো কদিন আগে ছেলেটা কলেজে ছিল, অসীমের সেদিন ইউনিভার্সিটি ছুটি। দুজন বাড়িতে নিভৃতে একলা। বাথরুমে নগ্ন হয়ে মেতে উঠেছিল দুজনে। অসীমের গা টা কেমন শিরশির করে উঠল। একটু আগে নিশ্চিত কাবেরী এখানে নগ্ন হয়েছিল, এখনো কাবেরীর গায়ের সাবানের গন্ধ তার বহু প্রত্যাশিত ছাত্রাবয়সের একপেশে প্রেমকে কামনায় রূপান্তরিত করে তুলছে। জাঙ্গিয়াটা খুলে ফেলতেই লজ্জা পেল অসীম। ভাবনার উত্তাল খেলায় তার পুরুষাঙ্গ সাড়া দিয়ে ফেলেছে। এখন সে মধ্য চল্লিশ বয়সী পিতা, ললিতাও সাঁইত্রিশে পা দিল। কাবেরী অসীমের বয়সী। কাবেরীর বড় ছেলে কলেজ পাশ করতে চলল। এই বয়সে এসব! যে অসীম একদিন কাবেরীকে জ্ঞান দিয়েছিল মনে বার্ধক্যকে স্থান না দিতে, সেই অসীমের এখন মনে হচ্ছে মনে পাপ জমছে তার।
+++++++

রাতটা সবে শুরু। কাবেরী নিজের ঘরে আলো জ্বেলে বই পড়ছে। পাপান পছন্দ করে দিয়েছে হিচকক সমগ্র। এসব বই জোর করে পাপানই পড়ায় মা'কে। হেমেন দা বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়লেন। অসীম লেখার টেবিলে ছিল একটু আগে দেখে এসেছে কাবেরী। রান্না ঘর থেকে কুন্তীর বাসন ধোয়ার টুং-টাং শব্দ। বেশ নিঃঝুম, এত নিঃঝুম রাত্রিতে ফিসফাস করলেও বোধ হয় শোনা যাবে। অকস্মাৎ সমস্ত নির্জনতা ভেঙে একটা গমগমে গলার স্বর শোনা গেল---কুন্তী!
এত রাতে কুন্তীকে কে নিতে এসেছে। বইয়ের পাতাটা যত্ন করে মুড়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো কাবেরী। হেমেন দাও দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছেন। দেখাদেখি অসীমও লেখার টেবিল ছেড়ে বাইরে। হ্যারিকেন আর চাঁদের আবছা আলোয় লোকটাকে অস্পষ্ট হলেও দেখা যাচ্ছে। বেশ দীর্ঘ উচ্চতার একটি আদিবাসী লোক। মাটির মত গায়ের রঙ, ঘামের ওপর আলো পড়ে চকচক করছে। পেটানো কঠোর চেহারায় কাঁধের ওপর গামছা ফেলা। রুক্ষ পাথরে খোদাইকৃত মুখে অগোছালো দাড়ি গোঁফ, চোখ দুটো যেন লাল হয়ে জ্বলছে।
লোকটা বারান্দার ওপর কিছু একটা রেখে মেঝেতে বসে পড়ল। এতক্ষন জিনিসটা লক্ষ্য করেনি কাবেরী, চমকে উঠল বারান্দায় রাখা ধারালো অস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে। চকচকে ঈষৎ বাঁকানো অস্ত্র মানুষ মারবার জন্য যথেষ্ট। ওটাকেই হাঁসুয়া বলে বোধ হয়। অথচ হেমেন দা ভীষণ শান্ত হয়ে বললেন---বুধন যা, বাড়ী যা। হাড়িয়া খেয়ে তোর মাথার ঠিক নেই।
বুধন বিচ্ছিরি ভাবে হাসল---মাস্টার মশাই, আমি কুথা বাড়াইতে আসিনি। আমার বিটি কুথায়? বিটিরে লিয়ে চলে যাবো।
---বুধন মাথা ঠান্ডা কর।
---মাস্টারমশাই ভালো হইতেছে না। দিখেন আমার বিটি, তার ভালো-মন্দটা আমি বুঝি। তার বিয়া দিব। কথা পাকা। আপনি কেডা? ভালোয় ভালোয় বিটিরে কুথায় লুকাই রাখছেন বাহারে আনেন।
এধার ওধার চেয়ে লোকটা ডাক দিল---কুন্তী! তোর বাপ তরে লিতে আসসে।
কাবেরী খেয়াল করল রান্না ঘরে ঠুং-ঠাং শব্দ বন্ধ। কুন্তী বাইরে আসছে না। ভেতরে আলো জ্বলছে। অতর্কিতে হাঁসুয়া নিয়ে ঢুকে পড়ল লোকটা সোজা রান্নাঘরে। টানতে টানতে বার করে আনলো কুন্তীকে। ---বাপ আমি যাবোনি।
---চল মাগী। তোরে কাল মানা কইরছিলি। আর কামে আসবিনি। ফের আইসছিস।
কাবেরী কড়া গলায় বলল---কী হচ্ছে কী?
লোকটার চোখ পড়ল কাবেরীর দিকে। বেশ তীক্ষ্ণ ভয়ঙ্কর চোখ। অস্ত্রটা এখনো হাতে। হেমেন দার দিকে তাকিয়ে বলল---মাস্টার মশাই, ইকলেজ গড়ছেন, গড়েন। মুন্ডাপাড়ায় মাতব্বরী ফলাইতে আসবেন নাই। আমি বুধন মুন্ডা, হাঁসড়া বুধনের নামে ডরে। জেল খাটা খুনের আসামী এই বুধন, দিদিমনিরেও বুঝাই দেন।
কথা না বাড়িয়ে লোকটা কুন্তীকে টানতে টানতে চলে গেল। অসীম আর হেমেন দা দুটো পুরুষমানুষ দাঁড়িয়ে রইল। কাবেরী মুখ চাইল হেমেনের দিকে।

হেমেন রায় অসহায়ের মত বললেন---কুন্তীর বাবা বুধন মুন্ডা। হাঁসড়ার ত্রাস। ওকে মুন্ডারা সকলেই ভয় পায়। খুন করতে হাত কাঁপে না লোকটার। খনি অঞ্চলে কাজ করত আগে, কোনো একটা মারামারির ঘটনায় কোপ মারে খনির ম্যানেজারকে। ভাগ্য ভালো লোকটা বেঁচে যায়। ছ'মাস জেল খেটে ছাড়া পেয়েছে আজই খবর পেলাম। কুন্তীর জোর করে বিয়ে দিতে চায়।
----কিন্তু কুন্তীর তো বিয়ের বয়স হয়নি হেমেন দা। কাবেরী বিস্মিত হয়ে বলল। যদিও গ্রাম গঞ্জ থেকে শহরের বস্তি এলাকায় আজও দেদার নাবালিকা বিবাহ হচ্ছে; একথা কলেজ শিক্ষিকা হিসেবে কাবেরীর জানা। এমন উদাহরণ তার প্রাথমিক কলেজেই দেদার মেলে। অনেক মেয়েদেরই দেখেছে, প্রাইমারী কলেজে পড়াশোনা করত ভালো। শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদ্যোগ নিয়ে ক্লাস ফোরের পর ভালো কলেজে দিল, কিন্তু বাড়ির চাপে আর এগোল না। কয়েকদিন পর শোনা যায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কাবেরী নিজেই কলকাতার বস্তি এলাকার কত মেয়েকে প্রাইমারী কমপ্লিট করবার পর হাইকলেজে ভর্তি করিয়েছে। সবার শেষ অবধি এগোনো হয়নি। তবু কাবেরী বলল---পুলিশে খবর দিলে হয় না?

---হয়। তবে প্রত্যন্ত অরণ্য অঞ্চলে আদিবাসী এলাকায় তাদের নিজেদের কিছু আইন-কানুন থাকে। তাতে পুলিশও নাক গলাতে চায় না। আর যদি পুলিশ কিছু ব্যবস্থা নেয়ও, তাহলে গোটা মুন্ডা পাড়ার সাথে দুশমনি করে ইকলেজ গড়ার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে।

কাবেরীর বিষয়টা একেবারে পছন্দ হল না। তা বলে এমন একটা অন্যায় মেনে নিতে হবে। ঘুম আসছে না কাবেরীর। যে হেমেন দা কাবেরীর চোখে এতদিন হিরোর মত ছিলেন, এখন তাকেও কাবেরীর কৌশলী মনে হচ্ছে। ঘুম আসছে না, এ পাশ ওপাশ করে চলেছে ও। টেলিফোন রিসিভারটার দিকে নজর পড়ল কাবেরীর। অরুণাভ কি ঘুমিয়ে পড়ল। ওকে ব্যাপারটা না জানাতে পারলে শান্তি নেই কাবেরীর।

অরুণাভ ঘুমোতে যাবার উপক্রম করছে সবে। কাবেরী না থাকায় বিছানাটা এলোমেলো হয়ে রয়েছে। কাল একবার মালতীকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নেবে ঠিক করল সে। অমন সময় ফোনটা বেজে উঠল।
ছেলেদের খোঁজ নিল কাবেরী। ছোটটার ঠান্ডা লেগেছে। এমনিতে মা বাড়ি নেই, কাল নাকি বৃষ্টিতে বাড়ি ফিরেছে পাপান। অরুণাভ জানালো এসি-ফ্যান অফ করে শুয়ে আছে ও। ছেলেরা অসুস্থ হলে কাবেরীর চিন্তা বাড়ে। যদিও পাপানটা অনেক বেশি দায়িত্বশীল। একা একা সেঁক নেয়, ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে লাগলে স্প্রে, ভাপ এসব একাই নিতে পারে। একবার শীতকালে গলা ব্যথা হওয়ায় নিজেই রাতে উঠে গরম জলে গারগিল করল। তবু এতদুরে কাবেরী, চিন্তাটা একটা জিইয়ে রইল।

অরুণাভর চোখ ঘুমে জুড়ে আসছে। এখুনি শুয়ে পড়লেই ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকবে। তাই দ্রুত কথা সারতে জিজ্ঞেস করল---এত রাতে ফোন করলে কেন বললে না তো? ঘুম পাচ্ছে বাপু। তাড়াতাড়ি বলো।

কাবেরীর গলায় এবার একটা উৎকণ্ঠা ধরা পড়ল। এক এক করে সবটা বলল সে। স্বামীর কাছে সবটা বলাটাই যেন কাবেরীকে আশ্বস্ত করে। অরুণাভও সেটা জানে। তবে অরুণাভর ভয় হচ্ছে, কাবেরী কখনো কখনো মাথায় জেদ নিয়ে বসে থাকে। কোন জঙ্গলে একা পড়ে আছে, সঙ্গে হতচ্ছাড়া হেমেন দা। তাই সাবধান করে দিতে বলল--- তুমি আবার আগ বাড়িয়ে এসবে মাতব্বরী করতে যেও না। ওসব আদিবাসী লোক সাংঘাতিক হয়।
---কিন্তু পুলিশকে তো জানানো যেতে পারে।
ঠিক একই কথা হেমেন রায়কেও বলেছিল কাবেরী।
---খবরদার এসব করতে যেও না। তোমার বনের মোষ তাড়ানো হেমেন দা আপাতত এই একটি কথা ঠিক বলেছেন। ট্রাইবালরা নিজেদের সামাজিক বিষয়ে নাক গলানো পছন্দ করে না। পুলিশও ওসব ঝামেলা এড়িয়ে যাবে।
---তা বলে একটা নাবালিকা...
---আঃ কাবেরী, তুমি দুই ছেলের মা হয়ে মাঝে মধ্যে এমন করো না! তোমার ছেলেরাও তোমার চেয়ে ম্যাচিওর আচরণ করে।
হতাশ হল কাবেরী। সব পুরুষেরাই একই রকম, হেমেন দা, অসীম কিংবা অরুণাভ। পুরুষ মানেই একজন সাহসী, নির্ভীক হবে এমন ধারণা কাবেরীর চূর্ণ হচ্ছে।
অরুণাভ কাবেরীর মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। কথা এড়িয়ে বলল---জানো আজ মালতী মাছের ঝোলে নুন দেয়নি। কদ্দিন যে এরকম আরো খেতে হবে!
---তুমিও তো বলেছিলে নিজের মত করে লাইফ এনজয় করতে।
শব্দ করে হাসল অরুণাভ----এখনো বলছি। বয়স বাড়ছে। নিজের মত ঘোরো, আমোদ-প্রমোদ করো। তা বলে মালতীর রান্নার নিন্দার মাধ্যমে নিজের বউয়ের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারবো না?
---সেটা তো বউর কাছে না করে, নিজের কলিগদের কাছেও করতে পারো।
---করি তো। আমার কলিগরা জানেন মিসেস চক্রবর্তীর অনেক প্রতিভা আছে। শিক্ষকতা করেন, ভালো রাঁধেন, গান গাইতে পারেন, কবিতা...এই রে তোমায় বলতে ভুলে গেছি। মিঃ দত্তের মেয়ের বিয়ে। নেমতন্ন করে গেছেন। বাড়ীতে এসেছিলেন।
---মিঃ দত্তের মেয়ে বলতে? পিঙ্কি?
---আজ্ঞে হ্যা। পিঙ্কিও এসেছিল। কাকিমাকে বিশেষ করে যেতে হবে আবদার করে গেছে। আমি তো বললুম তোমার কাকিমা তো এখন শান্তিতে ছুটি কাটাতে অরণ্যে গেছেন।
---শান্তি আছে? এই যে ছেলেটা ঠান্ডা লাগিয়ে বসল!
---অহেতুক টেনশন করো না। তোমার ছেলেরা তোমার অগোচরে বড় হয়ে গেছে কাবেরী। আর তুমি জানো তোমার স্বামী ব্যস্ত মানুষ। পারলে তুমি একটা প্রেম করা শুরু কর। নিদেনপক্ষে ব্যস্ত স্বামীর প্রতি অভিযোগগুলো থাকবে না।

অরুণাভর এমন ঠাট্টা বা উপদেশ এখন কাবেরীর একদম ভালো লাগছে না। বলল---দেখো, ছেলেটার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। কাল কোচিংয়ে যেতে দিও না। কাশি করছে না তো? সিরাপটা টিভি সেটের পাশে ড্রয়ারে রাখা আছে।

সত্যিই ছেলেদুটো বড় হয়ে গেল অনেক। এখন আর সেই মা মা আচরণটা নেই। ছেলেরা বড় হলে মায়ের কেমন অনুভূতি হয়, সার্থকতার নাকি ঘোর একাকীত্ব? কাবেরীর জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে দুধ সাদা বিছানায়। দুটোই অনুভূতি হচ্ছে কাবেরীর। দুটো ছেলেই কম বেশী মেধাবী। এর পেছনে ভূমিকা কাবেরীরই। অরুণাভও তা স্বীকার করে। পড়াশোনা, টিউশন, আঁকার ক্লাস সবটা কাবেরী সবসময় নখদর্পনে রাখতো। শ্বশুরের পুরোনো বাড়ীতে থাকার সময় প্রতিবেশীদের আনাগোনা ছিল। পেছনে নিন্দে করত তারা, কাবেরী ছেলে দুটোকে পড়ুয়া করে তুলেছে, এর ওর সাথে মিশতে দেয় না, ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তবে কাবেরী কখনো তার ছেলেদের অন্যদের সাথে মিশতে বারণ করেনি। বরং ঠিক উল্টো। দুটো ছেলের ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করা, নানাবিধ পরীক্ষায় পুরস্কার পাওয়া ঈর্ষান্বিত করত তাদের। তখন অবশ্য আনন্দই হত কাবেরীর। এখন সব সাফল্য ছেলেদের। এখন কেউ বলবে না কাবেরী চক্রবর্তী তার এক একটা ছেলেকে সোনার টুকরো করে তুলেছে। না থাকুক কৃতিত্বের ভাগিদারী, তবু সোনার টুকরো গড়ে তোলাতেই আনন্দ, মা হিসেবে এই আনন্দ কাবেরী বারবার পেতে চায়। হ্যারিকেনের সলতেটা কমিয়ে দিল কাবেরী। মিহি বাতাস এসে ঢুকছে ঘরে।
+++++++

[Image: fe844923-34ef-413c-b155-81e7da9b185d.png]
স্নান করে বেরিয়ে দেখল কাবেরী। হেমেন দার ইজি চেয়ারে বসে রয়েছে একটি বাচ্চা মেয়ে। কুন্তীর মুখটা কেটে বসানো।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হেমন্তের অরণ্যে - by Henry - 08-10-2022, 02:25 PM



Users browsing this thread: 132 Guest(s)