07-09-2022, 09:50 PM
সকালে মৌমিতা একটা ছোট ব্যাগ গুছিয়ে শ্বশুর শাশুড়ি কে বলে বের হয়, জানায় কদিন বাপের বাড়ি ঘুরে আসবে। সিয়ালদাহ স্টেশন এ পৌঁছে মুন্না কে ফোন করে কিন্তু খেয়াল করে যে ফোন টা অন্য ফোনে মুভ করা আছে। ওপার থেকে একজন বলে ৮ নাম্বার প্লাটফর্মের শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াতে। ও সেই মতো ৮ নাম্বার প্ল্যাটফর্ম এর শেষের চায়ের স্টলের সামনে এসে দাঁড়ায়। কয়েক মিনিট পরে একটা সাধু এসে জায়গাটায় দাঁড়ায়, হাতে একটা ছোট ঘটি আর ঝুলি কাঁধে। সাধু টা ওকে জিজ্ঞেস করে কোথা যাবে। মৌমিতা দায়সারা একটা উত্তর দিয়ে বলে- দার্জিলিং। সাধু টা বলে ওর কাছে একটা এক্স্ট্রা টিকিট আছে রিজার্ভেশন করা। অবাক হয়ে তাকায়, সাধুটার চোখ কেমন যেন চেনা মনে হয়। সাধু ওর দিকে টিকিট টা বাড়িয়ে দেয়, হাতে নিয়ে অবাক, ওর নামের টিকিট। টিকিট পড়া শেষ করতে তাকাতেই দেখে সাধু উধাও। অদ্ভুত লাগে।
...।।সমাপ্ত।। ...
নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম এ ঢুকলে ও উঠে নিজের সীটে এসে বসে, লোয়ার সিট। ব্যাগ টা জানলার পাসে রেখে সাত পাঁচ ভাবতে থাকে। মুন্নার নাম্বারে ফোন করে কিন্তু কোন উত্তর পায়না। যথারীতি ট্রেন ছাড়ে। অজানা গন্তব্যের পথে বেড়িয়ে পরে মৌ। দেখা যাক, এডভেঞ্চার করলে মন্দ কি। কাছে এ টি এম কার্ড আছে, তাতে টাকাও যথেষ্ট।
বার বার ভাবতে থাকে কে ওর টিকিট কাটল, কেনই বা কাটল। কিছুক্ষণ পরে সেই চিন্তা তাও তামাদি হয়ে যায়। গাড়ি ছুটে চলে আপন খেয়ালে। সারা রাস্তা কোন ভাবেই মুন্নার নাম্বারে যোগাযোগ করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়।
উত্তেজনা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে রাত্রি ১১ টায় নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে নামে। হালকা ঠাণ্ডা আবহাওয়া। ওভার ব্রিজের কাছে এসে ঘাড় ঘুড়িয়ে কাউকে না দেখে আস্তে আস্তে অভার ব্রিজে উঠে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এর দিকে হাঁটতে থাকে, একটা দুশ্চিন্তা, এত রাত্রে একা মহিলা। নেমে এগিয়ে যেতেই সেই সাধু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে, তাকাতেই সাধু ওকে ইসারা করে ওর পিছনে আস্তে বলে, কোন উপায় না দেখে ও তাই করে, হাঁটার ভঙ্গীটাও ওর চেনা লাগে। একটা জিপের সামনে এসে দরজা খুলে ওকে উঠতে বলে একজন, ও অবাক হয়ে যায়। মুন্না দরজা খুলে দাঁড়িয়ে, মুখে হাসি।
ও পিছনের সীটে উঠে আস্তেই সাধু টাও ওর পাসে এসে বসে। গাড়ি স্টার্ট করে, ড্রাইভারের পাসে মুন্না। গাড়ি শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে যেদিক ছুটে চলে সেটা তিস্তার দিকে সেটা আন্দাজ করে মৌ। হটাত ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে ওঠে।
- একি? তুমি?
হাহা করে হেসে ওঠে মুন্না। ওর পাসে গেরুয়া পরিহিত সন্ন্যাসী, বাবলা।
বাবলা জানায়, কালিম্পং এ একটা হোটেল নিয়েছে সে। সেখানেই থাকবে ওরা। মুন্নার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায় মৌ, জোর হাতে প্রনাম করে কান মলে জানায়, ‘আমি হলাম আপনার লক্ষন দেওর’।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু...
আচমকা...... সজরে ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়িটা পাসের দিকে কাত হয়ে প্রচণ্ড শব্দ তুলে বাকের মুখে তিস্তার খালে ঝাপিয়ে পরে।
পরদিন উত্তর বঙ্গ সংবাদে একটা ছোট খবর হয়ে যায় ওরা তিন জন।