Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
                                নবম পর্ব

"অভয়.... অভয়, কোথায় তুমি?" অন্ধকার পথে এগিয়ে চলেছে তাথৈ কিন্তু এটা কোন জায়গা?, যাকে খুঁজছে তাকে দেখতে না পেয়ে আবার ডাকে "অভয় এবার কিন্তু খারাপ হচ্ছে, তুমি জানো আমার অন্ধকারে ভয় লাগে..." চারিদিকে ভালো করে দেখে অন্ধকারেও জায়গাটা চিনতে পারে তাথৈ এটা তো মন্দিরের পিছনের বাগানটা, হটাৎ একটু দূরে আবছা অন্ধকারে একটা গাছের তলায় একটা কালো মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তাথৈ খুশিতে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে দ্রুত পা চালিয়ে কাছে যায় "অভয়" মূর্তিটা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল, ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ায়, অবাক হয়ে দেখে তাথৈ এ যে সেই ছেলেটা যার সাথে রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ হয়েছিল, নিজেকে বিপদ বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। "আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো, আমি তোমাকে দেখেই চিনেছি......" আনন্দে গদগদ কণ্ঠে বলে তাথৈ "কিন্তু তুমি কোথায় গিয়েছিলে? তুমি জানো তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কত কষ্ট হয়েছে?" ছেলেটা তাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাথৈ বলে "কি হলো অভয় কথা বলছো না কেন? জানো সাম্য বলছিল যে আমার জ্যেঠুমণি আর বাপি নাকি তোমাকে..... বলোনা অভয় ওরা কি কিছু করেছিল? বলোনা সাম্য মিথ্যা কথা বলছিল বলো?, তুমি কথা বলছো না কেন?"
"আমি তোমাকে ঘেন্না করি তাথৈ, ঘেন্না করি" কঠোর স্বরে বলে ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গেই তাথৈএর উজ্জ্বল মুখে অন্ধকার নেমে আসে কোনোমতে বলে "তুমি এ কি বলছো অভয়?"
ঠিক বলছি, আমি তোমাকে ঘেন্না করি তুমি আর তোমার পরিবার আমাদের সাথে যা করেছে তারপরেও তুমি ভাবলে কিভাবে যে আমি তোমাকে ভালোবাসবো?
অভয়...
আর তুমি? তুমিও তো ওই সাম্যর সাথে
না... তুমি ভুল বুঝছো অভয়, বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, সাম্যর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই কোনোদিন‌ও ছিল না।
কিন্তু আমি তোমাকে ঘেন্না করি।
না..  তুমি আমাকে ঘেন্না করো না আমি জানি, তুমি আমাকে ঘেন্না করতে পারো না।
আমি তোমাকে ঘেন্না করি তাথৈ, ঘেন্না করি।
ছেলেটা আস্তে আস্তে পিছনে গাঢ় অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে হবে লাগলো।
অভয়.. কোথায় যাচ্ছো শোনো অভয়...

তুমি..... উমমম...তুমি.... আমাকে ঘেন্না করতে.. পারো না.... অভয়... যেয়ো না... শোনো...
ঘুমের মধ্যে অস্ফুটস্বরে বিড়বিড় করতে করতে হটাৎ "অভয়"বলে একটু জোরে ডেকে ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে তাথৈ, সারা কপাল ঘেমে গেছে. আশেপাশের জায়গাটা বুঝতে একটু সময় নেয়, ডান হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেয় তারপর বেডের পাশে টেবিলে রাখা জলের গ্লাসের ঢাকনা সরিয়ে জল খায়।
স্বপ্ন দেখছিল সে, কি ভয়ানক দুঃস্বপ্ন নাকি ভবিষ্যতে হতে চলা ঘটনা বুঝতে পারে না তাথৈ, আতংকে তার বুক কাঁপতে থাকে সে মনেপ্রাণে চায় যে সাম্য তাথৈএর পরিবার সম্পর্কে যা বলেছে সেটা মিথ্যা হোক কিন্তু যদি সত্যি হয় তখন? তখন কি হবে? অভয়ের কাছে তো মুখ দেখানোর কোনো অধিকার থাকবে না তার.. আর অভয় সে কি সত্যিই তাকে ঘেন্না করে? সেইজন্যেই কি দু দুবার তার সামনে এসেও নিজের পরিচয় না দিয়ে এড়িয়ে গেছে? না তাথৈএর দৃঢ় বিশ্বাস সাম্য যা বলেছে সেটা মিথ্যা, তার পরিবার অভয়ের সাথে কোনো অন্যায় করেনি।
ঘড়ি দেখে তাথৈ তিনটে বাজে কিন্তু তার চোখে এখন আর ঘুম নেই, ড্রয়ার থেকে অভয়ের ছবিটা বার করে চোখের সামনে ধরে তারপর আপনমনে বলে "তোমাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে অভয়, মিস্টার গুপ্ত তোমার ঠিকানাটা দিলেই যাবো আমি তোমার কাছে, প্লিজ আমাকে ঘেন্না কোরো না অভয়, ঘেন্না কোরো না"।
কাকভোরে ঘুম ভেঙে গেল রয়ের, পাশে তাকিয়ে দেখে তার‌ই দিকে মুখ করে কাত হয়ে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঘুমাচ্ছে বিদিশা, তার সারা মুখে গতরাতের সঙ্গমের তৃপ্তির ছাপ বিদ্যমান, রাতে দুজনেই একটাই চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিল সেটা এখন ওর গায়ে নেই ফলে ভোরের শীতে একটু জড়োসড়ো হয়ে আছে, রয় চাদরটা দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিল বিদিশার শরীর তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো তারপর বাইরে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পরে অত ভোরেই শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে একটা পাজামা আর একটা ভি গলা ফুলস্লিভ টি-শার্ট গায়ে দিল। ড্রয়িং রুমের একটা দিকে একটা ফাইবারের বড়ো স্লাইডিং দরজা ছিল তার ওপারে একটা বারান্দার মতো একটু জায়গা, বাড়ির পিছন দিক এটা এখানে একটা ছোট গোল টেবিল ঘিরে চারটে ভেলভেটের হাইব্যাক চেয়ার রাখা আছে, তার‌ই একটায় বসে বামপায়ের উপর ডানপাটা ভাঁজ করে তুলে পিঠটা পিছনে হেলিয়ে দেয় ফলে মাথাটাও হেলে যায় ভোরের দিকে এখানে বেশ ভালো আরামদায়ক ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে থাকে আস্তে আস্তে তার চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে।

"কি হলো শার্ট প্যান্ট খোলো আমার কাছে বেশি সময় নেই" এক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলার কণ্ঠস্বর স্মৃতির অতল থেকে উঠে এসে রয়ের কানে বাজতে থাকে, মেয়েদের সাথে সঙ্গম জিনিসটা নতুন নয় তার জীবনে বহু মেয়ে বা মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে সে তবে কাউকেই জোর করে বা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নয় বরং উল্টো সুন্দর সুপুরুষ সুগঠিত চেহারার অধিকারী সুদর্শন রয়ের প্রতি মেয়ে বা মহিলাদের আগ্ৰহ বরাবরই ছিল তবে কেউই তার প্রেমিকা নয় বরং সবারই চাহিদা শুধু সেক্স সব সমাজের উঁচু তলায় থাকা ধনী ঘরের মেয়ে মহিলা সব কেউ বিবাহিত কেউ সেপারেটেড বা কেউ ডিভোর্সি, সবার সাথেই ওই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডের মতো কেস তাই কাল রাতে বিদিশার মুখে ওই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড শুনে আর দ্বিরুক্তি করেনি, প্রায় সবার সাথেই ওই এক-দুবার তার বেশি নয় ব্যাতিক্রম একজন, মায়া.... এক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা, শ্যামলা গায়ের রঙ, মাথায় ছোট করে কাটা চুল, একটু পৃথুলা চেহারা, বুকে দুটো বড়ো ভরাট স্তন, বড়ো নিতম্ব, শাড়ি পরলে সেটা নাভীর আনেকটা নীচে পরেন ফলে সুগভীর নাভি দৃশ্যমান থাকে, সন্তান ছিল না স্বামী বেশিরভাগ সময়ই চাকরিসূত্রে বাইরে থাকতেন, ধীরে ধীরে নিজের পুরনো জীবনের কিছু ঘটনা স্বপ্নের মতো চোখের সামনে ভেসে আসছিল।
মহিলার রয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল একজন ছেলে, তখন সদ্য বাবা মারা গেছেন সবকিছু হারিয়ে কোনোমতে সম্পূর্ণ অজানা শহরে এসেছে সে, কোনোমতে একটা বস্তিতে একটা মাথা গোঁজার ঠাই জোগাড় করেছে তাও নিজের হয় অন্য একজনের বাসায়, পরিবার বলতে শুধু মা, সেও অসুস্থ, সদ্য স্বামীকে হারানোর শোকে বিধ্বস্ত তবুও স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করার জন্য ছেলেকে পড়াশোনা আবার শুরু করতে বলেছেন, রয়‌ও বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে চায় কিন্তু সাথে এটাও বোঝে যে এটা কার্যত অসম্ভব কারণ এই নতুন শহরে তাদের বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রয়োজনগুলো মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই তার উপর তার আগের ক্লাসের রেজাল্ট সহ সব ডকুমেন্ট হারিয়েছে কোনো কিছুই তার কাছে নেই।  ভাগ্য ভালো যে এক সহৃদয় বিধবা মহিলা যিনি তার মায়ের‌ই সমবয়সী, তিনি তাদের তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, দুনিয়ায় ওই মহিলারও কেউ নেই তাই বোধহয় রয় আর তার মাকে আপন করে নিয়েছিলেন।
ওই বস্তিতে সমবয়সী কিছু ছেলের সাথে আলাপ হয় রয়ের তখন সে একটা কাজ খুঁজছে কিন্তু এই অচেনা অজানা শহরে কে তাকে কাজ দেবে ,তখন একজন তাকে মায়া নামক মহিলার কাছে নিয়ে যায়, কিশোর বয়সেও যথেষ্ট সুদর্শন ছিল রয়, মহিলার তাকে পছন্দ হলেও কাজটা শুনে রয় পিছিয়ে আসে, কিন্তু যে তাকে নিয়ে গিয়েছিল সে বোঝাতে থাকে যে এ ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো কাজ পাবে না সে, আর এর ফলে টাকাও ইনকাম করতে পারবে সে তাই প্রথমে রাজী না হলেও কতকটা বাধ্য হয়েই সে যোগ দেয়, ওই মহিলা ছিলেন নিম্ফোম্যানিয়াক, মহিলা টাকা দিয়ে মেল এসকর্ট ডেকে  নিজের যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত করে থাকেন। রয় একেবারে নতুন তাই প্রথম প্রথম পিঠে শরীরে মালিশ করে দেওয়া, হাত পা টিপে দেওয়া... তারপর ধীরে ধীরে নিজের স্তন মালিশ করানো.... যোনী লেহন... রয়ের যৌনাঙ্গ মৈথুন করা ,শেষে সঙ্গম সব করতে লাগলেন বা বলা ভালো রয়কে সেক্স এডুকেশন দিতে থাকেন, সাথে নিজের চাহিদা মেটাতে থাকেন, বললেন: তোমাকে সব কিছু শেখাবো, শেখাবো আমি কিন্তু.....উপভোগ অনেকেই করবে।
তারপর ধীরে ধীরে ওই মায়া রয়কে একজন মেল এসকর্ট বানানোর চেষ্টা করেন, শুধু তিনি নন তার পরিচিত অনেক মহিলাই এবার রয়কে বিছানায় ডাকতে থাকেন, বলাবাহুল্য ততদিনে রয় অনেক কিছুই শিখে গেছে কিভাবে মহিলাদের উত্তেজিত করতে হয়, বা কোন ধরনের মহিলাকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হয় সব শিখে গেছে, এবং এই মহিলারা টাকার বিনিময়ে অনেক সময়ই মেল এসকর্ট ভাড়া করে নিয়ে এসে নিজেদের যৌন ক্ষুধা মেটায়, তখন রয়ের টাকার সত্যিই খুব দরকার, তাই ওসব মেনে নিয়েছিল, প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগতো, ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যায়, ওই মহিলাদের বেশিরভাগ এতটাই উগ্ৰ স্বভাবের ছিলেন যে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য রয়কে আঁচড়ে কামড়ে ওর শরীরে দাগ বসিয়ে দিত, যন্ত্রনায় ছটফট করলেও সে বাধা দিতে পারতো না, যদিও এইসব দাগ তাকে মায়ের থেকে লুকিয়ে রাখতে হয়, মাঝে মাঝেই রাত করে বাড়ি ফেরে, মাকে বলেছে একটা কাজ পেয়েছে তাই....
তার মা অবশ্য বারন করেন বলেন: বাবু তুই আবার পড়াশোনা শুরু কর, দেখনা কোথাও ভর্তি হতে পারিস কিনা, টাকার কথাটা আমি ভাববো, মা তাদের বস্তি থেকে কিছুটা দূরে এক দোকানে সেলাইয়ের কাজ করে আরো অনেক মহিলাদের সাথে অবশ্যই সেই মহিলাও থাকেন যিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তিনি বোন বলে ডেকেছেন রয়ের মাকে আর রয় তাকে মাসি বলে ডাকে।
মা বারণ করলেও রয় শোনে না সে জানে বাবার মৃত্যুশোক মা এখনো ঠিক কাটিয়ে ওঠেনি, মাকে দিয়ে বেশি কাজ সে করাতে চায় না ফলে দিনের পর দিন তার শরীরে দাগ বাড়তে থাকে, যণ্ত্রনা হতে থাকে কিন্তু মায়ের সামনে চুপচাপ সহ্য করতে হয়,  মাকে বুঝতে দেয় না, যদিও মা সন্দেহ করে মাঝে মাঝেই জিজ্ঞেস করে "কি রে তোর শরীর ঠিক আছে তো, তোর মুখ কেমন যেন লাগছে?" সে ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে সরে পরে। কিন্তু যখন একা থাকে পার্কে বা নির্জন কোনো জায়গায় তখন মাঝে মাঝেই যণ্ত্রনায় চিৎকার করতে থাকে, কাতরাতে থাকে, একবার তো পার্কে অজ্ঞান‌ই হয়ে গিয়েছিল।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে আর পার্কে নেই কারো একটা বাড়িতে বিছানায় শুয়ে আছে, বিছানা থেকে উঠে বসে চারিদিকে দেখতে থাকে, ঘরের এক কোণে একটা তাকের উপর বেশ কিছু মেডেল এবং পুরষ্কার চোখে পড়ে, সে সেদিকে এগিয়ে যায়, সাথে ফ্রেমে বাধানো অনেককটা শংসাপত্র দেখে তাতে নাম লেখা আছে শেখর রাও।
"ওগুলো স্পর্শ করবে না" বাঁজখাই আওয়াজ শুনে চমকে পিছনে ফিরে দেখে এক প্রায় ছফুটের উপরে লম্বা একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, তার বয়স ৬০-৬৫ হবে, গায়ের রঙ শ্যামলা, মাথায় কাঁচা-পাকা মেশানো চুল, গালে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, এই বয়সেও যথেষ্ট পেটানো শক্ত সামর্থ্য শরীর, পরে বুঝেছিল এই লোকটা সাক্ষাৎ দেবদূত ছিলেন তার জীবনে।
আমি আসলে দেখছিলাম....
তুমি পার্কে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে, আমি দেখতে পেয়ে..
ধন্যবাদ।
তোমার বাড়িতে জানে যে তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েদের সাথে ফূর্তি করতে যাও?
সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে লোকটা আবার বললো: তোমাকে আগেও পার্কে চিৎকার করতে দেখেছি, আর আজ এখানে তোমার গায়ের দাগগুলো দেখে বুঝলাম সেগুলো কিসের দাগ।
এতক্ষণে রয় খেয়াল করলো তার গায়ের শার্টটা খোলা হয়েছে, সে চুপ করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
লোকটা আবার বললো: এখনো তো অ্যাডাল্ট হয়েছো বলে মনে হয় না, বয়স কত তোমার?
১৭ তে পরবো।
বাঃ এখনই এইসব,আচ্ছা এইসব করে কি পাও? এসবের জন্য পুরো জীবন পরে আছে আর তাছাড়া অন্তত নিজের শরীরের কথা ভেবেও তো ছাড়তে পারো,যণ্ত্রনায় ছটফট করতে দেখেছি তোমাকে যদিও এটার জন্য কিনা শিওর জানিনা।
এটার জন্যই।
তাহলে? যাইহোক সেটা তোমার পার্সোনাল ব্যাপার, পারলে নিজেকে শোধরাও।
আপনি আমাকে খারাপ ছেলে ভাবছেন তাই না?
ভাববো আবার কেন? তোমার মতো ছেলেরা এমনই হয়।
কারো সম্বন্ধে না জেনে কমেন্ট করা অনেক সহজ স্যার, আচ্ছা আপনি বলুন রেড লাইটেড এরিয়ায় যারা কাজ করেন তাদের প্রত্যেকেরই কি স্বভাব খারাপ? নাকি কেউ কেউ পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে ওই পথে আসে?
প্রশ্নটা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে লোকটা। রয় আবার বলে: আপনি যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, এখন আমি আসি। বলে চলে যাবার জন্য বিছানার উপর একপাশে রাখা শার্টটা নিতেই লোকটা আবার বললো: এখন রেস্ট নাও পরে চলে যেও, আর আমার কথায় আঘাত পেলে আমি দুঃখিত।
না না, সেটা নয় আপনার কোনো দোষ নেই, সবাই তাই ভাববে যেটা আপনি ভেবেছেন।
তুমি কেন করো ওসব?
আমার টাকার দরকার স্যার।
টাকা তো সবারই দরকার।
একদম তাই, শুধু কারো আছে তবুও আরো দরকার তাই তারা অন্যের থেকে ছিনিয়ে নেয়.... আর কারো কাছে একদম নেই তাআ তারা উপার্জনের জন্য কষ্ট সহ্য করে।
তোমার নাম কি? আমি শেখর রাও..মেজর শেখর রাও।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাকে নামটা বললো রয়, নিজের আসল নামটাই বলেছিল তারপর একটু থেমে বললো: আপনি আমাকে রয় বলে ডাকতে পারেন,আপনি আর্মিতে ছিলেন?
এক্স কম্যাণ্ডো।
আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
কি?
আপনার ওই সার্টিফিকেটগুলো দেখছিলাম, মার্শাল আর্ট কম্পিটিশনে জেতার জন্য, আপনি মার্শাল আর্ট জানেন?
জিতেছি যখন তখন নিশ্চয়ই জানি আর বললাম তো আমি রিটায়ার্ড কম্যাণ্ডো ছিলাম, আমাদের শিখতে হয়।
আমাকে শেখাবেন? আমি শিখতে চাই। আগ্ৰহ ভরে কথাটা বলে উঠলো।
না, গম্ভীর স্বরে বললেন শেখর রাও, এগুলো সাধনার জিনিস ,তুমি এর যোগ্য ন‌ও।
আপনি তো আমার যোগ্যতার কোনো পরীক্ষাই নেননি।
তোমার কি মনে হয় হে ছোকড়া? এসব শেখা এত‌ই সহজ? আর তাছাড়া তোমার যা পেশা শুনলাম।
ওটা আমার পেশা নয়, বাধ্য হয়ে করছি আপনাকে বললাম তো। বেশ জোরের সঙ্গেই বললো রয়।
এমন কি দরকার যে তোমাকে এসব করতে হয় তাও এইটুকু বয়সেই? তোমার বাবা-মা জানেন?
বাবা মারা গেছেন, মা অসুস্থ তাই বলিনি। কথাটা শুনে একটু শান্ত হলো শেখর রাও, শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন: কি হয়েছিল, শরীর খারাপ?
না।
তাহলে?
প্রথমে বলবে কি না এই নিয়ে দোটানায় ভুগলেও কেন যেন সব সত্যি কথা বলেই ফেললো রয়, বাবার মৃত্যু তারপর কিভাবে আর কেন সবকিছু হারিয়ে নিজের শহর ছেড়ে সে এই বাণিজ্যনগরীতে এসেছে, এসে কোথায় উঠেছে এমনকি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে চাওয়া এবং তার পরের কথাও যে কিভাবে সে প্রায় মেল এসকর্ট হয়ে গেছে সব বললো।
শুনে গম্ভীরভাবে শেখর রাও জিজ্ঞেস করলেন: তোমার বাকি ক্লায়েন্টদের নাম কি?
মাপ করবেন সেটা বলতে পারবো না, তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
শেখর রাও অবাক হয়ে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে র‌ইলেন।
রয়: এবার আমি আসি স্যার। বলে শার্টটা পরে নিয়ে ঘর থেকে বাইরে চলে এল, উঠোন পার করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল, শেখর রাও পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন।
এরপর বেশ কিছুদিন আর তার সাথে দেখা হয়নি রয়ের, বর্তমানে মহিলাদের দৌরাত্ম্য কম তাই পড়াশোনায় মন দিয়েছে, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় আর মাঝে মাঝে পার্কে নির্জনে গিয়ে বসে।
এরকমই প্রায় দু-সপ্তাহ পর একদিন পার্কে বসে আছে, এমন সময় তার পাশে এসে বসলেন তাকে দেখে রয় সসম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো, শেখর রাও বললেন: তোমাকে কয়েকদিন ধরেই খুঁজছিলাম।
কেন?
কিছু বলার ছিল।
বলুন।
তুমি ওই কাজ ছাড়তে পারবে?
আমার একটা উপার্জনের রাস্তা চাই সেটা পেলেই ছেড়ে দেবো, আশা করছি কোথাও না কোথাও একটা না একটা উপায় নিশ্চয়ই হবে।
আর ততদিন?
রয় মাথা নীচু করে র‌ইলো। শেখর রাও বলতে থাকেন: তোমাকে আমি শেখাবো কিন্তু একটা শর্তে তোমাকে এই কাজ ছাড়তে হবে, তুমি এখনো  অনেক ছোটো, এতে তোমার শরীর নষ্ট হয়ে যাবে।
রয়ের মুখে একটা উজ্জ্বলভাব এসেই মিলিয়ে গেল বললো: আমি শিখতে চাই ঠিকই কিন্তু আপনাকে ফিস দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।
তোমার কাছে চেয়েছি? প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন শেখর রাও।
একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
কি?
সেদিন বললেন শেখাবেন না আবার আজ নিজে থেকেই বলছেন শেখাবেন এর কারনটা কি?
শেখর রাও গম্ভীর হয়ে গেলেন বললেন: তা এখনই জেনে তোমার লাভ নেই যখন সময় আসবে তখন বলবো, শেখাবো বলেছি শেখাবো কিন্তু শর্তে রাজী কি না বলো?
আমি তো ছাড়তেই চাই কিন্তু..
তোমাকে একটা কাজ আমি জোগাড় করে দেবো।
রয়ের পুরো মুখ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আনন্দে, সে গিয়ে শেখর রাওয়ের পায়ের কাছে বসে পরলো।
পরদিন থেকে তার ট্রেনিং শুরু হলো, শেখর রাওয়ের বাড়ির উঠোনে সাদা চাদরে ঢাকা দেওয়া কিছু আছে এটা সে সেদিন দেখেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি কি আজ দেখলো সেগুলো সব মার্শাল আর্ট ট্রেনিংয়ের ইন্সট্রুমেন্ট, কাঠের ডামি হেড, কিছু জায়গায় কয়েকটা লম্বা লাঠি এছাড়াও শেখর রাও একটা বড়ো বাক্স এনে রাখলেন কিন্তু না খোলায় জানলো না যে তার মধ্যে কি আছে।
বেসিক ট্রেনিং‌ই শুরু হলো কিন্তু এত কড়া ট্রেনিং যে মাঝে মাঝে রয়ের মনে হতো "ধুত্তেরি, কেন যে শেখানোর কথা বলতে গেলাম" মাঝে মাঝে একটু নরম ট্রেনিংয়ের কথা বললেই শেখর রাও আরো কড়াকড়ি চালু করতেন, এরপর শুরু হলো পরবর্তী ধাপ।
শেখর রাও নিজের সোর্সে তাকে একটা ছোটোখাটো কাজের ব্যবস্থাও করে দিলেন, মার্শাল আর্ট ট্রেনিংয়ের সাথে সাথেই তিনি রয়কে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াতে লাগলেন, শুধু মার্শাল আর্ট ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে তার দখল ছিল সেসব তিনি রয়কে শেখাতে থাকেন।
যেমন একজন প্রকৃত গুরু যোগ্য শিষ্য পেলে নিজের জ্ঞানকক্ষের দরজা খুলে দেন ঠিক তেমনই রয়ের আগ্ৰহ, মেধা, পরিশ্রম আর সাধনা দেখে শেখর রাও তার এতদিনের অর্জিত জ্ঞানের দরজা খুলে দেন, শেখর রাও শুধু কম্যাণ্ডো নন, তিনি একজন এজেন্ট যাকে মাঝে মাঝেই দেশবিদেশে বিভিন্ন মিশনে যেতে হয়েছে সেখানে থাকতে হয়েছে সেখানকার লোকেদের সাথে মিশতে হয়েছে, ফলে তার জ্ঞানের পরিধি অন্য অনেকের তুলনায় অনেকটাই বেশি এসবই তিনি রয়কে হাতে ধরে শেখাতে থাকেন বক্সিং, ক্যারাটে, জুডো, মুয়ে থাই, উইং চুং ইত্যাদি কৌশল শেখাতে লাগলেন, মেধাতো ছিল‌ই সাথে একাগ্ৰতা আগ্ৰহ, পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের ফলে খুব অল্প সময়েই এক্সপার্ট হয়ে উঠলো এর সাথে নানচাকু, টনফা, টনফা ব্লেড, সানজিগান ছাড়াও বিভিন্ন মার্শাল আর্টের অস্ত্র সাথে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র যেমন পিস্তল, স্নাইপার, বিভিন্ন ধরনের রাইফেল ইত্যাদি অস্ত্রচালনাও শেখাতে থাকেন, এর মধ্যে কিছু অস্ত্র ওই বাক্সটায় ছিল যেটা রয় প্রথম ট্রেনিংয়ের দিন দেখেছিল, শেখর রাও বলেন এসব তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্ৰহ করেছেন, আর আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জোগাড় করা শেখর রাওয়ের পক্ষে খুব একটা কঠিন নয় যদিও ট্রেনিংয়ে আসল বুলেট ব্যবহার করতেন না। অস্ত্রচালনার পাশাপাশি খালি হাতে শত্রুর মোকাবেলা করা, শত্রুকে ঘায়েল করে এমনকি মেরে ফেলাতেও রয় এক্সপার্ট হয়ে উঠতে থাকে। বছর কাটতে থাকে এমনসময় একদিন একটা ভয়ানক দুঃসংবাদ পায় সে, তার গুরু শেখর রাও এক দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত, বেশিদিন আর নেই।  মৃত্যুর আগে তিনি তার সুযোগ্য শিষ্যকে বলে যান কেন তিনি তাকে সব শিখিয়েছেন।
শেখর রাওয়ের একটা পরিবার ছিল একজন স্ত্রী এবং একটা ছেলে তারা দুজনেই এক গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান, সেই ছেলে যদি বেঁচে থাকতো তাহলে তার বয়স রয়ের মতোই হতো, রয়কে তাই তিনি নিজের ছেলের মতোই দেখেছেন। শেখর রাও মারা যাওয়ার আগে তার সবকিছু রয়কে দিয়ে যান, তিনি মারা গেলে রয় বুঝতে পারে তার মাথার উপর থেকে আবার একটা ছাদ সরে গেছে, যদিও ততদিনে সে কিশোর বয়স পেরিয়ে যুবক হলেও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ পুরুষ, কিন্তু তবুও সে দিশাহারা হয়ে পরলো কারন তার জীবনের লক্ষ্য সে অনেক আগেই স্থির করে নিলেও তার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিল না, তার জীবনের লক্ষ্য প্রতিশোধ এক শয়তানের উপর প্রতিশোধ, শেখর রাও অনেকবার তাকে বলেছেন তুমি এখন গিয়ে তাকে সহজেই মারতে পারো কিন্তু প্রতিবারই রয় বলেছে: মারবো তো বটেই তবে তিলে তিলে মারবো, এক ঝটকায় মারলে সেটা শাস্তির বদলে পুরষ্কার হয়ে যাবে।
শেখর রাও বলেন: তুমি যা চাইছো সেটার জন্য তোমাকে আগে ক্ষমতা অর্জন করতে হবে অনেক ক্ষমতাশালী হতে হবে তবেই পারবে।
কথায় বলে যদি তুমি কোনো কিছু খুব মন থেকে চাও তাহলে পুরো দুনিয়া তোমাকে সেটা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে। রয়ের জীবনের লক্ষ্যপূরণ করার রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে যখন সে ক্লান্ত হতাশ তখনই তার পরিচয় হয় বাণিজ্যনগরীর অন্ধকার জগতের অন্যতম বড়ো মুখ আহমেদ খান ওরফে আহমেদ ভাই এর সঙ্গে।
এতদিনে যয়ের বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়েছে এরকম কয়েকজন বন্ধু নিয়ে যায় তার কাছে নিয়ে যায় এই আহমেদ খানের দলের একজনের কাছে, রয় তার দলে যোগ দেয় এইভাবেই ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে পদার্পণ হয় রয়ের, কাজে উন্নতি করতে থাকে যেমন তেমনি টাকাও আসতে থাকে তারপর একদিন আহমেদ ভাইয়ের সুনজরে পরে, জহুরী যেমন জহর চিনতে ভুল করে না ঠিক তেমনি অভিজ্ঞ আহমেদ খান‌ও চিনতে ভুল করেননি তার দলের সেরা রত্নটিকে, নিজের কাছে টেনে নেন রয়কে, খুব তাড়াতাড়ি রয় আহমেদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠদের একজন হয়ে ওঠে।
রয়ের কাজ ছিল শিল্পীর কাজ, কাজ বলতে অবশ্য প্রধানত শত্রুদের শেষ করা এছাড়া কিডন্যাপিং,  কারো থেকে টাকা আদায় ইত্যাদি কোথাও কোনো প্রমাণ বা চিহ্ন না রেখে কাজ হাসিল করে রয় ফলে পুলিশ তাকে ছুঁতে পারে না আর তাছাড়া অন্ধকার জগতে অনেকেই একজন নতুন কারো অস্তিত্ব অনুভব করলেও কয়েকজন ছাড়া কেউ তার সম্পর্কে জানে না, বহুবার খোদ আহমেদ ভাইয়ের জীবন বাঁচিয়েছে শত্রুদের হাত থেকে, বহুবার এমন হয়েছে আহমেদ ভাইকে চলে যাওয়ার রাস্তা করতে গিয়ে একা খালি হাতে একাধিক শত্রুর সাথে মোকাবেলায় নেমেছে, এইকারনে আহমেদ ভাই‌ও যথেষ্ট ভালোবাসেন এবং লুকিয়ে রাখেন তার অস্ত্রভাণ্ডারের সবথেকে ভয়ংকর ও সেরা অস্ত্রটিকে।
সময় নিজের মতো বয়ে চলে, আরও কয়েকবছর কেটে গেল.. রয় এখন আহমেদ ভাইয়ের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য‌ই শুধু নয়, নিজস্ব দল গড়ে রীতিমতো ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে সবথেকে বড়ো কথা সে এখন নিজের আলাদা একটা আইডেন্টিটি বানিয়েছে যেটা অন্ধকার জগতে নয় তার বাইরের জগতে বিদ্যমান, অন্ধকার জগতের কাজ ছাড়াও নিজস্ব লিগ্যাল বিজনেস শুরু করেছে সেগুলোতেও উন্নতি হচ্ছে সব মিলিয়ে সে এখন খালি উপরে উঠছে, যদিও এটা শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা কিন্তু নয় বহুবার সে প্রায় মৃত্যুর মুখে পৌঁছে গিয়েছিল কিন্তু তার গুরুর ট্রেনিংয়ের জন্যই হোক বা তার মধ্যে থাকা সারভাইভাল ইনস্টিংক্ট এবং কিলার ইন্সিংক্টের অদ্ভুত মিশ্রনের জন্য প্রতিবারই সবরকম বিপদ কাটিয়েই সে বেরিয়ে এসেছে, এইসময়েই রয়ের আরও একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী জোটে....আমির।
আরও কিছু বছর কাটে এখন সে অন্ধকার জগতে অতটা হস্তক্ষেপ করে না যদিও এখনো আহমেদ খানের দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সে, অবশ্য তার দরকারো পরে না সে তার নিজস্ব বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকে,সেগুলো যে বাড়াচ্ছে তাই নয়, অনেকরকম বিজনেসে হাত পাকিয়েছে একসময় যে সবকিছু হারিয়ে এই শহরে এসেছিল টাকার জন্য প্রায় মেল এসকর্ট হয়ে উঠেছিল এখন সে টাকার বিছানায় শুয়ে থাকে। এমনই সময় খুন হন আহমেদ খান, তার‌ই ঘনিষ্ঠ কিছুলোক বিরোধী দলের সাথে হাত মিলিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে এবং তার আরও কয়েকজন  বিশ্বস্ত অনুচরকে হত্যা করে ফলে আহমেদ খানের দল ভেঙে যায়, রয় এসব খবর পেলেও গা করে না তার লক্ষ্য এখন আরও টাকা এবং ক্ষমতা অর্জন যাতে সে তার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে ,দেশের প্রতিটা শহরে সে নিজের ব্যাবসা ছড়াচ্ছে সেই সাথে নিজের দলের বিশ্বস্ত লোকজন ছড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে দল বিস্তার করার জন্য, একসময় যে শহর ছেড়ে এসেছিল সেই শহরেও নিজের দল বিস্তার করে সে।
কিন্তু আবার তাকে ছেড়ে আসা অন্ধকার জগতে ফিরতে হয়, আহমেদ খানের মৃত্যুর পরে  তার যেকজন বিশ্বস্ত লোক বেঁচে ছিল তারা একরাতে একটা মিটিং ডাকে সেখানেই রয়কেও আমণ্ত্রন জানায়, যদিও রয় প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু পরে একজনের অনুরোধে যেতে হয়, ইনি আহমেদ খানের সবথেকে ঘনিষ্ঠ লোক, ইনিও রয়কে খুব পছন্দ করেন, দলের সবাই তাকে পণ্ডিতজী বলে ডাকে।
মিটিংয়ে দলের বাকি সদস্যদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে নতুন লিডার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বলাইবাহুল্য সেই মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবার মধ্যে রয়ের মতো ক্ষমতাশালী কেউ ছিল না কাজেই তাকেই দলের দায়িত্ব নিতে হয় তাছাড়া আরেকটা কারণ ও ছিল সেটা হলো পণ্ডিতজী, আহমেদ খানের পরে তিনিই দলের অঘোষিত নেতা কিন্তু তিনি নিজে নতুন যুবক কাউকে লিডার করতে চান ,এবং তার ভোট রয়ের দিকে, তাই আর কেউ কোনো উচ্চবাচ্য না করে মেনে নেয়।
মিটিংয়ের পরে রয় একাকী পণ্ডিতজীকে জিজ্ঞেস করে "আমাকে আবার কেন টানলেন এখানে?"
পণ্ডিতজী: কারণ এই মুহূর্তে যদি কেউ দলের হাল ধরতে পারে সেটা তুমি, যদি কেউ দলের লোকেদের সুরক্ষা দিতে পারে সেটা তুমি, যদি কেউ আহমেদের প্রতিশোধ নিতে পারে সেটা তুমি।
রয়: আপনি নিশ্চিত যে আমি পারবো?
পণ্ডিতজী: শুধু আমি নয়, আহমেদ‌ও বিশ্বাস করতো যে ওর পরে তুমিই একমাত্র লোক যে ওর দলের দায়িত্ব সামলাতে পারবে।
এরপর কিছুদিন বাণিজ্যনগরীতে তাণ্ডব চললো, শুধু রক্ত ব‌ইলো, সমস্ত বিশ্বাসঘাতকদের এবং যেসব বিরোধীরা তার সামনে মাথা নোয়াচ্ছে না তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে দুবার ভাবছে না রয়, ফলে অবিলম্বেই বাণিজ্যনগরীর পুরো অন্ধকার জগতের নিয়ণ্ত্রন চলে আসে রয়ের হাতে, ধীরে ধীরে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজের বিশ্বস্ত লোকদের বসিয়ে সেখানেও ক্ষমতা বিস্তার করে, সবথেকে বড়ো বিষয় কখনো সাধারণ অসহায় নিরপরাধ লোকদের উপর অত্যাচার না করা  এবং সবসময় তাদের পাশে থাকার জন্য তাদের মনেও জায়গা করে নেয়, ফলস্বরূপ অচিরেই সম্পূর্ণ বাণিজ্যনগরী তার নিয়ণ্ত্রনে চলে আসে, কিন্তু কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় এবং তার ক্ষমতার জন্য পুলিশ‌ও তার গায়ে হাত দিতে পারে না, পুরো বিজনেসটাকে লিগ্যাল পদ্ধতিতে চালায়, যদিও পুরো দেশের মানুষ তাকে এখন অন্য নামে চেনে, যে পরিচয় টা সে নিজে তৈরী করেছে ,তাকে না চিনলেও তার এই নতুন নামটা সবাই জানে আর সেই নামটা হলো....

গুড মর্ণিং... কফি?
একটা মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে আবার অতীতের স্মৃতির সরণি থেকে বর্তমানে ফিরে আসে রয়, চোখ খুলে দেখে এর মধ্যে অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে বিদিশা ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রয়: বসো, কখন উঠলে?
"খানিকক্ষণ আগে, তুমি কি ভাবছিলে বলোতো?" কাপে কফি তৈরী করতে করতে প্রশ্নটা করে বিদিশা।
ভাবছিলাম যে কিভাবে জীবনটা কাটাবো ভেবেছিলাম আর কিভাবে কাটাচ্ছি।
বিদিশা কফির কাপ রয়ের দিকে এগিয়ে দেয়, রয় একটা চুমুক দিয়ে বলে: উমমম তুমিও ভালো কফি বানাও, তারপর এবার কি করবে?
মানে?
তুমি চাইলে এখনই নিজের পড়াশোনা স্টার্ট করতে পারো, আমি ব্যবস্থা করে দেবো।
আমাকে তাড়াতে চাইছো? আমাকে এখন আর দরকার নেই?
একদম নয়, আমার দেওয়া কথা রাখতে চাইছি।
আগে বীরেন ভট্টাচার্য শেষ হোক তারপর যাবো।
তুমি এখন ওই বাড়িতে সাবধানে থাকবে, বীরেন ভট্টাচার্য এখন সবাইকে সন্দেহ করবে।
কিন্তু তুমি এখন কি করবে তার প্ল্যান করেছো?
তুমি প্ল্যান করেছো মনে হচ্ছে?
এখন ওর লিগ্যাল বিজনেসগুলোকে শেষ করতে হবে যদিও সেগুলো আদতেই লিগ্যাল নয়।
যেমন?
কন্সট্রাকশনের বিজনেস গুলো, সেগুলোর কন্ট্রাক্ট ও ছাড়া কেউ পায় না, ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে সেগুলো নেয়, বড়ো বড়ো অ্যপার্টমেন্ট, হোটেল, ওভার ব্রিজ, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, হাউজিং কমপ্লেক্স ইত্যাদির কন্ট্রাক্ট পাওয়াটা যদি বন্ধ হয় তাহলে....
আর পাবে না।
তুমি এত শিওর হচ্ছো কিভাবে? কি করবে তুমি?
দেখতেই পারবে তবে যা বললাম সেটা মাথায় রেখো ও আর কন্ট্রাক্ট পাবে না।
বেশি দিন বাকি নেই কন্ট্রাক্ট কে পাবে সেই নাম ঘোষণা হ‌ওয়ার এর মধ্যেই ব্যবস্থা করতে পারবে?
জাস্ট ওয়েট এণ্ড ওয়াচ।

রাতে ডিনারের পরে ফ্রেশ হয়ে টিভিটা চালিয়েছিলেন শিউলী দেবী, ছেলের অ্যাডমিশন হয়ে গেছে সে হস্টেলে থাকে, এখানে তাই তিনি একা, সামনে টিভি চললেও তার টিভির দিকে মন নেই তিনি রয়ের কথা ভাবছেন সেই রাতের পরে রয় আর আসে না তবে যখন যা দরকার পাঠিয়ে দেয় বোধহয় অপরাধবোধে ভুগছে, কিন্তু তার মনে কোনো অনুশোচনা নেই ভাবছেন পরদিন সকালে একবার রয়কে ফোন করে কথা বলবেন, কিন্তু তার আর দরকার হলো না তখনই দরজার কলিংবেল বাজলো এবং দরজা খুলেই দেখলেন রয় দাঁড়িয়ে আছে হাত একটা বড়ো ব্যাগ।
বাব্বা এতদিনে আসার সময় হলো?
একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঘরে ঢুকে উত্তর দিল রয়।
বসো, আমি তো ভাবলাম সেই রাতের জন্য গিল্‌টি ফিল করছো তাই আসছো না।
আমার এখন কোনো কিছু ফিল হয় না।
মানে?
যণ্ত্রের কি কিছু ফিল হয়? হয়না আমি এখন একটা যণ্ত্রে পরিণত হয়েছি যার কোনো কিছু ফিল করার ক্ষমতা নেই।
মাঝে মাঝে তোমার কথা আমি বুঝতে পারি না।
আমার কথা ছাড়ো এটা ধরো। বলে ব্যাগটা শিউলী দেবীকে দিল রয়।
এতে কি আছে?
খুলেই দেখো।
ব্যাগ খুলেই গম্ভীর হয়ে গেলেন শিউলী দেবী, বললেন: এগুলো?
তোমার আর তোমার ছেলের জন্য।
বিদিশা দেবী কিছু না বুঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলেন।
রয় একটু কাষ্ঠ হেসে বললো: খবরে শোনোনি? শহরের কবরস্থানে কবর ফুঁড়ে প্রেতাত্মা উঠে এসেছে?
এবার শিউলী দেবী আরও অবাক হলেন, তখন রয় তাকে খুলে বললো ব্যাপারটা: ওই কবরগুলোতে বীরেন ভট্টাচার্যের কালো টাকা লুকোনো ছিল।
এবার শিউলী দেবীর ঠোঁটে হাসি দেখা গেল।
রয় বললো: এটা তোমার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য।
কিন্তু এ তো পাপের টাকা।
টাকার পাপ-পূণ্য হয় না, আর তাও যদি তোমার মনে খচখচানি থাকে তাহলে বলি যত টাকা পাওয়া গেছে তার অর্ধেকটা কিছু অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, কলেজে দিয়েছি, এবার আশা করি পাপ-পূণ্য নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না?
শিউলী দেবী কোনো মতো চোখের জলয়আটকে বললেন: থ্যাংক‌ ইউ।
তোমাকে তোমার ছেলের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি, এবার থেকে তুমি ওখানেই থাকবে, বীরেন ভট্টাচার্যের আয়ত্ত্বের বাইরে, চিরদিনের জন্য।
এবারে শিউলী দেবীর চোখের জল আটকালো না, অনেকক্ষণ পরে তিনি বললেন: যাওয়ার আগে তোমাকেও কিছু দিতে চাই।
রয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি?
শিউলী দেবী উঠে গিয়ে ভিতর ঘর থেকে একটা পেনড্রাইভ এনে রয়কে দিলেন।
"এতে কি আছে?" জিজ্ঞেস করলো রয়।
ভিডিও আছে।
কিসের ভিডিও?
বীরেন ভট্টাচার্যের কুকীর্তির প্রমাণ। শিউলী দেবী বলতে থাকেন: অনেকদিন আগে বীরেন ভট্টাচার্য এক জমি দখল নিয়ে একজনকে খুন করেন, সেটা তার‌ই দলের একজন লুকোনো ক্যামেরায় রেকর্ড করে নেয়, ইচ্ছা ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করবে, সেটা করতে গিয়ে সেও বীরেন ভট্টাচার্যের হাতে খুন হয় কিন্তু মরার আগে সে তার এক বন্ধুর কাছে ভিডিওটা দিয়ে আসে, সেই ছেলেটা আমার পরিচিত ছিল তাই ওর থেকে ভিডিওটার একটা কপি করে আমার কাছে রেখে দি‌ই।
কিন্তু তাহলে তোমরা ভিডিওটা ছড়িয়ে দিলে না কেন?
সাহস ছিল না, জানতাম যে কোনো উপায়ে বীরেন ভট্টাচার্য নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে আর তারপর আমাদের শেষ করবে, আমি ওকে এটা দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছিলাম বলেছিলাম যে ও যদি আমাকে আর আমার ছেলের দায়িত্ব না নেয় তাহলে এই ভিডিও ছড়িয়ে দেবো।
কিন্তু তাতে তো ও তোমাদের‌ও খুন করতে চাইবে।
চেয়েছিল তো কিন্তু আমি আরো বলেছিলাম যে এই ভিডিওর আরও কপি আছে, আমাদের কিছু হলে অন্যরা ছড়িয়ে দেবে।
বুঝেছি।
এখন তুমি এর ব্যবহার করতে পারবে, আমার আর দরকার নেই।
ধন্যবাদ।
পরদিন রয়ের লোক শিউলী দেবীকে নিয়ে চলে গেল, নিজের রুমে পেনড্রাইভের ভিডিওটা দেখে রয় আশ্বস্ত হয় যে  শিউলী দেবী এক বর্ণ মিথ্যা বলেননি, সে ঠিক করে এই ভিডিওটা সঠিক সময়ে প্রকাশ করবে।


বিদ্র: গত আপডেটে আমি বলেছিলাম যে পাঠকদের ভিউ বাড়লেও রেটিং তেমন বাড়ছে না, তাই গল্পটা বন্ধ করার কথা মাথায় ঘুরছে, তখন বেশ কয়েকজন পাঠক বন্ধু বললো যে তাদের ভালো লাগছে এবং আমি যেন চালিয়ে যাই।
আজ নবম পর্ব দিলাম, যদিও আমার এই গল্পে সেক্স খুব কম এবং এই আপডেটে একেবারেই নেই তবুও আশা করবো গল্পটা ভালো লাগবে সবার, যদি ভালো লাগে তবে লাইক এবং রেপু দেবেন, এটুকু পেলে আরো লেখার উৎসাহ পাবো, আর যদি কারো ভালো না লাগে তাহলেও কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Monen2000 - 23-09-2022, 10:06 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)