17-07-2022, 01:04 AM
(This post was last modified: 17-07-2022, 01:19 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অধ্যায় ২২ঃ জান্নাত ও প্রথম ডেট
পাঞ্জাবি পরলাম কেন জানি না। টিশার্ট কিংবা সার্টই বেস্ট হতো। পাঞ্জাবি পরে এখন কেউ ডেটে যায় বলে মনে হয় না। আর লোকে যা করে, তা আমি কোনদিন করিনা, আর সেটা অবশ্যই অনিচ্ছাকৃত।
দুপুর একটা বিশে যখন হাতির ঝিলে এসে পৌঁছলাম, তখন আকাশ মেঘলা, যেকোন সময় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। আমি ছাতা আনিনি। আসলে আমার ছাতাই নেই!
একটা পাইন গাছের নিচে বসলাম। গাছটা হয়ত কিছুদিন আগেই লাগানো হয়েছে, এখনও আছে কৈশোরেই, ছায়া দেয়ার ক্ষমতা বিশেষ নেই। ভ্যাঁপসা গরম, একটুও বাতাস নেই। কেন যে এই ছায়াহীন ঝিলে আসতে বললাম জান্নাতকে ধানমন্ডি লেক বাদ দিয়ে!
কাটায় কাটায় দেড়টায় জায়গামত এসে নামল জান্নাত। প্যান্ট, আর সাদা টপ্স। প্যান্টটা ওর পায়ের মাংসে আঠার মত লেগে আছে যেন। আমি নিশ্চিত, জান্নাত একটু হেললেই, প্যান্টটা ফেটে যাবে। এত লাইট প্যান্ট যে ওর হাঁটলে ওর ঊরুর কম্পন বুঝতে পারছি আমি।
হাঁ করে তাকিয়ে আছি দেখে, জান্নাত বলল, "এভাবে খাবি খাচ্ছো কেন?"
বললাম, "আপনাকে দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে!"
জান্নাত হেসে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। বলল, "তোমাকেও হ্যান্ডসাম লাগছে অনেক!"
"ধন্যবাদ আপনাকে এতদিনে লক্ষ্য করার জন্য!"
আমার বলার নাটকীয়তায় আবার হাসলেন জান্নাত। এবারে মুখে হাত দিয়ে, যেন রোদে ওর ধপধপে সাদা দাঁতে যে ঝিলিক লেগেছে সেটা আমার চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়!
আমরা ঝিলের ধারে একটা বাঁধানো বেঞ্চে বসলাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে একটা শলাকা।
জান্নাত আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল, "আমি তোমার সিনিয়র- আমার সামনে সিগারেট খাচ্ছো ঠিক আছে, তাই বলে অফার করবে?"
"সিনিয়রকে প্রেম অফার করতে পারলে সিগারেট অফার করতে পারি না?"
"তুমি আমাকে কোনদিন সিগারেট টানতে দেখেছো? আমি কোনদিন সিগারেট টানিনি!"
"আপনি আগে কোনদিন জুনিয়রের সাথে ডেটে এসেছেন?"
জান্নাত মাথা নাড়ল। বললাম, "আমি চাচ্ছি, আপনি আমাদের এই ডেটটাকে মনে রাখুন। তাই আপনাকে সিগারেট অফার করলাম!"
জান্নাত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। বললাম, "মানুষ তার প্রথমবার করা যে কোন কিছুকে খুব মনে রাখে। আর মনে রাখে, সে মানুষটাকে যার সাথে কাজটা করেছে। যেমন, প্রথম সাইকেলে চড়া, প্রথম প্রেমে পড়া, প্রথম চুমু, প্রথম সেক্স, প্রথম সিগারেট, প্রথম প্রেমপত্র ইত্যাদি। আপনি যেহেতু কোনদিন সিগারেট খাননি, তাই আপনি আমার সাথেই আজ প্রথমবার খাবেন। তাহলে আমাকে আপনি কোনদিন ভুলতে পারবেন না!"
জান্নাত আমার এক্সপ্লানেশন শুনে মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি তখনও ডান হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরেই আছি সিগারেট নিয়ে।
ও আমার কাছে থেকে সিগারেটটা নিল। আমি জ্বালিয়ে দিলাম লাইটটার দিয়ে।
কয়েকটা টান দিয়েই ও কাশতে লাগল গকগক করে ধোঁয়া ছেড়ে। আমি সামলে নিলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
কাশি থামিয়ে জান্নাত বলল, "বাজে অভিজ্ঞতা। তবে আমি সিগারেটটা শেষ করবোই!"
আমি অনেকটা সাহস করেই বললাম, "প্রথমবার সিগারেট খাওয়াটা অনেকটা মেয়েদের ভার্জিনিটি হারানোর মত। অভিজ্ঞতাটা বেশিরভাগ সময়ই খুব সুখকর হয় না!"
জান্নাত আমার এই কথায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না। বরং জোরে জোরে কয়েকটা টান মেরে আবার কাশতে লাগল। তারপর চোখ লাল করে আমাকে বলল, "সিগারেট টানার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিল। কেউ এতদিন বলেনি বলে টেনে দেখা হয়নি!"
জান্নাতের কপালে একটু ঘাম জমেছিল। হঠাত আসা জ্বর সেরে গেলে যেমন করে ঘামে মানুষ, সেভাবেই ঘামছিল জান্নাত। ভাগ্যিস আজ টিস্যু কিনেছিলাম। পকেট থেকে বের করে মুছে দিলাম ওর কপালের ঘাম।
কাপলদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কেবল। আমাদের থেকে দশ হাত দূরে একটা মেয়ে তার বফের কাঁধে মাথা রেখে ঝিলের পানি দেখছে।
জান্নাতের দিকে তাকিয়ে একদম ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, "কিছু বলুন! এমন চুপ করে আছেন কেন?"
জান্নাত কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, 'আচ্ছা, তুমি কী ভেবে আমাকে আজ ডেকেছো বলতো?"
আমি আসলেই কিছু ভেবে ওকে ডাকিনি। এই দেখা করা, কিছুক্ষণ কথা বলা ইত্যাদি প্রেম পর্যন্ত গড়াবে এমনটা ভাবার মত বোকা আমি নই।
বললাম, "আপনি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী আর সেক্সি মেয়েদের একজন। আপনাকে কাছে থেকে দেখতে, কথা বলতে ডেকেছি!"
জান্নাত বলল, "বাব্বা, তোমার মুখে সবসময় উত্তর লেগেই থাকে তাইনা? কিছু বললেই সাথেসাথে জবাব দেয়া চাই'ই চাই!"
চুপ করে রইলাম। ও বলল, "প্রেমের ভূত মাথায় নেই তাহলে?"
বললাম, "মাথায় ভূত চাপিয়ে লাভ নেই, বুঝে গিয়েছি। আমি শুধু মাঝেমাঝে আপনার সঙ্গ চাই। মানে এই দেখা হওয়া, আড্ডা মারা- এসব আরকি!"
"আচ্ছা, বুঝলাম" বলে জান্নাত আবার চুপচাপ হয়ে গেল!
কিছুক্ষণ উসখুস করে জিজ্ঞেস করলাম জান্নাতকে, "আচ্ছা, আপনি আমার সাথে দেখা করতে এলেন কেন? আপনি তো চান না আমার সাথে রিলেশনে আসতে!"
আমাদের পাশ দিয়ে একটা বাইক ভত করে চলে গেল! তার শব্দে চকিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জান্নাত বলল, "আমি জানি না!"
বললাম, "জানতে হবে না। আমার ক্ষুধা লেগেছে! খাবেন না?"
জান্নাত আমার কথায় ব্যস্ত হয়ে বলল, "হ্যাঁ। আমারও পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে!"
আমরা একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। খাবার অর্ডার করতে গিয়ে মেন্যু দেখেই টলে পড়ে যাচ্ছিলাম! খাবারের যা দাম, সবচেয়ে কম দামের খাবারটা খেলেও আমার অর্ধেক মাসের হাতখরচ চলে যাবে! মাসের বাকিক'টা দিন চলবে কীকরে?
পরে ভাবলাম, যা হবার হবে! মধ্যবিত্ত হয়ে বড় রেস্টুরেন্টে এসেছি সেক্সি মাল নিয়ে, পকেট তো খসবেই। বেশ্যা পাড়ায় নাম লিখিয়ে সিফিলিসের ভয় করলে চলবে না। আমার জীবনদর্শনের প্রথম লাইনটাই হলো, "টুমরো ইজ এনআদার ডে!" সেখানে পনেরো দিন পর কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবাটা বাতুলতা।
অর্ডার করতে গিয়ে দেখি, খাবারের নাম আমি উচ্চারণ করতে পারছি না। রোমান হরফেই লেখা যদিও। আমি ইতস্তত করছি দেখে মেন্যুটা নিয়ে জান্নাতই অর্ডার দিল আমাদের দুজনার হয়ে।
পরে জেনেছিলাম, ওটা একটা স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট। খাবারের নাম তাই উচ্চারণই করতে পারিনি!
খাওয়া শেষে বিল দিতে যাব, জান্নাত আমার হাত টেনে ধরল। বলল, "তোমার তো দেখছি সাধারণ ভদ্রতাবোধও নেই! বড়দের সাথে খেতে এলে বড়রাই বিল দেয়, এটা জানো না? আর পাকামি করে বল, তুমি বড় হয়ে গেছো?"
আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার জান্নাতকে মনে হচ্ছিল, সাক্ষাত দেবী! ও যেন সরাসরি কৈলাস থেকে রেস্তোরাঁয় এসেছে এই অধমের সাথে খেতে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি চনচনে রোদ। আকাশ বৃষ্টির পরের মেঘমুক্ত নীল। যদিও এমন আকাশ শরতে বেমানান। সাদা মেঘের ভেলা না থাকলে কাশে ফুটবে কেন!
জান্নাত আমার আগে আগে হাঁটছে। বললাম, "বড় আপুদের সাথে প্রেম করার কত সুবিধা দেখলেন? খাবারের বিল পর্যন্ত দিতে হয় না। আর আপনি বলছেন, কেন আপনার পিছনে আমি লাইন মারছি!"
জান্নাত হাত দেখিয়ে আমাকে থামতে বলে বলল, "হয়েছে! আর বলতে হবে না!"
ব্রিজের উপরেই এলাম আমরা। রোদ বলে খুব বেশি মানুষ নেই। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা!
বাতাস দিয়েছে। হাওয়ায় উড়ছে জান্নাতের চুল। আমার মুখেও এসে পড়ছে মাঝেমাঝে। একগোছা চুল ধরে গন্ধ নিলাম। কমলার মত গন্ধ- কমলার মত নাও হতে পারে, আমি ঠিক জানি না কীসের মত গন্ধ!
বললাম, "আপনার চুলের গন্ধটাও মাদকতা মেশানো!"
জান্নাত আমাকে আঙ্গুল দিয়ে ধাক্কা মেরে বলল, "ওটা আমার চুলের গন্ধ না, হাঁদারাম। ওটা শ্যাম্পুর গন্ধ!"
জান্নাতের দুধ খাড়া পর্বতের মত কিংবা বন্দুকের নলের মত দাঁড়িয়ে আছে, এত বড়বড় দুধ দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয়। নির্ঘাত ব্রা'র কেরামতি।
বললাম, "আপনি অনেক সেক্সি, এটা আপনাকে কেউ বলেছে?"
জান্নাত হাসল। বলল, "পার্থ প্রতিদিন বলে, কিডো!"
বললাম, "আবার কিড!" তারপর হেসে বললাম, "আমারটা কিন্তু আসলেই ছোট নয়!"
জান্নাতও বলল, "নিজেরটা নিয়ে খুব বড়াই না!"
"বড়াই করছি না। আপনি কিডো বলছেন, তাই বললাম!"
ও হেঁয়ালি করে বলল, "সাইজ ডাসেন্ট ম্যাটার! টেল্ডুলকার কত খাটো দেখেছো? অথচ ওর তিনগুণ লম্বা প্লেয়াররাও ওর মত রান করতে পারেনাই!"
এবার আমার একটু সাহসী স্ট্রোক খেলাই উচিত। বললাম, "অনেক ব্যাটসম্যানকে খেলিয়েছেন বুঝি?"
জান্নাত হাসতে হাসতে বলল, "পার্থ আছে তো! ওই আমার লিটল মাস্টার। একদম টেস্ট খেলে! খুব কম দিনই ছোট ইনিংস খেলে আউট হয় ও!"
বললাম, "একজনের সাথে খেলেই এত বড়বড় কথা বলছেন? আমাকে একটা চান্স দিয়ে দেখতে পারেন! বলা তো যায় না, আমি কোহলিও হতে পারি!"
জান্নাত আবার আঙ্গুল দিয়ে ঠেলা মেরে আমাকে বলল, "চুপ বেয়াদপ। নিজের লেভেলের প্লেয়ারের সাথে খেল। আন্ডার নাইন্টিন!"
এরপর আর কিছু বললাম না। আমরা ফিরলাম রিক্সা করে। শাহবাগ মোড়ে রিক্সা থেকে নেমে গেলাম আমি।
পাঞ্জাবি পরলাম কেন জানি না। টিশার্ট কিংবা সার্টই বেস্ট হতো। পাঞ্জাবি পরে এখন কেউ ডেটে যায় বলে মনে হয় না। আর লোকে যা করে, তা আমি কোনদিন করিনা, আর সেটা অবশ্যই অনিচ্ছাকৃত।
দুপুর একটা বিশে যখন হাতির ঝিলে এসে পৌঁছলাম, তখন আকাশ মেঘলা, যেকোন সময় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। আমি ছাতা আনিনি। আসলে আমার ছাতাই নেই!
একটা পাইন গাছের নিচে বসলাম। গাছটা হয়ত কিছুদিন আগেই লাগানো হয়েছে, এখনও আছে কৈশোরেই, ছায়া দেয়ার ক্ষমতা বিশেষ নেই। ভ্যাঁপসা গরম, একটুও বাতাস নেই। কেন যে এই ছায়াহীন ঝিলে আসতে বললাম জান্নাতকে ধানমন্ডি লেক বাদ দিয়ে!
কাটায় কাটায় দেড়টায় জায়গামত এসে নামল জান্নাত। প্যান্ট, আর সাদা টপ্স। প্যান্টটা ওর পায়ের মাংসে আঠার মত লেগে আছে যেন। আমি নিশ্চিত, জান্নাত একটু হেললেই, প্যান্টটা ফেটে যাবে। এত লাইট প্যান্ট যে ওর হাঁটলে ওর ঊরুর কম্পন বুঝতে পারছি আমি।
হাঁ করে তাকিয়ে আছি দেখে, জান্নাত বলল, "এভাবে খাবি খাচ্ছো কেন?"
বললাম, "আপনাকে দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে!"
জান্নাত হেসে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। বলল, "তোমাকেও হ্যান্ডসাম লাগছে অনেক!"
"ধন্যবাদ আপনাকে এতদিনে লক্ষ্য করার জন্য!"
আমার বলার নাটকীয়তায় আবার হাসলেন জান্নাত। এবারে মুখে হাত দিয়ে, যেন রোদে ওর ধপধপে সাদা দাঁতে যে ঝিলিক লেগেছে সেটা আমার চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়!
আমরা ঝিলের ধারে একটা বাঁধানো বেঞ্চে বসলাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে একটা শলাকা।
জান্নাত আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল, "আমি তোমার সিনিয়র- আমার সামনে সিগারেট খাচ্ছো ঠিক আছে, তাই বলে অফার করবে?"
"সিনিয়রকে প্রেম অফার করতে পারলে সিগারেট অফার করতে পারি না?"
"তুমি আমাকে কোনদিন সিগারেট টানতে দেখেছো? আমি কোনদিন সিগারেট টানিনি!"
"আপনি আগে কোনদিন জুনিয়রের সাথে ডেটে এসেছেন?"
জান্নাত মাথা নাড়ল। বললাম, "আমি চাচ্ছি, আপনি আমাদের এই ডেটটাকে মনে রাখুন। তাই আপনাকে সিগারেট অফার করলাম!"
জান্নাত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। বললাম, "মানুষ তার প্রথমবার করা যে কোন কিছুকে খুব মনে রাখে। আর মনে রাখে, সে মানুষটাকে যার সাথে কাজটা করেছে। যেমন, প্রথম সাইকেলে চড়া, প্রথম প্রেমে পড়া, প্রথম চুমু, প্রথম সেক্স, প্রথম সিগারেট, প্রথম প্রেমপত্র ইত্যাদি। আপনি যেহেতু কোনদিন সিগারেট খাননি, তাই আপনি আমার সাথেই আজ প্রথমবার খাবেন। তাহলে আমাকে আপনি কোনদিন ভুলতে পারবেন না!"
জান্নাত আমার এক্সপ্লানেশন শুনে মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি তখনও ডান হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরেই আছি সিগারেট নিয়ে।
ও আমার কাছে থেকে সিগারেটটা নিল। আমি জ্বালিয়ে দিলাম লাইটটার দিয়ে।
কয়েকটা টান দিয়েই ও কাশতে লাগল গকগক করে ধোঁয়া ছেড়ে। আমি সামলে নিলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
কাশি থামিয়ে জান্নাত বলল, "বাজে অভিজ্ঞতা। তবে আমি সিগারেটটা শেষ করবোই!"
আমি অনেকটা সাহস করেই বললাম, "প্রথমবার সিগারেট খাওয়াটা অনেকটা মেয়েদের ভার্জিনিটি হারানোর মত। অভিজ্ঞতাটা বেশিরভাগ সময়ই খুব সুখকর হয় না!"
জান্নাত আমার এই কথায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না। বরং জোরে জোরে কয়েকটা টান মেরে আবার কাশতে লাগল। তারপর চোখ লাল করে আমাকে বলল, "সিগারেট টানার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিল। কেউ এতদিন বলেনি বলে টেনে দেখা হয়নি!"
জান্নাতের কপালে একটু ঘাম জমেছিল। হঠাত আসা জ্বর সেরে গেলে যেমন করে ঘামে মানুষ, সেভাবেই ঘামছিল জান্নাত। ভাগ্যিস আজ টিস্যু কিনেছিলাম। পকেট থেকে বের করে মুছে দিলাম ওর কপালের ঘাম।
কাপলদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কেবল। আমাদের থেকে দশ হাত দূরে একটা মেয়ে তার বফের কাঁধে মাথা রেখে ঝিলের পানি দেখছে।
জান্নাতের দিকে তাকিয়ে একদম ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, "কিছু বলুন! এমন চুপ করে আছেন কেন?"
জান্নাত কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, 'আচ্ছা, তুমি কী ভেবে আমাকে আজ ডেকেছো বলতো?"
আমি আসলেই কিছু ভেবে ওকে ডাকিনি। এই দেখা করা, কিছুক্ষণ কথা বলা ইত্যাদি প্রেম পর্যন্ত গড়াবে এমনটা ভাবার মত বোকা আমি নই।
বললাম, "আপনি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী আর সেক্সি মেয়েদের একজন। আপনাকে কাছে থেকে দেখতে, কথা বলতে ডেকেছি!"
জান্নাত বলল, "বাব্বা, তোমার মুখে সবসময় উত্তর লেগেই থাকে তাইনা? কিছু বললেই সাথেসাথে জবাব দেয়া চাই'ই চাই!"
চুপ করে রইলাম। ও বলল, "প্রেমের ভূত মাথায় নেই তাহলে?"
বললাম, "মাথায় ভূত চাপিয়ে লাভ নেই, বুঝে গিয়েছি। আমি শুধু মাঝেমাঝে আপনার সঙ্গ চাই। মানে এই দেখা হওয়া, আড্ডা মারা- এসব আরকি!"
"আচ্ছা, বুঝলাম" বলে জান্নাত আবার চুপচাপ হয়ে গেল!
কিছুক্ষণ উসখুস করে জিজ্ঞেস করলাম জান্নাতকে, "আচ্ছা, আপনি আমার সাথে দেখা করতে এলেন কেন? আপনি তো চান না আমার সাথে রিলেশনে আসতে!"
আমাদের পাশ দিয়ে একটা বাইক ভত করে চলে গেল! তার শব্দে চকিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জান্নাত বলল, "আমি জানি না!"
বললাম, "জানতে হবে না। আমার ক্ষুধা লেগেছে! খাবেন না?"
জান্নাত আমার কথায় ব্যস্ত হয়ে বলল, "হ্যাঁ। আমারও পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে!"
আমরা একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। খাবার অর্ডার করতে গিয়ে মেন্যু দেখেই টলে পড়ে যাচ্ছিলাম! খাবারের যা দাম, সবচেয়ে কম দামের খাবারটা খেলেও আমার অর্ধেক মাসের হাতখরচ চলে যাবে! মাসের বাকিক'টা দিন চলবে কীকরে?
পরে ভাবলাম, যা হবার হবে! মধ্যবিত্ত হয়ে বড় রেস্টুরেন্টে এসেছি সেক্সি মাল নিয়ে, পকেট তো খসবেই। বেশ্যা পাড়ায় নাম লিখিয়ে সিফিলিসের ভয় করলে চলবে না। আমার জীবনদর্শনের প্রথম লাইনটাই হলো, "টুমরো ইজ এনআদার ডে!" সেখানে পনেরো দিন পর কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবাটা বাতুলতা।
অর্ডার করতে গিয়ে দেখি, খাবারের নাম আমি উচ্চারণ করতে পারছি না। রোমান হরফেই লেখা যদিও। আমি ইতস্তত করছি দেখে মেন্যুটা নিয়ে জান্নাতই অর্ডার দিল আমাদের দুজনার হয়ে।
পরে জেনেছিলাম, ওটা একটা স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট। খাবারের নাম তাই উচ্চারণই করতে পারিনি!
খাওয়া শেষে বিল দিতে যাব, জান্নাত আমার হাত টেনে ধরল। বলল, "তোমার তো দেখছি সাধারণ ভদ্রতাবোধও নেই! বড়দের সাথে খেতে এলে বড়রাই বিল দেয়, এটা জানো না? আর পাকামি করে বল, তুমি বড় হয়ে গেছো?"
আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার জান্নাতকে মনে হচ্ছিল, সাক্ষাত দেবী! ও যেন সরাসরি কৈলাস থেকে রেস্তোরাঁয় এসেছে এই অধমের সাথে খেতে।
বাইরে বেরিয়ে দেখি চনচনে রোদ। আকাশ বৃষ্টির পরের মেঘমুক্ত নীল। যদিও এমন আকাশ শরতে বেমানান। সাদা মেঘের ভেলা না থাকলে কাশে ফুটবে কেন!
জান্নাত আমার আগে আগে হাঁটছে। বললাম, "বড় আপুদের সাথে প্রেম করার কত সুবিধা দেখলেন? খাবারের বিল পর্যন্ত দিতে হয় না। আর আপনি বলছেন, কেন আপনার পিছনে আমি লাইন মারছি!"
জান্নাত হাত দেখিয়ে আমাকে থামতে বলে বলল, "হয়েছে! আর বলতে হবে না!"
ব্রিজের উপরেই এলাম আমরা। রোদ বলে খুব বেশি মানুষ নেই। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা!
বাতাস দিয়েছে। হাওয়ায় উড়ছে জান্নাতের চুল। আমার মুখেও এসে পড়ছে মাঝেমাঝে। একগোছা চুল ধরে গন্ধ নিলাম। কমলার মত গন্ধ- কমলার মত নাও হতে পারে, আমি ঠিক জানি না কীসের মত গন্ধ!
বললাম, "আপনার চুলের গন্ধটাও মাদকতা মেশানো!"
জান্নাত আমাকে আঙ্গুল দিয়ে ধাক্কা মেরে বলল, "ওটা আমার চুলের গন্ধ না, হাঁদারাম। ওটা শ্যাম্পুর গন্ধ!"
জান্নাতের দুধ খাড়া পর্বতের মত কিংবা বন্দুকের নলের মত দাঁড়িয়ে আছে, এত বড়বড় দুধ দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয়। নির্ঘাত ব্রা'র কেরামতি।
বললাম, "আপনি অনেক সেক্সি, এটা আপনাকে কেউ বলেছে?"
জান্নাত হাসল। বলল, "পার্থ প্রতিদিন বলে, কিডো!"
বললাম, "আবার কিড!" তারপর হেসে বললাম, "আমারটা কিন্তু আসলেই ছোট নয়!"
জান্নাতও বলল, "নিজেরটা নিয়ে খুব বড়াই না!"
"বড়াই করছি না। আপনি কিডো বলছেন, তাই বললাম!"
ও হেঁয়ালি করে বলল, "সাইজ ডাসেন্ট ম্যাটার! টেল্ডুলকার কত খাটো দেখেছো? অথচ ওর তিনগুণ লম্বা প্লেয়াররাও ওর মত রান করতে পারেনাই!"
এবার আমার একটু সাহসী স্ট্রোক খেলাই উচিত। বললাম, "অনেক ব্যাটসম্যানকে খেলিয়েছেন বুঝি?"
জান্নাত হাসতে হাসতে বলল, "পার্থ আছে তো! ওই আমার লিটল মাস্টার। একদম টেস্ট খেলে! খুব কম দিনই ছোট ইনিংস খেলে আউট হয় ও!"
বললাম, "একজনের সাথে খেলেই এত বড়বড় কথা বলছেন? আমাকে একটা চান্স দিয়ে দেখতে পারেন! বলা তো যায় না, আমি কোহলিও হতে পারি!"
জান্নাত আবার আঙ্গুল দিয়ে ঠেলা মেরে আমাকে বলল, "চুপ বেয়াদপ। নিজের লেভেলের প্লেয়ারের সাথে খেল। আন্ডার নাইন্টিন!"
এরপর আর কিছু বললাম না। আমরা ফিরলাম রিক্সা করে। শাহবাগ মোড়ে রিক্সা থেকে নেমে গেলাম আমি।