29-09-2022, 02:01 PM
নেতার কোলে আমার বউ দোলে
শ্রী ইন্দ্রপ্রতাপ
১
ছোট থেকেই আমার বড়লোক হওয়ার খুব শখ। কিন্তু বড়লোক হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয় সেটার জন্য বিস্তর হ্যাপা আছে, বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়, আর জ্বালানীর যদি অভাব থাকে তাহলে তো বলায় বাহুল্য, বড়লোক হওয়া ছাড়; নিতান্ত ছাপোষা মধ্যবিত্ত হতেই জীবন জলাঞ্জলি দিতে হয়! এত কঠিন ব্যাপার হওয়া সত্ত্বেও আমার ভেতরের বড়লোক হওয়ার আশা কিছুতেই আর গেল না! সুরম্য অট্টালিকায় থাকব, গোটা দশ-বিশ চাকর-চাকরানী থাকবে, বিকেল বিকেল বিদেশী জুড়িগাড়ী করে হাওয়া খেতে বের হব, সন্ধ্যে নাগাদ গলায় একটু আধটু দামী দামী কারণবারি ঢালব আর মাঝে মাঝে সুন্দরী মহিলাদের বক্ষলগ্ন হয়ে রাত্তির পার করব! ব্যস, এইটুকু সামান্য স্বপ্ন আমার, যৎসামান্য বললেও কম বলা হয়! কিন্তু, এই মুখপোড়া সমাজে কে এমন রয়েছে যে আমার এই সামান্য স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে। অভাগা বঙ্গদেশে বড়লোক হওয়ার আশা শুধুই গুড়ে বালি! জানতুম, বড়লোক হতে গেলে ব্যবসা করতে হয়, সেই কোন কালে মুনিঋষিরা বলে গেছেন, 'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী!' তাই বাপের যা কিছু ছিল তাই দিয়েই একটা দোকান দিলুম, কপাল ভাল থাকায় সে দোকান চলছেও ভাল! ফলে যদিও বাড়িতে চাল-ডালের বাড়ন্ত অবস্থা হয়নি কিন্তু সমস্যা হল, হিসেব করে দেখলুম, এ উপায়ে বড়লোক হতে গেলে আমার যৌবন শেষ হয়ে বৃদ্ধ হওয়া ছাড়া গতি নেই। আমার সন্তান বড়লোক হবে সত্যি কিন্তু, আমি তো হব না! আমার সন্তানদের বড়লোক হওয়ার উপর আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু আমি নিজে শেষ বয়সে এসে বড়লোক হওয়ার স্বাদ পাব এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া ভারি শক্ত ব্যাপার! অগত্যা, উপায় বের করার চেষ্টায় ব্রতী হলাম।
হিসেব করে দেখলুম, ঘোর কলিকাল চলছে! পার্টি পলিটিক্সে এই সময় যদি নামা যায় তাহলে একটা চান্স আছে। আজকাল এই লাইনে বেজায় টাকা, মায় রূপোলি পর্দার সোনালী নায়ক নায়িকাবৃন্দ যাদের বড়লোক বলে আমরা দেগে দিই তারা অব্দি পর্দায় অভিনয় ছেড়ে সোজা বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে নেমে এসে পুরো প্রেস কনফারেন্স করে অভিনয় করছে! আহা, 'শুধু মানুষের জন্য কিছু করতে চাই' এটা বললেই হল, তাপ্পরেই তুমি পাবে পার্টি টিকেট, টিকেট পেলেই দু-চারটে লোক জড়ো করে ইতিউতি অবরোধ-টবরোধ করে দাও, চার-পাঁচ বিষয়ে 'মানছি না মানবো না' আর 'অমুকের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও' বললেই কেল্লা ফতে! রাজ্যের সাংবাদিককুল ছুটে ছুটে আসবে, তোমার বক্তব্য সোজা টিভিতে প্রচার হবে! ব্যস, আর পায় কে! ইলেকশনে জিতবেই জিতবে আর জিতলেই এম এল এ, একটু পা চাটলেই মন্ত্রী-সান্ত্রী হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা! তারপর, তারপর স্রেফ নোট গোনো দাদা। কোটিপতি হতে চাও! চ্ছোঃ তোমার নজর বড় নীচু! আরবপতি দাদা আরবপতি হবে!
পতির কথায় মনে পড়ল, আমিও অবশ্য পতি, কিন্তু লাখ-কোটির হলাম কই, বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে আমি কেবলই পতি, যাকে সংস্কৃতে বলে স্বামী আর বাংলায় বলে বর। নেকুরা বলে হাবি!
তা এহেন, পতি হলেও পত্নীভাগ্য আমার মন্দ না। আমার বউয়ের নাম কামিনী, নামেও যেমন রূপেও তেমন! বয়স সবে ৩৬। মেটে গায়ের রঙ, মাখনের মত মসৃন ত্বক, পিঠ অব্দি ঢেউ খেলানো একরাশ ঘোর কালো রেশমী চুল, টানা পটলচেরা চোখ, পাতলা রিনরিনে ঠোঁট, গালে একটা তিল, আর মুখে গজদন্ত! সুউচ্চ সুডোল ৩৬ সাইজের দুটি উদ্ধত স্তন, ভারী গুরু ৩৮ সাইজের নিতম্ব আর ৩০ এর ক্ষীণ কটিদেশ মানে কোমর আর কী। আম্রপালি অব্দি পাত্তা না পায় এমনই বউ আমার কামিনী! নাভীর ঈষৎ নীচে শাড়ি পরায় কোমরের হালকা মেদবহুল ভাঁজ অন্য পুরুষকে ছাড়্ আমাকেই বেজায় পাগল করে দেয়! শুধুই কী আমার বউকে দেখে একবার এক প্রসিদ্ধ নেতা 'ওহ লাভলী' বলেছিলেন! হেঃ হেঃ! সত্যি বলতে, বউ ভাগ্যে আমি কিন্তু স্রেফ কোটিপতি নই, রীতিমতো আরবপতি!
তা, আমার বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমার বউয়ের সাথে রাত্রিবেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে আলোচনা করছিলাম। তাকে বললাম, "দেখ গত কয়েকমাস ধরে আমি রীতিমতো পার্টির ছোট বড় নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করছি, পার্টি ফাণ্ডেও মোটা টাকা চাঁদা দিচ্ছি। আমার ইদানিং একটা বেশ পরিচয়ও হয়েছে। তাই ভাবছি এবারের ইলেকশনে কাউন্সিলরের টিকেটের দাবী জানালে কেমন হয়!"
আমার বউ আমার গলা জড়িয়ে বলল, "ওরে বাবা! আমার বর কাউন্সিলর হবে! ইশ, আমার তো ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে গো! আমি কিন্তু প্রচুর শপিং করব!"
আমি ওকে শান্ত করতে করতে বললাম, "আহা, শপিং যত খুশী কর তাতে বাধা কোথায় কিন্তু কথা হচ্ছে কাউন্সিলর আমি না তুমি হবে!"
আমার বউ ভারী অবাক হয়ে বলল, "আমি? আমি কীভাবে কাউন্সিলর হব! আমার তো, কোন ধারণাই নেই, আমাকে কেউ চেনে না! পার্টি পলিটিক্সের কিছু জানিও না! নাহ! এ তুমি কেমন কথা বলছো গো!"
আমি বোঝাতে বোঝাতে বললাম, "দেখ আমি হলাম কন্দর্পকান্তি! কিন্তু তুমি তো রূপে তিলোত্তমা! আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী! আর বঙ্গে এখন ঘোর কলিকাল চলছে, এখন গুণবিচারে কারোর কোন মাথাব্যথা নেই, তারা কেবল দর্শনধারী খোঁজে। সুন্দরী যুবতী বৌদি একটু বুকের আঁচল ঠিক করতে করতে যদি ভোট দেওয়ার আবদার করে তোমার মনে হয় কোন দুঁদে নেতার পক্ষেও তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জেতা সম্ভব! শোন কামিনী তোমার বর দ্রুত বড়লোক হতে চায়, আজ তোমার রূপের তার বড়ই প্রয়োজন তাই তোমাকে স্ত্রী কর্তব্য পালন করতে আহ্বান জানাচ্ছি। পার্টি পলিটিক্স নিয়ে বিশেষ ভেবে কাহিল হওয়ার দরকার নেই। তার জন্যে আমি আছি তো!"
আমার বউ সব শুনেটুনে রাজি হল। বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে আমার একার না, আমার বউয়েরও ষোলআনা আছে সেটা আমি জানি। আর আমার বউ আমার সামনে যতই সোজা সরল হওয়ার চেষ্টা করুক, নিজের রূপ যৌবন আর তার প্রভাব সম্পর্কে সে যথেষ্ট সচেতনা। তার সামান্য মুচকি হাসিতে ৩০ টাকা কিলোর লাউ ২০ টাকা হয়ে যায়, তার আঁচল সামান্য এদিক ওদিক হওয়ায় ৩০০০ টাকার শাড়ি ২৫০০ টাকায় মেলে; মায় ব্লাউজ অব্দি ফ্রী হয়ে যায়! এমনকি গুচ্ছের উপহার অব্দি আসে। কথায় আছে তিন বাচ্চার মা যেমন চালভাজা আর মুড়ির পার্থক্য জানে আমার বউও পুরুষ জগতে তার কোহিনুর হওয়ার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানে! তবুও আমার সামনে সে একটু 'অতি সরল দেশ দুনিয়ার কিছু জানে বোঝে না' এমন থাকতেই বেশি পছন্দ করে!
সে যাইহোক, আমার বউয়ের সম্মতি আদায় করে যখন নিলাম তখন এবার বউকে ব্যবহার করে আমি তরতর করে কাঁড়ি কাঁড়ি নোটের ঘরে পৌঁছব এই চিন্তায় বিভোর হয়ে নিদ্রায় অভিভূত হলাম। শেষ রাত্রে এসে ঘুমে একটু ব্যাঘাত ঘটল, কেউ আমার কানে কানে ক্রমাগত বলতে লাগল,
"…শেষে দিল রা,
পাগোল ছাড়ো পা॥"
(চলবে…)
★★★
- ইন্দ্রপ্রতাপ