17-07-2022, 12:56 AM
(This post was last modified: 17-07-2022, 01:14 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অধ্যায় ১৫ঃ টরেন্ট ও বাথরুম
সকাল থেকেই মেজাজটা টং হয়ে আছে। অর্ধেক গোসল সবে করেছি, সারা গায়ে সাবানের ফেনা, ঠিক তখনই, পানি বন্ধ হয়ে গেল। এমন অবস্থায় কোনদিন পরিনি। বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গামছা দিয়ে ফেনা মুছতে হলো। সারা গা দিয়ে লাইফবয়ের কড়া গন্ধ বের হচ্ছিল, এমন অবস্থায় ক্লাসে যাওয়া যায় না। আর অজানা কোন কারণে পানিও আসছে না ট্যাংকে।
সিগারেটও ফুরিয়ে গেছে, নিচে গিয়ে সিগারেট কিনে আনব, সে ইচ্ছেও নেই। পানি ছাড়া থাকা যায় কাঁহাতক!
সকাল থেকে কিছু খাইনি। পানি নেই বলে রান্নারও বালাই নেই। ভাবলাম ছাদে গিয়ে হাওয়া খেয়ে আসা যাক।
ছাদে সৈকত খেলছিল একটা সাদাকালো ডোরাকাটা ফুটবল নিয়ে। আজকালকার ছেলেরা ফুটবল খেলে? আমাদের দেশে যেভাবে ক্রিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, তাতে কোন ছেলের ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোন খেলায় আগ্রহ থাকার কথা নয়। সৈকতকে ফুটবল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে ভাল লাগল তাই।
সৈকত আমাকে দেখেই, রিদম চাচ্চু, এই নাও বলে একটা পাস দিল। আমি ফুটবল পারি না ভাল, আসলে কোন খেলাই আমার ধাতে নেই। আমি কোনকিছুতেই কোনকালে ভাল ছিলাম না। পাসটা তাই আটকাতে পারলাম না পায়ে। বলটা আমাকে পাশ কাঁটিয়ে দুমদাম শব্দ করে সিড়ি বেঁয়ে নিচে চলে গেল!
এই ধর, ধর... বলটা একদম নিচে চলে যাবে তো! সৈকত উত্তেজিত হয়ে বলল। আসলেই তাই। বল রিসিভ করতে না পারি, বলের পিছে দৌড়াতে পারব তো। বলের পিছে পিছে নিচে নামা শুরু করলাম আমি। রিদম এলো না। আমাকে বল আনার দায়িত্ব দিয়ে সে ছাদের দোলনাটায় লাফিয়ে উঠে বসল।
বলটা বেশি নিচে যায়নি। রুদ্রা ছাদে আসার জন্য সিঁড়ি বেঁয়ে আসছিলেন। ধরে ফেলেছেন তিনি।
দৌড়ে দৌড়ে নামছিলাম বলে অল্পের জন্য রুদ্রার সাথে ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে গেছি। ধাক্কা লাগলেই হয়েছিল আরকি। দুজনই বলের বদলে সিড়িতে আছার খেতাম। হাত পায়ের ফ্রাকচার, ডাক্তার, ঔষধ ইত্যাদি ইত্যাদি।
রুদ্রা ভয় পেয়ে আমাকে বললেন, আস্তে! এক্ষুণি পড়ে যেতাম! এভাবে দৌড়ে যাচ্ছিলে কোথায়?
বললাম, যাচ্ছিলাম বলের পিছনেই!
রুদ্রা বলটা হাতে লাফাতে লাফাতে উঠে এলেন ছাদে। রুদ্রা শাড়ি পরেছেন, আমি আজকাল বাড়িতে কাউকে শড়ি পরা দেখিনা। আঁচলটা কোমরে বাঁধা। বল লাফানোর সাথে সাথে ওর বুক লাফাচ্ছিল।
আমি ওর পিছনে পিছনে ছাদে উঠে এলাম।
ছাদে এসেই রুদ্রা বলটা ছুড়ে দিল সৈকতের দিকে। সৈকত দোলনায় লাফাচ্ছিল। থপ করে নেমে বল নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিল ও। আজ রোদ নেই, প্রচণ্ড বাতাস বইছে। বঙ্গোপসাগরে নাকি নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে, তার আভাস দেখা যাচ্ছে ঢাকার আবহাওয়াতেও। কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়নি, এখন বৃষ্টি এলেই ষোলকলা পূর্ণ। এমন দিনে কিনা আমার গোসল করার পানি নেই।
হাওয়ায় রুদ্রা ভাবির চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল, তিনি সামলাতে পারছেন না। ভাগ্যিস আঁচলটা বেঁধে এসেছেন কোমরে, নয়ত সেটা নিয়ে টানাটানি করতে হত ওকে।
আমাকে বললেন, তোমার তো খোঁজই পাওয়া যায় না ইদানিং। চা খেতেও আসো না। খুব ব্যস্ত নাকি?
কী বলি জবাবে। ক্লাস, ক্যাম্পাস, নীলা এটা ওটা সব মিলিয়ে আমি ইদানিং দম ফেলার ফুসরত পাই না। রুদ্রা ভাবির স্পেশাল চা তাই খাওয়াই হয়ে ওঠে না।
ক্লাস, পরীক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি রুদ্রা ভাবির একদম পাশে দাঁড়িয়ে। অচেনা কেউ দেখলে আমাদের স্বামীস্ত্রী ভাবতে পারে; অবশ্য আমার মুখ থেকে এখনও চেংরাচেংরা ভাবটা যায়নি!
হঠাত রুদ্রাভাবি বললেন, কী পারফিউম দিয়েছো? এত কড়া গন্ধ কেন?
পরিহাস করে বললাম, শুনেছি, আজকালকার মেয়েরা এমন পারফিউমই বেশি পছন্দ করে। তাই
রুদ্রা মুখ উলটে বললে, ঘেঁচু পছন্দ করে। এমন পারফিউম দিলে মেয়েরা কাছেই ঘেঁষবে না!
সকালের গোসল বিপত্তির কথা বললাম। পানির অভাবে যে গামছা দিয়ে সাবানের ফেনা মুছেছি, সেটাও লুকালাম না।
শুনে হা হা করে হেসে ফেললেন রুদ্রা ভাবি। হাসির চোটে সৈকত খেলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আমি এই সুযোগে দেখে নিলাম ভাবির নাভি।
রুদ্রা ভাবি নাভির নিচে শাড়ি পরেছেন। সামান্য মেদ জমেছে পেটে, নাভিটা তাই গভীর। সুযোগ পেলে সাওয়ারের বদলে এখানে ডুব দিতাম গোসল করতে।
তোমার ওখানে পানি নেই? আমাদের এখানে আসতে! আমাদের কলে তো পানি ঠিকই আসছে!
আমি ভেবেছিলাম, পুরা ফ্লাটেই বুঝি পানি নেই। তেমনটা হলে ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই পানির লাইন ঠিক হয়ে যেত।
বললাম, সকাল বেলা। তখন বোধহয় আপনার স্বামী বাসায় ছিল!
রুদ্রা ভাবি কিছু বললেন না। সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই। আর কতক্ষণ খেলবি?
সৈকত খেলায় মত্ত, জবাব দিল না।
রুদ্রা ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গোসল করবে এসো। গায়ের এমন কটু গন্ধ নিয়ে কোথাও যেও না!
বলেই হাঁটা দিলেন ভাবি। আমি পিছে পিছে ওর ফ্লোরে চলে এলাম।
আমাকে একটা তোয়ালা দিয়ে বলল, যাও গোসল করে এসো... আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে রাখি। আজ গল্প হবে অনেক!
আমি বাথরুমে ঢুকলাম। অত্যাধুনিক ব্যাপারস্যাপার। আমার ব্যাথরুমে এমন সুবিধা নেই। উকিল সাহেব যে নিজেই এসব লাগিয়েছেন, তা আর বলে দিতে হয় না। প্রথমে ভুল করে গরম পানির ট্যাপ ছেড়েছিলাম। পানি গায়ে লাগতেই এই শালা বলে চিতকার করে উঠলাম।
বাথরুমের পাশেই কিচেন। ভাবি কিচেন থেকে বলল, রিদম, কী হয়েছে!
আমি ট্যাপটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে বললাম, ঠান্ডা পানি বেরোয় কোনটা দিয়ে?
রুদ্রা ভাবি বলে দিলেন জোর গলায়। কিন্তু আমি পারছিলাম না। আসলেই কোন কাজের নই আমি, সেটাই আবার প্রমাণিত হলো।
অগত্যা রুদ্রা ভাবিকেই আসলে হলো বাথরুমে!
আমি বারমুডা পরে আছি। রুদ্রাভাবি এমন হুট করে এসে বাথরুমের দরজায় নক করা শুরু করলেন!
বাথরুমে জায়গা কম, আমিও বারমুডা পরে বাইরে যেতে পারছি না। সৈকত খচ্চরটা এর মধ্যে খেলা থামিয়ে এসে টিভি দেখছে!
ভাবি আমাকে ঠান্ডা পানির ট্যাপটা দেখিয়ে দিলেন। আমি হঠাত নবটা ঘুরিয়ে দিলাম বোকার মত। হঠাত বৃষ্টির মত পানি ভিজিয়ে দিল ভাবিকেও। আমি সাথে সাথেই বন্ধ করেছিলাম অবশ্য। ভিজে যাওয়ায় শাড়ি লেপ্টে গেল রুদ্রা ভাবির শরীরে। আঁচলটা একপাশে সরে যাওয়ায় দেখা যাচ্ছে ভাবির দুধের খাঁজ! আমার বারমুডার ভিতরে লাফিয়ে উঠল বাড়া!
ভাবি তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলেন বাথরুম থেকে। যাওয়ার সময় আমার উত্তেজিত বাড়াটাকেও একবার দেখে নিলেন না? আমি তো স্পষ্ট দেখলাম, আমার বাড়ার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন দুম করে!
আমি গোসল করে বেরিয়ে এলাম। ভেজা চুল শুকাতে বসলাম ফ্যানের নিচে। সৈকত রেসলিং দেখছে।
তোমার প্রিয় রেসলার কে, সৈকত?
ও পটাপট কয়েকটা নামও বলল। এদের নাম জীবনে শুনিনি। যেদিন থেকে জেনেছি রেসলিং পুরাটা আগে থেকেই সাজানো, কে হারবে, কে জিতবে, সেটা স্কৃপ্টে লেখা থাকে, রেসলাররা এসে শুধু অভিনয় করে যায়, সেদিন থেকে রেসলিং দেখি না। যখন দেখতাম, তখন জন সিনা খুব ফর্মে ছিল।
ভাবি চা নিয়ে এলেন। আমাকে এক কাপ দিয়ে নিজে আরেক কাপ নিয়ে বসলেন আমার মুখোমুখি।
সৈকত চা দেখতেই বলল, আম্মু, আমিও খাব!
রুদ্রা ভাবি চোখ রাঙালেন। যার অর্থ, হবে না।
আমি এক চুমুক দিয়ে বললাম, মুভিগুলো দেখেছেন, যেগুলো দিয়েছি?
ভাবি বললেন, হ্যাঁ। সব দেখেছি। এসব মুভি কোথায় পাও? আমি তো ইউটিউবে সার্চ করে দেখেছি, কোথাও নেই!
বললাম, কপিরাইটের কারণে ইউটিউবে নেই। আমি এসব টরেন্ট থেকে নামিয়েছি। অবৈধভাবে।
ভাবি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অবৈধভাবে?
আমি টরেন্টের ব্যাপারটা ভাবিকে বুঝিয়ে বললাম। আমাদের দেশে যে টরেন্ট নিয়ে কোন ঝামেলা হয় না, সেটাও বললাম।
আর হলেও বাঁ! আপনার স্বামীই তো উকিল! আপনার সমস্যা নেই!
রুদ্রা ভাবি হাসলেন! আচ্ছা এসব মুভির মধ্যে কোন মুভিটা তোয়ার বেশি ভাল লেগেছে?, জিজ্ঞেস করলেন আমাকে।
বললাম, ফরেস্ট গাম্প! সেভেনও আমার প্রিয় সিনেমা। তবে ফাইট ক্লাব সেরা!
ফাইট ক্লাবের কথা বলতেই রুদ্রা ভাবির মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে গেল। সেক্স সিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল না তো! এ মুভিতে যেভাবে ব্রাড পিটকে দেখানো হয়েছে, তাতে যে কোন মেয়ের গুদে জ্বালা ধরে যাবে। ভাবি কি ফাইট ক্লাব এখে ব্রাড পিটকে ভেবে ওর স্বামিকে রাতে রাইড করেছিলেন?
বললেন, ফাইট ক্লাব আমারও ভাল লেগেছে। শেষটা একদন অপ্রত্যাশিত। এত ভাল সিনেমা মানুষ বানায় কী করে! আর আমরা কিনা বলিউডের সিনেমা দেখে দেখেই জীবন পার করে দিলাম!
জবাবে কিছু বললাম না। বলিউডের অনেক সিনেমাই আমার ভাল লাগে। তবে পপ সিনেমা দেখি না বললেই চলে। প্রেম, বীরত্ব- এসব আমার জিনিস নয়। গল্পটা ভাল হলে, রেটিং মন মত হলে, তবেই দেখি। রেটিং ভাল হলে ভাষা প্রতিবন্ধক হতে পারে না। সাবটাইটেল আছে, আর আছে সিনেমার নিজেস্ব ভাষাও। আমি যতগুলো হিন্দি সিনেমা দেখেছি, তারচেয়ে বেশি দেখেছি ফরাসি, ইতালিয়ান সিনেমা।
ব্রাড পিটকে কেমন লেগেছে!, সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম আমি। আমাদের সম্পর্কটা এমন, কোনটা বলা যাবে আর কোনটা বলা যাবে না, সেটা নির্ণয় করাটাই কঠিম।
হট। স্বাভাবিক। এঁকে আগে থেকেই চিনতাম। তবে সিনেমা দেখলাম প্রথম! এর আরো কিছু সিনেমা দিও তো!
বললাম, আগে থেকে তো চিনবেনই। সেক্সিয়েস্ট মেন এলাইভ ছিল একসময়। সারা দুনিয়ার ক্রাশ!
ভাবি জবাব না দিয়ে হাসলেন। আমার চাও শেষ হলো।
ভাবি আমাকে বললেন, তুমি একটু বসো। আমি আসছি!
আমি মাথা নাড়িয়ে সৈকতের পাশে বসে রেসলিং দেখা শুরু করলাম।
ভাবি একটা এলবাম নিয়ে আমার পাশে বসলেন। আমাদের মাঝখানে রাখলেন এ্যালবামটা।
বললেন, তুমি তো এই বুড়ি আমাকে চেনো! তোমাকে আমার কলেজের পড়ার সময়কার কিছু ছবি দেখাই!
আমি সাথেসাথেই প্রতিবাদ করে উঠলাম। বুড়ি? আপনাকে? মোটেও না। আপনি বুড়ি হলে কেট উইন্সলেট কী? আপনি এখন পার্ফেক্ট রমণী। আপনাকে দেখে আমার মোনালিসার কথা মনে পরে যায়!
বাড়াবাড়ি করে ফেললাম! রুদ্রা ভাবি সুন্দরী কিন্তু মোনালিসার সাথে ওর মুখের একটুও মিল নেই। ভাবির মুখটা গোল, অনেকটা অপি করিমের মুখের মত। কিন্তু ভাবি শুনে খুশীই হলেন। মিথ্যে প্রশংসাতে যদি হাসি ফোটানো যায়, তবে মিথ্যে প্রশংসাই ভাল!
আচ্ছা, আমি বুড়ি না হলেও কলেজের সেই মেয়েটি তো নেই!
আমি এ্যালবামটা তুলে নিলাম হাতে। ভাবি সরে এলেন আমার দিকে। এ্যালবামটা খুলতেই ওর বিয়ের ছবি। বিয়ের ছবি দেখাবে নাকি? আমার এসব ছবি অসহ্য লাগে। বিয়েটিয়ে ইত্যাদি ভড়ং নিতে পারি না আমি।
না। বিয়ের ছবি না। শুধু রুদ্রার ছবি! পিকনিকে গিয়ে, কলেজে, বান্ধবীর সাথে। একজন ছেলের সাথে ওর কয়েকটা ছবি দেখলাম। ছেলেটা যে ওর স্বামী নয়, সেটা নিশ্চিত।
আঙ্গুল দিয়ে ছেলেটার দিকে পয়েন্ট করতেই বলল, ইনি আমার স্যার। ইংরেজি পড়াতেন। আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, জানো। আমাকে জোর করে এখানে ওখানে নিয়ে যেত। আমিও যেতাম। ফাও মজা নিতে তো আর দোষ নেই!
বললাম, আপনি এত সুন্দরী ছিলেন, আপনাকে যে কেউ বিয়ে করতে চাইবে। ইংরেজি স্যারের আর দোষ কী বলেন?
সৈকতও এসে এ্যালবাম দেখছে। ও নির্ঘাত অনেকবার দেখেছে। তাই প্রত্যেকটা ছবির বর্ণনা সেই দিচ্ছে, যে ছবিগুলার তোলার সময় ছিল ও।
এইটা আম্মুর কলেজের ছবি। এই যে পাশের মেয়েটা আম্মুর বান্ধবী। ওর নাম তনিমা, তাই না আম্মু?
আমি রুদ্রার দিকে তাকালাম। ও হেসে সৈকতের গাল টিপে দিলেন।
রুদ্রা আমার কাঁধের উপর দিয়ে দেখছেন ছবি। আমি ওর দিকে একবার তাকাতেই দেখলাম, সেও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুজনে দুজনার দিকে তাকাতেই ঠোঁট চলে এলো কাছে। একদম চুম্বন দূরত্বে। আমি চাইলেই ঠোঁট এগিয়ে দিতে পারি। আমি তাকালাম ওর চোখের দিকে। কামনা দেখতে পেলাম না। কী আছে সেখানে? কৌতুহল?
ঠোঁটের খুব কাছে থেকেই বললাম, আপনার স্বামীর একটা সিগারেট এনে দেবেন? সকাল থেকে খাইনি!
মুখ নামিয়ে রুদ্রা বললেন, আনছি!
ভুল করলাম কী? আমার কি উচিত ছিল ভাবির ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়া? সৈকত ছিল যে সামনেই! সৈকত না থাকলে কি চুমুটা দিতাম?
রুদ্রা ভাবি আমাকে পুরো পএকটা বেনসনের প্যাকেট এনে দিলেন। বললেন, নাও। অনেকগুলো প্যাকেট পরে আছে!
একটা পুরো বেনসনের প্যাকেট। আড়াইশো টাকা দাম! কত টাকা ইনকাম করলে আড়াইশো টাকার সিগারেটের প্যাকেট অনেকগুলো পড়ে থাকে?
আমি হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে পকেটস্থ করলাম আর একটা ধরিয়ে পুরলাম ঠোঁটে।
সিগারেট টানতে ব্যালকোনিতে চলে এলাম আমি। ভাবিও এল সাথে। ভাবিকে কি ওর স্বামী ব্যালকনিতে লাগিয়েছেন কোনদিন? এখন হয়ত লাগান না, কিন্তু বিয়ের পরপর, নতুন অবস্থায়?
আমি সিগারেটের একটা রিং ছুঁড়ে দিলাম!
ভাবি রিংটা দেখে বললেন, দারুণ তো? কীভাবে করলে?
আমি আবার করে দেখিয়ে দিলাম। আমার বন্ধু আছে সে সিগারেটের রিং দিয়ে লাভ বানাতে পারে। বললাম সেটাও!
দাও আমিও টানি!, হঠাত কিশোরীর মত উচ্ছ্বল হয়ে বললেন ভাবি!
আগে টেনেছেন?
না।
বললাম, তাহলে থাক। খুব ভাল লাগবে না। কড়া গন্ধ। সইতে পারবেন না!
হঠাত সৈকতের ডাক শুনতে পেলাম। আম্মু, রিদম চাচ্ছু! আম্মু কোথায়?
আমরা দুইজনই ছুটে গেলাম সৈকতের কাছে। সে বসে বসে রেসলিং দেখছে। আমরা ওর সামনে যেতেই বলল, চল ডব্লিউডব্লিউই খেলি। খেলবে?
সকাল থেকেই মেজাজটা টং হয়ে আছে। অর্ধেক গোসল সবে করেছি, সারা গায়ে সাবানের ফেনা, ঠিক তখনই, পানি বন্ধ হয়ে গেল। এমন অবস্থায় কোনদিন পরিনি। বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গামছা দিয়ে ফেনা মুছতে হলো। সারা গা দিয়ে লাইফবয়ের কড়া গন্ধ বের হচ্ছিল, এমন অবস্থায় ক্লাসে যাওয়া যায় না। আর অজানা কোন কারণে পানিও আসছে না ট্যাংকে।
সিগারেটও ফুরিয়ে গেছে, নিচে গিয়ে সিগারেট কিনে আনব, সে ইচ্ছেও নেই। পানি ছাড়া থাকা যায় কাঁহাতক!
সকাল থেকে কিছু খাইনি। পানি নেই বলে রান্নারও বালাই নেই। ভাবলাম ছাদে গিয়ে হাওয়া খেয়ে আসা যাক।
ছাদে সৈকত খেলছিল একটা সাদাকালো ডোরাকাটা ফুটবল নিয়ে। আজকালকার ছেলেরা ফুটবল খেলে? আমাদের দেশে যেভাবে ক্রিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, তাতে কোন ছেলের ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোন খেলায় আগ্রহ থাকার কথা নয়। সৈকতকে ফুটবল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে ভাল লাগল তাই।
সৈকত আমাকে দেখেই, রিদম চাচ্চু, এই নাও বলে একটা পাস দিল। আমি ফুটবল পারি না ভাল, আসলে কোন খেলাই আমার ধাতে নেই। আমি কোনকিছুতেই কোনকালে ভাল ছিলাম না। পাসটা তাই আটকাতে পারলাম না পায়ে। বলটা আমাকে পাশ কাঁটিয়ে দুমদাম শব্দ করে সিড়ি বেঁয়ে নিচে চলে গেল!
এই ধর, ধর... বলটা একদম নিচে চলে যাবে তো! সৈকত উত্তেজিত হয়ে বলল। আসলেই তাই। বল রিসিভ করতে না পারি, বলের পিছে দৌড়াতে পারব তো। বলের পিছে পিছে নিচে নামা শুরু করলাম আমি। রিদম এলো না। আমাকে বল আনার দায়িত্ব দিয়ে সে ছাদের দোলনাটায় লাফিয়ে উঠে বসল।
বলটা বেশি নিচে যায়নি। রুদ্রা ছাদে আসার জন্য সিঁড়ি বেঁয়ে আসছিলেন। ধরে ফেলেছেন তিনি।
দৌড়ে দৌড়ে নামছিলাম বলে অল্পের জন্য রুদ্রার সাথে ধাক্কা খাওয়া থেকে বেঁচে গেছি। ধাক্কা লাগলেই হয়েছিল আরকি। দুজনই বলের বদলে সিড়িতে আছার খেতাম। হাত পায়ের ফ্রাকচার, ডাক্তার, ঔষধ ইত্যাদি ইত্যাদি।
রুদ্রা ভয় পেয়ে আমাকে বললেন, আস্তে! এক্ষুণি পড়ে যেতাম! এভাবে দৌড়ে যাচ্ছিলে কোথায়?
বললাম, যাচ্ছিলাম বলের পিছনেই!
রুদ্রা বলটা হাতে লাফাতে লাফাতে উঠে এলেন ছাদে। রুদ্রা শাড়ি পরেছেন, আমি আজকাল বাড়িতে কাউকে শড়ি পরা দেখিনা। আঁচলটা কোমরে বাঁধা। বল লাফানোর সাথে সাথে ওর বুক লাফাচ্ছিল।
আমি ওর পিছনে পিছনে ছাদে উঠে এলাম।
ছাদে এসেই রুদ্রা বলটা ছুড়ে দিল সৈকতের দিকে। সৈকত দোলনায় লাফাচ্ছিল। থপ করে নেমে বল নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিল ও। আজ রোদ নেই, প্রচণ্ড বাতাস বইছে। বঙ্গোপসাগরে নাকি নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে, তার আভাস দেখা যাচ্ছে ঢাকার আবহাওয়াতেও। কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়নি, এখন বৃষ্টি এলেই ষোলকলা পূর্ণ। এমন দিনে কিনা আমার গোসল করার পানি নেই।
হাওয়ায় রুদ্রা ভাবির চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল, তিনি সামলাতে পারছেন না। ভাগ্যিস আঁচলটা বেঁধে এসেছেন কোমরে, নয়ত সেটা নিয়ে টানাটানি করতে হত ওকে।
আমাকে বললেন, তোমার তো খোঁজই পাওয়া যায় না ইদানিং। চা খেতেও আসো না। খুব ব্যস্ত নাকি?
কী বলি জবাবে। ক্লাস, ক্যাম্পাস, নীলা এটা ওটা সব মিলিয়ে আমি ইদানিং দম ফেলার ফুসরত পাই না। রুদ্রা ভাবির স্পেশাল চা তাই খাওয়াই হয়ে ওঠে না।
ক্লাস, পরীক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি রুদ্রা ভাবির একদম পাশে দাঁড়িয়ে। অচেনা কেউ দেখলে আমাদের স্বামীস্ত্রী ভাবতে পারে; অবশ্য আমার মুখ থেকে এখনও চেংরাচেংরা ভাবটা যায়নি!
হঠাত রুদ্রাভাবি বললেন, কী পারফিউম দিয়েছো? এত কড়া গন্ধ কেন?
পরিহাস করে বললাম, শুনেছি, আজকালকার মেয়েরা এমন পারফিউমই বেশি পছন্দ করে। তাই
রুদ্রা মুখ উলটে বললে, ঘেঁচু পছন্দ করে। এমন পারফিউম দিলে মেয়েরা কাছেই ঘেঁষবে না!
সকালের গোসল বিপত্তির কথা বললাম। পানির অভাবে যে গামছা দিয়ে সাবানের ফেনা মুছেছি, সেটাও লুকালাম না।
শুনে হা হা করে হেসে ফেললেন রুদ্রা ভাবি। হাসির চোটে সৈকত খেলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আমি এই সুযোগে দেখে নিলাম ভাবির নাভি।
রুদ্রা ভাবি নাভির নিচে শাড়ি পরেছেন। সামান্য মেদ জমেছে পেটে, নাভিটা তাই গভীর। সুযোগ পেলে সাওয়ারের বদলে এখানে ডুব দিতাম গোসল করতে।
তোমার ওখানে পানি নেই? আমাদের এখানে আসতে! আমাদের কলে তো পানি ঠিকই আসছে!
আমি ভেবেছিলাম, পুরা ফ্লাটেই বুঝি পানি নেই। তেমনটা হলে ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই পানির লাইন ঠিক হয়ে যেত।
বললাম, সকাল বেলা। তখন বোধহয় আপনার স্বামী বাসায় ছিল!
রুদ্রা ভাবি কিছু বললেন না। সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই। আর কতক্ষণ খেলবি?
সৈকত খেলায় মত্ত, জবাব দিল না।
রুদ্রা ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গোসল করবে এসো। গায়ের এমন কটু গন্ধ নিয়ে কোথাও যেও না!
বলেই হাঁটা দিলেন ভাবি। আমি পিছে পিছে ওর ফ্লোরে চলে এলাম।
আমাকে একটা তোয়ালা দিয়ে বলল, যাও গোসল করে এসো... আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে রাখি। আজ গল্প হবে অনেক!
আমি বাথরুমে ঢুকলাম। অত্যাধুনিক ব্যাপারস্যাপার। আমার ব্যাথরুমে এমন সুবিধা নেই। উকিল সাহেব যে নিজেই এসব লাগিয়েছেন, তা আর বলে দিতে হয় না। প্রথমে ভুল করে গরম পানির ট্যাপ ছেড়েছিলাম। পানি গায়ে লাগতেই এই শালা বলে চিতকার করে উঠলাম।
বাথরুমের পাশেই কিচেন। ভাবি কিচেন থেকে বলল, রিদম, কী হয়েছে!
আমি ট্যাপটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে বললাম, ঠান্ডা পানি বেরোয় কোনটা দিয়ে?
রুদ্রা ভাবি বলে দিলেন জোর গলায়। কিন্তু আমি পারছিলাম না। আসলেই কোন কাজের নই আমি, সেটাই আবার প্রমাণিত হলো।
অগত্যা রুদ্রা ভাবিকেই আসলে হলো বাথরুমে!
আমি বারমুডা পরে আছি। রুদ্রাভাবি এমন হুট করে এসে বাথরুমের দরজায় নক করা শুরু করলেন!
বাথরুমে জায়গা কম, আমিও বারমুডা পরে বাইরে যেতে পারছি না। সৈকত খচ্চরটা এর মধ্যে খেলা থামিয়ে এসে টিভি দেখছে!
ভাবি আমাকে ঠান্ডা পানির ট্যাপটা দেখিয়ে দিলেন। আমি হঠাত নবটা ঘুরিয়ে দিলাম বোকার মত। হঠাত বৃষ্টির মত পানি ভিজিয়ে দিল ভাবিকেও। আমি সাথে সাথেই বন্ধ করেছিলাম অবশ্য। ভিজে যাওয়ায় শাড়ি লেপ্টে গেল রুদ্রা ভাবির শরীরে। আঁচলটা একপাশে সরে যাওয়ায় দেখা যাচ্ছে ভাবির দুধের খাঁজ! আমার বারমুডার ভিতরে লাফিয়ে উঠল বাড়া!
ভাবি তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলেন বাথরুম থেকে। যাওয়ার সময় আমার উত্তেজিত বাড়াটাকেও একবার দেখে নিলেন না? আমি তো স্পষ্ট দেখলাম, আমার বাড়ার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন দুম করে!
আমি গোসল করে বেরিয়ে এলাম। ভেজা চুল শুকাতে বসলাম ফ্যানের নিচে। সৈকত রেসলিং দেখছে।
তোমার প্রিয় রেসলার কে, সৈকত?
ও পটাপট কয়েকটা নামও বলল। এদের নাম জীবনে শুনিনি। যেদিন থেকে জেনেছি রেসলিং পুরাটা আগে থেকেই সাজানো, কে হারবে, কে জিতবে, সেটা স্কৃপ্টে লেখা থাকে, রেসলাররা এসে শুধু অভিনয় করে যায়, সেদিন থেকে রেসলিং দেখি না। যখন দেখতাম, তখন জন সিনা খুব ফর্মে ছিল।
ভাবি চা নিয়ে এলেন। আমাকে এক কাপ দিয়ে নিজে আরেক কাপ নিয়ে বসলেন আমার মুখোমুখি।
সৈকত চা দেখতেই বলল, আম্মু, আমিও খাব!
রুদ্রা ভাবি চোখ রাঙালেন। যার অর্থ, হবে না।
আমি এক চুমুক দিয়ে বললাম, মুভিগুলো দেখেছেন, যেগুলো দিয়েছি?
ভাবি বললেন, হ্যাঁ। সব দেখেছি। এসব মুভি কোথায় পাও? আমি তো ইউটিউবে সার্চ করে দেখেছি, কোথাও নেই!
বললাম, কপিরাইটের কারণে ইউটিউবে নেই। আমি এসব টরেন্ট থেকে নামিয়েছি। অবৈধভাবে।
ভাবি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অবৈধভাবে?
আমি টরেন্টের ব্যাপারটা ভাবিকে বুঝিয়ে বললাম। আমাদের দেশে যে টরেন্ট নিয়ে কোন ঝামেলা হয় না, সেটাও বললাম।
আর হলেও বাঁ! আপনার স্বামীই তো উকিল! আপনার সমস্যা নেই!
রুদ্রা ভাবি হাসলেন! আচ্ছা এসব মুভির মধ্যে কোন মুভিটা তোয়ার বেশি ভাল লেগেছে?, জিজ্ঞেস করলেন আমাকে।
বললাম, ফরেস্ট গাম্প! সেভেনও আমার প্রিয় সিনেমা। তবে ফাইট ক্লাব সেরা!
ফাইট ক্লাবের কথা বলতেই রুদ্রা ভাবির মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে গেল। সেক্স সিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল না তো! এ মুভিতে যেভাবে ব্রাড পিটকে দেখানো হয়েছে, তাতে যে কোন মেয়ের গুদে জ্বালা ধরে যাবে। ভাবি কি ফাইট ক্লাব এখে ব্রাড পিটকে ভেবে ওর স্বামিকে রাতে রাইড করেছিলেন?
বললেন, ফাইট ক্লাব আমারও ভাল লেগেছে। শেষটা একদন অপ্রত্যাশিত। এত ভাল সিনেমা মানুষ বানায় কী করে! আর আমরা কিনা বলিউডের সিনেমা দেখে দেখেই জীবন পার করে দিলাম!
জবাবে কিছু বললাম না। বলিউডের অনেক সিনেমাই আমার ভাল লাগে। তবে পপ সিনেমা দেখি না বললেই চলে। প্রেম, বীরত্ব- এসব আমার জিনিস নয়। গল্পটা ভাল হলে, রেটিং মন মত হলে, তবেই দেখি। রেটিং ভাল হলে ভাষা প্রতিবন্ধক হতে পারে না। সাবটাইটেল আছে, আর আছে সিনেমার নিজেস্ব ভাষাও। আমি যতগুলো হিন্দি সিনেমা দেখেছি, তারচেয়ে বেশি দেখেছি ফরাসি, ইতালিয়ান সিনেমা।
ব্রাড পিটকে কেমন লেগেছে!, সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম আমি। আমাদের সম্পর্কটা এমন, কোনটা বলা যাবে আর কোনটা বলা যাবে না, সেটা নির্ণয় করাটাই কঠিম।
হট। স্বাভাবিক। এঁকে আগে থেকেই চিনতাম। তবে সিনেমা দেখলাম প্রথম! এর আরো কিছু সিনেমা দিও তো!
বললাম, আগে থেকে তো চিনবেনই। সেক্সিয়েস্ট মেন এলাইভ ছিল একসময়। সারা দুনিয়ার ক্রাশ!
ভাবি জবাব না দিয়ে হাসলেন। আমার চাও শেষ হলো।
ভাবি আমাকে বললেন, তুমি একটু বসো। আমি আসছি!
আমি মাথা নাড়িয়ে সৈকতের পাশে বসে রেসলিং দেখা শুরু করলাম।
ভাবি একটা এলবাম নিয়ে আমার পাশে বসলেন। আমাদের মাঝখানে রাখলেন এ্যালবামটা।
বললেন, তুমি তো এই বুড়ি আমাকে চেনো! তোমাকে আমার কলেজের পড়ার সময়কার কিছু ছবি দেখাই!
আমি সাথেসাথেই প্রতিবাদ করে উঠলাম। বুড়ি? আপনাকে? মোটেও না। আপনি বুড়ি হলে কেট উইন্সলেট কী? আপনি এখন পার্ফেক্ট রমণী। আপনাকে দেখে আমার মোনালিসার কথা মনে পরে যায়!
বাড়াবাড়ি করে ফেললাম! রুদ্রা ভাবি সুন্দরী কিন্তু মোনালিসার সাথে ওর মুখের একটুও মিল নেই। ভাবির মুখটা গোল, অনেকটা অপি করিমের মুখের মত। কিন্তু ভাবি শুনে খুশীই হলেন। মিথ্যে প্রশংসাতে যদি হাসি ফোটানো যায়, তবে মিথ্যে প্রশংসাই ভাল!
আচ্ছা, আমি বুড়ি না হলেও কলেজের সেই মেয়েটি তো নেই!
আমি এ্যালবামটা তুলে নিলাম হাতে। ভাবি সরে এলেন আমার দিকে। এ্যালবামটা খুলতেই ওর বিয়ের ছবি। বিয়ের ছবি দেখাবে নাকি? আমার এসব ছবি অসহ্য লাগে। বিয়েটিয়ে ইত্যাদি ভড়ং নিতে পারি না আমি।
না। বিয়ের ছবি না। শুধু রুদ্রার ছবি! পিকনিকে গিয়ে, কলেজে, বান্ধবীর সাথে। একজন ছেলের সাথে ওর কয়েকটা ছবি দেখলাম। ছেলেটা যে ওর স্বামী নয়, সেটা নিশ্চিত।
আঙ্গুল দিয়ে ছেলেটার দিকে পয়েন্ট করতেই বলল, ইনি আমার স্যার। ইংরেজি পড়াতেন। আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, জানো। আমাকে জোর করে এখানে ওখানে নিয়ে যেত। আমিও যেতাম। ফাও মজা নিতে তো আর দোষ নেই!
বললাম, আপনি এত সুন্দরী ছিলেন, আপনাকে যে কেউ বিয়ে করতে চাইবে। ইংরেজি স্যারের আর দোষ কী বলেন?
সৈকতও এসে এ্যালবাম দেখছে। ও নির্ঘাত অনেকবার দেখেছে। তাই প্রত্যেকটা ছবির বর্ণনা সেই দিচ্ছে, যে ছবিগুলার তোলার সময় ছিল ও।
এইটা আম্মুর কলেজের ছবি। এই যে পাশের মেয়েটা আম্মুর বান্ধবী। ওর নাম তনিমা, তাই না আম্মু?
আমি রুদ্রার দিকে তাকালাম। ও হেসে সৈকতের গাল টিপে দিলেন।
রুদ্রা আমার কাঁধের উপর দিয়ে দেখছেন ছবি। আমি ওর দিকে একবার তাকাতেই দেখলাম, সেও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুজনে দুজনার দিকে তাকাতেই ঠোঁট চলে এলো কাছে। একদম চুম্বন দূরত্বে। আমি চাইলেই ঠোঁট এগিয়ে দিতে পারি। আমি তাকালাম ওর চোখের দিকে। কামনা দেখতে পেলাম না। কী আছে সেখানে? কৌতুহল?
ঠোঁটের খুব কাছে থেকেই বললাম, আপনার স্বামীর একটা সিগারেট এনে দেবেন? সকাল থেকে খাইনি!
মুখ নামিয়ে রুদ্রা বললেন, আনছি!
ভুল করলাম কী? আমার কি উচিত ছিল ভাবির ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়া? সৈকত ছিল যে সামনেই! সৈকত না থাকলে কি চুমুটা দিতাম?
রুদ্রা ভাবি আমাকে পুরো পএকটা বেনসনের প্যাকেট এনে দিলেন। বললেন, নাও। অনেকগুলো প্যাকেট পরে আছে!
একটা পুরো বেনসনের প্যাকেট। আড়াইশো টাকা দাম! কত টাকা ইনকাম করলে আড়াইশো টাকার সিগারেটের প্যাকেট অনেকগুলো পড়ে থাকে?
আমি হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে পকেটস্থ করলাম আর একটা ধরিয়ে পুরলাম ঠোঁটে।
সিগারেট টানতে ব্যালকোনিতে চলে এলাম আমি। ভাবিও এল সাথে। ভাবিকে কি ওর স্বামী ব্যালকনিতে লাগিয়েছেন কোনদিন? এখন হয়ত লাগান না, কিন্তু বিয়ের পরপর, নতুন অবস্থায়?
আমি সিগারেটের একটা রিং ছুঁড়ে দিলাম!
ভাবি রিংটা দেখে বললেন, দারুণ তো? কীভাবে করলে?
আমি আবার করে দেখিয়ে দিলাম। আমার বন্ধু আছে সে সিগারেটের রিং দিয়ে লাভ বানাতে পারে। বললাম সেটাও!
দাও আমিও টানি!, হঠাত কিশোরীর মত উচ্ছ্বল হয়ে বললেন ভাবি!
আগে টেনেছেন?
না।
বললাম, তাহলে থাক। খুব ভাল লাগবে না। কড়া গন্ধ। সইতে পারবেন না!
হঠাত সৈকতের ডাক শুনতে পেলাম। আম্মু, রিদম চাচ্ছু! আম্মু কোথায়?
আমরা দুইজনই ছুটে গেলাম সৈকতের কাছে। সে বসে বসে রেসলিং দেখছে। আমরা ওর সামনে যেতেই বলল, চল ডব্লিউডব্লিউই খেলি। খেলবে?