22-08-2022, 01:02 PM
"আমি শিওর না।" স্নিগ্ধা বলে।
কবির স্নিগ্ধাকে ওর পাশে শুইয়ে দেয়, নেমে আসে ওর তলপেটে। "আমার বেবিটি কোথায়? এখানে? নাকি এখানে?" বলতে বলতে ওর সারা পেটে চুমু দিতে থাকে কবির।
"এই এই কি করছিস।" স্নিগ্ধা বলে।
"চুপ, আমি আমার বেবিকে আদর করছি।" কবির বলে।
"দেখিস আবার কুতুব মিনার দাঁড় করিয়ে ফেলিস না, আজ রাতে কিন্তু আর করতে দিব না।" হাসতে হাসতে বলে স্নিগ্ধা।
কবির উঠে এসে ওর পাশে শুয়ে পড়ে, ও স্নিগ্ধাকে নিয়ে এই অবস্থায় আর পাহাড়ে থাকতে চায়না, দুরের কোন লোকালয়ে সেটেল হতে হবে। তবে তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কাল খুব সকাল সকাল জাল নিয়ে বেরোতে হবে মাছ ধরতে, কবির ঘুমানোর চেষ্টা করে। স্নিগ্ধা ওকে আলতো করে জড়িয়ে নেয় ফিস ফিস করে বলে "কাল একবার আম্মুর সাথে কথা বলব।"
"ঠিক আছে, এখন ঘুমো।"
ঠিক মাথার ওপর সুর্য, আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরাচ্ছে। কবির ও স্নিগ্ধা পাহাড়ী আঁকাবাকা পথ বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দর দর করে ঘেমে যাচ্ছে দুজনই।
"আর পারছি না। আর কতো দুর?" স্নিগ্ধা বলে।
"এইতো আর এক কিলো হবে। চল, একটু ঐ গাছের ছায়াতে একটু জিরিয়ে নেই", কবির বলে। তারপর একটি গাছের নিচে গিয়ে শেকড়ের উপর বসে দুজন। এর আগেরবার যখন এসেছিল ওরা তখন খুব ভোরে রওনা দিয়েছিল। রোদের তেজ বাড়ার আগেই ওরা পাশের গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল। যদিও আজকেও কবির খুব ভোরে উঠেছিল, কিন্তু স্নিগ্ধাকে ফাঁকি দিয়ে উঠতে পারেনি ও। স্নিগ্ধাও আদায় করে নিয়েছে ওর সকালের আদর, এরপর গোসল করার নামে লেকটাতে গিয়ে ঝাঁপাঝাপি করেছে ঘন্টা খানিক ধরে।
"চল, এবার রওনা দেই।" কিছুক্ষন ছায়ায় জিরানোর পর কবির বলে।
"আরো কিছুক্ষন থাকি না, কি সুন্দর যায়গা আর কি সুন্দর ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"ধিরে ধিরে রোদের তেজ বেড়ে যাবে। মার সাথে কথা বলতে যাবি না?"
স্নিগ্ধা ওর কথা কানে নেয়না গাছটিতে হেলান দিয়ে আনমনে বলতে থাকে "একমাস হল এখানে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যায়গাটা ভাল করে ঘুরে দেখাই হল না।"
"একদিন তোকে সাথে নিয়ে চারিদিকটা ঘুরে নিয়ে আসব, এবার চলতো।" বলে ওর হাতটি ধরে প্রায় টেনে নিয়ে যায়।
ওরা যতক্ষনে পাশের গ্রামটিতে পৌঁছে ততোক্ষনে দুপুর হয়ে গেছে। পাহাড়ের ঢালে ছোট একটি গ্রাম যার একপাশ দিয়ে পাহাড়ি সড়ক বয়ে চলেছে। ওরা একটি খাবারের দোকানে দুপুরের খাবার সেরে নেয়। তারপর সড়কটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ওরা।
"এখানেই না একটা রিচার্জের দোকান দেখলাম। এখানেই তো কথা বলা যায়, অন্য কোথাও যাওয়ার কি দরকার?" স্নিগ্ধা বলে।
কবিরও ভেবে দেখে যে ওরা যদি এখন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তবে ফিরতে ফিরতে ওদের রাত লেগে যাবে।
"ঠিক আছে, চল।" বলে কবির গ্রামটির দিকে ফিরে যায়, সাথে স্নিগ্ধাও।
স্নিগ্ধা ওর মায়ের নাম্বার চেপে কল দেয়, একবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো, কে?" শিরিনের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শুনতে পায় স্নিগ্ধা।
"মা, আমি স্নিগ্ধা।"
"স্নিগ্ধা, মা আমার, কেমন আছিস? ঠিক আছিস তো?"
"আমি ভাল আছি তোমরা আমাকে নিয়ে টেনশন কোরো না।" স্নিগ্ধা বলে।
"টেনশন না করে কি থাকা যায়? গত একমাস ধরে অপেক্ষায় আছি কখন তোর ফোন আসে। রিংটোন বেজে উঠলেই মনে হয় এই বুঝি তুই কল দিয়েছিস। আমি রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছি আর তুই অভিমান করে আছিস, আরেকবার ফোন করতে পারলি না?" শিরিন বলে।
"না মা, তোমার প্রতি আমার কোন অভিমান নেই। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে যখন তখন কল করা সম্ভব না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তুই কোথায় আছিস মা? তোরা ফিরে আয়। আমি সজলের সাথে কথা বলেছি, ও তোকে ডিভোর্স দিবে। তারপর কবিরের সাথে তোকে বিয়ে দেব। ফিরে আয় তোরা।" অনুরোধের সুরে বলে শিরিন।
স্নিগ্ধা কি জবাব দিবে বুঝতে পারছিল না।
"কথা বলছিস না কেন মা? তোর সাথে কবির আছে? ওকে একটু দে। কত দিন দেখি না ওকে!"
স্নিগ্ধা ফোনটি কবিরকে দেয়।
"হ্যালো, কবির, কেমন আছো বাবা?"
"জি ভাল, মা।"
"তুমি তো আমার ছেলেই, হঠাত করে যে হারিয়ে গেলে আমাদের কি একটুও মনে পড়েনি। তোমাকে আমরা কতো খুঁজেছি, কত কেঁদেছি তোমার জন্য।"
"আমাকে ক্ষমা করে দিন মা, আমি আপনাদের মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি, শীঘ্রই আমরা ফিরে আসব।" বলে কবির ফোন কেটে দেয়।
কবির লেকটির ধারে দাড়িয়ে ওর জালটা ছুঁড়ে দেয় যতদুর সম্ভব, এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে জালটা গুটিয়ে আনে। স্নিগ্ধা কাছেই গাছের নিচে বসে ছিল, কবিরকে জাল গুটিয়ে আনতে দেখে স্নিগ্ধা এগিয়ে যায়, জালটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কবিরকে। দুটো পুঁটি আর একটা টাকি মাছ উঠেছে তাতে।
কবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "তুই এখানেই থাক। আমি একটু ঐদিকে জাল ফেলে দেখি কিছু পাই কিনা।"
"তুই একটু ছায়ায় বস না, আমি এবার জাল ফেলি। একেবারে ঘেমে গেছিস।" স্নিগ্ধা বলে।
"এখন না, একটু পরে।" বলে কবির ওর জালটি নিয়ে লেকের ধার ঘেঁষে এগিয়ে যায়। কবির জানে যে পাশের গ্রাম থেকেই স্নিগ্ধার মার সাথে কথা বলার পর ওদের ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। কবির যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু তার জন্য টাকার প্রয়োজন। গত তিনদিন ধরে ওরা লেকে মাছ ধরে পাশের গ্রামে এক মাছ বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছে। প্রথম দিন দুইশত টাকা, পরের দিন চারশ পঞ্চাশ টাকা, পরের দিন চারশ টাকা, এ কয়দিনের মাছ বিক্রির টাকা ওদের। অন্য কোথাও গিয়ে সেটেল হতে চাইলে ওদের অনেক টাকার প্রয়োজন, কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা না হলে কবির সে রিস্ক নেবে না।
কবির লেকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জাল ফেলে, কিন্তু একটি আধা কেজি ওজনের মৃগেল ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু পায় না। কবির ভাবে যে তার ডিঙ্গি নৌকাটা যদি থাকতো তবে নৌকা বেয়ে লেকের মাঝামাঝিতে জাল ফেলতে পারতো সে। কবির এবার কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে জাল ফেলতে শুরু করে। এবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই ওর জালে একটি বড় কাতল মাছ ওঠে। জালটাকে লেকের ধারে তুলেই স্নিগ্ধাকে ডাকে কবির, স্নিগ্ধা সাথে সাথে ছুটে আসে।
"ওয়াও! কত্তবড় কাতল মাছ! এটা কতো ওজন হবে?" স্নিগ্ধা উচ্ছসিত কন্ঠে বলে।
"দশ বারো কেজি তো হবেই।" কবির বলে। তারপর ওদের শিকার করা মাছগুলোকে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে যায়। দুজন মিলে ছোট মাছগুলোকে কেটে ধুয়ে আলু দিয়ে চচ্চড়ি করে। তা দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নেয়। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে ওরা ওদের মাছগুলোকে নিয়ে রওনা দেয় পাশের গ্রামের উদ্দেশ্য। ওদের সংগ্রহে বড় কাতল মাছটি ছাড়াও একটি মাঝারি কালবাউশ ও দুটি মাঝারি মৃগেল আছে। কবির যখন প্রথম বান্দরবানে এসেছিল তখন অংসুন গ্রামে ছিল কয়েক মাস। অংসুন নামক একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গ্রামটি বেশ সুন্দর। এখানে কবিরের বেশ কিছু পরিচিত লোক আছে, যাদের মাঝে রশিদ একজন। রশিদ মাছের ব্যবসা করে, গ্রামের বাজারে তার মাছের দোকান আছে।
"ও রশিদ চাচা। বাড়ি আছ নাকি।" রশিদের ছুপরির সামনে এসে ডাকে কবির।
"কে?" রশিদের কন্ঠ শুনতে পায় ওরা।
"আমি করিম।" কবির বলে।
"ও ভাইস্তা, ভেতরে আস।" ভেতর থেকেই বলে রশিদ।
দরজাটা ভেজানো ছিল, ওরা খুলে ভেতরে ঢোকে।
"আরে, বউমাকেও আনছ দেখি! আস মা বস।" বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে।
"চাচা, শরীর কি খারাপ নাকি? অবেলায় শুয়ে আছেন?" মাছের ডালাটা নামিয়ে রাখতে রাখতে কবির বলে।
"অল্প জ্বর আছে, ও তেমন কিছু না। দেখি তোমরা কি আনছ?" বলে উঠে মাছের ডালাটা দেখে।
"ওরে বাবা, এ দেখি বিশাল মাছ। কই পাইলা? ঐ ভুতের জলায়?" রশিদ বলে।
"ভুতের জলা?" স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলে।
"করিম তোমাক বলে নাই? ঐ জলায় আর ঐ বাড়িতে কাল্লা কাটা ভুত থাকে, অনেক মানুষ দেখছে। ঐখানে তো দিনের বেলায়ও মানুষ যাইতে ভয় পায়। তয় করিম মানতে চায় না।"
"আমাকে বলিসনি কেন?" ফিসফিস করে বলে স্নিগ্ধা।
"ফিজিক্সের ছাত্রী হয়ে তুই এসব বিশ্বাস করিস?" কবির বলে।
স্নিগ্ধা কিছু বলে না।
"আমি বলি কি, তোমরা ঐখানে আর থাইকো না। এই গেরামেও থাইকো না, দুরে কোথাও চইলা যাও।" রশিদ বলে।
"সেই চেষ্টাই করছি চাচা। সেই জন্যই তো এসব।" বলে মাছের ডালাটার দিকে ইশারা করে কবির।
"কিন্তু এই মাছ কেনার মুরুদ তো আমার নাই। আর এই গেরামে কেউ কিনতেও পারব না। তাও তুমি যখন আনছ, ব্যাটাকে শহরে পাঠাইয়া বেচমু নি। কিন্তু কত নিবা?" রশিদ বলে।
"আপনিই বলেন চাচা।"
"টাকা পয়সা বেশি নাই, ব্যাবসা ভাল চলে না। আমি পনেরশ দিমু।"
"দশ কেজি ওজনের কাতলা, কমপক্ষে ছয় হাজার টাকায় তো বেচতেই পারবেন। অন্তত তিন হাজার মিল কইরা দেন।" কবির বলে।
"অতো টাকা তো নাই ভাইস্তা। গেরামে তো বেচতে পারমু না, শহরে নিয়া যাইতে হইব, খরচা আছে না? আচ্ছা, দুই হাজার দেই।" রশিদ বলে।
"চাচা, আর পাঁচশটা টাকা দেন। এই সব মাছ আপনার।" কবির বলে।
"ঠিক আছে ভাইস্তা, আমি আর তিনশ দিব।" রশিদ বলে।
কবির আর আপত্তি করে না। রশিদকে বিদায় জানিয়ে ওরা ফিরে আসে।
গ্রামটা পেরোতেই কবির মানিব্যাগ বের করে টাকা গোনে, ওর কাছে মোট ছয় হাজার টাকা আছে।
"আমরা কালকেই এই এলাকা ছেড়ে চলে যাব।" কবির বলে।
"কিন্তু, কোথায় যাব আমরা?"
"আজ রাতেই ডিসিশন নিব আমরা।" কবির বলে।
কবির স্নিগ্ধাকে ওর পাশে শুইয়ে দেয়, নেমে আসে ওর তলপেটে। "আমার বেবিটি কোথায়? এখানে? নাকি এখানে?" বলতে বলতে ওর সারা পেটে চুমু দিতে থাকে কবির।
"এই এই কি করছিস।" স্নিগ্ধা বলে।
"চুপ, আমি আমার বেবিকে আদর করছি।" কবির বলে।
"দেখিস আবার কুতুব মিনার দাঁড় করিয়ে ফেলিস না, আজ রাতে কিন্তু আর করতে দিব না।" হাসতে হাসতে বলে স্নিগ্ধা।
কবির উঠে এসে ওর পাশে শুয়ে পড়ে, ও স্নিগ্ধাকে নিয়ে এই অবস্থায় আর পাহাড়ে থাকতে চায়না, দুরের কোন লোকালয়ে সেটেল হতে হবে। তবে তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কাল খুব সকাল সকাল জাল নিয়ে বেরোতে হবে মাছ ধরতে, কবির ঘুমানোর চেষ্টা করে। স্নিগ্ধা ওকে আলতো করে জড়িয়ে নেয় ফিস ফিস করে বলে "কাল একবার আম্মুর সাথে কথা বলব।"
"ঠিক আছে, এখন ঘুমো।"
ঠিক মাথার ওপর সুর্য, আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরাচ্ছে। কবির ও স্নিগ্ধা পাহাড়ী আঁকাবাকা পথ বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দর দর করে ঘেমে যাচ্ছে দুজনই।
"আর পারছি না। আর কতো দুর?" স্নিগ্ধা বলে।
"এইতো আর এক কিলো হবে। চল, একটু ঐ গাছের ছায়াতে একটু জিরিয়ে নেই", কবির বলে। তারপর একটি গাছের নিচে গিয়ে শেকড়ের উপর বসে দুজন। এর আগেরবার যখন এসেছিল ওরা তখন খুব ভোরে রওনা দিয়েছিল। রোদের তেজ বাড়ার আগেই ওরা পাশের গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল। যদিও আজকেও কবির খুব ভোরে উঠেছিল, কিন্তু স্নিগ্ধাকে ফাঁকি দিয়ে উঠতে পারেনি ও। স্নিগ্ধাও আদায় করে নিয়েছে ওর সকালের আদর, এরপর গোসল করার নামে লেকটাতে গিয়ে ঝাঁপাঝাপি করেছে ঘন্টা খানিক ধরে।
"চল, এবার রওনা দেই।" কিছুক্ষন ছায়ায় জিরানোর পর কবির বলে।
"আরো কিছুক্ষন থাকি না, কি সুন্দর যায়গা আর কি সুন্দর ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"ধিরে ধিরে রোদের তেজ বেড়ে যাবে। মার সাথে কথা বলতে যাবি না?"
স্নিগ্ধা ওর কথা কানে নেয়না গাছটিতে হেলান দিয়ে আনমনে বলতে থাকে "একমাস হল এখানে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যায়গাটা ভাল করে ঘুরে দেখাই হল না।"
"একদিন তোকে সাথে নিয়ে চারিদিকটা ঘুরে নিয়ে আসব, এবার চলতো।" বলে ওর হাতটি ধরে প্রায় টেনে নিয়ে যায়।
ওরা যতক্ষনে পাশের গ্রামটিতে পৌঁছে ততোক্ষনে দুপুর হয়ে গেছে। পাহাড়ের ঢালে ছোট একটি গ্রাম যার একপাশ দিয়ে পাহাড়ি সড়ক বয়ে চলেছে। ওরা একটি খাবারের দোকানে দুপুরের খাবার সেরে নেয়। তারপর সড়কটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ওরা।
"এখানেই না একটা রিচার্জের দোকান দেখলাম। এখানেই তো কথা বলা যায়, অন্য কোথাও যাওয়ার কি দরকার?" স্নিগ্ধা বলে।
কবিরও ভেবে দেখে যে ওরা যদি এখন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তবে ফিরতে ফিরতে ওদের রাত লেগে যাবে।
"ঠিক আছে, চল।" বলে কবির গ্রামটির দিকে ফিরে যায়, সাথে স্নিগ্ধাও।
স্নিগ্ধা ওর মায়ের নাম্বার চেপে কল দেয়, একবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো, কে?" শিরিনের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শুনতে পায় স্নিগ্ধা।
"মা, আমি স্নিগ্ধা।"
"স্নিগ্ধা, মা আমার, কেমন আছিস? ঠিক আছিস তো?"
"আমি ভাল আছি তোমরা আমাকে নিয়ে টেনশন কোরো না।" স্নিগ্ধা বলে।
"টেনশন না করে কি থাকা যায়? গত একমাস ধরে অপেক্ষায় আছি কখন তোর ফোন আসে। রিংটোন বেজে উঠলেই মনে হয় এই বুঝি তুই কল দিয়েছিস। আমি রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছি আর তুই অভিমান করে আছিস, আরেকবার ফোন করতে পারলি না?" শিরিন বলে।
"না মা, তোমার প্রতি আমার কোন অভিমান নেই। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে যখন তখন কল করা সম্ভব না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তুই কোথায় আছিস মা? তোরা ফিরে আয়। আমি সজলের সাথে কথা বলেছি, ও তোকে ডিভোর্স দিবে। তারপর কবিরের সাথে তোকে বিয়ে দেব। ফিরে আয় তোরা।" অনুরোধের সুরে বলে শিরিন।
স্নিগ্ধা কি জবাব দিবে বুঝতে পারছিল না।
"কথা বলছিস না কেন মা? তোর সাথে কবির আছে? ওকে একটু দে। কত দিন দেখি না ওকে!"
স্নিগ্ধা ফোনটি কবিরকে দেয়।
"হ্যালো, কবির, কেমন আছো বাবা?"
"জি ভাল, মা।"
"তুমি তো আমার ছেলেই, হঠাত করে যে হারিয়ে গেলে আমাদের কি একটুও মনে পড়েনি। তোমাকে আমরা কতো খুঁজেছি, কত কেঁদেছি তোমার জন্য।"
"আমাকে ক্ষমা করে দিন মা, আমি আপনাদের মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি, শীঘ্রই আমরা ফিরে আসব।" বলে কবির ফোন কেটে দেয়।
কবির লেকটির ধারে দাড়িয়ে ওর জালটা ছুঁড়ে দেয় যতদুর সম্ভব, এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে জালটা গুটিয়ে আনে। স্নিগ্ধা কাছেই গাছের নিচে বসে ছিল, কবিরকে জাল গুটিয়ে আনতে দেখে স্নিগ্ধা এগিয়ে যায়, জালটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কবিরকে। দুটো পুঁটি আর একটা টাকি মাছ উঠেছে তাতে।
কবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "তুই এখানেই থাক। আমি একটু ঐদিকে জাল ফেলে দেখি কিছু পাই কিনা।"
"তুই একটু ছায়ায় বস না, আমি এবার জাল ফেলি। একেবারে ঘেমে গেছিস।" স্নিগ্ধা বলে।
"এখন না, একটু পরে।" বলে কবির ওর জালটি নিয়ে লেকের ধার ঘেঁষে এগিয়ে যায়। কবির জানে যে পাশের গ্রাম থেকেই স্নিগ্ধার মার সাথে কথা বলার পর ওদের ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। কবির যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু তার জন্য টাকার প্রয়োজন। গত তিনদিন ধরে ওরা লেকে মাছ ধরে পাশের গ্রামে এক মাছ বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছে। প্রথম দিন দুইশত টাকা, পরের দিন চারশ পঞ্চাশ টাকা, পরের দিন চারশ টাকা, এ কয়দিনের মাছ বিক্রির টাকা ওদের। অন্য কোথাও গিয়ে সেটেল হতে চাইলে ওদের অনেক টাকার প্রয়োজন, কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা না হলে কবির সে রিস্ক নেবে না।
কবির লেকের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে জাল ফেলে, কিন্তু একটি আধা কেজি ওজনের মৃগেল ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু পায় না। কবির ভাবে যে তার ডিঙ্গি নৌকাটা যদি থাকতো তবে নৌকা বেয়ে লেকের মাঝামাঝিতে জাল ফেলতে পারতো সে। কবির এবার কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে জাল ফেলতে শুরু করে। এবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই ওর জালে একটি বড় কাতল মাছ ওঠে। জালটাকে লেকের ধারে তুলেই স্নিগ্ধাকে ডাকে কবির, স্নিগ্ধা সাথে সাথে ছুটে আসে।
"ওয়াও! কত্তবড় কাতল মাছ! এটা কতো ওজন হবে?" স্নিগ্ধা উচ্ছসিত কন্ঠে বলে।
"দশ বারো কেজি তো হবেই।" কবির বলে। তারপর ওদের শিকার করা মাছগুলোকে নিয়ে ওরা ঘরে ফিরে যায়। দুজন মিলে ছোট মাছগুলোকে কেটে ধুয়ে আলু দিয়ে চচ্চড়ি করে। তা দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নেয়। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে ওরা ওদের মাছগুলোকে নিয়ে রওনা দেয় পাশের গ্রামের উদ্দেশ্য। ওদের সংগ্রহে বড় কাতল মাছটি ছাড়াও একটি মাঝারি কালবাউশ ও দুটি মাঝারি মৃগেল আছে। কবির যখন প্রথম বান্দরবানে এসেছিল তখন অংসুন গ্রামে ছিল কয়েক মাস। অংসুন নামক একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গ্রামটি বেশ সুন্দর। এখানে কবিরের বেশ কিছু পরিচিত লোক আছে, যাদের মাঝে রশিদ একজন। রশিদ মাছের ব্যবসা করে, গ্রামের বাজারে তার মাছের দোকান আছে।
"ও রশিদ চাচা। বাড়ি আছ নাকি।" রশিদের ছুপরির সামনে এসে ডাকে কবির।
"কে?" রশিদের কন্ঠ শুনতে পায় ওরা।
"আমি করিম।" কবির বলে।
"ও ভাইস্তা, ভেতরে আস।" ভেতর থেকেই বলে রশিদ।
দরজাটা ভেজানো ছিল, ওরা খুলে ভেতরে ঢোকে।
"আরে, বউমাকেও আনছ দেখি! আস মা বস।" বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে।
"চাচা, শরীর কি খারাপ নাকি? অবেলায় শুয়ে আছেন?" মাছের ডালাটা নামিয়ে রাখতে রাখতে কবির বলে।
"অল্প জ্বর আছে, ও তেমন কিছু না। দেখি তোমরা কি আনছ?" বলে উঠে মাছের ডালাটা দেখে।
"ওরে বাবা, এ দেখি বিশাল মাছ। কই পাইলা? ঐ ভুতের জলায়?" রশিদ বলে।
"ভুতের জলা?" স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলে।
"করিম তোমাক বলে নাই? ঐ জলায় আর ঐ বাড়িতে কাল্লা কাটা ভুত থাকে, অনেক মানুষ দেখছে। ঐখানে তো দিনের বেলায়ও মানুষ যাইতে ভয় পায়। তয় করিম মানতে চায় না।"
"আমাকে বলিসনি কেন?" ফিসফিস করে বলে স্নিগ্ধা।
"ফিজিক্সের ছাত্রী হয়ে তুই এসব বিশ্বাস করিস?" কবির বলে।
স্নিগ্ধা কিছু বলে না।
"আমি বলি কি, তোমরা ঐখানে আর থাইকো না। এই গেরামেও থাইকো না, দুরে কোথাও চইলা যাও।" রশিদ বলে।
"সেই চেষ্টাই করছি চাচা। সেই জন্যই তো এসব।" বলে মাছের ডালাটার দিকে ইশারা করে কবির।
"কিন্তু এই মাছ কেনার মুরুদ তো আমার নাই। আর এই গেরামে কেউ কিনতেও পারব না। তাও তুমি যখন আনছ, ব্যাটাকে শহরে পাঠাইয়া বেচমু নি। কিন্তু কত নিবা?" রশিদ বলে।
"আপনিই বলেন চাচা।"
"টাকা পয়সা বেশি নাই, ব্যাবসা ভাল চলে না। আমি পনেরশ দিমু।"
"দশ কেজি ওজনের কাতলা, কমপক্ষে ছয় হাজার টাকায় তো বেচতেই পারবেন। অন্তত তিন হাজার মিল কইরা দেন।" কবির বলে।
"অতো টাকা তো নাই ভাইস্তা। গেরামে তো বেচতে পারমু না, শহরে নিয়া যাইতে হইব, খরচা আছে না? আচ্ছা, দুই হাজার দেই।" রশিদ বলে।
"চাচা, আর পাঁচশটা টাকা দেন। এই সব মাছ আপনার।" কবির বলে।
"ঠিক আছে ভাইস্তা, আমি আর তিনশ দিব।" রশিদ বলে।
কবির আর আপত্তি করে না। রশিদকে বিদায় জানিয়ে ওরা ফিরে আসে।
গ্রামটা পেরোতেই কবির মানিব্যাগ বের করে টাকা গোনে, ওর কাছে মোট ছয় হাজার টাকা আছে।
"আমরা কালকেই এই এলাকা ছেড়ে চলে যাব।" কবির বলে।
"কিন্তু, কোথায় যাব আমরা?"
"আজ রাতেই ডিসিশন নিব আমরা।" কবির বলে।