24-09-2022, 03:44 PM
দ্বাবিংশতি অধ্যায়
কলকাতা যাওয়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।সুমনা ভোরে উঠে রান্না শুরু করলেন।সুখ স্নান করতে চলে গেল।কাল লাইব্রেরীতে গিয়ে সদস্যপদ তুলে নিয়েছে।বরেনদার সঙ্গে কথা হল।কলকাতাকে না চিনলে এ রাজ্যকে চেনা হবে না।আরো অনেক কথা বললেন।গোপালনগর ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে না, বরেনদাকে মনে পড়বে।ভদ্রলোক গৃহী সন্ন্যাসী।সংসারের চেয়ে এই লাইব্রেরী বরেনদার প্রিয়।সীমাটা ভীষণ দুষ্টু এরকম প্রশ্ন করবে ভাবেনি।বাড়ীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,একটা কথা জিজ্ঞেস করব কাউকে বলবি না ?
একজনের কথা আরেকজনকে বলা পছন্দ করিনা।
সীমা আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে।বুঝতে পারছি না কি এমন কথা?সীমা বলল,তুই কাউকে কিস করেছিস?
শিহরিত হই।হেসে বললাম,এই তোর প্রশ্ন?
করেছিস কিনা বলনা।
তোর যত আজেবাজে কথা।
তার মানে কিস করেছিস।
বারে আমি কখন বললাম?
আমি জানি তুই মিথ্যে বলতে পারিস না।
সীমাকে মিথ্যে বলিনি।আমি তো কাউকে কিস করিনি,বৈচিমাসী আমাকে কিস করেছে।
কলেজের শেষদিনে এরকম প্রশ্ন করল কেন?স্নান করে বেরিয়ে দেখলাম ভাত নিয়ে বসে আছে মা।
তুমি কাজে যাবে না?
যাব,বলে এসেছি দেরী হবে।
মা সামনে বসে আছে এটা ওটা নাড়াচাড়া করছে কোনো কথা বলছে না।আমি জানি অনেক কিছু ভাবছে।কি ভাবছে মুখ ফুটে বলবেও না।বারার প্রতি মায়ের ছিল গভীর বিশ্বাস।বাবা যদি নরকেও নিয়ে যেতো নির্দিধায় অনুসরণ করত মা।মায়ের ধারণা বাবা এখনো মায়ের আশে পাশেই আছে।এ অসম্ভব জেনেও ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেও পারি না।
খাওয়া দাওয়া সেরে পোশাক পরে তৈরী।মা এক গোছা টাকা পকেটে ঢূকিয়ে দিল।আমি আর গুনে দেখলাম না।
মনু যদি চোখে পড়ে কমসম দামে একটা শাড়ী কিনিস তো।
কেন শাড়ি কি হবে?
মিতাকে একটা শাড়ি দেবার ইচ্ছে।রেখে দি যদি কখনো আসে।
সমস্ত কথা মাথায় আছে ব্যস্ততার মধ্যেও কোনোটা বাদ নেই।মনে মনে ভাবি যেতে পারলাম না তারমধ্যে ফাই ফরমাশ।অবশ্য বৈচিমাসীকে শাড়ি দেবার ব্যাপারটা খারাপ লাগে না।
বাইরে থেকে গলা পাওয়া গেল,রঞ্জন---রঞ্জন।
মনে হচ্ছে কাকু,নীচু হয়ে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বেরিয়ে এলাম।
কাকু রিক্সায় বসে।পাশে উঠে বসলাম।রিক্সা চলতে শুরুকরে।পিছন ফিরে দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মা।চোখে জল চিক চিক করছে মনে হল।নাকি ভুল দেখলাম।
রঞ্জন আগে তুমি কলকাতায় গেছো?
মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালাম।
আজব শহর কলকাতা যেন একটা মিনি ভারত বর্ষ।সব রাজ্যের মানুষ এখানে আছে।সবাই নিজের নিজের ধান্দায় ব্যস্ত।কারো দিকে কারো ফিরে দেখার ফুরসৎ নেই। আমাদের মেসের যে বাড়ীওলা পবন শেখোয়াত রাজস্থানের লোক।অবশ্য মেসের দেখাশুনা করে ওর বোন বসুমতী।মেয়ে হলে কি হবে পুরুষের এককাঠি উপরে।মুখরা টাইপ মহিলা।একটা স্যাড ব্যাপার ভদ্রমহিলা বিয়ে করেন নি দাদার সংসারেই থাকেন।
রাজস্থানী মানে কি হিন্দি বলতে হবে,আমার আবার হিন্দি ভালো আসেনা।যাইহোক চালিয়ে নেবো।
কাকু আবার বলেন,কয়েক পুরুষ ওরা এখানে আছে।চমৎকার বাংলা বলে।
স্টেশনে পৌছে কাকু টিকিট কাটলেন।টাকা দিতে গেলাম নিলেন না।বয়স্ক লোক জোর করতে পারিনা।ফাকা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে।জানলার ধারে দুজনে বসলাম।কাকু ধীরে ধীরে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলেন।ভালো লাগে মানুষটাকে।ট্রেনের সব আসন ভরে গেল।ট্রেন ছেড়ে দিল।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।ট্রেন কিছটা যাবার পর দু-পাশে বিস্তির্ণ মাঠ,সম্ভবত ধান ক্ষেত।দূর সীমানায় দেখা যাচ্ছে গাছ গাছালিতে ঘেরা চালা ঘর।
রঞ্জন।
কাকুর দিকে তাকালাম।
শনি-রোববার তুমি কিন্তু মিলিকে পড়াবে।তোমাকে ওর খুব পছন্দ।সবাই যেমন শিক্ষককে এড়িয়ে চলে মিলি আগ্রহ নিয়ে তোমার অপেক্ষা করে। পড়াশুনায় ওর মধ্যে একটা উৎসাহ আগ্রহ অনেক বেড়েছে।দেখো বইতে সবই থাকে।কিন্তু ছাত্রের মধ্যে ইণ্টারেস্ট গ্রো করাটায় জানবে তিনভাগ কাজ হয়ে গেল।এখানেই শিক্ষকের সার্থকতা।
অস্বস্তি বোধ করতে থাকি।
জানি তুমি লজ্জা পাচ্ছো।আমি তোমার প্রশংসা করছি যা সত্য তাই বলছি ।বরদাবাবু সঙ্গে খুব বেশী কথা হয়নি।শুনেছি উনি কলেজে যোগ দেবার পর শুধু ছাত্র নয় শিক্ষকদের মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল।শিশুকে হাতে ধরে কেউ কথা শেখায় না শিশু কথা শেখে নিজের গরজে।জোর করে তুমি কাউকে কিছু শেখাতে পারবে না।তুমি তার মধ্যে আর্জ তৈরী করে দেও দেখবে আপনি শিখবে।ছাত্রের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তোলাই শিক্ষকের কাজ।
বাবা বলতো কাজ ছোটো হোক বা বড় সব কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে পরিপাটি রূপে করা উচিত।
রাইট।দেখো কারখানায় মেশিন চালিয়ে যে নিখুত যন্ত্রপাতি তৈরী করছে তাকে আমরা বলছি মিস্ত্রী।যে তার উপরে সে ইঞ্জিনীয়ার।ইঞ্জিনীয়ারকে মেশিন দাও সে কি পারবে মিস্ত্রীর মত নিখুত যন্ত্র তৈরী করতে?লোকের বাড়ীতে রান্না করলে তাকে আমরা হীন দৃষ্টিতে দেখি।ভাবি না রান্নাও একটা শিল্প।আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা নেই কিন্তু বিদেশে শুনেছি তারা কোনো কাজকে ছোটো বলে ভাবে না।
মায়ের কথা মনে পড়ল।এখন বুঝতে পারছে না রাত হলে নিশ্চয়ই মনে পড়বে মনুর কথা।মাকে রেখে বাইরে থাকার অভ্যাস নেই।
মায়ের কথা ভাবছো?
চমকে উঠলাম বললাম,না না শনিবার তো চলে আসব।
হুউম জীবন মানে হচ্ছে সাধনা।সাধনা ছাড়া সাফল্য আসে না।
শিয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে কাকু দাঁড়িয়ে পড়লেন।মনে মনে ভাবি আরো কতদূর?
একটা ট্রাম আসতে কাকু ওঠো বলে চেপে বসলেন।জীবনে প্রথম ট্রামে চড়া।খারাপ লাগছিল না কিন্তু কতদূর যেতে হবে ভেবে চিন্তিত।
মেস থেকে আমি হেটেই স্টেশনে আসি।অফিস যেতে হবে বলে ট্রামে উঠলাম।কাকু ট্রাম থেকে দেখিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্সী কলেজ।
আমরা ট্রাম থেকে নেমে পড়লাম।বা-দিকে সারি সারি দোকান।দুটো দোকানের মাঝে সরু প্যাসেজ।প্যাসেজ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেখলাম একটা ঘরের দরজা ভেজানো।কাকু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলে,পিছনে আমি।এক ভদ্রলোক ধুতি পরছিল।ভদ্রলোক বলল,আরে বিশ্বাস এত দেরী?
আমি তো রেডী।আপনার সঙ্গেই বের হব।একটা চৌকি দেখিয়ে কাকু বললেন,তুমি বোসো।এখানে কিছু চেনো না হুট করে কোথাও যেও না।উপেনবাবু এই ছেলেটি ঘোষের জায়গায় থাকবে।ঘোষের ভাড়া আর আমাদের দিতে হবে না।
বাইরে কার গলা পেয়ে কাকু দরজার থেকে মুখ বাড়িয়ে বললেন,ম্যাম?বেশ মোটাসোটা চারের ঘরে বয়স এক মহিলা গোড়াালী পর্যন্ত ঝুল(ম্যাক্সি) জামা গায়ে উপরের পাটির দাত বাইরে উকি দিচ্ছে।
ম্যাম ঘোষের জায়গায় এ থাকবে।
চাকরি সরকারী?
চাকরি করে না।
বেকার আছে?
না মানে স্টুডেণ্ট।
কই বাত নেহি মাস গেলে চারশো পেলেই হল।
রঞ্জন ইনি বসুমতী শেখোয়াত,মালকিন।
সবাই অফিস চলে গেল ঘরে আমি একা।কোথায় এলাম কোথায় আমাকে থাকতে হবে বোঝা চেষ্টা করছি।তিন ফুট চওড়া চৌকি আমার অসুবিধে হবে না।বালিশ বিছানা আনি নি।কিট ব্যাগটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।অনবরত গাড়ী চলছে কলকাতায় এত গাড়ী জানা ছিল না।মনে মনে স্থির করি অবসর সময়ে ঘুরে ঘুরে কলকাতার অন্ধি সন্ধিগুলো চিনতে হবে।কাকুর একটা কথা মনে পড়ল,আর্জ অর্থাৎ ভিতর থেকে স্পৃহা থাকতে হবে।বৈচিমাসী সেদিন আমার মধ্যে স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিলেন।তারপর বৈচিমাসীকে আর জোরজার করতে হয়নি।
এখন আমার কাজ কলেজে ভর্তি হওয়া,কাকু আসুক তারপর কথা বলে ঠীক করতে হবে।
কলকাতা যাওয়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।সুমনা ভোরে উঠে রান্না শুরু করলেন।সুখ স্নান করতে চলে গেল।কাল লাইব্রেরীতে গিয়ে সদস্যপদ তুলে নিয়েছে।বরেনদার সঙ্গে কথা হল।কলকাতাকে না চিনলে এ রাজ্যকে চেনা হবে না।আরো অনেক কথা বললেন।গোপালনগর ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে না, বরেনদাকে মনে পড়বে।ভদ্রলোক গৃহী সন্ন্যাসী।সংসারের চেয়ে এই লাইব্রেরী বরেনদার প্রিয়।সীমাটা ভীষণ দুষ্টু এরকম প্রশ্ন করবে ভাবেনি।বাড়ীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,একটা কথা জিজ্ঞেস করব কাউকে বলবি না ?
একজনের কথা আরেকজনকে বলা পছন্দ করিনা।
সীমা আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে।বুঝতে পারছি না কি এমন কথা?সীমা বলল,তুই কাউকে কিস করেছিস?
শিহরিত হই।হেসে বললাম,এই তোর প্রশ্ন?
করেছিস কিনা বলনা।
তোর যত আজেবাজে কথা।
তার মানে কিস করেছিস।
বারে আমি কখন বললাম?
আমি জানি তুই মিথ্যে বলতে পারিস না।
সীমাকে মিথ্যে বলিনি।আমি তো কাউকে কিস করিনি,বৈচিমাসী আমাকে কিস করেছে।
কলেজের শেষদিনে এরকম প্রশ্ন করল কেন?স্নান করে বেরিয়ে দেখলাম ভাত নিয়ে বসে আছে মা।
তুমি কাজে যাবে না?
যাব,বলে এসেছি দেরী হবে।
মা সামনে বসে আছে এটা ওটা নাড়াচাড়া করছে কোনো কথা বলছে না।আমি জানি অনেক কিছু ভাবছে।কি ভাবছে মুখ ফুটে বলবেও না।বারার প্রতি মায়ের ছিল গভীর বিশ্বাস।বাবা যদি নরকেও নিয়ে যেতো নির্দিধায় অনুসরণ করত মা।মায়ের ধারণা বাবা এখনো মায়ের আশে পাশেই আছে।এ অসম্ভব জেনেও ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেও পারি না।
খাওয়া দাওয়া সেরে পোশাক পরে তৈরী।মা এক গোছা টাকা পকেটে ঢূকিয়ে দিল।আমি আর গুনে দেখলাম না।
মনু যদি চোখে পড়ে কমসম দামে একটা শাড়ী কিনিস তো।
কেন শাড়ি কি হবে?
মিতাকে একটা শাড়ি দেবার ইচ্ছে।রেখে দি যদি কখনো আসে।
সমস্ত কথা মাথায় আছে ব্যস্ততার মধ্যেও কোনোটা বাদ নেই।মনে মনে ভাবি যেতে পারলাম না তারমধ্যে ফাই ফরমাশ।অবশ্য বৈচিমাসীকে শাড়ি দেবার ব্যাপারটা খারাপ লাগে না।
বাইরে থেকে গলা পাওয়া গেল,রঞ্জন---রঞ্জন।
মনে হচ্ছে কাকু,নীচু হয়ে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বেরিয়ে এলাম।
কাকু রিক্সায় বসে।পাশে উঠে বসলাম।রিক্সা চলতে শুরুকরে।পিছন ফিরে দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মা।চোখে জল চিক চিক করছে মনে হল।নাকি ভুল দেখলাম।
রঞ্জন আগে তুমি কলকাতায় গেছো?
মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালাম।
আজব শহর কলকাতা যেন একটা মিনি ভারত বর্ষ।সব রাজ্যের মানুষ এখানে আছে।সবাই নিজের নিজের ধান্দায় ব্যস্ত।কারো দিকে কারো ফিরে দেখার ফুরসৎ নেই। আমাদের মেসের যে বাড়ীওলা পবন শেখোয়াত রাজস্থানের লোক।অবশ্য মেসের দেখাশুনা করে ওর বোন বসুমতী।মেয়ে হলে কি হবে পুরুষের এককাঠি উপরে।মুখরা টাইপ মহিলা।একটা স্যাড ব্যাপার ভদ্রমহিলা বিয়ে করেন নি দাদার সংসারেই থাকেন।
রাজস্থানী মানে কি হিন্দি বলতে হবে,আমার আবার হিন্দি ভালো আসেনা।যাইহোক চালিয়ে নেবো।
কাকু আবার বলেন,কয়েক পুরুষ ওরা এখানে আছে।চমৎকার বাংলা বলে।
স্টেশনে পৌছে কাকু টিকিট কাটলেন।টাকা দিতে গেলাম নিলেন না।বয়স্ক লোক জোর করতে পারিনা।ফাকা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে।জানলার ধারে দুজনে বসলাম।কাকু ধীরে ধীরে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলেন।ভালো লাগে মানুষটাকে।ট্রেনের সব আসন ভরে গেল।ট্রেন ছেড়ে দিল।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।ট্রেন কিছটা যাবার পর দু-পাশে বিস্তির্ণ মাঠ,সম্ভবত ধান ক্ষেত।দূর সীমানায় দেখা যাচ্ছে গাছ গাছালিতে ঘেরা চালা ঘর।
রঞ্জন।
কাকুর দিকে তাকালাম।
শনি-রোববার তুমি কিন্তু মিলিকে পড়াবে।তোমাকে ওর খুব পছন্দ।সবাই যেমন শিক্ষককে এড়িয়ে চলে মিলি আগ্রহ নিয়ে তোমার অপেক্ষা করে। পড়াশুনায় ওর মধ্যে একটা উৎসাহ আগ্রহ অনেক বেড়েছে।দেখো বইতে সবই থাকে।কিন্তু ছাত্রের মধ্যে ইণ্টারেস্ট গ্রো করাটায় জানবে তিনভাগ কাজ হয়ে গেল।এখানেই শিক্ষকের সার্থকতা।
অস্বস্তি বোধ করতে থাকি।
জানি তুমি লজ্জা পাচ্ছো।আমি তোমার প্রশংসা করছি যা সত্য তাই বলছি ।বরদাবাবু সঙ্গে খুব বেশী কথা হয়নি।শুনেছি উনি কলেজে যোগ দেবার পর শুধু ছাত্র নয় শিক্ষকদের মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল।শিশুকে হাতে ধরে কেউ কথা শেখায় না শিশু কথা শেখে নিজের গরজে।জোর করে তুমি কাউকে কিছু শেখাতে পারবে না।তুমি তার মধ্যে আর্জ তৈরী করে দেও দেখবে আপনি শিখবে।ছাত্রের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তোলাই শিক্ষকের কাজ।
বাবা বলতো কাজ ছোটো হোক বা বড় সব কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে পরিপাটি রূপে করা উচিত।
রাইট।দেখো কারখানায় মেশিন চালিয়ে যে নিখুত যন্ত্রপাতি তৈরী করছে তাকে আমরা বলছি মিস্ত্রী।যে তার উপরে সে ইঞ্জিনীয়ার।ইঞ্জিনীয়ারকে মেশিন দাও সে কি পারবে মিস্ত্রীর মত নিখুত যন্ত্র তৈরী করতে?লোকের বাড়ীতে রান্না করলে তাকে আমরা হীন দৃষ্টিতে দেখি।ভাবি না রান্নাও একটা শিল্প।আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা নেই কিন্তু বিদেশে শুনেছি তারা কোনো কাজকে ছোটো বলে ভাবে না।
মায়ের কথা মনে পড়ল।এখন বুঝতে পারছে না রাত হলে নিশ্চয়ই মনে পড়বে মনুর কথা।মাকে রেখে বাইরে থাকার অভ্যাস নেই।
মায়ের কথা ভাবছো?
চমকে উঠলাম বললাম,না না শনিবার তো চলে আসব।
হুউম জীবন মানে হচ্ছে সাধনা।সাধনা ছাড়া সাফল্য আসে না।
শিয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে কাকু দাঁড়িয়ে পড়লেন।মনে মনে ভাবি আরো কতদূর?
একটা ট্রাম আসতে কাকু ওঠো বলে চেপে বসলেন।জীবনে প্রথম ট্রামে চড়া।খারাপ লাগছিল না কিন্তু কতদূর যেতে হবে ভেবে চিন্তিত।
মেস থেকে আমি হেটেই স্টেশনে আসি।অফিস যেতে হবে বলে ট্রামে উঠলাম।কাকু ট্রাম থেকে দেখিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্সী কলেজ।
আমরা ট্রাম থেকে নেমে পড়লাম।বা-দিকে সারি সারি দোকান।দুটো দোকানের মাঝে সরু প্যাসেজ।প্যাসেজ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেখলাম একটা ঘরের দরজা ভেজানো।কাকু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলে,পিছনে আমি।এক ভদ্রলোক ধুতি পরছিল।ভদ্রলোক বলল,আরে বিশ্বাস এত দেরী?
আমি তো রেডী।আপনার সঙ্গেই বের হব।একটা চৌকি দেখিয়ে কাকু বললেন,তুমি বোসো।এখানে কিছু চেনো না হুট করে কোথাও যেও না।উপেনবাবু এই ছেলেটি ঘোষের জায়গায় থাকবে।ঘোষের ভাড়া আর আমাদের দিতে হবে না।
বাইরে কার গলা পেয়ে কাকু দরজার থেকে মুখ বাড়িয়ে বললেন,ম্যাম?বেশ মোটাসোটা চারের ঘরে বয়স এক মহিলা গোড়াালী পর্যন্ত ঝুল(ম্যাক্সি) জামা গায়ে উপরের পাটির দাত বাইরে উকি দিচ্ছে।
ম্যাম ঘোষের জায়গায় এ থাকবে।
চাকরি সরকারী?
চাকরি করে না।
বেকার আছে?
না মানে স্টুডেণ্ট।
কই বাত নেহি মাস গেলে চারশো পেলেই হল।
রঞ্জন ইনি বসুমতী শেখোয়াত,মালকিন।
সবাই অফিস চলে গেল ঘরে আমি একা।কোথায় এলাম কোথায় আমাকে থাকতে হবে বোঝা চেষ্টা করছি।তিন ফুট চওড়া চৌকি আমার অসুবিধে হবে না।বালিশ বিছানা আনি নি।কিট ব্যাগটায় মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।অনবরত গাড়ী চলছে কলকাতায় এত গাড়ী জানা ছিল না।মনে মনে স্থির করি অবসর সময়ে ঘুরে ঘুরে কলকাতার অন্ধি সন্ধিগুলো চিনতে হবে।কাকুর একটা কথা মনে পড়ল,আর্জ অর্থাৎ ভিতর থেকে স্পৃহা থাকতে হবে।বৈচিমাসী সেদিন আমার মধ্যে স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিলেন।তারপর বৈচিমাসীকে আর জোরজার করতে হয়নি।
এখন আমার কাজ কলেজে ভর্তি হওয়া,কাকু আসুক তারপর কথা বলে ঠীক করতে হবে।