23-08-2022, 08:41 PM
দশম অধ্যায়
মনা পড়াতে গেছে বাড়িতে সুমনা একা।একা হলেই ভীড় করে আসে নানা চিন্তা।অনেককাল পর নাদিয়াকে দেখে ভাল লাগল।সেই দুর্ঘটনাটা ওর জীবনটাই বদলে দিল।বাপ-মা থাকলে হয়তো আবার বিয়ে দিত।অতদূর থেকে এসেছে মনুকে যেতে বলবে।বিয়ে বাড়িতে ভাল মন্দ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।এই বয়সে ছেলেটার খাওয়ার বয়স অথচ তার সে সামর্থ্য নেই।সুমনার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।সুমনা উঠে রান্না ঘরে গেলেন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল কাটা আটটা ছুই ছুই ।সুখরঞ্জনের পড়ানো শেষ।মিলি বই গোছাতে গোছাতে বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
মিলির অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে ভাল লাগে।সুখ রঞ্জন চোখ তুলে তাকালো।
অঙ্ক তো সংখ্যা দিয়ে করে।এক্স তো সংখ্যা নয়।
সুন্দর প্রশ্ন করেছে।কিভাবে ওকে বোঝাবে মনে মনে ভাবে।সুখ রঞ্জন বলল,সংখ্যা নয় সংখ্যার প্রতীক।মানে ধরো একজন বুদ্ধিমতী আরেকজন বলদ কজন হল?
দুজন।
দুজন কি বলদ?
না একজন বুদ্ধিমতী আরেকজন বলদ।
ঠিক তেমনি X+Y=2XY.যোগ হল আবার দুজনকে আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে।
মিলি কি বুঝল কে জানে মিট মিট করে হাসতে থাকে।
সুখরঞ্জন বলল,আরো বড় হও সব বুঝতে পারবে।
মাস্টার মশায় আরেকটা কথা বলি?
ছোটোদের মন খুব সরল।ওদের সঙ্গে কথা বলতে ক্লান্তি লাগেনা।পিছনে দেবেনবাবু এসেছেন মিলি খেয়াল করেনি।
পলিদি বলছিল তোর মাস্টার মশায় একটা বলদ।আমি বলেছি না মেধাবী।
তোমার বড়দের সঙ্গে কথা বলার দরকার কি?পড়া হয়ে গেছে ভেতরে যাও।
পিছন ফিরে বাপিকে দেখে বলল,আমি বলেছি নাকি পলিদিই তো বলল।
মিলি বই নিয়ে ভিতরে চলে গেলে।দেবেনবাবু বসে বললেন,তুমি ওর কথায় কিছু মনে কোরনা।ডাক্তারবাবুর মেয়ে জানে না তুমি মিলিকে পড়াও।এমনিতে মেয়েটা খারাপ নয়।এর মধ্যেই বেশ ঠাণ্ডা পড়ে গেছে।
সুখরঞ্জন বলল,গ্রামের দিকে ঠাণ্ডা বেশী বোধ হয়।
তা ঠিক,কলকাতায় এখনো পশম বস্ত্র বের হয়নি।
পলি ডাক্তারবাবুর মেয়ে।সুখরঞ্জন যদিও মিলির কথায় কিছু মনে করেনি।দেবেন বাবুর স্ত্রী দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকলেন।চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন,ছাত্রী পাস করবে তো?
কাকীমা মিলি একটু চঞ্চল কিন্তু বেশ বুদ্ধিমতী।ওকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।
হ্যা ভীষণ বকতে পারে।তোমাকে ওর খুব পছন্দ।
পাঞ্চালির ডাক নাম পলি।কাকু না এলে আরো জানা যেত ওর পলিদি আর কি কি বলেছে।হঠাৎ মাস্টারমশায় নিয়ে কেন বলল।কাকীমা চলে যেতে দেবেনবাবু বললেন,অঞ্চলটার পরিবেশ দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।তোমার কলকাতায় গিয়ে পড়াই ভালো।
সুখরঞ্জন চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবে গোপালনগর কলকাতা দুটোই এক আকাশের নীচে।এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাকে অন্যরকম মনে হয়।গোপালনগর যেভাবে বদলাচ্ছে কলকাতাও কি থেমে থাকবে।এসব কথা তুললে তর্ক বাড়বে।সুখরঞ্জন চুপচাপ চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
আগে ছিল ল্যাংচা কাত্তিক।এরা সমাজ বিরোধী সমাজ হতে দূরত্ব বজায় রাখতো।বাম আমলে আলাদা এরাও ঢুকে পড়েছে সমাজে।কাতান খোকন না কি নাম তাকে সবাই বলে কমরেড।ভদ্রলোকদের সঙ্গে মিটিং করে।এরা নাকি বদলে গেছে।বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায় জানোয়ারের মন থেকে বনকে সরানো যায় না।সুযোগ পেলেই এরা স্বরূপ ধারন করবে।
এসব আলোচনায় সুখরঞ্জনের তেমন আগ্রহ নেই।চা শেষ করে উঠি-উঠি ভাব করে।
হ্যা রাত হল তুমি এসো।
ট্রেন থেকে নেমে একটা রিক্সায় চেপে বসলেন বিজনপাল।পাশে স্ত্রী মেয়েকে কোলে নিয়ে নিলেন।রিক্সা বাড়ীর দিকে চলেছে।প্রমীলা জিজ্ঞেস করলেন,কাল সকালে কি গিরি এসেছিল?
বলতে গিয়েও কথাটা গিলে নিলেন বিজন।বললেন,আমি তো ভোরে রওনা দিয়েছি কি করে জানবো।
সোমবার আসবে তো?অবশ্য ও কামাই করে কম।সংসার পরিবার নেই একা একা বাড়ী বসে করবেই বা কি?
পার্টি অফিসের বাইরে শান্তিবাবুর গাড়ি দাড়িয়ে,ভিতরে বোধ হয় মিটিং হচ্ছে।শান্তি বিশ্বাস এবার মন্ত্রী হয়েছেন।বাইরে কিছু ছেলের জটলা।
বাম সরকার গঠিত হবার পর পার্টি অফিসে ভীড় বেড়েছে।খোকন মণ্ডল বেরিয়ে এসে একটা ছেলেকে চা আনার ফরমাশ করে আবার ভিতরে ঢুকে গেল।
বাড়ির নীচে রিক্সা থামতে প্রমীলা মেয়েকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন।নীচের ভাড়াটিয়া বউটি জিজ্ঞেস করলেন,এই ফিরলেন?
প্রমীলা হেসে বললেন,কোথাও গিয়ে আমার থাকার জো আছে।
নিজের ঘরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলেন।চাদর টাদর এমন দলা পাকিয়ে আছে যেন যুদ্ধ করেছে।পোশাক বদলে খাট ঝাড়তে থাকেন প্রমীলা।
এসেই আরম্ভ করেছো একটু বিশ্রাম করো।বিজন পাল ঘরে ঢুকে বললেন।
কি অবস্থা করেছো দেখোতো।
বিজন পাল কোনো উত্তর নাদিয়ে বাথরুমে চলে গেলেন।খাট ঝাড়তে ঝাড়তে একটা প্লাস্টিকের ফুল লাগানো মাথার কাটা পেয়ে প্রমীলার ভ্রু কুচকে যায়।এক মুহূর্ত কি ভাবলেন তারপর কাটাটা কোমরে গুজে আবার খাট ঝাড়তে শুরু করেন।
লুঙ্গি পরে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিজন পাল ঢুকলেন।
কেউ এসেছিল?পিছন ফিরেই প্রমীলা প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন।
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?বিজন বললেন,কে আবার আসবে?
একটা কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না?বলতে পারছো না কেউ আসেনি?
কি মুশকিল আমি তো ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়েছি,কেউ এসেছিল কিনা কিকরে জানবো।
প্রমীলার মনে সন্দেহের গুটি পোকাটা চলতে শুরু করে।পুরুষ জাতটাকে তার বিশ্বাস নেই।এই কাঁটাটা এল কোথা থেকে আবার তারই বিছানায়!জিজ্ঞেস করল কেউ এসেছিল কিনা তার স্পষ্ট উত্তর দিতে নানা ধানাই পানাই কথা।
মনা পড়াতে গেছে বাড়িতে সুমনা একা।একা হলেই ভীড় করে আসে নানা চিন্তা।অনেককাল পর নাদিয়াকে দেখে ভাল লাগল।সেই দুর্ঘটনাটা ওর জীবনটাই বদলে দিল।বাপ-মা থাকলে হয়তো আবার বিয়ে দিত।অতদূর থেকে এসেছে মনুকে যেতে বলবে।বিয়ে বাড়িতে ভাল মন্দ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।এই বয়সে ছেলেটার খাওয়ার বয়স অথচ তার সে সামর্থ্য নেই।সুমনার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে।সুমনা উঠে রান্না ঘরে গেলেন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল কাটা আটটা ছুই ছুই ।সুখরঞ্জনের পড়ানো শেষ।মিলি বই গোছাতে গোছাতে বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
মিলির অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে ভাল লাগে।সুখ রঞ্জন চোখ তুলে তাকালো।
অঙ্ক তো সংখ্যা দিয়ে করে।এক্স তো সংখ্যা নয়।
সুন্দর প্রশ্ন করেছে।কিভাবে ওকে বোঝাবে মনে মনে ভাবে।সুখ রঞ্জন বলল,সংখ্যা নয় সংখ্যার প্রতীক।মানে ধরো একজন বুদ্ধিমতী আরেকজন বলদ কজন হল?
দুজন।
দুজন কি বলদ?
না একজন বুদ্ধিমতী আরেকজন বলদ।
ঠিক তেমনি X+Y=2XY.যোগ হল আবার দুজনকে আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে।
মিলি কি বুঝল কে জানে মিট মিট করে হাসতে থাকে।
সুখরঞ্জন বলল,আরো বড় হও সব বুঝতে পারবে।
মাস্টার মশায় আরেকটা কথা বলি?
ছোটোদের মন খুব সরল।ওদের সঙ্গে কথা বলতে ক্লান্তি লাগেনা।পিছনে দেবেনবাবু এসেছেন মিলি খেয়াল করেনি।
পলিদি বলছিল তোর মাস্টার মশায় একটা বলদ।আমি বলেছি না মেধাবী।
তোমার বড়দের সঙ্গে কথা বলার দরকার কি?পড়া হয়ে গেছে ভেতরে যাও।
পিছন ফিরে বাপিকে দেখে বলল,আমি বলেছি নাকি পলিদিই তো বলল।
মিলি বই নিয়ে ভিতরে চলে গেলে।দেবেনবাবু বসে বললেন,তুমি ওর কথায় কিছু মনে কোরনা।ডাক্তারবাবুর মেয়ে জানে না তুমি মিলিকে পড়াও।এমনিতে মেয়েটা খারাপ নয়।এর মধ্যেই বেশ ঠাণ্ডা পড়ে গেছে।
সুখরঞ্জন বলল,গ্রামের দিকে ঠাণ্ডা বেশী বোধ হয়।
তা ঠিক,কলকাতায় এখনো পশম বস্ত্র বের হয়নি।
পলি ডাক্তারবাবুর মেয়ে।সুখরঞ্জন যদিও মিলির কথায় কিছু মনে করেনি।দেবেন বাবুর স্ত্রী দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকলেন।চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন,ছাত্রী পাস করবে তো?
কাকীমা মিলি একটু চঞ্চল কিন্তু বেশ বুদ্ধিমতী।ওকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।
হ্যা ভীষণ বকতে পারে।তোমাকে ওর খুব পছন্দ।
পাঞ্চালির ডাক নাম পলি।কাকু না এলে আরো জানা যেত ওর পলিদি আর কি কি বলেছে।হঠাৎ মাস্টারমশায় নিয়ে কেন বলল।কাকীমা চলে যেতে দেবেনবাবু বললেন,অঞ্চলটার পরিবেশ দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।তোমার কলকাতায় গিয়ে পড়াই ভালো।
সুখরঞ্জন চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবে গোপালনগর কলকাতা দুটোই এক আকাশের নীচে।এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাকে অন্যরকম মনে হয়।গোপালনগর যেভাবে বদলাচ্ছে কলকাতাও কি থেমে থাকবে।এসব কথা তুললে তর্ক বাড়বে।সুখরঞ্জন চুপচাপ চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
আগে ছিল ল্যাংচা কাত্তিক।এরা সমাজ বিরোধী সমাজ হতে দূরত্ব বজায় রাখতো।বাম আমলে আলাদা এরাও ঢুকে পড়েছে সমাজে।কাতান খোকন না কি নাম তাকে সবাই বলে কমরেড।ভদ্রলোকদের সঙ্গে মিটিং করে।এরা নাকি বদলে গেছে।বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায় জানোয়ারের মন থেকে বনকে সরানো যায় না।সুযোগ পেলেই এরা স্বরূপ ধারন করবে।
এসব আলোচনায় সুখরঞ্জনের তেমন আগ্রহ নেই।চা শেষ করে উঠি-উঠি ভাব করে।
হ্যা রাত হল তুমি এসো।
ট্রেন থেকে নেমে একটা রিক্সায় চেপে বসলেন বিজনপাল।পাশে স্ত্রী মেয়েকে কোলে নিয়ে নিলেন।রিক্সা বাড়ীর দিকে চলেছে।প্রমীলা জিজ্ঞেস করলেন,কাল সকালে কি গিরি এসেছিল?
বলতে গিয়েও কথাটা গিলে নিলেন বিজন।বললেন,আমি তো ভোরে রওনা দিয়েছি কি করে জানবো।
সোমবার আসবে তো?অবশ্য ও কামাই করে কম।সংসার পরিবার নেই একা একা বাড়ী বসে করবেই বা কি?
পার্টি অফিসের বাইরে শান্তিবাবুর গাড়ি দাড়িয়ে,ভিতরে বোধ হয় মিটিং হচ্ছে।শান্তি বিশ্বাস এবার মন্ত্রী হয়েছেন।বাইরে কিছু ছেলের জটলা।
বাম সরকার গঠিত হবার পর পার্টি অফিসে ভীড় বেড়েছে।খোকন মণ্ডল বেরিয়ে এসে একটা ছেলেকে চা আনার ফরমাশ করে আবার ভিতরে ঢুকে গেল।
বাড়ির নীচে রিক্সা থামতে প্রমীলা মেয়েকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন।নীচের ভাড়াটিয়া বউটি জিজ্ঞেস করলেন,এই ফিরলেন?
প্রমীলা হেসে বললেন,কোথাও গিয়ে আমার থাকার জো আছে।
নিজের ঘরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলেন।চাদর টাদর এমন দলা পাকিয়ে আছে যেন যুদ্ধ করেছে।পোশাক বদলে খাট ঝাড়তে থাকেন প্রমীলা।
এসেই আরম্ভ করেছো একটু বিশ্রাম করো।বিজন পাল ঘরে ঢুকে বললেন।
কি অবস্থা করেছো দেখোতো।
বিজন পাল কোনো উত্তর নাদিয়ে বাথরুমে চলে গেলেন।খাট ঝাড়তে ঝাড়তে একটা প্লাস্টিকের ফুল লাগানো মাথার কাটা পেয়ে প্রমীলার ভ্রু কুচকে যায়।এক মুহূর্ত কি ভাবলেন তারপর কাটাটা কোমরে গুজে আবার খাট ঝাড়তে শুরু করেন।
লুঙ্গি পরে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিজন পাল ঢুকলেন।
কেউ এসেছিল?পিছন ফিরেই প্রমীলা প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন।
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?বিজন বললেন,কে আবার আসবে?
একটা কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না?বলতে পারছো না কেউ আসেনি?
কি মুশকিল আমি তো ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়েছি,কেউ এসেছিল কিনা কিকরে জানবো।
প্রমীলার মনে সন্দেহের গুটি পোকাটা চলতে শুরু করে।পুরুষ জাতটাকে তার বিশ্বাস নেই।এই কাঁটাটা এল কোথা থেকে আবার তারই বিছানায়!জিজ্ঞেস করল কেউ এসেছিল কিনা তার স্পষ্ট উত্তর দিতে নানা ধানাই পানাই কথা।