Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
(05-07-2022, 08:12 PM)kumdev Wrote: পঞ্চম অধ্যায়


খাওয়া দাওয়ার পর বারান্দায় গিয়ে বসলেন সুমনা।চারকাঠা জমির উপর দু-খানা ঘর একপাশে রান্না ঘর বাথরুম।বাথরুমের পাশে কুয়ো।বাড়ীর সামনে হাত কয়েক জমি তারপর কঞ্চির বেড়া দিয়ে ঘেরা।বরদা মাস্টারের ইচ্ছে ছিল সামনে ফুলের গাছ লাগাবেন সময়াভাবে হয়ে ওঠেনি।বারান্দায় বসে রাস্তার লোকজনের চলাচল দেখা যায়।মনু পরীক্ষা দিতে গেছে,আজই মনে হয় শেষ পরীক্ষা।কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে কেজানে মুখ ফুটে বলেও না কিছু।ওর লেখাপাড়াটা যেন বন্ধ না হয়।সেদিন রাত্রের কথাটা মনে পড়ল।হঠাৎ কেন একথা বলল,খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন সুমনা।এদেশে আসার পর থেকে দিন দিন মানুষটা কেমন হয়ে গেছে।এত বছর হয়ে গেল মাহিদিয়ার ছবিটা মন থেকে সরেনি।বরাবরই গম্ভীর কিন্তু উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব ছিল না।কারো নিন্দা ওর মুখে শোনেন নি।সুবীটা একরকম বাড়ী থেকে তাড়িয়েই দিয়েছিল তবু কোনদিন সুবী সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য শোনেন নি।একটা কথা প্রায়ই বলতো,সুমন ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে। হঠাৎ গিরিবালাকে দেখে উঠে ঘরে যেতে গিয়ে চোখাচুখি হতে হাসল গিরিবালা।এর পর চলে যাওয়া অভদ্রতা সুমনা বসে পড়লেন।গিরিবালার মুখ খুব আলগা সেজন্য ওকে এড়িয়ে চলতে চান।সারা পাড়ার খবর ওর হাতের তালুতে।সুমনা পরচর্চা পছন্দ করেন না।মনে হল গিরিবালা এদিকেই আসছে।যা কিছু ঘটে সব পছন্দের না হলেও ঘটনা ঘটে যায়।সুমনা হাসি হাসি মুখে করে বারান্দায় বসে থাকেন।গিরিবালা আসতে একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বললেন,তোমার কাজ শেষ হল?
 কাজের কি শেষ আছে।বাড়ীতে কেউ নাই ব্যাটা কোথায়?
 পরীক্ষা দিতে গেছে।কত বাড়ী কাজ করো?
 আগে চার বাড়ী করতাম,ব্যানার্জীদের কাজ ছেড়ে দিয়েছি।এখন তিন বাড়ী করি।
 ছেড়ে দিলে কেন?
 ব্যানার্জীবাবু মানুষটা ভাল না।খালি রান্না ঘরে আসে।সিগারেট ধরাবি দেশলাই নাই?
 সুমনা প্রসঙ্গটা এড়াতে বললেন,বাড়ী গিয়ে আবার রান্না করবে?
 তাতো করতে হবে।জানেন বৌদি রূপ হচ্ছে মেয়েদের শ্ত্রু--।
সুমনার বিষম খাবার জোগাড়।কত আর বয়স হবে চল্লিশ-বিয়াল্লিশ।শেলেটের মতো মাজা রঙ পেটানো শরীর।অল্প বয়সে স্বামী মারা গেছে।ভ্যান চালাতো।সুমনা বললেন,তোমার স্বামি মারা গেল কিভাবে?
 মরবে তা জানতাম।নেশা করতো পাতা খেত মানা করলি শোনবে না।একদিন রাতের বেলা নেশা করে ফিরছে, ভ্যানের সঙ্গে গাড়ীর ধাক্কা।একেবারে স্পত ডেট।
কেমন নির্বিকার ভাবে কথাগুল বলল,যেন অন্য কারো ঘটনার কথা বলছে।সুমনা জিজ্ঞেস করলেন, একা একা খারাপ লাগে না?
 খারাপ লাগবে না, বোউদিকে সব কথা বলা যাবে না।খারাপ তো লাগেই সেই জন্য--- আর কিছু আয়ও হয়।পালবাড়ীর কাজ শেষে বেরোবার সময় পালবাবু বলল,তোমার বৌদি সন্ধ্যেবেলা বাপের বাড়ী যাবে।তুমি একবার এসো।ঘরে বউ থাকতে কাজের লোকের সঙ্গে কেন করে বুঝতে পারে না।
সুমনা দেখলেন গিরিবালা ওঠার কোনো লক্ষন নেই,কি কথায় কি এসে পড়ে বললেন,তুমি বাড়ী যাবে না?তোমার তো আবার রান্না করতে হবে।
  হ্যা বৌদি আসি।যদি কোনো দরকার হয় বলবেন।  
কেষ্টর চায়ের দোকানে আড্ডা চলছেই।কার্তিক বাইরে একজনের সঙ্গে কথা বলছে।গোবিন্দ আজও ভুলতে পারেনি সেদিনের অপমানের কথা।শালা বাঙালটা বড় বাড় বেড়েছে।লেখাপড়া ছেড়ে গোবিন্দ এখন কার্তিকের দলে ভীড়েছে।লোকটির সঙ্গে কথা শেষ করে কার্তিক দোকানে ঢুকে বলল,কিরে গোবে বাড়ী যাবি না?
 তুমি তো ওই ব্যাপারটা কিছু করলে না।
গিরিবালার সামনে বেইজ্জতি গোবেটা ভুলতে পারছে না কার্তিক বুঝতে পারে।গোবিন্দ বলল,কেতোদা তোমায় কিছু করতে হবে না তুমি শুধু সামনে দাঁড়াবে বোকাচোদাকে আমি একলাই টাইট করে দেবো।
 খালি খালি মুখ খারাপ করবি নাতো।কার্তিক পাশে বসতে বসতে বলল।
 তোরা শুনেছি একসঙ্গে পড়তি--।শিবেন বলল।
 শিবুদা তুমি বুঝবে না তোমার সঙ্গে হলে বুঝতে।
 তুই তো আগে গিরিবালাকে গাল দিয়েছিস।
 তাতে ওর কি,গিরিদি কি ওর মাগ? 
 শোন গোবে মাথা গরম করিস না।বাঙালরা হেভি গোয়ার হয় ওর বাবাকে এলাকার মানুষ খুব সম্মান করে--।
 থাক আমি শুনতে চাই না।
কার্তিক বুঝতে পারে ওকে বোঝালে বুঝবে না।গিরিবালার সামনে অপমান ভুলতে পারছে না।কার্তিক বলল,একটা ঘটনার কথা বলছি শোন।তখনও স্বাধীন হয়নি বাংলা দেশ বর্ডারে বাঙালী পুলিশ।একটা চালান দিয়ে ফিরছি দেখি একটা ছেলেকে ধরেছে একজন সিপাই।ছেলেটা এদেশে আসছিল।আমাকে দেখে সিপাইটা বলল,কিরে কেতো চালান হয়ে গেল?আমি কাছে এগিয়ে গেলাম।ছেলেটা বলছে টাকা তো দিয়েছি।
 টাকা চাইছি না ঘড়ীটা খুলতে বলছি।
 কেন ঘড়ি খুলবো কেন?
আমি বুঝতে পারলাম শালা ঘড়ির দিকে নজর পড়েছে বললাম,খুলে দিন ভাই ঝামেলা করে কি লাভ?
সিপাইটা ওর হাত চেপে ঘড়ি খুলতে গেল।কি বলব শালা কাধে রাইফেল পুলিশ ছেলেটা সিপাইয়ের তলপেটের নীচে সপাটে এক লাথি।সিপায় বিচি চেপে বসে পড়ল।ছেলেটা ছুট সিপাই বলল,এই কেতো পাকড়ো কেফেরের বাচ্চাকে।মন রাখতে আমিও ছেলেটাকে তাড়া করলাম।সিপাই ততক্ষনে সামলে নিয়ে পিছন পিছন আসছে।আরও কিছু সিপাই চলে এসেছে।ছেলেটা হরিণের মত ছুটছে।সিপাই গুলি চালালো।
 ছেলেটাকে গুলি করলো?গোবিন্দ জিজ্ঞেস করে।
 আনাড়ি শালা গুলি লাগলো আমার পা-এ।
 সেকি তারপর?
 তারপর আর কি সিপাইরা এসে ধরাধরি করে আমাকে পৌছে দিল।
 সেই ছেলেটা?
 কে জানে কোথায় পালালো।
 ভাগ্যিস তোমার পিঠে গুলি লাগেনি।
 ছেলেটার হিম্মত আছে।
   পরীক্ষার পর বাড়ী ফিরছে সুখ রঞ্জন।আজ শেষ দিন তাই বেশ হাল্কা লাগছে।মনে মনে হিসব করে সবে কলেজ ফাইন্যাল হল আরো অন্তত বছর সাতেক লাগবে এম.এ পাস করতে।অধ্যাপনার চাকরি করতে এম.এ করতেই হবে।কতদিনের স্বপ্ন সে অধ্যাপক হবে।
পিছন থেকে এক ভদলোক এসে জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা ভাই কার্তিকবাবুকে কোথায় পাওয়া যাবে?
চোখ তুলে দেখল বছর পয়ত্রিশ বয়স হবে সুখরঞ্জন জিজ্ঞেস করল,ল্যাংচা কার্তিক?
লোকটি থতমত কিছুটা অপ্রস্তুত ফ্যাকাশে হাসল।সুখ রঞ্জন বলে,কি করে লোকটি?
--কি করে মানে--।
--লোক চালান করে?জিজ্ঞেস করল সুখ রঞ্জন।
--ওই আর কি।
--সোজা গিয়ে বা-দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করবেন,কেষ্টর চায়ের দোকান।ঐখানেই ওর আড্ডা।
লোকটি ধন্যবাদ বলে দ্রুত হাটতে থাকে।
ভদ্রলোক মনে হয় বাংলাদেশে যাবার জন্য ল্যংচা কার্তিককে খুজছে।পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে গোবেটা এখন ওদের সঙ্গে ওঠা বসা।গোবের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।বাবা অবশ্য ওকে পছন্দ করেনা।
 পরীক্ষা কেমন হল?
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ডাক্তারবাবুর মেয়ে,হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে।মনে হয় পরীক্ষা দিয়ে ফিরছে।
 কি হল চিনতে পারছো না?
 আপনি ডাক্তারবাবুর মেয়ে।
মেয়েটি খিল খিল হেসে বলল,আমি তোমার খুড়ী না জেঠি?আপনি আপনি করছ।
 না মানে একজন অচেনা মেয়ে--।
 এই যে  বললে ডাক্তারবাবুর মেয়ে?
 না মানে আলাপ নেই--।
 কি মানে মানে করছো।আলাপ করলেই আলাপ হয়। পাস করার পর আমরা হয়তো একই কলেজে পড়বো।পরীক্ষা কেমন হল বললে নাতো?
 মোটামুটি।আপনার মানে তোমার কেমন হয়েছে?
 ভালই।দেখা যাক রেজাল্ট বেরোলে বোঝা যাবে।তোমার নাম সুখদা রঞ্জন না? আমার নাম জানো তো--পাঞ্চালি মিত্র।
 হ্যা গোবের কাছে শুনেছি।
 গোবে মানে মল্লিকদের বাদর ছেলেটা?ও তোমার বন্ধু? পাঞ্চালির চোখে ভর্ৎসনা।
 বন্ধু মানে এক সময় আমার সঙ্গে পড়তো।
 খবরদার বলছি ওর সঙ্গে মিশবে না।
 কিরে বাড়ী যাবি না?
 বেলা কখন এসে দাড়িয়েছে পাঞ্চালি খেয়াল করেনি।বেলার চোখে ইঙ্গিতবহ হাসি।পাঞ্চালি বলল,হ্যা যাবো।তারপর সুখর দিকে তাকিয়ে বলল,আসি।পরে কথা হবে।
পাঞ্চালিকে আগে চিনতো কিন্তু কোনোদিন কথা হয়নি।আজ হঠাৎ যেচে কেন কথা বলল।বড়লোকের খেয়াল।অঞ্চলের নামজাদা ডাক্তার ওর বাবা।
বেলা জিজ্ঞেস করে,কি কথা হচ্ছিল?
 এমনি কিছু না জিজ্ঞেস করল,পরীক্ষা কেমন হয়েছে?বললাম ভালো।আজকের পরীক্ষা ভাল হলেও অঙ্কটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
 তোর সঙ্গে আগে আলাপ ছিল?
 তুই চিনিস না ও মাস্টার মশায়ের ছেলে।
 চিনবো না কেন।  বিআরবিকে অঞ্চলের কে না চেনে।
 আচ্ছা বেলা তুই কি অন্য কিছু ভাবছিস?
 মিথ্যে রাগ করছিস আমি কি কিছু বলেছি?

দারুণ লেখা।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by AnantoSamaddar - 17-08-2022, 02:14 AM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)