Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller দ্যা লাস্ট কেস (ছোট গল্প)
#38
অন্তিম পর্ব




মেয়ে কি বলছে সেটা এখনো ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না মিত্রা, ও ভাবছে সারাক্ষণ বাবা বাবা করছে দেখে অন্য কাউকে দেখে বাবার মত মনে হয়েছে হয়তো। হাটু গেঁড়ে বসে মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মিত্রা,

মামনি তোমার বাবাকে তো আমরা সবাই খুঁজছি, তোমার আঙ্কেল রাও কেউ জানে না তোমার বাবা কোথায় গিয়েছে তুমি হয়তো ভুল দেখেছো - মিলির ভিজে যাওয়া চোখ দুটো হাত দিয়ে মুছে দেয় মিত্রা, কিংশুককে দেখেছে শুনে একটু হলেও ওর মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু হাতে মাথায় ব্যান্ডেজের কথা শুনে সেই চঞ্চলতার জায়গায় ভয় জায়গা নিয়েছে তাই নিজের মন কে বুঝাতে চেষ্টা করছে ওটা হয়তো কিংশুক না অন্য কেউ হবে হয়তো।

না...না.. ওটা বাবাই ছিল, আমি ভুল দেখেনি। আমি সত্যি বলছি ওটা বাবাই ছিল, আমি বাবার কাছে যাবো, বাবার কি হয়েছে আমি বাবা কে দেখবো - ছোট্ট মিলির আকুতি মিত্রার হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে। কিন্তু কোথায় খুঁজবে কিংশুক কে, গত কয়েকদিন ধরে তো জানা শোনা সব জায়গায় খোঁজ করেছে কেই কিচ্ছু বলতে পারে নি৷ 

আচ্ছা মামানি তুমি একটু শান্ত হও, আমি আবার খুঁজবো তোমার বাবা কে ঠিক আছে। এখন তুমি কিছু খেয়ে নাও আমি দেখছি কি করা যায় - মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে যায় জামাকাপড় বদলে দেবার জন্য।

মেয়েকে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে। আজকাল মেয়ের মাঝেই যেন কিংশুকের গায়ের গন্ধটা পায় মিত্রা, আগেও হয়তো ছিল কিন্তু খোঁজে পায় নি নাকি খোঁজার চেষ্টা করে নি। সময় সব কিছু বদলে দেয় মিত্রাকেও দিয়েছে, একটা সময় যেন কিংশুক কে দেখতে না হয় তাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো কিন্তু আজ সেই কিংশুক কে একটাবার দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে বেড়াচ্ছে। নিয়তি কি খেলা দেখাচ্ছে কে জানে আর কখনো কিংশুকের দেখা পাবে না কি কে জানে, আজকাল কেন এমন হচ্ছে কে জানে আগে তো মিত্রা কে বাহনা খুঁজতে হতো কিংশুকের কাছ থেকে দূরে যাবার জন্য আর আজ কত শত বাহানার কথা ভাবছে হচ্ছে কিংশুক কে দেখার জন্য ওকে কাছে পাবার জন্য।
মেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেই মিত্রা উঠে পড়ে কয়েকটা ফোন করার জন্য, কিংশুকের বন্ধুদের কাছে মিলির কথা গুলো খুলে বলে জিজ্ঞেস করে ওরা কেউ কি কিংশুকের খবর পেয়েছে কিনা। কিন্তু কারও কাছেই ওর খবর নেই, ওরা সবটা শোনার পর ওদের মতো করে খোঁজ করবে বলে আশ্বাস দেয়। একে একে সবার কাছেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে মিত্রাকে, একটু একটু করে আশার প্রদীপ নিভতে চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই তো মেয়ে আবার বাবার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলে মেয়েকে শান্ত করবে সেটা জানা নেই মিত্রা। শেষ আশা হিসেবে পুলিশের কাছে ফোন করে কিংশুকের কোন খবর পেয়েছে কি না জানতে চায়, কিন্তু ওদের কাছে কোন খবর নেই। কে জানে ওরা কি আসলেই খোঁজ করেছিল নাকি, নইলে এমনি করে একটা মানুষ উধাও হয়ে যায় কি করে। মিলি যে কিংশুক কে দেখার দাবি করছে সেটাও পুলিশ কে জানায়, ওরা এবার মনে হয় একটু সিরিয়াস হলেও হতে পারে। ওপাশ থেকে অফিসার বললো, তারা আশেপাশের সব হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখবে কোন খবর পেলে সাথে সাথে জানাবে।

অফিসে আসার পর থানায় ফোন করে কিংশুকের খবর পেয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তেমন ভালো কোন খবর দিতে পারে নি। আগের দিন মিলি ঘুম থেকে উঠেই আবার কান্নাকাটি শুরু করেছিল বাবাকে দেখার জন্য, সেই এক কথা বাবার কিছু হয়েছে ও বাবাকে এখনই দেখতে যাবে। কিন্তু মিত্রা তো নিজেই কোন খবর জানে না কিংশুকের, মেয়ে কে কি বলবে। খুব টেনশন হচ্ছে সত্যিই কিছু হলো না তো ওর, কিছু তো একটা হয়েছেই নইলে হঠাৎ করেই কিংশুকের এমন বদলে যাওয়া, অদ্ভুত আচরণ করা, ডিভোর্স দেওয়া, এর পরেই উধাও হয়ে যাওয়া কিছুতেই হিসেবটা মিলছে না। না আর ভাবতে পারছে মিত্রা মাথাটা কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করছে কপালে আঙুল গুলো চেপে ধরেছে, হঠাৎ করেই মিত্রার ফোনটা বেজে উঠে আননোন নাম্বার থেকে ফোনটা এসেছে। কিংশুকের কোন খবর এলো কিনা সেই ভাবনায় তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে

হ্যালো কে বলছেন, কিংশুকের কোন খোঁজ পেলেন কোথায় আছে ও, ঠিক আছে তো নাকি? ওর খবরটা একটু বলুন - একদমে কথা গুলো বলে যায় মিত্রা।

ম্যাডাম আমি বিজু, স্যারের কি হইসে। আপনেও স্যার রে খোজতাছেন? এইখানে একটা লোক আইসে সে আপনের লগে কথা কইবার চায়, তার কাছে নাকি স্যারের খবর আছে। আপনে তাড়াতাড়ি আহেন - বিজুর কাছে কিংশুকের খবর নিয়ে কে আসলো? মিত্রা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এত জন কে জিজ্ঞেস করলো কেউ কোন খবর দিতে পারলো না তাহলে এর কাছে কিংশুকের খবর কোথা থেকে এলো আর বিজুকেই জানাতে গেল কেন।

আমি এখনি আসছি, উনাকে বসতে বলো - ফোনটা কেটেই মিত্রা দৌড়ে বেড়িয়ে গেল অফিস থেকে।

রাস্তায় জ্যামের কারণে মিত্রা পৌঁছাতে একটু দেরি হলো, বিজুর কাছে গিয়ে জানতে পারলো ঐ লোকটা চলে গেছে কিন্তু যাবার আগে ঠিকানা দিয়ে গেছে যোগাযোগ করার জন্য। ঠিকানা লেখা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা অ্যাড্রেস দেয়া আছে, মিত্রার এখন ভাবাভাবির কোন সময় নেই। কিংশুকের খবর পাওয়া যাবে শুনেই আগে পিছে কিছুই না ভেবে ঐ ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। ঠিকানা অনুযায়ী একটা বড় বাড়ির কাছে এসে ট্যাক্সি থেকে নামলো মিত্রা, রোড আর বাড়ি নাম্বার মিলিয়ে যে বাড়িটার সামনে দাঁড়ালো সেটার গেটের পাশেই বড় নাম ফলক লাগানে "কে. সি চৌধুরী"। মিত্রা ভেবে পায় না, কে. সি চৌধুরী কিংশুকের খবর কোথা থেকে পেল আর পেলে সেটা তাকে সরাসরি না জানিয়ে বিজুর কাছে গেল কেন। কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে মিত্রার, সবাইকেই কেমন রহস্যময় লাগছে এই কে. সি চৌধুরী নিজ থেকেই ওর কেস টা নিয়েছিল নিজেই সব প্রমান যোগাড় করেছিল এখন আবার কিংশুকের খবর ও পেয়ে গেল কিন্তু ওনার সাথে তো কিংশুকের ব্যাপারে কোন কথাই বলে নি। সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকা মন নিয়েই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই একজন এসে মিত্রা কে অফিস রুমে নিয়ে যায়।

মিত্রা বসে আছে এর মাঝেই একজন এসে ওকে চা বিস্কুট জল এসব দিয়ে গেছে। খানিক বাদেই একজনের পায়ের শব্দে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে কে.সি চৌধুরী আসছে
কিংশুক কোথায়? ওর খবর কোথায় পেলেন? আমি ওকে দেখতে চাই, ও ঠিক আছে তো? - কিংশুক কে এক নজর দেখার জন্য ওর খবর পাওয়ার জন্য উৎসুক মন কে শান্ত করতে মিত্রা এক নাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকে।

আরে থামুন থামুন, এত প্রশ্নের উত্তর একসাথে কি করে দেব, একটা একটা করে শেষ করি। আপনার ডিভোর্স পেপারে সই হয়ে গেছে, সামনের ডেটে কোর্টে গেলেই হয়ে যাবে - মিত্রার দিকে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়। মিত্রা হাতে নিয়ে দেখে কিংশুকের সই দেয়া হয়ে গেছে, মিত্রা চোখ অন্ধকার দেখছে এমন মনে হলো। কিংশুক কে এতদিন ধরে পাগলের মত খুঁজছে আর এখানে ডিভোর্স পেপারে সেই কিংশুকের সই দেখতে হচ্ছে।

আমি এখানে কিংশুকের সাথে দেখা করতে এসেছি, কিংশুক কোথায়? ওর কি হয়েছে। আপনি আমাকে ডিভোর্স কাগজ দেখাচ্ছেন কেন? - কে. সি চৌধুরীর উপর মিত্রার রাগ উঠে যায়, কেউ কেন ওর মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে না কেন। বারবার আশপাশে তাকাচ্ছে হয়তো এখানেই কোথাও কিংশুক দাড়িয়ে আছে হয়তো আড়ালে।

আপনার তো ডিভোর্স দরকার ছিল তাই না, তাহলে সেটা তো পেয়েই গেলেন - কে. সি চৌধুরীর মুখের রঙটা হঠাৎ বদলে গেল।

মানে আপনি কি বলতে চাইছেন - মিত্রার যেন মাথা গরম হয়ে গেছে, ও টেবিলে হাত দিয়ে শব্দ করে কথাটা বলে উঠে। 

কেন আপনার মনে নেই বছর তিনেক আগে আপনি কিংশুক কে ডিভোর্সের কথা বলেছিলেন - চোখ দুটো ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে কে. সি চৌধুরী

 মানে সেটা অনেক আগের কথা, ওটা তো মিটেই গেছে এখন সে কথা আসছে কেন? ঐটার সাথে এখন কিংশুকের না পাওয়ার কি যোগাযোগ - এত আগের ঘটনা কে. সি চৌধুরী জানলো কি করে সেটা মিত্রা কে হতবাক করে দেয়।

আছে যোগাযোগ আছে, আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি লাস্ট কবে আপনি বাসার বাইরে ছিলেন মনে আছে - এমন অদ্ভুত প্রশ্নে মিত্রা অবাক হয়, তবুও মনে করার চেষ্টা করে।

মাস তিনেক হবে, অফিসের একটা সাকসেস পার্টি ছিল সেদিন, সেটাতেই ছিলাম - ভাঙা ভাঙা কন্ঠে মিত্রা জবাব দেয়।

আপনি জানেন সেদিন রাতে আপনার মেয়ে মিলির জ্বর এসেছিল, প্রচন্ড জ্বরে মিলির অবস্থা খুব খারাপ ছিল কিংশুক বারবার আপনাকে ফোন করছিলো কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিল, ঠিক বলছি তো - কে.  সি চৌধুরী এসব জানলো কোথা থেকে সেটাই বুঝতে পারছে না। মিলির জ্বর এসেছিল সেটা সেদিন জানতে না পারলেও দিন চারেক পরে জানতে পেরেছিল।

চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল হয়তো, আর পার্টিতে ছিলাম তাই খেয়াল ছিল না - আমতা আমতা করে উত্তর দেয় মিত্রা।

মিথ্যা বলছেন আপনি, আপনি সেদিন পার্টি থেকে অনেক আগেই বেড়িয়ে গিয়েছিলেন, কিংশুক অফিসের কলিগদের ফোন করে জানতে পারে আপনি সেখানে নেই। কোথায় ছিলেন আপনি সে রাতে - হালকা চিৎকার করে প্রশ্ন করে কে. সি চৌধুরী। মিত্রাও কিছু টা ভড়কে যায় এমন খেপে যেতে দেখে

হ্যাঁ মনে পড়েছে ড্রিংক একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম তাই এক বান্ধবীর বাসায় থেকে গিয়েছিলাম - কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে মিত্রা উত্তর টা দেয়।

ছোট্ট একটা হাসি দেয় কে. সি চৌধুরী, কাকে মিথ্যা বলবেন। আমাকে মিথ্যা বলে কি লাভ আপনার? যে সত্যি টা জানার সে তো সে দিনই জেনে গিয়েছিল আর আজ আপনার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। সেদিন আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে সে একজনের বাড়ি তে চলে গিয়েছিল আন ফরচুনেট। আর সেখানে সে যা দেখার যা শোনার সব দেখে নিয়েছিল, শুনে ফেলেছিল। কিংশুক তো সেদিনই মরে গিয়েছিল, নাকি তোমরা মিলে ওকে মেরে ফেলেছিলে। সত্যি বলতে ও তো আগেও কিছুটা আচ করেছিল সেটা তোমাকে বলেও ছিল কিন্তু তোমরা তোমাদের মতই চলতে লাগলে। শেষ পর্যন্ত এমন এক সত্যের সামনে ওকে দাড় করিয়ে দিলে যে ও আর নিজের মাঝেই থাকতে পারলো না সব দিক থেকে শেষ করে দিলে - গম্ভীর ভাব টা বদলে গিয়ে চৌধুরীর গলায় তখন আক্ষেপের স্বর, এতক্ষণে মিত্রাও বুঝে গিয়েছ কি ঘটেছে এতো দিনে, কেনই বা কিংশুক এমন করে বদলে গেল। সেটার জন্য যে সে নিজেই দ্বায়ী সেটার আর কোন প্রমানের দরকার নেই, সব শেষ হয়ে গিয়েছে নিজের ভুলে সব কিছু হারাতে হয়েছে এখন আর কিছুই গোপন করার নেই।

হ্যাঁ সে রাতে আমি সুজিতের বাড়িতে ছিলাম, ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা বিয়ের অনেক আগে থেকেই কিংশুক সেটা জেনে গিয়েছিল, কিন্তু বিশ্বাস করুন মিলি হবার পর সেই সম্পর্ক টা আর আগের মত ছিল না, আমার তরফ থেকে আমি ধীরে ধীরে সরে এসেছিলাম আর সুজিত কে সেটা জানিয়েছিলাম। সেদিন কি হয়েছিল জানি না অনেক দিন পর পার্টিতে ড্রিংক করে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না, সুজিত একটু জোর করতেই ওর সাথে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে রাতে কি কথা হয়েছিল আমাদের মাঝে কিছুই মনে নেই আমার - মাথা নিচু করে মিত্রা একে একে সব বলতে থাকে, মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিল সেদিন, ওর তো কিছুই মনে পড়ছে না, মনে থাকার কথাও না সেতো নিজের মাঝেই ছিল না।

সে রাতে কিংশুক পাগলের মত তোমার খুঁজ করছিলো, কিন্তু ও বিশ্বাস করতে পারে নি যে তোমাকে সুজিতের বাড়িতেই পাবে। ও তো তোমাকে চয়েজ দিয়েছিল তুমি তোমার মত করে থাকতে পারো হয়তো সুজিতের সাথে কিংবা কিংশুকের সাথে। তুমিই বেছে নিয়েছিলে তুমি কিংশুকের সাথে থাকবে, এর পরেও তোমাকে ও সুজিতের বাড়িতে পেয়ে ভেঙে পড়েছিল। ও চলেই আসতো কিন্তু তোমাদের একটা কথা শুনে ও আর নড়তে পারছিলো না, ওখানে দাড়িয়ে থেকেই ছেলেটা নিজেকেই নিজে শেষ করে  দিয়েছে। যে মিলি কে নিয়ে ও বেঁচে ছিল তোমরা তাকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নিলে - চৌধুরীর কথা শুনতে শুনতে মিত্রার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে, ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সত্যিই কিংশুক ওকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু সে নিজেই তো কিংশুকের কাছে থেকে যেতে চেয়েছিল, ওর মনের কোনে তখন একটু একটু করে ভালোবাসা বাসা বেঁধে ছিলো কিংশুকের প্রতি। মিত্রাই তো চেয়েছিল বাকিটা জীবন কিংশুকের সাথে কিংশুকের হয়ে বাঁচতে।

কি শুনেছিলো ও সেদিন? - কাতর গলায় জিজ্ঞেস করে মিত্রা।

তখন তোমরা মিলি কে নিয়ে কথা বলছিলে, তুমি মিলির আচরণ স্বভাব কিংশুকের মত হয়ে উঠছে অনেকটা সেটা বলছিলে তখন সুজিত বলে উঠে মিলি তো মনে হয় ওর সন্তান তাহলে কি করে কিংশুকের মত হচ্ছে। আর তখন তুমিও সেটাতে সায় দিয়েছিলে যে হতেও পারে মিলি সুজিতেরই সন্তান। এই কথা টা শোনার পর কিংশুক আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি, একটু একটু করে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। তোমার উপর ওর যে বিশ্বাস টা ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে ওর একমাত্র অবলম্বন টাও সেদিন আর ওর ছিল না। আমার সাথে কিংশুকের পরিচয় অনেক আগে থেকে একরাতে রাস্তায় ওকে এলোমেলো ঘুরতে দেখে আমি ওকে নিজের গাড়িতে তুলে নেই তখন ও মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ওকে আগে কখনো মদ খেতে দেখেনি তাই আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ঐ কিংশুক কে দেখে। পরদিন ওর কাছ থেকেই সব শুনে আমিই বলেছি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু ও তখনো তোমার আর মিলির চিন্তা করছিলো, তোমাদের নিয়ে ভাবছিলো। ও তোমাকে ওর জীবন থেকে সরিয়ে না দিয়ে নিজেকেই সরিয়ে নিতে চাইলো। তাইতো তোমাদের চোখে নিজেকে খারাপ দেখানোর জন্য মদ্যপের ভান করে বাড়িতে যাওয়া, অন্য একজনের ছবি ফটোশপ করে তোমার কাছে পাঠানো, তোমাদের এড়িয়ে যেতে শুরু করলো। ও জানতো তোমার মনে একটু হলেও ওর জন্য কিছু একটা আছে আর সেটাই ও ঘৃণাতে বদলে দিতে চাইলো। নিজের প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়েটার কাছ থেকেও নিজেকে দূরে নিয়ে গেল, এই নাও কিংশুক ওর যা কিছু ছিল সব মিলির নামে করে দিয়ে গেছে - কে. সি চৌধুরী একটা উইল এগিয়ে দেয় মিত্রার দিকে, মিত্রা পাথরের মত বসেছিল চেয়ারে, ওর চোখ গুলো স্থির হয়ে গিয়েছে ঠোঁট দুটো ঈষৎ ফাঁক হয়ে আছে, খুবই ধীর গতিতে নিঃশ্বাস চলছে ওর।

আমি জানি না সেদিন কি হয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বারবার চেয়েছি ওদিন রাত্রে বাইরে থাকার কথাটা কিংশুক কে বলে দিতে কিন্তু পারি নি, ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে পেয়ে বসেছিল৷ সেদিন আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না, নইলে আমি কখনই ওর ওখানে যেতাম না। আমার কাছে এখন কিংশুকই সব, সুজিতের সাথে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আমি জানি না এত কিছুর পর ও আমাকে ক্ষমা করবে কি না, সেটা যোগ্য আমি নই হয়তো। আর একটা কথা মিলি কিংশুকরই সন্তান, আমি সত্যি বলছি ও কিংশুকের মেয়ে। আমার আর সুজিতের মাঝে তখন এমন কোন কিছু হয় নি, দরকার হলে ডিএনএ টেষ্ট করে দেখুন মিলি কিংশুকেরই মেয়ে অন্য কারও নয়। প্লিজ বলুন কিংশুক কোথায় আছে আমি একবার ওকে দেখতে চাই, আমি জানি ও আমার এই মুখ কখনই দেখতে চাইবে না তবু ওকে দূর থেকে দেখতে চাই। ও ঠিক আছে সুস্থ আছে দেখলে আমার আর কিচ্ছু লাগবে না, দরকার হলে ওর মেয়েকে ও নিজের কাছে নিয়ে যাক। প্লিজ বলুন না কিংশুক কোথায় আছে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন ও কোথায় আছে, ও কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল কিছু তো বলুন - মিত্রা পাগলের মত চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে কে. সি চৌধুরীর পা ধরে বিলাপ করতে থাকে৷ মিত্রা জানে ও কত বড় ভুল করেছে, সেটার শাস্তি ওকে পেতেই হবে কিন্তু মিলির তো কোন দোষ নেই ঐ মেয়েটা তো শুধু শুধু মিত্রার দোষের সাজা কাটছে।

ও তোমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে চেয়েছিল, আর সেই মতেই সব কিছু সাজিয়ে নিয়েছিল। অফিস থেকে রিজাইন করেছিল, টাকা পয়সা  সম্পত্তি সব মেয়ের নামে করে দিয়ে এখান থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। আমিও জানতাম না ও কোথায় চলে গেছে, পাগলের মত খুঁজেছি ওকে কিন্তু কোথাও পাই নি। হয়তো ভগবান অন্যকিছু লিখে রেখেছিল ওর ভাগ্যে, ও যেই গাড়িতে করে বাইরে যাচ্ছিলো সেটা এক্সিডেন্ট করে আর বেশির ভাগ যাত্রীই মারা গিয়েছে - কথাটা শুনেই মিত্রা কিছুটা পিছনের দিকে সরে যায়, তাহলে কি সত্যিই কিংশুক ওদের ছেড়ে চলে গেছে। যেটা ও সবসময় বলতো একদিন মুক্তি দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে৷ মিত্রার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, যে কিংশুক হয়তো আর নেই।

ওর কিছু হয় নি তাই না, বলুন না প্লিজ বলুন না যে আপনি মিথ্যে বলছেন কিংশুকের কিছু হয়নি, ও আমার সাথে ইচ্ছে করেই এমন করছে তাই না। কোথায় আছে বলুন না একবার, আমি একটু দেখবো ওকে দূর থেকে দেখেই চলে যাবো। আর কিচ্ছু চাই না - মিত্রা পুরো পাগলের মত হয়ে গেছে, কে. সি চৌধুরীর কথা ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। 

ওরও এক্সিডেন্ট হয়েছিল, সাত আট দিন পর্যন্ত কোন জ্ঞান ছিল না। ওর মোবাইল টাও পুলিশ খুঁজে পায় নি তাই কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। জ্ঞান ফেরার পর ও কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে আমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসি তিন দিন আগে। ভগবান হয়তো এটাই চেয়েছিল নয়তো যে মানুষটা ঘর ছেড়ে দূরে অজানায় পালাতে চেয়েছিল তাকেই বা কেন আবার সেখানেই ফিরে আসতে হলো। জানো ওখানে যাবার পর সবার আগে ও তোমাদের কথা জানতে চেয়েছিল, মিলির কথা জানতে চেয়েছিল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম যে সারা শরীরের ব্যান্ডেজ করা আর হাত পা ভাঙার যন্ত্রণার মাঝেও ও মিলির কথা তোমার কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে নি, আর সেই ভালোবাসা টাকে তুমি এমন ভাবে ঠকিয়েছো। কিংশুক আমাকে বলতো একদিন ঠিক তুমি ওকে বুঝতে পারবে কিন্তু সেদিন হয়তো ও তোমার সামনেই থাকবে না। গত কয়েকদিন তোমাকে ফলো করে বুঝতে পেরেছি কিংশুক ভুল কিছু বলে নি, কিন্তু তুমি হয়তো দেরি করে ফেলেছো। কিংশুক তোমাকে ভালবাসো ও হয়তো তোমাকে ক্ষমা করেও দিতে পারে কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না - চুপ করে চৌধুরীর কথা গুলো শুনছিলো মিত্রা, ও জানে সত্যিই অনেক দেরি করে ফেলেছে। প্রতিবারই ওর দেরি হয়েছে কিংশুক কে বুঝতে, ওর ভালবাসা বুঝতে আর নিজের মনের কথা বুঝতেও। কিন্তু এখন মিত্রা জানে সে শুধু কিংশুক কেই ভালোবাসে ওকেই চায় আর কিচ্ছু না। 

মিলি তাহলে ঠিকি ওর বাবাকেই দেখেছিল, ও কি এখানেই আছে আমাকে একটু দেখতে দিবেন ওকে? - হাত জোড় করে অনুরোধ করতে থাকে মিত্রা, ওর মনের ভেতরে তোলপাড় চলছে সেই কখন থেকে।

চৌধুরীর পেছন পেছন মিত্রা অফিস থেকে বেড়িয়ে বারান্দা ধরে হাটতে থাকতে, একটা ঘরের সামনে এসে আঙুল দিয়ে ইশারা করে ওকে। ভেতরের দিকে তাকিয়ে দেখে কিংশুক বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর সামনে বসে থাকা মিলি কিছু একটা বলে বাবাকে শাসাচ্ছে আর তার সাথে ওকে মুখে তুলে কিছু খাইয়ে দিচ্ছে। মিত্রা অবাক চোখে চৌধুরীর দিকে তাকাতেই জানায় কিংশুকের ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই স্কুল থেকে নিয়ে এসেছে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে মিত্রা দু চোখ ভরে দেখছে মিলি ওর বাবার কপালের কাটা জায়গায় কোন একটা মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর মেয়ের এমন আদর যত্নে কিংশুক মুচকি হাসছে। মিত্রা নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারছে না, ওর নিজের ভুলের কারণে মিলি আর কিংশুক কে এতদিন কষ্ট পেতে হয়েছে। এই মূহুর্ত টা দেখে একটু হলেও মিত্রার মনটা শান্ত হয় আনন্দ ভরে উঠে, কতদিন পর আবার বাবা মেয়ে দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছে। হঠাৎই মিত্রার নিজের উপর ঘৃনা জেগে উঠতে থাকে, একবার ইচ্ছে ছিল কিংশুকের সামনে যাবার কিন্তু কোন মুখে যাবে সেই সুযোগ তো নিজেই শেষ করে দিয়েছে। চোখ মুছে মিত্রা সেখান থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ায় তখনি পেছন থেকে কিংশুক ডেকে উঠে

কি ব্যাপার আমার সাথে দেখা না করে কথা না বলেই চলে যাবে - কিংশুকের আওয়াজ টা যেন মিত্রার বুকে এসে বিঁধেছে, ওর সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভেঙে গেছে মনের সব ভয় কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। আজ আর নিজের মনে কিছু লুকিয়ে রাখবে না যা বলার সব বলে দিবে ওর সামনে, এক দৌড়ে ও রুমের ভিতরে ঢুকেই কিংশুককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। উত্তেজনার বশে মিত্রার খেয়াল ছিল না যে কিংশুকের হাতে ব্যান্ডেজ করা, ও জড়িয়ে ধরতেই ব্যাথায় কিংশুকের মুখ দিয়ে গুঙিয়ে উঠার আওয়াজ শুনেই দূরে সরে যায়। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে আবার কাছে এসে ওর হাত ধরে কাঁদতে থাকে।

আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য না, আর তোমার কাছে সেটা চাইবার মত মুখ আমার নেই। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব, তবুও তোমার থেকে দূরে রেখো না আমাকে। আমি তোমাকে ভালবাসি তোমাকেই ভালো বাসি, জানি অনেক দেরি করে ফেলেছি অনেক ভুল করেছি আমি সেগুলোর হয়তো কেন ক্ষমা নেই। আমি না হয় নিজেই নিজেকে বুঝতে পারি নি কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে আমার চেয়ে ভালো করে জানো চেনো, আমি কোনটা সত্যি বলছি আর কোনটা মিথ্যে সেটাও তোমার অজানা না। তোমাকে অনেকবার বলতে চেয়েও কিছুই বলতে পারি নি ভেবেছি তুমি ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে চলে যাবে, এখন দেখো সেই আমার ভুলেই তোমাকে আমার থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর শুনো ও তোমার মেয়ে আরও কারো নয় ও শুধু তোমরই মেয়ে তোমার ছিল তোমারই থাকবে, আমি হয়তো পাপী কিন্তু ওকে কোন পাপ স্পর্শ করে নি তুমি বিশ্বাস করো মিলি তোমার মেয়ে। মেয়েটা তোমাকে ছাড়া এতদিন খুব কষ্টে কাটিয়েছে ওকে তুমি তোমার থেকে দূর করে দিও না প্লিজ৷ আমি এই ডিভোর্স চাই না, তুমি শুধু তোমার কাছে একটু থাকতে দাও আমাকে আর কিচ্ছু চাই না, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না কিংশুক আমি তোমাকেই ভালো বাসি শুধু তোমাকে - মিত্রা অঝোরে কেঁদে চলেছে, আর দুই হাতে কিংশুকের হাত টা চেপে ধরে ধরে আছে। মায়ের এমন অবস্থা দেখে মিলি ভড়কে গিয়েছে ও একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে একবার বাবার দিতে তাকাচ্ছে। মা কি সব বলছে সেগুলো ওর বুঝ শক্তির বাইরে, তবে এটুকু বুঝতে পারছে মা কোথাও চলে যাবার কথা বলছে হয়তো।

বাবা মায়ের কি হয়েছে, মা কি দূরে কোথায় চলে যাবে আমাদের থেকে। আমাদের সাথে থাকবে না? জানো বাবা এই কয়েকদিন তো তুমি ছিলে না তখন আমি মায়ের কাছে ঘুমিয়েছি এখন তো মাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে ন।  তোমাকে ছাড়া আমার যেমন কষ্ট হয় তেমন মাকে ছাড়াও আমার কষ্ট হয় - আহ্লাদী কন্ঠে মিলির কথা শুনে কিংশুক ভেজা চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।

না মা, তোমার মা কোথাও যাবে না। তাহলে যে আমার মিলি মা কষ্ট পাবে, তোমার মা তো আমাদের সাথেই থাকবে তুমি খুশি তো মা? আর তোমার মা তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই না - বাবার উত্তর শুনে খুশিতে মিলি হাততালি দিতে থাকে। কিংশুকের কথা শুনে মিত্রা মাথা উঁচিয়ে কিংশুকের দিকে তাকায়, সত্যিই কি কিংশুক ওকে রাখবে ওর কাছে। ও কি ঠিক শুনেছে তো।

তুমি সত্যি বলছো তো, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়েছো। আমরা একসাথেই থাকবো? আমি আর কখনো তোমাকে কোথায় যেতে দেব না, এমন ভুল আর কখনো করবো না তোমাকে কথা দিলাম। কিন্তু ঐ ডিভোর্স পেপারে যে সাইন হয়ে গেছে, তাহলে? - উৎসুক হয়ে উঠে মিত্রার মন।

ওটা আমি দেখে নিবো, কোন সমস্যা হবে না। তাহলে কিংশুক তুই জিতে গেলি, তুই বলেছিলি আমার লাস্ট কেস টা আমি হেরে যাবো। আমি তো ভেবেছিলাম বাকি গুলোর মত ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট হিসেবে এই লাস্ট কেস টাও আমি জিতে যাবো। কিন্তু আমি হেরে গেলাম, তুই তো জিতে গেলি তোর বিশ্বাস তোর ভালোবাসা জিতে গেল - এতক্ষণ একটু দূরে দাড়িয়ে থাকলেও এখন কে. সি চৌধুরী একটু এগিয়ে এসে কথা বলতে বলতে ডিভোর্স পেপার টা ছিড়ে ফেলে। মিত্রা এতোক্ষণ হাটু গেঁড়ে বসা ছিল এখন উঠে কিংশুকের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে মিলিকে কাছে টেনে ওর মাথায় চুমু খায়।

Like Reply


Messages In This Thread
RE: দ্যা লাস্ট কেস (ছোট গল্প) - by nextpage - 17-08-2022, 08:54 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)