17-07-2022, 01:03 AM
(This post was last modified: 17-07-2022, 01:18 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অধ্যায় ২১ঃ দূরালাপে
রাত প্রায় এগারোটা বাজে, ঘুম ধরবে না এত তাড়াতাড়ি জানি বলেই বিছানায় শুইনি। একটা মুভি দেখা যায়। টরেন্ট থেকে এইমাত্র ডাউনলোড দিয়েছি। এনিমেশন মুভি। কুমফু প্যান্ডা। মুভিগুলো ছোটদের জন্য বানানো হলেও, বড়রা কম উপভোগ করেনা। দ্য লাওন কিং তো আমার প্রিয়তম সিনেমাগুলোর একটা।
হঠাত জান্নাতের কথা মনে পড়ল। ওর ডেপ্টের এক জুনিয়রের কাছ থেকে নাম্বারটা ম্যানেজ করেছি। সেদিন টিএসসিতে কথা বলেই বুঝেছি, আমি ফোন দিলে ও রাগ অন্তত করবে না, প্রেম না করুক।
এত রাতে ফোন দিব কিনা ভাবছি। হয়ত এখন প্রেমিকের সাথে কথা বলছে, কিংবা ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর চোখের নিচে কালি দেখিনি কোনদিন, তারমানে সময়মতই ঘুমায়- আমার মত প্যাঁচা নয়।
সিগারেট একটা ধরিয়ে সাতপাঁচ না ভেবে লাগিয়ে দিলাম ফোন। কিন্তু কী ভাগ্য, নাম্বার বিজি। আসলেই কারো সাথে কথা বলছে। নির্ঘাত প্রেমিক- এসময় অন্য কারো সাথে কথা বলার কথা নয়।
অগত্যা কুমফু প্যান্ডাই দেখা শুরু করে দিলাম। এমন সিনেমা- শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভুলে গেলাম জান্নাতের কথা। কিছুকিছু সিন দেখে হ্যাকখ্যাক করে হাসছিলামও।
হঠাত ফোনটা বেজে উঠল। স্কৃনে জান্নাতের নাম। বুকটা দুরুদুরু করা শুরু করল কেন জানি না। এমন না, জান্নাত আমার সাথে খারাপ আচরণ করলে, আমার কিছু যায় আসবে। তাও! হয়ত ভয়ে।
ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ও বলল, "আরে তুমি! আমি ভাবলাম, আব্বু!"
হতচকিয়ে গেলাম! যেন আমার গলা পেয়ে জান্নাত খুশীই হয়েছে! বললাম, "আব্বু কি আপনাকে আননৌন নাম্বার থেকে কল দেয় নাকি?"
জান্নার হাসল। বলল, "আর বলিও না, মাঝেমাঝে আমি কারো সাথে কথা বলছি কিনা জানার জন্য আব্বু অন্য অনেকের নাম্বার থেকে কল দেয়। তাই ভয়ে থাকি। নাম্বার বিজি থাকলেই রাগারাগি করে!"
বললাম, "তাহলে তো কল দিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছি আপনাকে! সরি! আমার জন্য বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভালমত কথা বলতে পারলেন না!"
জান্নাত সাথে সাথেই বলল, "আমি বফের সাথেই কথা বলছি, এটা কে বলল তোমাকে?"
"মনে হল। মেয়েরা এত রাতে বফের সাথেই কথা বলে সাধারণত! আমার অভিজ্ঞতা বলে!"
"তোমার অভিজ্ঞতা তাহলে কম আছে। এই যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি, তুমি তো আমার বফ নও!"
বললাম, "আসলেই তো! অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্যই তো আপনার সাথে প্রেম করতে চাইছি! আপনি তো পাত্তাই দিচ্ছেন না আমাকে!"
জান্নাত জবাবে কিছু বলল না। একটা সিগারেট জ্বালানো প্রয়োজন, কিন্তু প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি, খালি! এখন আমাকে আবার আটতলা নামতে হবে।
ফোন কানে লাগিয়ে রেখেই ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামা শুরু করলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, "বফের সাথে কথা বলছিলেন না তাহলে?"
জান্নাত বলল, "হ্যাঁ, বলছিলাম। আসলে ঝগড়া করছিলাম!"
"ঝগড়া প্রেমেরই অঙ্গ!", দার্শনিকের মত বললাম কথাটা।
জান্নাত বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, "হ্যাঁ, সেটাই!"
বললাম, "আচ্ছা, আপনার প্রিয় রঙ কী?"
জান্নাত জিজ্ঞেস করল, "কেন?"
বললাম, "আপনার প্রিয় রঙ্গের শার্ট পরে ঘুরব এখন থেকে। হঠাত আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলে যেন আপনি লক্ষ্য করেন!"
জান্নাত জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, "আহারে! কী ভাগ্য আমার! এত ডেডিকেটেড একজন এডম্যায়ারার পেয়েছি!"
আর একমিনিটের মত কথা হলো আমাদের। তারপর ও কেটে দিল ফোন হঠাত। টাকা শেষ হয়েছে ভেবে ব্যাক করলাম। কল বিজি। হয়ত আবার প্রেমিক ফোন দিয়েছে!
একটা দশ শলাকার গোল্ডলিফের প্যাকেট নিয়ে আট তলায় উঠলাম আবার। রুদ্রা ভাবির বাসার সামনে অনেকগুলো স্যান্ডেল দেখলাম। ভেতর থেকে জোর হাসির শব্দও পাচ্ছি। অতিথি এলো নাকি? নাকি কোন বন্ধু উকিল সাহেবের?
ঘরে ঢুকতেই আবার জান্নাতের ফোন।
বলল, "বাবা ফোন দিয়েছিল!"
বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম টানটান করে পা ছড়িয়ে। বললাম, "ঘরে বসেই কথা বলছেন? রুমমেটরা শুনছে না?"
জান্নাত বলল, "ফোর্থ ইয়ারে পড়ি, কিডো! সিংগেল রুমে থাকি আমি!"
কিডো বলল! মাত্র এক বছরের জুনিয়র বলে!
বললাম, "আমি কিন্তু আপনার খুব বেশি জুনিয়র না। মাত্র এক বছরের ছোট। কিডো বলাটা একটু বেশি হয়ে গেল না?"
জান্নাত আবার হাসল। বলল, "আমার বফ পার্থ আমার চেয়ে কত বছরে বড়, জানো? সাত বছরে!"
জান্নাতের সেই ফাটা জিন্স পরা, লম্বা চুলের বাইকার বফ ওর চেয়ে সাত বছরে বড়! এতদিন তো ওর চাকরি বাকরি করে বিয়ে করে বাচ্চাকে ফিডার খাওয়ানোর কথা! তা না করে জান্নাতের সাথে ফ্যাফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
কী আর বলব। পার্থ না কি যেন ওর নামও বলল, তার তুলনায় আমি বাচ্চাই! বললাম, "এক বছরে ছোট হতে পারি। কিন্তু আমারটা কিন্তু ছোট না!"
বলেই জিহ্বা কাটলুম! মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে। এখনও আমাদের যোগাযোগ এত মজবুত হয়নি যে, এডাল্ট রসিকতা করব!
জান্নাত বলল, "কী বললে? তোমারটা ছোট না?"
মিথ্যা বললাম, "না না। বললাম, আমি কিন্তু ওত ছোট না!"
জান্নাত জেদী! বলল, "তুমি বলেছো, 'আমারটা কিন্তু ছোট না'। আমি স্পষ্ট শুনেছি!"
ধরা পরে গিয়েছি। বললাম, "আসলে, আমি কিন্তু এত ছোট না বলতে চেয়ে। তার বদলে আমারটা বলে ফেলেছি!"
জান্নাত বলল, "বুঝতে পেরেছি। ব্যাপার না!"
এবারে সাহস করে বললাম, "কথাটা কিন্তু সত্য!"
জান্নাত কৌতুহলের সাথে বলল, "কোনটা?"
বললাম, "আমারটা আসলেই ছোট না!"
লাইনটা কেটে গেল। প্রথমবার ভুলে বললেও, পরেরবার ইচ্ছে করেই বলেছি। নিজের বাড়ার নিজেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি! হয়ত নাম্বার এবার ব্লক করে রাখবে!
আবার মুভি দেখা শুরু করলাম। জান্নাতের কথা ভাবাটা লস প্রোজেক্ট- আমি এমনিতেও ওকে পেতাম না। নাম্বার ব্লাকলিস্টে রাখলেও আমার ক্ষতিবৃদ্ধি নেই।
একটা ম্যাসেজ এলো আবার ফোনে। জান্নাতেরই!
"টাকা শেষ!"
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে, আর আমি কী না কী ভেবেছি। জান্নাত অনেক ম্যাচিউর। আমার সামান্য রসিকতায় যোগাযোগ অফ করার বয়স ও পেড়িয়ে এসেছে- এটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল।
ফোন দিয়ে বললাম, "আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!"
"কেন?"
"ভাবলাম, আপনি আমার কথায় রাগ করেছেন?"
জান্নাত অবাক হওয়ার মত করেই বলল, "রাগ করব কেন? ছোটখাটো জোকেই যারা রাগ করে তাদের মত ন্যাকা আমি না।"
বললাম, "বাঁচালেন! ভাগ্যিস আপনি ন্যাকা না!"
রিনিরিনি হাসি ভেসে এলো ওপার থেকে।
সাহস করে এবার বললাম, "আমার সাথে কি দেখা করতে পারবেন কাল? মানে এমনি ফ্রেন্ডলি মিটিং আরকি!"
জান্নাত ড্রামাটিক গলায় রীতিমত বলল, "আর ইউ আস্কিং মি ফর এ ডেট?"
বললাম, "ডেট ভাবতে আপনার ভাল লাগলে আপনি ভাবতে পারেন! আমি আপনার সাক্ষাত পেতে চাই শুধু। একটু কথা, চেনাজানা এই আরকি!"
জান্নাত বলল, "ডেটই তো হলো তাহলে! আমার বফ জানলে কী হবে বলোতো!"
আবার বফ! মাজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু সামলে নিয়ে বললাম, "বফ দেখে ফেললে বলবেন, জুনিয়র! তাছাড়া ও তো চাকরি করে। আপনার পিছনে স্পাই লাগিয়ে রাখেনি নিশ্চয়ই! আর একদিন দেখা করলেই যে আমরা প্রেম করছি, এমটা তো পার্থের ভাবার কারণ নেই কোন, তাই না?"
জান্নাত বলল, "তুমি তো আমার সাথে প্রেম করতেই চাইছো, তাই না?"
দৃঢ় গলায় বললাম, "হ্যাঁ, চাচ্ছি। আপনি এত সুন্দরী, কে চাইবে না আপনার সাথে প্রেম করতে?"
জান্নাত বলল, "তুমি ছাড়বে না দেখছি। আচ্ছা কাল দুপুরে দেখা হবে। একটা দেড়টায়!"
"কোথায় দেখা করবেন? ধানমন্ডি লেক নাকি হাতির ঝিল?"
জান্নাত বলল, "কেন ক্যাম্পাসে কী সমস্যা?"
বললাম, "অনেকদিন ওদিকে যাই না। আর আমার খুব ইচ্ছে কোন মেয়েকে নিয়ে লেকের ধারে হাঁটব!"
জান্নাত বলল, "সেই মেয়েটা আমি তো নই! তুমি কোন মেয়ের সাথে চেয়েছো! যে কোন মেয়ে হতে পারে?"
বললাম, "আপনার আইন পড়া উচিত ছিল, জানেন? খুব ভাল লইয়ার হতে পারতেন!"
"তুমি কি সবাইকে এভাবে ফ্লার্ট করো নাকি? তোমার সাথে কথা বলে, বিশ্বাস কর, নিজেকে খুব গুণবতী মনে হচ্ছে!"
বরাবরের মত বললাম, "সবার সাথে না। আপনার মত সুন্দরীদের সাথেই করি। মানে করব আরকি। আগে কাউকে করিনি!"
ঠিক হলো, আগামীকাল হাতির ঝিলে দেখা হবে। দুপুর দেড়টায়। আমরা খাবো কোন রেস্টুরেন্টে। বিকেল পাঁচটার মধ্যেই ফিরব কারণ পার্থ সাড়ে পাঁচটায় আসবে ওর সাথে দেখা করতে। আমি জেনে শুনেই আরেকজনের গফকে ডেটে নিয়ে যাছি! অন্যের বৌ আর অন্যের প্রেমিকা ছাড়া আমার ভাগ্যে আর বুঝি কিছু নেই। মৃণ্ময়ী, তুমি আমার জন্য থেকো!
রাত প্রায় এগারোটা বাজে, ঘুম ধরবে না এত তাড়াতাড়ি জানি বলেই বিছানায় শুইনি। একটা মুভি দেখা যায়। টরেন্ট থেকে এইমাত্র ডাউনলোড দিয়েছি। এনিমেশন মুভি। কুমফু প্যান্ডা। মুভিগুলো ছোটদের জন্য বানানো হলেও, বড়রা কম উপভোগ করেনা। দ্য লাওন কিং তো আমার প্রিয়তম সিনেমাগুলোর একটা।
হঠাত জান্নাতের কথা মনে পড়ল। ওর ডেপ্টের এক জুনিয়রের কাছ থেকে নাম্বারটা ম্যানেজ করেছি। সেদিন টিএসসিতে কথা বলেই বুঝেছি, আমি ফোন দিলে ও রাগ অন্তত করবে না, প্রেম না করুক।
এত রাতে ফোন দিব কিনা ভাবছি। হয়ত এখন প্রেমিকের সাথে কথা বলছে, কিংবা ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর চোখের নিচে কালি দেখিনি কোনদিন, তারমানে সময়মতই ঘুমায়- আমার মত প্যাঁচা নয়।
সিগারেট একটা ধরিয়ে সাতপাঁচ না ভেবে লাগিয়ে দিলাম ফোন। কিন্তু কী ভাগ্য, নাম্বার বিজি। আসলেই কারো সাথে কথা বলছে। নির্ঘাত প্রেমিক- এসময় অন্য কারো সাথে কথা বলার কথা নয়।
অগত্যা কুমফু প্যান্ডাই দেখা শুরু করে দিলাম। এমন সিনেমা- শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভুলে গেলাম জান্নাতের কথা। কিছুকিছু সিন দেখে হ্যাকখ্যাক করে হাসছিলামও।
হঠাত ফোনটা বেজে উঠল। স্কৃনে জান্নাতের নাম। বুকটা দুরুদুরু করা শুরু করল কেন জানি না। এমন না, জান্নাত আমার সাথে খারাপ আচরণ করলে, আমার কিছু যায় আসবে। তাও! হয়ত ভয়ে।
ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ও বলল, "আরে তুমি! আমি ভাবলাম, আব্বু!"
হতচকিয়ে গেলাম! যেন আমার গলা পেয়ে জান্নাত খুশীই হয়েছে! বললাম, "আব্বু কি আপনাকে আননৌন নাম্বার থেকে কল দেয় নাকি?"
জান্নার হাসল। বলল, "আর বলিও না, মাঝেমাঝে আমি কারো সাথে কথা বলছি কিনা জানার জন্য আব্বু অন্য অনেকের নাম্বার থেকে কল দেয়। তাই ভয়ে থাকি। নাম্বার বিজি থাকলেই রাগারাগি করে!"
বললাম, "তাহলে তো কল দিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছি আপনাকে! সরি! আমার জন্য বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভালমত কথা বলতে পারলেন না!"
জান্নাত সাথে সাথেই বলল, "আমি বফের সাথেই কথা বলছি, এটা কে বলল তোমাকে?"
"মনে হল। মেয়েরা এত রাতে বফের সাথেই কথা বলে সাধারণত! আমার অভিজ্ঞতা বলে!"
"তোমার অভিজ্ঞতা তাহলে কম আছে। এই যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি, তুমি তো আমার বফ নও!"
বললাম, "আসলেই তো! অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্যই তো আপনার সাথে প্রেম করতে চাইছি! আপনি তো পাত্তাই দিচ্ছেন না আমাকে!"
জান্নাত জবাবে কিছু বলল না। একটা সিগারেট জ্বালানো প্রয়োজন, কিন্তু প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি, খালি! এখন আমাকে আবার আটতলা নামতে হবে।
ফোন কানে লাগিয়ে রেখেই ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামা শুরু করলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, "বফের সাথে কথা বলছিলেন না তাহলে?"
জান্নাত বলল, "হ্যাঁ, বলছিলাম। আসলে ঝগড়া করছিলাম!"
"ঝগড়া প্রেমেরই অঙ্গ!", দার্শনিকের মত বললাম কথাটা।
জান্নাত বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, "হ্যাঁ, সেটাই!"
বললাম, "আচ্ছা, আপনার প্রিয় রঙ কী?"
জান্নাত জিজ্ঞেস করল, "কেন?"
বললাম, "আপনার প্রিয় রঙ্গের শার্ট পরে ঘুরব এখন থেকে। হঠাত আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলে যেন আপনি লক্ষ্য করেন!"
জান্নাত জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, "আহারে! কী ভাগ্য আমার! এত ডেডিকেটেড একজন এডম্যায়ারার পেয়েছি!"
আর একমিনিটের মত কথা হলো আমাদের। তারপর ও কেটে দিল ফোন হঠাত। টাকা শেষ হয়েছে ভেবে ব্যাক করলাম। কল বিজি। হয়ত আবার প্রেমিক ফোন দিয়েছে!
একটা দশ শলাকার গোল্ডলিফের প্যাকেট নিয়ে আট তলায় উঠলাম আবার। রুদ্রা ভাবির বাসার সামনে অনেকগুলো স্যান্ডেল দেখলাম। ভেতর থেকে জোর হাসির শব্দও পাচ্ছি। অতিথি এলো নাকি? নাকি কোন বন্ধু উকিল সাহেবের?
ঘরে ঢুকতেই আবার জান্নাতের ফোন।
বলল, "বাবা ফোন দিয়েছিল!"
বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম টানটান করে পা ছড়িয়ে। বললাম, "ঘরে বসেই কথা বলছেন? রুমমেটরা শুনছে না?"
জান্নাত বলল, "ফোর্থ ইয়ারে পড়ি, কিডো! সিংগেল রুমে থাকি আমি!"
কিডো বলল! মাত্র এক বছরের জুনিয়র বলে!
বললাম, "আমি কিন্তু আপনার খুব বেশি জুনিয়র না। মাত্র এক বছরের ছোট। কিডো বলাটা একটু বেশি হয়ে গেল না?"
জান্নাত আবার হাসল। বলল, "আমার বফ পার্থ আমার চেয়ে কত বছরে বড়, জানো? সাত বছরে!"
জান্নাতের সেই ফাটা জিন্স পরা, লম্বা চুলের বাইকার বফ ওর চেয়ে সাত বছরে বড়! এতদিন তো ওর চাকরি বাকরি করে বিয়ে করে বাচ্চাকে ফিডার খাওয়ানোর কথা! তা না করে জান্নাতের সাথে ফ্যাফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
কী আর বলব। পার্থ না কি যেন ওর নামও বলল, তার তুলনায় আমি বাচ্চাই! বললাম, "এক বছরে ছোট হতে পারি। কিন্তু আমারটা কিন্তু ছোট না!"
বলেই জিহ্বা কাটলুম! মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে। এখনও আমাদের যোগাযোগ এত মজবুত হয়নি যে, এডাল্ট রসিকতা করব!
জান্নাত বলল, "কী বললে? তোমারটা ছোট না?"
মিথ্যা বললাম, "না না। বললাম, আমি কিন্তু ওত ছোট না!"
জান্নাত জেদী! বলল, "তুমি বলেছো, 'আমারটা কিন্তু ছোট না'। আমি স্পষ্ট শুনেছি!"
ধরা পরে গিয়েছি। বললাম, "আসলে, আমি কিন্তু এত ছোট না বলতে চেয়ে। তার বদলে আমারটা বলে ফেলেছি!"
জান্নাত বলল, "বুঝতে পেরেছি। ব্যাপার না!"
এবারে সাহস করে বললাম, "কথাটা কিন্তু সত্য!"
জান্নাত কৌতুহলের সাথে বলল, "কোনটা?"
বললাম, "আমারটা আসলেই ছোট না!"
লাইনটা কেটে গেল। প্রথমবার ভুলে বললেও, পরেরবার ইচ্ছে করেই বলেছি। নিজের বাড়ার নিজেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি! হয়ত নাম্বার এবার ব্লক করে রাখবে!
আবার মুভি দেখা শুরু করলাম। জান্নাতের কথা ভাবাটা লস প্রোজেক্ট- আমি এমনিতেও ওকে পেতাম না। নাম্বার ব্লাকলিস্টে রাখলেও আমার ক্ষতিবৃদ্ধি নেই।
একটা ম্যাসেজ এলো আবার ফোনে। জান্নাতেরই!
"টাকা শেষ!"
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে, আর আমি কী না কী ভেবেছি। জান্নাত অনেক ম্যাচিউর। আমার সামান্য রসিকতায় যোগাযোগ অফ করার বয়স ও পেড়িয়ে এসেছে- এটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল।
ফোন দিয়ে বললাম, "আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!"
"কেন?"
"ভাবলাম, আপনি আমার কথায় রাগ করেছেন?"
জান্নাত অবাক হওয়ার মত করেই বলল, "রাগ করব কেন? ছোটখাটো জোকেই যারা রাগ করে তাদের মত ন্যাকা আমি না।"
বললাম, "বাঁচালেন! ভাগ্যিস আপনি ন্যাকা না!"
রিনিরিনি হাসি ভেসে এলো ওপার থেকে।
সাহস করে এবার বললাম, "আমার সাথে কি দেখা করতে পারবেন কাল? মানে এমনি ফ্রেন্ডলি মিটিং আরকি!"
জান্নাত ড্রামাটিক গলায় রীতিমত বলল, "আর ইউ আস্কিং মি ফর এ ডেট?"
বললাম, "ডেট ভাবতে আপনার ভাল লাগলে আপনি ভাবতে পারেন! আমি আপনার সাক্ষাত পেতে চাই শুধু। একটু কথা, চেনাজানা এই আরকি!"
জান্নাত বলল, "ডেটই তো হলো তাহলে! আমার বফ জানলে কী হবে বলোতো!"
আবার বফ! মাজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু সামলে নিয়ে বললাম, "বফ দেখে ফেললে বলবেন, জুনিয়র! তাছাড়া ও তো চাকরি করে। আপনার পিছনে স্পাই লাগিয়ে রাখেনি নিশ্চয়ই! আর একদিন দেখা করলেই যে আমরা প্রেম করছি, এমটা তো পার্থের ভাবার কারণ নেই কোন, তাই না?"
জান্নাত বলল, "তুমি তো আমার সাথে প্রেম করতেই চাইছো, তাই না?"
দৃঢ় গলায় বললাম, "হ্যাঁ, চাচ্ছি। আপনি এত সুন্দরী, কে চাইবে না আপনার সাথে প্রেম করতে?"
জান্নাত বলল, "তুমি ছাড়বে না দেখছি। আচ্ছা কাল দুপুরে দেখা হবে। একটা দেড়টায়!"
"কোথায় দেখা করবেন? ধানমন্ডি লেক নাকি হাতির ঝিল?"
জান্নাত বলল, "কেন ক্যাম্পাসে কী সমস্যা?"
বললাম, "অনেকদিন ওদিকে যাই না। আর আমার খুব ইচ্ছে কোন মেয়েকে নিয়ে লেকের ধারে হাঁটব!"
জান্নাত বলল, "সেই মেয়েটা আমি তো নই! তুমি কোন মেয়ের সাথে চেয়েছো! যে কোন মেয়ে হতে পারে?"
বললাম, "আপনার আইন পড়া উচিত ছিল, জানেন? খুব ভাল লইয়ার হতে পারতেন!"
"তুমি কি সবাইকে এভাবে ফ্লার্ট করো নাকি? তোমার সাথে কথা বলে, বিশ্বাস কর, নিজেকে খুব গুণবতী মনে হচ্ছে!"
বরাবরের মত বললাম, "সবার সাথে না। আপনার মত সুন্দরীদের সাথেই করি। মানে করব আরকি। আগে কাউকে করিনি!"
ঠিক হলো, আগামীকাল হাতির ঝিলে দেখা হবে। দুপুর দেড়টায়। আমরা খাবো কোন রেস্টুরেন্টে। বিকেল পাঁচটার মধ্যেই ফিরব কারণ পার্থ সাড়ে পাঁচটায় আসবে ওর সাথে দেখা করতে। আমি জেনে শুনেই আরেকজনের গফকে ডেটে নিয়ে যাছি! অন্যের বৌ আর অন্যের প্রেমিকা ছাড়া আমার ভাগ্যে আর বুঝি কিছু নেই। মৃণ্ময়ী, তুমি আমার জন্য থেকো!