30-09-2022, 03:12 PM
(This post was last modified: 19-10-2022, 08:47 PM by জীবন পিয়াসি. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
আরেকটি প্রেমের গল্প (তৃতীয় পর্ব)
“কি… ক-কি হয়েছে মা?”, কাঁপা কাঁপা গলায় খুনের আসামীর মত জানতে চায় বিদিশা।
ভয়ে, আশঙ্কায় পেট মুচড়ে ওঠে, অবশ হাত থেকে খসে যায় সালোয়ারের দড়ি। ছোট কুর্তার তলায় গমরঙা পা দুটো উন্মুক্ত। রমেনের হাতে চায়ের কাপ প্লেট, অদুরে স্থির হয়ে যায় সে।
বিদিশার মায়ের ফ্যাকাশে মুখে ভাব লেশ নেই, তিনি চেয়ে রয়েছেন কোন সুদুরে… যেখানে দৃষ্টি ফেলে দেখা যায় কোন বিষণ্ণ হতাশাকে। বিদিশা গা হাত পা ধুয়েছে বোধহয়, মুখে আর ঘাড়ে লেগে রয়েছে জলের ছিটে, মুখে চোখে জল দেওয়ার ফলে, জলে ভিজে গিয়েছে কামিজের সামনের দিকে বুকের কিছুটা। সালোয়ারের পা টা মাটিতে পরে, কামিজের পাশের কাটা অংশটা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে প্যান্টি। রমেনের আজ রাতের মত ব্যবস্থা হয়ে গেল। তার লুঙ্গির ভেতরে একটা লাফ মেরে উঠল তার অর্ধঘুমন্ত যন্ত্রটি।
“বল না মা ক-কি…”, অস্থিরতা আর ভয় মেশানো গলায় আবার জিজ্ঞাসা করে বিদিশা, আর ঠিক তখনি চোখে পড়ে দরজার আড়ালে দাঁড়ানো রমেনের লোলুপ দৃষ্টি তার কামিজের ফাঁক বেয়ে প্যান্টির ধার অল্প দেখিয়ে যেখান দিয়ে দুটো নগ্ন পা নেমে গিয়েছে ঠিক সেইখানে আটকে রয়েছে। ঠোঁট অল্প ফাঁক, যেন মুখ দিয়ে লাল ঝরবে আরেকটু হলেই। চোখে কি প্রচণ্ড লালসা আর আকাঙ্ক্ষা। শীঘ্র নিজের ভুল বুঝতে পেরে পা দুটো ঢেকে ফেলে বিদিশা।
“দিশা, শুভ্রর মত ফুটফুটে একটা ছেলে… আমি তো ভাবতেও পারিনা। এমন অঘটন কি করে ঘটে বলতে পারিস আমায়?”, ওর মায়ের গলায় এবার কান্নার পূর্বাভাষ।
আস্তে আস্তে হেঁটে এসে মায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে বিদিশা, প্রত্যেকটা পদক্ষেপে যেন সঙ্কোচে, আর দুঃসহ যন্ত্রণায় বুক ফেটে যাচ্ছে তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার জানা দরকার জননী কতটুকু জানেন। শুভ্রই বা কতটুকু জানে?
“মা আমায় একবার খুলে বল, শুভ্র তোমায় কি বলেছে ফোন করে?”, ধৈর্যের মাত্রাচ্যুত বিদিশা এবার একটু যেন গলায় জোর পেল।
“ওর বাবা, শান্তনুবাবু… শেষকালে…”, বলে কান্নায় ভেঙে পরেন ভদ্রমহিলা।
এবার প্রমাদ গুনলো বিদিশা। তার চারপাশের পৃথিবীটা ক্রমশ দুটো দেওয়ালের মত মনে হতে লাগলো, যেই দেওয়াল দুটো দুইপাশ দিয়ে তার দিকে ক্রমাগত চেপে আসছে। তাকে যেন পিষে ফেলতে চায়। মাথার ওপর যেন ছাদ নয়, বন বন করে ঘুরছে কোন দুর্নিবার ঘূর্ণিঝড়।
“আমি তো-তোমাকে স-সব বলতাম, ম-মা…”, তোতলাতে থাকে ত্রস্ত সুন্দরী। গোলাপি ঠোঁটে থর থর করে কাঁপছে না বলতে পারা কথা আর জমাট বাঁধা অপরাধ বোধ।
“আমি এমনটা যে হবে বুঝতেই পারিনি ম-মা”, এবার লাল হয়ে গিয়েছে তরুণীর মুখ। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে বরফের মত।
“তুই কি করে বুঝবি মা, ভগবান কখন কি করেন কেউ কি টের পায়?”, একটু স্থির হয়ে বসলেন জননী।
বিদিশা এবার আচমকা টের পায় কথার খেই কিরকম অন্যরকম লাগছে।
“কি বলছ মা? কি হয়েছে শান্তনুবাবুর?” বিদিশা এবার স্পষ্টভাষী হয়ে ওঠে। তার আর বিলম্ব সইছে না। বিশেষ করে যখন তার মনে এই সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে যে হয়তো তার মা ঠিক সে যা ভাবছে সে বিষয়ে কথা বলছেন না।
“শান্তনুবাবু…” একটু থেমে তিনি ফের বললেন, “শান্তনুবাবু কাল রাত্রে খুন হয়েছেন।”
একেকটা শব্দ স্পষ্ট করে উচ্চারন করে তিনি বললেন। বিদিশা স্তম্ভিতের মত দাঁড়িয়ে রইল। সে কি শুনছে আর তার মা কি বলছেন এসমস্ত থেকে ঠিকরে বেরিয়ে গেল সে যোজন যোজন দূরে। নিমেষের মধ্যে। স্নায়ু অবশ হয়ে গিয়েছে। মুখে কোন ভাবমূর্তি নেই। যেন প্রাণের গভীর কোন স্তরে, যেখানে কেউ কোনদিনও উঁকি মেরে দেখবে না সেখানে, একটা নীলচে রঙের নামহীন ব্যাথা বুদবুদের মত ফেনিয়ে ফেনিয়ে উঠতে লাগলো।
“চিরসখা হে… ছেড়ো না মরে, ছেড়ো না…” হারমোনিয়ামের ঝঙ্কারের সাথে একটি সকরুণ মেয়েলি গলা সুরের মূর্ছনায় ভেসে এলো নিচের গানের ঘর থেকে। ছাত্রীরা এসে গিয়েছে সময় মত, তারা বসে গিয়েছে রেওয়াজে। শুধু তাদের দিদিমণি, বিদিশার মাতৃদেবী, আজ আর তাদের সাথে যোগ দিলেন না।…
“তুই তো বাড়ি এসেছিলি সেল ফোনের চার্জার ফেলে গিয়েছিলি বলে, তুই কি দেখিছিলি তখন? কেউ ছিল ঘরে হারান আর তোর বাবা ছাড়া?”, শান্ত কণ্ঠে শুধোন সদ্য বৈধব্যপ্রাপ্তা শ্যামলীদেবী। মাথায় তার তখনও প্রত্যহ ব্যবহৃত সিঁদুরের হালকা গোলাপি আভা, পুরোপুরি মোছেনি। গায়ে একটা ঘিয়ে রঙের হালকা বুটি বুটি তাঁতের শাড়ি। গতকাল ছেলের জন্মদিনে, একরকম বিরক্ত হয়েই তিনি শুভ্রকে নিয়ে বেলেঘাটায় তার বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কারন মহুল মিত্র। মহুলের আসবার কথা ছিল গতকাল। এই নিয়ে পূর্বেই বহু তর্ক বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল তার, তাই আর আলোচনা না বাড়িয়ে তিনি নিজেই কিছুদিনের জন্য নিজেকে সরিয়ে রাখবেন মনস্থ করেছিলেন। সঙ্গে ছেলেকেও নেওয়া শুধু মাত্র ওই বাতাবরণের মধ্যে শুভ্রকে থাকতে দিতে চাননি বলেই।
“কিরে? চুপ করে আছিস কেন?”, চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্বামী হারানো মহিলার পক্ষে শ্যামলীর কণ্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত মোলায়েম।
তার বৈবাহিক জীবন বলতে কিছুই ছিলনা, শুধু শান্তনুর ঘর বাড়ি, আসবাব পত্র, রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর, আর পুত্র শুভ্রর দেখভাল করা, এই ছিল তার জীবন। আর ছিল তার গাছেরা। বাগান করতে খুব ভালবাসেন তিনি। সেই জীবনের থেকে কিছুই হারায় নি, শুধু তার সাতপাকে ঘোরা বিয়ে করা মানুষটি শারীরিক ভাবে অনুপস্থিত। মনের অনুপস্থিতি ধরতে গেলে যেন পিছিয়ে যেতে হবে বিগত এক যুগ। শিল্পী শান্তনু, আর্ট হারিয়ে ফেলেছিলেন স্ত্রীর মধ্যে… বা হয়তো অন্যরকম শিল্প দেখেছিলেন তিনি তার সন্তানের জানকির মধ্যে যেটা বুঝতে পারেননি শ্যামলী… কে জানে তা!
“আমি জানি না, মা, আমাকে প্লীজ কিছু জিজ্ঞেস কোরো না”, শুভ্র বিব্রত হয়ে পড়ে।
হাত দুটো টেবিলের ওপর রাখা, মুঠি করা। অন্য চেয়ারে বসে আছেন শ্যামলীদেবী। খাবার টেবিলে বসে কথা কইছেন মা ছেলে। আত্মীয় পরিজনেরা রয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু চার জন। পুলিশ এসেছিল। চলে গিয়েছে। আবারো আসবে হয়তো।
শুভ্রর চোখে যেন জ্বলছে এক আদিম নৃশংস বহ্নি। দ্বগ্ধে চলেছে সে যেন ভেতরে ভেতরে কি এক অসহ্য জ্বালায়। কেন সে এসেছিল গতকাল… মনের মধ্যে হুড়হুড় করে ঘটনাগুলো ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে যেতে থাকে অনর্গল আর বার বার ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে থাকে তার মানসিক স্থিতি।
“কি হলো? হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? বাবা কই? এই চটিটা কার?” জুতো খুলতে খুলতে শুভ্র জিজ্ঞেস করে চলে এক নাগারে।
হারানের উত্তরের অপেক্ষা না করেই দেওয়ালে এক হাতের ভর দিয়ে নাইকের স্নিকার্স জোড়া, পায়ে পা লাগিয়ে গোড়ালি দিয়ে ঠেলে ঠুলে খুলে, এক ধারে ছেড়ে রেখে ঘরের ভেতরে এগিয়ে যায় শুভ্র।
“আর বোলো না সেল ফোনের চার্জারটা ফেলে গেছি গো, আজ জন্মদিন, রায়বাঘিনী তো এমনিতেই খাপ্পা হয়ে আছে, এর পর ফোন অফ পেলে আর রক্ষে থাকবে? তুমিই বল?”, হাসির ঝিলিক শুভ্রর মুখে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সেই বেলেঘাটা থেকে হুড়োহুড়ি করে এসেছে সে চার্জার নিয়ে যেতে।
“তু-তুমি বস, দাদাবাবু, আমি ডেকে দিচ্ছি বাবুকে।”, ইতস্তত করলো হারান, সে বিদিশাকে ঢুকতে দেখেছে। আবার শান্তনুর হাত ধরে স্টুডিওর অন্ধকার ঘরের ভেতরে হারিয়ে যেতেও দেখেছে। সে আঁচ করে ফেলেছে কি প্রচণ্ড একটা বিশ্রী পরিস্থিতি চলছে এই বাড়ির মধ্যে। শুভ্র পাছে কিছু দ্যাখে ফেলে, পাছে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পরে সেই ভয়ে সে আটকাতে চাইলো শুভ্রকে।
“ও বুঝেছি। সে এসেছে বুঝি আবার?”, মহুলের নাম কক্ষণো উচ্চারন করে না শুভ্র। এমনিতে পিতার কোন অদ্ভুত খেয়ালে বা আপাত-দৃষ্টিতে যা সৃষ্টিছাড়া এহেন আচরণে সে এক অসীম মমতাময় আশকারায় পিতার পক্ষ নিয়েই লড়েছে কেবল। কোনদিনও খেয়ালী, শিল্পী পিতার চরিত্রগত খুঁটিনাটির বিশ্লেষণে সে যায়নি। কিন্তু মহুলের ব্যাপারে শুভ্রর ব্যবহার ছিল একেবারে আলাদা। মহুলকে ও সহ্য করতে পারত না। যতবারই মহুল বাড়িতে এসেছে মডেলিংয়ের কাজে, শুভ্রর মুখোমুখি হয়েছে কখনো আসতে যেতে, ঘৃণাময় দৃষ্টিতে নিরীক্ষন করেছে শুভ্র এই অত্যন্ত অমার্জিত উচ্ছল যৌবনা রমণীকে।
“হ্যাঁ মানে… আমি দেখছি তুমি বস”, ঠিক কি বলবে ঠাহর করতে পারেনা স্বল্প শিক্ষিত চাকর হারান।
“আমি আর বসে কি করব, যাই গিয়ে চার্জারটা নিয়ে আসি।” বলে হলঘরের থেকে ভেতরের ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে যায় শুভ্র। স্টুডিয়োর দরজা বাঁ দিকে আর শুভ্রর ঘর ডান দিকে। পেছন দিয়ে অবশ্য আরেকটা দরজা রয়েছে যেটা জুড়ে গিয়েছে একটা লম্বা করিডোরের সাথে, সেই করিডর দিয়েও যাওয়া যায় বাকি দুটি ঘরে। একটি স্টুডিও, অপরটি শান্তনু ও শ্যামলীর শোবার ঘর।…
মহুলের এই বাড়িতে আসা যাওয়া কেউ কোনদিন মেনে নিতে পারেনি। না শ্যামলী না শুভ্র। শ্যামলী বরাবরই সবরকম প্রতিবাদ নীরবেই সেরেছেন। তাতে ফল হলো কি না হলো সে বিষয়ে তিনি খুব একটা নজর দেন নি। শুভ্র যদিও কখনো পিতার কোন কাজের মধ্যেই ভুল ধরবার চেষ্টা করেনি, বরঞ্চ একরকম পিতার পক্ষে যুক্তি ধার্য করে গিয়েছে চিরকাল, শুধু মাত্র মহুল মিত্রের ক্ষেত্রে তার মনোভাবে ছিল না বিন্দুমাত্র প্রশ্রয়ের অবকাশ। মহুল কে শুভ্র দেখতে পারেনি কোনদিন। ওর গায়ের সাথে লেপটে শাড়ি পরা, ওর অমার্জিত অকুণ্ঠিত পদক্ষেপ, ওর উত্তোলিত বক্ষদ্বয়, ওর নিতম্বের নিখুঁত গড়ন… ওর পাগল করা হাসির ঢল। ওর জ্বালাময়ী সৌন্দর্য। বিদিশা কত স্নিগ্ধ, কত কোমল, পূর্ণিমা রাতে দিঘির জলে ভাঙতে থাকা চাঁদের মতন। আর সে… মহুয়ার মৌতাত, হাসনুহানার উগ্রতা। অসহ্য সে। সে কোনদিন বিদিশা হতে পারবে না। নিজেকে বুঝিয়েছে শুভ্র। বা হয়তো নিজের অজান্তেই বুঝিয়েছে যে বিদিশা কোনদিন মহুল হতে পারবে না… নিজের এই নিষ্ফল ঘৃণার অক্ষমতা ঘৃণাই বাড়িয়েছে কেবল। মহুল কে ঘৃণা করে সে দ্বগ্ধে চলেছে তুষের আগুনে, নিরুপায় বীর্যস্খলন করেছে… নিভৃত একান্তে। তার পিতার সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে যে রমণীর, সে কত দুশ্চরিত্রা! পিতার তো কোন দোষ নেই, মহুল তো বিষাক্ত অপ্সরী, তার নিশ্বাসে রয়েছে সম্মোহনী নেশা। দিনের পর দিন মহুল আসে বাড়িতে, কার তাকে ভাল লাগে কি না লাগে তাতে যেন তার ভ্রুক্ষেপই নেই। পা যেন তার মাটিতে পড়ে না কখনো, যৌনতার জাদুকাঠি হাতে নিয়ে যেন সে চলেছে অভিসারে। এসে সে বসার ঘরে বসে শান্তনুর জন্যে অপেক্ষা করত প্রথম প্রথম। পরে সে সোজা স্টুডিওতে গিয়ে ঢুকতো।
“হারান, একটু চা খাওয়াবে গো…”, জলতরঙ্গের মত পাতলা মধুমাখা স্বরে সে দিব্যি আবদার পেশ করত।
রাতের পর রাত বেড়েছে কিন্তু তার বাবা শান্তনু আর তার নতুন সখের সখীর হাসি মস্করা চলেছে স্টুডিওর ঘরে। কখনো কখনো আবার সব চুপচাপ হয়ে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মহুল তখন পোজে। অনেক সময় দরজা শুধুই ভেজানো থাকতো। শ্যামলী নিজে লক্ষ্য রাখতেন যাতে কেউ স্টুডিওর দিকে গিয়ে ওর স্বামীকে বিরক্ত না করে। উনি অদ্ভুত জাতের মানুষ। বড্ড কোমল অথচ বড্ড একরোখা, কতকিছু যে মনে চেপে রেখে তিনি হাসিমুখে বাহ্যিক শান্তি বজায় রাখতে পারতেন তার হিসেব হবে না। কিন্তু সেদিন শ্যামলীদেবী বাড়ি ছিলেন না। এক দুঃসম্পর্কের বোনের ছেলের অন্নপ্রাশনে গিয়েছিলেন, রাতে ফেরবার কথা নয়। বর্ষার রাত। প্রায় সাড়ে নটা হবে। অনেকক্ষণ কোন সাড়া শব্দ নেই স্টুডিওতে। পড়ায় মন বসছে না কিছুতেই, স্টুডিওর ভেতরে কি চলছে এই নিয়ে মনে মনে নানা রূপ নাট্য এঁকে ফেলেছে শুভ্র। অজানা উপায়ে শক্ত হয়ে গিয়েছে তার ঘুমন্ত পুরুষাঙ্গ।…
ঘরে একটা ষাট ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে। হলুদ আলোয় মায়াবী পরিস্থিতি। একটা নিচু টুলের ওপর এক পা তুলে দাঁড়িয়েছে মহুল। একটা হাত কোমরে। চিবুক উঁচিয়ে রেখেছে যেন আকাশের পানে। অঙ্গে একটি সুতোও নেই, বিপুল আকৃতির স্তন, বিরাট দুই গোলক। পড়ার টেবিলে রাখা গ্লোবের মত। মাংসের ভারে ঈষৎ অবনতা। দুটো গাঢ় খয়েরি স্তনবৃন্ত, আর তাদের দুই বলয় থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে বেশ সুপুষ্টু চুষি দুটো তাদের ছুঁচোলো অগ্রভাগ নিয়ে। নারীত্বের উগ্র প্রতিমূর্তি। পেটে হালকা স্ফীতভাব। গভীর নাভিমূল, সেখান থেকে নেমে গিয়েছে হালকা লোমের রেখা আর নিচে, কোমর বেঁকেছে বসার ঘরে রাখা বিশাল ফুলদানিটার গলার মত। ভরাট পাছা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে এক্কেবারে নির্লোম যোনিমণ্ডলী… কিন্তু ত্রিকোণের ঠিক যেইখান থেকে বিভাজন নেমে গিয়েছে অতলের দিকে, সেইখানে রয়েছে যোনিকেশ দিয়ে সযত্নে বানানো একফালি বাহারি সিঁথি, যেন এক চূড়ান্ত বেহায়া আশকারা, এক অশালীন উস্কানি। শরীর থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে যৌন আবেদন। শুভ্রর পাজামার মধ্যে টনটন করে ওঠে বাঁশের লাঠিটা। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেনা! একি রাসায়নিক গোলযোগ চলছে তার শরীর জুড়ে… এত ঘৃণা যে নারীর প্রতি জমে রয়েছে তার মনে কানায় কানায়, তাকে দেখেই তার শরীরে কামের ইচ্ছা জাগছে! শান্তনুকে সে দেখতে পাচ্ছিল না এতক্ষন কিন্তু এবার নিজেকে আরেকটু সরিয়ে নিতেই সে দেখতে পায় তার বাবাকে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ শান্তনু হাতে তুলি নিয়ে একটা দাঁড় করানো ইজেলের ওপর রঙ বোলাচ্ছে। তার উন্মুক্ত পুরুষাঙ্গ হালকা ভাবে জানান দিচ্ছে উপস্থিতি, কিন্তু উদ্ধত নয়। বাইরে বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। কাঁচের জানালায় ঝমঝমিয়ে বর্ষে চলেছে আত্মহারার মত। পাশের বাড়িতে বোধহয় গান চলছে… একটা পরিচিত সুর কেমন যেন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির নিরবিচ্ছিন্ন মুখরতায়।
পাজামার ওপর হাত রেখে শান্ত হতে চায় শুভ্র। পা তার নড়ছে না। সে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। হাতের পরশে বেয়াড়া ঘোড়া যেন আরো অবাধ্য হয়ে উঠছে। হালকা স্বরে কি যেন বলে ওঠে নগ্নিকা সুন্দরী, আর তার প্রত্যুত্তরে ঘাড় নেড়ে সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দেয় শান্তনু। কোমর থেকে হাত নেমে আসে যোনি বিভাজনে, দুটো আঙুল দিয়ে ফাঁক করে… একি করছে মহুল! অদ্ভুত সাবলীলতার সাথে অকুণ্ঠিত অনায়াসে সে চুলকাচ্ছে সেই জায়গাটি। উলঙ্গ অবস্থায় আরেকটি পুরুষের চোখের সামনে সে নিজের যোনি চুলকচ্ছে দুটো আঙুল দিয়ে, একবার ঘাড় নামিয়ে দুটো আঙুল দিয়ে ফাঁক করে ধরে কি যেন দেখেও নিল সেইখানে। আর পারছে না শুভ্র। ঠক ঠক করে কাঁপছে সে। হাত দিয়ে পাশেই দরজার ফ্রেমটা ধরে নেয়, নইলে যেন পড়েই যাবে সে। পায়ের আঙুল কুঁকড়ে ধরেছে তলার মেঝেকে। শিরা উপশিরায় অনুভব করছে সে গরম রক্তের স্রোত। হারানের এই সময় রাতের খাবার গরম করবার কাজ থাকে। সে রান্নাঘরে ব্যস্ত। শুভ্র পাজামার ভেতর হাত পুরে দেয়।
“বৃষ্টির শব্দটা কেমন লাগছে মহুল?”, পিতার গলার স্বর শুনতে পায় শুভ্র।
শান্তনু এগিয়ে এসেছে মহুলের দিকে… এক হাতে তুলি অন্য হাতের আঙুল চালাচ্ছেন নিজের উসকো খুসকো চুলের ফাঁকে।
“আমাকে কেমন লাগছে শান্তনুদা?”, মহুল পাল্টা প্রশ্ন করে, আর নিজের দুটো বিপুল বক্ষ সম্ভার নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রদর্শনী করে।
ভাবটা এমন যেন ওগুলো দেখিয়েই প্রশ্নটা করছে সে শান্তনুকে।
“দুষ্টুমি করিস না মহুল… ব্রেক নিবি নাকি একটা? প্রায় এক ঘণ্টা হতে চললো পোজে আছিস, খাবি কিছু?”, শান্তনুর গলায় যেন প্রচণ্ড স্নেহের প্রাবল্য।
শুভ্রর মাথায় চিন্তাগুলো খেই হারিয়ে ফেলেছে এতক্ষনে। সে শুধু গোগ্রাসে গিলছে মহুলের শরীরের প্রত্যেকটা আনাচ কানাচের অনাবৃত উন্মুক্ত আবেদন। তার বগলের তলায় কি সুন্দর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। একটাও লোম নেই সেখানে। মহুলের গায়ের রঙ বিদিশার তুলনায় অনেকটাই চাপা। আর সেটাই যেন তার অ্যাপিলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
“তুমি এদিকে এস তো শান্তনুদা, এত বাজে চিন্তা তোমায় করতে হবে না। আমার এইটা চুলকাচ্ছে যে খুব…”, বাচ্চা মেয়ের মত চোখ পিটপিটিয়ে বলে ওঠে ন্যাংটো মেয়েটি, বেহায়ার মত দুই হাতে নিজের যোনিতে বিলি কাটতে কাটতে।
“এখনই ঠাণ্ডা করছি তোমায়, দুষ্টু মেয়ে”, এক কৃত্রিম রাগ মেশানো গলায় তাকে শাসন করতে চায় শান্তনু।
তারপর তার দিকে এগিয়ে আসে সে। দুই পা মুড়ে মেঝের উপর বসে পড়ে নিজের স্টুডিওয় দাঁড়ানো এই নগ্ন যুবতীর পায়ের কাছে। প্রসারিত দুটি হাতে ধরে নেয় তার বিরাট দুই উলঙ্গ পাছা। শুভ্র আর ভাবতে পারেনা, সে কি দেখছে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। এর আগে নারীর যোনিতে পুরুষের জিহ্বার স্পর্শ সে শুধু নীল ছবিতেই দেখেছে। তাও একবার দুবার… আর আজ তার চোখের সামনে, হলুদ আলোয় ধুয়ে যাওয়া এই ছোট্ট স্টুডিওর ঘরে তার উলঙ্গ পিতা হাঁটু মুড়ে বসে তার মডেল মহুল মিত্রের সবচেয়ে গোপন জায়গাটি চেটে চেটে পরিষ্কার করছেন।
“একটু ভাঁজগুলো পরিষ্কার করে দাও না, উম্মম… হ্যাঁ হ্যাঁ ওইখানটা, উফফ… তুমি কি ভাল পারো এটা…”, মহুলের গলায় আবেশ আর নোংরা চাহিদা ঝরে ঝরে পড়ছে।
তার অঙ্গের প্রতিটি শিহরণে ঝাঁকি দিয়ে নেচে নেচে উঠছে বুকের ওপর তার নরম দুটো তরমুজ… মহুলের সারা গায়ের চামড়া কেমন চকচক করছে এই মায়াবী আলোতে। শান্তনুর থুতনি বেয়ে একটা সাদা মত কি গড়াচ্ছে। শুভ্র আন্দাজ করে নেয় ওটা মহুলের যৌনরস। মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে চুষছে আর চাটছে শান্তনু। আর মহুল ওইভাবে কামদেবীর মত দাঁড়িয়ে এক হাতে খিমচে ধরেছে কর্মরত শান্তনুর মাথার চুল। মুখ বিকৃত। আঁখি মুদিত। পিঠ বেঁকে গিয়েছে ধনুকের আকারে, তার ফলে ঠেলে উঠে এসেছে দুটি উদ্ধত আটতিরিশ!… হাঁ করে যেন তারা দুটিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে। উফফ… এত বড় বুক কি করে হয় কারুর… কি জঘন্য এই মহিলা, কি মারাত্মক এর যৌন খিদে! ভাবতে ভাবতে হাতের গতি বাড়ছে শুভ্রর। পাজামার ভেতরেই যেন হয়ে যাবে বিস্ফোরণ। নিশ্বাস প্রশ্বাস চলছে দ্রুত। উফফ বাবার সাথে সেও যদি এই নারীকে ভোগ করবার সুযোগ পেত! চিন্তাগুলো এলোমেলো আর বিকৃত হয়ে যাচ্ছে শুভ্রর, মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে হারান আসছে কিনা। বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে দলাই মলাই করতে ইচ্ছে করছে এই নোংরা রমনীর দুধগুলো। কি ঘৃণা তার এই মহিলাটির প্রতি। উফ যদি সকলের সামনে একে ন্যাংটো করে দাঁড় করিয়ে রাখা যেত! উত্তেজনা আর উদ্দীপনার শিখরে উঠছে শুভ্র। যদি সব বন্ধু বান্ধবদের ডেকে এনে মহুলের গায়ে পেচ্ছাব করানো যেত! মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে শুভ্রর কামজ্বর। তার মনের ভেতরে চলছে মহুলকে নিয়ে হাজার হাজার অচিন্ত্যনীয় অশালীন মতলব আর তার চোখের সামনে চলছে তার বাবার রমণলীলা… মুখ দিয়ে তিনি যৌন তৃপ্তি দিচ্ছেন মহুলকে।
“আর কোরো না গো, আমার হয়ে যাবে…”, হাঁস ফাঁস করছে মহুল।
শান্তনু থামে না। সে আরো দ্রুত গতিতে লেহন চালিয়ে যায়। মুখ তুলে জিভ বার করে বড় বড় আঁচরে যোনি বিভাজন লম্বা লম্বি ভাবে চেটে দেয় বারকয়েক। আর প্রত্যেকবারই বিদ্যুৎপ্রবাহ বয়ে যায় মহুলের শিরদাঁড়া বেয়ে। শুভ্রর হাতের গতি এবার অভাবনীয়, ওদিকে শান্তনুর মাথাও নড়ছে প্রচণ্ড বেগে, দাঁড়িয়ে থাকা মহুলের দুইপায়ের মাঝখানে। মহুলের মুখ বেঁকে চুরে গিয়েছে। টুলের ওপরে রাখা পা’টা কাঁপছে, দুই পায়েরই আঙুলগুলো দেবে গিয়েছে, নখ দিয়ে যেন আঁকড়ে ধরতে চাইছে। এক হাতে শান্তনুর মাথা আরো ঢুকিয়ে দিতে চাইছে সে নিজের ভরাট যোনিমণ্ডলীর মধ্যে, অন্য হাতে নিজের একটা বুককে দুমড়ে মুচড়ে চলেছে। সে কি বীভৎস দৃশ্য, কি আগুন ঝরছে সেই কামাতুর বাঘিনীর গা দিয়ে! মহুলের সেই চূড়ান্ত মুহূর্তের শীৎকার শুনলে যেন আগুন লেগে যাবে দেহ মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শুভ্রর আশপাশের দুনিয়া গুলিয়ে গেল, চোখ বন্ধ হয়ে গেল, ব্রহ্মতালুতে যেন এসে লাগলো তীব্র একটা চেতনা, সবকিছু আলোয় আলোময় হয়ে গেল ভেতরে ভেতরে, যেন একটা বজ্রপাতকে কাছ থেকে দেখছে সে অন্তরের আঁখি দিয়ে… শরীরের সকলটুকু নিঙড়ে নিয়ে ছলকে ছলকে বেরিয়ে গেল তার সমস্ত রস। পাজামা ভিজে আঠা… জঙ্ঘা আর পা বেয়ে নামছে একটা দুটো শ্বেত বীর্যের ধারা। ধীরে ধীরে সুখের ক্লান্তি নিয়ে ফিরে এল সে তার নিজের কক্ষে।
“কোথায় রেখেছি বলোতো এই চার্জারটা?”, অশান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে শুভ্র।
পাশেই দাঁড়ানো হারান। শুভ্রকে ছায়ার মত অনুসরণ করতে করতে এসেছে সে। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা। সে চায়না দাদাবাবু জানুক স্টুডিওতে কে এসেছেন আজকে। মহুলের সঙ্গে শান্তনুকে যে শুভ্র দেখেছে বহুবার, সে কথা হারান জানত। সে নিজেও সেই ভয়ানক দৃশ্য দেখে কাতর যৌন নিপীড়ন সয়েছে প্রচুর।
কিন্তু আজ যাকে সে শান্তনুর হাত ধরে স্টুডিওর ঘরে ঢুকতে দেখেছে, তাকে দেখলে যে দাদাবাবুর মাথা আর ঠিক থাকবে না এইটুকু বোঝবার ক্ষমতা এই অশিক্ষিত চাকরটির ভালোই ছিল। সে নিজে চোখে দেখেছে সেই দৃশ্য। দেখেও নিজের চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে পারেনি, ভেবেছে হয়তো কোন ছবি-টবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন বাবু বিদিশা দিদিমণিকে। কিন্তু নিজের মনিবের চারিত্রিক দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত চাকরটি তবুও যাচাই করে দেখতে চেয়েছিল আসল ঘটনাটা ঠিক কি। আস্তে আস্তে অনিশ্চিত পদক্ষেপে, বুকে যথেষ্ট ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল স্টুডিওর দিকে…
……”এই বুকগুলো ওড়না দিয়ে কে ঢেকে রাখে, বোকা মেয়ে কোথাকার”, হাল্কা তিরস্কারের স্বর শান্তনুর বাচনভঙ্গিতে।
“ওহহ্… নাহহহ্… না… নাহ”, হাত দিয়ে শান্তনুর জিভের শয়তানি বন্ধ করতে চায় বিদিশা তার খোলা বুকের ওপর থেকে, কিন্তু শান্তনু ধরে ফেলে ওর দুটো হাত।
“এরকম করলে কিন্তু প্যান্টিও খুলে দেব”, ঈষৎ ভর্ৎসনা ছুঁড়ে দেয় শান্তনু, ইতর নির্লজ্জ গলায় পুত্রের প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে, যে শুধুমাত্র তার যোনিদেশ ছাড়া সম্পূর্ণ বিবসনা।
এমন সময় আবজানো দরজার বাইরে পদশব্দ শোনা যায় অদুরেই। মুহূর্তে শান্তনু টানটান হয়ে যায়।
চেঁচিয়ে বলে, “কে ওখানে?”
বিদিশা শশব্যস্ত, সচকিত।
“আমি হারান”, কুণ্ঠিত গলার স্বর ভেসে আসে পরিচারকের। সে যে অবশ্যই বুঝেছে ভেতরে কি লীলাখেলা চলছে তা প্রকট তার না বোঝার ভঙ্গিতে, আর বিশ্বাসঘাতক গলার স্বরে প্রতীয়মান কুণ্ঠায়।
“কি চাই”, গলা বাড়িয়ে বিরক্তিপূর্ণ কণ্ঠে শুধোয় শান্তনু। হাত দিয়ে মলতে থাকে বিদিশার ত্রস্ত বুক, যা সে প্রাণপণে ঢাকবার চেষ্টা করছিল আসন্ন বিপদের আশঙ্কায়।
“এখন একটু ব্যস্ত আছি হারান, পরে এসো”, মুখে মৃদু হাসি, হাত দিয়ে খুঁটছে বিদিশার খয়েরি বোঁটার চোখা অগ্রভাগ। বিদিশা এই অস্বাভাবিক বেহায়া আচরণে চোখ বুজে মাথা একদিকে ঘুরিয়ে, দাঁত দিয়ে তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল হারানের পায়ের আওয়াজ।……
মিনিট কুড়ি আগের এই ঘটনা মনে পড়ে যায় হারানের।
“কি হল? হাঁ করে কি ভাবছ? বলবে তো দেখেছ কিনা জিনিসটা?”, পড়ার টেবিল হাতড়াতে হাতড়াতে ফের জিজ্ঞেস করে শুভ্র।
“অ্যাঁ… আজ্ঞে… না তো!”, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে হারানের মুখ।
“কি হয়েছে বলোতো হারানদা? বাবা কি কিছু বলেছে তোমায়? তবে কি সেই অসহ্য মহিলাটি কিছু বলেছে? তারা কি স্টুডিওর ঘরে ঢুকে বসে আছে নাকি?”
প্রশ্নগুলোর কোন জবাব নেই হারানের কাছে, সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শুভ্রর ফর্সা মুখটার দিকে। এত দৌড়ঝাঁপ আর খোঁজাখুঁজিতে যেই মুখটা এখন রাঙা হয়ে গিয়েছিল।
“সরো তো, আমি দেখে আসি মায়ের ঘরে রেখে এসেছি কিনা…”, বলে হারানকে বাঁ হাত দিয়ে আলতো করে সরিয়ে শুভ্র পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় করিডোরে।
স্টুডিওর ঘরের আলো জ্বলছে না, মা বাবার বেডরুমে আলো জ্বলছে, দরজাও খোলা, আর একটা হালকা মেয়েলি গলার গোঙানি শোনা যাচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে শুভ্র বুঝতে পারলো কি চলছে তার বাড়িতে, তার এবং তার মায়ের অনুপস্থিতিতে। নাঃ আর পারা যাচ্ছে না, বাবাকে কোন কাজের জন্যে কোনদিন কিচ্ছু বলেনি সে, চিরকাল শ্রদ্ধা করে এসেছে, অন্য জগতের মানুষ ভেবে ঘাঁটাতে যায়নি কখনো। কিন্তু আজ যখন মায়ের শোবার ঘরে বাবা তার অবৈধ কামসঙ্গিনী কে নিয়ে এসে তুলেছেন তখন আর শুভ্রর মতিস্থির রইল না। পিতার ওপর রাগে আর মহুলের প্রতি ঘৃণায় কাঁপতে কাঁপতে সে এগোতে লাগলো অন্ধকার করিডোর দিয়ে ওই আলোকিত দরজার অভিমুখে। আর তার কানের পর্দায় ক্রমশই বাড়তে লাগলো সুখের আর্তনাদ। কি অশ্লীল, কি আদিম।…
“কি হয়েছে কিছু বলবি? শুভ্রর পাশে তো এখন তোরই সবচেয়ে বেশী থাকা উচিৎ। অথচ তুই তো…”, তুলিকা যে পাশ থেকে কথা বলে যাচ্ছিল সেটা বুঝতে পারলেও উত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা ছিল না বিদিশার।
তুলিকাদের বাড়ির ছাদ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় জোড়াদীঘির কাজলকালো জলের রাশি। শোনা যায় প্যাঁ-প্যু রিক্সার আওয়াজ। ছাদের টবে কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছে।
“ওগুলো কি ঝুমকোলতা ফুল?”, বিদিশার চোখ চলে গিয়েছে বহুদুরে, মনে হাজার স্মৃতিগন্ধের মেলা… প্রশ্নটা কেমন বেখাপ্পা।
“না, কেন?”, কিছুটা অধৈর্য হয়ে পরে তুলিকা। প্রশ্ন করে করে বিদিশার কাছ থেকে সঠিক কোন উত্তর তো মিলছেই না, উপরন্ত পাল্টা কিছু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।
“হুম…? নাহ এমনি… শান্তনুবাবু চলে গেলেন না?”
“শান্তনুবাবু আবার কি? তুই চিনিস না ওনাকে?”
“চিনি তো তুলি, শান্তনুবাবুকে যে খুব কাছ থেকে চিনেছি রে”, এবার প্রিয়সখীর গলায় অন্যরকম ভাব টের পায় তুলিকা।
“কি বলতে চাইছিস বলতো? সেই তখন থেকে দেখছি…”, তুলিকা কথা শেষ করবার আগেই একটা শ্বাস টানার আওয়াজ হয়, বিদিশার চোখ জলে টইটম্বুর… ভাঙা চাঁদের অল্প আলোতেও দিব্যি চকচক করছে।
“আমি তাকে সব দিয়ে এসেছি তুলি…”, ভাবাবেগের বিপুল ঢেউ এসে কথার গতিপথ আটকে দেয়।
ছাদের পাঁচিলের ওপর রাখা বিদিশার চাঁপাকলির মত হাতটা আলতো করে ধরে ফেলে তুলিকা।
তুলিকার ঘাড়ে মাথা নামিয়ে আনে বিদিশা, চোখ দিয়ে তার জল গড়াচ্ছে, ঠোঁট কাঁপছে থর থর করে।
“ইশ!”, বলে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তুলিকা। সে সবটাই বুঝেছে।
এবার তুলিকাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে তার প্রিয় বান্ধবী। দুনিয়ায় এই একটা জায়গাই তো আছে, যেখানে ছোটবেলা থেকে সবকিছু প্রকাশ করতে পেড়েছে। তুলিকাও নিজের সমস্ত কথাই বিদিশাকে বলে এসেছে চিরকাল। ওদের একে অপরকে গোপন করবার মতো কিছুই নেই। ছোটবেলার থেকে একসাথে ওঠা বসা, নাওয়া খাওয়া।… তুলিকা বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয় বিদিশাকে, এক হাত দিয়ে তার মাথার চুলে আদর করতে থাকে। তুলির নরম বুকের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত মমতাময় আশ্রয় খুঁজে পায় আহত দিশা। তার মাথার যত চিন্তা, অপরাধ বোধ যেন বিসর্জন দিতে পারে সে এই বুকের গভীরতায়, এই মায়াময় হাতের ভরসায়। কোন চিন্তা না করেই মুখ ডুবিয়ে দিল সে তুলিকার বয়েসের তুলনায় ভারী দুটো স্তনের মাঝখানে। বিদিশার অশ্রুকম্পিত অধর হালকা ভাবে ছুঁয়ে থাকে তুলিকার অন্তর্বাসহীন স্তনবৃন্তের একটি। বিদিশার কিছু এসে যায়না তাতে। এই বুকটায় আজ মাথা রেখে সে সব অপরাধ গ্লানি ভুলে যেতে চায়। চোখের জলে সিক্ত নাইটি আর বিদিশার ঠোঁটের পরশ যেন আরো প্রকট করে তোলে তুলির তুলতুলে বুকের ওপরের শক্ত হতে থাকা বৃন্তমূল। সেইসব দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই দুই কন্যার। তুলির আজ অদ্ভুত ভালো লাগছে বিদিশাকে শান্ত করতে পেরে। আর বিদিশার মনে অবশেষে শান্তি নেমে আসছে তুলিকার স্নেহভরা আদরে। অত্যন্ত যত্নে ও স্নেহে তার মুখটা তুলে ধরে তুলিকা দুই হাত দিয়ে। অন্ধকার বেড়ে গিয়েছে এখন অনেকটাই, কিন্তু পূর্ণিমা গিয়েছে মাত্র কদিন হলো, তাই চাঁদের আলোতে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিদিশার কান্নাভেজা অথচ অপূর্ব মাধুরীমণ্ডিত মুখখানি। দুজনেই দুজনের চোখের তারায় খুঁজে পায় অপার ভালবাসা আর অগাধ ভরসা। চোখে চোখ রেখে বাল্যকালের এই অভিন্নহৃদয় সখিদ্বয় অনুভব করতে থাকে তাদের পরাণের বন্ধন, মনের টান… জোড়াদীঘির কাজল জলে তখনও কাদের দুটো হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের সময়মত। এদিকে চাঁদ গলছে অনর্গল রাতের গায়ে গায়ে… বুকে বুক ঠেকে গিয়েছে দুই মেয়ের, প্রানের স্পন্দন স্পন্দিত হচ্ছে একই ছন্দে।
“আমি বুঝেছি তোকে” যেন বলছে তুলিকার চোখ।
“আমি বিশ্বাস করি…” যেন বলছে বিদিশার স্থির দুই অধর।
অন্ধকারে মিশেছে অন্ধকার, দুটি মেয়ের শরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে মায়ার বন্ধনে। নরম উষ্ণতায় মিশে যায় নরম উষ্ণতা… ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটের উদ্দেশ্যে। চাঁদ মুচকি হেসে মুড়ি দেয় মেঘের আবডাল, আর হাঁস দুটো মেতেছে খেলায়।
“চা দিয়ে দি বসার ঘরে?”, হারানের প্রশ্নে একটু চমকে উঠলেন শ্যামলীদেবী।
ছেলের চেহারায় ফুটে ওঠা অভিব্যক্তিগুলো ধরবার জন্যে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন শুভ্রর ভাবলেশহীন মুখের দিকে। এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন তিনি। গায়ের কাপড়টা ঠিক করে নিয়ে তাকালেন হারানের দিকে। সেই কবে থেকে এ বাড়িতে পরিচারকের কাজে নিযুক্ত রয়েছে এই বেঁটেখাটো রোগাসোগা মানুষটি। আজ অব্দি কোনদিন কোন অসুবিধা করেনি, তর্ক বিতর্ক কিম্বা কোন অসৎ মতলব, কিছুই ছিলনা হারানের। শ্যামলীকে অত্যন্ত ভক্তি করে চলত সে চিরকাল। শ্যামলীর বিয়ে হয়েছিল উনিশ বছর বয়েসে। তখন সবে কলেজে পড়েন তিনি। শান্তনুর প্রেমে তাঁর নাজেহাল অবস্থা। একরকম বাড়ির সকলের অমতে, এক কাপড়ে, শান্তনুর হাত ধরে মিস্তিরি লেনের বাড়িতে এসে উঠেছিলেন, সে এখন প্রায় এক যুগ আগেকার কথা। হারান রয়েছে সেই তখন থেকে। তাঁকে উনিশ বছরের বালিকা থেকে যুবতী হতে, যুবতী থেকে দক্ষ গৃহিণী এবং পরে শুভ্রর জননী হয়ে উঠতে দেখেছে সে চোখের সামনে। চনমনে তন্বী শ্যামলী কিভাবে আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়লেন পারিপার্শ্বিকতার চাপে হারান দেখেছে পুরোটাই। বউমণির যেই অপূর্ব রূপের ডালি নিয়ে তিনি এসেছিলেন শান্তনুর ঘর করতে, সেই রূপ প্রায় সবটাই চলে গিয়েছে আজ, কিন্তু হারানের চোখ থেকে সেই অপার বিস্ময় আজও যায়নি। তার বউমণির কষ্ট সে বুঝতে পারে। কিন্তু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা আর মনে মনে শ্রদ্ধা করা ছাড়া সে আর কি বা করতে পারে?
“চা দিয়ে দেবে…? দাও, সাথে কিছু দিও”, খুব ভেবে ভেবে যেন এক একটা কথা বললেন শ্যামলীদেবী।
“মা, আমি একটু বেরোবো? ঘরের মধ্যে আর ভালো লাগছে না…”, অনুমতি চায় শুভ্র।
“সে তুই যাবি যা, কিন্তু সেদিন এসে কি দেখেছিলি পুলিশকে ঠিকমত না বললেও আমাকে কিন্তু বলিস বাবা, ভয় পাস না, আমি সব সইতে পারব।” মুখে এক অদ্ভুত হাসি শ্যামলীর। সত্যিই যেন তাঁর বুকটা পাথর হয়ে গিয়েছিল দিনের পর দিন স্বামীর অনাদরে।
“মহুল যে এমন কাণ্ড করবে কটা টাকার জন্যে, কিম্বা ওর ভাগের খ্যাতিটুকুর জন্যে তা আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি জানিস?” শ্যামলী ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে ওঠেন।
“কি… ক-কি হয়েছে মা?”, কাঁপা কাঁপা গলায় খুনের আসামীর মত জানতে চায় বিদিশা।
ভয়ে, আশঙ্কায় পেট মুচড়ে ওঠে, অবশ হাত থেকে খসে যায় সালোয়ারের দড়ি। ছোট কুর্তার তলায় গমরঙা পা দুটো উন্মুক্ত। রমেনের হাতে চায়ের কাপ প্লেট, অদুরে স্থির হয়ে যায় সে।
বিদিশার মায়ের ফ্যাকাশে মুখে ভাব লেশ নেই, তিনি চেয়ে রয়েছেন কোন সুদুরে… যেখানে দৃষ্টি ফেলে দেখা যায় কোন বিষণ্ণ হতাশাকে। বিদিশা গা হাত পা ধুয়েছে বোধহয়, মুখে আর ঘাড়ে লেগে রয়েছে জলের ছিটে, মুখে চোখে জল দেওয়ার ফলে, জলে ভিজে গিয়েছে কামিজের সামনের দিকে বুকের কিছুটা। সালোয়ারের পা টা মাটিতে পরে, কামিজের পাশের কাটা অংশটা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে প্যান্টি। রমেনের আজ রাতের মত ব্যবস্থা হয়ে গেল। তার লুঙ্গির ভেতরে একটা লাফ মেরে উঠল তার অর্ধঘুমন্ত যন্ত্রটি।
“বল না মা ক-কি…”, অস্থিরতা আর ভয় মেশানো গলায় আবার জিজ্ঞাসা করে বিদিশা, আর ঠিক তখনি চোখে পড়ে দরজার আড়ালে দাঁড়ানো রমেনের লোলুপ দৃষ্টি তার কামিজের ফাঁক বেয়ে প্যান্টির ধার অল্প দেখিয়ে যেখান দিয়ে দুটো নগ্ন পা নেমে গিয়েছে ঠিক সেইখানে আটকে রয়েছে। ঠোঁট অল্প ফাঁক, যেন মুখ দিয়ে লাল ঝরবে আরেকটু হলেই। চোখে কি প্রচণ্ড লালসা আর আকাঙ্ক্ষা। শীঘ্র নিজের ভুল বুঝতে পেরে পা দুটো ঢেকে ফেলে বিদিশা।
“দিশা, শুভ্রর মত ফুটফুটে একটা ছেলে… আমি তো ভাবতেও পারিনা। এমন অঘটন কি করে ঘটে বলতে পারিস আমায়?”, ওর মায়ের গলায় এবার কান্নার পূর্বাভাষ।
আস্তে আস্তে হেঁটে এসে মায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে বিদিশা, প্রত্যেকটা পদক্ষেপে যেন সঙ্কোচে, আর দুঃসহ যন্ত্রণায় বুক ফেটে যাচ্ছে তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার জানা দরকার জননী কতটুকু জানেন। শুভ্রই বা কতটুকু জানে?
“মা আমায় একবার খুলে বল, শুভ্র তোমায় কি বলেছে ফোন করে?”, ধৈর্যের মাত্রাচ্যুত বিদিশা এবার একটু যেন গলায় জোর পেল।
“ওর বাবা, শান্তনুবাবু… শেষকালে…”, বলে কান্নায় ভেঙে পরেন ভদ্রমহিলা।
এবার প্রমাদ গুনলো বিদিশা। তার চারপাশের পৃথিবীটা ক্রমশ দুটো দেওয়ালের মত মনে হতে লাগলো, যেই দেওয়াল দুটো দুইপাশ দিয়ে তার দিকে ক্রমাগত চেপে আসছে। তাকে যেন পিষে ফেলতে চায়। মাথার ওপর যেন ছাদ নয়, বন বন করে ঘুরছে কোন দুর্নিবার ঘূর্ণিঝড়।
“আমি তো-তোমাকে স-সব বলতাম, ম-মা…”, তোতলাতে থাকে ত্রস্ত সুন্দরী। গোলাপি ঠোঁটে থর থর করে কাঁপছে না বলতে পারা কথা আর জমাট বাঁধা অপরাধ বোধ।
“আমি এমনটা যে হবে বুঝতেই পারিনি ম-মা”, এবার লাল হয়ে গিয়েছে তরুণীর মুখ। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে বরফের মত।
“তুই কি করে বুঝবি মা, ভগবান কখন কি করেন কেউ কি টের পায়?”, একটু স্থির হয়ে বসলেন জননী।
বিদিশা এবার আচমকা টের পায় কথার খেই কিরকম অন্যরকম লাগছে।
“কি বলছ মা? কি হয়েছে শান্তনুবাবুর?” বিদিশা এবার স্পষ্টভাষী হয়ে ওঠে। তার আর বিলম্ব সইছে না। বিশেষ করে যখন তার মনে এই সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে যে হয়তো তার মা ঠিক সে যা ভাবছে সে বিষয়ে কথা বলছেন না।
“শান্তনুবাবু…” একটু থেমে তিনি ফের বললেন, “শান্তনুবাবু কাল রাত্রে খুন হয়েছেন।”
একেকটা শব্দ স্পষ্ট করে উচ্চারন করে তিনি বললেন। বিদিশা স্তম্ভিতের মত দাঁড়িয়ে রইল। সে কি শুনছে আর তার মা কি বলছেন এসমস্ত থেকে ঠিকরে বেরিয়ে গেল সে যোজন যোজন দূরে। নিমেষের মধ্যে। স্নায়ু অবশ হয়ে গিয়েছে। মুখে কোন ভাবমূর্তি নেই। যেন প্রাণের গভীর কোন স্তরে, যেখানে কেউ কোনদিনও উঁকি মেরে দেখবে না সেখানে, একটা নীলচে রঙের নামহীন ব্যাথা বুদবুদের মত ফেনিয়ে ফেনিয়ে উঠতে লাগলো।
“চিরসখা হে… ছেড়ো না মরে, ছেড়ো না…” হারমোনিয়ামের ঝঙ্কারের সাথে একটি সকরুণ মেয়েলি গলা সুরের মূর্ছনায় ভেসে এলো নিচের গানের ঘর থেকে। ছাত্রীরা এসে গিয়েছে সময় মত, তারা বসে গিয়েছে রেওয়াজে। শুধু তাদের দিদিমণি, বিদিশার মাতৃদেবী, আজ আর তাদের সাথে যোগ দিলেন না।…
“তুই তো বাড়ি এসেছিলি সেল ফোনের চার্জার ফেলে গিয়েছিলি বলে, তুই কি দেখিছিলি তখন? কেউ ছিল ঘরে হারান আর তোর বাবা ছাড়া?”, শান্ত কণ্ঠে শুধোন সদ্য বৈধব্যপ্রাপ্তা শ্যামলীদেবী। মাথায় তার তখনও প্রত্যহ ব্যবহৃত সিঁদুরের হালকা গোলাপি আভা, পুরোপুরি মোছেনি। গায়ে একটা ঘিয়ে রঙের হালকা বুটি বুটি তাঁতের শাড়ি। গতকাল ছেলের জন্মদিনে, একরকম বিরক্ত হয়েই তিনি শুভ্রকে নিয়ে বেলেঘাটায় তার বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কারন মহুল মিত্র। মহুলের আসবার কথা ছিল গতকাল। এই নিয়ে পূর্বেই বহু তর্ক বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল তার, তাই আর আলোচনা না বাড়িয়ে তিনি নিজেই কিছুদিনের জন্য নিজেকে সরিয়ে রাখবেন মনস্থ করেছিলেন। সঙ্গে ছেলেকেও নেওয়া শুধু মাত্র ওই বাতাবরণের মধ্যে শুভ্রকে থাকতে দিতে চাননি বলেই।
“কিরে? চুপ করে আছিস কেন?”, চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্বামী হারানো মহিলার পক্ষে শ্যামলীর কণ্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত মোলায়েম।
তার বৈবাহিক জীবন বলতে কিছুই ছিলনা, শুধু শান্তনুর ঘর বাড়ি, আসবাব পত্র, রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর, আর পুত্র শুভ্রর দেখভাল করা, এই ছিল তার জীবন। আর ছিল তার গাছেরা। বাগান করতে খুব ভালবাসেন তিনি। সেই জীবনের থেকে কিছুই হারায় নি, শুধু তার সাতপাকে ঘোরা বিয়ে করা মানুষটি শারীরিক ভাবে অনুপস্থিত। মনের অনুপস্থিতি ধরতে গেলে যেন পিছিয়ে যেতে হবে বিগত এক যুগ। শিল্পী শান্তনু, আর্ট হারিয়ে ফেলেছিলেন স্ত্রীর মধ্যে… বা হয়তো অন্যরকম শিল্প দেখেছিলেন তিনি তার সন্তানের জানকির মধ্যে যেটা বুঝতে পারেননি শ্যামলী… কে জানে তা!
“আমি জানি না, মা, আমাকে প্লীজ কিছু জিজ্ঞেস কোরো না”, শুভ্র বিব্রত হয়ে পড়ে।
হাত দুটো টেবিলের ওপর রাখা, মুঠি করা। অন্য চেয়ারে বসে আছেন শ্যামলীদেবী। খাবার টেবিলে বসে কথা কইছেন মা ছেলে। আত্মীয় পরিজনেরা রয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু চার জন। পুলিশ এসেছিল। চলে গিয়েছে। আবারো আসবে হয়তো।
শুভ্রর চোখে যেন জ্বলছে এক আদিম নৃশংস বহ্নি। দ্বগ্ধে চলেছে সে যেন ভেতরে ভেতরে কি এক অসহ্য জ্বালায়। কেন সে এসেছিল গতকাল… মনের মধ্যে হুড়হুড় করে ঘটনাগুলো ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে যেতে থাকে অনর্গল আর বার বার ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে থাকে তার মানসিক স্থিতি।
“কি হলো? হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? বাবা কই? এই চটিটা কার?” জুতো খুলতে খুলতে শুভ্র জিজ্ঞেস করে চলে এক নাগারে।
হারানের উত্তরের অপেক্ষা না করেই দেওয়ালে এক হাতের ভর দিয়ে নাইকের স্নিকার্স জোড়া, পায়ে পা লাগিয়ে গোড়ালি দিয়ে ঠেলে ঠুলে খুলে, এক ধারে ছেড়ে রেখে ঘরের ভেতরে এগিয়ে যায় শুভ্র।
“আর বোলো না সেল ফোনের চার্জারটা ফেলে গেছি গো, আজ জন্মদিন, রায়বাঘিনী তো এমনিতেই খাপ্পা হয়ে আছে, এর পর ফোন অফ পেলে আর রক্ষে থাকবে? তুমিই বল?”, হাসির ঝিলিক শুভ্রর মুখে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সেই বেলেঘাটা থেকে হুড়োহুড়ি করে এসেছে সে চার্জার নিয়ে যেতে।
“তু-তুমি বস, দাদাবাবু, আমি ডেকে দিচ্ছি বাবুকে।”, ইতস্তত করলো হারান, সে বিদিশাকে ঢুকতে দেখেছে। আবার শান্তনুর হাত ধরে স্টুডিওর অন্ধকার ঘরের ভেতরে হারিয়ে যেতেও দেখেছে। সে আঁচ করে ফেলেছে কি প্রচণ্ড একটা বিশ্রী পরিস্থিতি চলছে এই বাড়ির মধ্যে। শুভ্র পাছে কিছু দ্যাখে ফেলে, পাছে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পরে সেই ভয়ে সে আটকাতে চাইলো শুভ্রকে।
“ও বুঝেছি। সে এসেছে বুঝি আবার?”, মহুলের নাম কক্ষণো উচ্চারন করে না শুভ্র। এমনিতে পিতার কোন অদ্ভুত খেয়ালে বা আপাত-দৃষ্টিতে যা সৃষ্টিছাড়া এহেন আচরণে সে এক অসীম মমতাময় আশকারায় পিতার পক্ষ নিয়েই লড়েছে কেবল। কোনদিনও খেয়ালী, শিল্পী পিতার চরিত্রগত খুঁটিনাটির বিশ্লেষণে সে যায়নি। কিন্তু মহুলের ব্যাপারে শুভ্রর ব্যবহার ছিল একেবারে আলাদা। মহুলকে ও সহ্য করতে পারত না। যতবারই মহুল বাড়িতে এসেছে মডেলিংয়ের কাজে, শুভ্রর মুখোমুখি হয়েছে কখনো আসতে যেতে, ঘৃণাময় দৃষ্টিতে নিরীক্ষন করেছে শুভ্র এই অত্যন্ত অমার্জিত উচ্ছল যৌবনা রমণীকে।
“হ্যাঁ মানে… আমি দেখছি তুমি বস”, ঠিক কি বলবে ঠাহর করতে পারেনা স্বল্প শিক্ষিত চাকর হারান।
“আমি আর বসে কি করব, যাই গিয়ে চার্জারটা নিয়ে আসি।” বলে হলঘরের থেকে ভেতরের ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে যায় শুভ্র। স্টুডিয়োর দরজা বাঁ দিকে আর শুভ্রর ঘর ডান দিকে। পেছন দিয়ে অবশ্য আরেকটা দরজা রয়েছে যেটা জুড়ে গিয়েছে একটা লম্বা করিডোরের সাথে, সেই করিডর দিয়েও যাওয়া যায় বাকি দুটি ঘরে। একটি স্টুডিও, অপরটি শান্তনু ও শ্যামলীর শোবার ঘর।…
মহুলের এই বাড়িতে আসা যাওয়া কেউ কোনদিন মেনে নিতে পারেনি। না শ্যামলী না শুভ্র। শ্যামলী বরাবরই সবরকম প্রতিবাদ নীরবেই সেরেছেন। তাতে ফল হলো কি না হলো সে বিষয়ে তিনি খুব একটা নজর দেন নি। শুভ্র যদিও কখনো পিতার কোন কাজের মধ্যেই ভুল ধরবার চেষ্টা করেনি, বরঞ্চ একরকম পিতার পক্ষে যুক্তি ধার্য করে গিয়েছে চিরকাল, শুধু মাত্র মহুল মিত্রের ক্ষেত্রে তার মনোভাবে ছিল না বিন্দুমাত্র প্রশ্রয়ের অবকাশ। মহুল কে শুভ্র দেখতে পারেনি কোনদিন। ওর গায়ের সাথে লেপটে শাড়ি পরা, ওর অমার্জিত অকুণ্ঠিত পদক্ষেপ, ওর উত্তোলিত বক্ষদ্বয়, ওর নিতম্বের নিখুঁত গড়ন… ওর পাগল করা হাসির ঢল। ওর জ্বালাময়ী সৌন্দর্য। বিদিশা কত স্নিগ্ধ, কত কোমল, পূর্ণিমা রাতে দিঘির জলে ভাঙতে থাকা চাঁদের মতন। আর সে… মহুয়ার মৌতাত, হাসনুহানার উগ্রতা। অসহ্য সে। সে কোনদিন বিদিশা হতে পারবে না। নিজেকে বুঝিয়েছে শুভ্র। বা হয়তো নিজের অজান্তেই বুঝিয়েছে যে বিদিশা কোনদিন মহুল হতে পারবে না… নিজের এই নিষ্ফল ঘৃণার অক্ষমতা ঘৃণাই বাড়িয়েছে কেবল। মহুল কে ঘৃণা করে সে দ্বগ্ধে চলেছে তুষের আগুনে, নিরুপায় বীর্যস্খলন করেছে… নিভৃত একান্তে। তার পিতার সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে যে রমণীর, সে কত দুশ্চরিত্রা! পিতার তো কোন দোষ নেই, মহুল তো বিষাক্ত অপ্সরী, তার নিশ্বাসে রয়েছে সম্মোহনী নেশা। দিনের পর দিন মহুল আসে বাড়িতে, কার তাকে ভাল লাগে কি না লাগে তাতে যেন তার ভ্রুক্ষেপই নেই। পা যেন তার মাটিতে পড়ে না কখনো, যৌনতার জাদুকাঠি হাতে নিয়ে যেন সে চলেছে অভিসারে। এসে সে বসার ঘরে বসে শান্তনুর জন্যে অপেক্ষা করত প্রথম প্রথম। পরে সে সোজা স্টুডিওতে গিয়ে ঢুকতো।
“হারান, একটু চা খাওয়াবে গো…”, জলতরঙ্গের মত পাতলা মধুমাখা স্বরে সে দিব্যি আবদার পেশ করত।
রাতের পর রাত বেড়েছে কিন্তু তার বাবা শান্তনু আর তার নতুন সখের সখীর হাসি মস্করা চলেছে স্টুডিওর ঘরে। কখনো কখনো আবার সব চুপচাপ হয়ে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মহুল তখন পোজে। অনেক সময় দরজা শুধুই ভেজানো থাকতো। শ্যামলী নিজে লক্ষ্য রাখতেন যাতে কেউ স্টুডিওর দিকে গিয়ে ওর স্বামীকে বিরক্ত না করে। উনি অদ্ভুত জাতের মানুষ। বড্ড কোমল অথচ বড্ড একরোখা, কতকিছু যে মনে চেপে রেখে তিনি হাসিমুখে বাহ্যিক শান্তি বজায় রাখতে পারতেন তার হিসেব হবে না। কিন্তু সেদিন শ্যামলীদেবী বাড়ি ছিলেন না। এক দুঃসম্পর্কের বোনের ছেলের অন্নপ্রাশনে গিয়েছিলেন, রাতে ফেরবার কথা নয়। বর্ষার রাত। প্রায় সাড়ে নটা হবে। অনেকক্ষণ কোন সাড়া শব্দ নেই স্টুডিওতে। পড়ায় মন বসছে না কিছুতেই, স্টুডিওর ভেতরে কি চলছে এই নিয়ে মনে মনে নানা রূপ নাট্য এঁকে ফেলেছে শুভ্র। অজানা উপায়ে শক্ত হয়ে গিয়েছে তার ঘুমন্ত পুরুষাঙ্গ।…
ঘরে একটা ষাট ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে। হলুদ আলোয় মায়াবী পরিস্থিতি। একটা নিচু টুলের ওপর এক পা তুলে দাঁড়িয়েছে মহুল। একটা হাত কোমরে। চিবুক উঁচিয়ে রেখেছে যেন আকাশের পানে। অঙ্গে একটি সুতোও নেই, বিপুল আকৃতির স্তন, বিরাট দুই গোলক। পড়ার টেবিলে রাখা গ্লোবের মত। মাংসের ভারে ঈষৎ অবনতা। দুটো গাঢ় খয়েরি স্তনবৃন্ত, আর তাদের দুই বলয় থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে বেশ সুপুষ্টু চুষি দুটো তাদের ছুঁচোলো অগ্রভাগ নিয়ে। নারীত্বের উগ্র প্রতিমূর্তি। পেটে হালকা স্ফীতভাব। গভীর নাভিমূল, সেখান থেকে নেমে গিয়েছে হালকা লোমের রেখা আর নিচে, কোমর বেঁকেছে বসার ঘরে রাখা বিশাল ফুলদানিটার গলার মত। ভরাট পাছা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে এক্কেবারে নির্লোম যোনিমণ্ডলী… কিন্তু ত্রিকোণের ঠিক যেইখান থেকে বিভাজন নেমে গিয়েছে অতলের দিকে, সেইখানে রয়েছে যোনিকেশ দিয়ে সযত্নে বানানো একফালি বাহারি সিঁথি, যেন এক চূড়ান্ত বেহায়া আশকারা, এক অশালীন উস্কানি। শরীর থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে যৌন আবেদন। শুভ্রর পাজামার মধ্যে টনটন করে ওঠে বাঁশের লাঠিটা। সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেনা! একি রাসায়নিক গোলযোগ চলছে তার শরীর জুড়ে… এত ঘৃণা যে নারীর প্রতি জমে রয়েছে তার মনে কানায় কানায়, তাকে দেখেই তার শরীরে কামের ইচ্ছা জাগছে! শান্তনুকে সে দেখতে পাচ্ছিল না এতক্ষন কিন্তু এবার নিজেকে আরেকটু সরিয়ে নিতেই সে দেখতে পায় তার বাবাকে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ শান্তনু হাতে তুলি নিয়ে একটা দাঁড় করানো ইজেলের ওপর রঙ বোলাচ্ছে। তার উন্মুক্ত পুরুষাঙ্গ হালকা ভাবে জানান দিচ্ছে উপস্থিতি, কিন্তু উদ্ধত নয়। বাইরে বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। কাঁচের জানালায় ঝমঝমিয়ে বর্ষে চলেছে আত্মহারার মত। পাশের বাড়িতে বোধহয় গান চলছে… একটা পরিচিত সুর কেমন যেন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির নিরবিচ্ছিন্ন মুখরতায়।
পাজামার ওপর হাত রেখে শান্ত হতে চায় শুভ্র। পা তার নড়ছে না। সে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। হাতের পরশে বেয়াড়া ঘোড়া যেন আরো অবাধ্য হয়ে উঠছে। হালকা স্বরে কি যেন বলে ওঠে নগ্নিকা সুন্দরী, আর তার প্রত্যুত্তরে ঘাড় নেড়ে সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দেয় শান্তনু। কোমর থেকে হাত নেমে আসে যোনি বিভাজনে, দুটো আঙুল দিয়ে ফাঁক করে… একি করছে মহুল! অদ্ভুত সাবলীলতার সাথে অকুণ্ঠিত অনায়াসে সে চুলকাচ্ছে সেই জায়গাটি। উলঙ্গ অবস্থায় আরেকটি পুরুষের চোখের সামনে সে নিজের যোনি চুলকচ্ছে দুটো আঙুল দিয়ে, একবার ঘাড় নামিয়ে দুটো আঙুল দিয়ে ফাঁক করে ধরে কি যেন দেখেও নিল সেইখানে। আর পারছে না শুভ্র। ঠক ঠক করে কাঁপছে সে। হাত দিয়ে পাশেই দরজার ফ্রেমটা ধরে নেয়, নইলে যেন পড়েই যাবে সে। পায়ের আঙুল কুঁকড়ে ধরেছে তলার মেঝেকে। শিরা উপশিরায় অনুভব করছে সে গরম রক্তের স্রোত। হারানের এই সময় রাতের খাবার গরম করবার কাজ থাকে। সে রান্নাঘরে ব্যস্ত। শুভ্র পাজামার ভেতর হাত পুরে দেয়।
“বৃষ্টির শব্দটা কেমন লাগছে মহুল?”, পিতার গলার স্বর শুনতে পায় শুভ্র।
শান্তনু এগিয়ে এসেছে মহুলের দিকে… এক হাতে তুলি অন্য হাতের আঙুল চালাচ্ছেন নিজের উসকো খুসকো চুলের ফাঁকে।
“আমাকে কেমন লাগছে শান্তনুদা?”, মহুল পাল্টা প্রশ্ন করে, আর নিজের দুটো বিপুল বক্ষ সম্ভার নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রদর্শনী করে।
ভাবটা এমন যেন ওগুলো দেখিয়েই প্রশ্নটা করছে সে শান্তনুকে।
“দুষ্টুমি করিস না মহুল… ব্রেক নিবি নাকি একটা? প্রায় এক ঘণ্টা হতে চললো পোজে আছিস, খাবি কিছু?”, শান্তনুর গলায় যেন প্রচণ্ড স্নেহের প্রাবল্য।
শুভ্রর মাথায় চিন্তাগুলো খেই হারিয়ে ফেলেছে এতক্ষনে। সে শুধু গোগ্রাসে গিলছে মহুলের শরীরের প্রত্যেকটা আনাচ কানাচের অনাবৃত উন্মুক্ত আবেদন। তার বগলের তলায় কি সুন্দর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। একটাও লোম নেই সেখানে। মহুলের গায়ের রঙ বিদিশার তুলনায় অনেকটাই চাপা। আর সেটাই যেন তার অ্যাপিলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
“তুমি এদিকে এস তো শান্তনুদা, এত বাজে চিন্তা তোমায় করতে হবে না। আমার এইটা চুলকাচ্ছে যে খুব…”, বাচ্চা মেয়ের মত চোখ পিটপিটিয়ে বলে ওঠে ন্যাংটো মেয়েটি, বেহায়ার মত দুই হাতে নিজের যোনিতে বিলি কাটতে কাটতে।
“এখনই ঠাণ্ডা করছি তোমায়, দুষ্টু মেয়ে”, এক কৃত্রিম রাগ মেশানো গলায় তাকে শাসন করতে চায় শান্তনু।
তারপর তার দিকে এগিয়ে আসে সে। দুই পা মুড়ে মেঝের উপর বসে পড়ে নিজের স্টুডিওয় দাঁড়ানো এই নগ্ন যুবতীর পায়ের কাছে। প্রসারিত দুটি হাতে ধরে নেয় তার বিরাট দুই উলঙ্গ পাছা। শুভ্র আর ভাবতে পারেনা, সে কি দেখছে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। এর আগে নারীর যোনিতে পুরুষের জিহ্বার স্পর্শ সে শুধু নীল ছবিতেই দেখেছে। তাও একবার দুবার… আর আজ তার চোখের সামনে, হলুদ আলোয় ধুয়ে যাওয়া এই ছোট্ট স্টুডিওর ঘরে তার উলঙ্গ পিতা হাঁটু মুড়ে বসে তার মডেল মহুল মিত্রের সবচেয়ে গোপন জায়গাটি চেটে চেটে পরিষ্কার করছেন।
“একটু ভাঁজগুলো পরিষ্কার করে দাও না, উম্মম… হ্যাঁ হ্যাঁ ওইখানটা, উফফ… তুমি কি ভাল পারো এটা…”, মহুলের গলায় আবেশ আর নোংরা চাহিদা ঝরে ঝরে পড়ছে।
তার অঙ্গের প্রতিটি শিহরণে ঝাঁকি দিয়ে নেচে নেচে উঠছে বুকের ওপর তার নরম দুটো তরমুজ… মহুলের সারা গায়ের চামড়া কেমন চকচক করছে এই মায়াবী আলোতে। শান্তনুর থুতনি বেয়ে একটা সাদা মত কি গড়াচ্ছে। শুভ্র আন্দাজ করে নেয় ওটা মহুলের যৌনরস। মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে চুষছে আর চাটছে শান্তনু। আর মহুল ওইভাবে কামদেবীর মত দাঁড়িয়ে এক হাতে খিমচে ধরেছে কর্মরত শান্তনুর মাথার চুল। মুখ বিকৃত। আঁখি মুদিত। পিঠ বেঁকে গিয়েছে ধনুকের আকারে, তার ফলে ঠেলে উঠে এসেছে দুটি উদ্ধত আটতিরিশ!… হাঁ করে যেন তারা দুটিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে। উফফ… এত বড় বুক কি করে হয় কারুর… কি জঘন্য এই মহিলা, কি মারাত্মক এর যৌন খিদে! ভাবতে ভাবতে হাতের গতি বাড়ছে শুভ্রর। পাজামার ভেতরেই যেন হয়ে যাবে বিস্ফোরণ। নিশ্বাস প্রশ্বাস চলছে দ্রুত। উফফ বাবার সাথে সেও যদি এই নারীকে ভোগ করবার সুযোগ পেত! চিন্তাগুলো এলোমেলো আর বিকৃত হয়ে যাচ্ছে শুভ্রর, মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে হারান আসছে কিনা। বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে দলাই মলাই করতে ইচ্ছে করছে এই নোংরা রমনীর দুধগুলো। কি ঘৃণা তার এই মহিলাটির প্রতি। উফ যদি সকলের সামনে একে ন্যাংটো করে দাঁড় করিয়ে রাখা যেত! উত্তেজনা আর উদ্দীপনার শিখরে উঠছে শুভ্র। যদি সব বন্ধু বান্ধবদের ডেকে এনে মহুলের গায়ে পেচ্ছাব করানো যেত! মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে শুভ্রর কামজ্বর। তার মনের ভেতরে চলছে মহুলকে নিয়ে হাজার হাজার অচিন্ত্যনীয় অশালীন মতলব আর তার চোখের সামনে চলছে তার বাবার রমণলীলা… মুখ দিয়ে তিনি যৌন তৃপ্তি দিচ্ছেন মহুলকে।
“আর কোরো না গো, আমার হয়ে যাবে…”, হাঁস ফাঁস করছে মহুল।
শান্তনু থামে না। সে আরো দ্রুত গতিতে লেহন চালিয়ে যায়। মুখ তুলে জিভ বার করে বড় বড় আঁচরে যোনি বিভাজন লম্বা লম্বি ভাবে চেটে দেয় বারকয়েক। আর প্রত্যেকবারই বিদ্যুৎপ্রবাহ বয়ে যায় মহুলের শিরদাঁড়া বেয়ে। শুভ্রর হাতের গতি এবার অভাবনীয়, ওদিকে শান্তনুর মাথাও নড়ছে প্রচণ্ড বেগে, দাঁড়িয়ে থাকা মহুলের দুইপায়ের মাঝখানে। মহুলের মুখ বেঁকে চুরে গিয়েছে। টুলের ওপরে রাখা পা’টা কাঁপছে, দুই পায়েরই আঙুলগুলো দেবে গিয়েছে, নখ দিয়ে যেন আঁকড়ে ধরতে চাইছে। এক হাতে শান্তনুর মাথা আরো ঢুকিয়ে দিতে চাইছে সে নিজের ভরাট যোনিমণ্ডলীর মধ্যে, অন্য হাতে নিজের একটা বুককে দুমড়ে মুচড়ে চলেছে। সে কি বীভৎস দৃশ্য, কি আগুন ঝরছে সেই কামাতুর বাঘিনীর গা দিয়ে! মহুলের সেই চূড়ান্ত মুহূর্তের শীৎকার শুনলে যেন আগুন লেগে যাবে দেহ মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শুভ্রর আশপাশের দুনিয়া গুলিয়ে গেল, চোখ বন্ধ হয়ে গেল, ব্রহ্মতালুতে যেন এসে লাগলো তীব্র একটা চেতনা, সবকিছু আলোয় আলোময় হয়ে গেল ভেতরে ভেতরে, যেন একটা বজ্রপাতকে কাছ থেকে দেখছে সে অন্তরের আঁখি দিয়ে… শরীরের সকলটুকু নিঙড়ে নিয়ে ছলকে ছলকে বেরিয়ে গেল তার সমস্ত রস। পাজামা ভিজে আঠা… জঙ্ঘা আর পা বেয়ে নামছে একটা দুটো শ্বেত বীর্যের ধারা। ধীরে ধীরে সুখের ক্লান্তি নিয়ে ফিরে এল সে তার নিজের কক্ষে।
“কোথায় রেখেছি বলোতো এই চার্জারটা?”, অশান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে শুভ্র।
পাশেই দাঁড়ানো হারান। শুভ্রকে ছায়ার মত অনুসরণ করতে করতে এসেছে সে। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা। সে চায়না দাদাবাবু জানুক স্টুডিওতে কে এসেছেন আজকে। মহুলের সঙ্গে শান্তনুকে যে শুভ্র দেখেছে বহুবার, সে কথা হারান জানত। সে নিজেও সেই ভয়ানক দৃশ্য দেখে কাতর যৌন নিপীড়ন সয়েছে প্রচুর।
কিন্তু আজ যাকে সে শান্তনুর হাত ধরে স্টুডিওর ঘরে ঢুকতে দেখেছে, তাকে দেখলে যে দাদাবাবুর মাথা আর ঠিক থাকবে না এইটুকু বোঝবার ক্ষমতা এই অশিক্ষিত চাকরটির ভালোই ছিল। সে নিজে চোখে দেখেছে সেই দৃশ্য। দেখেও নিজের চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে পারেনি, ভেবেছে হয়তো কোন ছবি-টবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন বাবু বিদিশা দিদিমণিকে। কিন্তু নিজের মনিবের চারিত্রিক দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত চাকরটি তবুও যাচাই করে দেখতে চেয়েছিল আসল ঘটনাটা ঠিক কি। আস্তে আস্তে অনিশ্চিত পদক্ষেপে, বুকে যথেষ্ট ভয় ও উৎকণ্ঠা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল স্টুডিওর দিকে…
……”এই বুকগুলো ওড়না দিয়ে কে ঢেকে রাখে, বোকা মেয়ে কোথাকার”, হাল্কা তিরস্কারের স্বর শান্তনুর বাচনভঙ্গিতে।
“ওহহ্… নাহহহ্… না… নাহ”, হাত দিয়ে শান্তনুর জিভের শয়তানি বন্ধ করতে চায় বিদিশা তার খোলা বুকের ওপর থেকে, কিন্তু শান্তনু ধরে ফেলে ওর দুটো হাত।
“এরকম করলে কিন্তু প্যান্টিও খুলে দেব”, ঈষৎ ভর্ৎসনা ছুঁড়ে দেয় শান্তনু, ইতর নির্লজ্জ গলায় পুত্রের প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে, যে শুধুমাত্র তার যোনিদেশ ছাড়া সম্পূর্ণ বিবসনা।
এমন সময় আবজানো দরজার বাইরে পদশব্দ শোনা যায় অদুরেই। মুহূর্তে শান্তনু টানটান হয়ে যায়।
চেঁচিয়ে বলে, “কে ওখানে?”
বিদিশা শশব্যস্ত, সচকিত।
“আমি হারান”, কুণ্ঠিত গলার স্বর ভেসে আসে পরিচারকের। সে যে অবশ্যই বুঝেছে ভেতরে কি লীলাখেলা চলছে তা প্রকট তার না বোঝার ভঙ্গিতে, আর বিশ্বাসঘাতক গলার স্বরে প্রতীয়মান কুণ্ঠায়।
“কি চাই”, গলা বাড়িয়ে বিরক্তিপূর্ণ কণ্ঠে শুধোয় শান্তনু। হাত দিয়ে মলতে থাকে বিদিশার ত্রস্ত বুক, যা সে প্রাণপণে ঢাকবার চেষ্টা করছিল আসন্ন বিপদের আশঙ্কায়।
“এখন একটু ব্যস্ত আছি হারান, পরে এসো”, মুখে মৃদু হাসি, হাত দিয়ে খুঁটছে বিদিশার খয়েরি বোঁটার চোখা অগ্রভাগ। বিদিশা এই অস্বাভাবিক বেহায়া আচরণে চোখ বুজে মাথা একদিকে ঘুরিয়ে, দাঁত দিয়ে তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল হারানের পায়ের আওয়াজ।……
মিনিট কুড়ি আগের এই ঘটনা মনে পড়ে যায় হারানের।
“কি হল? হাঁ করে কি ভাবছ? বলবে তো দেখেছ কিনা জিনিসটা?”, পড়ার টেবিল হাতড়াতে হাতড়াতে ফের জিজ্ঞেস করে শুভ্র।
“অ্যাঁ… আজ্ঞে… না তো!”, ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে হারানের মুখ।
“কি হয়েছে বলোতো হারানদা? বাবা কি কিছু বলেছে তোমায়? তবে কি সেই অসহ্য মহিলাটি কিছু বলেছে? তারা কি স্টুডিওর ঘরে ঢুকে বসে আছে নাকি?”
প্রশ্নগুলোর কোন জবাব নেই হারানের কাছে, সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শুভ্রর ফর্সা মুখটার দিকে। এত দৌড়ঝাঁপ আর খোঁজাখুঁজিতে যেই মুখটা এখন রাঙা হয়ে গিয়েছিল।
“সরো তো, আমি দেখে আসি মায়ের ঘরে রেখে এসেছি কিনা…”, বলে হারানকে বাঁ হাত দিয়ে আলতো করে সরিয়ে শুভ্র পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় করিডোরে।
স্টুডিওর ঘরের আলো জ্বলছে না, মা বাবার বেডরুমে আলো জ্বলছে, দরজাও খোলা, আর একটা হালকা মেয়েলি গলার গোঙানি শোনা যাচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে শুভ্র বুঝতে পারলো কি চলছে তার বাড়িতে, তার এবং তার মায়ের অনুপস্থিতিতে। নাঃ আর পারা যাচ্ছে না, বাবাকে কোন কাজের জন্যে কোনদিন কিচ্ছু বলেনি সে, চিরকাল শ্রদ্ধা করে এসেছে, অন্য জগতের মানুষ ভেবে ঘাঁটাতে যায়নি কখনো। কিন্তু আজ যখন মায়ের শোবার ঘরে বাবা তার অবৈধ কামসঙ্গিনী কে নিয়ে এসে তুলেছেন তখন আর শুভ্রর মতিস্থির রইল না। পিতার ওপর রাগে আর মহুলের প্রতি ঘৃণায় কাঁপতে কাঁপতে সে এগোতে লাগলো অন্ধকার করিডোর দিয়ে ওই আলোকিত দরজার অভিমুখে। আর তার কানের পর্দায় ক্রমশই বাড়তে লাগলো সুখের আর্তনাদ। কি অশ্লীল, কি আদিম।…
“কি হয়েছে কিছু বলবি? শুভ্রর পাশে তো এখন তোরই সবচেয়ে বেশী থাকা উচিৎ। অথচ তুই তো…”, তুলিকা যে পাশ থেকে কথা বলে যাচ্ছিল সেটা বুঝতে পারলেও উত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা ছিল না বিদিশার।
তুলিকাদের বাড়ির ছাদ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় জোড়াদীঘির কাজলকালো জলের রাশি। শোনা যায় প্যাঁ-প্যু রিক্সার আওয়াজ। ছাদের টবে কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছে।
“ওগুলো কি ঝুমকোলতা ফুল?”, বিদিশার চোখ চলে গিয়েছে বহুদুরে, মনে হাজার স্মৃতিগন্ধের মেলা… প্রশ্নটা কেমন বেখাপ্পা।
“না, কেন?”, কিছুটা অধৈর্য হয়ে পরে তুলিকা। প্রশ্ন করে করে বিদিশার কাছ থেকে সঠিক কোন উত্তর তো মিলছেই না, উপরন্ত পাল্টা কিছু অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।
“হুম…? নাহ এমনি… শান্তনুবাবু চলে গেলেন না?”
“শান্তনুবাবু আবার কি? তুই চিনিস না ওনাকে?”
“চিনি তো তুলি, শান্তনুবাবুকে যে খুব কাছ থেকে চিনেছি রে”, এবার প্রিয়সখীর গলায় অন্যরকম ভাব টের পায় তুলিকা।
“কি বলতে চাইছিস বলতো? সেই তখন থেকে দেখছি…”, তুলিকা কথা শেষ করবার আগেই একটা শ্বাস টানার আওয়াজ হয়, বিদিশার চোখ জলে টইটম্বুর… ভাঙা চাঁদের অল্প আলোতেও দিব্যি চকচক করছে।
“আমি তাকে সব দিয়ে এসেছি তুলি…”, ভাবাবেগের বিপুল ঢেউ এসে কথার গতিপথ আটকে দেয়।
ছাদের পাঁচিলের ওপর রাখা বিদিশার চাঁপাকলির মত হাতটা আলতো করে ধরে ফেলে তুলিকা।
তুলিকার ঘাড়ে মাথা নামিয়ে আনে বিদিশা, চোখ দিয়ে তার জল গড়াচ্ছে, ঠোঁট কাঁপছে থর থর করে।
“ইশ!”, বলে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তুলিকা। সে সবটাই বুঝেছে।
এবার তুলিকাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে তার প্রিয় বান্ধবী। দুনিয়ায় এই একটা জায়গাই তো আছে, যেখানে ছোটবেলা থেকে সবকিছু প্রকাশ করতে পেড়েছে। তুলিকাও নিজের সমস্ত কথাই বিদিশাকে বলে এসেছে চিরকাল। ওদের একে অপরকে গোপন করবার মতো কিছুই নেই। ছোটবেলার থেকে একসাথে ওঠা বসা, নাওয়া খাওয়া।… তুলিকা বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয় বিদিশাকে, এক হাত দিয়ে তার মাথার চুলে আদর করতে থাকে। তুলির নরম বুকের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত মমতাময় আশ্রয় খুঁজে পায় আহত দিশা। তার মাথার যত চিন্তা, অপরাধ বোধ যেন বিসর্জন দিতে পারে সে এই বুকের গভীরতায়, এই মায়াময় হাতের ভরসায়। কোন চিন্তা না করেই মুখ ডুবিয়ে দিল সে তুলিকার বয়েসের তুলনায় ভারী দুটো স্তনের মাঝখানে। বিদিশার অশ্রুকম্পিত অধর হালকা ভাবে ছুঁয়ে থাকে তুলিকার অন্তর্বাসহীন স্তনবৃন্তের একটি। বিদিশার কিছু এসে যায়না তাতে। এই বুকটায় আজ মাথা রেখে সে সব অপরাধ গ্লানি ভুলে যেতে চায়। চোখের জলে সিক্ত নাইটি আর বিদিশার ঠোঁটের পরশ যেন আরো প্রকট করে তোলে তুলির তুলতুলে বুকের ওপরের শক্ত হতে থাকা বৃন্তমূল। সেইসব দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই দুই কন্যার। তুলির আজ অদ্ভুত ভালো লাগছে বিদিশাকে শান্ত করতে পেরে। আর বিদিশার মনে অবশেষে শান্তি নেমে আসছে তুলিকার স্নেহভরা আদরে। অত্যন্ত যত্নে ও স্নেহে তার মুখটা তুলে ধরে তুলিকা দুই হাত দিয়ে। অন্ধকার বেড়ে গিয়েছে এখন অনেকটাই, কিন্তু পূর্ণিমা গিয়েছে মাত্র কদিন হলো, তাই চাঁদের আলোতে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিদিশার কান্নাভেজা অথচ অপূর্ব মাধুরীমণ্ডিত মুখখানি। দুজনেই দুজনের চোখের তারায় খুঁজে পায় অপার ভালবাসা আর অগাধ ভরসা। চোখে চোখ রেখে বাল্যকালের এই অভিন্নহৃদয় সখিদ্বয় অনুভব করতে থাকে তাদের পরাণের বন্ধন, মনের টান… জোড়াদীঘির কাজল জলে তখনও কাদের দুটো হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের সময়মত। এদিকে চাঁদ গলছে অনর্গল রাতের গায়ে গায়ে… বুকে বুক ঠেকে গিয়েছে দুই মেয়ের, প্রানের স্পন্দন স্পন্দিত হচ্ছে একই ছন্দে।
“আমি বুঝেছি তোকে” যেন বলছে তুলিকার চোখ।
“আমি বিশ্বাস করি…” যেন বলছে বিদিশার স্থির দুই অধর।
অন্ধকারে মিশেছে অন্ধকার, দুটি মেয়ের শরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে মায়ার বন্ধনে। নরম উষ্ণতায় মিশে যায় নরম উষ্ণতা… ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটের উদ্দেশ্যে। চাঁদ মুচকি হেসে মুড়ি দেয় মেঘের আবডাল, আর হাঁস দুটো মেতেছে খেলায়।
“চা দিয়ে দি বসার ঘরে?”, হারানের প্রশ্নে একটু চমকে উঠলেন শ্যামলীদেবী।
ছেলের চেহারায় ফুটে ওঠা অভিব্যক্তিগুলো ধরবার জন্যে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন শুভ্রর ভাবলেশহীন মুখের দিকে। এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন তিনি। গায়ের কাপড়টা ঠিক করে নিয়ে তাকালেন হারানের দিকে। সেই কবে থেকে এ বাড়িতে পরিচারকের কাজে নিযুক্ত রয়েছে এই বেঁটেখাটো রোগাসোগা মানুষটি। আজ অব্দি কোনদিন কোন অসুবিধা করেনি, তর্ক বিতর্ক কিম্বা কোন অসৎ মতলব, কিছুই ছিলনা হারানের। শ্যামলীকে অত্যন্ত ভক্তি করে চলত সে চিরকাল। শ্যামলীর বিয়ে হয়েছিল উনিশ বছর বয়েসে। তখন সবে কলেজে পড়েন তিনি। শান্তনুর প্রেমে তাঁর নাজেহাল অবস্থা। একরকম বাড়ির সকলের অমতে, এক কাপড়ে, শান্তনুর হাত ধরে মিস্তিরি লেনের বাড়িতে এসে উঠেছিলেন, সে এখন প্রায় এক যুগ আগেকার কথা। হারান রয়েছে সেই তখন থেকে। তাঁকে উনিশ বছরের বালিকা থেকে যুবতী হতে, যুবতী থেকে দক্ষ গৃহিণী এবং পরে শুভ্রর জননী হয়ে উঠতে দেখেছে সে চোখের সামনে। চনমনে তন্বী শ্যামলী কিভাবে আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়লেন পারিপার্শ্বিকতার চাপে হারান দেখেছে পুরোটাই। বউমণির যেই অপূর্ব রূপের ডালি নিয়ে তিনি এসেছিলেন শান্তনুর ঘর করতে, সেই রূপ প্রায় সবটাই চলে গিয়েছে আজ, কিন্তু হারানের চোখ থেকে সেই অপার বিস্ময় আজও যায়নি। তার বউমণির কষ্ট সে বুঝতে পারে। কিন্তু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা আর মনে মনে শ্রদ্ধা করা ছাড়া সে আর কি বা করতে পারে?
“চা দিয়ে দেবে…? দাও, সাথে কিছু দিও”, খুব ভেবে ভেবে যেন এক একটা কথা বললেন শ্যামলীদেবী।
“মা, আমি একটু বেরোবো? ঘরের মধ্যে আর ভালো লাগছে না…”, অনুমতি চায় শুভ্র।
“সে তুই যাবি যা, কিন্তু সেদিন এসে কি দেখেছিলি পুলিশকে ঠিকমত না বললেও আমাকে কিন্তু বলিস বাবা, ভয় পাস না, আমি সব সইতে পারব।” মুখে এক অদ্ভুত হাসি শ্যামলীর। সত্যিই যেন তাঁর বুকটা পাথর হয়ে গিয়েছিল দিনের পর দিন স্বামীর অনাদরে।
“মহুল যে এমন কাণ্ড করবে কটা টাকার জন্যে, কিম্বা ওর ভাগের খ্যাতিটুকুর জন্যে তা আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি জানিস?” শ্যামলী ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে ওঠেন।