Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
                                                        পর্ব সতের

লালি প্রতিবাদ করল এবারে। বলল,
-      তবে তো এই পুকুরের চারিদিকে যারা আছে তারা কেউ ই ', নয়।
-      হ্যাঁ ঠিক তবে একজন ছাড়া।
-      কেউ ই নয় ',। তোরা ও ঘোষ। আমরাও ঘোষ। আর অভিরা মিত্র। আর নগেন দাদু রা চৌধুরী।
-      আমরা আর তোমরা গোয়ালা। অভিরা কায়স্থ। একমাত্র চৌধুরী হলে সম্ভব ', হওয়া।
-      কি ভাবে? চৌধুরী রা কি ', নাকি?
-      আমি পড়েছি, পদবীর ইতিহাস। চৌধুরী একটা উপাধী। যেমন আমরা ঘোষ কিন্তু উপাধি পেলে আমরাও চৌধুরী হয়ে যেতে পারি। বা তুমিও পার। দেখ আমি ভুল না হলে, বলতে পারি, আমি কিন্তু নগেন দাদুর কোমরে বাঁধা পৈতে দেখেছি। সযত্নে নগেন দাদু বা ওদের পরিবারের লোক পৈতে লুকিয়ে রেখে দেয়।  
-      ধ্যাত। কি যে বলিস তুই!!
-      অসম্ভব কিছু না। হয়ত সেই সময়ে সেই ', নিজের সন্তান আর নিজেদের বাঁচাতে ',ত্ব কে অন্তঃসলিলা করে বয়ে নিয়ে চলেছেন বংশানুক্রমে! তিনশো বছর আগে যখন অশ্বথামা এসেছিল এই গ্রামে প্রথম তখন তো ',ের কাছেই মণি আছে জানত। তাই না?
-      হ্যাঁ তোর থিয়োরী এখনো অব্দি ঠিক। কিন্তু এই মণির কথা টা নগেন দাদু আমাদের সকালেই বলল না কেন? আমি তো সকালেই দাদু কে কালকে তোর আর আমার ঘটনা টা পুরো টা বললাম।
-      ভয় পাচ্ছে। কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না দাদু। কারণ মণি কোনভাবেই অশ্বথামার হাতে পড়লে হবে না। সেইটাই হয়ত নগেন দাদু ভেবেছে।

লালি আবার দেখল পুকুরের জলে মণির আলোর খেলা। আকাশে হালকা মেঘ চাঁদ টা কে আবছা ঢেকে দিতেই মুহুর্তে মণির আলোর খেলার বদল হলো। গায়ে আরেকবার কাঁটা দিয়ে উঠলো লালির। এমন ও হয়? মনে হচ্ছে জীবন্ত কেউ খেলা করছে সবার বুদ্ধি আর সামর্থ্যের  সাথে। জলের মধ্যেই লুকিয়ে সোজাসুজি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, বলছে, এসো পারলে আমাকে খুঁজে দেখাও। লালি এবারে ঘুরে জিজ্ঞাসা করল হীরা কে,
-      আচ্ছা দিনের বেলায় কেন দেখতে পেলি না তুই? আমরাও দেখতে পাই নি।
হীরা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপরে বলল,
-      রাতেও দেখতে পাব বলে ভাবিনি আমি। কিন্তু আশা করে ছিলাম যে আমার সন্দেহ সঠিক হলেও হতে পারে। আমি বহুদিন ধরেই এই পুকুরে মাছেদের সাথে খেলা করি। জীবনে দেখিনি এই পুকুরে কেউ মাছ ধরছে। কেউ এই পুকুরের পরিচর্যা করে নি কোনদিন। তাও এই পুকুরের জল বেশ পরিষ্কার। মাছ ও আছে। সকালেই যখন বসে ছিলাম নগেন  দাদুদের ঘাটে ,তখন ই আমার মাথায় খেলেছিল, যে কিছু না হোক , এই পুকুরেই আছে মণি। শুধু দরকার সঠিক সময়। কিন্তু এটাই সব নয়।
-      আবার কি আছে?
-      শুধু রাত হলেই যে তুমি দেখতে পাবে এই মণি কে তার কোন মানে নেই।
-      কেন। এই তো দেখতে পাচ্ছি।
-      তাই?
-      হ্যাঁ।
লালি অবাক হলো। দেখতে তো পাচ্ছে লালি মণি। এতে সমস্যা কোথায়? ও আবার বলল হীরা কে,
-      হ্যাঁ দেখতে তো পাচ্ছি হীরা। সমস্যা কি?
-      ভাল করে চারিদিক দেখ।
লালি চারিদিক তাকাল। বেশ মনোরম প্রকৃতি। আকাশে চাঁদের আলো, পেঁজা মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। কিছু তো বুঝতে পারল না লালি। বলল,
-      হ্যাঁ দেখছি তো। কি হলো এতে?
-      আচ্ছা আমার মা রোজ ঘাটে সন্ধ্যে দিতে আসে, বড় ঠাম্মু ঘাটে সন্ধ্যে দেখিয়ে যায়। তোমাকেও সন্ধ্যে দেখানোর সময়ে দেখেছি ঘাটে এসে ধুপ দেখাতে। কই আজকে তো কেউ এলো না।
লালি চমকে উঠল একেবারে। সত্যি তো! কেউ তো আসে নি সন্ধ্যে দেখাতে। শাঁখ ও বাজে নি আজকে। অথচ চাঁদের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে রাত আট টা তো বাজবেই, অথচ না লালির বাবা ডাকতে এল না হীরার মা ডাকতে এল ওদের। নিদের পক্ষে খুঁজতেও তো কেউ আসবে। ঘাটে অন্যসময়ে অনেকেই আসে। কেউ তো আসবে! কিন্তু এতো টা সময় গেল কেউ তো আসে নি। অথচ চারিপাশের বাড়ি ঘর ওদের ই। এমন নয় যে কোন পুরোন সময়ে ওরা এসে পরেছে। একে তো মণির কাছা কাছি উপস্থিতি ওকে হয়ত শারীরিক ভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে তারপরে এমন ধাঁধা তে ওর মাথা টাই গুলিয়ে না যায় এবারে। হীরা লালি কে হাত ধরে ওঠাল। এবারে পায়চারি করতে শুরু করল ঘাটে। বলল,
-      তোমাকে কিছু কথা বলতে পারি যদি বিশ্বাস কর।

লালি ভাবল, এ আবার কি কথা। যা খুশী বল তুই। তুই যেমন লালির কাছে সেটাই অনেক। লালি ঘাড় নেড়ে বলতে বলল কথা টা। হীরা খানিক তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

-      প্রথম তিনটি মাত্রা এক্স ওয়াই আর জেড এক্সিস বরাবর থাকে। ঠিক? মানে ত্রিমাত্রিক। মানে দৈর্ঘ্য প্রস্থ্য আর উচ্চতা তিনটেই বর্তমান। ঠিক যে ভাবে আমরা পৃথিবী কে দেখি।
-      উফ আমি ফিজিক্সের টিচার হীরা। এগুলো জানি তুই বলতে থাক।
-      হ্যাঁ, এর পরে আসে চতুর্থ মাত্রা, মানে সময়। এতদুর অব্দি ঠিক আছে। পৃথিবীতে জীব আর জড় সবাই এই চারমাত্রায় অবস্থান করে বলা যায়। এই সমগ্রতা নিয়ে আমরা সময়ের সাথে সামনে দিকে এগিয়ে চলেছি, তাই তো?  জড়ের ক্ষেত্রে ও সত্যি কারণ অবস্থান পরিবর্তন না করলেও জড়ের ক্ষয় আছে। সামান্য পরিমাণ সময়ের হেরফেরে হয়ত সেটা বোঝা যায় না কিন্তু সেটা হয়। কাজেই বলা যেতে পারে আমরা চার মাত্রায় অবস্থান করছি।

লালি নিজের অর্জিত জ্ঞানের খাঁড়া তে হীরার বক্তব্যের নির্যাস ফেলেও খন্ডিত করতে না পেরে মেনে নিল,

-      হ্যাঁ তুই ঠিক বলছিস। তারপরে।
-      হ্যাঁ এর পর থেকেই শুরু হয় পসচুলেটস। মানে প্রকল্প। প্রকল্প বা পসচুলেট এই জন্যেই বলি কারণ এর কোন বাহ্যিক প্রমাণ আমরা পাই নি। যা পেয়েছি ম্যাথমেটিক্যাল প্রমাণ। কিন্তু সামনা সামনি কোন প্রমাণ নেই তাই।
-      হ্যাঁ ঠিক কথা। তারপরে?
-      তারপরে আসে পঞ্চম মাত্রা।
-      সেটা কি?
-      ধর, চার মাত্রা তে সময় যুক্ত হয় মাত্র। কিন্তু সময় পিছিয়ে নেওয়া যায় না। কারণ সময় তো এগোতেই থাকবে। পঞ্চম মাত্রায় সময় আগু পিছু করা যায়। মানে তুমি অতীত বা ভবিষ্যৎ এ যেতে পার।
-      কিন্তু সত্যি কি অতীত এ যাওয়া যেতে পারে?
-      সে তো তুমি নিজেই পোর্ট কী দিয়ে অতীতে গেছিলে। আমিও গেছিলাম। হ্যাঁ আমরা রিস্ক নিয়েছিলাম। সময়ের সাথে ঠাট্টা ইয়ার্কী করা ভালো ব্যাপার নয়। সময়বিজ্ঞান আয়ত্বে না থাকলে ঝামেলা হতে পারে। আর তার সাথে অসীম পরিনতবোধ থাকা আবশ্যিক। কাজেই তুমি জেনে গেছ যে অতীতে যাওয়া যায়।
-      হুম তারপরে?
-      তারপরে আসে ষষ্ঠ মাত্রা।
-      সেটা কি?
-      সেটা হলো, পঞ্চম মাত্রায় তুমি আগে পিছে করতে তো পারবে কিন্তু ডাইনে বাঁয়ে যেতে পারবে না। সেটা যখন পারবে তখন তুমি সিক্সথ ডাইমেনশন এ আছ সেটা জানবে। যেমন ধর কোন ছাত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যে সে মেডিক্যাল পড়বে না কি ইঞ্জিনীয়ারিং পড়বে। তখন সে মেডিক্যালের সিদ্ধান্ত সঠিক না হলে , আবার ফিরে গিয়ে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে পারবে।
-      বাপরে!! তারপরে?
-      এর পরে আসে সপ্তম মাত্রা। এই মাত্রায় একি লোক তার দুটো ষষ্ঠ মাত্রার রূপের সাথে দেখা করতে পারবে। মানে মেডিক্যালের ছাত্র আর ইঞ্জিনীয়ারিং এর ছাত্র একসাথে দেখা করতে পারবে বা কথা বলতে পারবে।
-      বলিস কি?
-      ইয়েস মাই লাভ। ইয়েস।
-      তারপরে?
-      সপ্তম মাত্রা তে এসে মানুষ খেই হারিয়ে ফেলে। কারণ এখানে একটা প্যারাডক্স তৈরি হয়। কারণ সপ্তম ডাইমেনশন এ একটাই মানুষ থাকবে তা নয়। যদি থাকেও, তবে ওদের মধ্যে ঝামেলা হলো আর মারামারি করে একটা মরে গেল। বিশাল বড় সমস্যা তৈরি হবে। জগত টালমাটাল করবে তাই না? তাই এখান থেকে প্যারাডক্স মানে ভুল ব্যাপার টার জন্ম হতে থাকে।
-      হ্যাঁ সেটাই তো , আমার মাথা কেমন ঝিম ঝিম করছে। এর সাথে এই মণির সম্পর্ক কি?
-      আছে আছে, আগে তোমাকে এই ব্যাপার টা বুঝতে হবে। আর বিশ্বাস করতে হবে।
-      আচ্ছা বল।
-      এর পরে আসে অষ্টম মাত্রা।
-      সেখানে কি হয়?
-      সেখানে সপ্তম মাত্রায় পৌঁছে যাওয়া এক ই ব্যক্তির দুটো রূপ ই জন্ম থেকে এক সাথে এক্সিস্ট করে।
-      মানে?
-      মানে হলো, এক টাই ছেলে জন্ম থেকেই মেডিক্যাল আর ইঞ্জিনীয়ারিং আলাদা আলাদা ভাবে প্রিপারেশন নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। মানে দুটো সেভেন্থ ডাইমেনশন মিলে যাবে। আর সেটাই হবে এইটথ ডাইমেনশন। আমরা এখন এইটথ ডাইমেনশন এ আছি।
-      অ্যাঁ??

লালির বিশাল বড় হাঁ দেখে হীরা হেসে ফেলল। লালি কে বুকে টেনে নিল একেবারে। বলল,

-      হ্যাঁ আমরা এইটথ ডাইমেনশন এ আছি। আমাদের সেভেন্থ ডাইমেনশন, আমাদের ই সেভেন্থ ডাইমেনশনের সাথে কোয়েন্সাইড করেছে। আমাদের মতই আরেক টা পেয়ার সেই সময়ে আছে যে সময়ে আমরা দুপুরে ছিলাম। সেখানে তারা হয়ত অন্য কাজ করছে , হয়ত আমাদের সাথেই আমাদের দেখা হয়ে যেতে পারে। বলতে পার আমরা সরে এসেছি আমাদের থেকে কিছু টা ডানে বামে।

মাথা ঘুরে গেল লালির। কি বলছে ছেলেটা। সুস্থ তো? কিন্তু এটা তো সত্যি যে ওরা অতীতে গেছিল। মানে ওরা ফিফথ ডাইমেনশন অনুভব করেইছে। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের সাথে, অভিজ্ঞতার বিশাল পার্থক্যে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলল লালি। হীরার দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝল এটা বোঝার ব্যাপার নয়, এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। যেমন কৃষ্ণ কে বিশ্বাস করে ও তেমনি এই পুরো ঘটনা টা বিশ্বাস করতে হবে। বাস্তবে যা চলছে সেটা নিজের জ্ঞান দিয়ে আর মাপা যাবে না সেই বাস্তবের গভীরতা। কিন্তু মাথায় প্রশ্ন তো জাগছেই। ও জিজ্ঞাসা করল,

-      আচ্ছা হীরা, তুই যা বলছিস তাই যদি হবে তবে তো, এই প্যারালাল সময়েও এক ই মানুষ বাস করছে। তারাও তো আসবে এই ঘাটে? কিন্তু কেউ তো আসছে না।

হীরা চুপ করল বেশ কিছুক্ষণ। তারপরে বলল,

-      এটা একটু জটিল। কারণ সময় বিজ্ঞান আয়ত্ত্বে না থাকলে এটা বোঝা বা করা একটু সমস্যার। এই মণি নিজেকে চাঁদ আর চন্দ্রালোকের সাথে মর্ফ করে রেখেছে। এর জন্য চাঁদের আলো থাকা খুব দরকার। আমার মনে হয় এই সময় আর জায়গা দুটোই একটা বিশেষ ডাইমেনশন এ আছে। মানে আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি চাঁদের জায়গা বদলাচ্ছে না। মাঝে মাঝে মেঘ আসছে আর তার সাথে মণির উজ্জ্বলতা কমছে বা বাড়ছে।
-      মানে? কি বলতে চাইছিস বুঝলাম না। এমন টা হয় নাকি?
-      হ্যাঁ হয়। মানে ধর তুমি অন্ধকার রাস্তায় আছ। চারিদিকে কোথাও কিছু নেই। ঠিক সেই সময়ে একটা ঘর দেখলে যেখানে ঢুকেই দেখলে দিনের মতন আলো। চারিদিকে লাইট জ্বলছে। বা উলটো টা। ঝলমলে আলোকিত কোন জায়গা থেকে একটা অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলে। এখানে সেটাই হয়েছে। একটা এইটথ ডাইমেনশন অন্য একটা এইটথ ডাইমেনশনের সাথে এমন ভাবে লুকিয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না কোন ডাইমেনশনের অংশ। এটা কে নাইন্থ ডাইমেনশন বলে। এর পরে এমন দশ টা ইউনিভার্স প্রত্যেকের কাছে এক ই ব্যক্তি দশ টা ইউনিভার্স এ প্যারালাল অবস্থান করে, জীবন অতিবাহিত করে। একে টেন্থ ডাইমেনশন বলে। এর পরে ১১ ডি ও আছে। তারপরে আছে অসীম ডাইমেনশন, তোমাদের বিজ্ঞানের ভাষায়………

লালি পাগল হয়ে যাবে বলে মনে হলো এবারে। হীরার মুখ টা হাত দিয়ে বন্ধ করে দিল। বলল,

-      আর না। থাক। এখন এই মণি নিয়ে কি করবি সেটা ভাব।
-      ভাবার কিছু নেই। এখানে কেউ আসতে পারবে না। কেউ না।
-      আমরা যে এলাম? আমরা আসতে পারলে অতো ক্ষমতাশালী অশ্বথামা পারবে না কেন?
-      হাহাহাহা। আমরা এলাম কারণ এই মণি কে দেখার ইচ্ছে ছিল আমার অনেক দিনের। সে অনেক দিন। মহাদেবের মণি। সোজা অশ্বথামার হাতে? দেখতেও পাই নি এই মণি কে আমি কোনদিন। এই মণি মহাদেবের আশীর্ব্বাদের মতন সমগ্র পৃথিবী তে বিরাজ করছে এই রকম ছোট ছোট সময় পুঁটুলি তে।
-      সময় পুঁটুলি? সেটা কি?
-       যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় তুমি বলবে টাইম লকার। চাবি না থাকলে এই লকার কোনদিন খুলবে না। আর কেউ আর্বিট্রারি খুলে ফেললেও বুঝতে পারবে না এটা মণি না চাঁদের আলো।
-      টাইম লকার? সেটা কি?
-      উফ বাবা এটাও বোঝে না। ধর তোমার কাছে দামী জিনিস আছে। তুমি কি রাস্তায় বা বাড়ির বিছানায় ফেলে রাখ?
-      না, আলমারি তে রাখি।
-      হ্যাঁ সেটা কি, এক ধরণের লকার তো? ঠিক তেমনি, জগতের বেশ কিছু রহস্য এই টাইম লকার এ লোকানো থাকে। ঠিক তেমনি ভাবেই এই মণি লোকানো আছে এই টাইম লকারে।

লালির বিশ্বাস তো দূর এই সব নিয়ে আলোচনা করতেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। অসম্ভব কিছু কথা বার্তা বলছে হীরা। কিছুই বুঝছে না লালি। কিন্তু বুঝল এই জায়গা টা সুরক্ষিত। জিজ্ঞাসা করল লালি,

-      তাহলে মণি নিয়ে ভয় নেই বলছিস।
-      সেটা কোথায় বললাম আমি? বললাম এই মণি কেউ নিতে পারবে না আর। ছুঁতেও পারবে না। যে ছুঁতে পারবে সে এই টাইম লকার এ ঢুকতে পারবে না। কিন্তু সেই মণি পাবার লোভে আর না পাওয়ার ক্রোধে কোন অনিষ্ট করবে না এ কথা তো বলিনি। আরও একটা ভয় আছে।
-      কি সেটা?
-      অলায়ুধের ছেলে, যে এই মণি টা নিয়ে চলে এসেছিল, তার উপরে বাসুদেবের কৃপা ছিল। কারণ যে পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করতে উনি মর্ত্যে এসেছিলেন, অলকৃষের মতন মানুষ দরকার ছিল তখন। একলা যুধিষ্ঠির নয়, সেই ধর্ম রাজ্যের সিংহাসনের পাঁচটা টা পা ছিল। প্রথম পা ছিল ধর্ম। যা জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবের সাথে ছিল। পরবর্তী পা ছিল সামর্থ্য। মধ্যম পাণ্ডব ছিল সেই পা। তৃতীয় পা ছিল ভুল থেকে শিক্ষা নেবার ক্ষমতা। অর্জুন ছিল সেই পা। চতুর্থ পা ছিল পরিশ্রম। সহদেব ছিল সেই পা। আর পরের পা ছিল নকুলের যা ছিল জ্ঞান এর পরিচয়। একলা রাজা নয়, পরবর্তী সমাজ রাজা কে পরিচালন করবে এই সব গুণের সাথে। এই শুরু টা বাসুদেব করে দিয়েছিল ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। যা ধীরে ধীরে কলি তে বিস্তার লাভ করে।

লালি অবাক হলো। হীরা একটা জিনিস বোঝাতে এতো শুরু থেকে শুরু করে যে খেই হারিয়ে ফেলে লালি। বলল
-      হ্যাঁ কিন্তু তার সাথে ভয়ের কি সম্পর্ক?
-      বলছি বলছি। একটু সবুর কর। এখানে সময় কাটালে তোমার ভয় নেই। এখানে কাটানো কাল আর আমাদের সময়ের কোন মিল নেই। এখানে ইউনিভার্স ছোট। সময় তীব্র গতি তে পার হয়। কাজেই টেনশন নিও না। ওখানে কেউ খুঁজছে না আমাদের। হ্যাঁ যা বলছিলাম,  সেই বিস্তার লাভের ক্ষেত্রে এই অলকৃষের মতন মানুষ দের প্রয়োজন ছিল। অলকৃষ জীবিত অবস্থা তেই ',ত্ব লাভ করেছিল, শিক্ষা, তপস্যা আর তিতিক্ষার বলে। সময় বিজ্ঞান আয়ত্ব করতে না পারলেও, যখন অলকৃষ এই গ্রামে এসেছিল তখন সুদর্শন এসেছিল কবচ বানানোর জন্য। সুদর্শন বাঘমুড়ো বা শিশুপাল কে হত্যা করতে চায় নি এমন না, কিন্তু পারে নি। বাধ্য হয়েই এই মহাকবচ বানিয়েছিল যাকে তুমি এখন নষ্ট হতে দেখছ। এটা সুদর্শনের দুর্বলতা বলতে পার। যাকে সুদর্শন দ্বিখন্ডিত করেছিল, সে তো মারা যায় নি। বেঁচে উঠে সুদর্শন সম বলপ্রাপ্তি হয়েছে শিশুপালের। কারণ সুদর্শনের সামর্থ্য বেঁচে ওঠার পরে শিশুপালের মধ্যে পর্যবাসিত হয়েছিল সবার অজান্তে। ও নিজেও জানে না সেটা। ওকে আগুন, কোন আধুনিক শস্ত্র মারতে পারবে না। তাই গত কয়েক হাজার বছর ধরে ও অবধ্য, অজড়, অমর হয়ে রয়েছে এই পৃথিবী তে।সেলফ হিলিং ওর আয়ত্বে। তাই সুদর্শন শুধু শিশুপালের গতিবিধি বেঁধে দিতে পেরেছিল মাত্র। আমার ধারণা সেই সময়েই এই মণি কে অলকৃষের অনুরোধে এই নাইন্থ ডাইমেনশন এ রেখে দিয়ে গেছিল সুদর্শন। কারণ সুদর্শণ জানত অলকৃষ কৃষ্ণের পছন্দের ব্যক্তি। সেই সময়ে অলকৃষ স্থানীয় রাজা কে অনেক সাহায্য করেছিল নিজের জ্ঞান দিয়ে। এই টাইম লকারের চাবি অলকৃষের বংশধর রাই জানে। আমার সন্দেহ সেটা নগেন দাদু বা ওদের বংশ।

লালি মন্ত্রমুগ্ধের মতন শুনছিল হীরার কথা। যেন কোন গল্প শুনছে। একে তো নাইন্থ ডাইমেনশন এই ওর মাথা বন বন করে ঘুরছে। তারপরে টাইম লকার বা সময় পুঁটুলি। না না এখন জানতে হবে ওকে , ভয় টা কোথায় এখনো? জিজ্ঞাসা করল,

-      কিন্তু ভয় টা কোথায়?
-      ভয় টা হলো, ওই টাইম লকারের চাবি। যে কোন রূপে থাকতে পারে সেই চাবি। কোন ভয়েস কী বা উইজডম কী। আর সেটা অলকৃষ এর বংশধর রা জানে। অশ্বথামা বা বাঘমুড়ো দুজনাই মায়াবী। সময়বিজ্ঞান পুরোপুরি আয়ত্বে না থাকলেও ও ব্যাপার টা বোঝে। এখন যদি অশ্বথামা ওদের থেকে কোন ভাবে নিয়ে নেয় এই চাবি তবে মুশকিল। আর এখানে চলে এলে মণি একেবারে সামনে। মর্ফ করে থাকলে, মানুষ বুঝবে না, কিন্তু ও বুঝে যাবে।

লালি ভয় পেল সত্যি করেই। হীরা কে বলল,

-      তোকে কথাটা বলা হয় নি। দুপুরে অলায়ুধ বা অলকৃষের বংশধর দের খোঁজ করছিল অশ্বথামা গ্রামের ভিতরে এসে।
-      হুম চিন্তার ব্যাপার। সব থেকে চিন্তার ব্যাপার হলো, এই যে আমরা আছি , আমরা একা নেই। প্যারালাল ইউনিভার্স আমাদের সাথে সাথে চলছে। আমরা জানিনা ওদের পৃথিবীতে ঢুকতে, কিন্তু অনেক জীব আছে যারা আমাদের পৃথিবী তে ঢুকতে পারে। আমাদের কথা শোনে। সবাই রূপ নিতে পারে না এখানে, কিন্তু কেউ কেউ জৈবিক রূপ ধারন করতে পারে। আমরা ভয় পাই সেই সব দেখলে। তবে সাধারণত আমাদের জৈবিক গঠনের কারণে আমরা ওদের দেখতে পাই না বা শুনতে পাই না। কিন্তু অশ্বথামার কাছে এই জীব দের সাথে কথা বার্তা চালানো সম্ভব। ও যদি এমন কাউকে ধরে জেনে যায় অলায়ুধের বংশধর দের তখন সমস্যা হতে পারে।

লালি আতঙ্কে জড়িয়ে ধরল হীরা কে। বলল,
-      তাহলে উপায়?
তারপরেই হীরা কে ছেড়ে দুটো হাত প্রনামের ভঙ্গী তে মাথার উপরে তুলে বলে উঠল,
-      হে মধুসুদন, হে হৃষীকেশ, হে প্রভু, উদ্ধার কর এই বিপদ থেকে আমাদের।
তারপরে মনে মনে বলল,
-      হে কৃষ্ণ , হীরা কে সব বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রেখ ঠাকুর।
অর প্রণাম শেষ ও হলো না, হীরা বলে উঠল,
-      উফ আমাকে ডাকছ কেন তাও আবার প্রণাম করে? বিয়ের পরে এমনি ভাবে প্রণাম করবে নাকি আমাকে। না না , আমার বাজে লাগবে। আমরা বন্ধু, বেশ?
-      বোঝ!! এই শোন, আমি কৃষ্ণ কে ডাকছিলাম, তার ও নাম হৃষীকেশ। আর উনি ভাবলেন ওনাকে প্রণাম করছি আমি। এতো দুষ্টু কি করে হলি তুই?
-      হাহা, শোন কোন মধুসুদন আসবে না।

লালি হীরার হাতে ফটাস করে মেরে বলল,

-      ছিঃ, ওমনি বলতে নেই ভগবান কে নিয়ে। আমার কি মনে হয় জানিস, আমাদের না এই ব্যাপার টা সবাই কে বলা উচিৎ।
-      হুম, তুমি বরং যাও। গিয়ে বল সবাই কে আমি একটু পরে আসছি।
-      কেন? দেখি কি করা যায় এখানে?
-      কি করবি তুই? না আমি তোকে ছেড়ে কোথাও নড়ব না।
-      আচ্ছা আচ্ছা থাক এখানে। উফ আমি কি বাচ্চা নাকি? এতো রহস্য সল্ভ করলাম এখানেই দাঁড়িয়ে।

বেচারী লালি, ঘটনার ঘনঘটায় অনেক কিছুই মাথা থেকে বেড়িয়ে গেল ওর। ভাবল না, এই টাইম লকারের চাবি হীরার কাছে কোথা থেকে এলো? হীরা কি ভাবে জানল সুদর্শনের কথা। আর হীরা, লালির মাথার ভিতরে নিজেকে এমন ভাবেই সেট করে ফেলেছে, লালির মাথাতে এই সব প্রশ্নের ঝুলি বের ই হলো না। লালি পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখল। বুঝতে পারল , একটাই সিন বার বার চলছে একটা বিশাল টাইম গ্যাপ এ। উফ কি খেলা প্রকৃতির। বেশ খানিক টা সময় না কাটালে আর ব্যাপার টা জানলে কেউ কিছু বুঝতেই পারবে না , এটা আসল নয় নকল একটা সিন রান করে চলেছে, রিপিট টেলিকাস্ট এর মতন। শুধু সেখানে টিভি বা পর্দা থাকে এখানে আসল প্রকৃতি আছে। মানে জল সত্যি করেই জল আর চাঁদ সত্যি করেই চাঁদ। উপর থেকে সর্বশক্তিমান এই সিন টা কে বাস্তবেই রিপিট করাচ্ছেন। চুপ করে ছিল লালি। মাথার ভিতরে সব টাই ঘেঁটে গেছে একেবারে।   হীরা কথা বলল এবারে,

-      তুমি একটু এখানে থাক, আমি জলে নামি। একবার মণির কাছে যাওয়া দরকার। মহাদেবের মণি, হয়ত ছুঁলে কোন সমাধান পেয়ে যেতে পারি।
-      না না কোন দরকার নেই। তুই নামলে আমি নামব।
-      আরে তুমি তো সাঁতার জান না। তাছাড়া অনেক তা গভীরে ডুব দিতে হবে।
-      তুই ভারী জানিস সাঁতার? আর হ্যাঁ আমি খুব ভাল সাঁতার জানি। আমি তোকে একলা ছেড়ে দেব না ব্যস। কিছু হলে একসাথে হোক।

লালির বিশ্বাস ছিল, যে ক্ষমতা ওর মধ্যে এসেছে, তাতে সাঁতার টা ওর সহজাত হয়ে গেছে। শেষের কথায় হীরা বেশ তুষ্ট হলো। দুষ্টুমি ভরা হেসে বলল,
-      বেশ তবে চল। একসাথেই হোক।

দুজনাই পরিপক্ক সাঁতারুর মতন ঝাঁপ দিল জলে। লালি দেখছে, মাছের মতই শরীর টা কে নিয়ে এঁকে বেঁকে তীব্র গতিতে মণির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হীরা। মণির কাছে পৌঁছে গেল ওরা অচিরেই। দুজনের মধ্যে কেউ ই হাঁপাচ্ছে না সামান্য ও। লালি অবাক হলো হীরা কে দেখে। প্রায় পঞ্চাশ মিটার সাঁতার কাটল হীরা। সাধারণ মানুষ হাঁপিয়ে যাবে। কিন্তু হীরা একেবারে নর্ম্যাল। আর লালি যে হাপাবে না সেটা লালিও জানত। কিন্তু মণির এতো কাছে এসেও কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না সেটা ভেবে অবাক হয়ে গেল।  হীরা লালির দিকে একবার তাকিয়ে ডুব দিল ভিতরে। পরিষ্কার জলে ডুব দিয়ে দেখল মণির ছটায় চারিদিক আলোয় থই থই করছে। সামনে হীরা তর তর করে গভীরে এগিয়ে যাচ্ছে। মণির কাছে পৌঁছে হাত টা বাড়াল হীরা পিছনে থাকা লালির দিকে। লালি হাত টা বাড়িয়ে দিল। হীরা হাত টা বাড়িয়ে লালি কে কাছে টেনে নিল। লালি এগিয়ে গিয়ে দেখল, ছোট্ট দেড় ইঞ্চি মাপের মণি টা। অনেক টা ডিম্বাকৃতি। তীব্র নয়, নিজেকে মর্ফ করতে যতটুকু আলোর প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই আলো নিয়ে একটা শাঁখের উপরে রাখা আছে মণি টা। হীরা আলতো করে মণি টা হাতে নিল। লালি অবাক হয়ে দেখল মণি টা হাতে রাখতেই জলের মধ্যে হীরার শরীর নীল বর্ন ধারণ করল। লালি ভয় পেয়ে হীরাকেই ধরল চেপে। হীরা মণি টা প্রণাম করে আবার নিজের জায়গায় রেখে দিল। লালির সাহস হলো না ওই মণি কে নিজের হাতে নেবার। এতো কাছ থেকে দেখতে পেয়েছে এটাই বিশাল ওর কাছে।

উপরে উঠে এলো দুজনাই। দুজনের জামা কাপড় ই জলে ভেজা। শীত করতে লাগল লালির। তাও নিজের ওড়না টা নিংড়ে হীরার মাথা মুছিয়ে দিতে লাগল। জিজ্ঞাসা করল,
-      কিরে কিছু উপায় পেলি?

মুখ এর সামনে ওড়না দিয়ে মাথা মুছে দেওয়ায় হীরার মাথা টা নড়ছিল। আর ততই বিরক্ত হচ্ছিল হীরা। বিরক্ত হয়েই বলল,
-      আরে ধুর!! কি করছ? ছাড় না এবারে। ছোট ছেলে নাকি আমি?
-      তুই? তার ও অধম রে। নিজেকে সামলাতে পারে না উনি আমার মণি সামলাতে পুকুরে ঝাঁপ দিলেন!!

হীরা মরে যায় এমন ভালবাসা পেতে। কিছু বলল না হীরা। লালি কে ইচ্ছে মতন নিজের আশ মিটিয়ে হীরার মাথা মুছতে দিল। যেমন দেয় নিজের মা কে। কিন্তু লালির প্রশ্নের উত্তর টা ও দিল। বলল,

-      হুম পেয়েছি একটা উপায়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- তৃতীয় অধ্যায়, নতুন পর্ব ১৬- পেইজ ১৮ - by nandanadasnandana - 22-07-2022, 01:31 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)