Thread Rating:
  • 168 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
একাদশ অধ্যায়

রাতে লেপের মধ্যে শুয়ে শুয়ে সুখরঞ্জনের মনে পড়ে মাহিদিয়ার কথা।কতকাল ছেড়ে এসেছে তবু ভুলে থাকতে পারে না।রফিক মিঞার দেখাশুনার করার কথা,বাবা তার হাতে চাবি দিয়ে এসেছিলেন।ঠিকঠাক দেখাশুনা করছে তো। হয়তো গিয়ে দেখবে ঘরের কোনায় কোনায় ঝুল জমে আছে।চামচিকে বাসা বেধেছে।বিআরবি বলতে সবাই এক ডাকে চেনে।সবাই খুব সম্মান করতো।বিদ্যান পূজ্যতে সর্বত্র।বিআরবি আজ নেই।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।  আর কোনো দিন কি  দেশে ফেরা হবে?এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে।
সারা পাড়া ঘুমে অচেতন।গাছের পাতায় কুয়াশা জমতে থাকে।নিঝুম রাত পথ ঘাট শুনসান।নিশাচর পাখিরা শিকারের সন্ধানে ওত পেতে বসে আছে।সময়ের সাথে সাথে রাত পাতলা হতে থাকে।
বিজন পাল চোখ মেলে তাকালেন।জানলা দিয়ে ভোরের আলো বিছানায় এসে পড়েছে।পাশে প্রমীলা নেই।কাল রাতের কথা মনে পড়ল।
এরকম আগে কখনো হয়নি।দত্ত পুকুর থেকে ফিরে সামান্য কিছু কথা হয়েছে।তারপর শুয়ে যখন দেখল মেয়েটা ঘুমিয়ে কাদা।ধীরে ধীরে 
কাপড় টেনে কোমর অবধি তুলতে কাচি মেরে পাশ ফিরে মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,কি হচ্ছে কি? 
করব?
আমার ভাল লাগছে না।
অবাক হল। আগে যখনই করেছে পা মেলে দিয়েছে।কোনো বাধা দেয়নি।ওকী তাকে সন্দেহ করছে?বাড়াটা ঠাটিয়ে রয়েছে। বিছানায় শুয়ে এ পাশ ওপাশ করতে থাকে।এই অবস্থায় ঘুম আসে।বুক অবধি লেপটা টেনে ঘুমোবার চেষ্টা করেন।অনেক রাতে ঘুম এসেছিল।অফিসের কথা মনে পড়তে উঠে বসলেন।অফিস গেলেই কিছু আয় হয়।অনেকে দু-এক টাকা গুজে দেয়।ফেলে দেওয়া যায় না তাই পকেটে ভরে রাখেন।এজন্য অফিস কামাই করতে ইচ্ছে হয় না।
গিরিবালা হেয়ার কিলিপ্টা দেখে খেয়াল হল কাল তাহলে এখানেই ফেলে রেখে গেছিল।তুলে নিয়ে মাথায় গুজলো।খোপায় ক্লিপ দেখে প্রমীলা ভাবেন,যা ভেবেছি তাই।বিছানার উপর কিভাবে কিলিপটা এল তার উত্তর পেয়ে গেলেন। কিন্তু কোনো কথা বললেন না।চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে চলে গেলেন।  
প্রমীলা ঢুকে একটা টুল টেনে চায়ের কাপ রেখে বললেন,এইযে চা।
দেখো কেমন ভিজে বেড়ালের মত বসে আছে যেন কিছুই জানে না।একদিনের জন্য গেছে অমনি তর সয়না।বিজন পাল আড় চোখে দেখলেন কেমন থম্থমে মুখটা।কিছু না বললে তিনিও কিছু বলবেন না। বিজন চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলেন।ঘড়ির দিকে দেখলেন আটটা বেজে গেছে।চা শেষ করে গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢূকে গেলেন।প্রমীলা উঠে খুটিয়ে বিছানার চাদরটা দেখতে থাকেন।শেষে ঝি-চাকরের সঙ্গে ভেবে প্রমীলার কান্না পেয়ে যায়।
বাবার মৃত্যুর পর মা কোথাও যায় না।তাকে যাবার জন্য বলছে নাদিয়া অতদূর হতে এসে বলে গেল--।
মায়ের কথার অবাধ্য হবার সাধ্য সুখরঞ্জনের নেই।কিন্তু এদেশে কিছুই চেনে না কিভাবে যাবে ভেবে সমস্যায় পড়ল।বেরিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলে কিভাবে যেতে হয় জানা যায় কিনা ভাবে।
স্নান সেরে বিজন পাল বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কেশ বিন্যাস করছেন।গিরিবালার রান্না শেষে যাবার আগে উকি দিয়ে বলল,বোউদি আমি আসছি।
এক মিনিট দাড়া।
প্রমিলা উঠে আলমারি খুলে টাকা বের করলেন।বিজন পাল আড় চোখে দেখতে থাকেন।টাকা গুনে গিরিবালার হাতে দিল।
 এখনো তো মাস শেষ হয়নি।গিরিবালা অবাক হয়ে বলল।
 তোকে কাল থেকে আসতে হবে না।
 কথাটা ঠিক শুনেছে তো।গিরিবাল বলল,কি বললেন বৌদি?
 তোর আসার দরকার নেই।
নোক পেয়েছেন?কে মাস্টেরের বউ?
 তাতে তোর দরকার কি?
গিরিবালা একবার বিজন পালের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল।
 ওকে ছাড়িয়ে দিলে রান্না করবে কে?
 খুব কষ্ট হচ্ছে?
 আমার কষ্ট হবে কেন?তোমাকেই রান্না করতে হবে।
 আয় খুকী।মেয়েকে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে স্নান করাতে থাকেন।আজ কলেজ নেই তবু একসঙ্গে খেয়ে নিক।অন্যদিন ও বাবার সঙ্গে বের হয়।ওকে কলেজে দিয়ে অফিস চলে যায়।স্নান করিয়ে মাথা মুছে বললেন,বাবাকে নিয়ে খেতে এসো।
 প্রমীলা রান্না ঘরে চলে গেলেন।মাস্টারের বউ কথাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন মনে মনে।নতুন কোনো বিপদ হবে নাতো।চোখে চোখে রাখলে কি বিপদ হবে।একটা থালায় ভাত বাড়তে থাকেন।
বাইরে বেশ ঝলমলে রোদ।সুখ রঞ্জন সোয়েটার খুলে রেখে বেরিয়ে পড়ল।বটতলায় এখন ওদের পাওয়া যাবে।সুখ রঞ্জন বটতলার দিকে হাটতে থাকে।বন্ধু এত দূর থেকে এসে নেমন্তন্ন করে গেল এটাই একমাত্র কারন নয়।সুখরঞ্জন জানে কেন এত পীরাপিড়ি করছে মা।বিয়ে বাড়ি গিয়ে ছেলেটা একটু ভালমন্দ খেয়ে আসুক সেটাই মায়ের উদ্দেশ্য।মায়েরা কেন এত ভাল হয়?চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।দূর থেকে তাপসকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
কিরে কোথায় চললি?
বটতলায় যাচ্ছিলাম তোকে দেখে দাড়িয়েছি।
 চল।দুজনে হাটতে শুরু করে।
 হাটতে হাটতে কিছুটা যেতে সুখরঞ্জন বলল,তাপস তুই বৈদ্যবাটি চিনিস?
 বৈদ্যবাটি হুগলীতে কেন চিনবো না।হঠাৎ বৈদ্যবাটি?
 কাল একটা নেমন্তন্ন আছে।আমি তো এদিককার কিছু চিনি না।
 হুম পৌষমাস হল বিয়ের সিজিন।এক্টু ভেবে তাপস বলল,বৈদ্যবাটি যাবি তাইতো?অনেকভাবেই যাওয়া যায়।তবে আমার মতে বাস স্ট্যাণ্ডে গিয়ে নৈহাটি পর্যন্ত বাসে--ধর ঘণ্টা খানেকের পথ।তারপর ট্রেনে ব্যাণ্ডেল।ঘন ঘন ট্রেন কাউকে বৈদ্যবাটি জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে।  
তাপসের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে একবার ঝালাই করে নিল।বাসে নৈহাটী তারপর ব্যাণ্ডেল সেখান থেকে বৈদ্যবাটি।বটতলার কাছাকাছি এসে তাপস বলল,তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে করবি নাতো?
তাপস এত ভণিতা করছে কেন?হেসে বলল,মনে করার কি আছে?
 না থাক।
 থাকবে কেন,বলনা।
 একটু ইতস্তত করে তাপস বলল,কথাটা সীমাকে নিয়ে।
 সীমাকে নিয়ে কথা সে কেন মনে করবে।সীমার উপর তাপসের একটু নজর আছে জানে।কিন্তু তাপস কি বলতে চায় অনুমান করার চেষ্টা করে।
বটতলা থেকে হাক পাড়ল,কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?
চল ওরা ডাকাডাকি করছে।পরে বলবো।
দুজনে গিয়ে আড্ডায় সামিল হল।কদিন পর রেজাল্ট বেরোবার কথা সেই সব নিয়ে আলোচনা চলছিল।রমেন বলল,কিরে এত দেরী করলি?এক্টু আগে এলে দেখা হতো।
 ছাড়তো ফালতু কথা।
সুখ আড়চোখে তাপসকে দেখে,রমেন মনে হয় সীমার কথা বলল। 
বিজন পাল খেয়ে বেরিয়ে গেলে প্রমীলা খেতে বসেন।রাগের মাথায় গিরিকে তাড়িয়ে ভাবছে এখন কি করবে।তার পক্ষে হাড়ি ঠেলা সম্ভব নয়।মাস্টারের বউয়ের কথা আগেও শুনেছেন,রান্নার হাত ভালই।কত টাকা চাইবে কে জানে।কিন্তু লোক তো একটা চাই।গিরিকে তাড়াতে বিজন খচে গেছে ও বেশী গরজ দেখাবে না।খেয়ে দেয়ে একবার বেরোবে ভাবেন।
বেলা বাড়তে থাকে এক সময় আড্ডা ভেঙ্গে যায়।সুখকে নিয়ে তাপস উঠে পড়ল।সুখ বুঝতে পারে তাপস সেই প্রসঙ্গ তুলবে।সীমার কথা কি বলবে।
 সীমাকে তোর কেমন লাগে?
 প্রশ্নটা দুম করে এসে লাগে।সুখ বলল,কেমন আবার ভালই।
 হু-উ-ম জানতাম।তুই এখনো মানুষ চিনিস নি।
এর মধ্যে চেনাচিনির কি হল সুখ বুঝতে পারে না।
 তোর মাকে নিয়ে কি বলছিল জানিস?
 মায়ের কথা বলতে সুখ চমকে ওঠে।
 মাসীমা লোকের বাড়ী রান্না করে।
সুখর মনটা শান্ত হয় বলে,মা তো লোকের বাড়ী রান্না করে তাতে কি হয়েছে?
 ও নিজেকে কি ভাবে?
 যাই ভাবুক তা নিয়ে আমার ভাবার সময় নেই।
 শোন সুখ তুই ওকে পাত্তা দিবি না।
তাপস বাড়ির দিকে চলে গেলে সুখ একলা হয়।মা মনে হয় এতক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে।সীমা যদি বলে থাকে ভুল তো বলেনি।সীমা কি সত্যিই বলেছে?কারো বাড়ি রান্না করলে ছোটো হয়ে যায়? বাড়ীর কাছাকাছি আসতে নজরে পড়ে মা একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলছে।কাছে এসে চিনতে পারে পালবাবুর বঊ।
তুমি বলো কত টাকা চাও?প্রমীলা বললেন।
কথাটা কানে যেতে মাথার মধ্যে ঝিন ঝিন করে ওঠে।সুখ বলল,উনি আপনার চেয়ে বয়সে বড়।ভদ্রভাবে কথা বলুন।
 অভদ্রভাবে কি বললাম?অবাক চোখে তাকালেন প্রমীলা।
 মনু তুই ভিতরে যা।কঠিণ গলায় বললেন সুমনা।
 সুখ ভিতরে চলে গেল।সুমনা বললেন,কিছু মনে করবেন না।দেখুন টাকার জন্য নয় আমার হাতে যা কাজ আমি পারবো না।
 তুমি পারবে না?
 না ভাই পারলে আপনাকে এত বলতে হতো না।
সুমনা ঘরে ঢুকে দেখলেন মনু গোজ হয়ে বসে আছে,মনে মনে হাসলেন।
তুমি আপনি বলছো আর উনি তোমাকে তুমি-তুমি বলে যাচ্ছে।
 চান করে আয় ভাত দিচ্ছি।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,এত মাথা গরম করতে নেই।কাক কাকের মতই ডাকবে কোকিলের ডাক আশা করলে হতাশ হতে হবে।
সুখ চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো,কি সুন্দর কথা।যে যেমন তার ব্যবহারও তেমন।অধ্যাপকের বউয়ের মতো কথা।   
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 26-08-2022, 03:44 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)