Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
রহিম ভাবতেও পারে নি এমন টা হয়ে যাবে। আজকে বাঘমুড়োর হাতে ভগবানের এমন হাল দেখে, ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলো সে। হীরার ছোট্ট শরীর টা প্রায় উড়ে গিয়ে জলার জলে পরতেই অজ্ঞান হয়ে গেল উমা। মহাদেব দু চোখের জল প্রতিহত করতে না পেরে বসে পরল ওখানেই মাথায় হাত দিয়ে। নগেনের মনে হলো সামনে আর কোন আলো নেই। আছে শুধু অন্ধকার মাত্র। লালি বেঁচে না মরে কেউ জানে না। রহিম এর মধ্যে আর সেই ক্ষমতা নেই বলেই বোধ হচ্ছে। হীরাও মনে হয় শেষ। একমাত্র বাকি অভি।
কিন্তু অভি থেমে নেই। তীর বর্ষণ ও থামায় নি। চালিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারার মতন, হীরা কে জলার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেবার পর থেকেই। বিরক্ত বাঘমুড়ো যেন সমস্ত গ্রাম কেই শেষ করে দেবে। ভয়ঙ্কর ক্রোধে অভির দিকে এগিয়ে যেতেই শুনল সবাই মেঘ নাদের মতন বিশাল গর্জন। মনে হচ্ছে কোন ক্রোধী মৃগেন্দ্র গর্জন করছে। একবার নয় বারংবার। সবার চোখ চলে গেল জলার দিকে। সামনে ও কি। বিশাল কায়া নিয়ে সামনে ও কে দাঁড়িয়ে?

চারিদিকে মশালের আলোতে মনে হলো কোন তপ্ত সোনার রঙের বিশাল সিংহ সামনে দাঁড়িয়ে। ঘন ঘন গর্জনে চারিদিক মুখরিত। শরীর টা মানুষের আর মাথা টা সিংহের। সহসা চারিদিকে ভরে উঠলো এক স্বার্গিক সুগন্ধে। ধীরে ধীরে সে উঠে এসে দাঁড়াল মাটির টিলার উপরে। উফ কি প্রকান্ড শরীর! রক্তিম কেশর লতিয়ে তার পিঠ অব্দি এসে পৌঁছেছে। শাল গাছের কান্ডের মতন বিশাল বিশাল দুই হাত। পেশীবহুল তার পদ যুগল। উরুর পেশী তে যেন নাগ খেলা করছে। বিশাল চওড়া কাঁধ। ছোট্ট রক্তিম ধুতি তে টিলার উপরে দাঁড়িয়ে যে গর্জন শুরু হলো মনে হলো, ইন্দ্র মহামেঘ দের পাঠিয়েছে। মুহুর্মুহু ক্রোধিত গর্জনে চারিদিক ভরে উঠল। মনে হচ্ছিল শত শত রুদ্রাবতার একসাথে ধ্বংস লীলায় মাতবে এবারে। নগেন স্তব্ধ হয়ে গেল একেবারে ভয়ে, আতঙ্কে। সামনে কি দেখছে ও! নৃসিংহ রূপে স্বয়ং তিনি! পালন কর্তা কে, রক্ষা কর্তা কে ভালবাসা রক্ষার তাগিদে মনে হয় পশু ও হতে হয়। এ এক জীবনের শিক্ষা।  উফ কি রূপ! তাকানো যাচ্ছে না আর। আহা এমন বিশাল কাঁধেই তো মানায় রক্ষাকর্তা কে। এদিকে জলার থেকে অনবরত ভেসে আসছে অচ্ছেদ্য কাঁসর ঘন্টার শব্দ। আর তার সাথে মহাশঙ্খের ফুঁৎকার। নগেনের মুখ থেকে বের হয়ে এল আপনা থেকেই
-      অভ্যুথ্যানং অধর্মস্য তদাত্মানম সৃজম্ম্যেহম। পরিত্রাণায় সাধুণাং, বিনাশায়চ দুস্কৃতাম, ধর্ম সংস্থাপনার্থায় , সম্ভবামী যুগে যুগে।

উমার অজ্ঞান অবস্থা দেখতে পেল না এই ভীষণ মুর্তি কে। মহাদেবের মন ও আর সায় দিচ্ছে না তাকাতে। মন বলছে ছুটে চলে যেতে হীরার কাছে। মহাদেব উমার মাথা টা কোলে নিয়ে বসে রইল চুপটি করে হীরার কথা ভাবতে ভাবতে।

রহিম এই বিশাল সিংহের মুর্তি দেখেই হাঁটু মুড়ে বসে পরেছে সামনেই। এক মনে দেখে চলেছে ভগবানের চতুর্থ অবতার কে। কিন্তু তিনি তো এখন আর তিনি নন। সামনে বাঘমুড়ো রূপী শিশুপাল। এগিয়ে গেলেন তিনি সামনে বাঘমুড়োর দিকে। বাঘমুড়ো ছটফট করছিল তখনো। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে সামনে ওই মুর্তি দেখে ক্রোধে ভয়ানক গর্জন করে উঠল বাঘমুড়ো। মনে হচ্ছিল একলা বাঘমুড়ো নয়। ওর ভিতরে বাস করা শত শত পিশাচ একসাথে মরন আর্তনাদ করছে। সেই নাদ শেষ ও হলো না। সেই ভয়ানক সিংহ গর্জন করে উঠল বাঘমুড়োর একেবারে মুখের সামনেই। যাকে বলে নাদ। মুখের ভিতরের চারটে বিশাল দাঁত বেড়িয়ে এল সামনে। যত গর্জন বাড়ছে ততই আকার বেড়ে যাচ্ছে সিংহের। সেই গর্জন চলতেই থাকল যতক্ষন না বাঘমুড়োর শরীর থেকে ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি বেড়িয়ে আসে বাইরে। সামনে ভগবান কে প্রণাম করতেও সময় পেল না ওরা। ভয়ঙ্কর গর্জনে মারাত্মক ভয়ভীত হয়ে দুটো কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী রণক্ষেত্র ত্যাগ করল নিমেষেই। পড়ে রইল বাঘমুড়ো একলা।

এবারে ভয় পেয়েছে বাঘমুড়ো। কি করবে বুঝতে পারছে না। বিহবল হয়ে পরেছে সে। সামনে এই বিশাল মৃত্যু কে দেখে সৎবিত অবশ হয়ে আসছে বাঘমুড়োর। দুই পিশাচ ছেড়ে চলে যেতেই মনে হচ্ছে শরীরে বল নেই আর তার। সভাঘরে মৃত্যুর আগেও ভয় টের পায় নি সে। কিন্তু ভয়ের গন্ধ কেমন হয় এবারে বুঝতে পারছে সে। সামনেই মুর্তিমাণ মৃত্যু। বাঘমুড়ো উলটো দিকে পালানোর চেষ্টা করতেই কানে শত শত প্রহারের মতন সিংহ নাদে অবশ হয়ে পুনরায় বসে পরল বাঘমুড়ো সেখানেই। ঠিক যেন মৃগেন্দ্র খেলছে, কোন দুষ্টু ইঁদুরের সাথে।

রহিম ক্রোধে কাঁপছিল। সুযোগ টা খুঁজছিল ও। বিশাল সিংহ টা রহিমের দিকে তাকাতেই রহিম দৌড়ে এসে যে পদাঘাত টা করল তাতেই বাঘমুড়োর অর্ধেক প্রাণবায়ু বেড়িয়ে গেল বোধকরি। তীব্র গতিতে ছিটকে গড়িয়ে গেল সামনে। কিন্তু বাঁচার তাগিদ বড় তাগিদ। কোন রকমে উঠে বসার চেষ্টা করতেই, তীব্র গতিতে একটা তীর গিয়ে সজোরে বিঁধে গেল বাঘমুড়োর উরু তে। গেঁথে ফেলল তীর টা বাঘমুড়ো কে মাটিতে প্রায়। অভি রহিমের দিকে তাকিয়ে হাসল শুধু। বাঘমুড়োর মরণ নাদে চারদিকে মনে হলো কান্নার রোল উঠল। কিন্তু আর ও বাকি ছিল। একটা মৃদু গর্জনে সবাই দেখল, চুড়ান্ত আহত অবস্থায় সারা শরীরে রক্ত মাখা সাদা কুকুর টা তীব্র ক্রোধ নিয়ে ছুটে আসছে বাঘমুড়োর দিকে। লাফ দিলো কুকুর টা বাঘমুড়োর মাথা টা লক্ষ্য করে। ব্যস, এক লহমা তেই ওই বিশাল বাঘের মুন্ডু খানা  একেবারে ছিঁড়ে, মুখ থেকে বের করে পরে ধরাশায়ী হলো জলার মাঠে। যেন যা জীবনি শক্তি অবশিষ্ট ছিল কুকুর টার সেটা ওই টুকু কাজ শেষ করতেই। 

বাঘমুড়োর ধড় আর মাথা আলাদা হয়ে যেতেই মনে হলো মাঠে বাজ পরল। কান ফাটা শব্দ আর আলো তে সবার চোখ ঝলসে গেল। সবাই কান ঢেকে মাটিতে বসে পরল। দেখতে কেউ পেল না, কিন্তু বাঘমুড়োর আতঙ্কের অবসান ঘটল সেই মুহুর্তেই। ধীরে ধীরে ধড় আর মাথা পচে গলে মিশে গেল জলার মাঠের ভেজা মাটিতে। সেই বিশাল সিংহ টা ধীরে ধীরে লালির কাছে এসে বসল। লালির মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মেঘের মতন জলদ-মন্দ্র কন্ঠে আওয়াজ এলো,

-      শোনিতম পুনরুদ্ভব!

শয়তান টার নখের আঘাতে লালির গাল একেবারে ফুটো হয়ে গেছিল। অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল লালির। ধীরে ধীরে লালির গালের ক্ষত টা ভর্তি হয়ে গেল কিছুক্ষণেই। কেঁপে উঠল লালি একবার অজ্ঞান অবস্থা তেই। মনে হলো যে প্রানপাখী আকাশে ডানা মেলে দিয়েছিল, সে আবার ফিরে এলো শরীরে। ধীরে ধীরে লালির মাথাটা মাটিতে নামিয়ে দিয়ে সিংহ টা বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এবারে এগিয়ে গেল পরেশের দিকে।

সবাই যখন চোখ খুলল, দেখল না বাঘমুড়ো আছে আর না তার আতঙ্ক আছে। পূব আকাশ হালকা লাল বর্ণ হচ্ছে ধীরে ধীরে। জলার দিক থেকে ভেসে আসছে হালকা শীতল হাওয়া। সেই হাওয়ায় কোন আতঙ্ক নেই। আছে শুধু অপার্থিব আর প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি শীতলতা। হালকা মিষ্টি ভোরের আলোয় আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছে কুখ্যাত জলার মাঠ। বাতাসে কেমন একটা খুশীর ভাব।
সবাই চেয়ে দেখল, মাঠের মধ্যে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে রহিম আর পরেশের অজ্ঞান শরীর দুটো। আর রক্তাক্ত লালির উলঙ্গ শরীর। নগেন চেঁচিয়ে উঠল গ্রামের মেয়েদের উদ্দেশ্যে,

-      ওগো তোমরা সব যাও। মেয়েটা কে ঢাকা দাও। কিছু একটা চাপা দাও ওর শরীরে।

আর অভির দিকে চেয়ে বলল,
-      চল দেখি পরেশ কে। হীরা কোথায় গেল বল দেখি?  

দুজনায় ছুটে এলো মাঠের মধ্যে। গ্রামবাসী একেবারে বাঁধন হারা হয়ে প্রবেশ করল মাঠে। রহিম ধীরে ধীরে জাগতেই রহিমের মেয়ে রহিম কে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল। রহিম তাকিয়ে দেখল ওর বউ আনোয়ারার চোখে জল। ও মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠে আনোয়ারা কে বুকে টেনে নিল গ্রামবাসী দের মাঝেই। ও ভাবল, এই জীবন বড্ড ছোট। এবার থেকে ভালোবেসেই যাবে ও নিজের লোক কটা কে।

পরেশের যেন ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখল পুরো গ্রামবাসী তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। ওর মনে পরে গেল লালির কথা। ও প্রায় চেঁচিয়ে উঠল,
-      লালি!!!!!!
-      এই যে বাবা আমি এখানে।

পরেশ তাকিয়ে দেখল লালি একটা বস্তা কে চাদরের মতন জড়িয়ে এগিয়ে আসছে, গ্রামবাসী দের ভিড় ঠেলে। মেয়েকে আদর করেও শেষ হচ্ছিল না পরেশের।
-      তুই ঠিক আছিস তো মা?
-      হ্যাঁ বাবা এই দেখ আমার কিচ্ছু হয় নি।

পরেশের বিশ্বাস হচ্ছিল না কথা টা। তাও বারংবার মেয়ের মুখ পা সব কিছুই দেখে নিচ্ছিল পরেশ। নগেন বাপ মেয়ের মিলন দেখছিল। বাকি ছিল আর কিছু মিলনের। এর থেকে সুখের অবসান আর কিছু হতে পারে না। দেখল কিছু গ্রামবাসির সাথে ওর দুই ছেলেও আহত দের চিকিৎসা করে দিচ্ছে মাঠের মধ্যেই।  

নগেন রহিম আর অভি মিলে হীরা কে খুঁজছে পাগলের মতন। লালি হাঁটতে পারছে না ঠিক করে। রহিমের ও এক ই অবস্থা। রহিমের পাঁজরে মারাত্মক ব্যাথা। লালি ওই ভাবে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতেই হীরার নাম নিয়ে জলার ধার গুলো দেখছে। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না ও। মনে হচ্ছে , হীরা কে না পেলে ও আর গ্রামে ঢুকবে না। অশত্থ গাছের তলায় অনবরত কেঁদে যাচ্ছে উমা কাকি। উমা কাকি কে ও কথা দিয়েছে হীরার কিচ্ছু হবে না। হীরার কিছু হলে লালিও আর বাঁচবে না। হঠাত শুনল রহিম দা ডাকছে ওকে,

-      লালি দেখবি আয়।

লালি রহিম কে দেখল মেয়েকে কোলে নিয়ে উঁচু মাটির টিলার উপরে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। ওর সাথে সবাই গেল। নগেন জ্যাঠা ডাক দিল মহাদেব কাকাকে। উর্ধশ্বাসে ছুটে এলো উমা কাকি আর মহাদেব কাকা। গ্রামবাসী আবার জড়ো হলো টিলার উপরে বা টিলার পাশে। লালি চটের বস্তা জড়িয়ে কোনরকমে টিলা পেরিয়ে গিয়ে দেখল, ভোরের আলোয় এক জন জলার কোমর জলে দাঁড়িয়ে হাতে করে জলের নীচে পায়ে জড়িয়ে থাকা ঘাস গুলো কে ছিঁড়ে পাড়ে তুলছে। ততক্ষণে উমা কাকি গিয়ে দাঁড়িয়েছে সামনে। মায়ের ছেলেকে চিনতে ভুল হয় নি একদম ই। আর এদিকে সে ছোঁড়া যেন খুব ব্যস্ত। এতো ডাকাডাকির পরেও সাড়া না দেবার কারণ জিজ্ঞাসা করার আগেই হীরা কাঁচুমাচু মুখে বলল,

-      কি? তাকিয়ে আছ কেন আমার দিকে? আরে খুব পাঁক এখানে। এই কোমর অব্দি পাঁক। তারপরে এই ঘাস গুলো পায়ে জড়িয়ে গেছিল। ভাবছি, এই জলা টা সংস্কার করতে হবে। কি বলো দাদু?

হেসে ফেলল লালি। বদমাশ কোথাকার। কোন বিকার নেই। আবার সেই টাইম লকারের মতন প্রমাণ করার চেষ্টায় থাকবে যে ও কিচ্ছু জানে না। কোনরকমে নিজের ইজ্জত একটা চটের বস্তার মধ্যে নিয়ে হীরা কেই দেখছিল লালি। ফরসা হচ্ছে চারিদিক আস্তে আস্তে। আর পুরো গ্রামবাসীর সামনে, মায়ের আদর খেতে যে কি পরিমাণ ব্যেতিব্যস্ত হচ্ছে ছোঁড়া, সেটাই বেশ আনন্দের সাথে দেখছিল লালি একলা দাঁড়িয়ে। উমা কাকির আদর শেষে ধীরে ধীরে অনেকেই জলার ধার টা ফাঁকা করল। আর উমা কাকি উঠে যাবার আগে হীরা কে শাসিয়ে গেল, এখনই যেন বাড়ি যাওয়া হয়। নগেন আর পরেশ আর মহাদেব টিলার উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। সূর্যোদয় দেখছিল বোধ হয়। মাঝে মাঝেই নগেন দেখছিল হীরা কে। ভুলতে পারছে না নগেন কিছুক্ষণ আগের সেই অপার্থিব দৃশ্য। তিনজনেই দেখল লালি ধীরে ধীরে হীরার কাছে এগিয়ে গেল। রহিম সেটা দেখে, আনোয়ারার দিকে তাকিয়ে একবার হেসে, মাঠের মাঝ খানের দিকে হাঁটা দিল বউ আর মেয়ে কে নিয়ে।

আর লালি চেয়ে রইল হীরার দিকে। ইশ কেমন ব্যোম ভোলা হয়ে আছে দেখ! কি করত লালি হীরা কে খুঁজে না পেলে? লালি দেখেছে হীরার বদলে যাওয়া রূপ, লড়াই এর সময়ে। লালি বুঝতে পেরেছে মৃত প্রায় লালির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের বুকে ফিরিয়ে এনেছে এই দুষ্টু টাই। হাঁ করে দেখছিল লালি। আর হীরা লজ্জা পাচ্ছিল। লালির এমন প্রেমাতুর নজরে নিজেকে অসহায় বোধ করছিল হীরা। হীরা ইশারায় জিজ্ঞাসা করল,

-      কি হলো?

লালি জবাব দিলো না। শুধু দুই হাত তুলে হীরা কে ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। তাতে লালির বুকের কাছে ধরে থাকা বস্তা টা শরীর থেকে পরে যাবার উপক্রম হতেই সেটা হীরা ধরে নিল নিজের দুই হাতে। আর লালি সব ভুলে হীরা কে পাগলের মতন আঁকড়ে ধরে রইল। হীরা ও লালির বস্তা টা দুই হাতে ধরে লালির সম্ভ্রম আড়াল করে বাধ্য হয়ে লালির আদর খেতে লাগল।  

টিলার উপর থেকে পরেশ সেটা দেখতে পেয়েই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। যতই হোক বাবা পরেশ। আজকাল কার ছেলে মেয়ে গুনো কিচ্ছু মানে না বাপু! পরেশ এমন ভাব করল যেন কিছুই দেখেনি। পাশে ছিল নগেন। কিন্তু ততক্ষণে সবাই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়েছে।  নগেন জানেই হীরা আর লালির ব্যাপার টা আগে থেকে। টিলা থেকে প্রায় দৌড়ে নেমে এলো পরেশ। সাথে নগেন আর মহাদেব। পরেশের মতই মহাদেবের ও বেশ কিছুই দেখতে না পাওয়া আমতা আমতা ভাব। কথা ঘোরাতে পরেশ নগেন কে বলল,

-      বুঝলে জ্যাঠা কাশী তো এখানেই আছে। ওকে বলি সবার জন্য চা বানাতে। সাথে আর কি করতে বলি বলত।

নগেন বলল,
-      সে তোরা দুই বেয়াই আছিস। তোরা কি খাওয়াবি সে আমি কি জানি? তবে হ্যাঁ, আমি ভাবছি রাধা আর মাধবের বিয়ে টা আমি দেওয়াব। এই পুরো জলার মাঠে প্যান্ডেল করব। বাঘমুড়োর অত্যাচার যত গ্রামে হয়েছে, সবাই আমার, রাধা মাধবের বিয়েতে নেমতন্ন খাবে বুঝলি?

পরেশ বলল,
-      তা জ্যাঠা, লালি তো ওই ছোঁড়ার থেকে বয়সে বড়। সমস্যা নেই তো কোন?
-      কীসের সমস্যা? আর সমস্যার আমি কি জানি? মহাদেব কে জিজ্ঞাসা কর তুই!  ওর বাড়ির বউ হবে তোর মেয়ে। কি রে মহাদেব তোর আপত্তি আছে নাকি?

মহাদেব ভারী লজ্জায় পরে গেল নগেনের এমন সরাসরি প্রশ্নে। আমতা আমতা করে মহাদেব বলতে পারল কোন রকমে,
-      না মানে, আপত্তির কি আছে জ্যেঠা। লালি পরেশের সাথে সাথে আমাদের ও মেয়ে।

নগেন বেশ খুশী হলো। দেখল ওর পরিবার গ্রামের বাকি সকলের সাথে বসে আছে খোলা মাঠে। খেলছে ওর নাতিরা। অভির ধনুক টা নিয়ে খেলছে ছোট নাতি অভির দাদু সিধুর সাথে। আর অভি একটু দূরে বসে হাসছে ছোট নাতির কান্ড দেখে। নাহ আজকে আর কোন ক্লেদ নেই মনে। ভাগ্যিস! মনে মনে প্রণাম করল নগেন, তার মহান পূর্বপুরুষ দের উদ্দেশ্যে।
 
                                                                                 দশ বছর পর
সেই জলার মাঠ আর নেই। সে এক সুন্দর দেখতে খেলার মাঠ হয়ে গেছে। চারদিক এ চারটে বড় বড় লাইট এর পোষ্ট। রাতেও খেলা হয় এই মাঠে। একেবারে জলার ধারে মেয়ে জামাই কে বেশ অনেক টা জায়গা কিনে দিয়েছে পরেশ। সাথে একটা বেশ বড় বাড়ি। সামনে অনেক টা জায়গা সেখানে। হীরার অদ্ভুত সুন্দর গাছ করার হাত। মৃত প্রায় গাছেও হীরার হাত পড়লে ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে সে গাছ। সে ওই গাছ দেখে আর পড়াশোনা করে। লালি হীরার জন্য একটা পুরো ঘর জুড়ে লাইব্রেরী বানিয়ে দিয়েছে। হীরা আর লালির দুটো সন্তান হয়েছে। বড় টা মেয়ে আর ছোট টা ছেলে। মেয়ে টা যেমন লক্ষী বাপের মতন, ছেলেটা তেমন দুষ্টু মায়ের মতন।
জলা টা সরকার থেকে সংস্কার করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট আইল্যান্ড মতন বানিয়ে সেখানে ছোট ছোট পার্ক মতন করে দিয়েছে সরকার থেকে। রাতের বেলায় ঝলমল করে এই জলা আর জলার মাঠ। লালি আর হীরা অনেক রাতেই ছাদে উঠে দেখে জলের মধ্যে আলোর খেলা। শীতকালে জলার কুয়াশা আর আলোর লুকোচুরি দেখার মতন লাগে। কত লোকে ঘুরতে আসে এখানে তার কোন ঠিক নেই। বাঘমুড়োর জঙ্গল আর জঙ্গল নেই। পুরো রাস্তা তেই এখন আলো ঝলমল করে। গ্রামের ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা হয়ে গেছে কবেই। পুরোন দিনের মতন একটা বিশাল গেট তৈরি হয়েছে জঙ্গলের পরে গ্রামে ঢোকার মুখে, ঠিক সেখানে যেখানে পরেশ কে বাঘমুড়ো তে ধরেছিল।

লালি এখন সরকারী কলেজে পড়ায়। হীরা শুধু পড়াশোনা করে আর লেখা জোকা করে। অনেক লেখাই হীরার প্রকাশিত হয়েছে। লেখক হিসাবে নাম ডাক মন্দ নেই হীরার। কিন্তু সেই সব সামলায় লালি। লালি মনে করে হীরা যা করছে করুক নিজের মতন করে। লালির তো হীরার থেকে কোন এক্সপেক্টেশন নেই। ব্যস হীরা কে ভালোবাসতে ছাড়া আর কিচ্ছু চায় না ও। নিজেই সব করে। রান্না করে দেওয়া থেকে শুরু করে, হীরার সব কাজ ও নিজের হাতে করতে পছন্দ করে। পারলে খাইয়েও দেয় লালি। হীরার ও বিকার নেই সেই সব নিয়ে।

মাঝে মাঝে নগেন হীরার কাছে আসে বিকালে। গল্প করে যায়। নগেনের ও ভাল লাগে, হীরার সাথে লালির সাথে খানিক সময় কাটাতে। নগেন বহু চেষ্টা করেও অশ্বথামার অন্তর্ধানের ব্যাপার টা বুঝতে পারে না। লালি খুব চেষ্টা করে বোঝানোর কিন্তু নগেনের মাথায় ঢোকে না। বার বার মনে হয়,
-      এ তো সম্ভাবনা মাত্র। সত্যি যদি ভগবানের কৃপা তে ও সঠিক জায়গায় পৌঁছে যায়?

ঘরের কাজ করতে করতে আনমনা হয়ে লালি জবাব দেয়,

-      সেই কৃপাই তো হবে না ভগবানের। কয়েক লক্ষ বছর সময় লেগে যাবে দাদু। তুমি ভেব না।

দিন কাটে ওদের সুখ দুঃখে। কারোর কিচ্ছু মনে নেই হীরার ব্যাপারে। কেউ যেন ভুলিয়ে দিয়েছে সব কিছু কোন অদৃশ্য কালির ম্যাজিকে। শুধু নিজেকে সাজাবার সময়ে লালি লক্ষ্য করে ডান গালে হালকা তিনটে দাগ। কানের উপর থেকে একেবারে চিবুক অব্দি। হীরা লালি কে দেখে আর মুচকী হাসে। বস্তুত হীরা তাই চেয়েছিল। চেয়েছিল লালি সাধারণ বউ এর মতই তাকে ভালোবাসুক। সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতই লড়াই ঝগড়া, ভালোবাসা, খুনসুটি তে কাটুক তাদের দিন।  তার মা যেন তাকে আর দশটা ছেলের মতই ট্রিট করে। তার বাবা যেন তাকে বকাঝকা করে। হীরার ইচ্ছে এই জন্ম টা কোন রাজা নয়, ভগবান নয়, মানুষ হয়ে বাঁচতে। ছেলে হয়ে বাঁচতে, এক টা সাধারণ স্ত্রীর স্বামী হয়ে বাঁচতে। দুজনের একে অপরের ভালবাসায় বন্ধু হয়ে বাঁচতে। বাবা হয়ে বাঁচতে। ছেলেকে মেয়ে সকাল সন্ধ্যে বেলায় পড়াতে বসাতে। বাবার সেবা করে বাঁচতে। মায়ের আদরে বাঁচতে।

আজকে লালি অনেক সকালে উঠেছে। আজকে ওদের বিবাহবার্ষিকি। সাতাশে আগস্ট। যেত না কলেজে। কিন্তু যেতেই হবে। কাজ আছে। চলে আসবে তাড়াতাড়ি। কলেজে বের হবার সময়ে দেখল হীরা সামনে বাগানে মাচা বাঁধছে একটা ছোট্ট লাউ গাছের জন্য। ও হাতে ঘড়ী টা পরতে পরতে ডাকল হীরা কে
-      ওই , শুনছ?
হীরা এক মনে মাচা বাঁধছিল। সাড়া দিল,
-      উম্ম
-      খেয়ে নিও সময় মতন।
-      হুম
-      মেয়েকে খাইয়ে দিও কলেজ থেকে ফিরলে। বুঝেছ?
-      হুম। ঠিক আছে। ছেলে কোথায়?
-      মায়ের কাছে আছে।
-      হুম বেশ।
-      আচ্ছা ছেলে বাবা, দেখেও না একবার আমাকে। ছেলে মেয়ের খবর নেওয়া হয়ে গেল আর আমি কেউ নই। আরে, আমি বেরোচ্ছি তো!  

হীরা হেসে তাকাল লালির দিকে। বলল,

-      কই বের হচ্ছ তুমি? গাড়ীর চাবি নাও নি। পার্স এ টাকা নেই। টিফিন বক্স নাও নি আর আমাকে চুমুও খাও নি।

কি করে যে সব জেনে যায় হীরা কে জানে? রোজ এই কান্ড টা করে লালি। আর হীরা মনে পরিয়ে দেয় ওকে। লালি খুশী তে পাগল হয়ে গিয়ে বলল,

-      এই জন্যেই তো আমি অপেক্ষা করছিলাম। উম্মমাআহহহ ।

বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে হীরা দাঁড়িয়েছিল নিজেদের বাড়ির গেটে আর স্কুটি টা স্টার্ট দিয়ে লালি বলল,
-      এলাম তাহলে?
-      এস।
-      আর শোন, দুপুরে ঘুমবে বেশ?
-      আরে!! কেন? সেই কবে আমার দুপুরে ঘুমের অভ্যেস চলে গেছে। আমি ঘুমোব না।
-      আজকে অনেকে আসবে বাড়িতে সন্ধ্যে বেলায়, আমার বিবাহবার্ষিকির জন্যে। তোমার সাথে কথা বলাই হবে না। কালকে ছুটি আছে আমার। সারা রাত গল্প করব দুজনে। আর দুপুরে না ঘুমোলে তুমি সন্ধ্যে থেকে ঘুমিয়ে যাবে। প্লিস ঘুমিও!! প্লিস প্লিস প্লিস!!!

হীরা হাসল। লালি স্টার্ট দিল স্কুটি তে। হীরা তাকিয়ে দেখল লালির স্কুটি বাঘমুড়ো জঙ্গলের গেট পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। হীরা বলে উঠল লালির আগের কথার উত্তরে নিজের মনেই,
-      তথাস্তু।
                                                                               সমাপ্ত
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- তৃতীয় অধ্যায়, নতুন পর্ব ১৯- পেইজ ২১ - by nandanadasnandana - 27-07-2022, 10:12 AM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)