06-08-2022, 05:15 PM
৪২
ট্রান্স-ইয়ুরোপীয়ান হাইওয়ে - ই-৮০ (১)
গা মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে আসতে না আসতেই দরজায় নক শুনি… বুঝতে পারি একেবারে ঠিক সময় বেরিয়ে এসেছিলাম বাথরুম থেকে… প্যান্ট গলিয়ে দরজা খুলে দিতে দেখি রতন বাবু দাঁড়িয়ে… আমার মুখের দিকে তাকাবার কোন প্রয়োজন বোধ করে না… হাতের ট্রেতে সাজানো দুটো কফির পেয়ালা নিয়ে ঘরে ঢুকে আসে… সোজা এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে… টেবিলের উপরে কফির পেয়ালাদুটি নামিয়ে দিয়ে আমার দিকে ব্যালেন্সটা পকেট থেকে বের করে বাড়িয়ে দেয়… আমি মৃদু হেসে বলি, “থাক… ওটা তোর কাছেই রেখে দে…”
আমার কথার আর কোন জবাব না দিয়ে ব্যালেন্স টাকাটাকে ফের পকেটস্থ করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, কোন দিকে একবারের জন্যও না দৃষ্টি নিক্ষেপ করে… আমিও দরজা লক করে দিয়ে ফিরে আসি বিছানায়… টান টান হয়ে শুয়ে অপেক্ষা করি পর্ণার বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসার…
বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয় না… একটু পরেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসা পর্ণা… ভরাট শরীরটাতে শুধু মাত্র একটা টাওয়েল জড়িয়ে… সে টাওয়েল ওর যুবতী শরীরটাকে যতটা না ঢেকে রাখতে পেরেছে, তার থেকে বেশি লোভনীয় করে তুলেছে আরো… আমি বিছানায় শুয়েই ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি… দেখতে থাকি ওর নধর শরীরটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত…
“ঈসসসস… মশায়ের এখনও দেখার শখ মেটেনি… এত কিছু করার পরেও…” আমার দিকে তাকিয়ে একটা ছদ্ম চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে পর্ণা… একটা স্বভাব অভ্যাসে টাওয়েলের কোনে টান দিয়ে চেষ্টা করে শরীরের ইতিউতি থেকে উঁকি দেওয়া দেহের লোভনীয় সম্পদগুলোকে ঢাকার মিথ্যা প্রয়াশ… আমি ওর ওই চেষ্টা দেখে ফিক করে হেসে ফেলি… “থাক থাক… আর এখন নতুন করে ঢাকতে হবে না… বরং না ঢেকেই বেশি ভালো মানায় তোমায়…”
“হ্যা… পারলে তো তুমি আর তোমার বন্ধু আমায় সব সময়ই ন্যাংটো করে রেখে দাও… যেমন তুমি, তেমনি ও-ও… সুযোগ পেলেই হোলো… আমায় ন্যাংটো দেখার খালি সখ…” ফোঁস করে ওঠে মেকি রাগ দেখি… রাগ দেখায় ঠিকই, কিন্তু চোখে মুখে একটা ভালো লাগা লেগে থাকে ওর…
আমি হাত বাড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাক দিই আমার কাছে… “ও সব খুলে চলে এসো তো দেখি… এখনও বেশ খানিকটা সময় আছে আমাদের হাতে… বরং একটু রেস্ট নিয়ে নাও…”
“রেস্ট নিতে দেবে তো? নাকি আবার শুরু করবে আমায় পেয়ে?” প্রশ্ন করে ওঠে পর্ণা… চোখের তারায় ফের যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে কামনা…
সত্যিই… মেয়ে বটে পর্ণা… রমনের ক্ষিদে যেন সহজে মেটে না ওর… আগেও তো দেখেছি… উফফফ… কতবার যে ও নিতে পারে তার কোন ইয়ত্তা নেই… তাও আমি অভয় দিয়ে বলে উঠি… “না না… চিন্তা নেই… এখুনি কিছু করবো না…”
আমার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে, “তার মানে আরো একবার পরে হবে… তাই তো?”
ওর কথা শেষ হবার আগেই ওর শরীরটা তখন আমার হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে… আমি হাত বাড়িয়ে ওর কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে এক টানে ঘুরিয়ে বিছানার উপরে তুলে নিই… চিৎ করে পেড়ে ফেলি বিছানার উপরে… গায়ের টাওয়েল খসে পড়ে যায় মাটিতে… ওর নগ্ন শরীরের উপরে নিজের দেহের ভার তুলে দিয়ে চেপে ধরে বলি… “তোমায় পেলে যে ছাড়তে ইচ্ছা করে না সোনা… কি করি বলো?”
কয়েক মুহুর্ত আমার চোখে চোখ রেখে তাকায় পর্ণা… তারপর আমার গলাটাকে জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে… “আমি কি বলেছি আমায় ছাড়তে? করো না ইচ্ছা আমায় নিয়ে… এই তো… আমি তো তোমার বুকের মধ্যেই ঢুকে রয়েছি… আমার সবটাই তো তোমায় দিয়ে দিয়েছি…”
আমি ওর ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন এঁকে দিই… দিয়ে বলি… “সেকি আমি জানি না?” তারপর থেমে বলি, “নাহ!... একটু রেস্ট নিয়ে নাও… যাবার আগে আর একবার না হয় আদরে আদরে ভরিয়ে দেবো’খন…”
আমার কথায় মুচকি হাসি হাসে ও… “উমমমম… সেই ভালো… একটু দম নিয়ে নিই… তারপর আবার আমার শরীরটাকে নিয়ে দলাই মলাই করো… কেমন?”
আমি ওকে ছেড়ে ফের চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ও গড়িয়ে উঠে আসে আমার দেহের উপরে… ভারী নরম বুক চেপে বসে আমার শরীরের পাশে… হাতের কুনুইয়ে ভর রেখে নিজের চিবুকটাকে আমার বুকের উপরে রেখে দিয়ে বলে ওঠে… “আচ্ছা… আমায় কেন এত ভালোবাসো বলো তো? আমি তো তোমার বিয়ে করা বউ নই… সম্পূর্ণভাবে কোনদিনই পাবে না আমায়… তাও… এত কেন আদর করো আমায়?”
ওর কথায় খানিক’খন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি… একটা হাত তুলে ওর চুলের মধ্যে আঙুল টেনে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠি… “জানি না পর্ণা… কি দেখে বা কখন তোমায় এতটা ভালোবেসে ফেললাম… তোমার প্রতি যে শুধু মাত্র শারীরিক টান অনুভব করি, তা নয়… ওটা তো আছেই… কিন্তু ওটা ছাড়াও তোমার প্রতি আমার একটা অদ্ভুত টান অনুভব করি… জানি, সেটা উচিত নয়… তাও… এসে যায় আপনা থেকেই… তোমায় দেখা মাত্র… আর তাই বোধহয় বেশি দিন তোমায় না দেখতে পেলে, না কাছে পেলে কেমন মনের মধ্যেটা করে ওঠে…”
“জানি সেটা… চিনি এই পাগলটাকে… আর তাই তো তোমার বন্ধুর চোখ এড়িয়ে ধরা দিই তোমার বুকের মধ্যে… যখন ডাকো…” হাত বাড়িয়ে আমার নাকটাকে একটু নেড়ে দিয়ে বলে ওঠে পর্ণা… তারপরেই হটাৎ করে কি মনে পড়ে যেতে বলে ওঠে… “আচ্ছা… তোমার চন্দ্রকান্তাও কি এই ভাবেই তোমার সাথে মেশে?”
ওর কথায় হেসে ফেলি আমি… মাথা নাড়ি… “আমি তো তোমায় বলেইছি… চন্দ্রকান্তার সাথে আমার অন্য রকমের সম্পর্ক… ওটার মধ্যে কোন প্রেম ভালোবাসার স্থান নেই… ওটা একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সহবস্থান… দুটো হৃদয়ের… সেখানে কারুর জন্য কোন দায়বদ্ধতা নেই… কোন অস্থিরতা নেই… আছে শুধু মাত্র নির্মল অনুভূতি… ব্যস… আর কিচ্ছু নয়…”
কি বুঝলো কে জানে… মাথা নাড়ে অল্প অল্প… তারপর ফের বলে ওঠে… “আচ্ছা… ডায়রিতে ও যা লিখেছে, সত্যিই কি তাই ঘটেছে ওর জীবনে? মানে ওর এই সব দুঃসাহসী কার্যকলাপগুলো… পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে সত্যিই ভয় লাগে, জানো… কি অদ্ভুত জীবনটা ওর… না?”
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে হাতটাকে ওর চুলগুলো পর্ণার নগ্ন পীঠের উপরে ফেলে দিয়ে খেলা করতে করতে বলে উঠি… “একটা গল্প বলি তোমায় চন্দ্রকান্তার… এটা তুমি ওর কোন ডায়রিতে পাবে না… বিশেষ কারনেই এটা ওর কোথাও লিখে রাখেনি… একদিন কথায় কথায় আমায় গল্পটা বলেছিল, সেটাই তোমায় বলি…”
উৎসাহি পর্ণা আরো ঘন হয়ে জড়িয়ে ধরে আমায়… “বলো বলো… শুনি ওর গল্প…”
আমি ওর উৎসাহ দেখে সত্যিই হেসে ফেলি… “বেশ… শোনো তাহলে… ঠিক যেমন ভাবে শুনেছি, তেমন ভাবেই বলার চেষ্টা করছি…”
.
.
.
ট্রান্স ইয়ুরোপীয়ন হাইওয়ে… ৬১০২ কিমি লম্বা… তুরষ্কের গারবালাক থেকে শুরু হয়ে পর্তুগাল এর লিসবন পর্যন্ত বিস্তৃত… এই হাইওয়ে ইয়ুরোপের দশটি দেশকে সংযুক্ত করেছে…
আগাস্টএর এক দুপুর… এই হাইওয়ে বা ই-৮০ ধরে একটি গাঢ় নীল রঙের বুগাত্তি চিরণ রাস্তার আস্ফাল্ট ছুঁয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে… যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে বুগাত্তি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম এবং শক্তসমর্থ গাড়ি বলা যেতে পারে… ৪২ সেকেন্ডএর মধ্যে ঘন্টায় চারশো কিলোমিটার গতিবেগ তুলতে সক্ষম এই গাড়ি…
ভারত সরকারের ‘র’ এবং ইন্টার্পোলএর বিশেষ নির্দেশে এই পথ ধরে আসা… তা না হলে আকাশ পথেও পাড়ি দেওয়া যেতো, কিন্তু এয়ারপোর্ট ধরে এগোতে গিয়েও বাধ্য হয়ে ডিশিসন চেঞ্জ করা আর তারপর এই ব্যবস্থা… রাস্তা একটু লম্বা হলেও চেষ্টা করা যাতে নজর এড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়…
গাড়ি রওনা হয়েছে বুলগেরিয়ার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক হাই সিকিউরিটি ল্যাব থেকে… মিশন হলো কয়েকটা ভায়াল নিয়ে রোমে পৌছে দেওয়া… ভায়ালগুলো সঠিক লোকের হাতে হস্তান্তরিত হলেই এদের কাজ শেষ… কিন্তু এই ভায়ালগুলো ছিনিয়ে নেবার জন্য কিছু অর্গানাজেশন চেষ্টায় আছে… আর সেই কারনে তারা নজর রাখছে সমস্ত পোর্ট আর এয়ারপোর্টগুলোতে… এই ভায়ালগুলো হস্তগত করার জন্য খুন করতেও তারা পিছু পা হবে না… এমন নির্দেশ আছে তাদের উপরে… আর সেই কারনেই সকলের চোখ এড়িয়ে স্থলপথে পাড়ি দেওয়া…
.
.
.
তখনও ভালো করে ভোরের আকাশে আলো ফোটে নি… ঘরের মধ্যে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে… ঘুম জড়ানো চোখে কোন রকমে বিছানায় শুয়ে শুয়েই হাত বাড়িয়ে ফোনের রিসিভারটা কানে তুলে নেয় ডক্টর চৌধুরী… “হ্যালো…”
“ডক্টর চন্দ্রকান্তা?” ওপ্রান্ত থেকে ভারী গলায় কেউ স্পষ্ট আমেরিকান উচ্চারণে প্রশ্ন করে…
“জ্যা… ডক্টর কান্তা স্পিকিং… হু ইজ দিস?” প্রশ্ন করে ডক্টর ঘুম জড়ানো স্বরে…
“আই হ্যাভ আ মেসেজ ফর ইউ ডক্টর… ইয়ু আর অর্ডার্ড টু রিপোর্ট টু জেনারেল হিলার্ড অ্যাট ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সি, জার্মান হেডকোয়ার্টার্স অ্যাট সিক্স ও আওয়ার দিস মর্নিং …” ফোনের মধ্যে থেকে নির্দেশ ভেসে আসে… একটু থেমে ফের বোলে ওঠে ওপার থেকে… “কিপ দিস সিক্রেট… ডোন্ট টেল এনিওয়ান অ্যাবাউট ইয়োর ডেস্টিনেশন… ইজ দ্য মেসেজ আন্ডার্স্টুড ডক্টর?”
ভ্রূ কোঁচকায় চন্দ্রকান্তা… হটাৎ করে তাকে এনএসএতে ডাক কেন আবার? তাও আবার চুপিচুপি? কিন্তু কি ব্যাপারে সেটা প্রশ্ন করার আগেই দেখে ফোনের লাইন কেটে গিয়েছে… ধীরে ধীরে রিসিভার নামিয়ে রাখে সে… হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপরে থাকা রিস্টওয়াচটা চোখের সামনে এনে দেখে… ভোর চারটে… হটাৎ করে তার মত একজন ডক্টরের আবার এনএসএতে কিসের প্রয়োজন হলো? আর তাও এত ভোরে? সকাল ছ’টায়?
ফের চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করে ঘুমাবার, কিন্তু ততক্ষনে ঘুম তার চটকে গিয়েছে… খানিক এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে বিছানায়… পাশে তখন গভীর ঘুমে কাদা জোর্ডি… ওর দিকে একবার তাকিয়ে বিছানা ছাড়ে… বাথরুমের দিকে রওনা দেয় সে…
সকালের যোগাটা করেই স্নান করে তৈরী হয়ে নেয় একেবারে… প্রথমে ভেবেছিল রোজকার মতই স্কার্ট আর ব্লাউজ পরেই যাবে… তারপর সেটা না করে একটা টাইট জিন্স আর টপ পড়ে নেয়… পাঁচ ফুট ন-ইঞ্চি তম্বী সুঠাম হিলহিলে শরীরটায় পোষাকটা যেন দ্বিতীয় চামড়ার মত লেগে থাকে চেপে বসে…
জোর্ডিও ততক্ষনে উঠে পড়েছে… ওকে এই ভাবে বাইরে বেরুবার জন্য তৈরী হয়ে যেতে দেখে ভ্রূ কোঁচকায়… “কি ব্যাপার? সকাল সকাল কোন সার্জারীর শিডিউল আছে নাকি?”
মাথা নাড়ে চন্দ্রকান্তা… আনমনেই উত্তর দেয় সে… “না… সেটা নয়… আমায় একটু বেরুতে হবে… পরে হস্পিটাল যাবো… তুমি চলে যেও…”
“ব্রেকফাস্ট? সেটা তো করে যাবে?” তাড়াতাড়ি কিচেনের দিকে এগোয় জোর্ডি… “কিছু একটা বানিয়ে দিই তোমায় আগে…”
বাধা দেয় চন্দ্রকান্তা… “থাক… আমি পরে কোরে নেবো… তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না…” বলে আর দাঁড়ায় না সে… কারন তাকে পৌছতে হবে ছ’টার মধ্যে… তাই এখনই না বেরোলে দেরী হয়ে যেতে পারে… ততদিনে ও একটা গাড়ি কিনে নিয়েছে এখানে... যাতায়াতের সুবিধার জন্য… সেটা চালিয়েই সোজা এনএসএ হেডকোয়ার্টার্স…
ফ্রাঙ্কফোর্ট শহরের বাইরে ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির দপ্তরটা জার্মানী ডিভিশনের… সম্পূর্ন সিকিউরিটির ঘেরা টোপের আড়ালে দুটো বিশাল বিশাল বিল্ডিং… এই এজেন্সি তৈরীই হয়েছে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলিকে টেকনিকাল সাপোর্ট দিয়ে সুরক্ষিত রাখার জন্য… আর তাই সারা বিশ্বের সমস্ত দেশের সাথে এদের কমিউনিকেশন সিস্টেম রয়েছে… প্রায় হাজার খানেক কর্মী এখানেই শুধু মাত্র কাজ করে…
যখন চন্দ্রকান্তা গেটে এসে পৌছায়, তখনও খানিকটা অন্ধকার বাইরেটা… চন্দ্রকান্তা আট-ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া কংক্রিটের দেওয়াল পেরিয়ে ঢোকে ভিতরে… এসে থামে সেন্ট্রি বুথের সামনে… ভিতরে তখন দুজন সেন্ট্রি পাহারায়… চন্দ্রকান্তার গাড়ি থামতে একজন ভিতরেই থেকে যায়, অন্যজন ভিতর থেকে বেরিয়ে এগিয়ে আসে তার দিকে… “ক্যান ইজ ড্যার হেলফেন? (ক্যান আই হেল্প ইয়ু?)”
“জ্যা… দিজ ইজ ডক্টর চন্দ্রকান্তা… আই অ্যাম সাপোজ টু মিট জেনারেল হিলার্ড… আই হ্যাভ বীন টোল্ড টু রিপোর্ট হেয়ার…” উত্তর দেয় চন্দ্রকান্তা সেন্ট্রির প্রশ্নে…
সেন্ট্রি একবার ভালো করে গাড়ির মধ্যেটা তাকিয়ে নেয়… তারপর চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে বলে, “ক্যান আই হ্যাভ ইয়োর আইডেন্টিফিকেশন প্লিজ…”
চন্দ্রকান্তা গাড়ির গ্লাভ বক্স থেকে থেকে নিজের পার্সটা বের করে নিয়ে ভিতর থেকে নিজের হস্পিটালএর আইডেন্টিটি কার্ডটা বের করে দেখায়… সেন্ট্রি সেটা ভালো করে উল্টে পালটে দেখে ফেরত দেয় তাকে… “থ্যাঙ্ক ইয়ু ডক্টর…” তারপর ঘাড় ফিরিয়ে মাথা নাড়ায় ভিতরের সেন্ট্রির দিকে তাকিয়ে… সাথে সাথে গেটটা খুলে যায়… ভিতরে বসে থাকা সেন্ট্রি তার সামনে থাকা টেলিফোনের রিসিভার তুলে নেয় হাতে… “ডক্টর চন্দ্রকান্তা অফ ইহরেম ওওেগ… (অন হার ওয়ে)”
মিনিট খানেকের মধ্যেই ফের আর একটা গেটএর সামনে এসে দাঁড়ায় চন্দ্রকান্তার গাড়ি… গেটএর গায়ে সাদা বোর্ডএর উপরে লাল হরফে বড় বড় করে লেখা – “DANGER : ELECTRIFIED FENCE”…
চন্দ্রকান্তার গাড়ি দাঁড়াতে আবার একটি সেন্ট্রি এগিয়ে এলো তার দিকে… গাড়ির মধ্যে উঁকি দিয়ে ভালো করে দেখে নিয়ে চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল… “ডক্টর চন্দ্রকান্তা?”… উচ্চারণ শুনে চন্দ্রকান্তার মনে হলো এ জার্মান নয়… আমেরিকান… তার মানে এ আমেরিকান মেরিন…
সেন্ট্রির প্রশ্নে মাথা নাড়ায় চন্দ্রকান্তা… “ইয়েস…”
“মে আই সি ইয়োর আইডেন্টিফিকেশন প্লিজ?”
শুনে বলতে যাচ্ছিল চন্দ্রকান্তা… ইতিমধ্যে সে একবার দেখিয়েছে বাইরের গেটে… তারপর চুপ করে যায়… বলেও কোন লাভ নেই… এটা এদের চিড়িয়াখানা… যা বলছে, চুপচাপ করে যাওয়াই ভালো… পার্স থেকে আরো একবার হস্পিটাল কার্ডটা বের করে সেন্ট্রির হাতে তুলে দেয় সে… তার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে উল্টে পালটে দেখে ফেরত দিয়ে দেয় সেন্ট্রি… “থ্যাঙ্কস্ ডক্টর…” তারপর অদেখা কারুর দিকে হাত নেড়ে ইশারা করতেই সামনের গেটটা আগের বারের গেটে মত করে খুলে যায়…
খানিক এগোতেই ফের আরো একটা গেটএর সামনে এসে উপস্থিত হয় চন্দ্রকান্তা… ওহ! মাই গড্… মনে মনে স্বগোক্তি করে ওঠে সে… গেট এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট্রিকে এগিয়ে আসতে দেখে হাত বাড়ায় নিজের পার্সের দিকে…
সেন্ট্রি একটু ঝুঁকে তার গাড়ির নাম্বার প্লেটটা দেখে নিয়ে বলে ওঠে… “প্লিজ ড্রাইভ স্ট্রেট আহেড টু দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং… দেয়ার উইল বী সামওয়ান টু মীট ইয়ু…”
“থ্যাঙ্ক ইয়ু…” নিজের পার্সটাকে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায় সে তৃতীয় গেট খুলে যাওয়ার পর… গিয়ে দাঁড়ায় সামনে থাকা বিশাল বিল্ডিংটার সামনে… সেখানে সত্যিই এক ভদ্রলোক দেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে… তবে কোন ইয়ুনিফর্মে নয়… সাধারন সিভিলিয়ান ড্রেসেই…
তাকে দেখে লোকটি বলে ওঠে… “ইয়ু ক্যান লীভ ইয়োর কার রাইট হেয়ার ডক্টর… উই উইল টেক কেয়ার অফ ইয়োর কার…”
গাড়ির ইগনিশনে চাবি ঝুলিয়ে রেখেই বেরিয়ে আসে চন্দ্রকান্তা গাড়ির থেকে… ভালো করে তাকায় সামনে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটির দিকে… ছিপছিপে চেহারার, বেশ লম্বা… দেখে বয়স খুব বেশি হলে তিরিশের আশে পাশেই মনে হলো তার… যে ভাবে চোখ কুঁচকে দেখছে তাকে, তাতে দেখে চন্দ্রকান্তার মনে হয় যেন ভদ্রলোক বহুদিন বাদে সূর্যের নীচে এসে দাঁড়ালেন…
“আই অ্যাম হ্যারিসন কেলার… আই শ্যাল এস্কর্ট ইয়ু টু জেনারেল হিলার্ডস অফিস…” বলে ওঠেন ভদ্রলোক… ভদ্রলোকের নাম আর কথা বলার স্টাইল দেখে একেও আমেরিকান বলেই মনে হলো তার…
ভদ্রলোকের সাথে বিল্ডিংএর ভিতরে প্রবেশ করে চন্দ্রকান্তা… ভিতরে একটা বিশাল হলঘর… সিলিংটা বেশ উঁচুতে… সামনেই একটা ডেস্কের পিছনে আর একটি লোক বসে…
“ডক্টর চন্দ্রকান্তা…” তার নাম ধরে ডাক শুনে ঘুরে তাকায় সে… আর সাথে সাথে একটা ক্লিক করে ক্যামেরার শার্টার বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কানে আসে…
“থ্যাঙ্ক ইয়ু ডক্টর…”
চন্দ্রকান্তা ঘুরে তাকায় কেলারের দিকে… “হোয়াট দিস মেন্ট ফর…?”
“দিস উইল টেক ওনলি আ মিনিট…” বলে ওঠে কেলার বিনিত ভাবে…
ষাট সেকেন্ডের মধ্যেই চন্দ্রকান্তার হাতে তার ছবি ছাপানো একটা নীল সাদা আইডেন্টিফিকেশন ব্যাজ দিয়ে দেওয়া হয়… “প্লিজ উয়ের দিস অল দ্য টাইম হোয়াই ইয়ু আর ইন দ্য বিল্ডিং ডক্টর…”
হাতে ধরা ব্যাজটা বার দুয়েক উল্টে পালটে দেখে মাথা নাড়ে চন্দ্রকান্তা… “ওকে…” তারপর বিনা বাক্য ব্যয়ে নিজের বুকের বাম পাশে সেটা পিন আপ করে নেয়…
ওরা হাঁটা শুরু করে একটা লম্বা সাদা রঙ করা অলিন্দ ধরে… চন্দ্রকান্তা খেয়াল করে প্রতি কুড়ি ফুট অন্তর দেওয়ালের উপরে লাগানো রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা… অলিন্দের দুই দেওয়ালেই…
“হাউ বিগ ইজ দিস বিল্ডিং?” প্রশ্ন করে চন্দ্রকান্তা হাঁটতে হাঁটতে কেলারকে…
“জাস্ট ওভার টু মিলিয়ান স্কোয়ারফিট ডক্টর…” নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দেয় কেলার…
“হোয়াট?” অবাক হয়ে তাকায় চন্দ্রকান্তা কেলারের দিকে…
মাথা নাড়ে কেলার… “ইয়েস…” তারপর একটু থেমে বলে ওঠে… “দিস করিডোর ইস দ্য লঙ্গেস্ট করিডোর ইন জার্মানি… অর ইয়ু ক্যান সে ইন ইয়ুরোপ… ইটস্ নাইন হান্ড্রেড অ্যান্ড এইট্টি ফিট… উই আর কমপ্লিটলি সেলফ কন্টেন্ড হেয়ার… উই হ্যাভ আ শপিং সেন্টার, কাফেটারিয়া, পোস্ট এক্সেঞ্জ, এইট স্ন্যাক্স বার, আ হস্পিটাল উইথ কমপ্লিট অপারেটিং রুম, আ ডেন্টিস্টস্ অফিস, আ ব্রাঞ্চ অফ স্টেট ব্যাঙ্ক, আ ড্রাই ক্লিনিং শপ, আ শু শপ, আ বারবার শপ… অ্যান্ড আ ফিউ আদার অডস্ অ্যান্ড এন্ডস্ …”
শুনতে শুনতে মাথা ঘুরে যাবার যোগাড় হয় চন্দ্রকান্তার… এতো প্রায় বাড়ির মধ্যে বাড়ির ব্যাপার… একটা শহরের মধ্যে আর একটা শহর…
হাঁটতে হাঁটতে তারা পার হয় একটা বেশ বড় খোলা জায়গা… যেখানে প্রচুর কম্পিউটার সাজিয়ে রাখা পর পর… দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে চন্দ্রকান্তা অবাক হয়ে…
“ইম্প্রেসিভ… ইজিন্ট ইট?” মুচকি হেসে বলে ওঠে কেলার… “দ্যাটস্ জাস্ট ওয়ান অফ আওয়ার কম্পিউটার রুমস্… দিস বিল্ডিং কন্টেনস্ মোর দ্যন হান্ড্রেড বিলিয়ান ডলার্স ওয়ার্থ অফ ডিকোডিং মেসিনস্ অ্যান্ড কম্পিউটারস্…”
“হাউ মেনি পিপল ওয়ার্ক ইন দিস প্লেস?” ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করে চন্দ্রকান্তা ওই সারি সারি কম্পিউটারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে…
“অ্যাবাউট সিক্সটিন থাউজেন্ড…” নির্লিপ্ত মুখে উত্তর দেয় কেলার…
তাহলে আমায় ডাকা কেন? মনে মনে ভাবে চন্দ্রকান্তা… কিছুতেই যেন হিসাব মেলাতে পারে না এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে তার কি ভূমিকা থাকতে পারে ভেবে… সে একজন ডক্টর… একজন সার্জন… সেখানে এই রকম একটা এজেন্সিতে তার কি কাজ বুঝে পায় না কিছুতেই…
কেলার তাকে একটি এলিভেটরে উঠিয়ে নিয়ে আসে উপরের তলায়… তারপর আবার হাঁটতে থাকে লম্বা করিডোর ধরে… বেশ অনেকটা পথ… শেষে একেবারে একটা হলের শেষ প্রান্তে পৌছে গিয়ে একটি অফিসের সামনে…
“রাইট হেয়ার ডক্টর…” অফিস রুমের দরজা খুলে দাঁড়ায় কেলার… ভিতরে প্রবেশ করে চন্দ্রকান্তা… ভিতরে ঢুকে দেখে প্রায় চারখানা বিশাল মাপের টেবিল রাখা… দেখে বোঝাই যায় টেবিলে গুলো অফিস সেক্রেটারির… যার দুটিতে ইতিমধ্যেই দুটি মেয়ে এসে হাজির হয়ে গিয়েছে… নিজেদের কাজে ব্যস্ত… কেলার তাদের একজনের দিকে তাকিয়ে ঘাড় নেড়ে ইশারা করতেই মেয়েটি একটু বাটনএর উপরে চাপ দেয়… সাথে সাথে উল্টো দিকের দেওয়ালে থাকা দরজাটা খুলে ফাঁক হয়ে যায়…
“গো রাইট ইন ম্যাম… দ্য জেনারেল ইজ ওয়েটিং ফর ইয়ু…” বলে ওঠে মেয়েটি…
হ্যরিসন কেলার বলে ওঠে… “দিস ওয়ে ডক্টর…” বলে এগিয়ে যায় খুলে যাওয়া দরজার দিকে… চন্দ্রকান্তা তাকে অনুসরণ করে…
ভিতরে চন্দ্রকান্তা দেখে সেটাও একটা বেশ বড় সড় অফিস… সিলিং আর দেওয়াল পুরু সাউন্ডপ্রুফ করে বানানো… ঘরটা খুব সুন্দর করে ফার্নিশ করা… দেওয়ালে আর টেবিলের উপরে ছবি আর মেমেন্টো সাজানো… সামনে এখানেও একটা বিশাল ডেস্ক… আর ডেস্কের ওধারে একজন বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক চেয়ারে বসে… পরণে ধূসর স্যুট, সাদা শার্ট, ধূসর টাই… বেশ লম্বা আর স্বাস্থবান… মুখের অভিব্যক্তি একেবারে হীম শীতল… তেমনই চোখের দৃষ্টি… ইষ্পাত কঠিন… শিড়দাঁড়া সোজা করে বসে… দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না চন্দ্রকান্তার… ইনিই জেনারাল হিলার্ড… ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডেপুটি ডিরেক্টর…
কথা প্রথম কেলার বলে ওঠে… “জেনারেল হিলার্ড… দিস ইজ ডক্টর চন্দ্রকান্তা…”
“থ্যাঙ্ক ইয়ু ফর ড্রপিং বাই ডক্টর…” ভারী কন্ঠস্বরে বলে ওঠে জেনারেল… শুনে চন্দ্রকান্তার মনে হয় যেন তাকে কফি খেতে নিমন্ত্রন করেছিল, সেই ভাবেই বলছেন উনি… উত্তরে কিছু না বলে দু পা এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় চন্দ্রকান্তা… করমর্দন করে জেনারেলএর সাথে… হিলার্ডএর বিশাল হাতের থাবার মধ্যে যেন নিজের হাতটা হারিয়ে যায় বলে মনে হয় তার…
“প্লিজ সিট ডাউন ডক্টর… আই’ল বেট ইয়ু কুড ডু উইথ আ কাপ অফ কফি…”
জেনারেলএর কথাটা শুনে মনে মনে ভাবে চন্দ্রকান্তা… লোকটা কি মাইন্ড রিডার নাকি রে বাবা? “ইয়েস স্যর…” মুখে বলে ওঠে সে…
“হ্যারিসন…” বলেই থমকায় জেনারেল… “নো… থ্যাঙ্ক ইয়ু…” বলে দেওয়ালের দিকে ঘুরে একটা বোতামের উপরে চাপ দেয়… প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে একটি মেয়ে ঘরে ঢোকে… হাতে একটি ট্রে… তাতে দু কাপ কফি আর প্লেটে রাখা ড্যানিশ পেস্ট্রি… মেয়েটি কফির কাপ এগিয়ে দেয় তাদের দিকে… কাপ থেকে উঠে আসা সুগন্ধে যেন ভরে যায় ঘরটা…
কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে মুখ তুলে তাকায় জেনারেল… চন্দ্রকান্তার দিকে তাকিয়ে সোজা সুজি প্রশ্ন করে ওঠেন… “হাউ লং হ্যাভ ইয়ু বিন হেয়ার ডক্টর?”
কথা শুরু হয় তাদের মধ্যে… ধীরে ধীরে সে জানতে পারে যে তাকে বিশেষ একটি মিশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে… শুধু তাকেই নয়… তার মত বেশ কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে… যাদের নাম প্রতিটা দেশ থেকে রেকমেন্ড করা হয়েছে তাদের অতীত বর্তমান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিচার করার পর… তাদের এই টিমএ যেমন আমেরিকান আছে, তেমনই আছে চিনা, রাশিয়ান, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ও ভারতীয়…
ভারত থেকে ‘র’ তাকে রেকমেন্ড করেছে শুনে অবাক চোখে তাকায় চন্দ্রকান্তা… তার তো আগে কখন কোনদিন সরকারের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না? তাহলে তার নাম কি ভাবে রেকমেন্ড করলো ‘র’? বুঝে উঠতে পারে না সে… আর সেটা বুঝেই যেন খোলসা করে জেনারেল… জানায় যে এই যে ক’জন এই টিমে সিলেক্টেড হয়েছে… এরা কেউই সরকারের কোন কাজের সাথে যুক্ত নয়… কিন্তু এরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের জায়গায় পারদর্শি… যেমন চন্দ্রকান্তা… তার একটা বংশের অতীত আছে… সে ইন্টালিজেন্ট… ডক্টর সার্জেন… আবার অন্য দিকে সে শারীরিক ভাবে শক্ত সমর্থ… থার্ড ডিগ্রি সেকেন্ড ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে তার ঝুলিতে… দুঃসাহসী… এই সব ক’টি বৈশিষ্ট বেশ কিছুদিন ধরে ভালো করে বিচার করেই প্রতিজন কে বাছাই করা হয়েছে… একটি বিশেষ মিশনের জন্য… এবং এরা যদি দেখা যায় সসন্মানে সে কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আরো অনেক এই ধরণের কাজে তাদের সাহায্য চাওয়া হতে পারে… কিন্তু অবস্যই, কোন জোর নেই এই মিশনে জয়েন করার… সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের উপরে নির্ভরশীল, তারা মিশনে থাকবে কি থাকবে না… তবে যদি থাকবো মনে করে, তাহলে এই মুহুর্ত থেকে তারা যতক্ষন পর্যন্ত না সে মিশন শেষ হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত তারা এই এজেন্সির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে… এজেন্সি যা বলবে তাদের তাইই করতে হবে… তাতে যদি লাইফ রিস্কও হয় তাতেও তারা পিছিয়ে আসতে পারবে না… আর শুধু তাইই নয়… তাদের এই মিশনের কোন কথা তারা বাইরে কোথাও বলতে পারবে না… তবে এই মিশনের আগে তাদের আলাদা স্পেশাল ট্রেনিংএ পাঠানো হবে… কিন্তু সেটাও খুবই গোপনে… কি ট্রেনিং, কি ভাবে ট্রেনিং হবে কোথায় হবে সেটাও কাউকে বলা যাবে না…
এতক্ষন একটাও কোন কথা বলে নি চন্দ্রকান্তা… জেনারেলএর বক্তব্য শেষ হলে সে প্রশ্ন করে… “আমার শুধু একটাই জিজ্ঞাস্য আছে… হটাৎ করে আমায় কেন? আমি তো প্রফেশনাল সোলজার নই… আর এই ধরনের কোন মিশন সম্বন্ধে ওয়াকিবহালও নই… তাহলে আমার মত এত সাধারন একজন নাগরিককে কেন এই ধরনের মিশনের জন্য নির্বাচন করা হলো?”
চন্দ্রকান্তার প্রশ্ন খুশি হয় যেন জেনারেল… মাথা নাড়েন… “ঠিক… এই প্রশ্নটাই আমিও আশা করছিলাম আপনার দিক থেকে আসবে ভেবে…” তারপর একটু থেমে বলেন, “হ্যা… শুধু আপনিই নন… এই যাদের কথা বললাম, এরা প্রত্যেকেই কিন্তু অতি সাধারন নাগরিক… কারন আমরা এদের মধ্যে থেকেই আমাদের আসল লোকটিকে নির্বাচন করে নেবো একটাই কারনে… যে মিশনে পাঠাবো তাকে, তাকে একেবারেই সাধারন নাগরিকের মতই দেখতে হবে… এবং তার খুটি নাটি যদি কেউ খোঁজও করে, তাহলেও তাকে শুধু মাত্র একজন সাধারন নাগরিক ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবে না… তার রেকর্ড সে কথাই বলবে… তাতে সে অন্য লোকের ভীড়ে মিশে হারিয়ে যেতে পারবে খুবই সহজে… সে থাকবে একেবারে সন্দেহের উর্ধে…” তারপর ফের একটু থেমে বলতে থাকেন জেনারেল… “কিন্তু আপনি এই প্রস্তাবে রাজি হলে এখান থেকেই আপনার ট্রেনিং শুরু হবে… এবং তার জন্য আপনি এই মুহুর্ত থেকে বাইরের কারুর সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারবেন না যতদিন না আপনার এই মিশন শেষ হচ্ছে…”
মিটিং শেষে জেনারেলএর অফিস থেকে বেরিয়ে আসে চন্দ্রকান্তা কেলারের সাথে… জেনারেলকে সন্মতি জানিয়ে দিয়ে… তারও এই ধরনের মিশনে সে অংশগ্রহন করে পারবে ভেবেই মনে মনে পুলকিত… কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করে না…
জেনারেলএর সাথে আরো টুকটাক কথা শেষ করে বাইরে এসে দেখে সোফায় একজন ইয়ুনিফর্ম পরা মেরিন বসে আছে… তাদের বেরুতে দেখেই উঠে দাঁড়ায়… কেলার আলাপ করিয়ে দেয়… “দিস ইজ ক্যাপ্টেন ডোর্থি… হি’ল টেক ইয়ু টু দ্য এয়ারপোর্ট… গুড লাক…”
“থ্যাঙ্কস্…” উত্তরে বলে ওঠে চন্দ্রকান্তা… এগিয়ে গিয়ে ক্যাপ্টেনের সাথে করমর্দন করে… কেলার ঘুরে ঢুকে যায় জেনারেল হিলার্ডএর ঘরে…
“আর ইয়ু রেডি ডক্টর?” প্রশ্ন করে ক্যাপ্টেন ডোর্থি…
“ইয়েস…” উত্তর দেয় চন্দ্রকান্তা… কিন্তু রেডি ফর হোয়াট? সেটা তো এখনও তাকে কিছুই বলা হয় নি…
“আই হ্যাভ অর্ডারস টু টেক ইয়ু ডাইরেক্টলি টু ইয়োর অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড দেন টু দ্য এয়ারবেস ডক্টর…” চন্দ্রকান্তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ক্যাপ্টেন ডোর্থি… “দেয়ারর্স আ প্লেন ওয়েটিং টু…”
“আই হ্যাভ টু মেক আ স্টপ অ্যাট মাই হস্পিটাল ফার্স্ট…” ক্যাপ্টেনের কথার মাঝেই বলে ওঠে চন্দ্রকান্তা… সে নিজে একজন ডক্টর… তার হাতে রুগিদের মরন বাঁচন নির্ভর করে… তাই এই ভাবে কাউকে কিছু কোন দ্বায়িত্ব হ্যান্ডওভার না করেই হুট করে চলে যাওয়া তাকে মানায় না… অন্তত হস্পিটাল সুপারের সাথে একবার কথা বলে নিতে হবে… তাকে কি ব্যাপারে সে থাকছে না সেটা বলবে না ঠিকই… কিন্তু তাও… এটা তো তাকে করতেই হবে… আর তাছাড়াও… জোর্ডি এখন হস্পিটালএই থাকবে… তাই ওকেও অন্তত জানিয়ে দিতে হবে যে বেশ কিছুদিন… কতদিন তা অবস্য তারও জানা নেই… সে থাকবে না… নয়তো মেয়েটা শুধু শুধু চিন্তায় মরবে তাকে নিয়ে… আর তাছাড়া দিম্মিকেও একটা ফোন করে দিতে হবে… সবটা না বললেও, থাকবে যে না সেটা বলার খুব প্রয়োজন… নয়তো চিন্তা করবে জোর্ডির মতই শুধু শুধু…
ডোর্থি একটু ইতঃস্থত করে… তার পর মাথা নাড়ায়… “ভেরি ওয়েল… আই’ল গো দেয়ার উইথ ইয়ু অ্যান্ড ওয়েট ফর ইয়ু…” কথাটা এমন ভাবে বলল যেন সে কোন অপরাধী… তাকে এস্কর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে… তাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না… মাথাটা গরম হয়ে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় চন্দ্রকান্তা… থাক… এখানে ক্যাপ্টেনের কোন দোষ নেই… তার উপরে যেমন ইন্সট্রাকশন রয়েছে, তেমনটাই তো সে করছে… সে কি করবে?
নীচে নেমে রিস্পেশন ডেস্ককে তাকে দেওয়া ব্যাজটা ফেরত দিয়ে বেরিয়ে আসে বিল্ডিং থেকে… বাইরে…
বাইরে বেরিয়ে নিজের গাড়িটা দেখতে পায় না চন্দ্রকান্তা… জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাতে সে বলে ওঠে… “ইয়োর কার উইল বি টেকেন কায়ার অফ ডক্টর… উই’ল রাইড ইন দিস…” চন্দ্রকান্তার গাড়ির বদলে সেই জায়গায় দাঁড়ানো একটা লিমুজিনএর দিকে আঙুল তুলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে…
চন্দ্রকান্তার এখানে কিছু করার নেই সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার… তাই কাঁধ ঝাঁকায়… অগত্যা… “বেশ…”
গাড়ি চন্দ্রকান্তার হস্পিটালের দিকে রওয়ানা হয়ে যায়… আকাশে তখন রোদের মিঠে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে শহরের উপরে…
ক্রমশ…