04-10-2022, 05:08 PM
হেমেন দা ডানলপের দিকে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। কলেজটা আংশিক চালু করেছেন। সম্পূর্ন গড়ে তুলতে গেলে আরও অর্থ লাগবে। কলকাতায় হেমেন রায়ের অনেক ছাত্র আছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে উদ্যোগ নিতেই তিনি কলকাতা এসেছেন। কাবেরী বলেছিল--এই কটা দিন আমার বাড়িতেই রয়ে গেল পারতেন। হেমেন রায় মৃদু হেসে বলেছেন---আমি হলাম বুনোহাঁস রে, খুকি, তোর এত বড় হিমশীতল বাড়ীতে আমার পোষাবে না। কথাটা আন্দাজ করতে পেরেছিল কাবেরী। গত রবিবার দুপুরে কাবেরী ডেকেছিল হেমেন দাকে। দুপুরে খাবার পর হেমেন দার সাথে গল্প করছিল অরুণাভ। মালতী কদিন ছুটিতে। কাবেরী তখন রান্নাঘরে একটার পর একটা বাসন ধুয়ে শেলফে তুলছিল। অরুণাভর অর্থনীতিবিদের মত ব্যবহার শিল্পী হেমেনদার ভালো লাগেনি। অথচ অরুণাভ প্রথম দিকে এমন ছিল না। যতদিন এগিয়েছে পদন্নোতির সাথে সাথে লোকটার জগৎ পাল্টে গেছে। এখন বাড়িতে ফিনাশিয়াল এক্সপ্রেস, ইকোনমি টাইমস এসব কাগজ ঢোকে। এ লোন, ও লোন, নানা লোকের সাথে ফোনে কথা বলতে থাকে মানুষটা।
রাতে শোওয়ার আগে চুল বাঁধতে বাঁধতে কথাটা তুলল কাবেরী---হেমেন দা বলছিল পরশুর ট্রেনে চলে যাবে।
অরুণাভ লম্বা টান দিয়ে শুয়ে কি একটা বই পড়ছিল। মুখ না তুলেই বলল---হুম্ম।
----দু একদিনের মধ্যে কলেজে ছুটি পড়বে।
এবার চোখ তুলল অরুণাভ।---তাহলে তুমি কি ঠিক করলে? যাবে?
---কলেজের ছুটি তো মাত্র একমাস। আমি ভাবছি আরো দিন পনেরো ছুটি নেব।
---এত ছুটি নিয়ে কি করবে? কটা দিন কাটিয়েই তো ঘুরে আসতে পারো।
---অনেক দিন কোথাও যাই না।
---তা বলে দেড় মাস! ওখানে এখন টেম্পারেচার জানো? আমার ফর্সা বউটা কালো পড়ে যাবে যে।
কাবেরী বিছানায় উঠতে অরুণাভ বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলো। কাবেরীর দিকে ঘুরে পেটের উপর হাতটা রেখে বলল---তার মানে দেড় মাস তোমাকে কাছে পাচ্ছি না।
কাবেরী মৃদু হাসলো। বাইশ বছরের দাম্পত্যে ইঙ্গিত বুঝতে তার অসুবিধা হয় না। দেড় মাস কাছে থাকবে না বলে অরুণাভ যে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে, সেই আদিখ্যেতা তাদের মধ্যে অন্তত মাস খানেক হয়নি। কাবেরী সায়ার দড়ি আলগা করল। ট্রাউজারের দড়ি খুলতে শুরু করেছে অরুণাভও।
আলতো করে চুমু দিল কাবেরীর কপালে। আগে অমন চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিত অরুণাভ। শাড়িটা ঠেলে ওঠাতে লাগলো অরুণাভ। খুঁজে নিতে দেরী হল না তার, যথাস্থানে পুরুষাঙ্গটা ঢুকিয়ে দিয়ে কাবেরীর বাম স্তনটা ব্লাউজের উপর চেপে ধরল। মৃদু গতিতে কোমর সঞ্চালন করতে লাগলো। হালকা দুলুনিতে বেশ বুঝে সুঝে রোমান্টিক ভাবেই সঙ্গম করে অরুণাভ। কাবেরী স্বামীকে আগলে রাখলো দু হাত দিয়ে। ভালো করে পা দুটো মেলে দিয়েছে ও। ফর ফর করে শ্বাস নিচ্ছে কাবেরী। পাশের ঘরে তাতান রাত জেগে তখনও পড়ছে। শব্দটা নিয়ন্ত্রণ করল সে। বরং অরুনাভই একটা কেঁপে কেঁপে শব্দ করছে। যদিও তা মৃদু। ঘরের দরজার বাইরে কান পাতলেও শোনা যাবে না।
আরেকটু চাইছিল কাবেরীর শরীর। অরুণাভ থেমে গেল। কাবেরী উঠে পড়ল ঝটপট। বিছানা থেকে নেমে স্যান্ডেল গলিয়ে চলে গেল বাথরুমে। ফিরবার সময় দেখলো পড়ার টেবিলে ঝুঁকে পড়ে তাতান অঙ্ক কষছে আনমনে। পাপানটা ঘুমে কাদা। বেডরুমে ঢুকতেই অরুণাভ বলল--এসিটা বাড়িয়ে দাও তো।
কাবেরী পাশ ফিরে শুয়ে স্বামীর নগ্ন পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল---আচ্ছা, সামনের মাসে তুমি ছুটি পাবে না?
---আহা। কি করো কাবেরী। ঘুম পাচ্ছে এখন। তোমাকে কি আমি যেতে বারণ করেছি?
অরুণাভর এমন কথায় আহত হল কাবেরী। তার কি নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই? অরুণাভ বারণ করলে কি সে যেত না? ক্ষীণ প্রতিবাদ করে বলল---আমি একা একা যাবো অদ্দুর...
অরুণাভ কাবেরীর থেকে সরে গিয়ে বলল---অহেতুক ঝগড়া বাধিও না তো।
কাবেরী ঝাঁঝিয়ে উঠল---আমি ঝগড়া করছি?
অরুণাভ স্ত্রীর মেজাজ বুঝতে পেরে ঘুরে পড়ল কাবেরীর দিকে। গাল ছাড়িয়ে হাসল,---লাইফটা এনজয় করতে শেখো কাবেরী। তোমার হাতে তো অফুরন্ত সময়। স্বামী নামক বস্তুটির ওপর খামোখা রাগান্বিত হওয়া কমবে বৈকি। এখন আমায় ঘুমোতে দাও।
অরুণাভর এই হাসিটা আজকাল কাবেরীর বড্ড বিরক্তিকর লাগে। এই হাসি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। কাবেরীর আজকাল দেরীতে ঘুম আসে। তাতানের ঘরের টেবিল ল্যাম্পের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ড্রয়িং রুমে। আইআইটির প্রিপারেশন নিচ্ছে ও। ছেলেটার একাগ্রতা ভীষণ। চোখে স্বপ্ন। সকলের যেমন থাকে। কাবেরীর নেই। কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ হল। এই লাইফ এনজয়ের ব্যাপারটা কাবেরীর মাথায় একেবারেই আসে না। সকাল থেকে কলেজে আর সংসারের একটার পর একটা দিন পেরোতে পেরোতে যখন ছেলেরা বড় হয়ে গেল, তখন দেখতে পেল চারপাশটা কেমন নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অরুণাভর কথাটা তখন থেকে ভাবাচ্ছে তাকে। হয়ত তার নিঃসঙ্গতার এটাও একটা কারণ। তার জীবনটা বড্ড একপেশে, দেওয়ালে আঁটা ক্যালেন্ডারের মতন। ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র অসীমকেই তার স্বল্প হলেও ভালো লাগতো। অসীমের কবি কবি ভাবটার জন্যই হয়ত। বাংলায় এমএ করায় অসীমের এটা সহজাত হয়ে গিয়েছিল। কাবেরীকে ওর পছন্দ ছিল। যদিও কাবেরী ওকে তেমন পছন্দ না করলেও, আবার অপছন্দও করত না। তবে অসীমের প্রতি কাবেরীর কোনোদিন প্রেম জেগে না ওঠায় সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। অসীম এখন কলেজে অধ্যাপনা করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বইও বেরিয়েছে অসীমের। গড়িয়াতে থাকত কিছুদিন আগে পর্যন্ত। মাত্র ছয় মাস হল বদলি হয়ে চলে গিয়েছে নর্থ বেঙ্গলে, ইউনিভার্সিটিতে। মাঝে মধ্যেই ও কাবেরীদের বাড়ি আসত, কখনো কখনো ওর স্ত্রী ললিতাকেও সঙ্গে নিয়ে আসত। বিশেষ করে ওর নতুন কোনো লেখা ছাপা হলে কাবেরীর হাতে বইটা তুলে দিতে ও একবার আসবেই। অসীমের সাময়িক সাহিত্য চর্চাকেন্দ্রিক আড্ডার কারণে সংসার আর কলেজের শিক্ষিকা জীবনের একঘেয়েমিতার মাঝে কাবেরী স্বল্পকালীন মুক্তি পেত তবুও। সুযোগ পেলে অসীম উপদেশও দিত দেদার। কাবেরীর মধ্যে জীবনের ঘাটতি দেখে একদিন বলেছিল -----দেখ কাবেরী, বার্ধক্য আর বৃদ্ধত্ব এক নয়। বয়স আমাদের বার্ধ্যক এনে দেয়। আর বৃদ্ধত্ব আসে মন থেকে। দেখ না আমরা যে সব সাহিত্য সৃষ্টি করি, চরিত্রগুলোকে সজীব করি, সুন্দর করি, এককথায় যৌবনের দূত তৈরি করি, সেসব আমাদের মনের মধ্যে যৌবন থাকে বলেই। তা নাহলে বয়সের সাথে সাথে আমাদের সাহিত্যের চরিত্রগুলো লোলচর্ম হয়ে লাঠি ধরত।
অসীমের কথাগুলোর মধ্যে যুক্তি আছে। তখন কাবেরীর ইচ্ছে করত এই বয়সেও নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে দেখতে। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ছে তার। অন্যমনস্ক ভাবে সাজগোজ করতে করতে কতবার নিজেকে দেখেছে। খুব একটা প্রসাধন সে কোনদিনই করে না। মুখে একটু হালকা ক্রিম বা ফেস পাউডার, ছোট টিপ। কলেজে বেরোলে সামান্য লিপস্টিক, ছোটখাটো গয়না ইত্যাদি। গায়ের উজ্জ্বল ফর্সা রঙটার লাবণ্য এখনো আছে। কয়েক বছর আগেও চেহারাটা বেশ ছিপছিপে ছিল। পঁয়ত্রিশ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত নিশ্চিত। ইদানিং শরীরে মেদ জমেছে। অপারেশনের ফলে শরীরটা একটু ভারী হয়েছে। হবেই না কেন চল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ হল। তবে তার মুখ থেকে যৌবনের কমনীয়তা পুরোপুরি মুছে যায়নি। এক ঢাল কালো চুল, ফর্সা ভরাট মুখে কাবেরী এখনো দীপ্তিময়ী। অরুণাভর বন্ধু মহলে তার রূপের খ্যাতিতে ভাটা পড়েনি এখনো। অসীমের স্ত্রী ললিতা দক্ষিণ ভারতের মেয়ে, অতশত বাংলা সাহিত্য বোঝে না ও। তবে স্বামীর প্রতি অত্যন্ত পদাবনত পতিব্রতা গৃহিণী। ভারী মিশুকে মেয়ে। অসীম যখন কাবেরীদের ড্রয়িং রুমে সাহিত্য বাসর বসিয়ে ফেলত, ললিতা চা করে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সামলে নিত দায়িত্বশীলা গৃহীনর মত। কাবেরীকে 'দিদি' বলে সম্বোধন করে ও, রান্না ঘরে ঢুকতে বারণ করে দিত। ললিতা খুব একটা রূপসী নয়, শ্যামলা গড়নের মুটকি ধরনের চেহারা। ও প্রায়শই বলে কাবেরীকে নাকি কোনো এক দক্ষিণী অভিনেত্রীর মত দেখতে।
++++++
চলবে
রাতে শোওয়ার আগে চুল বাঁধতে বাঁধতে কথাটা তুলল কাবেরী---হেমেন দা বলছিল পরশুর ট্রেনে চলে যাবে।
অরুণাভ লম্বা টান দিয়ে শুয়ে কি একটা বই পড়ছিল। মুখ না তুলেই বলল---হুম্ম।
----দু একদিনের মধ্যে কলেজে ছুটি পড়বে।
এবার চোখ তুলল অরুণাভ।---তাহলে তুমি কি ঠিক করলে? যাবে?
---কলেজের ছুটি তো মাত্র একমাস। আমি ভাবছি আরো দিন পনেরো ছুটি নেব।
---এত ছুটি নিয়ে কি করবে? কটা দিন কাটিয়েই তো ঘুরে আসতে পারো।
---অনেক দিন কোথাও যাই না।
---তা বলে দেড় মাস! ওখানে এখন টেম্পারেচার জানো? আমার ফর্সা বউটা কালো পড়ে যাবে যে।
কাবেরী বিছানায় উঠতে অরুণাভ বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রাখলো। কাবেরীর দিকে ঘুরে পেটের উপর হাতটা রেখে বলল---তার মানে দেড় মাস তোমাকে কাছে পাচ্ছি না।
কাবেরী মৃদু হাসলো। বাইশ বছরের দাম্পত্যে ইঙ্গিত বুঝতে তার অসুবিধা হয় না। দেড় মাস কাছে থাকবে না বলে অরুণাভ যে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে, সেই আদিখ্যেতা তাদের মধ্যে অন্তত মাস খানেক হয়নি। কাবেরী সায়ার দড়ি আলগা করল। ট্রাউজারের দড়ি খুলতে শুরু করেছে অরুণাভও।
আলতো করে চুমু দিল কাবেরীর কপালে। আগে অমন চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিত অরুণাভ। শাড়িটা ঠেলে ওঠাতে লাগলো অরুণাভ। খুঁজে নিতে দেরী হল না তার, যথাস্থানে পুরুষাঙ্গটা ঢুকিয়ে দিয়ে কাবেরীর বাম স্তনটা ব্লাউজের উপর চেপে ধরল। মৃদু গতিতে কোমর সঞ্চালন করতে লাগলো। হালকা দুলুনিতে বেশ বুঝে সুঝে রোমান্টিক ভাবেই সঙ্গম করে অরুণাভ। কাবেরী স্বামীকে আগলে রাখলো দু হাত দিয়ে। ভালো করে পা দুটো মেলে দিয়েছে ও। ফর ফর করে শ্বাস নিচ্ছে কাবেরী। পাশের ঘরে তাতান রাত জেগে তখনও পড়ছে। শব্দটা নিয়ন্ত্রণ করল সে। বরং অরুনাভই একটা কেঁপে কেঁপে শব্দ করছে। যদিও তা মৃদু। ঘরের দরজার বাইরে কান পাতলেও শোনা যাবে না।
আরেকটু চাইছিল কাবেরীর শরীর। অরুণাভ থেমে গেল। কাবেরী উঠে পড়ল ঝটপট। বিছানা থেকে নেমে স্যান্ডেল গলিয়ে চলে গেল বাথরুমে। ফিরবার সময় দেখলো পড়ার টেবিলে ঝুঁকে পড়ে তাতান অঙ্ক কষছে আনমনে। পাপানটা ঘুমে কাদা। বেডরুমে ঢুকতেই অরুণাভ বলল--এসিটা বাড়িয়ে দাও তো।
কাবেরী পাশ ফিরে শুয়ে স্বামীর নগ্ন পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল---আচ্ছা, সামনের মাসে তুমি ছুটি পাবে না?
---আহা। কি করো কাবেরী। ঘুম পাচ্ছে এখন। তোমাকে কি আমি যেতে বারণ করেছি?
অরুণাভর এমন কথায় আহত হল কাবেরী। তার কি নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই? অরুণাভ বারণ করলে কি সে যেত না? ক্ষীণ প্রতিবাদ করে বলল---আমি একা একা যাবো অদ্দুর...
অরুণাভ কাবেরীর থেকে সরে গিয়ে বলল---অহেতুক ঝগড়া বাধিও না তো।
কাবেরী ঝাঁঝিয়ে উঠল---আমি ঝগড়া করছি?
অরুণাভ স্ত্রীর মেজাজ বুঝতে পেরে ঘুরে পড়ল কাবেরীর দিকে। গাল ছাড়িয়ে হাসল,---লাইফটা এনজয় করতে শেখো কাবেরী। তোমার হাতে তো অফুরন্ত সময়। স্বামী নামক বস্তুটির ওপর খামোখা রাগান্বিত হওয়া কমবে বৈকি। এখন আমায় ঘুমোতে দাও।
অরুণাভর এই হাসিটা আজকাল কাবেরীর বড্ড বিরক্তিকর লাগে। এই হাসি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। কাবেরীর আজকাল দেরীতে ঘুম আসে। তাতানের ঘরের টেবিল ল্যাম্পের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ড্রয়িং রুমে। আইআইটির প্রিপারেশন নিচ্ছে ও। ছেলেটার একাগ্রতা ভীষণ। চোখে স্বপ্ন। সকলের যেমন থাকে। কাবেরীর নেই। কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ হল। এই লাইফ এনজয়ের ব্যাপারটা কাবেরীর মাথায় একেবারেই আসে না। সকাল থেকে কলেজে আর সংসারের একটার পর একটা দিন পেরোতে পেরোতে যখন ছেলেরা বড় হয়ে গেল, তখন দেখতে পেল চারপাশটা কেমন নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অরুণাভর কথাটা তখন থেকে ভাবাচ্ছে তাকে। হয়ত তার নিঃসঙ্গতার এটাও একটা কারণ। তার জীবনটা বড্ড একপেশে, দেওয়ালে আঁটা ক্যালেন্ডারের মতন। ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র অসীমকেই তার স্বল্প হলেও ভালো লাগতো। অসীমের কবি কবি ভাবটার জন্যই হয়ত। বাংলায় এমএ করায় অসীমের এটা সহজাত হয়ে গিয়েছিল। কাবেরীকে ওর পছন্দ ছিল। যদিও কাবেরী ওকে তেমন পছন্দ না করলেও, আবার অপছন্দও করত না। তবে অসীমের প্রতি কাবেরীর কোনোদিন প্রেম জেগে না ওঠায় সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। অসীম এখন কলেজে অধ্যাপনা করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বইও বেরিয়েছে অসীমের। গড়িয়াতে থাকত কিছুদিন আগে পর্যন্ত। মাত্র ছয় মাস হল বদলি হয়ে চলে গিয়েছে নর্থ বেঙ্গলে, ইউনিভার্সিটিতে। মাঝে মধ্যেই ও কাবেরীদের বাড়ি আসত, কখনো কখনো ওর স্ত্রী ললিতাকেও সঙ্গে নিয়ে আসত। বিশেষ করে ওর নতুন কোনো লেখা ছাপা হলে কাবেরীর হাতে বইটা তুলে দিতে ও একবার আসবেই। অসীমের সাময়িক সাহিত্য চর্চাকেন্দ্রিক আড্ডার কারণে সংসার আর কলেজের শিক্ষিকা জীবনের একঘেয়েমিতার মাঝে কাবেরী স্বল্পকালীন মুক্তি পেত তবুও। সুযোগ পেলে অসীম উপদেশও দিত দেদার। কাবেরীর মধ্যে জীবনের ঘাটতি দেখে একদিন বলেছিল -----দেখ কাবেরী, বার্ধক্য আর বৃদ্ধত্ব এক নয়। বয়স আমাদের বার্ধ্যক এনে দেয়। আর বৃদ্ধত্ব আসে মন থেকে। দেখ না আমরা যে সব সাহিত্য সৃষ্টি করি, চরিত্রগুলোকে সজীব করি, সুন্দর করি, এককথায় যৌবনের দূত তৈরি করি, সেসব আমাদের মনের মধ্যে যৌবন থাকে বলেই। তা নাহলে বয়সের সাথে সাথে আমাদের সাহিত্যের চরিত্রগুলো লোলচর্ম হয়ে লাঠি ধরত।
অসীমের কথাগুলোর মধ্যে যুক্তি আছে। তখন কাবেরীর ইচ্ছে করত এই বয়সেও নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে দেখতে। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ছে তার। অন্যমনস্ক ভাবে সাজগোজ করতে করতে কতবার নিজেকে দেখেছে। খুব একটা প্রসাধন সে কোনদিনই করে না। মুখে একটু হালকা ক্রিম বা ফেস পাউডার, ছোট টিপ। কলেজে বেরোলে সামান্য লিপস্টিক, ছোটখাটো গয়না ইত্যাদি। গায়ের উজ্জ্বল ফর্সা রঙটার লাবণ্য এখনো আছে। কয়েক বছর আগেও চেহারাটা বেশ ছিপছিপে ছিল। পঁয়ত্রিশ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত নিশ্চিত। ইদানিং শরীরে মেদ জমেছে। অপারেশনের ফলে শরীরটা একটু ভারী হয়েছে। হবেই না কেন চল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ হল। তবে তার মুখ থেকে যৌবনের কমনীয়তা পুরোপুরি মুছে যায়নি। এক ঢাল কালো চুল, ফর্সা ভরাট মুখে কাবেরী এখনো দীপ্তিময়ী। অরুণাভর বন্ধু মহলে তার রূপের খ্যাতিতে ভাটা পড়েনি এখনো। অসীমের স্ত্রী ললিতা দক্ষিণ ভারতের মেয়ে, অতশত বাংলা সাহিত্য বোঝে না ও। তবে স্বামীর প্রতি অত্যন্ত পদাবনত পতিব্রতা গৃহিণী। ভারী মিশুকে মেয়ে। অসীম যখন কাবেরীদের ড্রয়িং রুমে সাহিত্য বাসর বসিয়ে ফেলত, ললিতা চা করে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সামলে নিত দায়িত্বশীলা গৃহীনর মত। কাবেরীকে 'দিদি' বলে সম্বোধন করে ও, রান্না ঘরে ঢুকতে বারণ করে দিত। ললিতা খুব একটা রূপসী নয়, শ্যামলা গড়নের মুটকি ধরনের চেহারা। ও প্রায়শই বলে কাবেরীকে নাকি কোনো এক দক্ষিণী অভিনেত্রীর মত দেখতে।
++++++
চলবে