05-10-2022, 01:47 PM
কাবেরী গোটা চারেক তাঁত ছাড়া, কয়েকটা সুতির শাড়ি নিয়েছে। গরমে সুতির শাড়ির বিকল্প নেই। ব্যাগ গোছানোর সময়ে টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান শ্যাম্পু ছাড়াও নিজের স্বল্প কিছু প্রসাধনী ভরে নিয়েছে। পাপান বেছে বেছে কয়েক খানা বই দিয়েছে। ট্রেনেই যাবার কথা ছিল। আচমকা তাতান বলল--মা বাইরে দেখো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। হেমেন মামা বোধ হয় গাড়ি এনেছেন।
---গাড়ী! বিস্মিত হল কাবেরী।
অরুণাভ এসময় অফিস বেরিয়ে গেছে। দুই ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বেরোলো কাবেরী। যাবার সময় ছেলেদুটোকে পই পই করে বলে গেল---অহেতুক ঝগড়া করবিনা। আর বাপি যা বলবে শুনবি।
মনে মনে ভাবলো ছেলে দুটোই না কত বড় হয়ে গেল। এই প্রথমবার দুটো ছেলেকে ছেড়ে এত দিনের জন্য সে কোথাও যাচ্ছে।
গাড়ির পেছনের সিটের দরজাটা খুলে দিলেন হেমেন দা। ব্যাগটা ভারী হয়ে গেছে, গাড়িতে তুলে দিতে ছেলে দুটোকে ডাকলে ভালো হত। অমন সময় দেবদুতের মতো সামনের সিট থেকে নেমে এলো অসীম। কাবেরী চমকে গেল। অসীম হেসে বলল---কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো। হেমেন দা যে তোমার দাদা এদ্দিন জানতামই না।
---ললিতা কোথায়?
---কাননুর গেছে। ওর বাপের বাড়ি। তাই হেমেন দা যখন প্রস্তাব দিল, ভাবলাম কদিন ঘুরে আসলেই পারা যায়।
গাড়ী চলতে শুরু করল। ড্রাইভার ছেলেটা অল্প বয়সী। ওর পাশে বসেছে অসীম। হেমেন দা আর কাবেরী পেছনের সিটে।
কলকাতা ছাড়িয়ে ওরা যখন বেরোলো তখন বারোটা দশ। একবার রাস্তায় নেমে চা খেল ওরা।কাবেরীর অবশ্য এমন দুপুরে চা খাবার অভ্যেস নেই। গাড়িতেই বসে রইল ও।
ওরা যখন গাড়ির কাছে ফিরল হেমেন দা বললেন---আমাকে সামনে দে অসীম।
কাবেরীর পাশে বসল অসীম। রোদ বাড়ছে। অসীম বলল--- হেমেন দা জানলাটা আটকে দাও। এসি দেব।
কাবেরী ওর পাশের জানলাটা আটকানোর চেষ্টা করল। বেশ শক্ত। বুঝতে পেরে অসীম কাবেরীর ওপর ঝুঁকে আটকে দিল জানলাটা।
অসীমের এত কাছাকাছি আসার অস্বস্তি কাটিয়ে কাবেরী বলল---সন্তুর কোন ক্লাস হল?
সন্তু অসীম ও ললিতার ছেলে। ওইটুকু ছেলের গানের গলা ভারী সুন্দর।
---এইবার সেভেন হল। সারাদিন গান-বাজনায় আগ্রহ। পড়ায় বড্ড ফাঁকি দিচ্ছে।
হেমেন দা বললেন---ও যেটা চায় করুক না, কখনো বাধা দিস না।
হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটছে, এ কথা ও কথায় অসীম, কাবেরী, হেমেনের সময়টা কেটে যাচ্ছে। আটটার সময় পুরুলিয়া ঢুকল ওদের গাড়ি। রাতের অন্ধকারে আস্তে আস্তে ওদের গাড়ি জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। হেমেন দা বললেন---খুকি, দিনের আলো হলে দেখতে পেতিস অযোধ্যা পাহাড়।
জানলাগুলো খোলা, সাঁই সাঁই বাতাস এসে ঢুকছে। অসীম বলল---একটা গান ধরো কাবেরী।
----ওমা! গান?
---ধর না, হেমেন দাও বললেন সিগারেট ধরিয়ে।
কাবেরী গলা ছাড়লো। শেষ কবে গান গেয়েছে মনে পড়ল না। অসীমদের কবিতাবাসরে একবার গেয়েছিল। সেটা নজরুল গীতি।
"অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
মৌনবীনার তন্ত্র আমার জাগাও সুধারবে,
বসন্তসমীরে তোমার ফুল-ফুটানো বাণী
দিক পরানে আনি-
ডাকো তোমার নিখিল-উৎসবে
মিলন শতদলে"
---আর পারবো না। এই চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে... গলা বলে আর কিছু আছে নাকি।
অসীম বলল---এ তো বসন্তের গান। এখন তো গ্রীষ্ম।
কাবেরী লজ্জায় কুটি গিয়ে হেসে বলল---যা মনে এলো গাইলাম। তুমিও তো ভালো গান গাও। বাব্বা! সেই ইউনিভার্সিটির ফাংশনে গেয়েছিল---
"মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে..."
অসীমও সঙ্গ দিয়ে গাইল---
''যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি-
কী কথা ছিল যে মনে"
হেমেন দা বললেন---তোদের দুজনের কি ইউনিভার্সিটিতে কোনো কেমিস্ট্রি ছিল।
অসীম হেসে বলল---যা ছিল আমারই। ওর মনে তখন তরুণ ব্যাংক ম্যানেজার অরুণাভ চক্রবর্তী বাসা বেঁধেছেন।
--এই যাঃ! তাতানের বাবাকে ফোন করা হল না।
হেমেন দা বললেন---একদম হাঁসড়া গিয়ে। আর এই জঙ্গলে কোথাও টেলিফোন বুথ নেই।
ড্রাইভার আলমগীর আচমকা ব্রেক কষে গাড়ি আটকালো।
---কী হল আলমগীর? হেমেন দা তটস্থ হয়ে বললেন।
---সামনে দেখেন সার... হাতি। ফিসফিসিয়ে বলল আলমগীর।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় গোটা পনেরো হাতি। আলমগীর গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে রেখেছে। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এমন হাতি একবার দক্ষিণ ভারতে দেখেছিল কাবেরী। তখন পাপানের জন্ম হয়নি। তাতান খুব ছোট। ওর কি আনন্দ। তারপর ডুয়ার্স এ হাতির পিঠে দুই ভাই মিলে সাফারি করেছিল। তবে এমন বুনো হাতি দেখার মজাই আলাদা। আস্তে আস্তে পালটা নেমে গেল স্থাণু জমি দিয়ে। গাড়িটা চলতে শুরু করতেই কাবেরী গান ধরল---
"মনে রবে কি না রবে আমারে
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই.."
+++++++
---গাড়ী! বিস্মিত হল কাবেরী।
অরুণাভ এসময় অফিস বেরিয়ে গেছে। দুই ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বেরোলো কাবেরী। যাবার সময় ছেলেদুটোকে পই পই করে বলে গেল---অহেতুক ঝগড়া করবিনা। আর বাপি যা বলবে শুনবি।
মনে মনে ভাবলো ছেলে দুটোই না কত বড় হয়ে গেল। এই প্রথমবার দুটো ছেলেকে ছেড়ে এত দিনের জন্য সে কোথাও যাচ্ছে।
গাড়ির পেছনের সিটের দরজাটা খুলে দিলেন হেমেন দা। ব্যাগটা ভারী হয়ে গেছে, গাড়িতে তুলে দিতে ছেলে দুটোকে ডাকলে ভালো হত। অমন সময় দেবদুতের মতো সামনের সিট থেকে নেমে এলো অসীম। কাবেরী চমকে গেল। অসীম হেসে বলল---কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো। হেমেন দা যে তোমার দাদা এদ্দিন জানতামই না।
---ললিতা কোথায়?
---কাননুর গেছে। ওর বাপের বাড়ি। তাই হেমেন দা যখন প্রস্তাব দিল, ভাবলাম কদিন ঘুরে আসলেই পারা যায়।
গাড়ী চলতে শুরু করল। ড্রাইভার ছেলেটা অল্প বয়সী। ওর পাশে বসেছে অসীম। হেমেন দা আর কাবেরী পেছনের সিটে।
কলকাতা ছাড়িয়ে ওরা যখন বেরোলো তখন বারোটা দশ। একবার রাস্তায় নেমে চা খেল ওরা।কাবেরীর অবশ্য এমন দুপুরে চা খাবার অভ্যেস নেই। গাড়িতেই বসে রইল ও।
ওরা যখন গাড়ির কাছে ফিরল হেমেন দা বললেন---আমাকে সামনে দে অসীম।
কাবেরীর পাশে বসল অসীম। রোদ বাড়ছে। অসীম বলল--- হেমেন দা জানলাটা আটকে দাও। এসি দেব।
কাবেরী ওর পাশের জানলাটা আটকানোর চেষ্টা করল। বেশ শক্ত। বুঝতে পেরে অসীম কাবেরীর ওপর ঝুঁকে আটকে দিল জানলাটা।
অসীমের এত কাছাকাছি আসার অস্বস্তি কাটিয়ে কাবেরী বলল---সন্তুর কোন ক্লাস হল?
সন্তু অসীম ও ললিতার ছেলে। ওইটুকু ছেলের গানের গলা ভারী সুন্দর।
---এইবার সেভেন হল। সারাদিন গান-বাজনায় আগ্রহ। পড়ায় বড্ড ফাঁকি দিচ্ছে।
হেমেন দা বললেন---ও যেটা চায় করুক না, কখনো বাধা দিস না।
হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটছে, এ কথা ও কথায় অসীম, কাবেরী, হেমেনের সময়টা কেটে যাচ্ছে। আটটার সময় পুরুলিয়া ঢুকল ওদের গাড়ি। রাতের অন্ধকারে আস্তে আস্তে ওদের গাড়ি জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে। হেমেন দা বললেন---খুকি, দিনের আলো হলে দেখতে পেতিস অযোধ্যা পাহাড়।
জানলাগুলো খোলা, সাঁই সাঁই বাতাস এসে ঢুকছে। অসীম বলল---একটা গান ধরো কাবেরী।
----ওমা! গান?
---ধর না, হেমেন দাও বললেন সিগারেট ধরিয়ে।
কাবেরী গলা ছাড়লো। শেষ কবে গান গেয়েছে মনে পড়ল না। অসীমদের কবিতাবাসরে একবার গেয়েছিল। সেটা নজরুল গীতি।
"অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
মৌনবীনার তন্ত্র আমার জাগাও সুধারবে,
বসন্তসমীরে তোমার ফুল-ফুটানো বাণী
দিক পরানে আনি-
ডাকো তোমার নিখিল-উৎসবে
মিলন শতদলে"
---আর পারবো না। এই চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে... গলা বলে আর কিছু আছে নাকি।
অসীম বলল---এ তো বসন্তের গান। এখন তো গ্রীষ্ম।
কাবেরী লজ্জায় কুটি গিয়ে হেসে বলল---যা মনে এলো গাইলাম। তুমিও তো ভালো গান গাও। বাব্বা! সেই ইউনিভার্সিটির ফাংশনে গেয়েছিল---
"মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে
মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে সে দিন ভরা সাঁঝে..."
অসীমও সঙ্গ দিয়ে গাইল---
''যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি-
কী কথা ছিল যে মনে"
হেমেন দা বললেন---তোদের দুজনের কি ইউনিভার্সিটিতে কোনো কেমিস্ট্রি ছিল।
অসীম হেসে বলল---যা ছিল আমারই। ওর মনে তখন তরুণ ব্যাংক ম্যানেজার অরুণাভ চক্রবর্তী বাসা বেঁধেছেন।
--এই যাঃ! তাতানের বাবাকে ফোন করা হল না।
হেমেন দা বললেন---একদম হাঁসড়া গিয়ে। আর এই জঙ্গলে কোথাও টেলিফোন বুথ নেই।
ড্রাইভার আলমগীর আচমকা ব্রেক কষে গাড়ি আটকালো।
---কী হল আলমগীর? হেমেন দা তটস্থ হয়ে বললেন।
---সামনে দেখেন সার... হাতি। ফিসফিসিয়ে বলল আলমগীর।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় গোটা পনেরো হাতি। আলমগীর গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে রেখেছে। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এমন হাতি একবার দক্ষিণ ভারতে দেখেছিল কাবেরী। তখন পাপানের জন্ম হয়নি। তাতান খুব ছোট। ওর কি আনন্দ। তারপর ডুয়ার্স এ হাতির পিঠে দুই ভাই মিলে সাফারি করেছিল। তবে এমন বুনো হাতি দেখার মজাই আলাদা। আস্তে আস্তে পালটা নেমে গেল স্থাণু জমি দিয়ে। গাড়িটা চলতে শুরু করতেই কাবেরী গান ধরল---
"মনে রবে কি না রবে আমারে
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই.."
+++++++