28-08-2022, 06:51 PM
(28-08-2022, 04:26 PM)Monen2000 Wrote:চতুর্থ পর্ব
"কিচ্ছু হবে না আপনাদের দ্বারা, সবকটা অকর্মার ঢেঁকি" হাতের পেপারটা সজোরে টেবিলে ফেলে বললেন বীরেন ভট্টাচার্য, সামনে ধীরেন ভট্টাচার্য ও পুলিশের বড়কর্তা চুপ করে মাথা নিচু করে রইলেন।
বীরেন ভট্টাচার্য আবার চিৎকার করে উঠলেন "সেদিন ছজন আর কাল রাতে চারজনকে কারা মেরে ফেললো? কি করছে আপনার পুলিশ ফোর্স?
"আমরা পুরো দমে খোঁজ চালাচ্ছি" তোতলাতে তোতলাতে কোনোমতে উত্তর দিলেন পুলিশের বড়োকর্তা।
কি খোঁজ করছেন? খোঁজ করে কি পেলেন?
স্যার, আমাদের স্পাই একটা খবর দিয়েছে
খবর? কি খবর?
আপনার মিস্টার সরকার কে মনে আছে?
কোন মিস্টার সরকার? দাদার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি? বললেন ধীরেন বাবু।
"হ্যাঁ, স্যার তিনিই" বললেন পুলিশের বড়কর্তা একটা ঢোঁক গিলে আবার বললেন "ওনার উপর আমরা নজর রেখেছি, খবর পেয়েছি তার বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে রাতের দিকে কিছু লোকজনের যাতায়াত চলছে, গত পরশুও লোকগুলো এসেছিল।
"ওর কথা তো আমার মনেই আসেনি" চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন বীরেন ভট্টাচার্য, তারপর আবার বললেন "ঠিক আছে আপনি আসুন"
পুলিশের বড়কর্তা চলে গেলেন।
এতক্ষণে ধীরেন বাবু মুখ খুললেন "চিন্তা কোরো না দাদা ,ওই সরকারকে আজকেই.."
না, একদম না একটু অপেক্ষা করো ধীরেন এবার ওই সরকারকে এমন শিক্ষা দেবো যে ভবিষ্যতে ও আর আমার সাথে লাগতে আসবে না।
আচ্ছা দাদা এই চারজনেই তো তোমার ওই..
হ্যাঁ, ওকে আনছিল ওর সাথে নাকি একটা লোক দেখা করেছে, রেস্টুরেন্টে বসে কফি খেতে খেতে কথা বলছিল।
কে সে জানতে পেরেছো?
"সেটা জানার জন্যই তো নিয়ে আনছিলাম, কিন্তু এখন পাখি পালিয়েছে" তারপর কিছুটা স্বগোতোক্তির মতো বললেন "ভুলটা আমারই মাগীকে এতদিন বাঁচিয়ে রাখাই উচিত হয়নি"
সেটা ঠিক দাদা।
কিন্তু এবার একবার হাতে পেলে আর ভুল হবে না, পুরো শহরে নিজের লোক ছড়িয়ে দাও ধীরেন ওর খোঁজ করো
অলরেডি করে দিয়েছি দাদা।
"তোমার কি মনে হয় ওই শিউলী দেবী কোনো সাহায্য করতে পারবেন?" ড্রাইভারের সিটে বসা আমির তার পাশে বসা রয়কে প্রশ্নটা করলো।
পারবে, অবশ্য যদি ওনার বিশ্বাস জিততে পারি তবেই
কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্যের সব খবরই তো আমরা পাচ্ছি তাহলে ওনাকে কেন দরকার?
একটা দরকার তো তুমিও জানো, নাম রোহিত।
ওকে নিয়ে তোমার কোনো প্ল্যান আছে মনে হচ্ছে।
আছে, তবে সেটা এখন নয়, আর সেটা নিতান্ত দরকার পরলেই ব্যবহার করবো নচেৎ নয়।
কিন্তু আর কিছু?
তোমার লোকজন বীরেন ভট্টাচার্যের বাইরের সব খবর জোগাড় করছে কিন্তু কিছু কিছু খবর সবসময়ই থাকে যেটা এতটাই গভীরে থাকে যে আত্মীয়-পরিজন ছাড়া কেউ জানেনা, আর তাদের মধ্যে কেউ যদি রক্ষিতা হন তাহলে তো কথাই নেই।
কিন্তু শিউলী দেবী এখন ভট্টাচার্য পরিবারের বাইরে তাহলে?
কিন্তু উনি ভট্টাচার্য পরিবারের ভিতরের সবাইকে চেনেন, সবার নারী নক্ষত্র জানেন, তিনি যদি মুখ খোলেন তাহলে তার খবর আমাদের লোকেদের খবরের থেকে আরো পোক্ত হবে, কিন্তু একটা জিনিস কিছুতেই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
কি সেটা?
বীরেন ভট্টাচার্যের মতো লোক এতদিন ওনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন?
শিউলী দেবীকে জিজ্ঞেস করেছিলে? কি বললেন?
উনি যা বললেন সেটা সত্যি হতে পারে কিন্তু পুরো সত্যি নয়, কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছেন উনি।
কি হতে পারে
খুব সম্ভবত উনি এমন কিছু জানেন যেটা বীরেন ভট্টাচার্য জানে না অথচ জানতে চায়, আর সেটাই শিউলী দেবীকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছে।
কিন্তু কথাটা বীরেন ভট্টাচার্য জেনে গেলে..
ওর কাছে শিউলী দেবীকে বাঁচিয়ে রাখার দরকার পরবে না।
উনি কি তোমাকে বলবেন?
বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বলতেও পারেন, তবে না বললেও ওনাকে দেওয়া কথা আমি রাখবো ওনাকে আর ওনার ছেলেকে প্রোটেক্ট করবো।
আমির আর কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাতে থাকে, একবার পাশে তাকিয়ে দেখে রয় জানালা দিয়ে গাড়ির বাইরে দেখছে, এই ছেলেটাকে মাঝে মাঝে বড়ো অদ্ভুত লাগে আমিরের বয়সে আমির ১-২ বছরের বড়ো হয়তো কিন্তু ক্ষমতায়, প্রতিপত্তিতে সে এই রয়ের ধারেকাছেও আসে না অথচ এই দূরত্ব কে রয়ই ঘুচিয়ে দিয়েছে শুধু আমির নয় ওর মতো বহু লোক আছে যাদের এই ছেলেটা নির্দিধায় কাছে টেনে নিয়েছে কোনো স্বার্থ ছাড়াই এ তার নিজের চোখে দেখা আজ থেকে তো দেখছে না তাকে সেই কবে থেকে চেনে, আজও প্রথম পরিচয়ের দিনটার কথা মনে পরলে লজ্জায় এতটুকু হয়ে যায় আমির।
কিছু বছর আগে....
দেশের একটা শহর যার রাতের অন্ধকার আরো ভয়ানক কালো আর সেই কালো অন্ধকারে বাস করে অজস্র অন্ধকারের বাসিন্দা তাদের কারো কারো কাজকর্ম কালো আবার কারো ভাগ্যটাও কালো।
এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক ছিল আমির, এক বস্তি সংলগ্ন এলাকায় থাকতো আমিরের ঘরে সে এবং তার অসুস্থ আম্মি, পড়াশোনা বেশীদূর হয়নি ফলে অনেক চেষ্টা করেও কোনো ভালো চাকরি জোগাড় করতে পারেনি তখন বাধ্য হয়ে নাম লেখায় অপরাধ জগতে, কখনো রাজনৈতিক নেতাদের হয়ে আবার কখনো কোনো বড়লোক ব্যাবসায়ীর হয়ে কাজ করতো, আমিরের সাথেই থাকতো সেই বস্তির আরো কিছু ছেলে, তাদের নিয়ে একটা দল গড়েছিল আমির সেই দল নিয়েই কাজ করতো, কিন্তু তারা জানতো না যে দরকার ফুরিয়ে গেলে এইসব বড়োলোকেরা আমিরদের মতো লোকদের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দু-বার ভাবে না, ঠিক যেমন আমিরকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল দরকার ফুরোনোর পরে, তখন তার আম্মির ভীষণ অসুখ কিন্তু চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে যেটা আমিরের ছিল না এতদিন যাদের হয়ে কাজ করেছে যাদের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছে তারা আর তাকে চিনলোই না। শেষে আমির আর ওর দলের কয়েকজন ঠিক করলো শহরের রাতের দিকে একা চলাফেরা করে এমন লোকদের লুঠ করবে, রাতের দিকে অনেক বড়োলোক মহিলা আর পুরুষেরাই নাইট ক্লাব থেকে পার্টি করে বাড়ি ফেরে আর বেশিরভাগই মাতাল অবস্থায় থাকে সুতরাং সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পরে কাজ হাসিল করতে খুব একটা কষ্ট হবে না অনেক সময় এইসব লোক বা মহিলাদের কাছে টাকা ছাড়াও বিভিন্ন দামী জিনিস থাকে যেগুলো চোর বাজারে বিক্রি করে কিছু এক্সট্রা টাকা হাতে আসে।
সেইমতো সব ঠিক করে এক রাতে এক নাইট ক্লাবের বাইরে ওঁত পেতে ছিল আমিররা, একটু রাতের দিকে লক্ষ্য করলো একটা ইয়ং ছেলে নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে পার্কিং এরিয়ার দিকে যাচ্ছে, আমিররা নিঃশব্দে পিছু নিল কিন্তু পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে আর দেখতে পেলো না, আমিররা এদিক ওদিক দেখতে লাগলো একজন বললো "ভাইজান মালটা পালিয়েছে মনে হচ্ছে?"
"তোমাদের আমার পিছনে কে লাগিয়েছে?" অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটা শুনে আমির ও বাকীরা চমকে উঠলো তারপর একটু এদিক সেদিক তাকাতেই দেখতে পেলো একটু দূরে অন্ধকারে একটা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে, মূর্তিটা একটু এগিয়ে আলোর গণ্ডির মধ্যে এলে ওরা দেখলো এটা সেই ছেলেটা যার পিছু নিয়েছিল ওরা, "কি হলো তোমাদের আমার পিছনে কে লাগিয়েছে?" প্রশ্নটা আবার করে ছেলেটা, উত্তর দেওয়ার বদলে আমিরের একজন সঙ্গী বললো "এর তো হেব্বি সাহস, যাইহোক আমাদের কাজ হয়ে যাবে"। আমিরের দলের সবাই এগিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, আর আমির ছেলেটার সামনে এসে একটা কাট্টা নামক বন্দুক উঁচিয়ে ধরে বলে "আমাদের কেউ পাঠায়নি, নিজেরাই এসেছি"
ছেলেটা: কেন?
আমির: মাল্লু কামাতে, এখন পকেট খালি কর তাড়াতাড়ি পকেটে যা মালকড়ি আছে সব দিয়ে দে।
আর না দিলে? বেপরোয়া উত্তর দেয় ছেলেটা। ছেলেটার পিছন থেকে একজন একটু হেসে উত্তর দেয় "না দিলে ভাইজানের কাট্টা তোর ভেজা উড়িয়ে দেবে"।
ছেলেটার মধ্যে ভয়ের কোনো লক্ষণ দেখা গেল না সে বললো "তোমরা জানো তোমরা এই মুহূর্তে কার সামনে দাঁড়িয়ে আছো?"
আমির: বেশি জানার দরকার নেই কি বললাম কানে গেল না? তাড়াতাড়ি ক্যাশ ছাড়।
হটাৎ বিদ্যুৎগতিতে ছেলেটা আমিরের হাতে ধরা কাট্টার নলের মুখ থেকে পাশে সরে যায়, তারপর কেউ কিছু বোঝার আগেই অদ্ভুত উপায়ে আমিরের হাতটা ধরে মুড়িয়ে পিছনে নিয়ে যায় নিজেও আমিরের পিছনে যায় আমির হাতের ব্যাথায় আঃ করে ওঠে, অতর্কিত আক্রমণে প্রথমটা হতচকিত হয়ে গেলেও আমিরের দলের সঙ্গীরা তাদের দলপতির গতি দেখে তারা ছেলেটাকে আক্রমণ করে কিন্তু ছেলেটা প্রথমে একটা ধাক্কায় আমিরকে একসাইডে ঠেলে ফেলে তারপর বাকীদের উপর চড়াও হয়, আমিরের দলের ছেলেগুলোর প্রতিটা আঘাত থেকে অদ্ভুত ভাবে নিজেকে কাটিয়ে নিচ্ছিল এবং তারপরই এত দ্রুত গতিতে পাল্টা আঘাত করছিল যে ওরা সামলাতে পারছিল না খুব শীঘ্রই ওরা প্রত্যেকে কেউ কিক কেউ পাঞ্চ খেয়ে এখানে সেখানে ছিটকে পরে আর্তনাদ করতে থাকলো,কিন্তু ছেলেটার গায়ে একটা আঁচড়ও লাগেনি।
এবার ছেলেটা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো "আমার পিছনে কেন?"
কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে আবার বললো "উত্তর দাও নাহলে তোমাদের সবকটাকে পুলিশ ডেকে এনকাউন্টার করিয়ে দেবো"।
এবার আমির আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো "আমার টাকার দরকার ছিল, আমার আম্মির খুব শরীর খারাপ, চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার, কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও জোগাড় করতে পারিনি তাই"
তুমি কোথায় থাকো?
বস্তিতে
ঠিক আছে চলো, আমিও যাবো যদি দেখি মিথ্যা বলছো তাহলে ওখানেই পুঁতে রেখে আসবো।
বস্তির সবার ঘরেই অভাব সবারই ঘরে কোনো না কোনো সমস্যা, আমিররা যখন বস্তিতে ফিরে এলো তখন রাত অনেক, আমির ছেলেটাকে নিজের ছোট্ট ঘরে নিয়ে গেল তারপর নিজের আম্মিকে দেখিয়ে বললো "এই আমার আম্মি যার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার কিন্তু..."
ছেলেটা বাইরে বেরিয়ে এল তার পিছন পিছন আমিরও বেরিয়ে এল তারপর ছেলেটার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে বললো "মাফ করে দিন, পুলিশকে কিছু বলবেন না আমার আম্মির আমি ছাড়া আর কেউ নেই, আর আমার জন্যই আমার বন্ধুরা গিয়েছিল, আমার জন্য ওরা বিপদে পরুক এটা আমি চাই না"
আমির ভেবেছিল যে ছেলেটা হয়তো তার অনুরোধ শুনবে না কিন্তু আমিরকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটা বললো "নিজের আম্মিকে নিয়ে আমার সাথে চলো, একা নিতে পারবে? নাহলে আরো কয়েকজনকে ডেকে নাও"
আমির অবাক হয়ে বললো: কোথায়?
হাসপাতালে।
আমিরের যেন নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না যে ছেলেটাকে খানিকক্ষণ আগে লুট করতে চাইছিল সেই এখন তার আম্মিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছে, ছেলেটা আবার বললো "কি হলো, কথা কানে যাচ্ছে না?"
সেইরাতেই আমিরের আম্মি হাসপাতালে ভর্তি হলো চিকিৎসা শুরু হলো যদিও খুব একটা লাভ হলো না, কিছুদিনের মধ্যেই আমিরের আম্মি মারা গিয়েছিল ছেলেটা চিকিৎসার ত্রুটি রাখেনি সব খরচ সে দিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হলো না, আম্মিকে গোর দেওয়ার পরে সবাই চলে গেলেও ছেলেটা গেলনা সে আমিরের কাঁধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকলো, এরপর আমিরকে একটা কাজও জোগাড় করে দিল, শুধু আমির নয় বস্তির অনেককেই অনেক সাহায্য করে।
প্রথমে ছেলেটির জোগাড় করে দেওয়া কাজ করলেও খুব তাড়াতাড়ি ছেলেটার ঘনিষ্ঠ অনুচর হয়ে ওঠে আমির, ধীরে ধীরে সেই ঘনিষ্টতা বন্ধুত্বে পরিবর্তিত হয়, স্যার ছেড়ে ধীরে ধীরে নাম ধরে ডাকতে থাকে, অদ্ভুত চরিত্র এই রয়-এর একাধারে শক্ত আবার অপরদিকে নরম, জুডো-ক্যারাটে-বক্সিং ছাড়াও মার্শাল আর্টের হ্যাণ্ড কমব্যাটের অনেক টেকনিক জানে শুধু জানে বলা ভুল একেবারে এক্সপার্ট, খালি হাতে একাধিক সশস্ত্রশত্রুকে ঘায়েল করতে বহুবার নিজের চোখে দেখেছে আমির, আর কিছুটা নমুনা তো প্রথম পরিচয়ের রাতে নিজের উপরেই পেয়েছিল, শহরের অন্ধকার জগতে অবাধে বিচরণ করে, অনেক বড়ো বড়ো নামের লোক তার হুকুম তামিল করার জন্য সবসময় তৈরি থাকে, আমির নিজেও রয়ের সব হুকুম বিনা প্রশ্নে তামিল করে, আর কেউ জানুক বা না জানুক কিন্তু আল্লাহ জানে যে আমির নেমকহারাম নয়,রয়ের জন্য নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিতেও কসুর করবে না আমির।
বর্তমান সময়
গাড়ি চালাতে চালাতে আমির কিছুক্ষণের জন্য কিছু বছর আগের সময়ে চলে গিয়েছিল এখন আবার বর্তমানে ফিরে আসে।
বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে কিসের শত্রুতা সেটা কোনোদিন বলেনি, আমির জানতেও চায়নি সে শুধু জানে রয়ের হেফাজত করতে হবে আর রয়ের সব হুকুম পালন করতে হবে, শুধু কি সেই রয়ের জন্য বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে? রয়ও কি তার জন্য বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েনি? পড়েছে তো বহুবার পড়েছে, তাদের সম্পর্ক টাকে মালিক চাকরের চোখে কোনোদিন দেখেনি বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে, প্রথম প্রথম আমির একটু সংকোচ বোধ করলে ধমকেছে, এরকম বন্ধুর জন্য জীবন বাজি রাখবে না তো কার জন্য রাখবে?
গাড়িটা একটা অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে ঢুকে গেল, পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি রেখে দুজনে লিফটে ঢুকে গেল।
একটা ফাঁকা গোডাউনের ভিতর থেকে একজনের আর্তনাদের শব্দ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে কিন্তু শোনার কেউ নেই ,শুধু যে গোডাউনটা ফাঁকা তাই নয় আশেপাশের অনেকটা অঞ্চল ফাঁকা নির্জন। গোডাউনের ভীতর থেকে যার আর্তনাদ আসছে তিনি আর কেউ নন বীরেন বাবুর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানো সমর সরকার, পুলিশের ইনফর্মেশন অনুযায়ী যার বাড়িতে রাতের দিকে বেশ কিছু লোকের যাতায়াত চলছে তাই বীরেন বাবু ওনাকে তুলে নিয়ে এসেছেন এবং মারধর করছেন, সমর বাবুর মুখ নাক থেকে রক্ত ঝড়ছে, শরীরের অনেক জায়গায় কালশিটে দাগ পরে গেছে, কিন্তু তাও মার থামছে না, সামনে চেয়ারে বসে উপভোগ করছেন স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য।
বীরেন ভট্টাচার্য এবার হাত তুলে থামতে বলায় প্রহার থামলো, সমর বাবু তখন গোঙাচ্ছেন নেতিয়ে পড়েছেন ওনার দুহাত দুদিকে টেনে বেঁধে রাখা হয়েছে মার থামতেই মাথাটা বুকের উপর ঝুঁকে পড়লো হটাৎ পিছন থেকে একজন সমর বাবুর চুল টেনে মাথাটা সোজা করে বীরেন বাবুর দিকে ধরলো,
বীরেন বাবু: কি সমর? তুমি তো জানো আমার বিরুদ্ধে যাবার পরিণাম কি হয় তারপরেও আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পেলে? আমার দশজন লোককে মেরে আমার মালকে তুলে নিয়ে গেলে?
বীরেন বাবু ইশারা করতে আরো কয়েকটা ডাণ্ডার আঘাত সমর বাবুর শরীরের উপর পরলো একটু পরে সমর সরকার কোনোমতে বললো : আ আ আপনাকে কতবার তো বললাম যে আ আ আমি আপনার কোনো লোককে মারিনি, আর আর মাল? কোন মাল?
বীরেন বাবু: তোমার বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে যে লোকজনের যাতায়াত চলছে তারা কারা?
সমর সরকার উত্তর দিচ্ছে না দেখে আবার মারার হুকুম হলো এবং আবার আর্তনাদ শুরু হলো এবারে বেশীক্ষণ সহ্য করতে পারলেন না অজ্ঞান হয়ে গেলেন সমর বাবু, বীরেন ভট্টাচার্য গোডাউনের বাইরে এসে পায়চারি করতে লাগলেন সাথে ধীরেন বাবুও ছিলেন তিনি বললেন: কি মনে হয় দাদা ওই সমর সরকার সত্যি বলছে?
বীরেন বাবু: কিন্তু ও যদি সত্যি বলে তাহলে কে হতে পারে? ওর উপর আরো কিছুক্ষণ দাওয়াই চলুক তারপর দেখা যাবে।
"শিউলী দেবী কোনো ইনফরমেশন দিলেন যা কাজে আসতে পারে? " প্রশ্নটা করে আমির
"এখনও পর্যন্ত না, বোধহয় এখনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না" উত্তর দেয় রয়
আমির: বলো কি ওনাকে বীরেন ভট্টাচার্যের কবল থেকে উদ্ধার করলে,নতুন জায়গায় সুরক্ষিত রাখলে ওনার ছেলের জন্য অন্য শহরে কলেজের বন্দোবস্ত করলে তার পরেও বিশ্বাস হচ্ছে না?
রয়: সেটা অস্বাভাবিক নয়, ওনার অবিশ্বাস থাকতেই পারে
উনি আদৌ সাহায্য করবেন তো?
দেখা যাক
"আর যদি না করেন তখন কি করবে?" আমির আবার প্রশ্ন করে
রয় উত্তর দেয় "আমরা যখন এখানে আসি তখন কি ওনার কথা জানতাম? জানতাম না তো? তাহলে? উনি যদি হেল্প করেন তাহলে সেটা উপরি হবে না করলে আমি আমার প্ল্যান মতোই চলবো"।
মহিলা কিন্তু তোমার উপর বেশ নজর দিচ্ছে খেয়াল করেছো?
তোমার হিংসে হচ্ছে?
কিকরে করো বলোতো?
কি?
এই যে এত সহজে মেয়ে বা মহিলাদের নিজের প্রতি আকর্ষণ করতে, আজ থেকে তো দেখছি না তোমাকে।
আমি কিছুই করিনা
তাহলে মেয়েরা তোমার প্রতি এত আকৃষ্ট কেন? এমনকি অনেক বিবাহিত বা ডিভোর্সি মহিলারাও, আর এখন এই শিউলী দেবীও।
বিশ্বাস করো আমি ওনাদের জোর করিনা
আমি জানি তুমি জোর করো না, ওরা নিজে থেকেই ধরা দেয়।
দুজনেই হাসতে শুরু করে। একটু পরে রয় বলে "কি ব্যাপার বলোতো আমার প্রতি আকৃষ্ট মহিলা বা মেয়েদের সম্পর্কে একটু বেশীই খোঁজখবর নিচ্ছো?"।
নোট করে রাখছি
কেন?
একদিন যখন ভাবিজান আসবেন আর আমাকে তোমার এক্সদের কথা জিজ্ঞেস করবেন তখন ডিটেইলস এ বলতে হবেনা?
আমির আবার হাসতে লাগলো তারপর বললো: এবার কিন্তু তোমার বিয়ে করা উচিত, নাহয় এখন মেয়ে ঠিক করে রাখো এই বীরেন ভট্টাচার্যের কেসটা সালটে দিয়েই বিয়ে করে নেবে, নাকি দেখা আছে?
রয়: তুমি যেটার কথা বলছো তার জন্য মন দরকার হিন্দিতে যাকে দিল বলে, আমার সেটা নেই
আমির: আর কেউ না জানুক কিন্তু আমি জানি তোমার মতো বড়ো মন খুব কম লোকরই থাকে, আমি নিজেই সাক্ষী।
রয় ঈষৎ গম্ভীর হয়ে যায় তারপর বলে: আমার বিয়ে হবে না, তার থেকে তুমি করে নাও, দেখা আছে কেউ নাকি দেখবো?।
এবার আমির যেন একটু লজ্জা পায় বলে: কি যে বলো তুমি। আমিরকে লজ্জা পেতে দেখে রয় হাসতে থাকে।
একটা রাস্তার উপরে গাড়ি চলাচলের ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল দুজনে রাতের আকাশ পরিষ্কার একটুও মেঘ নেই অজস্র তারা দেখা যাচ্ছে আর চাঁদ, রয় সেদিকে তাকিয়ে রইলো, একটু পরে আমির বললো "এখন কোথায় যাবে? বাড়ি?"
"এখনই কি, আরেকটু রাত হোক চলো আজ ক্লাব থেকে ঘুরে আসি অনেকদিন যাওয়া হয় না" বললো রয়। দুজনে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।
নাইট ক্লাবের ভিতরে উদ্দাম নাচানাচি চলছে সাথে মদ্যপান, ছেলে-মেয়ে কোনো বিভেদ নেই। রয় আর আমির ক্লাবের ভিতরে ঢুকে বার কাউন্টারে গিয়ে বসলো, রয় আর আমির কেউই অ্যালকোহল খায় না তাই দুজনেই সফট ড্রিংক নিল। দুজনে নৃত্যরত ছেলে মেয়েদের দেখতে লাগলো, আমির হটাৎ বললো: সব জায়গাতেই নাইট ক্লাবের পরিবেশ এক।
রয়: তো তুমি কি চাও জায়গা বদলে নাইট ক্লাবে পূজো হবে?
আমির: কিন্তু এই যারা নেশা করে নাচছে এদের মধ্যে অনেকেরই বয়স এখনো কাঁচা।
"আপনি এমন বলছেন যেন আপনি পেকে বুড়ো হয়ে গেছেন" এক তৃতীয় ব্যক্তি বলে উঠলো আর এই তৃতীয় ব্যাক্তি হলো বারটেণ্ডার ছেলেটা, আর এমনভাবে কথাটা বললো তাতে বোঝা যায় যে রয় আর আমিরকে বেশ ভালো করেই চেনে।
রয় তাকে জিজ্ঞেস করলো: কেমন আছো রাজেন?
রাজেন নামের বারটেণ্ডার ছেলেটা একটু হেসে বললো: আপনার দয়ায় ভালোই চলছে স্যার
রয়: আমার দয়া নয় মোটেই যাইহোক কোনো খবর আছে?
রাজেন নামের এই ছেলেটা আসলে রয়ের দলের লোক, নাইট ক্লাবে অনেক বড়ো ঘরের ছেলে মেয়ের আসে আবার অনেক বড়ো বড়ো লোকও আসে অনেকেই বারে বসে মদ খেতে খেতে গল্প করে এতে অনেক সময় গোপন কথা জানা যায়, সেই খবরগুলো প্রয়োজন মতো রয়কে সরবরাহ করে রাজেন।
আজ বললো: না স্যার, তবে একজন আছেন যার সাথে হয়তো আপনি আলাপ করতে চাইবেন।
আমির বললো: কে? কার কথা বলছো?
রাজেন তখন ইশারায় একটা মেয়েকে দেখিয়ে বললো: ওই দেখুন বৃষ্টি ভট্টাচার্য, বীরেন ভট্টাচার্যের মেয়ে।
রয় এবং আমির দুজনেই যেদিকে রাজেন ইশারা করলো সেদিকে তাকালো নীল রঙের ড্রেস পরে আর নীল হিল জুতো পরে একটা মেয়ে নাচছে, হিল জুতো পরেও অনায়াসে নেচে চলেছে বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটির অভ্যাস আছে মেয়েটা সুন্দরী বয়স রয়ের সমবয়সী, ফর্সা, ঠোঁটে ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে নীল লিপস্টিক, রয় বাইরে থাকলে বেশিরভাগ সময় চোখে গগলস্ পরে থাকে সে দিন হোক বা রাত, আজকেও নাইট ক্লাবে রয় গগলস্ পরেই আছে এবং গগলসের ভিতর থেকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বৃষ্টিকে দেখতে লাগলো, বৃষ্টির যদিও অন্য কোনো দিকে হুশ নেই সে একমনে নেচে চলেছে মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে ওরা বোধহয় ওর সাথেই এসেছে।
রয়কে ওভাবে তাকিয়ে দেখতে দেখে আমির বললো: কি ভাবছো বলোতো?
রয়: আপাতত কিছু না, শুধু অবজার্ভ করছি।
আমির: চলো, এবার ফিরি।
রয়: তুমি যাও আমি পরে যাচ্ছি।
আমির: কেন? ওকে এখন দেখবে?
হুমম
তুমি একা এখানে থাকবে? তাহলে আমিও থাকবো তোমার সাথে কিছু হলে.
দরকার নেই তুমি যাও, আর গাড়ি নিয়ে যাও আমি ক্যাব নিয়ে নেবো, আমার কিচ্ছু হবে না।
কিন্তু...
কোনো কিন্তু না, তুমি গিয়ে রেস্ট নাও যাও আর সাবধানে যেও।
তুমি শিওর
হাণ্ড্রেড পার্শেন্ট, যাও।
আমির উঠে ক্লাব থেকে বেরিয়ে যায়, রয় একই জায়গায় বসে বৃষ্টিকে অবজার্ভ করতে থাকে।
রাতের দিকে ছেলে ঘুমিয়ে পরার পরে একটু শাওয়ার নিচ্ছিলেন শিউলী দেবী, তার মনটা আজ কদিন থেকে খুব অস্থির, তার চোখের সামনে বারবার একটা দৃশ্য ভেসে আসছে, রয়ের দেহসৌষ্ঠবের দৃশ্য।
ছেলেটা এই কদিনে অনেক কিছু করেছে তার আর রোহিতের জন্য, তাদের বীরেন ভট্টাচার্যের কবল থেকে উদ্ধার করে এনেছে, এই বাড়িটায় থাকতে দিয়েছে খাবারদাবার আর অন্যান্য দরকারি জিনিস এনে দিচ্ছে বাড়ির আশেপাশে সুরক্ষার জন্য লোকও আছে যদিও শিউলী দেবী তাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু রয় বলেছে "এখানে আপনার বিপদ হবার চান্স কম কিন্তু তাও যদি হয় তখন আপনার সুরক্ষার জন্য যারা আছে তারা বেরিয়ে আসবে", আবার এখন রোহিতের জন্য অন্য শহরে একটা বোর্ডিং কলেজের ব্যবস্থা করেছে, প্রথমটায় শিউলী দেবী রাজী হননি কিন্তু পরে বুঝেছেন রোহিতকে এখান থেকে দূরে পাঠালেই ওর জন্য ভালো হবে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার রয় এসে দেখা করে গেছে ছেলেটা এত কিছু করেছে কিন্তু এখনো বিনিময়ে কিছু চায়নি সেই প্রথম আলাপের দিন বলেছিল যে ওর সাহায্যের দরকার কিন্তু তারপর আর ও নিয়ে কোনো কথা বলেনি। কদিন আগে দুপুরের দিকে এসেছিল রয় রোহিতের কলেজের অ্যাডমিশনের খবর দিতে চলে যাচ্ছিল কিন্তু শিউলী দেবী জোর করেন দুপুরে স্নান খাওয়া ওখানেই করতে অনেকবার বলার পরে রাজী হয়, স্নান শেষে কোমরে টাওয়েল জড়িয়ে খালি গায়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ভিতরের রুমে যাওয়ার সময় একঝলক দেখছিলেন শিউলী দেবী, দেখে চোখ আটকে যায় তার নিজেকে সামলাতে পারেননি একটু পরে রুমের সামনে গিয়ে দেখেন দরজা আটকানো নেই ভেজানো আছে ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে থাকেন রয়ের ড্রেস পরা, প্যান্ট পরা হয়ে গেলেও তখনও গায়ে কিছু পরেনি রয় পিছন থেকে রয়কে দেখতে থাকেন শিউলী দেবী ওইরকম চমৎকার দেহসৌষ্ঠব খুব বেশি দেখা যায় না শরীরে পালোয়ানের মতো ফোলানো পেশীর আধিক্য নেই কিন্তু যা আছে সেটাও অসাধারণ, ছেলেটার গায়ের রঙ একদম সাদা নয় কিন্তু ফর্সাই বলা চলে, ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু জল আছে, ঘাড়ের উপর ভেজা চুলগুলো ছড়ানো, রয়ের চুল ওর ঘাড় পর্যন্ত লম্বা তাতে তাকে আরও সুন্দর লাগে দেখতে দেখে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গিয়েছিল তার, যদিও একটু পরেই গায়ে শার্ট চাপিয়ে নেয় রয় তারপর হটাৎ বলে ওঠে "কিছু বলবেন?"
প্রথমটায় থতমত খেয়ে যান শিউলী দেবী তারপর নিজেকে সামলে বলেন "না আসলে খাবার রেডি তাই ডাকতে এসেছিলাম"। তারপর রয় তোয়ালেটা নিয়ে বাইরে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি ওটা নিয়ে নেন বলেন "আমি শুকোতে দিয়ে দেবো, আপনি খেতে আসুন"। তোয়ালেটা হাতে ধরে যেন রয়ের দেহটা অনুভব করার চেষ্টা করেন তিনি। পরে অবশ্য নিজের উপরেই লজ্জা পান রয় তার থেকে অনেক ছোটো কিন্তু এখন শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে আর নিজেকেঔ সামলাতে পারেন না, শাওয়ারের নীচে দাঁড়ানো শিউলী দেবীর সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরের উপর দিয়ে যখন জল বয়ে চলেছে শিউলী দেবীর মনে হয় রয় তার শরীরের উপরে খেলা করছে, আনমনেই তার একটা হাত চলে আসে তার দু-পায়ের মাঝে আর অপর হাত তার উদ্ধত স্তনদ্বয়ের উপর চলতে থাকে চোখ বুজে শিউলী দেবী অনুভব করেন ওটা তার নিজের হাত নয় রয়ের হাত, জল যখন তার ঠোঁটের উপর দিয়ে বয়ে যায় তিনি রয়ের চুম্বন অনুভব করেন।
বেশকিছুক্ষণ পরে হটাৎ তার মুখ থেকে আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে আসে তারপর তিনি শাওয়ার টা বন্ধ করে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকেন তার মুখ দেখে বোঝা যায় যে তার শরীর আপাতত শান্ত হলেও মন শান্ত হয়নি, তোয়ালে টা হাতে তুলে শরীর মুছতে থাকেন তারপর একটা গাউন পরে বেরিয়ে আসেন, ড্রয়িং রুমে সোফার উপর আরো একটা তোয়ালে রাখা আছে এটাই রয় ব্যবহার করেছিল তারপর এটা তিনি ব্যবহার করেননি সোফায় বসে তোয়ালেটা নিয়ে নিজের মুখের উপর ধরেন যেন রয়ের গায়ের গন্ধ নিচ্ছেন তার স্পষ্ট অনুভব করছেন মাঝে মাঝে তোয়ালেটাকে আরো খামচিয়ে ধরছেন যেন রয়কেই আঁকড়ে ধরছেন এমনভাবে। তারপর নিজের মনেই বলেন "তোমাকে আমার চাই, দেখি কতদিন নিজেকে আমার থেকে দূরে রাখো তুমি, তোমাকে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে রয় দিতেই হবে"।
সোলহ বরস কী বালী উমর কো সলাম
এয় প্যার তেরী পহলী নজ়র কো সলাম
নিজের ঘরে বিছানায় বসে পিছনে হেলান দিয়ে, কোলে বালিশ নিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে এই গানটা শুনছে তাথৈ, পরনে একটা হলুদ টপ আর ঘাগড়া, চোখ হাতে ধরা একটা ছবির দিকে যে ছবিটা মিস্টার গুপ্ত জোগাড় করে দিয়েছিলেন, একমনে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে তাথৈ হঠাৎ দরজার কাছে "তাথৈ" শুনে তাড়াতাড়ি ছবিটা লুকিয়ে ফেললো। যিনি ঢুকলেন তার বয়স ৫০ এর আশেপাশে, গায়ের রঙ প্রচণ্ড ফর্সা, শুধু ফর্সা তাই নয় এই বয়সেও রীতিমতো সুন্দরী কিন্তু মুখে কেমন যেন বিষাদের ছায়া, ইনিই তাথৈ মা সরমা ভট্টাচার্য, তাথৈ যে তার দুধে-আলতা গায়ের রঙ আর সৌন্দর্য এনার থেকেই পেয়েছে সেটা আর বলে দিতে হয় না।
সরমা দেবী: তাথৈ
আসো মা।
কি রে ঘরে একা একা কি করছিস?
কিছুনা এই গান শুনছিলাম
কি লুকোলি বলতো?
কই কিছু লুকোইনি তো?
সরমা দেবী কিন্তু ঠিকই দেখেছিলেন তিনি লুকানো জায়গা থেকে ছবিটা বার করে কিছুক্ষণ দেখলেন তারপর তাথৈএর দিকে তাকালেন তাথৈ তখন মাথা নীচু করে আছে কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলেছে।
সরমা দেবী: অভয়?
তাথৈ মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথাটা উপর-নীচ করে সম্মতি জানায় মুখে কিছু বললো না। সরমা দেবী মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন: আর কতদিন? ও আর ফিরবে না ও আর বেঁচে নেই।
তাথৈ: জানিনা আমার মন কিছুতেই মানতে চায় না যে ও বেঁচে নেই আমার বিশ্বাস ও একদিন ঠিক ফিরবে আমার কাছে।
সরমা দেবী: কিন্তু ও যদি বেঁচেও থাকে তাহলেও যদি তোকে ভুলে গিয়ে থাকে? বা যদি ওর জীবনে অন্য কেউ এসে থাকে?
তাথৈ: অভয় আমাকে কথা দিয়েছিল যে ওর জীবনে তাথৈ ছাড়া আর কারো জায়গা নেই আর আমি জানি আমার অভয় নিজের কথা রাখে, ওকে আমার কাছে ফিরতেই হবে, আমি অপেক্ষা করে থাকবো।
সরমা দেবী: কিন্তু তোর বাবা আর জ্যেঠুমণি তোকে সেই সুযোগ দেবেন না ওরা তোর জন্য ছেলে দেখছেন
তাথৈ: দেখেও কোনো লাভ নেই, তাথৈ অভয় ছাড়া আর কারো নয়, তাথৈএর উপর তাথৈএর আত্মা,মন এমনকি শরীরের উপর অভয় ছাড়া আর কারো অধিকার নেই।
সরমা দেবী মেয়ের মাথায় একটা চুমু দিলেন তারপর বললেন: সামনে শিবরাত্রি বৃষ্টি উপোস রাখে না তুই কি করবি?
তাথৈ: আমি তো প্রতিবছর উপোস রাখি মা তুমি তো জানো এবারও রাখবো, অভয় যেখানেই থাকুক ওর সুস্থ দীর্ঘায়ু জীবনের জন্যই রাখবো।
সরমা দেবী আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলেন, তাথৈএর ঘর থেকে বেরোতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন দরজায় দাঁড়িয়ে ফিরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললেন: আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করবো মা যেন তোর ভালোবাসার মানুষটা তোর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু তোকে কিভাবে বলি যে তোর বাবা তোর জ্যেঠু আর তোর পিসি ওর আর ওর পরিবারের সাথে যা করেছে তাতে ও যদি ফিরে আসেও তাহলে আসবে প্রতিশোধ নিতে তোর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে নয়। সরমা দেবী আঁচল দিয়ে চোখের কোন মুছে চলে গেলেন।
তাথৈ বিছানা ছেড়ে ঘরের ব্যালকনিতে এল, তারপর আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে কিছুটা নিজের মনেই বললো: আমি তোমার জন্য এবারও উপোস রাখবো অভয়, তুমি যেখানেই থাকো সুস্থ থাকো,ভালো থাকো আর তাড়াতাড়ি তোমার তাথৈএর কাছে ফিরে এসো, তোমার তাথৈ তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে যতদিন না তুমি ফিরছো ততদিন অপেক্ষা করেই থাকবে, চিন্তা কোরো না তোমার তাথৈ তোমারই থাকবে, তুমিও মনে রেখো তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে তোমার জীবনে তাথৈ ছাড়া আর কারো জায়গা নেই।
অন্ধকার ঘর আলো আছে তবে সেটা একটা ছবির উপর ফোকাস করা ছবিটা পুরো দেওয়াল জুড়ে আছে, ছবিটার সামনে একটা কালো ছেলের মূর্তি প্যান্টের দু পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে, এই অন্ধকার ঘরেও ছেলেটির চোখে কালো গগলস্, গায়ে কালো শার্ট গলায় টকটকে লাল টাই কালো ফরমাল প্যান্ট, চশমার উপর সামনের ছবির প্রতিচ্ছবি পরেছে, ছবিটি বীরেন ভট্টাচার্যের ভাইঝি তাথৈ ভট্টাচার্যের বর্তমান সময়ের ছবি।
একটু পরে ছেলেটা যেন ছবিটাকেই শোনানোর জন্য বলে "১৫ বছর, ১৫ বছর অপেক্ষা করেছি এবার অপেক্ষার অবসান করার সময় এসে গেছে, একটা সময় ছিল যখন আমার বাবা-মার পরে তোমাকে সবথেকে বেশী ভালোবাসতাম আর আজ এই পৃথিবীতে যদি কাউকে সবথেকে বেশী কাউকে ঘেন্না করে থাকি তাহলে সেটা তুমি আর তোমার পরিবার, তোমাকে ভালোবাসার জন্য যে এমন মূল্য চোকাতে হবে কোনোদিন ভাবিনি, ভুল করেছিলাম ভেবেছিলাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো কিন্তু না তুমি তো খেলা করছিলে আমার সাথে আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা নিয়ে, আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমার মতো বড়োলোকের মেয়েরা আমার মতো মধ্যবিত্ত ছেলেদের ভালোবাসতেই পারে না, সেটাও ঠিক ছিল কিন্তু আমার পরিবার? তারা তো কিছু করেনি কিন্তু তোমরা তাদেরকেও ছাড়োনি। ১৫ বছর আমি জ্বালায় জ্বলেছি এবার তোমার আর তোমার পরিবারের জ্বলার পালা মিস তাথৈ ভট্টাচার্য, জানি তোমার জীবনে এখন আমার কোনো অস্তিত্বই নেই, তোমার সামনে দাঁড়ালে চিনতেই পারবে না ভুলে গেছো আমাকে কিন্তু আমি ভুলিনি, নিজের পরিবারের অর্থ প্রতিপত্তি মান-সম্মান নিয়ে খুব অহংকার তোমার তাই না তাথৈ? আমি সবকিছু কেড়ে নেবো তোমাদের থেকে, অভয় নয় আগুন ফিরে এসেছে ভট্টাচার্য পরিবারের চিতা জ্বালানোর জন্য"
তারপর একটু থেমে আবার একই ভাবে বললো "খুব তাড়াতাড়িই দেখা হচ্ছে মিস্ তাথৈ ভট্টাচার্য"।
এআরসির বাণিজ্যনগরীর বিলাসবহুল বাংলোয় আজ একটু বেশীই লোকের ভিড়, এআরসির মা ছেলের মঙ্গলের জন্য পূজো রেখেছেন সেই পূজোতেই আশেপাশের প্রতিবেশীরা এসেছেন, পূজো শেষে সবাই প্রসাদ নিচ্ছে বেশিরভাগ মহিলারা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন, এমন সময় পূজোর যিনি পুরোহিত ছিলেন তার দিকে এগিয়ে এলেন পূজোর আয়োজক এই বাংলোর মালিক এআরসির মা তিনি পুরোহিত মশাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন "ঠাকুরমশাই আপনাকে বলেছিলাম আমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে, দেখেছেন?
পুরোহিত মশাই একটু ঢোঁক গিলে বললেন : মা, তুমি বলো মেয়ে দেখতে এদিকে তোমার ছেলে বলে দেখতে হবে না কোনদিকে যাই বলো তো?
এআরসির মা: আপনাকে তো আমি বলেছি দেখতে, আর ওকে বলার দরকারই বা কি?
পুরোহিত মশাই: তুমি তোমার ছেলেকে তো চেনোই মা, সবদিকে নজর থাকে ওর।
এমন সময় অপর একজন মহিলা এসে বললেন: তোমার ছেলের যা রাগ কোন মেয়ে ওকে সামলাতে পারবে জানিনা
আরেক মহিলাও এইসময় চলে এলেন বললেন: ঠিকই বলেছেন ছেলেটার সব ভালো কিন্তু ওই এক সবসময় মুখ গম্ভীর সবসময় রাগী মুখ ,মুখে হাসি নেই।
এআরসির মা: তোমরা সবাই আমার ছেলের রাগটাই দেখলে, ওর ভিতরের আসল ছেলেটাকে কেউ দেখলো না।
একজন মহিলা বললেন: কিছু মনে কোরো না বোন তোমার ছেলে খারাপ নয় এত উঁচুতে উঠেছে তাও পা সবসময় মাটিতে থাকে, সবার সাথে মেশে সবার জন্য কত কিছু করে কিন্তু ওই ওর সামনে গেলেই ভয় লাগে।
আরেকজন মহিলা বললেন: ও কি ছোটো থেকেই এরকম?
এআরসির মা: না, ছোটোবেলায় ও খুব হাসি-খুশি থাকতো খুব আনন্দ করতো কিন্তু ওর বাবা মারা যাওয়ার পরে ও কেমন যেন পাল্টে গেল ওর মুখ থেকে হাসিটাও মিলিয়ে গেল।
কিছুক্ষণের জন্য যেন কোন সুদূর অতীতে হারিয়ে গেলেন তিনি যখন তার ছেলে ছোট ছিল হাসিখুশি ছিল তার বাবার সাথে আনন্দ করে কাটাতো।
"কি হয়েছিল বোন" হটাৎ প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পান এআরসির মা বলেন: কি বললেন দিদি?
একজন মহিলা বলেন: কি হয়েছিল যে ওরকম একটা ভালো ছেলের মূখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গেল?
শয়তানের নজর পরেছিল সেই আমার ছেলেকে এরকম বানিয়েছে।
এবার আরও একজন নতুন মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল ইনি এই বাংলোতেই থাকেন একা মহিলা, এই বাড়ির কর্ত্রীর দেখাশোনা করেন, তিনি বললেন: এখন শুধু নিজের মায়ের কোলে শুয়েই যা একটু হেসে কথা বলে।
পুরোহিত মশাই এবার বললেন: তাহলে মা কেমন মেয়ে দেখবো?
এআরসির মা: এমন কেউ যে আমার ছেলের রাগকে সামলাতে পারবে পারলে ওর মুখে হাসি ফেরাবে।
darun