03-10-2022, 10:49 PM
পঞ্চবিংশতি অধ্যায়
এখন কাকুর সঙ্গে নয় একাই যাতায়াত করি।কলেজে তুলনায় ছুটিছাটা বেশী।কাকু শনিবার-শনিবার বাড়ী যায়, বাধা। শিয়ালদা নেমে হাটতে শুরু করলাম।এটুকু পথ ট্রামে যাওয়ার কোনো মানে হয়না। হাতে মালপত্তর আছে মেসে নামিয়ে দিয়ে কলেজে যাবো।দিগম্বরজী চলে যাবেন তার জায়গায় কে আসবে জানি না।মা বলছিল মালকিনের সঙ্গে কথা বলতে।বসুমতী ম্যাডামের মুখটা ভেসে উঠতে সে ইচ্ছেটা মাথা তুলতে পারে না।মাড়োয়ারীদের পাছা ভারী হয়।কামসূত্র অনুযায়ী হস্তিনী বলা যেতে পারে।বিয়ে না হওয়ায় ভদ্রমহিলাকে বদলে দিয়েছে ভেবে খারাপ লাগে।ভাইয়ের আশ্রয়ে না থেকে এসময়ে শ্বশুরবাড়ীতে সংসার করার কথা।বৈচিমাসীর বিয়ে হলেও বসুমতী ম্যাডামের জীবনের সঙ্গে মিল আছে।বৈচিমাসীর ব্যবহার অবশ্য এরকম নয়।
বরানগর কাশীপুর শ্যামবাজার থেকে ভাবানীপুর অবধি ঘুরে ঘুরে এখন হাতের তালুর মত চেনা।হ্যারিসন রোড ধরে কলেজস্ট্রীট পেরিয়ে আমাদের মেস।দিগম্বরজী বেরিয়ে গেছেন।কাকু এখনো এসে পৌছায় নি।উপেন মাইতিও দেশে গেছেন।উনি পাশকুড়া থাকেন,আজ সরাসরি অফিস চলে যাবেন। হাতের জিনিস পত্র নামিয়ে রেখে পাখা চালিয়ে দিলাম।এখন আমাকে কলেজ যেতে হবে।বসুমতী ম্যাডাম দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একবার দেখে গেলেন।মনে পড়ল মা বলেছিল মালকিনকে বলে দেখ।কিন্তু ভরসা হল না।একটু বিশ্রাম করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
আজ একটা চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হল।কলেজস্টীটে পৌছে ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছি দেখলাম কলেজ গেটের কাছে আয়ুষী দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে চলেছে।কাছে যেতে নজরে পড়ল ওর দু-কান হতে তার ঝুলছে।ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।হেড ফোন শুনছে।
এখানে দাঁড়িয়ে হেডফোন শুনছিস?
হেডফোন না মোবাইল।তুই একটা বুদ্ধু।
পাঞ্চালি আমাকে বলেছিল বলদ।মেয়েরা যা না তাই বলতে পারে।আয়ুষী একটা তার আমার কানে গুজে দিল।হিন্দি গান বাজছে।হিন্দি আমার পছন্দ নয়।বুঝলাম এই গান শুনতে শুনতে তাল দিচ্ছিল।হঠাৎ ক্রিং-ক্রিং বেজে উঠতে এক মিনিট বলে ব্যাগ থেকে ছোটো বাক্স মত বের করে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো...নেহা কলেজ পৌছে গেছিস...গেটে দাঁড়িয়ে আছি এখনই যাব...হবে মানে...ও বুঝেছি, দাড়া সবে তো ঢুকলাম তিন-চারজনকে টারগেট করেছি খোজ খবর নিই... একটা সঙ্গেই আছে ... হ্যা হ্যা দর্শণ ধারী হলেই তো হবে না গুণ বিচার করতে হবে তো...বাড়ি ঘর দোর পরিবার দেখতে হবে না?... কেমন আবার দেখলে তুই পটে যাবি... ছবি কেন সময় হলে সশরীরে হাজির করবো...একটু হাদা টাইপ অবশ্য বেশী স্মার্টরা হেভি সেয়ানা হয় হি-হি-হি রাখছি রে ক্লাসে যেতে হবে...আচ্ছা পরে কথা হবে বাই।
বাক্সটা রেখে বলল,আমার বন্ধু নেহা কথা বলছিল।
বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কথা সরেনা।ছোটো একটা বাক্সর মতো দিব্যি কথা বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে হলে বাড়ীর লোকের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে।
এই মোবাইল দিয়ে তুই যেখান থেকে ইচ্ছে কথা বলতে পারবি।
অনেক দাম?
দামীও আছে তবে এটা বেশী দাম না প্রায় এগারো হাজার।
এগারো হাজার বেশী নয়।আয়ুষীরা বেশ বড়লোক ওদের কাছে এগারো হাজার কিছু নয়। বললাম,যার সঙ্গে কথা বলবি তারও তো মোবাইল থাকতে হবে।
ল্যাণ্ড ফোনেও কথা বলতে পারবি।সবে উঠেছে এবার দেখবি সবার হাতে হাতে।দেখলাম একটা ছেলে কানে ঐরকম একটা যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলতে বলতে কলেজে ঢুকে গেল।
ধর আমি স্টাডিতে পড়ছি এমন সময় আমার ফোন এল। ফোন ধরতে আমাকে ছুটে যেতে হবে না কিম্বা ছাদে উঠে ঘুরে ঘুরে পড়ছি আমার ফোন এলে ছাদ থেকেই কথা বলতে পারবো।
আমি অন্য কথা ভাবছি।ছাদে উঠে পড়তে পড়তে--কথাটা আমার মনে আসেনি।ছাদে বসেও তো পড়া যায়। বসুমতী ম্যাডামকে যদি বলি ছাদে উঠে পড়ব।
সময় হয়ে গেছে আমরা কলেজে ঢুকে গেলাম।আয়ুষী বলল,নেহা এখানেও ফর্ম ফিল আপ করেছিল চান্স পায় নি তাই স্কটিশে ভর্তি হয়েছে।
কলেজে ইউনিফর্মের বালাই এক একজনের এক একরকম পোশাক।মেয়েরাও প্যাণ্ট পরে।আয়ুষী ঠিক বলেছে অনেকের হাতেই মোবাইল।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়লাম।কলেজে ক্লাস তারপর মেস এভাবে চলছে।কিন্তু আমার সমস্যার কোনো সুরাহা হল না।আয়ুষীর আলাদা স্টাডি রুম আছে ছাদে গিয়েও পড়ে।যখন মেসে কেউ থাকে না আমি তখন ক্লাসে।আবার ক্লাস থেকে ফিরতে না ফিরতে সবাই একে একে ফিরে আসে মেসে।
শনিবার ভোরে কাকু বললেন,রঞ্জন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোর না।কিছু কেনাকাটা করার আছে ফিরতে দেরী হবে।কলেজে গিয়ে দেখলাম আয়ূষী সায়েন্সের সত্যম বলে একটা ছেলের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছে।গুরুত্ব নাদিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম।এক কলেজে পড়ে আলাপ হতেই পারে।কলেজ ছুটি হতে বেরোচ্ছি আয়ুষী এসে ধরল।আমার তাড়া ছিল বাড়ী যেতে হবে।শনিবার হলেই মায়ের মুখটা মনে পড়ে।
কিরে চলে যাচ্ছিস?
হ্যা আজ আমার কাজ আছে।
Feeling jelous?
বুঝলাম না।
সত্যম এসে কথা বলল এড়িয়ে গেলে অভদ্রতা হতো।
ঠিকই সত্যম ভাল ছেলে এড়িয়ে যাবি কেন?
তুই কথা ঘোরাচ্ছিস।
আয়ুষী আমার জরুরী কাজ আছে,আসি?
মেসে ফিরে ময়লা জামা প্যাণ্ট আর যা নেবার একটা সাইড ব্যাগে ভরে নিলাম।ঘরের দরজায় নীচু হয়ে তালা দিচ্ছি দেখলাম বসুমতী ম্যাডাম বাইরে থেকে এলেন মনে হল।মায়ের কথাটা মাথায় চিড়িক দিয়ে উঠল।ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,আণ্টি একটা কথা বলব?
ক্যা তুমে মুঝে আণ্টি লাগতা হ্যায়?
বট গাছের গুড়ির মত কোমর বয়স দ্বিগুনেরও বেশী আণ্টি শুনে গোসসা হয়ে গেল। ইচ্ছে হল নিজের পাছায় কষে লাথি কষাই।কেন যে বলতে গেলাম।যাওয়ার সময় একটা বিঘ্ন।আমতা আমতা করে বললাম,ভুল হয়ে গেছে।মাপ করবেন।
ম্যাডামকে পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই কানে এল,এখুন দেশে যাচ্ছ?
ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
শুন তুমি আমাকে বাঙলায় কি বলে দিদি বোলা করো।
আচ্ছা আমি বাসুদি বলব।
বহুৎ আচ্ছে।রঞ্জন তুমি সাদি করেছো?
লাজুক গলায় মাথা নাড়লাম।
তুমার পিতাজী কি করেন?
তিনি নেই।
বহুৎ আফশোস।তুমার পড়াই খরচ কে দেয়?
আমার মা লোকের বাড়ীতে কাজ করে।
বসুমতী ভাবেন ছেলেটা পুয়োর আছে।
কথাবার্তায় সহানুভূতির স্পর্শ সুখর মনে হল মহিলাকে যেমন ভেবেছিল তেমন নয়।
তুমি কি বলবে বলছিলে?
সুখ উৎসাহে বলল,বাসুদি আমি যদি ছাদে--।
কথা শেষ করতে না দিয়ে বসুমতী বললেন,নাই ছাদে পারমিশন দেওয়া যাবে না।তোমাকে দিলে অন্যরাও ছাদে কাপড়া মেলতে চাইবে।
নিয়ম সবার জন্য এক।তুমি ওদের মতো লণ্ডারিতে ধোলাই করাও।
আমি বাড়ীতেই কাপড় জামা কেচে আনি।
তাহলে ছাদে কি করবে?
পড়ার জন্য বলছিলাম।
ছাদে পড়াই করবে অদ্ভুত লাগে কথাটা বসুমতী বললেন,ঘরে পড়াই করো।
আপনি দশটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে দিতে বলেছেন তাছাড়া অন্যদের অসুবিধে হয়।আমার রাত জেগে পড়ার অভ্যাস।
কিন্তু ছাদে বাত্তি--।
আমি হ্যারিকেন জ্বেলে পড়ব।
থোড়া শোচনে দেও।আচ্ছা রঞ্জন তুমি টুইশন করবে?আমাদের বেরাদরীর লেড়কির জন্য টিউটর খুজছিল।
আমি তো একটা মেয়েকে পড়াই।
এ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে,তুমি পারবে।
কলেজে আমি ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি।
ভেরি গুড।তিন রোজ পড়াবে শ রূপেয়া দিবে।তুমার ঘর ভাড়া হয়ে যাবে।
আচ্ছা বাসুদি আপনি যা বলবেন।
আর শুন বাড়ী থেকে ফিরে আমার কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে নিও।অন্য কেউ উঠবে না তোমার জিম্মা।
সুখর চোখে জল এসে পড়ার উপক্রম।মা বলছিল বাইরে থেকে কারো সম্পর্কে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।সুখ বলল,আমি আসি?
সাবধানে যেও।
রাস্তায় নেমে স্বস্তির শ্বাস ফেলে।বড় একটা সমস্যার সুরাহা হল।মেস থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে হাটতে থাকে।
এখন কাকুর সঙ্গে নয় একাই যাতায়াত করি।কলেজে তুলনায় ছুটিছাটা বেশী।কাকু শনিবার-শনিবার বাড়ী যায়, বাধা। শিয়ালদা নেমে হাটতে শুরু করলাম।এটুকু পথ ট্রামে যাওয়ার কোনো মানে হয়না। হাতে মালপত্তর আছে মেসে নামিয়ে দিয়ে কলেজে যাবো।দিগম্বরজী চলে যাবেন তার জায়গায় কে আসবে জানি না।মা বলছিল মালকিনের সঙ্গে কথা বলতে।বসুমতী ম্যাডামের মুখটা ভেসে উঠতে সে ইচ্ছেটা মাথা তুলতে পারে না।মাড়োয়ারীদের পাছা ভারী হয়।কামসূত্র অনুযায়ী হস্তিনী বলা যেতে পারে।বিয়ে না হওয়ায় ভদ্রমহিলাকে বদলে দিয়েছে ভেবে খারাপ লাগে।ভাইয়ের আশ্রয়ে না থেকে এসময়ে শ্বশুরবাড়ীতে সংসার করার কথা।বৈচিমাসীর বিয়ে হলেও বসুমতী ম্যাডামের জীবনের সঙ্গে মিল আছে।বৈচিমাসীর ব্যবহার অবশ্য এরকম নয়।
বরানগর কাশীপুর শ্যামবাজার থেকে ভাবানীপুর অবধি ঘুরে ঘুরে এখন হাতের তালুর মত চেনা।হ্যারিসন রোড ধরে কলেজস্ট্রীট পেরিয়ে আমাদের মেস।দিগম্বরজী বেরিয়ে গেছেন।কাকু এখনো এসে পৌছায় নি।উপেন মাইতিও দেশে গেছেন।উনি পাশকুড়া থাকেন,আজ সরাসরি অফিস চলে যাবেন। হাতের জিনিস পত্র নামিয়ে রেখে পাখা চালিয়ে দিলাম।এখন আমাকে কলেজ যেতে হবে।বসুমতী ম্যাডাম দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একবার দেখে গেলেন।মনে পড়ল মা বলেছিল মালকিনকে বলে দেখ।কিন্তু ভরসা হল না।একটু বিশ্রাম করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
আজ একটা চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হল।কলেজস্টীটে পৌছে ফুটপাথ ধরে এগোচ্ছি দেখলাম কলেজ গেটের কাছে আয়ুষী দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে চলেছে।কাছে যেতে নজরে পড়ল ওর দু-কান হতে তার ঝুলছে।ব্যাপারটা পরিষ্কার হল।হেড ফোন শুনছে।
এখানে দাঁড়িয়ে হেডফোন শুনছিস?
হেডফোন না মোবাইল।তুই একটা বুদ্ধু।
পাঞ্চালি আমাকে বলেছিল বলদ।মেয়েরা যা না তাই বলতে পারে।আয়ুষী একটা তার আমার কানে গুজে দিল।হিন্দি গান বাজছে।হিন্দি আমার পছন্দ নয়।বুঝলাম এই গান শুনতে শুনতে তাল দিচ্ছিল।হঠাৎ ক্রিং-ক্রিং বেজে উঠতে এক মিনিট বলে ব্যাগ থেকে ছোটো বাক্স মত বের করে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো...নেহা কলেজ পৌছে গেছিস...গেটে দাঁড়িয়ে আছি এখনই যাব...হবে মানে...ও বুঝেছি, দাড়া সবে তো ঢুকলাম তিন-চারজনকে টারগেট করেছি খোজ খবর নিই... একটা সঙ্গেই আছে ... হ্যা হ্যা দর্শণ ধারী হলেই তো হবে না গুণ বিচার করতে হবে তো...বাড়ি ঘর দোর পরিবার দেখতে হবে না?... কেমন আবার দেখলে তুই পটে যাবি... ছবি কেন সময় হলে সশরীরে হাজির করবো...একটু হাদা টাইপ অবশ্য বেশী স্মার্টরা হেভি সেয়ানা হয় হি-হি-হি রাখছি রে ক্লাসে যেতে হবে...আচ্ছা পরে কথা হবে বাই।
বাক্সটা রেখে বলল,আমার বন্ধু নেহা কথা বলছিল।
বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কথা সরেনা।ছোটো একটা বাক্সর মতো দিব্যি কথা বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে হলে বাড়ীর লোকের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে।
এই মোবাইল দিয়ে তুই যেখান থেকে ইচ্ছে কথা বলতে পারবি।
অনেক দাম?
দামীও আছে তবে এটা বেশী দাম না প্রায় এগারো হাজার।
এগারো হাজার বেশী নয়।আয়ুষীরা বেশ বড়লোক ওদের কাছে এগারো হাজার কিছু নয়। বললাম,যার সঙ্গে কথা বলবি তারও তো মোবাইল থাকতে হবে।
ল্যাণ্ড ফোনেও কথা বলতে পারবি।সবে উঠেছে এবার দেখবি সবার হাতে হাতে।দেখলাম একটা ছেলে কানে ঐরকম একটা যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলতে বলতে কলেজে ঢুকে গেল।
ধর আমি স্টাডিতে পড়ছি এমন সময় আমার ফোন এল। ফোন ধরতে আমাকে ছুটে যেতে হবে না কিম্বা ছাদে উঠে ঘুরে ঘুরে পড়ছি আমার ফোন এলে ছাদ থেকেই কথা বলতে পারবো।
আমি অন্য কথা ভাবছি।ছাদে উঠে পড়তে পড়তে--কথাটা আমার মনে আসেনি।ছাদে বসেও তো পড়া যায়। বসুমতী ম্যাডামকে যদি বলি ছাদে উঠে পড়ব।
সময় হয়ে গেছে আমরা কলেজে ঢুকে গেলাম।আয়ুষী বলল,নেহা এখানেও ফর্ম ফিল আপ করেছিল চান্স পায় নি তাই স্কটিশে ভর্তি হয়েছে।
কলেজে ইউনিফর্মের বালাই এক একজনের এক একরকম পোশাক।মেয়েরাও প্যাণ্ট পরে।আয়ুষী ঠিক বলেছে অনেকের হাতেই মোবাইল।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়লাম।কলেজে ক্লাস তারপর মেস এভাবে চলছে।কিন্তু আমার সমস্যার কোনো সুরাহা হল না।আয়ুষীর আলাদা স্টাডি রুম আছে ছাদে গিয়েও পড়ে।যখন মেসে কেউ থাকে না আমি তখন ক্লাসে।আবার ক্লাস থেকে ফিরতে না ফিরতে সবাই একে একে ফিরে আসে মেসে।
শনিবার ভোরে কাকু বললেন,রঞ্জন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোর না।কিছু কেনাকাটা করার আছে ফিরতে দেরী হবে।কলেজে গিয়ে দেখলাম আয়ূষী সায়েন্সের সত্যম বলে একটা ছেলের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছে।গুরুত্ব নাদিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম।এক কলেজে পড়ে আলাপ হতেই পারে।কলেজ ছুটি হতে বেরোচ্ছি আয়ুষী এসে ধরল।আমার তাড়া ছিল বাড়ী যেতে হবে।শনিবার হলেই মায়ের মুখটা মনে পড়ে।
কিরে চলে যাচ্ছিস?
হ্যা আজ আমার কাজ আছে।
Feeling jelous?
বুঝলাম না।
সত্যম এসে কথা বলল এড়িয়ে গেলে অভদ্রতা হতো।
ঠিকই সত্যম ভাল ছেলে এড়িয়ে যাবি কেন?
তুই কথা ঘোরাচ্ছিস।
আয়ুষী আমার জরুরী কাজ আছে,আসি?
মেসে ফিরে ময়লা জামা প্যাণ্ট আর যা নেবার একটা সাইড ব্যাগে ভরে নিলাম।ঘরের দরজায় নীচু হয়ে তালা দিচ্ছি দেখলাম বসুমতী ম্যাডাম বাইরে থেকে এলেন মনে হল।মায়ের কথাটা মাথায় চিড়িক দিয়ে উঠল।ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,আণ্টি একটা কথা বলব?
ক্যা তুমে মুঝে আণ্টি লাগতা হ্যায়?
বট গাছের গুড়ির মত কোমর বয়স দ্বিগুনেরও বেশী আণ্টি শুনে গোসসা হয়ে গেল। ইচ্ছে হল নিজের পাছায় কষে লাথি কষাই।কেন যে বলতে গেলাম।যাওয়ার সময় একটা বিঘ্ন।আমতা আমতা করে বললাম,ভুল হয়ে গেছে।মাপ করবেন।
ম্যাডামকে পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই কানে এল,এখুন দেশে যাচ্ছ?
ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
শুন তুমি আমাকে বাঙলায় কি বলে দিদি বোলা করো।
আচ্ছা আমি বাসুদি বলব।
বহুৎ আচ্ছে।রঞ্জন তুমি সাদি করেছো?
লাজুক গলায় মাথা নাড়লাম।
তুমার পিতাজী কি করেন?
তিনি নেই।
বহুৎ আফশোস।তুমার পড়াই খরচ কে দেয়?
আমার মা লোকের বাড়ীতে কাজ করে।
বসুমতী ভাবেন ছেলেটা পুয়োর আছে।
কথাবার্তায় সহানুভূতির স্পর্শ সুখর মনে হল মহিলাকে যেমন ভেবেছিল তেমন নয়।
তুমি কি বলবে বলছিলে?
সুখ উৎসাহে বলল,বাসুদি আমি যদি ছাদে--।
কথা শেষ করতে না দিয়ে বসুমতী বললেন,নাই ছাদে পারমিশন দেওয়া যাবে না।তোমাকে দিলে অন্যরাও ছাদে কাপড়া মেলতে চাইবে।
নিয়ম সবার জন্য এক।তুমি ওদের মতো লণ্ডারিতে ধোলাই করাও।
আমি বাড়ীতেই কাপড় জামা কেচে আনি।
তাহলে ছাদে কি করবে?
পড়ার জন্য বলছিলাম।
ছাদে পড়াই করবে অদ্ভুত লাগে কথাটা বসুমতী বললেন,ঘরে পড়াই করো।
আপনি দশটার মধ্যে লাইট নিভিয়ে দিতে বলেছেন তাছাড়া অন্যদের অসুবিধে হয়।আমার রাত জেগে পড়ার অভ্যাস।
কিন্তু ছাদে বাত্তি--।
আমি হ্যারিকেন জ্বেলে পড়ব।
থোড়া শোচনে দেও।আচ্ছা রঞ্জন তুমি টুইশন করবে?আমাদের বেরাদরীর লেড়কির জন্য টিউটর খুজছিল।
আমি তো একটা মেয়েকে পড়াই।
এ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে,তুমি পারবে।
কলেজে আমি ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি।
ভেরি গুড।তিন রোজ পড়াবে শ রূপেয়া দিবে।তুমার ঘর ভাড়া হয়ে যাবে।
আচ্ছা বাসুদি আপনি যা বলবেন।
আর শুন বাড়ী থেকে ফিরে আমার কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে নিও।অন্য কেউ উঠবে না তোমার জিম্মা।
সুখর চোখে জল এসে পড়ার উপক্রম।মা বলছিল বাইরে থেকে কারো সম্পর্কে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।সুখ বলল,আমি আসি?
সাবধানে যেও।
রাস্তায় নেমে স্বস্তির শ্বাস ফেলে।বড় একটা সমস্যার সুরাহা হল।মেস থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকে হাটতে থাকে।