Thread Rating:
  • 55 Vote(s) - 2.78 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery নিখোঁজপুরের পতিতাপুত্র - আকাশ রায় (স্থগিত)
#80
পতিতা পুত্র

শ্রী আ কা শ রা য়

অধ্যায়ঃ ২ । পর্ব্বঃ ১

ইকলেজ যাওয়ার পথে 'চাটুজ্যেদের আমবাগান' পড়ে। মহাকালের কোন লগ্নে এই জায়গাটা আমবাগান ছিল তা ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেও বোধহয় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না! স্থবির সময়ের ধীর চলন মহারথীদেরও মুছে দেয়, নিখোঁজপুরের সামান্য আমবাগানের সাধ্য কী তার মোকাবিলা করার! অতঃপর, না রইল বাগান আর না পাওয়া গেল তাতে কোন আম কিন্তু নামখানা রয়ে গেল। আজও গাঁয়ের বুড়ো লোকেদের মুখে শোনা যায়, চাটুজ্যেদের আমবাগানের ল্যাংড়া আমের যা 'স্বোয়াদ' ছিল সে স্বাদ পেয়ে বড়লাট কর্নওয়ালিশ নিখোঁজপুরে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (যেটাকে দাঁত বেঁকিয়ে হারু ঘোষাল বলেন, "দ্য ডক্টরিন অব্ ল্যাপ্স্!") করতে গিয়েও করেননি! সুলতান ইলিয়াস শাহ নিখোঁজপুরের দশ বছরের খাজনা মাফ করে দিয়েছিলেন আর গৌড়ের লক্ষণাবতীতে যে নিত্য সে আমের আনাগোনা ছিল সেকথা তো পাঁচ বছরের শিশুও জানে। হাবুল খুড়ো একবার বলেছিলেন বটে, "তোরা আজকালকার ছেলে-ছোঁড়াগুলো 'দু-ছত্তর ইঞ্জিরি' পড়েছিস কি পড়িস নি অমনি নিজেদের সাহেবসুবো ভাবতে শুরু করে দিয়েছিস! বলি ইতিহাস তো পড়িস নি বাপ! পড়লে জানতিস, বখতিয়ার খলজী ১২০২  সালে যখন আরব বণিকের ছদ্মবেশে নদীয়া আক্রমণ করল, তখন সেটা লক্ষণ সেন বুঝলো কী করে, তা জানিস? বণিকবেশে খলজী একটাই ভুল করেছিল, খরচা বাঁচাতে চাটুজ্যেদের ওই ল্যাংড়া আম উপঢৌকন পাঠাল আর তাতেই চিত্তির! মুখে দেওয়া মাত্রই লক্ষণ সেন বুঝলো এ ব্যাটা তো আরব বণিক নহে, কারণ এ আম তো নিখোঁজপুরের। আরি বাবা, নিখোঁজপুরের ল্যাংড়া আম ভূবন বিখ্যাত। কারণ, সমস্ত ল্যাংড়া আম মিষ্টি হয়। কিন্তু চাটুজ্যেদের ল্যাংড়া শুধু টক বললে ভুল হয়, সেটা ছিল ভয়াবহ রকমের টক! কর্নওয়ালিশ যখন এসেছিল ওর ছিল একটা পোষা বিলিতি কুকুর, ওটাকে এক টুকরো খাইয়ে দিয়েছিল ব্যস, কথিত আছে, সেই কুকুর ঘেঁউ করে এমন লাফ দিয়েছিল যে এক্কেবারে কালাপানি পার করে সোজা ব্যারণ দ্বীপের আগ্নেয়গিরিতে ঝাঁপ দিয়েছিল। মোগল বাদশা আকবর কী বলেছিল জানিস, বলেছিল 'আমি হিমুকে পানিপথে হারিয়েছি, এমনকী ওই শিশোদিয়া বংশের রানা আর তার ঘোড়া চেতককে নিয়েও আমার চিন্তা নেই কিন্তু যদ্দিন চাটুজ্যেদের আমবাগান নিখোঁজপুরে থাকবে ততদিন নিখোঁজপুর কেউ দখলে আনতে পারবে না'!" ধূতির খুঁট দিয়ে চোখের কোণ মুছতে মুছতে হাবুল খুড়ো ধরা গলায় বলেছিল, "আজ দেখ দেশ স্বাধীন হল, কিন্তু চাটুজ্যেদের আমবাগান আর নেই নিখোঁজপুরে! তাই তো, জাতির বড় দুর্দিন! হাঁ তো যেটা বলছিলাম খলজীর ওই ছোট্ট ভুলের কারণেই খলজী গালে হাত দিয়ে বসে রইল আর ওই ফাঁকে লক্ষণ সেন হাওয়া হয়ে গেল!" সত্যি বলতে, চাটুজ্যেদের বিখ্যাত টক ল্যাংড়া আমের এমন মাহাত্ম্য, সে আম আমরা কেউই আর খেতে পেলাম না এই দুঃখ আজও নিখোঁজপুরের আনাচে-কানাচে গুমরে গুমরে ঘুরে বেড়ায়। এহেন, সেকালের আমবাগান তথা আজকের খাঁ খাঁ করতে থাকা দিকদিগন্তবিহীন ন্যাড়া মাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ইকলেজ পৌঁছতে পৌঁছতে রোদে-গরমে ঘেমে-নেয়ে নাজেহাল হয়ে যাই! শীতের কালে উত্তুরে কনকনে হাওয়া হাড় অব্দি কাঁপিয়ে দেয়! লোকে বলে, ইকলেজে 'মুস্কিল'! কিন্তু আমাদের তো ইকলেজ যেতেই মুশকিল!

ফার্স্ট পিরিয়ডে সুধর্মবাবু পড়াচ্ছিলেন জীবনবিজ্ঞান। "জীবন সম্পর্কিত যে বিজ্ঞান তাহাই জীবন বিজ্ঞান, আর জীবন যদি থাকে তাহলে খেতে হবে, কারণ না খেলে জীবন থাকবে না একথা তো দুধের শিশুও জানে! আর জীবন যদি নাই থাকল তাহলে বিজ্ঞানচর্চা হবে কী করে শুনি! মরা মানুষের শরীর কাঁটাছেঁড়া করে বিজ্ঞানচর্চা করা হয় সত্যি কিন্তু তা বলে মরা মানুষ নিজে তো আর বিজ্ঞান চর্চা করতে পারবে না! তাই বিজ্ঞান চর্চা করতে গেলে বেঁচে থাকতে হবে, আর বাঁচতে গেলে খেতে হবে! আর খেলেই শরীরে আসবে পুষ্টি। আমাদের আজকের পড়া ওই পুষ্টি অধ্যায় নিয়ে; ইংরাজীতে যাকে বলে নিউট্রিশন! সবাই বই খোল!" রঘু আমার পাশে বসে ছিল, ফিসফিসিয়ে বলল, "সুধর্মবাবু বিজ্ঞান পড়ান, জীবনবাবু করান অঙ্ক, সনাতনবাবু পড়ান আধুনিক যুগ আর গণিতেশ্বর সামন্ত বাংলা পড়ান! মাইরি, আমাদের ইকলেজের নাম অভূতপূর্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয় করে দিলেই তো পারে নইলে চিড়িয়াখানা নামও রাখতে পারে!" আমি বই খুলতে খুলতে বললাম, "চুপ কর! তোর চক্করে দু'বার গার্জেন কল হয়েছে আমার, সুধর্ম মাস্টার পিঠের ছালচামড়া তুলে দেবে ওর ক্লাসে গল্প করছি দেখলে!" কে জানত, সুধর্মবাবুর চোখ আমার ওপর ওই মুহূর্তেই পড়বে! "আকাশ উঠে দাঁড়া!" আমি আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলাম, "আমার কোন দোষ নেই স্যার…" শেষ করার আগেই সুধর্মবাবু হাত দেখালেন। "সবাই মন দিয়ে শোন, ধর আকাশের মায়ের কাছে দুটো বড় ডাব আছে!" আমি বাধা দিয়ে বললাম, "মোটেও না স্যার। আমার মায়ের কাছে কোন ডাব নেই, কস্মিনকালেও আমাদের বাড়িতে কোন নারকেল গাছ নেই, ডাব আসবে কোত্থেকে! তাছাড়া, সামনে কোন পুজোপার্বণও নেই তো ডাব কেনাও হয়নি!" সুধর্মবাবু কথাটা শুনে একটু চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, "ঝুনো নারকেল, ফের যদি পড়ানোর সময় আবোল তাবোল বকেছিস এই মোটা ডাণ্ডা দিয়ে তোর পাছা লাল করে দেব!" রঘু ঘাড় বেঁকিয়ে আমার পেছনের দিকে এক নজর তাকিয়ে মিচকে হাসি হেসে ফের ফিসফিসিয়ে বলল, "তোর পাছা বড়, আর স্যারের ডাণ্ডা ছোট! লাল করতে বেশ সময় লাগবে! তুই চাপ নিস না!" ইচ্ছে করছিল, ওই ডাব দিয়ে রঘুর মাথা ফাটিয়ে দিই কিন্তু সুধর্মবাবুর ভয়ে চুপ করে রইলাম। সুধর্মবাবু বলতে থাকলেন, "হ্যাঁ তো, যেটা বলছিলাম, ধর আকাশের মায়ের কাছে দুটো বড় ডাব আছে আর আমার কাছে রয়েছে একটা বড় মর্তমান কলা! এখন, যদি আমি আকাশের মাকে আমার কলা'টা দিই আর তার বিনিময়ে ওনার ডাবদুটো খাই তাহলে, আমি পেলাম ডাবের মধ্যে থাকা সুস্বাদু পুষ্টি আর আকাশের মা পেল কলার মধ্যে থাকা ইয়ে তোর কী বলে যেন, হ্যাঁ, আয়রন। এই আয়রন নারী শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। তোমাদের মেয়েদের অনেককেই আয়রন ট্যাবলেট খেতে হয়, তাই তোমরা সবাই তার গুরুত্ব জানো। এই যে, পারস্পরিক নির্ভরতা, আমি তোমার এক চাহিদা পূরণ করছি, তুমি আমার অন্য চাহিদা পূরণ করছ, যার কাছে যেটা নেই কিন্তু, সেটার দরকার রয়েছে, অন্যজন সেটা পুষিয়ে দিচ্ছে। জীবজগতের মধ্যে  পুষ্টির এই নির্ভরতার সম্পর্কই হল সিম্বায়োসীস রিলেশনশিপ বা মিথস্ক্রিয়াজনিত সম্পর্ক!" এমন সময় ঢং করে ঘণ্টা পড়ল! ক্লাস শেষ। সুধর্মবাবু "সবাই হোমওয়ার্ক করে আনবি, প্যারাসাইটিক রিলেশনশিপ, সিম্বায়োটিক রিলেশনশিপ, উপচিতি বিপাক, অপচিতি বিপাক সব করে আনবি উদাহরণ সহ" বলতে বলতে নিজের ঠাণ্ডা হওয়া ডাণ্ডা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রঘু বইটা ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, "সুধর্মবাবু কথাটা মিথ্যে বলেনি, তোর মায়ের ডাব দুটো মাইরি সত্যিই খুব বড়!" আমি ওর দিকে রোষকষায়িত নেত্রে চেয়ে রইলাম!



(এই অধ্যায়ের প্রথম পর্ব এখানেই সমাপ্ত। ইচ্ছে ছিল, পুরোটা শেষ করে আপডেট দেওয়ার। কিন্তু, পাঠককূল যে হারে অধীরতা জ্ঞাপন করছি তার ফলে আর দেরী করার সাহস হল না। প্রতিবারের মতো, এবারেও গল্পের আগামী পর্বগুলোতে কী চান সে বিষয়ে নিজেদের মতামত নিঃসঙ্কোচে দিন। এই পর্ব, {এটা এই অধ্যায়ের প্রথম পর্ব} সম্পর্কেও নিজের অভিমত প্রকাশ করুন। আর একটা কথা না বলে পারছি না, যাঁরা নিয়মিত এক দিন অন্তর একদিন আপডেট চাইছেন তাঁদের আগেও বলেছি, এবারেও বলছি সেটা সম্ভব না। কলেজের পড়া এক্সাম টিউশন বহু কিছুর চাপ আছে। তাই চাইলেও, নতুন পর্ব দ্রুত নিয়ে আসা কার্য্যতঃ অসম্ভব। তবুও, যতটা পারা যায় চেষ্টা করব। আশা করি, আপনাদের পাশে পাব। দ্রুত আপডেট দেওয়ার চক্করে এই পর্বের আপডেটে সেভাবে প্রুফ রিড করার সময় পাইনি তাই কিছু টাইপো (টাইপিং মিসটেক বা মুদ্রণ প্রমাদ) থাকতে পারে তার জন্যে অগ্রিম মার্জনা চাইছি। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর পড়তে থাকুন "নিখোঁজপুরের পতিতা পুত্র!")
[+] 2 users Like Akash23's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পতিতা পুত্র (কাকোল্ড ছেলে সম্পর্কিত দীর্ঘ উপন্যাস) - by Akash23 - 12-08-2022, 12:45 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)