25-08-2022, 04:05 PM
(This post was last modified: 25-08-2022, 04:07 PM by Anuradha Sinha Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ২০
কাঁচের জানালা দিয়ে এক ফালি রোদ এসে পড়লো সুইটের সেই বিছানার ওপর, সেই বিছানা যার এক পাশে শুয়েছিল রুদ্র আর আরেক পাশে দীপা | সেই রাতের ঘটনার পর একটু হলেও, ওদের মধ্যে সম্পর্ক পালটে গিয়েছিল। সত্যি বলতে ওদের সেই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যেন একে অপরের অপরিচিত তারা। যেন কেউ ওদের জোর করে একই ঘরে আটকে রেখেছে, একই বিছানায় যেন শুতে বাধ্য করেছে |
মুখের ওপর সূর্যের প্রথম কিরণ এসে পড়তেই রুদ্রর ঘুম ভেঙে গেল| সে নিজের চোখ খুলে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বিছানাতে উঠে বসল। এতকাল ধরে সেই ছোট্ট ফ্লাটের শক্ত বিছানায় ঘুমিয়ে এসেছে রুদ্র, আর এখন এই আলিসান নরম বিছানায় শুয়ে তার আরও ভালোভাবে ঘুম হওয়ার কথা, কিন্তু বিছানা মকমলের মতন নরম হলেও, মনে শান্তি ছিল না রুদ্রর। এর একটাই কারণ, দীপা। রুদ্র বিছানাতে বসে আস্তে আস্তে নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের দিকে তাকাতেই ওর চোখ পড়ল তার পাশে শুয়ে থাকা বেক্তির উপর | তার পাশে তখনও নিদ্রায় মগ্ন হয়ে বস্ত্র বিহীন অবস্থায় শুয়ে ছিল দীপা আর সামনের জানালা দিয়ে সকালের নরম রোদ এসে দীপার নগ্ন শরীরের ওপর পড়তেই তার সেই রূপসী লাস্যময়ী-রূপ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে লাগল আর প্রতিবারের মতন এবারও অবাক হয়ে তার শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকতে নিজের লিঙ্গ শক্ত হতে অনুভব করল রুদ্র|
এই নারীর এমনই রূপ যেন স্বয়ং কামদেব দেখলে তাঁরও ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যাবে| প্রায় পলকহীন ভাবে দীপার শরীরটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে করতে রুদ্রর নজর গেল দীপার যোনির কাছটায়। সে দৃশ্য এতটাই অপূর্ব যে সেই দিক থেকে রুদ্র নিজের চোখ ফেরাতে পাড়ল না । দীপার কোমল নারীত্বের বেশীর ভাগ অংশই লোকানো ছিল তার বহুকালের অস্পর্শিত ঘন কালো বনের পেছনে, তবে সেই বনের ফাঁক দিয়েই লুকোচুরি খেলার মতন জানান দিচ্ছিল দীপার নারীত্ব।
রুদ্রর নিজের চোখ আস্তে আস্তে আরও কিছুটা নীচের দিকে নামাতেই দীপার দুই ভরাট উরুর মাঝে, বিছানার ওপরটাতে নজর পরতেই রুদ্র থমকে দাঁড়াল । সে দেখল যে বিছানার কেবল সেই অঞ্চলটুকুই কেমন যেন ভিজে রয়েছে |
'ভেজা? ভেজা কেন...?', রুদ্র নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল। 'তার মানে ও নিজেই...?' আর সাথে সাথে সেই রাতের সব ঘটনার কথা মনে পরে গেল রুদ্রর আর তাই, আর কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে চলে গেল রুদ্র |
টি সেন্টারের সেই সতেরো নম্বর তলায় বন্দি দশায় ছিল দীপা আর রুদ্র, তবে তারা বন্দি হলেও সেটা জেলখানার সঙ্গে কখনোই তুলনা করা যেত না| সেই জায়গার প্রতিটা কোনে ছাড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সব ভীষণ দামী বিলাসবহুল আসবাব, জিনিসপত্র, এমন সব জিনিসপত্র যেগুলো তারা আগে কোনোদিনও দেখেনি | তবে টাকা থাকলেই কি সব মাফ হয়ে যায়...? টাকা দিয়ে কি কেনা যায় মানুষের মন...?
সেই রাতের ঘটনার পর থেকে রুদ্রর মনে এইসব কথাগুলো ভেসে আসতে শুরু করেছিল আর সেই থেকে দীপার সাথে সব কথাবত্রা বন্ধ করে দিয়েছিল সে| যদিও সে জানতো যে সেই রাতে দীপা সব কিছুই করেছিল মদের নেশায়, আর এটাও বুঝেছিল যে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় না থাকলে দীপা নিশ্চয়ই ওইরকম কিছু করতও না।
পাণ্ডে-জির লোকেরা মাঝেমধ্যে এসে ওদের খোঁজখবর নিয়ে যেত ঠিকই, কিন্তু সেই রাতের পর থেকে একদিনের জন্যেও না পাণ্ডে-জির না তিস্তার, কারুরই দেখা মেলেনি | এইরকমই সেইদিন সকালবেলা একজন লোক এসে ওদের খবর দিয়ে গেল যে পাণ্ডে-জি দীপাকে ডেকে পাঠিয়েছেন |
"ভেতরে আসতে পারি, পাণ্ডে-জি?", অফিসের দরজাটা হালকা ফাঁক করে জিজ্ঞেস করে উঠল দীপা।
"আরে দীপা! এসো...এসো মাই ডিয়ার, আমরা তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম | কাম সিট উইথ আস।এই....এইখানে এসে বস....", বলে নিজের হুইলচেয়ারের পাশে থাকা সোফাটার দিকে ইশারা করলেন পাণ্ডে-জি।দীপাও সেই মত অফিসের ভেতরে ঢুকে, আস্তে আস্তে গিয়ে সোফাতে বসল আর বসতেই ওর সাথে তিস্তার চোখাচোখি হল | তিস্তা দীপার দিকে তাকিয়ে নিজের মাথা নাড়িয়ে মিষ্টি করে হেসে উঠল ।
"হ্যাঁ, বলুন পাণ্ডে-জি, আমি কিভাবে আপনার সাহায্য করতে পারি...?" দীপা বলে উঠল।
"আরে না...না.. দীপা, সে সব পরে হবে ক্ষণ। আগে বলও, এখানে থাকতে তোমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো ? মানে এখানে তোমাদের কে তো অনেকদিন ধরেই আটকে রেখেছি.....তাই না?"
"ইয়েস বস! ফর টু উইকস..." পাশ থেকে বলে উঠল তিস্তা।
"ইয়েস, টু উইকস মাই ডিয়ার....টু উইকস...আর সেই জন্যই তোমাকে জিজ্ঞেসা করছি, তোমাদের এখানে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো ? আফটার অল, তোমরা আমাদের গেস্ট... আর আমরা আমাদের গেস্টদের অসন্তুষ্টি একদমই সহ্য করতে পারি না..." বলে দীপার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলেন পাণ্ডে - জি ।
"এ-বাবা...না না, এ আপনি কি বলছেন পাণ্ডে-জি, এখানে আমরা কি করে খারাপ থাকতে পারি? আমি ভালো...মানে আমরা ভালো আছি এখানে, খুবই ভালো আছি"
"ওহ....ওকে, ভালো থাকলেই ভালো", বলেই হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন পাণ্ডে-জি, তারপর আবার বলে উঠলেন, "কারণ আমাদের সবার ফিউচার এখন তোমার ওপর ডিপেন্ড করছে, দীপা "
পাণ্ডে-জির সেই কথার হেঁয়ালি বুঝতে না পেরে দীপা বল্লঃ
"মানে....? আমার ওপর কেন ফিউচার ডিপেন্ড করবে, পাণ্ডে-জি... আমি ঠিক বুঝতে....",বলতে যেতেই, পাণ্ডে-জি ওকে থাময়ে দিয়ে বললেন,"বলছি ডিয়ার, বলছি.....",বলে দীপার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতো করে চেপে ধরলেন উনি।
"দীপা, তুমি তো নিশ্চই জানো যে আমার সব ধন সম্পদ এখন ওই সিকিওরড একাউন্টে রয়েছে...?"
"হমমম..জানি তো"
"আর সেটা এক্সেস করার জন্যে ওই একাউন্টটায় আমার ডিএনএ ইমপ্রিন্ট লাগে..."
"হ্যাঁ...সেদিন তো আমরাই..."
"হ্যাঁ দীপা তোমরাই করে দিয়েছিলে, কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখ ডিয়ার; ওই একাউন্টটায় আমার ডিএনএ ইমপ্রিন্ট লাগে... আর এরই মধ্যে আমার ভালোমন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে, তোমাদের যে আর কিছু করাবার থাকবেনা ডিয়ার...", এই বলে দীপার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালেন পাণ্ডে-জি। পাণ্ডে-জিকে সেই ভাবে দুর্বল হয়ে পরতে দেখে দীপা ওনার হাতটা চেপে ধরে বল্লঃ
"না..না পাণ্ডে -জি, কিচ্ছু হবে না আপনার...আমারা সবাই আছি তো আপনার কাছে। উই ওনট লেট এনিথিং হ্যাপ্পেন টু ইয়ু, পাণ্ডে-জি..."
"থ্যাংক...থ্যাংক ইউ দীপা। এইটাই...এইটাই শুনতে চাইছিলাম আমি তোমার মুখ থেকে। বাট আমি মনে করি যে সাবধানের কোন মার নেই, আর তাই....." বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বললেন, " তাই আমি আর তিস্তা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমাদের একটা বায়োলজিক্যাল সাকসেসর নেওয়ার দরকার", বলে তিস্তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন পাণ্ডে-জি।
আর পাণ্ডে-জির সেই সদ্য উক্ত উক্তিটা একবারে হজম করতে না পেরে দীপা নিজের ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলঃ
"মানে আপনি?.....আপনি কি..?"
"হ্যাঁ দীপা, তুমি ঠিকই বুঝেছ, আমি জৈবিক সন্তানের প্রতি আগ্রহী। অ্যাই ওয়ান্ট টু হাভ অ্যা চাইল্ড, মাই চাইল্ড", পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন।
"ওঃ মাই....এতো, এতো খুবই আনন্দের খবর পাণ্ডে-জি " বলে আনন্দে সোফা থেকে লাফিয়ে উঠলো দীপা।
"কিন্তু দীপা......", পাণ্ডে-জি কিছু একটা বলতে চাইলেন কিন্তু ততক্ষণে দীপা আনন্দে অত্মহারা হয়ে নিজেই বকতে আরম্ভ করলঃ "তিস্তাই নিশ্চয় সাহায্য করবে আপনাকে...তাই না? খুব ভাল খবর...খুব ভাল! আই আম রিয়ালি হ্যাপি"
তবে এর পরের কথাগুল শোনাবার পর দীপার সেই আনন্দ যেন মাটিতে মিশে গেল।
"না....দীপা....তুমি বুঝতে পারছনা, বাচ্চাটা আমি চাই, কিন্তু তোমার কাছ থেকে..."
"কি...? আমার....আমার কাছ থেকে..? মানে?" দীপার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো | সে পাণ্ডে-জিকে সব রকম ভাবেই সাহায্য করতে রাজি ছিল, কিন্তু এইটা...এইটা তার কাছে যেন অসম্ভব মনে হল...
"হ্যাঁ দীপা, বিকজ তিস্তার পর আমি তোমাকেই সব থেকে বেশি বিশ্বাস করি আর এই কদিনে আমাদের মাঝের সব বোঝা পোড়াই বেশ ভালোভাবেই হয়ে গেছে, তাই না", বলে দীপার উরুতে নিজের হাত রাখলেন পাণ্ডে - জি ।
"কিন্তু...", এইবার দিশেহারা হয়ে বলে উঠল দীপা। সে নিশ্চয়ই চেয়েছিল কলকাতা থেকে যে ভাবেই হোক বাইরে বেরতে, কিন্তু পাণ্ডে-জি এখন যেটা করতে বলছিলেন সেটা তো প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হল দীপার।
"প্লিজ দীপা, দিস ইস ফর অল অফ আস....থিংক আবাউট ইট। প্লিজ একবার ভেবে দ্যাখো দীপা...", পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন।
পাণ্ডে-জির সেই কথা শুনে দীপার মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই সে বলল, "হ্যাঁ...নিশ্চয়ই পাণ্ডে-জি, ভেবে তো দেখব, কিন্তু তিস্তা...তিস্তা তো আপনার কাছে অনেকদিন ধরেই আছে। তা আপনি তো ওকে একবার...."
"না, ও নয়", পাণ্ডে-জি হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন আর তাকে সেই ভাবে গম্ভীর হয়ে যেতে দেখে দীপা বল্লঃ
"কেন...? আপনি তো ওকে একবার "
"না দীপা দি....আমি চাইলেও সেটা সম্ভব হবেনা", দীপার কথাটাকে অসম্পূর্ণ করে হঠাৎ বলে উঠল তিস্তা।
"মানে? কেন...?" দীপা বলে উঠল।
"কারণ আমি..বাঁজা দীপা-দি, আমি ব্যারেন। ইভেন ইফ আই ওয়ানট...আমি চাইলেও.....কোনদিনই....", নিজের কথা আর শেষ করতে পাড়ল না তিস্তা। নিজের জীবনের সব থেকে কষ্টের ক্ষতটাকে অন্য কারুর সামনে তুলে ধরতে যেতেই তিস্তার গলা ধরে গেল আর সেই সাথে ওর চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রুজল ঝোরে পড়তে লাগলো |
আর তিস্তার মুখে সেই কথা শুনে দীপা যতটা না অবাক হল, তারচেও বেশী তিস্তার প্রতি মায়ায় জড়িয়ে গেল সে, তাই আর অপেক্ষা না করে সোফা থেকে উঠে ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরল দীপা| সেই সাথে সেই রাতের কথা মনে পোড়ে গেল ওর...'আমি ওর সাথে এতটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পাড়লাম...?'
"একদম না...একদম না....একদম কাঁদবি না...সব...সব ঠিক হয় যাবে, আমি ঠিক করে দেবো সব কিছু..." বলে তিস্তার মাথায় হাত বোলাতে লাগল দীপা।
'নিজের জীবনে আমি অনেক কিছু ত্যাগ করেছি, অনেক কিছুর বলিদান দিয়েছি। আজকে যখন আমি আমার লক্ষের এতটা কাছে... তখন এই বালিদানও দিতে রাজি আমি, শুধুমাত্র রুদ্রর জন্য....যে করেই হোক না কেন, আমাদের দুজনকে এই নরক থেকে বেরতেই হবে...", দীপা নিজেই নিজেকে বলে উঠল আর সেই সাথে পাণ্ডে-জির দিকে ঘুরে শক্ত গলায় বলে উঠলো, "পাণ্ডে-জি, জানতে অজান্তে আপনি আমাদের অনেক সহজ করেছেন। আমাদের যখন প্রাণ সংশয় হয়েছিল তখন আপনিই আমাদের রক্ষা করেছিলেন, এমন কি আমাদের মাথার ওপরের ছাত টুকুর ব্যবস্থাও আপনিই করে দিয়েছিলেন....তাই...তাই আমি মনে করি যে আপনার বীজ আমার শরীরের মধ্যে ধারন করলে আমি আপনার সব কটা ঋণ মিটিয়ে দিতে পারবো..."
"কি? না...এ তুমি কি বলছ দীপা? ঋণ...? ঋণ কেন বলছ তুমি ওটাকে? আমি তো তোমাদের সব সময় ভালো চেয়েই এসেছি | তোমাদের সাহায্য করে আমি কোনোদিনই কিছু প্রমাণ করতে চাইনি আর তাতে আমার কোন স্বার্থও ছিল না...", পাণ্ডে-জি বলে উঠলেন।
"মাফ করবেন পাণ্ডে-জি কিন্তু যেটা সত্যি সেইটাই আমি বলেছি আপনাকে। এটা হয়তো ঠিকই যে আপনি আমাদের সব সময়ই ভালো চেয়ে এসেছেন আর তাই আজকে সেটার প্রতিদান দেওয়ার পালা আমার। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি যে সেটা আমি নিশ্চয়ই পালন করবো...", দৃঢ় গলায় বলে উঠল দীপা।
"সত্যি! সত্যি বলছ তুমি, দীপা!! থ্যাংক ইউ.....থ্যাংক ইউ দীপা!!", বলে দীপার হাত দুটো চেপে ধরে নিজের মাথায় টেকালেন পাণ্ডে-জি ।
সেই দু-সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার পর থেকে দীপার সঙ্গে আর কোনও কথা বলেনি রুদ্র আর দীপা ওর সাথে কথা বলতে এলে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া বা সেইখান থেকে চলে যাওয়া ছিল তার বাঁচার রাস্তা তবে দীপার উপর অভিমান করে থেকে, ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে, আপনা হতেই মনে মনে গুমরে উঠছিল রুদ্র| দীপাকে সে না হয় ক্ষমা করেই দিলো, কিন্তু দীপা কি আর ওর সঙ্গে কথা বলবে...? সেদিন...মানে সেই রাতে, ওকে খুব খারাপ খারাপ কথা বলেছিল সে...তারপর, তারপর কি তার ভালবাসা তাকে ক্ষমা করবে...?
সামনের জানালা দিয়ে বাইরের বিধ্বস্ত কংক্রিটের জঙ্গলের দিকে তাকিয়া এই নিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে লাগল রুদ্র। সামনের জানালা দিয়ে বাইরের শহরটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল, সেরকমই সামনে কিছুটা দূরে, পাশাপাশি দুটো বিল্ডিংএর ওপর থেকে হঠাৎ ধোঁয়া উঠতে দেখল রুদ্র। তবে ধোঁয়ার ওই রকম লাল রঙ কেন? এমন ধোঁয়া সে আগে কোথাও দেখেছে, কিন্তু সেটা কোথায় সেইটা কিছুতেই তার মনে পরল না। এমন সময় হঠাৎ পেছন দিক থেকে ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ ভেসে এলো ওর কানে। সেই আওয়াজ অনুসরণ করে সেই দিকে ঘুরে তাকাতেই সে দেখল যে ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়য়ে রয়েছে দীপা।
দীপা আস্তে আস্তে ঘরের ভেতরে ঢুকে, ঘরের দরজা লাগাতেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল রুদ্র | ওইদিকে রুদ্রকে সেই ভাবে উঠে পরতে দেখে তার দিকে আসার জন্য পা বারিয়েও সামনে এগোনোর সাহস পেল না দীপা। সেইদিন যে ভাবে সে ব্যাথা দিয়েছে রুদ্রকে, তারপর কি সে আর কোনোদিনও তার সাথে কথা বলতে চাইবে?
দুজনেই নিজের মনে সেই এক কথা ভাবতে লাগল আর সেই সাথে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। ওদের মধ্যে কেউই ভেবে পেল না, কি বলে নিজেদের কথা শুরু করবে, এমন সময়ঃ
"দীপা.."
"রু.."
দুজনেই প্রায় একসাথে বলে উঠলো| তারপর আরও কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর দীপাই নিজে থেকে রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়াল |
"বল...তুমি আগে বল...", ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র।
"না...তু...তুই", দীপার চোখ দুটো সাথে সাথে ছলছল করে উঠল।
'ঠিক, কি... বললেন পাণ্ডে-জি?'
যে প্রশ্নের আশঙ্কা করেছিল দীপা ঠিক সেই প্রশ্নটাই করে বসল রুদ্র... 'হে ভগবান! এইবার আমি কি উত্তর দেব ওকে...আমাদের সম্পর্কের কি এইখানেই ইতি...' দীপা নিজেকে নিজে বলে উঠল। শেষে আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের মনটাকে শক্ত করে দীপা বলল, "পা..পাণ্ডে-জি নিজের একটা সন্তান চান"
"ওকে...কিন্তু সেটার জন্য তোমাকে ডেকে পাঠালেন কেন উনি? মানে..."
রুদ্রর সেই প্রশ্নটা শুনে আর থাকতে না পেরে দাঁতে দাঁত চেপে সেই কথাটা এইবার বলেই ফেলল দীপাঃ
"যাতে ফিউচারে আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে কোনও অসুবিধা না হয়, উনি...উনি, আমার কাছ থেকে নিজের একটা সন্তান চান। আ বাইওলজিকাল চাইল্ড অফ হিস ওন অ্যান্ড আই টু বি দ্যা মাদার অফ দ্যাট চাইল্ড......"
"কি...? মা..মানে? তো..তোমার...সাথে...সন্তান!" রুদ্রর পায়ের নিছ থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগল, 'এ কি বলছে দীপা? আমি কি ঠিক শুনছি? পাণ্ডে-জির সন্তান আমার দীপার গর্ভে?'
"হ্যাঁ রু, আমার কাছ থেকে উনি সন্তান চান আর সেইটাই ওনার আমার কাছ থেকে পাওয়া শেষ সাহায্য হবে" রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা।
"তার মানে তুমি ওনার প্রস্তাবে রাজি...?", বিস্ময়ের সূরে বলে উঠল রুদ্র আর সেই শুনে দীপা নিজের মাথা নামিয়ে নিল।
"কিন্তু...কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই আমাদের কাছে? প্লিজ দীপা সে সাম্থিং...মানে তোমার জায়গায় যদি অন্য কেউ সারোগেট..."
"না রু..তিস্তা, তিস্তার পক্ষেও..."
"আমি তিস্তার কথা বলছিনা। অন্য কেউ.... মানে, এই পৃথিবীতে কি তুমি আর তিস্তা ছাড়া আর কোনও মহিলা নেই"
"রুদ্র, এই পুরো জিনিসটাই প্রচণ্ড সেক্রেসিতে হচ্ছে সেটা নিশ্চই বুঝতে পারছিস তুই। এমনিই ওই একাউন্টের ব্যাপারে কেউ জানে না আর তাছাড়া এই ব্যাপারে থার্ড পার্টি কাউকে নিয়ে আসাটাও চাপ আর আমি আসা করি সেই রিস্কটা তুই নিশ্চয়ই বুঝবি...", দীপা বলে উঠল।
"কিন্তু", বলে এইবার যৌক্তিকভাবে এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগল রুদ্র | দীপা যা করতে চলেছে সেটা তাদের নিজেদের ভালোর জন্যই করতে চলেছে আর সেইভাবে দেখতে গেলে, পাণ্ডে-জি আজ আছেন কাল নেই, তবে তাদের এখনো পুরো জীবনটাই পরে রয়েছে | এই ডিসিশনটা যখন দীপা নিয়েছে তখন নিশ্চয়ই সব কিছু ভেবে চিনতেই নিয়েছে আর দীপার ডিসিশন কখনো ভুল হয় না | রুদ্র নিজের মনে মনে এই সব ভাবতে লাগল এমন সময় হঠাৎ নিজের আঙুলে নরম কিছুর স্পর্শ পেয়ে সেই দিকে তাকাতেই দেখল যে দীপা নিজের হাত দিয়ে তার হাতটা চেপে ধরেছে ।
"আই আম রিয়ালি সরি রু, আমায় ক্ষমা করে দে..প্লিজ....সেদিন....আমি..", মাথা হেঁট করে বলে উঠল দীপা।
"না..না সরি বলার..."
"না রুদ্র..সেইদিন আমি তোর সাথে ওইরকম ব্যবহার করবার পর, নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারিনি...।আমি...আমায় পারলে ক্ষমা করে দিস সোনা। সে...সেদিন খুব তোর লেগেছিল না ...? খুব কষ্ট হয়েছিল না......", বলে কেঁদে ফেলল দীপা।
"তাহলে আমারও তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত, কারণ সেদিন আমিও তোমাকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি...মানে খুব খারাপ, আমার...."
"অ্যান্ড আই ডিসার্ভড ইট রু, আই ডিসার্ভড ইট | আমার যে সেদিন.....দ্যাট ফাকিং অ্যালকোহল!!! বাট ইফ পসিবেল, ক্ষমা করে দিস সোনা.... আর আজকের এই খবরটা...."
"বললাম না, একদম সরি বলবে না তুমি। নাও লিসেন... তুমি যেটা করতে চলেছ বা যে সিধান্তটা নিয়েছ সেটা আমাদের ভবিষ্যতের ইন্সুরেন্স| আমি জানি যে এতে তোমারও খুব কষ্ট হচ্ছে, বাট হোআট এভার ইট টেক্স, দীপা। আর তোমার মতন আমিও শুধু আমাদের ব্যাপারেই চিন্তা করি দীপা....অ্যান্ড সো আই রেসপেকট ইওর ডিসিসান...", বলে আর থাকতে না পেরে দীপাকে নিজের বুকে জরিয়ে ধরল রুদ্র | আর এতদিন পর রুদ্রর শরীরের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়েই দীপা কেঁপে উঠলো আর ওর শরীরের সেই নিভে জাওয়া আগুনটা আবার দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো ।
"উহ্হঃ রু.....কতদিন...কতদিন পর তোর শরীরের স্পর্শ অনুভব করছি আমি। আমার আর কিছু লাগবেনা সোনা....তুই আমার শরীরের সেই নিভে জাওয়া আগুন" বলে রুদ্রর গালে ঠোঁটে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো দীপা।
"তুমি...নিজেও জান না যে আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি দীপা। এই কয়াকদিন আমার কাছে এক যুগেরও বেশী বলে মনে হয়েছে সোনা", বলে দীপাকে নিজের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে ওর নরম সুডোল পাছাটা দুহাতে খামছে ধরে দীপার কামনা ভরা দেহটাকে নিজের শরীরের নীচে পিষে ফেলতে লাগল রুদ্র।
"কিন্তু..!", রুদ্র হঠাৎ বলে উঠল ।
"কি..আহ্হঃ..কি কিন্তু..সোনা..? মমম....উহ্হঃ..বল রু" চোখ বুজে নিজের শরীরটাকে রুদ্রর বাহুতে সোপে দিয়ে বলে উঠলো দীপা।
"কিন্তু...!" দীপার ঠোঁটের ওপর থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলে উঠল রুদ্র, "কিন্তু...কি করে, কি করে সম্ভব হবে ওটা? মানে...পাণ্ডে-জির তো বেরোয় না...দেন হাউ...?"
আর রুদ্রর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছিল তিস্তা আর অনেক খোঁজাখুঁজির করাবার পর অবশেষে সেই জিনিসটা খুঁজে বের করতে সক্ষম হল। সেই জিনিসটা যেটার দ্বারা সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন পাণ্ডে-জি ।