Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ... 

লালি অভির ধনুকের লক্ষ্য বরার ভালো করে তাকিয়ে দেখল, আঁধারে দাঁড়িয়ে বিশাল দেহী বাঘমুড়ো আর নীচে পরে আছে নগেন দাদু। ধীরে ধীরে জলার আত্মা দের কান্নার দামামা কে জয় করল লালি। কন্সেন্ট্রেট করল আর ও। জলার কান্না উপেক্ষা করে শোনার চেষ্টা করল নগেন দাদুর হার্টবিট। চলছে দাদুর হৃদপিণ্ড। জলার কান্নার দামামার পাশে, অভি আর রহিম দা র হৃদপিন্ডের শব্দ পেল আর পেল হালকা বাঘমুড়োর ধুকপুকুনি আর খুব ভাল করে শুনলে আর ও কম নগেন দাদুর ধুকপুকুনি। লালি নিশ্চিত হলো, নাহ ঠিক আছে দাদু। একটু দ্রুত চলছে হৃদপিণ্ড, কিন্তু সেটা ভয়ের কারণে। কিন্তু লালি ওদের পিছনে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পেল। সাথে তার ও বুকের ধুকপুকুনি। সাথে তীব্র দুর্গন্ধ। অশ্বথামা!!!!!
 
                                                                                  পর্ব কুড়ি
                                                                                  শেষ পর্ব
লালি অভি কে বলতে যাবে কথাটা,

-      অভি বাঘমুড়ো ছাড়াও কেউ আছে এখানে।   

কিন্তু তার আগেই দেখল অভি মারাত্মক কনফিউজ হয়ে নিজের ধনুক একবার বাঘমুড়ো আর একবার পিছনেই কাউকে লক্ষ্য করে, লক্ষ্য সাধছে। বার বার ওর ধনুকের লক্ষ্য বদলাচ্ছে। অভি ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে। লালি হাত টা অভির কাঁধে রাখতেই অভি একটু থামল। নাহ এবারে আর কানে শুনে কিছু করতে হচ্ছে না। কারণ অন্ধকার টা বেশ রয়ে এসেছে সবার। তার কারণ স্বরূপ লালি দেখল রহিম এবারে এগিয়ে গেল বাকি দুজন কে পিছনে রেখে। একা বাঘমুড়ো কে নয়। আর ও কাউকে দেখেছে রহিম। রহিমদার গলা থেকে মানুষের আওয়াজ নয়। অবাক করা হিস হিস শব্দ শুনতে পাচ্ছে লালি। সাথে সাথে রহিমদার চেহারা বড় হচ্ছে আর পেশী বহুল হচ্ছে, সেই আগের দিনের রাত্রের মতন যেদিনে ওরা প্রথমবার আক্রমণ করেছিল বাঘমুড়ো কে।

লালি নিজেও বুঝতে পারছে না কি করা উচিৎ। আক্রমণে যাওয়া উচিৎ নাকি কথা বার্তা তে সময় নষ্ট করা উচিৎ। কিন্তু আজকে নিষ্পত্তি না হলে আর নগেন দাদু ওদের জিম্মায় থাকলে, সর্বনাশ বাড়বে বই কমবে না। লালি প্রথম বলল রহিম কে,

-      রহিম দা সবার আগে দাদু কে মুক্ত করতে হবে ওদের হাত থেকে। দাদুর কাছে আছে মণির চাবি। কিন্তু বুঝতে পারছি না কি ভাবে আটকাব। একলা বাঘমুড়োই আমাদের জন্য বেশী। পিছনে আবার অশ্বথামা।

রহিমের কাছে এই সব কোন ব্যাপার নয়। রহিম ইচ্ছে মতন নিজের বল তূল্য করতে জানে শত্রুর সামনে। বাঘমুড়োর বল যতই হোক না কেন, রহিম কিছুক্ষণের মধেই তূল্য বল নিজের শরীরে সমাহিত করতে পারবে। ও ব্যস্ত এখন, বাঘমুড়োর দিকে ছুটে যেতে। 
তখন অভি বলল,

-      লালি দি ভরসা রাখ আমার উপরে। আমি অশ্বথামা কে আটকাচ্ছি। তুমি আর রহিম দা দাদু কে বের করে আনো ওখান থেকে।

অভির কথা শেষ ও হলো না। রহিম ছুটে গেল বাঘমুড়োর দিকে। লালি দেখল সাথে সাথেই অভির তীর টা লক্ষ্য বদলে বাঘমুড়োর পিছনে আসা, অন্ধকারের জন্য আবছা দেখতে পাওয়া অশ্বথামার দিকে ছুটে গেল একটা শিষ দিয়ে তীব্র বেগে। আর কানের পাশেই ছিলার শব্দে লালি জেগে উঠল। ভুলে গেল কিছু আগেও বাঘমুড়ো ওকে প্রায় হত্যা করে ফেলেছিল। রহিম কে অনুসরণ করল লালি তীব্র বেগে। দৌড়ন অবস্থা তেই ওর রূপান্তর হলো কয়েক লহমা তেই।

আর অন্য দিকে অভি বুঝল , অশ্বথামা চকিতেই তলোয়ার বের করে অভির তীর টা আটকে দিল। আওয়াজ হলো “ঠং”। অভি নিজেও জানে না কি করবে এবারে। যে এই রকম একটা তীব্র গতির তীর কে দুই ইঞ্চি চওড়া একটা তলোয়ার দিয়ে আটকে দিতে পারে অন্ধকারেই, তার শিক্ষা কি রকম মারাত্মক সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আর। কিন্তু অভির মধ্যে ভয় এর থেকেও বেশী দুষ্টু বুদ্ধি খেলল। তার মধ্যে ভয়ের থেকেও বেশী খেলা করতে ইচ্ছে হলো। মনে হলো অনেক যোদ্ধার সাথে একা সে লড়েছে আগেও। সেও যে অশ্বথামা কে পরাস্ত করেছিল তাও সাতজন মহারথীর সাথে একসাথে যুদ্ধের সময়ে সেটা অশ্বথামা কে বুঝিয়ে দিতে হবে এখনি। ও চকিতেই দুটো তীর কে জুড়ল একসাথে। অশ্বথামার শরীরে পৌঁছনর আগে দুটো তীরের মধ্যে গ্যাপ টা কত হতে পারে সেটা ও আন্দাজ করে ছিলা টেনে ধরল। দুটো তীর একসাথে বের হবার সমস্ত অঙ্ক ও জানে। কারণ যখন তীর দুটো ছিলা থেকে বের হবে তখন শুরু থেকেই একটা কোন তৈরি করে ইংরাজী ভি এর মতন দুটো তীরের মধ্যে গ্যাপ বাড়তে থাকবে। কাজেই গতি থাকতে হবে, আঘাত করতে হবে আর ভাবতে হবে, একটা তীর কে আটকাতে গেলে অন্য তীর টা যেন ওর কব্জি বা হাতে আঘাত করে। গ্যাপ টা ওই রকম আন্দাজেই নিক্ষেপ করতে হবে তীর টা। তবেই ও তরবারী ছাড়বে, না হলে এই তরবারি দিয়েই ও সব তীর আটকে দেবে। কারণ অভি তলোয়ার যুদ্ধেও অশ্বথামা কে পরাস্ত করেছিল। ও অশ্বথামা কে চেনে ভাল করেই। ওর যুদ্ধশৈলী অভি জানে।
দুটো করে তীর জুড়ে ও পর পর তিনবার ছুঁড়ল। আর ছুঁড়ল যেন প্রতিবারের মাঝে কোন গ্যাপই নেই। অভি নিজেও অবাক। কি ভাবে পারল ও এমন ভাবে তীর ছুঁড়তে? জানে না এই শিক্ষা ওর কোথা থেকে এল। কিন্তু তির ছুঁড়তে ছুঁড়তেই ওর মনে পড়ছে অনেক কথা। চারিদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বাতাসে রক্তের গন্ধ। আর তার সাথে মরণ আর্তনাদ। 

এদিকে অশ্বথামা মনে হয় ভাবেও নি একটা বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে এর প্রত্যুত্তর আসবে। বাতাসের হাওয়া কাটার শব্দে ও বুঝে তো ছিল তীর একটা না দুটো আসছে। ওর মনে একসাথে অনেক গুলো প্রশ্ন এল। আর সাথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতন হাতের তরবারি টা ঘুরে এল একচক্কর। তাতেই দুটো তির প্রতিহত হল পলকেই। কিন্তু ও ছিলার শব্দ আরো দুটো শুনতে পেয়েছে। মানে এর পিছনেও আরো আঘাত আসছে। এই ভাবনার জন্য যতটুকু সময়ের দরকার তার থেকেও কম সময়ে পর পর আরো চারটে তীর এসে আঘাত করল অশ্বথামা কে। প্রথম তীর টা প্রতিহত করতে পারলেও, পরের গুলো প্রতিহত করতে পারল না অশ্বথামা। বরং আসতে দিল তীর গুলো কে। এ জিনিস করতে পারত কিছু মানুষেই। অর্জুন, পিতা দ্রোণ, পিতামহ ভীষ্ম ছাড়া আরো দুজন। এক অঙ্গরাজ কর্ণ আর অর্জুন পুত্র অভিমন্যু। ততক্ষণে পরপর দুটো তীর এসে অশ্বথামার হাত থেকে ফেলে দিয়েছে তরবারি টা। আর দুটো তীর গেঁথে গেছে অশ্বথামা উরু তে আর একটা ফস্কে গেছে। উরুর তীর টা গ্রাহ্য করল না অশ্বথামা। অশ্বথামা ঝুঁকে তীর টা নিয়ে ওজন মেপে দেখল, এ তীর অঙ্গরাজের নয়। কর্ণের তীর আরো ভারী। ভীষ্ম আর পিতার তীর অপেক্ষাকৃত পিছনের সময়ে নির্মিত ছিল, বেশ ভারী আর সরাসরি আঘাত করত লক্ষ্যে। অনেক টা অর্ধ উপবৃত্তের আকারে। উল্লম্ব ছিল সেই উপবৃত্তের অবস্থান। বস্তুত অশ্বথামাও পিতার কাছে শিক্ষা লাভ করেছিল। সেই নিজের তীর বানাত ভারী। কম সময়ে লক্ষ্যে আঘাত করত অশ্বথামার তীর নিজের পিতার মতই। কিন্তু এ তীর হালকা। একমাত্র অর্জুন ভারী তীর ব্যবহার করত না। ওর শিক্ষা এতোই বলবান ছিল যে, ও পছন্দ করত হাওয়ায় তীরের অভিমুখ বদলাতে। অর্জুনের সাথে যুদ্ধে অশ্বথামার প্রতিবার পরাজয় ঘটত। কারণ ওই একটাই, এই অভিনব তীর তৈরির প্রকৌশল আর সেই তীর কে যুদ্ধে ব্যবহার ওর ই আয়ত্ত্বাধীন ছিল। যতবার অর্জুনের সাথে ওর যুদ্ধ হয়েছে, অশ্বথামার একটা তীরের বদলে ওর কাছে ধেয়ে এসেছে দশগুন তীর। একটা তীরে ও অশ্বথামার বানের জবাব দিত বাকী তীর সরাসরি অশ্বথামা কে আঘাত করত। অর্জুনের তীরের গতিপথ সর্বদিকে বাঁক নিয়ে আঘাত করত অভ্রান্ত ভাবে লক্ষ্যে। ওর সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠা একপ্রকার অসম্ভব ছিল। কিন্তু এ তীর অর্জুনের ও না। তীরের ফলা ছোট। অর্জুনের তীরের ফলা বড় হতো, হাওয়ায় খেলা করার জন্য। কাজেই এ তীর অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর। এতো দ্রুততার সাথে তীর ছুঁড়তে একমাত্র অর্জুন ব্যেতীরেকে সুভদ্রা-অর্জুন পুত্র ই পারে। অশ্বথামা দেখেছে চক্রব্যূহে অভিমন্যুর কেরামতি। সেদিনেই বুঝে গেছিল অর্জুন ছেলের ভিতরে নিজের অর্জুনত্ব একেবারে ঠেসে ঠেসে ভরে দিয়েছে ইরাবানের মতই।

ততক্ষণে অভি নিজের ধনুকে জুড়ে ফেলেছে আর ও দুটো তীর। অপেক্ষা করতে লাগল অশ্বথামার উঠে দাঁড়ানোর জন্য। আর এদিকে ঘোর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বাঘমুড়োর সাথে লালি আর রহিমের। আগের বারের মতন কেউ ই আর সপাট আক্রমণে যাচ্ছে না। মাপছে নিজেদের। লালি কে দেখছে আর বাঘমুড়ো ফুঁসছে। লালি তুলনায় দুর্বল তাই বাঘ মুড়ো লালির কাছে আর রহিমের থেকে দূরত্ব বেশী বজায় রাখছে। কিন্তু লালি আর রহিমের মধ্যে অদৃশ্য কোন কথোপকথনে দুজনাই একসাথে আক্রমণ শানানোর জন্য ছুটে গেল বাঘমুড়োর দিকে। বাঘমুড়ো এক হাত দিয়ে লালির বিশাল দাঁত এর আক্রমণ সামলালো আর অন্য হাতে রহিমের গদার মতন ঘুষি টা আটকে মাথা দিয়ে আঘাত করল রহিমের বুকে। রহিম ছিটকে গেল অনেক টা দুরত্ব আর সাথে সাথে বাঘমুড়ো লালি কে ধরতে গেল, কিন্তু লালি নিজেকে বাঁচিয়ে একটা নিরাপদ দুরত্বে এসে ঘুরতে লাগল বাঘমুড়োর চারিপাশে। ততক্ষণে দ্বিগুণ ক্রোধে উঠে এসেছে রহিম বাঘমুড়োর কাছে। 

এদিকে পিছন পিছন পরেশ, উমা আর মহাদেব ছুটে যাচ্ছিল লালিদের সাথে। কিন্তু ওই তিনজনের গতির সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠছিল না। শেষকালে একটা জায়গায় এসে সবাই থেমে গেল। সামনে জলার মাঠ তো দেখতে পাচ্ছে সবাই কিন্তু সেখানে কিচ্ছু নেই। উমা কেঁদে উঠলো মহাদেবের বুকে মাথা রেখে। সন্ধ্যে থেকে এমনিতেই হীরার জন্য কান্না কাটি করে কিচ্ছু খায় নি উমা সেটা মহাদেব জানে। মহাদেব দেখল এ জিনিস বড় সোজা না। নাহ উমা কে বাড়িতে পৌঁছে পরেশ কে নিয়ে ও বের হবে খুঁজতে সবাই কে। এই মহাদুর্দিনে ওই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো বাঘমুড়োর পিছনে ধাওয়া করতে পারে তাহলে ওরা কেন পারবে না। নগেন জ্যাঠা কে এই বয়সে তুলে নিয়ে গেলো ওই পিশাচের দল, তার কারণ ও কেউ বুঝতে পারছে না। একমাত্র পরেশ বুঝতে পারছে অল্প অল্প। ও বলল,

-      মহাদেব, চল উমা কে আমরা বড়িতে পৌঁছে দিয়ে গ্রামের লোক জড়ো করি। এই খানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই কোন। আমরা পাব না এই ভাবে ওদের কে।

মহাদেবের কিছু বলার আগেই উমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। চিৎকার করে বলল,
-      তোমরা যেখানে যাবে যাও। আমার ছেলেকে না নিয়ে আমি ওই বাড়িতে ঢুকতে পারব না কোনমতেই। আমার ছেলে চাই। দরকারে আমি নিজেকে শেষ করে দেব তবু আমি ছেলে ছাড়া বাড়ি ঢুকব না।

উমার কান্নায় পরেশ আর মহাদেব একে অপর কে দেখে নিয়ে উমা কে কিছু বলতে যাবে, সেই সময়েই দেখল পিছনে দল বেঁধে আসছে নগেন জ্যাঠার বাড়ির লোক। মহাদেব দেখল ওদের বাড়ির সবাই আছে একসাথে। অন্ধকারে কেউ হ্যারিকেন কেউ বা টর্চ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। নগেন জ্যাঠার ছোট ছেলে বিমল, পরেশের বন্ধু। ও বলল,

-      পরেশ, মহাদেব, আমাদের একবার বড় রাস্তায় যেতে হবে। ওদিকে হীরা সমগ্র গ্রামবাসী কে জড়ো করে এই জলার মাঠের দিকে আসছে। কিন্তু ওরা এই রাস্তায় নয়, আসছে মেইন রোড ধরে। জানিনা কোথা থেকে সব মশাল জ্বালিয়ে আসছে হীরার সাথে।
বিমল এর কথায় পরেশ মহাদেব দুজনাই অবাক হলো। পরেশ বলে উঠলো,
-      সে কী?

পরেশের কথা টা শেষ ও হলো না। উমা চিৎকার করে হীরা বলে চিৎকার করতে করতে বড় রাস্তার দিকে ছুটতে শুরু করল। মহাদেব ধরে রাখতে পারল না উমা কে। মহাদেব ও পিছন পিছন ছুটল,

-      আরে অন্ধকারে লেগে যাবে কোথাও। উমা শোন!!!

আর শোনার মতন অবস্থায় কেউ নেই। সবাই মিলে বড় রাস্তার দিকে দৌড়ল। মহাদেবের বাড়ির পিছনের গলি টা পার হবার সময়েই দেখছিল বড় রাস্তা একেবারে আলো হয়ে আছে। আর কৃষ্ণ নামে চারদিক মুখরিত। উর্দ্ধশ্বাসে গলি টা পার করে এসে দেখল দিনের মতন আলো চারদিকে মশালের। পরেশ দেখল কেউ বাকি নেই আর। সব বড়দের হাতে একটা করে মশাল আর সবার মুখে কৃষ্ণ নাম। আকাশে বাতাসে যেন সমবেত সঙ্গীতের মতন ধ্বনিত হচ্ছে। আর উমা নিজের ছেলেকে খুঁজে চলেছে পাগলের মতন। এগিয়ে গেছে অনেক টা আগে।  পরেশ আর মহাদেব সামনে ছুটে গিয়ে দেখল, হীরা এক এক করে বিশাল অশ্বত্থ গাছের পেটের ফুটো দিয়ে এক এক করে মানুষ পার করাচ্ছে উলটো দিকে আর উমা ছেলেকে পিছন থেকে পাগলের মতন জড়িয়ে ধরে আছে।
 
এদিকে জলার মাঠে, সামনে যোদ্ধার তীর দেখেই অশ্বথামা বুঝে গেল এই ছেলের সাথে লড়তে গেলে শুধু তীর ধনুক বা তরবারির যুদ্ধে পারা যাবে না। এর সাথে কথা আর তন্ত্র যুদ্ধ করতে হবে। মায়া যুদ্ধ না হলে এই ছেলেকে পরাস্ত করা যাবে না। পাশে পড়ে থাকা ধনুক টা হাতে নিয়ে অশ্বথামা হাঁক দিল,

-      অভিমন্যু!!!!

অভির মাথায় ঢুকল না কথা টা। তার নাম অভিজিৎ। অভিমন্যু নয়। আর অতো কথায় কাজ কি? লড় তুই, হয় তুই মরবি না হলে আমি। ও গেলই না ডাকের সাড়া দিতে, তড়িৎ গতিতে ধনুকে জুড়ে থাকা দুটো তীর নিক্ষেপ করল অশ্বথামার উদ্দেশ্যে। অশ্বথামা যেন জানত এটা। ছিলার আওয়াজের সাথেই ও নিজের ধনুকে তীর জুড়ে ছুঁড়ল। কিন্তু তাতে একটা তীর প্রতিহত হলেও বাকি টা আটকাতে পারল না অশ্বথামা। বাঁক নিয়ে এসে সোজা এসে বিঁধে গেল অশ্বথামার কাঁধে। অশ্বথামা এক ফোঁটা ও শব্দ করল না। ব্যাথার কোন লেশ মাত্র নেই ওর চোখে মুখে। শুধু তীরের ধাক্কায় পিছিয়ে গেল খানিক টা। শুধু বলল,

-      অভিমন্যু তুমি আমাকে মেরে ফেলতেই পার। তোমার সেই শিক্ষা আর বীরত্ব আছে। কিন্তু আমি কি মরব? পারবে না তুমি আমাকে মারতে। তোমার ই মামার শাপে আমি অমর। হাহাহাহাহাহা।

তারপরে খানিক চুপ থেকে বলল অশ্বথামা,

-      একটা কথা বল, তুমি কাকে বাঁচাতে এসেছ? মনে পরে, তোমার দাদা ইরাবান কে হত্যা করেছিল অলায়ুধের দাদা অলম্বুষ। তোমাকে কত ভালবাসত ইরাবান। মায়া যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ইরাবানের কাছে, অলম্বুষ সময় চেয়ে নিয়েছিল। ইরাবানের সেই দয়ার পরেও, বিশ্রাম রত সুদর্শন ইরাবানের গলা কেটে ফেলেছিল অলম্বুষ। আর তুমি সেই ইরাবানের হত্যাকারীর বংশধর দের বাঁচানোর জন্য আমার সাথে যুদ্ধ করছ? এরা আমার মণি চুরি করেছে অভিমন্যু। চোর কে শাস্তি দিতে দেবে না? এমন শিক্ষা তো তোমার নয়? তোমার বাবা মহানতম যোদ্ধা, অর্জুন সামান্য গরু চোর কে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের বারো বছরের বনবাস মেনে নিয়েছিল। আর তুমি সেই তুচ্ছ অপাংক্তেয় রাক্ষস অলায়ুধের বংশধর দের বাঁচাচ্ছ? আমার সাথে যুদ্ধ করছ?

গোল লেগে গেল অভির মাথায়। কি বলছে পিশাচ টা? ওকে অভিমন্যুই বা বলছে কেন ও। ও তো অভিজিৎ, শুধুই অভি। যা বলছে বলুক শয়তান টা। অভি ফের নিক্ষেপ করল দুটো তীর। অশ্বথামা আটকানোর চেষ্টা ও করল না। দুটোই গিয়ে বিঁধে গেল অশ্বত্থামার শরীরে। অশ্বথামা হেসে উঠলো জোরে। সাথে সাথেই অভি দেখল কালো মতন ধোঁয়ায় অশ্বত্থামা ঢেকে গেল। অভির মনে হলো কোন পিশাচ এসে অশ্বথামা কে ঘিরে ধরল। উফ কি মারাত্মক চেহারা। অশ্বথামার গলা শুনতে পেল অভি,

-      পারবে না অভিমন্যু আমার সাথে লড়তে। না তো তোমার বধ্য আমি , না তুমি আমাকে পরাজিত করতে পারবে। বরং আমি তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি, তোমার দাদা ইরাবানের হত্যার বদলা নাও।

ঠিক সেই সময়ে মাঠের শেষে গ্রামের শুরু তে একটা আলো দেখতে পেল দুজনেই। আর অশ্বথামা দেখল অলায়ুধের বংশধর উঠে বসেছে। এটাই চাইছিল অশ্বথামা। এদিকে বাঘমুড়োর একটা পদাঘাতে লালি ছিটকে চলে এসেছিল অশ্বত্থ গাছের বেদী তে। ও উঠে নিজেকে একটু সামলে নিতেই দেখল রহিম দা বাঘমুড়ো কে ছেড়ে কথা বলল না। হাতাহাতি হবার সময়েই বাঘমুড়োর দুটো হাত কে নিজের দুটো শক্তিশালী হাতে ধরে বুকে যে লাথি টা মারল তাতে অন্য কেউ হলে ওখানে হাত দুটো ছিঁড়ে শরীর টা শতখন্ড হয়ে ছিটকে পড়ত না জানি কত টা দূরে। কিন্তু বাঘমুড়ো র কিছু হলো না, শুধু লালি যেমন বাঘমুড়োর লাথি তে ছিটকে বেদীর কাছে চলে এসেছিল, বাঘমুড়ো ও ছিটকে এই দিকেই গড়িয়ে আসতে শুরু করল। লালি সময় নষ্ট করল না, হুংকার নিয়ে দৌড়ে গেল সামনে দিকে। গড়িয়ে আসা বাঘমুড়োর কাঁধে কামড়ে ধরে আবার ছুঁড়ে দিলো বাঘমুড়ো কে আবার রহিম দার দিকেই।রহিম এই সুযোগ একদম হারালো না । লালির থেকে আসা বেসামাল বাঘমুড়ো কে দুই হাতে আকাশে তুলে ধরে মাটিতে আছাড় মারল পলকেই। কেঁপে উঠল মাটি। এই প্রথম বাঘমুড়ো সময় নিল উঠতে। কিন্তু সেই অবকাশ ও দিল না ওকে রহিম। পা দিয়ে চেপে ধরল একটা হাত বাঘমুড়োর। আর অন্য হাত টা লালি কামড়ে ধরল ভয়ঙ্কর ভাবে।

ঠিক তখনি রহিম লালি আর সবাই দেখল অশ্বত্থ গাছের কাটা পেট থেকে একটা করে মশাল বের হচ্ছে আর সেই মশাল নিয়ে আসছে একজন করে মানুষ। দুজনাই এই ঘটনায় একটু বিহবল হয়ে গেল। আর সেই সুযোগ টা নিল বাঘমুড়ো। পা দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল সাথে সাথেই। আর উঠে পড়ল মাটি থেকে। আর উঠেই সামনের দৃশ্য দেখে হুহুংকারে চারিদিক ভরিয়ে দিল। রহিম আর লালি দুজনাই সরে এল বাঘমুড়োর নাগাল থেকে।

একটা অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হল মাঠে। গ্রামের সীমানা ধরে জলার মাঠ এর সামনেই গ্রামবাসী রা দাঁড়িয়ে আছে হাতে মশাল নিয়ে আর অবিরাম কৃষ্ণ নাম জপে যাচ্ছে। একটা অপার্থিব সুন্দর সুরে।
জয় জয় রাধা রমণ হরি বোল,
জয় জয় মধু সূদন হরি বোল।

ধীরে ধীরে লালির কানে দামামার মতন বাজতে থাকা জলার আত্মাদের কান্না কমতে শুরু করল। মনের মধ্যে ভয় ছাড়িয়ে, প্রতিশোধ ছাড়িয়ে এক অপ্রাকৃতিক শান্তি ফিরে এল। দেখল উমা কাকি কে নিয়ে হীরা বের হয়ে এল এই জলার মাঠে, অশ্বত্থ গাছের ফোকর দিয়ে। এই অন্ধকারেও যেও হীরার তেজ দেখার মতন। নগেন দাদুর কথা টা ফেলে দেবার মতন না। আহা কি রূপ!! মনে হলো সব ভুলে ওই দুই পায়ের তলায় গিয়ে বসে পরে লালি। যাক আর চিন্তা নেই। ছেলেটা আছে সামনেই। এখন বাঘমুড়ো নিজেকে বাঁচাক।

রহিম দেখল বিশাল অসীম সাগরে নিজের শীতল শরীরের শীতলতায় যে শুয়ে বিশ্রাম নেয়, যার গুরুভারে মাঝে মাঝে তার ও মনে হয় ঘুমের প্রয়োজন সেই অমিত শক্তি সামনে উপস্থিত।

অভি দেখল পিতার অনুপস্থিতি তে যে তাকে পিতার মতই আগলে রেখেছিল, যে তাকে পিতার মতই শিক্ষা দিয়েছে, যে তাকে পৃথিবীর সব থেকে বিপজ্জনক যোদ্ধা বানিয়েছে সেই বিশাল ছাতা তার সামনে। চারিদিকে শতশত মশাল জ্বলছে, কিন্তু তার মধ্যেই হীরা কে যেন আলাদা করে চিনে নেওয়া যাচ্ছে।

তিনজনেই ফিরে এল যুদ্ধের ময়দানে। ফুঁসতে থাকা রহিম ঘুরে দাঁড়ালো সামনে বিশালাকায় বাঘমুড়োর দিকে। মশালের আলোয় চকচক করে উঠলো লালির দাঁত। ঘুরে দাঁড়ালো লালি বাঘমুড়োর দিকে। অভি চোয়াল চেপে ধরে পলকেই জুড়ে নিল দুটো মহাশক্তিশালী তীর। টেনে ধরল আকর্ণ ছিলা অশ্বথামার দিকে লক্ষ্য স্থির করে । মনে মনে বলল, নিপাত যাক এই পিশাচ।
কিন্তু ততক্ষণে মনে হয় দেরী হয়ে গেছিল। অশ্বথামা বুড়ো নগেন কে তুলে ধরে গলার কাছে নিজের তরবারী টা ধরে রেখে দিয়েছে। অভি পারে এক্ষণি দুটো তীর দিয়ে এক ই সাথে অশ্বথামা র দুটো গলে যাওয়া চোখ কে ফুঁড়ে দিতে। কিন্তু নগেন দাদুর পা টলছে। অশ্বথামা তীরের আঘাতে পিছিয়ে গেলেই নগেন দাদুর গলায় ধারালো তলোয়ার টা বসে যাবে। ইশ যার জন্য এতো যুদ্ধ সেটাই এতো সহজে শেষ হয়ে যাবে। 
অশ্বথামা বলে উঠল,
-      ব্যস আমার কিচ্ছু চাই না। শুধুই মণি চাই আমার। আমার মণি। আমার। শেষনাগ, অভিমন্যু তোমরা বোঝ। এই জঘন্য অলায়ুধের বংশধর আমাকে বলে দিলেই আমি চলে যাব এখান থেকে। কারোর কোন ক্ষতি করব না।

নিজের বংশে গত তিন হাজার বছর ধরে বয়ে নিয়ে আসা এই মণির হদিশ নগেন মৃত্যুর বিনিময়েও বলবে না সেটা নগেন ও জানত। ওই মণি পৃথিবীর সম্পদ। কোন একটা অশ্বথামার নয়। ও চুপ করে রইল। কোন কথা বলল না। মনের মধ্যে অদম্য সাহস। শুধু প্রার্থনা করছিল কৃষ্ণের কাছে,

-      হে ভগবান এই শয়তান আমাকে মেরে ফেললে এই মণির দায়ভার চলে যাবে বংশের জ্যেষ্ঠ পুত্রের কাছে। তাকেও তুমি এই ক্ষমতাই দিয়ো। যে যেন এই মণির খবর কাউকে না দেয়। নগেন জানে। এই মণি ই পৃথিবী তে ভালত্ব বজার রেখেছে। ভাল খারাপের সমতা বজায় রাখে।

লালি দেখল নগেন চুপ করে আছে। হয়ত অশ্বথামা মেরেই ফেলবে নগেন দাদু কে। ঠিক সেই সময়ে হীরা চেঁচিয়ে উঠল,

-      দাদু বলে দাও মণির ঠিকানা। ওর পরিনতি ওই মণি তেই। বিশ্বাস রাখো আমার উপরে। মিথ্যা আমি বলি না

নগেনের আর কিছু বলার ছিল না। চোখ বুজতেই সেই অন্তর্নিহিত জ্ঞান চলে গেল অশ্বথামার কাছে। ব্যস কিছুক্ষণের নীরবতা আর সাথে সাথেই অশ্বথামা অন্তর্ধান করল। নগেন জানে যে জ্ঞান চাবি দিয়ে মণির দ্বার রক্ষিত ছিল সেই জ্ঞান চাবি দেবার সাথে সাথেই অশ্বথামা সেই জায়গায় চলে গেল। আর সকল অবাক করে দিয়ে, অশ্বথামার মধ্যেকার তন্ত্র শক্তি এসে বাসা বাঁধল বাঘমুড়োর শরীরে। ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি দুজনের শক্তি মিলিত হয়ে বাঘমুড়োর মধ্যে এসে ঢুকল। কালো হয়ে যে বিশাল ধোঁয়ার কুন্ডলী অশ্বথামা কে ঘিরে রেখেছিল সেটা ঘুরে গিয়ে সোজা বাঘমুড়োর শরীরে ঢুকে গেল।

গর্জন করে উঠল বাঘমুড়ো। কিছুক্ষণ আগেই রহিম আর লালির কাছে হারতে বসেছিল বাঘমুড়ো। কিন্তু এই গর্জন নতুন উদ্যমে আক্রমণের গর্জন। বিশাল কায়া নিয়ে বাঘমুড়ো এগিয়ে গেল রহিমের দিকে। কিছুক্ষণ আগে অব্দি রহিম কে ছেড়ে বাঘমুড়ো লালি র দিকে যাচ্ছিল আক্রমণের জন্য কিন্তু এবারে উলটো হলো। লালি কে ছেড়ে রহিম কে আক্রমণ করল বাঘমুড়ো। লালি সাবধান করে দিল রহিম কে। আর ততক্ষণে নগেন কে অভি পৌঁছে দিল অশ্বত্থ গাছের নীচে। অভি আর সময়ে নষ্ট করল না। বাঘমুড়ো কে প্রতিহত করতে , অনবরত তীরের বর্ষন শুরু করল। কিন্তু আশ্চর্য্য উপায়ে সেই তীর গুলো বাঘমুড়ো কে স্পর্শ করার আগেই যেন গলে গলে পরছিল মাটিতে। তবুও অভি থামল না।

এদিকে রহিমের দিকে বীর বিক্রমে ছুটে আসা বাঘমুড়োর এই দর্প সহ্য হলো না রহিমের। নিজের কালরূপ ধারণ করে হিস হিসিয়ে ছুটে গেল সেও বাঘমুড়োর দিকে। লালি শরীর টা কে পিছনে টেনে এনে, ধনুকের ছিলার মতন ছিটকে গেল সামনের দিকে বাঘমুড়োর উদ্দেশ্যে। যুযুধান তিন মহাবীরের যুদ্ধ সামনে থেকে প্রতক্ষ্য করতে লাগল সমগ্র গ্রামবাসী। চোখের সামনে এই মরণপণ যুদ্ধ না তো কেউ কোন দিন দেখেছে না তো দেখবে। কিন্তু সময় টা না তো রহিমের ছিল না ছিল লালির। অশ্বথামার তন্ত্র শক্তি বাঘমুড়ো কে কত শত বাঘমুড়োর মিলিত শক্তি দান করেছে সে নিয়ে কারোর ই ধারণা ছিল না। মহাকালের শক্তি জুড়ে গেছিল বাঘমুড়োর সাথে। মহাকালীর দুই রুদ্রানুচর বাঘমুড়োর সাথী হয়ে বাঘমুড়ো কে রক্ষা করছিল। সবার আগে ছিল রহিম। রহিম এর সামনে যেতেই রহিম সর্বশক্তি তে বাঘমুড়ো কে আক্রমণ করল। শরীরের যত শক্তি ছিল সেই শক্তি তে বাঘমুড়োর দুই হাত টেনে ধরে মাটিতে ফেলে দিতে চাইছিল শেষ নাগ। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। বাঘমুড়ো চোখের পলকে শেষনাগ কে মাটি থেকে তুলে যে আছাড় টা মারল, রহিম তাতে তীব্র বেগে ছিটকে সোজা জলার জলে গিয়ে পরল।

 লালি বুঝল শেষ নাগের সময় লাগবে বাঘমুড়োর সাথে বলের তূল্যতা আনতে। ততক্ষণে লালি ঝাঁপিয়েছে বাঘমুড়োর মাথা লক্ষ্য করে। কিন্তু এ তো একলা নয়। ওই সময়েও বাঘমুড়ো তীব্র ক্রোধে লালির দিকে ফিরেই পদাঘাত করল সোজা লালির বুকে। আর তার সাথে নখর যুক্ত সামনের হাতের তীব্র আঁচড়। কোন টাই বিফলে গেল না। দুটো আঘাত ই মারাত্মক রকম লালি কে আহত করল। লালি রহিমের মতই ছিটকে গিয়ে পরল জলার অন্য কিনারে। কিন্তু আর উঠতে পারল না লালি। ছুটে গেল পরেশ নিজের মেয়ের জন্য। আর সেটাই হলো কাল। বাঘমুড়োর অন্ধ ক্রোধ গিয়ে পরল পরেশের উপরে। চিনতে পারল বাঘমুড়ো প্রথম শিকার কে যা তার হাত থেকে বেড়িয়ে গেছিল ওই কুকুর টার জন্যে। বাঘমুড়োর ক্রোধের বলি হল পরেশ। অতি ক্রোধে পরেশ কে দুই হাতে ধরে, মুন্ডু ছিঁড়ে নিতে যাবে সেই সময়ে এগিয়ে এল হীরা। ততক্ষণে পরেশ জ্ঞান হারিয়েছে। শান্ত হয়ে বাঘমুড়োর কাঁধে হাত রাখল হীরা।

উলটো দিকে চারিদিকে কৃষ্ণ নামের মাঝে ভেসে আসছে হীরার মায়ের গলা,
-      ফিরে আয় হীরা, ফিরে আয়। যাস না বাবা মায়ের কোল ফাঁকা করে সোনা।

পিছন ফিরে হীরা কে দেখে আর হীরার মায়ের কান্না শুনে, একটা অপার্থীব আনন্দময় জিঘাংসা খেলে গেল বাঘমুড়োর মুখে। বড় আনন্দ পায় বাঘমুড়ো এমন অসহায়ের মায়ের বুক থেকে তার আদরের সন্তান কে কেড়ে নিতে। হাতের শিকারের থেকেও বেশী আনন্দ ওর এই মায়ের ছেলেকে তার বুক থেকে কেড়ে নিতে। ও ধীরে ধীরে জ্ঞান হারা পরেশ কে মাটিতে প্রায় আছাড় মেরে ঘুরে দাঁড়াল হীরার দিকে। হীরা বলল,
-      এবারে লড়াই এ ক্ষান্ত দাও শিশুপাল।

নগেন শুনতে পাচ্ছে না ওদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে কিন্তু ও ভাবতেও পারছে না, কি হতে চলেছে। ওর বৃদ্ধ চোখ কি ঠিক দেখছে? ও কি দেখছে, জগতের বিপদ টলিয়ে দিতে তিনি নিজে আসেন? ও কি দেখছে গত তিন হাজার বছরের ত্রাস কে মিটিয়ে দিতে, উনি নিজে গেছেন? নাহ এ নিশ্চই স্বপ্ন। সে নিশ্চই কোন গভীর স্বপ্নে মগ্ন। কিন্তু দেখতে তো পাচ্ছেই, বাঘমুড়ো এগিয়ে যাচ্ছে হীরার দিকে আর হীরা এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। বড় ইচ্ছে হচ্ছে ওদের কথা শুনতে।

এদিকে রহিম কোন রকম জলে থেকে উঠে, সামনে তাকিয়ে দেখছে, মাটির টিলার বেশ কিছু টা সামনে হীরা আর বাঘমুড়ো কে। হীরা পিছিয়ে আসছে আর বাঘমুড়ো জান্তব ক্রোধে এগিয়ে আসছে। হীরার বারংবার অনুরোধ করছে,

-      লড়াই থামাও শিশুপাল। এ লড়াই এ হারবে একজন ই। যে তোমাকে বধ করেছিল। এবারে ফিরে এস এই পিশাচ থেকে। তোমার তিন হাজার বছরের শাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাও। তোমার সাথে তোমাকে রক্ষা করতে থাকা, ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি কে বল চলে যেতে। ওদের কে মুক্ত করে দাও শিশুপাল। ওদের কে তোমার পাপের ভাগীদার বানিও না। শোন আমার কথা।  

হীরার কথা বাঘমুড়ো শুনতেও চাইছে না। চেষ্টা করছে সামনের একরত্তি ছেলেটা কে পদাঘাতে মাটির ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলতে কিম্বা ছিঁড়ে ফেলতে ছোট্ট মাথা টা দেহ থেকে। পা চালাল বাঘমুড়ো। কিন্তু অদ্ভুত কায়দায় হীরা সেটা এড়িয়ে গেল। হাত চালাল বাঘমুড়ো যেমন করে ওই কুকুর টার মুখ টা ফালা ফালা করে দিয়েছে সে তেমন ভাবেই এই ছেলেটার মুখ টা কে ফালা ফালা করে দিয়ে চাইল বাঘমুড়ো। কিন্তু এবারেও অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় সেই আঘাত ও এড়িয়ে গেল ছেলেটা। উফ এ থামে না কেন? হীরা বারংবার অনুরোধ করছে
-      অনেক হত্যা করেছ তুমি শিশুপাল, এবারে ক্ষান্ত দাও। এখনো ক্ষমা পাবে। সেই বাঘিনী কে মুক্তি দাও। সন্তান প্রসবা বাঘিনীর ক্ষমতা বড় কম নয় শিশুপাল। ছাড়খার হয়ে যাবে তুমি। আর তুমি ক্ষান্ত না হলে তোমার সেই পরিনতি ই হবে যা তোমার সেই রাজসভা তে হয়েছিল। আমার কথা শোন। এরপরে আর অনুরোধ করব না আমি।

কথা শেষ ও হলো না, তীব্র ক্রোধ আর বিরক্তি তে গর্জন করে উঠলো বাঘমুড়ো। এতো বড় স্পর্ধা!! একরত্তি একটা ছেলে। তার এতো বড় সাহস? সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে গেল বাঘমুড়ো। প্রথমে হাতের বল আর তারপরে পদাঘাত করল। হীরা হাত এড়িয়ে গেলেও পদাঘাত এড়িয়ে যেতে পারল না। ছিটকে গিয়ে একটা বিশাল মাটির টিলা ছিল, সেই টা তছনছ করে গিয়ে পরল জলার জলে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- তৃতীয় অধ্যায়, নতুন পর্ব ১৯- পেইজ ২১ - by nandanadasnandana - 27-07-2022, 10:12 AM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)