Thread Rating:
  • 176 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
#11
আরে হেমেন দা?

হেমেন দা, সম্পর্কে কাবেরীর মামাতুতো দাদা। কাবেরির বয়স যখন সাত কি আট। হেমেন দা তখন যুবক। ছোট বেলায় পড়াশুনো কাবেরীর হেমেন দার কাছেই। হেমেন রায় যেমনই ইন্টেলেকচুয়াল, তেমন তার বোহেমিয়ান চরিত্র। বিয়ে-থা করেননি। আয় ইনকামও বিশেষ করেন না। মায়ের কাছে শুনেছিল কাবেরী, কাবেরীর দাদুর পূর্বপুরুষদের নাকি পুরুলিয়ার দিকে কোথায় জমিদারী ছিল একসময়। যদিও সেসব শোনা কথা, কাবেরী কখনো যায়নি। কাবেরী মামাবাড়ি বলতে বোঝে কৃষ্ণনগরে তার দাদুর বাড়ি। কাবেরীর দাদু দীননাথ রায়, সেকেলে উকিল ছিলেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন হেমেন দার মত, কাজ কারবার না করে অগাধ সম্পদ ভোগ করতে কৃষ্ণনগরে বানিয়ে ছিলেন দু কাঠা জায়গার ওপর বসত বাড়ি। সে বাড়ি আর নেই, মামারা যে যার বেচে সেটেল হলেন। এখন মামারাও কেউ নেই। মামার বংশে আত্মীয় বলতে এই হেমেন দা। সেই জমিদারী ভাঙিয়েই হেমেন রায়েরও চলেছে এতদিন। হেমেন দার গায়েও সেই রক্ত, যাবে কোথায়। দিব্যি দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। এক কালে কবিতা টবিতা লিখে নাম করেছিলেন। কিন্তু কোথাও থিতু হতে পারেননি হেমেন রায়। দুতিন বছর পর হঠাৎ এ আত্মীয় ও আত্মীয় বাড়িতে থেকে আবার উধাও।

----বহু কষ্টে বাড়িটা চিনলাম। তোকে তো এ পাড়ায় চেনে বলে কেউ মনে হয় না! তোর স্বামীর নাম বললাম।
কাবেরী হাসলো। বলল---বাব্বা! কোথায় যে হারিয়ে যাও। এই কতদিন পরে এলে বলতো। মনে থাকবেই বা কি করে।

হেমেন ঘরের চারদিক পর্যবেক্ষণ করে বলল--বাঃ বেশ সাজানো ঘর তোর। নিশ্চই তুই গুছিয়েছিস? তুই যে গোছনদার মেয়ে সে তো আমি জানি।
কাবেরী লজ্জা পেল। বলল---আমার স্বামীও কিন্তু বেশ সৌখিন।
--- তা উনি কি আছেন?
---না, না। অফিসে....
---আর তোর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি?
---ভুলে গেলে হেমেন দা! আটবছর হল গত। শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা দুজনেই পিঠোপিঠি বছরে চলে গেলেন।
সোফায় আয়েশ করে বসলেন হেমেন দা, বললেন---বয়স বাড়ছে খুকি। সব কি আর মনে থাকে। তোর আরেক ছেলে?
---ও বাইরে। ফিরতে দেরী হবে।
---কি যেন পড়ছে ওরা?
---একজন ফিজিক্সে অনার্স করছে, আইআইটিতে ভর্তি হতে চাইছে। আরেকজন এইচ এস দেবে। পিওর সায়েন্স।
---এক্সিলেন্ট, দুজনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর ভাববার কিছু নেই। ভালোই গড়েছিস দুই ছেলেকে। তা চাকরীটা করছিস নাকি, ছেড়ে দিয়েছিস?
ঈষৎ লাজুক মুখে হাসল কাবেরী।

হেমেন রায় খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো কাবেরীদের আয়তকার সৌখিন ড্রয়িং রুমটা। দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের ঢাউস ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন---বিয়ের আগে থেকেই তো মনে হয় না রে তুই চাকরিটা করছিস?
----হুম্ম। মিক্সিতে শরবত তৈরি করতে করতে বলল কাবেরী।
হেমেন দা কাঁধের শান্তিনিকেতনী ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে বললেন----পড়িস খুকু। আমার নতুন কবিতার বই।
---ওমা তুমি এখনো কবিতা লেখো হেমেন দা?
---যতটুকু পারি রে। বুড়ো বয়সে কি করি বলতো।
---জানো হেমেন দা, আমার এক বন্ধুও লেখে। ও আগে কলকাতায় থাকতো। এখন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে আছে। অধ্যাপনা করে।
--- তুই কি অসিত মজুমদারের কথা বলছিস?
---তুমি চেনো? শরবতের গেলাসটা হেমেনের সামনে টেবিলটায় রাখলো কাবেরী।
---চিনব না কেন? বড় ভালো ছেলে। আমার কাছে ইলাস্ট্রেশন শিখতে আসতো।
---ও মা গো। অসিত তো কখনো বলেনি। ও আর ওর স্ত্রী দুজনেই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। কত কবি বন্ধুদের নিয়ে এ বাড়িতে আসার বসিয়েছে। কই তোমাকে তো কোনোদিন দেখিনি?
---আমি এসব আসর টাসর এড়িয়ে যাই বুঝলি। তুইও লিখিস টিখিস নাকি?
---ধ্যাৎ। আমি আবার লিখব। একবার চেষ্টা করেছিলুম। আমার বর শুনে যা হাসলো!
---তোর বর বুঝি এসব পছন্দ করে না? হ্যা রে ছবি টবি তো বেশ আঁকতিস, এখনও....
কাবেরীর মনে পড়ল কলেজ জীবনে তাকে হেমেন দা ই আঁকতে শিখিয়েছিল। বিয়ের পর অবশ্য কোনো একদিনের জন্যও কাবেরী ছবি আঁকেনি। একবার অরুণাভর এক মাসতুতো বোনের বিয়েতে আলপনা দিয়েছিল সে, তা দেখে অরুণাভ বলেছিল আরে তুমি যে এত ভালো আল্পনা দাও জানতাম না তো? ছবি টবি আঁকতে নাকি? কাবেরী প্রত্যুত্তর না দিয়ে নীরবে হেসেছিল।
দেয়ালের একটা ল্যান্ডস্কেপ দেখিয়ে কাবেরী বলল---ওটা আমার বড় ছেলের আঁকা। দুজনেই ভালো আঁকে। ওই গুনটাই যা ছেলেরা পেয়েছে।
হেমেন শরবতে চুমুক দিয়ে বলল---তুই কলেজ থেকে ফিরিস কখন?
---আমার সকাল কলেজ।
---তারমানে সারাদিন তুই এতবড় বাড়িতে একা থাকিস।
কাবেরী খুব আনমনা হয়ে হাসলো। হেমেন মিত্র আবার চুমুক দিল গ্লাসে। বলল---তোর বর তো ব্যাংকার, সময়-টময় পায়?
কাবেরী বুঝতে পারছে হেমেন দা তাকে পড়ে ফেলতে চাইছে। ছোটবেলা থেকে এই লোকটির কাছে তার পড়াশোনা। বিলক্ষণ মানুষ চেনেন হেমেন দা।----এখন আর সময়ের কি প্রয়োজন হেমেন দা, চল্লিশ পেরিয়ে চুয়াল্লিশ হয়ে গেল।
---মেয়েদের বয়স বলতে নেই। আর তুই তো দিব্যি বয়স লুকোতে পারিস।
বড্ড হাসি পেল কাবেরীর। বলল---রাতে খাবে তো?
---না রে অনেক কাজ আছে। আসলে....
---ও মা! না খাইয়ে ছাড়ব নাকি?
---না রে খুকু। আসলে আমি এখন একটু থিতু হয়েছি।

পাপান বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল--মা খেতে দাও। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
কাবেরী ছেলেকে ইশারা করল। আজকের দিনে ছেলেদের প্রণাম করবার জন্য ইশারা করতে হয়, ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন সত্তরোর্ধ হেমেন। পাপান এসে পা ছুঁতেই, হেমেন রায় হাত দুটো ধরে বলল---থাক থাক বাবা, ভালো থেকো। তা কোথায় যাবে এই সন্ধ্যেতে? তাড়া কিসের।
---কোচিং আছে।

কাবেরী টেবিল থেকে গেলাসটা সরিয়ে নিয়ে ঠাট্টা করে বলল---বুড়ো বয়সে সংসার করলে নাকি?
---এক প্রকার তাই বলতে পারিস। বাংলা-ঝাড়খন্ড বর্ডারে হাঁসড়া বলে একটা গ্রাম আছে। সাঁওতাল পরগনায় বলতে পারিস। আগে জঙ্গল তরাই বলে পরিচিত ছিল। তুই তো জানিস আমাদের দেহে জমিদারী রক্ত বইছে।

'আমাদের' কথাটায় খটকা লাগলো কাবেরীর। মায়ের বংশের দিক দিয়ে অবশ্য কথাটা ঠিক, সে অর্থে তার দেহেও জমিদারী বংশের রক্ত আছে। কিন্তু কাবেরীর বাবা ছিলেন কলেজ মাস্টার। কাবেরীর ঠাকুরদা নাকি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন। যদিও কাবেরী তাঁকে কখনো দেখেনি। কাবেরীর জন্মের আগেই তিনি গত হয়েছেন। কাবেরী হেমেন দাকে থামিয়ে দিয়ে বলল--- হেমেন দা। একটু বোস। ছেলেটাকে খেতে দিয়ে আসি। তারপর বসে গল্প করব।
+++++++
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হেমন্তের অরণ্যে - by Henry - 04-10-2022, 05:04 PM



Users browsing this thread: 110 Guest(s)