Thread Rating:
  • 168 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
ষড়বিংশতি অধ্যায়




আনিসুর প্রায় প্রতি রোববার মেয়ে দেখতে যায়।রবিবার তার দোকান বন্ধ থাকে।কিন্তু মেয়ে দেখার পর কোনো এক পক্ষের আগ্রহের অভাবে কথা আর বেশীদূর এগোয় না।গত রবিবার একজায়গায় মেয়ে দেখার পর  প্রায় পাকা হয়ে গেছিল।মেয়েটি দেখতে শুনতে মন্দ নয়।আনিসুরের সরকারী চাকরি নয় তাতে তাদের  আপত্তি ছিল না।কিন্তু গোল বাধল কথায় কথায় যখন জানতে পারল আনিসুরের ঘরে বিবি আছে।আনিসুরের রাগ গিয়ে পড়ে মকবুলের প্রতি কেন সে আগে তাদের জানায় নি?মকবুল বোঝায় আগের বিবিরে তালাক দিলেই আর সমস্যা থাকে না।সাদিয়া বেগমরে জবান দিয়েছে সাদি যখন করেছে তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা অনেয্য।সাচ্চা . কখনো জবানের খেলাপ করে না। মেয়েটা তারে সত্যিই ভালোবাসে, এত মারধোর করেছে তবু তার সেবা যত্নে ঘাটতি দেখেনি।এমনি সবই ভাল শুধু তার বেজান ভোদার জন্য তাকে বাধ্য হয়ে আবার সাদি করতে হচ্ছে।না হলে এমন বিবি ফেলায় সাদি করতে ঠেকা পড়েছে।  আনিসুর বুঝতে পারেনা সাদিয়া বেগমকে তালাক দেবার জন্য মকবুল এত পীড়াপিড়ি করছে কেন।সেই তো সাদিয়ার সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। আবার সামনে রোববার ঠিক হয়েছে চম্পাহাটি মেয়ে দেখতে যাবে।ঘরে বিবি আছে জেনেও তাদের আপত্তি নেই।তবে মেয়ের বয়স একটু বেশী।আনিসুরের তাতে আপত্তি নেই সন্তান পয়দা করার বয়স যায় নি।
মেঘলা দুপুর।ঘরে সোফার হাতলে ভর দিয়ে গভীর মন দিয়ে হিমির কথা শুনছেন।কথা শেষ করে হিমি ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদিস নাতো,ভাল্লাগে না।কিছুক্ষন ভেবে বললেন,তুই এত কথা জানলি কি করে?
মকবুল মিঞার সঙ্গে কথা হয় আমি আড়াল আবডাল থেকে কিছুটা শুনে আর কিছুটা অনুমান করে বললাম।
কাল মেয়ে দেখতি যাচ্ছে তুই শুনিছিস?
এখন তো প্রতি রোববার ওনার মেয়েদেখা কাম।
হুউম।নাদিয়া বেগম দুলতে দুলতে কি যেন ভাবতে থাকেন।দ্যাখ হিমি তোরে নিজির বুনের মত মনে করি।
আপু ইণ্ডিয়ায় তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।
যার কেউ নাই আল্লা তার সহায়। আল্লার উপর ভরসা রাখ। দুনিয়ায় যা কিছু ঘটতেছে তানার মর্জিতে তিনি রহম করলে সহবাস না করেও পোয়াতি হওয়া যায়।
আপু নিয়মিত নমাজ করে আল্লা মেহেরবানি করলি কি আপুর আজ এই দশা হয় কথাটা মনে এলেও হিমি উচ্চবাচ্য করে না।হিমি বলল,আপু শুনেছি এই বার নাকি বিয়ে পাকা করে আসবে।
থামতো।বড় আসছে পাকা করনেওলা।আল্লার মরজি না হলি আনিস মিঞা পাকা করার কে?  
হিমি একটু ইতস্তত করে বলল,আপু তুমারে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়নি।
নাদিয়া বেগম চোখ কুচকে তাকালেন।
মকবুল মিঞা এসেছিল--।
কবে?
এইতো কাল তুমি চলে গেলে।আমি রান্না ঘরে গিয়ে জোগাড় যন্তর করছি।দরজায় খটখট শুনে ভাবলাম তুমি ফিরে এলে নাকি?
কলকাতায় ওর দোকান আছে না?
নিজির দোকান না এক দোকানে কাজ করে।
আসছিল ক্যান?
তেষ্টা পেয়েছে পানী চাইল।আমি বললাম,বাইরে দাঁড়ায় থাকেন ভিতরে আসবেন না।তারপর ফ্রিজ থিকে একটা বোতল এনে দিলাম।দরজার বাইরে দাড়ায়ে ঢক ঢক করে পানী খেল।বোতল ফেরায়ে দিতে দিতে বলল,আপনে কোনো চিন্তা করবেন না,আমি তো আছি।
খবরদার হিমি তুই যদি এর ফাদে পড়িস আমারে দোষ দিতি পারবি না।এদের একবারে আশ মিটবে না বারে বারে চাইবে।তুইও না বলতি পারবি না।
আপু তুমি আমারে কি ভাবো?আমি বাজারি বেবুস্যে নাকি?এই হারামীটাই তো ওনারে বদ পরামর্শ দেয়।সেদিন যদি এর কথা না শুনে বাংলাদেশে চলে যেতাম তাহলি কি আজ আমার এই দশা হতো।ওড়না দিয়ে চোখ মোছে।
নাদিয়া বেগম অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন।কি সুন্দর দেহের গঠণ যে কোনো পুরুষ এই শরীরে বেহেস্তের সুখ পাবে।আজ সেই মেয়ের কি অবস্থা।হিমির জন্য খুব কষ্ট হয়।আল্লা মিঞার এ কি বিচার।
কি দেখতেছো আপু?
ভাবছি।আচ্ছা তুই এইসব কথা আনিস মিঞাকে বলিস নি?
কি করে বলব?বললি উনি আমারেই সন্দ করবে।
তা ঠিক এরা তো শুধু মেয়েদেরই দোষ দেখে।
জানলা দিয়ে আকাশ দেখে নাদিয়া বললেন,জোহরের সময় হয়ে গেছে।তুই আমারে একখান যায়নমাজ এনে দে।নমাজটা সেরে ফেলি।
হিমি ভিতরে থেকে একটা শতরঞ্চি এনে পেতে দিল।নাদিয়া বেগম হাটু মুড়ে বসে নমাজ করতে লাগলেন।
বৈদ্যবাটি নেমে দেখল আকাশে পুঞ্জিভূত মেঘ জমছে।বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা।প্লাট গর্ম হতে বাইরে বেরিয়ে এল। সুখদা ভাবে আজ না এলেই ভালো হতো।অবশ্য শরতের বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।কয়েকমাস হল কিনে ফেলে রেখেছে।মাও একটু অসন্তুষ্ট মনে হল।এদেশে এসে নতুন শাড়ি চোখে দেখিনি।মাসীর কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল।কলকাতা ঘুরে ঘুরে দেখার নেশায় সময় করে উঠতে পারেনি।এখন সে গোপালনগর নয় কলকাতার বাসিন্দা।ছাদে পড়ার ব্যবস্থা হওয়ায় নিজেকে বেশ তরতাজা মনে হয়।বৈচিমাসী হয়তো এখন ঘুমোচ্ছে, ঘুম থেকে তুলে শাড়ীটা দিয়ে চলে আসবে।
একটা বাড়ীর নীচে এসে থমকে দাড়ায়।এই বাড়ীটাই মনে হচ্ছে।রাতে এসেছিল আলোকমালায় সজ্জিত ছিল তবু  চিনতে ভুল হয়না।নীচে দোকানদাররা কৌতূহলী চোখে তাকে দেখছে।ভিতরে প্যাসেজটা নজরে পড়তে নিশ্চিত হয় তার ভুল হয়নি।ভিতরে ঢুকে সিড়ির নীচে ঘরে তালা দেওয়া দেখে। তাহলে কি মাসী উপরে আছে?উপরে গিয়ে অন্যদের সামনে শাড়ীটা দিতে হবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করে।শাড়ীটা ব্যাগে ভরে রাখলো।বৈচিমাসীকে নীচে ডেকে এনে শাড়ীটা দিলেই হবে ভেবে সুখ ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। .রা পর্দানসীন হয় সেজন্য একটা দ্বিধার ভাব জড়িয়ে আছে মনে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নজরে পড়ল বা-দিকে একটা কলিং বেল।এক্টু ইতস্তত করে চাপ দিল।
ভেতর থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এল,কে-এ-এ?
মনে হচ্ছে দরজার কাছেই উনি আছে বলল,আমি বৈচি মানে নাদিয়া ম্যাডামের কাছে এসেছি।উনি আছেন?
দরজা খুলে গেল সামনে দাঁড়িয়ে ঘোমটায় ঢাকা মুখ জিজ্ঞেস করলেন,তার সঙ্গে কি দরকার?
থতমত খেয়ে বলল,দরকার কিছু নেই।উনি আমার পরিচিত।এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম ভাবলাম একটু দেখা করে যাই।
আপনি গোপাল নগরে থাকেন?
হ্যা হ্যা।উৎসাহিত হয়ে সুখ বলল,একবার দেখা করেই চলে যাব।
সেতো বাড়ি নেই।কিছু বলতে হবে?
 বলবেন মনু এসেছিল।
হতাশ হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে কানে এল,আনিস মিঞার বাড়ী দেখতে পারেন,কাছেই।
সুখ নীচে নেমে ভাবছে শাড়ীটা ওনাকে না দিয়ে ভালই করেছে।তাহলে মাসীর কাছে পৌছাবেই তার নিশ্চয়তা নেই।আরেকদিন আসতে হবে তা ছাড়া উপায় কি?
দাদা কি কাউরে খুজতেছেন?দোকানের একটি ছেলে জিজ্ঞেস করল।
না মানে আচ্ছা আনিসমিঞার বাড়ি কোথায় বলতে পারবেন?
কলকাতায় যার দোকান আছে?
হবে হয়তো।
ডানদিকে সোজা চলে যান।কিছুটা গেলেই রাস্তার ধারে টিউবোয়েল।তার পাশে গলি দিয়ে ঢুকলে দু-তিনটে বাড়ীর পর হলদে রঙের দুই তলা বাড়ী।এক তলায় থাকে আনিস মিঞা।কিন্তু এখন তো তারে পাবেন না।
সুখদা ভাবে কি করবে?দূর থেকে টিউবোয়েল দেখা যাচ্ছে।এক্টু এগিয়ে দেখবে কিনা ভাবে।ওখানে বৈচিমাসীকে পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই।শাড়ীটা আজ দেওয়া না গেলে আরেকদিন আসতে হবে।ভাবতে ভাবতে এগোতে থাকে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 05-10-2022, 11:09 PM



Users browsing this thread: SOUMYA1215, 4 Guest(s)