Thread Rating:
  • 168 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
ত্রয়োদশ অধ্যায় 



একটু আগে একটা ট্রেন চলে গেল।প্লাট ফর্ম প্রায় ফাকা। টিকিট কেটে প্লাট ফরমে ঢুকে  দেখল একটা বেঞ্চে হাফ হাতা সোয়েটার গায়ে মধ্য বয়সী এক ভদ্রলোক বসে আছে একা।পায়ে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল।এক্টু দূরত্ব বাচিয়ে বেঞ্চে বসল।ভদ্রলোক আড়চোখে তাকে একাবার দেখলেন।কোলের উপর বেড কভারের প্যাকেট সুখরঞ্জন ভাবে ভদ্রলোককে ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা।ভদ্রলোক এমন উদাসভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে ভরসা হচ্ছে না।
ভাইসাব আপনের কাছে ম্যাচিস আছে?
সুখরঞ্জন তাকিয়ে দেখল ভদ্রলোক তাকেই বলছেন।
 আমি সিগারেট খাই না।
 ভেরি গুড।টোবাকো ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু দি হেলথ।
 জ্ঞানপাপী।সব জানে তবু খাওয়া চাই।
 আপনি ভাবছেন জেনে শুনে আমি খাই কেন?
সুখ রঞ্জন চমকে উঠল সেতো একথা বলেনি।লোকটির প্রতি কৌতূহল বাড়ে।
 অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়তে পারিনি।
বড্ড বেশি বকে ভদ্রলোক।কে তোমার কাছে ইতিহাস শুনতে চাইছে।
 আপনি ভাবছেন আমি বেশী কথা বলি।
বিস্ময়ের সীমা থাকে না ।ভদ্রলোক বলতে থাকেন,সবাই এরকম বলে।আসলে কি জানেন কথা বলি নিজের স্বার্থে।যত কথা বলি তত নিজেকে হালকা মনে হয়।তা ভাই যাবেন কই?
 সুখরঞ্জন উৎসাহিত হয়ে বলল,বৈদ্যবাটি।
ভদ্রলোক ভ্রু কুচকে তাকে দেখে বলল,ব্যাণ্ডেল লোকাল ধরে তারপর বৈদ্যবাটি।যাক একজন সঙ্গী পাওয়া গেল।আপনি তো আমার সহযাত্রী।
 আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ আমাকে তুমি বলতে পারেন।
 বৈদ্যবাটি কার বাসায় যাবে?
সুখরঞ্জন পকেট থেকে কার্ড বের করে দেখাতে ভদ্রলোক বললেন, চাপদানী স্পন্দন?চল তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
আপনার ওখানে নেমন্তন্ন আছে?
 না আমি চাপদানীতে থাকি নেমন্তন্ন নেই।শকিবুল ইমাম আমার নাম বললে ওরা চিনবে।
 আমার নাম সুখদারঞ্জন বসু। 
 কোনো চিন্তা কোরোনা একেবারে জায়গামত পৌছে দেব।এক্টু বোসো এইটা ধরিয়ে আনি।
ইমামসাহেব উঠে চলে গেলেন।ভদ্রলোক . অথচ এতক্ষন কথা বলে বুঝতেই পারি নি।কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার। তাহলে মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ হানাহানি কেন।দুটি মেয়ে সম্ভবত কলেজ পড়ুয়া পাশে এসে বসল।বেঞ্চে চারজন বসা যায়,গায়ে গা লেগে যায়।ইমাম সাহেবের বসার জায়গা নেই বিরক্ত হয় সুখদা।
যাইরে বাড়ী যাই সন্ধ্যে হয়ে এল।
আরেকটু বোস না।কাছেই তো বাড়ি।
 ওদের কথা কানে যেতে বুঝতে পারে এরা ট্রেনের প্যাসেঞ্জার নয়।আড্ডা দিতে এসেছে।ইমামসাহেব সাহেব আসছেন।সুখ উঠে এগিয়ে যাবে কিনা ভাবছে।একটি মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আসিরে কাল কলেজে দেখা হবে।ইমামসাহেব এসে বসতে অন্য মেয়েটি উঠে ওদিকে চলে গেল।ইমাম সাহেব সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন,এবার আমাদের উঠতে হবে।গাড়ী দিয়েছে তিন নম্বরে।
প্লাট ফর্ম এক আজিব জায়গা।কতরকম মানুষ আসে প্লাট ফরমে।কেউ আসে ট্রেন ধরতে কোথাও যাবার জন্য কেউ আসে বসে গল্প গুজব করতে রাতে অন্য চেহারা।এইসব বেঞ্চগুলো তখন ভবঘুরেদের দখলে।কেউ ট্রেন ধরতে না পেরে বেঞ্চে শুয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।
চলো তিন নম্বরে।
ইমাম সাহেবের সঙ্গে চলতে শুরু করি।ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালই হয়েছে।দু নম্বর তিন নম্বর জানা ছিল না।তিন নম্বরে একটা ফাকা গাড়ী দাঁড়িয়ে ছিল।ইমাম সাহেবের কথা মতো উঠে জানলার ধারে দুজনে সামনা সামনি বসলাম।মানুষ উঠছে কেঊ উঠে একটা রুমাল রেখে আবার নেমে গেল।
তুমি কোথা থেকে আসছো?
 বনগাঁ গোপাল নগর থেকে বাসে এলাম।
 বাসে কেন?
 আমি এখানকার কিছুই চিনি না।আমার এক বন্ধু বলল, বাসে গেলেই সুবিধে।
 তুমি এখান থেকে ট্রেনে রাণাঘাট গিয়ে ওখান থেকে বনগাঁর ট্রেন ধরে গেলে কমসে কম আধ ঘণ্টার সাশ্রয় হবে।আজই তো ফিরবে?
 হ্যা বাড়ীতে মা একা আছে।
 বেশী রাত কোরোনা তাহলে প্লাটফরমে রাত কাটাতে হবে।
মৃদু হাসলাম।ভদ্রলোক বেশ কথা বলেন।
 বিয়ে বাড়িতে খাওয়ার একটা মজা আছে।বিনি পয়সায় দামী দামী খাবার প্রতিদিনের এক ঘেয়েমী থেকে একটু আলাদা আর কি।
দুড়দাড় করে লোক ওঠা শুরু হতেই ইমামসাহেব বললেন,এবার ছাড়বে।
ঠিক ট্রেন ছেড়ে দিল।দূরত্ব বেশী নয় দুটো স্টেশন পর ব্যণ্ডেল জংশন।ট্রেন থেকে নেমেই দেখলাম একটা ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে করছে।ইমাসাহেবের সঙ্গে ছুটে সেই ট্রেনে চেপে বসলাম।
ইমামসাহেব সঙ্গী না হলে খুব মুশকিলে পড়তাম।বৈদ্যবাটি নেমে মনে হল আলোয়ানটা নিয়ে এলেই ভালো করতাম।জাকিয়ে শীত পড়েছে।
 এবার কি বাসে উঠতে হবে?
 না না হাটাপথ দশ মিনিট,চলো দেখিয়ে দেবো।
দুজনে হাটতে শুরু করি কিছুক্ষন পর দূরে একটা আলো ঝলমল বাড়ি দেখিয়ে বললেন,ঐ হচ্ছে স্পন্দন।
 যাবেন না?
 এখন কটা বাজে।
 দশটা বাজতে মিনিট পনেরো হবে।ঘড়ি দেখে বললেন।
আমার অন্য পথ।ইমাম সাহেবকে পিছনে রেখে দ্রুত পা চালাই।গিয়েই খেতে বসে যেতে হবে।মাসী ছাড়া কাউকে চিনি না।মাসীকেই বা পাবো কোথায়?এরক দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে এগোতে থাকি। 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 30-08-2022, 05:12 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)