Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ............

তাহলে হিসাবে দাঁড়াল এটাই যে, বাঘমুড়ো দেওয়াল ভেঙ্গে দীনেশ কে তুলে নিয়ে গেছে? লালির বুক টা আঁতকে উঠল। আর পুকুর টা পেরোলেই হীরা দের বাড়ি। দীনেশ না হয়ে হীরা হলে কি হতো সেটা ভেবেই লালি ভয়ে কুঁকড়ে গেল একেবারে। কালকে রাতের বৃষ্টি তে কাদা হয়ে গেছে জায়গা টা। না হলে পায়ের ছাপ দেখে কিছু আন্দাজ করা যেত। কিন্তু কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না এখন আর। ওদিকে দুয়ারে বসে সরলা কাকি কাঁদছে ভীষণ। লালি আর সহ্য করতে পারল না সেই কান্না। বেড়িয়ে এলো ও বড়ি থেকে। মন টা খারাপ হয়ে গেল। ও বেড়িয়ে এসে বসল অশ্বত্থ গাছের তলায়। হীরা সেই পায়ের মাপে মেপেই চলেছে গাছের গোঁড়া থেকে। চারিদিক কেমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি হল সহসা। লালি বুঝল, সেটা লালির মনের ভয়ের কারণে।


                                                                                                 পর্ব পনেরো

লালি ভাবতে লাগল, এর শেষ তো আছে! হীরা কে দেখছিল ও আর ভাবছিল, বাঘমুড়ো গ্রামে ঢুকে এবারে নিজের শিকার ধরছে? সত্যি হাতে সময় বেশ কম। না হলে গ্রাম উজার হয়ে যাবে অল্প দিনেই। এই অশ্বথামা আর বাঘমুড়োর মিলিত শক্তি কে সামাল দেবার ক্ষমতা লালি দের নেই।  ততক্ষণে, পিছন পিছন বাকি তিনজন এসে হাজির। চার জনা মিলেই বসল গাছের তলার বেদী তে। চারজনেই চুপ। চারজন ই তাকিয়ে আছে হীরার দিকে। নগেন প্রথমে কথা বলল,\

-      দিদি ভাই ওই ছোঁড়া কি করছে বলতো?

লালি তাকাল নগেনের দিকে। লালি অন্যমনস্ক ভাবেই তাকিয়ে বলল,
-      সাতাত্তর পা গুনছে গাছের গোঁড়া থেকে। সিং দরজা খুঁজছে।
-      অ্যাঁ? ও কি করে জানল ওখানে সিং দরজা আছে?

লালি ঘুরে তাকিয়ে বলল,
-      সত্যি আছে?

নগেন ভারী অবাক হয়ে গেল এবারে। লালি কে বলল,
-      ও কি করে জানবে সেটা? আমি আমার দাদুও দেখেনি সেই সিং দরজা। শুনেছিলাম তিন চারশ বছর, কি তার ও আগে সেখানে সিং দরজা ছিল। গঙ্গা কাছেই ছিল তখন। দাদু বলতেন তার দাদু নাকি গল্প করতেন তাঁরা শুনেছিলেন, রাজা মহারাজাদের বড় বড় বজরা আসত গঙ্গার ঘাটে। আর আমাদের গ্রামের শুরু তে ছিল বিশাল সিং দরজা। ধীরে ধীরে বাঘমুড়োর উৎপাতে সব নষ্ট হয়। সে তো বহুকাল আগের কথা। আমাদের গ্রাম এবং আশে পাশের দশ টা গ্রাম নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। সেই সব প্রচলিত কথাই আমার দাদু লিখে একটা চটি বই প্রকাশিত করেছিলেন। পরে বেশ কিছু বার ওটার পূনর্মুদ্রন করলেও , সেটা বন্ধ আছে গত তিরিশ বছর। কিছু কপি হয়ত লাইব্রেরী তে আছেও এখনো। আমি দাদুর মুখেই শুনেছি গ্রামে প্রবেশের মুখে একটা বিশাল সিং দরজা ছিল। তাই অবাক হয়ে গেলাম যে এটা ওই ছোঁড়া কি করে জানল? কারন এই কথা লেখাও নেই ঐ বই এ। এটা আমি দাদুর মুখে শুনেছিলাম তাই বলতে পারলাম।

নগেনের এই দীর্ঘ কথায় লালি একটা ব্যাপার বুঝতে পারল যে, কালকের ঘটনা নেহাত কোন ছুটকো ঘটনা ছিল না। কালকের ঘটনার গুরুত্ব হীরা বুঝতে পেরেছে। আর মণির ব্যাপার টা সত্যি। সেই মণি এখানেই আছে। ততক্ষণে অভি ছুটে গেল হীরার কাছে। হীরার সাথে অভির সখ্যতা বেশ ভাল। রহিম দাঁড়িয়ে রইল মুখ ভার করে। ও বলেছিল যে আর কাউকে মরে যেতে দেবে না ও। কিন্তু কালকে দীনেশ এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, ওর মরে যাওয়ার আরেক নাম ই বলা যেতে পারে। তাই রহিম এর মন ও ভালো নেই। লালি ভাবতে লাগল কালকের ঘটনা বলে দেবে কিনা সবাই কে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। ও উঠে এল হীরার কাছে। সাথে সাথে নগেন ও উঠে এল। এদিকে হীরা নিজের মতন করে মাপছিল পা। লালি কাছে আসতেই ও বলল,

-      হিসাব মতন এই খানে সাতাত্তর পা শেষ হচ্ছে বুঝলে। এই খানেই হওয়া উচিৎ।

এই বলে সরলা কাকিদের বাড়ীর সামান্য আগে একটা জায়গা দেখাল হীরা। বলল,

-      কিন্তু এখান থেকে পরের ব্যাপার টা এগোনো ঝামেলা। একে তো সিং দরজা কত টা চওড়া ছিল সেটা আমরা জানি না। এই সিং দরজার বাঁদিক হয়ে আগমনীর আট পা যেতে হবে। এখন সিং দরজার পজিশন ই কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে পরের টা কি ভাবে বের করব?

নগেন চুপ ছিল এতোক্ষণ। কিন্তু এবারে কথা বলল,

-      আমার মনে হয় সেই সিংদরজা ছোট খাটো ছিল না। কারণ যতদূর আমি শুনেছি, সেই সিং দরজা দিয়ে দুটো ঘোড়ার গাড়ি পার করত এক ই সময়ে। তার মানে। মোটামুটি বারো ফুট চওড়া হতেই হবে তাই না। আর সিং দরজা এখানেই ছিল বুঝলি কি করে হীরা?
হীরা তাকাল নগেনের দিকে। অভি আর রহিম কিছুই বুঝতে পারছে না। নগেন ও বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছে যে হীরা সিং দরজা খুঁজছে। আর নগেনের কাছে সিং দরজা সম্পর্কিত কিছু তথ্য আছে। হীরা একবার নগেনের দিকে তাকিয়েই প্রায় লাফিয়ে উঠল আনন্দে,

-      দাদু কিছু জান তুমি কোথায় ছিল এই সিংহ দুয়ার?

নগেন হীরার উচ্ছ্বাসের সাথে পা মেলাল না। বস্তুত ওর মনেও অনেক প্রশ্ন। একে তো হীরা র কার্য কলাপ নগেনের কাছে ঠিক লাগে না। কিন্তু তা সত্বেও নগেন বলল,

-      না ঠিক তো জানি না। তবে এটা জানি যে তখন রাস্তা আর ও চওড়া ছিল। আর তা হলে, পুকুরের ধার দিয়ে এখন যে রাস্তা সেটার আধ খানা পুকুরের মধ্যেই পরবে। আর তাহলে সিং দরজার আধ খানাও এখন পুকুরের মধ্যেই ছিল। হিসাব করে দ্যাখ না। বারো ফুটের রাস্তা। আর জলার দিকে আমাদের গ্রামে ঢোকার এই রাস্তা টা আট ফুটের বেশী না।

হীরা ভাবল নগেন ঠিক কথাই বলেছে। তবে ছড়া অনুযায়ী, সিংদরজার বাম দিক দিয়ে আগমনীর আট পা যেতে হবে। লালির দিকে তাকাল হীরা। হীরা ধরেই নিয়েছে জলে নামবে ও। কিন্তু ঠিক জায়গা টা খুঁজে না পেলে সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। একে তো আগমনীর আট পা বুঝতে পারছে না। তারপরে সিং দরজা কোথায় সেটাও না পাওয়া গেলে সমস্যা বাড়বে। হীরা আমার মনে মনে আওড়াতে লাগল ছড়া টা। আচ্ছা নগেন দাদুর কথাও ঠিক হতে পারে। রাস্তা এটা ছিলই না হয়ত। না না তা কি করে হয়? ছড়া তে তো বলাই আছে, “পেট কাটা গাছ ডাইনে রেখে সোজা হাঁটা দাও”। তার মানে এই বরাবর ই রাস্তা। হ্যাঁ হয়ত চওড়া ছিল একটু বেশী। তাহলে সিং দরজার বাম দিকের থাম টা জলের মধ্যে এখন তাই তো? তারমানে জলে নামতেই হবে। হীরা জলে নামার তোড়জোড় করতেই লালি এসে বাধা দিল। বলল,

-      সাঁতার জানিস না জলে নামছিস কেন?

হীরা ভারী অবাক হয়ে গেল। বলল,
-      জানিনা বুঝি? কি জানি, আমার তো মনে হয় আমি সাঁতার জানি।
-      মনে হয় তুই সাঁতার জানিস? আর তার উপরে ভরসা করে তুই জলে নামবি? কোন দরকার নেই।

নগেন দুজনের কথাকাটাকাটি দেখছিল অবাক হয়ে। সত্যি পারেও আজকাল কার ছেলে মেয়েরা। নগেন এগিয়ে এল এবারে। মনে হল, হীরা কে সাহায্য করা দরকার। ও রহিম কে বলল নামতে। রহিম নেমে পরল জলে। হীরা রেগেই ছিল লালির উপরে, জলে নামতে না দেবার জন্য। এই বাচ্চাদের মতন ট্রিট করলে ওর একদম ভাল লাগে না। কিন্তু এই বারে ব্যাপার টা বাড়তে দিল না হীরা। ও এগিয়ে গেল পুকুরের ধারে। চেঁচিয়ে বলল রহিম কে,

-      রহিম দা দেখ কিছু শক্ত পাও কিনা জলের তলায়। মানে কোন শক্ত কিছু বা উঁচু জল তলের থেকে।
-      দাঁড়া দেখছি।

বাকি তিনজন দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের পাশে। দেখছে রহিম কে। লালি হীরার একটা হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রহিম জলের তলায় ডুব দিল। সবাই চাতকের মতন অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে রাস্তা দিয়ে দলে দলে লোক সরলার বাড়ি যাচ্ছিল, খবর নিতে। যেখানে লালিরা দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে হাত বিশেক দূরেই সরলার বাড়ি। ভিতরের কান্না কাটি সবাই শুনতে পাচ্ছে। এক এক করে মহাদেব, পরেশ ছাড়াও আরো অনেকেই এল দেখা করতে। ততক্ষণে ভুশ করে জেগে উঠল রহিম। সেটা দেখেই হীরা ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করল,

-      কিছু বুঝলে? কিছু পেলে?

চোখ থেকে জল টা মুছে রহিম বলল,

-      না রে কিছু পেলাম না।

হীরা বলল,
-      আর এক বার দেখ না প্লিস। বা এটাও দেখ যে, নীচের তল টা উঁচু হয়ে আছে নাকি?
-      আরে পাঁক এ ভর্তি। এখান টা ঘাট নয় যে। আচ্ছা আবার একবার দেখছি দাঁড়া। মনে হয় কিছু পেয়েছি।

আবার ডুব দিল রহিম। খানিক বাদে আবার উঠে এল। বলল,
-      যেখান টায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে একটা উঁচু ঢিপির মতন আছে। তবে উপরে পাঁক।

হীরা হিসাব করে দেখল ওই জায়গা টা হিসাব মতন রাস্তা থেকে ফুট আটেক দূরে। মানে সিং দরজার শেষ প্রান্ত টা হবে। হিসাব করে দেখল অশ্বত্থ গাছের থেকে সাতাত্তর পা হয়ে যাবে ওই দিক টা। ভাবল দেখাই যাক। বলল,

-      ওখান থেকে হিসাব করলে বাম দিক ধরে এগোতে হবে, পুকুরের পাড় অব্দি। হিসাব মতন মানুষের এক টা পদক্ষেপ গড়ে আড়াই ফুট হয়। তুমি পুকুরের পাড় অব্দি পা গুনে এস। সোজা আসবে। চেষ্টা কর তাল গাছের বাম দিকে পৌঁছনোর।

রহিম চেষ্টা করল সাধারণ পা ফেলে এগিয়ে যাবার। জলের সাথে লাগোয়া তাল গাছের বাম দিকে পৌঁছে বলল,

-      উনিশ পা হল।
-      হুম, কিন্তু এখানে তো আগমনীর আট পা লেখা আছে। কিন্তু হয়ে তো গেল উনিশ পা।

নগেনের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। লালিও তথৈবচ। হীরা জিজ্ঞাসা করল লালি কে,

-      আগমনী মানে মা দুর্গার মর্ত্যে আসা কে বলে তাই না?
-      হ্যাঁ। এগজ্যাক্টলি সেটা না। মায়ের বাপের বাড়ি আসার কনসেপ্ট কে বলে আগমনী। মানে আসা বা আগমন কথা টা কে একটা রূপ দেওয়া হয়েছে মায়ের বাপেরবাড়ি আসার সাথে।

হীরা চুপ করে গেল খানিক। বলল,
-      আগমন মানে আসা? আর আগমনী ? মানে আসি? আসি মানে আশি? আগমনীর আট পা? আশির আট পা? মানে আশির পরে আট পা? মানে অষ্ট আশি পা?  

পুকুর টা গোল করে এখানে রাস্তা ঘুরেছে। পাশের বাড়ি টাই হীরাদের বাড়ি। কাউকে কিছু না বলে , ও পা মেপে গুণতে গুণতে এগিয়ে গেল বাড়ির ভিতর দিয়েই। পিছন পিছন অবাক হয়ে বাকি সবাই চলল। নগেন এর মাথায় ঢুকছেও না কি করছে ছেলেটা। লালি হীরাদের বাড়ির ভিতর দিয়ে আসবার সময়ে,  একটা গামছা ঝোলানো ছিল, সেটা নিয়ে রহিম কে দিল মাথা আর গা মুছতে। ভিজে গায়েই রহিম হীরার পিছন পিছন উঠে এসেছিল। আর ততক্ষণে নিজের বাড়ি পেরিয়ে গিয়ে খিড়কী দরজা দিয়ে বেড়িয়ে একটা জায়গায় থামল হীরা। বলল,

-      এখানে অষ্ট আশি পা শেষ হচ্ছে।

জায়গা টা তে কারোর বাড়ী নেই। একটা জায়গা মাত্র। দুটো তিনটে খড়ের পালা রয়েছে বাঁধা। এই জায়গা টা নগেন আর মহাদেবের বাড়ির মাঝখান। আসলে জায়গা টা নগেনের স্বর্গত দাদার জায়গা। নিগেনের বৌদি নগেন দের সাথেই থাকে কিন্তু নগেনের দাদার ছেলে নেই। দুই মেয়ে দুজনের ই বিয়ে হয়ে গেছে। কাজেই এই সব জায়গা দেখাশোনা নগেন কেই করতে হয়। ওই জায়গার মাঝে দাঁড়িয়ে হীরা বলল,

-      এই জায়গা ঠিকানা। কিন্তু কীসের? মণির ঠিকানা তো না। তবে কীসের ঠিকানা?

মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগল হীরা। এতক্ষণে নগেন কথা বলল। লালি কে জিজ্ঞাসা করল,

-      কি ব্যাপার আমাকে বল দেখি খোলসা করে? কি খুঁজছে ছোঁড়া?

লালি একবার হীরা কে দেখল আর একবার নগেন কে দেখল। বলল,
-      দাঁড়াও বলছি?

তারপরে ঘুরে অভি কে বলল,
-      তুই হীরার সাথে থাকবি। আমরা পিছনেই চন্ডী মন্ডপে আছি। ওকে ছেড়ে নড়বি না বুঝলি? আর কিছু সে রকম বুঝলে হাঁক দিবি। আমরা চলে আসব।

অভি বলল,
-      আচ্ছা ঠিক আছে। কেন গো লালি দি কিছু বিপদ?
-      না না কিছু না। সব বলছি। তুই কিন্তু হীরা কে ছেড়ে কোথাও যাবি না বুঝলি?

তারপরে নগেন আর রহিম কে দেখে বলল,

-      চল চন্ডী তলায়। বলছি অনেক ঘটনা ঘটে গেছে কালকে। এস বলছি।

চন্ডী তলায় তিনজনে বসে পরল। লালি এক এক করে সব টা বলল নগেন আর রহিম কে। শুধু , কেন হীরার সাথে বিকাল ভ্রমণে বেড়িয়েছিল, সেটা এড়িয়ে গেল লালি। নিজের প্রেমের কথা কাউকে বলে কাজ নেই। নগেন দাদু আর রহিম বেশ অনেক টা বড় ওর থেকে। রহিম এর মুখে কোন কথা নেই। গামছা দিয়ে মাথা মুছছিল রহিম শুধু। নগেন এর মুখ খানা অস্বাভাবিক ছোট হয়ে গেছে। লালি কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। ও উত্তেজনার সাথে দুজন কে বলতে থাকল, সেই ',ের কথা। লালির হয়ত বলাও শেষ হলো না। ততক্ষণে হীরা ছুটে এসেছে মন্দিরে। এসেই লালি কে বলল,

-      বাবাহ এ উদ্ধার করা সমস্যার।
-      কেন কি হলো?

হীরা লালি কে কিছু না বলে, নগেনের দিকে তাকাল। জিজ্ঞাসা করল,
-      আচ্ছা দাদু এখানে কোন ঘোড়ার আস্তাবল ছিল?
-      ঘোড়া?

লালির অবাক হয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে হীরা বলল,
-      হ্যাঁ “হয় ঠিকানা” আছে ছড়া তে। হয় মানে তো ঘোড়া। তাই ভাবলাম যদি কোন ঘোড়ার আস্তাবল থেকে থাকে। না হলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।

লালি অভি আর রহিম তিনজনেই একসাথে তাকাল নগেনের দিকে। নগেন তখনো বেশ অন্যমনস্ক। তিনজনে এক সাথে তাকাতে, সবাই কে অবাক করে দিয়ে নগেন বলল,

-      হুম তা ছিল। তবে সেটা আমিও দেখেছি। যেখানে হীরা এতক্ষণ ছিল, সেখানে না। আমাদের বাড়ি টা যেখানে এখন সেখানেই ছিল বিশাল আস্তাবল। বলেছিলাম তো তোদের, যখন গঙ্গা কাছে ছিল, এই রাস্তা ছিল খুব ব্যস্ত রাস্তা। তাই এই গ্রামে পান্থ শালা ছিল বেশ কয়েক টা। পান্থশালা জানিস তো? এখন কার দিনের হাইওয়ে হোটেলের মতন। সেই সব পান্থশালায় আসা অতিথি দের ঘোড়া আস্তাবলেই থাকত। তবে হীরা যেখানে খুঁজছে সেখানে ছিল না এই আস্তাবল। ছিল আমাদের বাড়ির দক্ষিণে। বস্তুত সেই আস্তাবল ইংরেজ আমল অব্দি ছিল। আমি ছোট বেলায় দেখেছি ভাঙ্গাচোরা সেই আস্তাবলের কিছু টা। পরে আমার বাবা সেই আস্তাবলের সামান্য নিয়ে আমাদের বাড়ি টা বানান। এখন অবশ্য আমার ছেলে ও কিছু টা মডিফাই করেছে।

হীরা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো এক প্রকার। নগেন কে বলল,

-      লাভ ইউ দাদু। এস সবাই।

কথা শেষ ও করল না। ও পালাল তীব্র গতি তে নগেনের বাড়ির দিকে। পিছন পিছন সবাই গেল ওর। নগেনের বাড়ি পৌঁছে ও মাপ করে দাঁড়াল যেখানে রাধামাধবের মন্দির টা আছে। নগেন বলল,

-      এই মন্দিরের অংশটুকু আস্তাবল থেকে নেওয়া ছিল। বরং বাইরে থেকে দেখলে ভালো করে বোঝা যাবে।
ওরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এল। বস্তুত ওরা কি করছে কারোর খেয়াল নেই। কারণ দীনেশের বেপাত্তা হয়ে যাওয়া টা একটা বড় ধাক্কা সবার কাছে। সেই গোলমালে এই ছেলে গুলো, একটা বুড়োর সাথে কি করছে অতো মাথা ব্যাথা কারোর ছিল না। যেখানে আস্তাবল টা ছিল সেখান থেকে হীরা এবারে পঞ্চান্ন করতলের মাপ নেবার চেষ্টা করল। লালি কে বলল,

-       করতল মানে তো হাতের তালু । কিন্তু আমি দেখেই বুঝতে পারছি হাতের তালুর হিসাব করলে এই খানেই কোথাও হবে। মানে এই জায়গার কোন কোনে হবে। আর এই খানেই হলে পরের লাইনের সুত্র দেবার কি মানে? আর প্রশ্নই বা কই যে উত্তর পাবো?
তখন অভি বলে উঠলো,

-      হীরা দা, হয়ত হাতের তালু নয়। পঞ্চান্ন হাত বুঝিয়েছে। তুমি একবার মেপে দেখবে কি?

হীরা বলল,
-      হ্যাঁ সেটা হতেই পারে। কিন্তু কি প্রশ্নের বিপরীতে, সেটা না বের করতে পারলে পঞ্চান্ন করতল ব্যাপার টার কোন মূল্য নেই।

রহিম দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনছিল। লুঙ্গি আর গেঞ্জি টা ভিজে। মাথা টা মুছেছে হীরা দের গামছায়। ও  বলল,

-      প্রশ্ন কি কিছু আছে? নাকি প্রশ্নের বিপরীত কথা টাই এখানে বেশী কাজে আসবে? না মানে আমি লেখা পড়া বিশেষ করিনি। কিন্তু মনে হলো কোন প্রশ্ন এখানে নেই।
-      মানে?
-      মানে হলো, প্রশ্নের বিপরীত কি হয়?
-      উত্তর?

কথা টা বলে খানিক চুপ করে রইল হীরা। তারপরে উচ্ছ্বাসে রহিম কে বলল,

-      উফ রহিম দা, ইউ আর গ্রেট। ঠিক বলেছ তুমি, এখানে প্রশ্নের বিপরীতে মানে উত্তর দিকে পঞ্চান্ন হাত যেতে বলছে। অভি গোন তো ঠিক এই মাঝ খান থেকে পঞ্চান্ন হাত। ধরে নে হিসাব মতন, প্রায় পঞ্চান্ন আর সাড়ে সাতাশ, হলো গিয়ে, সাড়ে বিরাশি ফুট। তুই তিরাশি ফুট হিসাব কর। না হলে বত্রিশ তেত্রিশ পা গোন। দুমদাম পা নয়, নর্মাল সাধারণ পা।

অভি খানিক দূর গিয়ে বলল,

-      হীরা দা পুকুরে চলে যাচ্ছে তো।
-      অ্যাঁ?

পিছন পিছন সবাই গেলো। গিয়ে দেখল নগেন দাদুদের বাঁধানো ঘাটের কিনারায় দাঁড়িয়ে অভি। বলল,

-      এখানে সাতাশ পা হচ্ছে। আরো ছয় পা হলে পুকুরের মধ্যে হবে জায়গা টা।

লালির মুখে একটা হাসি ছিল। সেই হাসি উবে গেল যেন। বিশ্বাস করতে পারছে না সকাল থেকে এতোক্ষণের পরিশ্রম সব বিফলে গেল। পুকুরের মধ্যে নিশ্চই কেউ মণি ডুবিয়ে রাখবে না। কিন্তু হীরা চুপ রইল। কোন কথা বলল না হীরা। কিছু একটা চিন্তায় এগিয়ে গেল ঘাটের সিঁড়ির দিকে। জলে পা ডুবিয়ে বসে রইল গালে হাত দিয়ে।

একে একে সবাই চলে গেল। শুধু লালি আর নগেন রয়ে গেল সেখানে। হীরা চুপ করে বসে রইল জলে পা ডুবিয়ে। লালি দেখছিল হীরা কে। এই ছোঁড়া কে সত্যি ও বুঝতে পারে না। পরশু অব্দি এই সবে বিশ্বাস করে নি ও। কালকের পর থেকে এই রকম উৎসাহী হয়ে উঠেছে। কি ছেলে ও নিজের জানে সেটা। কিন্তু ওকে আর একা ছাড়া যাবে না। লালি ভাবল, উমা কাকি কে বলে আস্তে হবে ওই ছোঁড়া কে যেন একলা না ছাড়ে। এদিকে নগেন দাদু বেশ চুপ করে গেছে, লালির মুখ থেকে গত কালের পুরো ব্যাপার টা শোনার পর থেকে। লালি দেখল বেলা বেশ বেড়ে গেছে। ও হীরা কে তুলে উমা কাকির জিম্মায় রেখে দিয়ে আসার জন্য উঠল। আর দেখল নগেন দাদু ধীর পায়ে ঢুকে গেল বাড়ি। লালি হীরা কে জিজ্ঞাসা করল,

-      কি গোয়েন্দা মশাই, বাড়ি যাবি না? স্নান করেছিস?
-      উম?
-      উম কি? ওঠ। অনেক বেলা হয়েছে। বাড়ি চল। খেয়ে দেয়ে আবার ভাবতে বসবি। আমি তো জানতাম ওই ', ভুল ভাল বকছে। কিচ্ছু নেই মণি। তাও আবার অশ্বথামার? যেমন তুই তেমন ওই ', । চল এবারে!!

হীরা অন্যমনস্ক ভাবে তাকিয়ে ছিল, লালির কথায় বলল,

-      আচ্ছা তুমি নগেন দাদু কে কালকের ঘটনা বলার পরে দাদু কেমন চুপ করে গেল না? শুধু আস্তাবলের ব্যাপার টা ছাড়া বিশেষ কোন সাড়াশব্দ দেয় নি। তাই না?
-      হ্যাঁ তাতে কি? সব দিকে নজর এই ছেলের। দাদুর মন খারাপ। দীনেশ কে দাদু ভালবাসত খুব। দাদুর বাড়িতে গাই দুইতে আসত দীনেশ।
-      হুম হবে হয়ত। নাহ বাড়ি যাই। দুপুরে আবার ঘুম দরকার আমার। আজকের রাত টা সাবধান হয়েই থাকতে হবে আমাদের।

লালি শেষের কথা গুল অস্পষ্ট ভাবে শুনল। বুঝতে পারল না ও। মনে হলো যেন হীরা বলল, আজকের রাত টা সাবধানে থাকতে হবে। ও জিজ্ঞাসা করল,

-      কি বললি?
-      কিছু না। তুমি বরং একবার বগেন দাদুর বাড়ি যাও। মনে হয় উনি কিছু তোমাকে বলবেন।
-      মানে? তুই কি করে জানলি?
-      মনে হলো। আমার সাথে আর যেতে হবে না।
-      ইশ, ভাত খেয়ে তো আর বের হবি না, ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোবি। এই টুকুই তো আর থাকব তোর সাথে, আবার সেই বিকালে দেখা হবে। নগেন দাদুর বাড়ি না হয় পরে যাব একটু। এখন মায়ের ছেলেকে মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে আসি।

বাড়িতে ঢুকতেই হীরা নিজের হাত টা লালির হাত থেকে সরিয়ে নিল। লালি থতমত খেয়ে দেখল সামনে উমা কাকি দাঁড়িয়ে।
উমা কেমন একটা চোখে দুজন কে দেখল। উমার যেন মনে হল লালি হীরার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে আদর করছিল। উমা কে দেখেই হীরা হাত টা ছাড়িয়ে নিল। উমা লক্ষ্য করছে দুজনে বেশ কিছু টা সময় একলা একলা কাটায়। মায়ের চোখ, ব্যাপার টা যে অস্বাভাবিক, সেটা বুঝলেও, হীরা লালির সাথে প্রেম করছে এই ধারণা উমার হলো না। কারণ লালি কে উমা অসম্ভব ভালো বাসে। আর লালিও ছোট থেকে হীরার সাথে এই ভাবেই থাকে। গায়ে গায়ে লেগে থাকে।

এদিকে লালি উমার বিহ্বল মুখ টা দেখে হয়ত আন্দাজ করতে পারল, হীরার হাতে আদর করা টা কি উমা কাকি দেখে ফেলেছে? লজ্জার সাথে ভয় টা ও কাজ করল ওর মনে। কিন্তু সামলে নিল নিজেকে। সাথে সাথেই বলে উঠল,

-      কাকি, নাও তোমার গুণধর কে দিয়ে গেলাম। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই পেটকাটি থেকে নগেন দাদুর বাগান অব্দি। কান ধরে দিয়ে গেলাম চান করিয়ে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দাও পুচু টা কে।

উমা হেসে ফেলল,
-      তুই ধরবি ওর কান? ছোট বেলায় পড়াতিস, কত দুষ্টুমি করত। কোলে নিয়ে বসে পড়াতিস। এই তো দেখলাম হাতে খানা ধরে নিয়ে এলি।

লালির মনে হলো, এবারে মেদিনী দ্বিধা হয়ে যাক আর ও ঝাঁপ দিক সেখানে। সামাল দিল হীরা। হীরা তখন একটা গামছা নিয়ে স্নান করতে যাচ্ছিল, থেমে গিয়ে বলল,

-      এর মানে কি? আমাকে চান করিয়ে, খাইয়ে আর ঘুম পারিয়ে দিতে হয়?

লালি মুখ বেঁকিয়ে বলল,
-      তা না তো কি? এখনো মায়ের কাছ ছাড়া শুস না। আমি সবাই কে বলে দেব দ্যাখ।  

উমা লঙ্কা তুলছিল গাছ থেকে, মহাদেব কে খেতে দেবে। লঙ্কা তুলে কলের জলে ধুয়ে নিয়ে, হাসতে হাসতে বলল,

-      বলিস না মা আমার। এখনো যত টুকু করতে দেয়, ওই সব বললে আর করতে দেবে না রে মা।

হীরা কলতলায় জল ঢালতে ঢালতে বলল,
-      যাও তো!! বলগা!! না গো মা, তুমি ভেব না। আমি তোমার কাছেই শোব। কে কি বলল, আর আমি তোমার কাছ ছেড়ে অন্য কোথাও শোব, এমন বোকা আমি নই। হিংসুটে রে ভাই, আমি শুকিয়ে কেন যাই। আমার মন ভাল নেই তাই। বরং ওকে বলো, সেও চাইলে আমার মায়ের কাছে এসে শুতে পারে। আমি না হয় ওর কথা ভেবে আধ খানা মা ওকে দেব আমার। হিংসুটি। আহা ওর থেকে আরামের কিছু নেই। হরি হরি!!!

হুশ হুশ করে জল ঢালতে লাগল হীরা গায়ে।

-      আর একজনের নগেন দাদুর বাড়ি যাবার কথা ছিল। সে যেন পুকুরের ধার দিয়ে না যায়। বড় রাস্তা ধরে যেন যায়।

কথা টা শুনেই লালি দৌড় লাগালো নগেনের বাড়িতে। মন টা কি মারাত্মক ভাল হয়ে গেল। নিজের মা এর ভাগ দেবে? মানে বিয়ে হলে তো, উমা কাকি লালির ও মা হবে। কি দুষ্টু বাবা। মায়ের সামনেই কেমন করে বলে দিল কথা টা। কেউ কিছু বুঝতেও পারল না। আসতে আসতে শুনতে পেল উমা কাকি বলছে,

-      ভারী ভাগ দেনে বালা এলেন। আমি ওর ও মা। ও লাল, ছুটিস না পড়ে যাবি। ওই দেখ, পড়বি লো!!

লালি থামলই না। লজ্জায় থেমে গেলে এই মুখ আর ওদের কে দেখাতে পারবে না। কিন্তু হীরাদের দরজার কাছে এসে মনে পড়ল, হীরা বলছিল নগেন দাদু কিছু বলতে পারে ওকে। হীরা বুঝতে পারে এই সব কথা। লালির তো মনে হয় না কিছু! মানে লালি বুঝতেই পারে না কিছু। হীরাদের দরজা   থেকে বেড়িয়ে মাথায় এল, হীরা ওকে বড় রাস্তা ধরে যেতে কেন বলল। ও আর ভাবল না। লালি বড় রাস্তা নিল। বেশ দুপুর হয়েছে। রোদ একেবারে নিজের মেজাজে। গাছের পাতা ঝুলে গেছে। লালি গাছের আড়ালে আড়ালে আসছিল নগেনের বাড়ি। কিন্তু হীরাদের পাঁচিলের কোন টা যেখানে বড় রাস্তা থেকে হীরাদের বাড়ির গলি টা শুরু হয়েছে, সেখানে আসতেই দেখল, কটি পিসি র সাথে একটা অচেনা লোক কথা বলছে। লালির গা টা গুলিয়ে উঠল একটা বিশ্রী দুর্গন্ধে। কটি পিসিও নাকে সাদা কাপড়ের আঁচল টা চাপা দিয়ে আছে। কটি পিসির বাড়ি . পাড়ার আগে, মুচী পাড়ায়। সুন্দর তালপাতার চাটাই বুনতে পারে পিসি। পিসির বোনা অনেক গুলো শীতলপাটি লালিদের বাড়িতে আছে। হীরা পড়তে বসবে বলে, লালি একটা বড় শীতলপাটি হীরা র বাড়িতে দিয়ে এসেছিল। নিজের ওড়না টা, নাকে চাপা দিয়ে এগিয়ে গেল পিসির কাছে। ওকে দেখেই কটি পিসি বলে উঠলো,

-      দ্যাখ তো লালি কার খোঁজ করছে এই লোকটা। কি নাম বললে? অলকা না কি যেন একটা? কই গো বল?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- তৃতীয় অধ্যায়, নতুন পর্ব ১৪- পেইজ ১৭ - by nandanadasnandana - 20-07-2022, 02:29 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)