17-07-2022, 12:55 AM
(This post was last modified: 17-07-2022, 01:13 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অধ্যায় ১৪ঃ মৃন্ময়ী
সমাজবিজ্ঞান চত্বরে নীলাকে পেলাম।
সেদিনের সেই ঘটনার পর আজই ওর সাথে প্রথম দেখা। সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে একটা বইয়ের খোঁজে এসেছিলাম; বইটার একটাই কপি ছিল, সেটাও এক অধ্যাপক গবেষণার জন্য ধার নিয়েছেন; পেলাম না তাই। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট জ্বালালাম। আমার কেন জানি না সভ্য কোন জায়গায় গেলেই দম বন্ধ লাগে; লাইব্রেরিতে আমি দুই মিনিট বসতে পারি না, সেমিনার শুনতে গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে; সুসজ্জিত কোন বাড়িতে কিংবা খুব বড় নামকরা কোন কোম্পানির অফিসে গেলে ইচ্ছে করে ভাঙচুর করতে, যেখানে সেখানে সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়ম ভাঙতে ইচ্ছে করে।
সিগারেটের পাছায় শেষ টানটা দিয়ে তার ধোঁয়া ছুড়েছি কেবল, এলো নীলার চিরপরিচিত গলা।
বোকাচোদা সাহেব, লাইব্রেরিতে এসেছেন কেন? বিসিএস ক্যাডার হবেন?
নীলা নীল রঙয়ের একটা ছাতা মাথায় দাঁড়িয়েছে এসে আমার পিছনে। সাথে মৃন্ময়ী।
বললাম, লাইব্রেরী বিসিএসের কারখানা বুঝি? শুধু জানার জন্য কেউ লাইব্রেরিতে আসতে পারে না?
আমার প্রশ্নের কোন উত্তরই দিল না নীলা। যেন আমি কিছু বলিইনি। মৃন্ময়ীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই তো সেমিনার রুমে যাবি? যা, আমি এর সাথে একটু গল্প করি!
ভর্তির পর প্রথম দিন ক্লাসে এসেই যাকে দেখে পাগল (অন্য কোন শব্দ পাচ্ছি না) হয়ে গিয়েছিলাম, সে মৃন্ময়ীই। তাকে দেখে মনে হয়েছিল, এত সুন্দর দেখিনি কোনদিন, কোন মেয়ের এত সুন্দরী হওয়া উচিত নয়। আমার মনে হয়েছিল, মৃণ্ময়ী এমন কেউ যার দিকে তাকালেই আমি ঝলসে যাব, পুড়ে যাব। তবুও প্রথম দিন থেকেই ওকে আড়চোখে দেখি। যখন ও ক্লাসের জন্য নোট নেয়, অবাধ্য চুল প্রায় ঢেকে দেয় মুখ, তখন না তাকিয়ে পারি না। যখন কোন প্রশ্ন করে স্যারদের হঠাত দাঁড়িয়ে, তখন চোখ দিয়ে স্ক্যান করে নেই ওর চেহারা। মাঝেমাঝে গোটা ক্লাসটায় চোখ বুলিয়ে নেয়ার ভান করেও দেখি ওকে। কয়েকদিন ধরা পড়েও গিয়েছিলাম। চোখাচোখিও হয়েছে। কিন্তু কথা বলার সাহস খুঁজে পাইনি।
কতদিন ডাকসু হয়ে কলা ভবন যাওয়ার মুখে আমরা সামনাসামনি পড়ে গিয়েছি! সে না দেখার ভান করে পাশ কাঁটিয়ে গেছে, মাঝেমাঝে পাশ কাঁটিয়ে গেছি আমি। কোন কোনদিন কথাও বলেছি সাহস করে। সামান্য কথা বললে খুব ক্ষতি হয়ে যেত? আমিই বাঁ উল্লুকের মত না চেনার ভান করতাম কেন?
মৃন্ময়ী নীলাকে বলল, এখন সেমিনার রুমে গিয়ে কী করব? কেউ নেই। চল আমরা কোথাও বসি!
আমরা গিয়ে বসলাম সমাজবিজ্ঞান চত্বরে। ফোয়ারাকে ঘিরে কাপলেরা গুচ্ছগুচ্ছ হয়ে বসে গল্প করছে, বাদাম খাচ্ছে। কিছু দূরে কয়েকজন গিটার নিয়ে গান গাইছে। ওদের কণ্ঠ এতদূর পর্যন্ত আসছে না। মাঝেমাঝে তারা সপ্তকে যাচ্ছে যখন তাদের গলা, শুনতে পাচ্ছি শব্দ কিছু।
আমরা ফোয়ারার সিড়িতেই বসলাম। নীলা মাঝে, ওর দুই পাশে আমি আর মৃন্ময়ী। এমন প্যাটার্নেই যেন আমাদের বসার কথা ছিল; মৃন্ময়ী আর আমি পাশাপাশি বসব না, বসতে পারি না এটা যেন নীলাও জানে।
শুধু একটা ক্লাসের জন্য এই গরমে ক্যাম্পাসে আসার মানেই হয় না!, বলল মৃন্ময়ী।
মৃণ্ময়ীর মত মেয়েরাও বিরক্ত হয়? আমার জানা ছিল না। আমি এতদিন জানতাম, মৃন্ময়ী পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, তার মুখ দিয়ে আলো বেরোয়, সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ! এই ভ্যাঁপসা গরম, গা চিটচিটে, ঘামে ভেজা আবহাওয়া, ঝলসে দেয়া রোদ আর উত্তপ্ত বাতাস মৃন্ময়ীকে ছুঁতে পারে তাহলে! খারাপ লাগে তারও!
আসলেই। পরপর সেক্স করলে যেমন গরম লাগে, মনে হয়, গোসল না করলে মরে যাব- তেমন লাগছে!, বললাম আমি। বলেই বুঝলাম, কী বলেছি আমি! মৃন্ময়ীর সাথে ভালভাবে বসে কথা আজই প্রথম, তাও কথা হচ্ছে নীলাকে ভায়া করে। আর আমি কিনা প্রথমেই এডাল্ট বলে ফেললাম। আর তুলনাটাও হয়নি জুতমত। নিজের গালে নিজেরই একটা চাটি মারতে ইচ্ছে হচ্ছে!
মৃন্ময়ী যদি হাসত এমন কথা শুনে, তাহলে শান্তি পেতাম। কিন্তু গম্ভীর হয়ে গেল ও। আমি প্রথম বলেই ক্লিন বোল্ড।
আচ্ছা, মৃন্ময়ীরা কি নিজেদের মধ্যেও অশ্লীল কিছু বলে না? ঐ যে ওরা কয়েকজন একসাথে থাকে সবসময়, নিচুস্বরে হাসে, তখন কী নিয়ে হাসাহাসি করে!
নীলা বলল, আমার কিন্তু ভালই লাগে। সারাদিন বাড়িতে বসে কী করব? এখন কী আর ঐ বয়স আছে যে প্রেমের উপন্যাস পড়ে বুকে বই জড়িয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাব!
মৃন্ময়ী বলল, তুইও প্রেমের উপন্যাস পড়তি নাকি? আমি তো মনে হত, তুই প্রেমের উপন্যাসের মত বাজে কিছু হাতেই নিবি না!
নীলা বইয়ের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে এটা জানতাম। হুমায়ুন আহমেদ তার কাছে সস্তা জনপ্রিয় লেখক, সমরেশ মজুমদার থার্ড ক্লাস, আনিসুল হক ছাগল ইত্যাদি। এসব নিয়ে তার সাথে ঝগড়াও করেছি অনেক। সৈয়দ শামসুল হককে একবার চেতনা বিক্রেতা বলায় সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম। সৈয়দ হকের মত ভার্সেটাইল লেখক দুই বাংলায় খুঁজে পাওয়া যায় আর একটাও? মানা যায় এমন হুটহাট গাছাড়া মন্তব্য?
আমি কিছু বললাম না। পাছে এবারও এডাল্ট কিছু বলে ফেলি!
নীলা বলল, পড়তাম প্রেমের গল্প উপন্যাস একসময়। সেই ক্লাস এইট নাইনে। তারপর তো শালার দৃষ্টিভঙ্গীটাই চেঞ্জ হয়ে গেল! এখন তো মনে হয়, প্রেম একটা মানুষের বানানো জিনিস। এটার বাস্তব অস্তিত্ব নেই!
আমরা কেউই এ নিয়ে তর্কে গেলাম না। যুদ্ধ, ম্যাসাকার, এথনিক ক্লিনজিং, দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক কলহ ইত্যাদি দেখে যে কারো মনে হতেই পারে, দুনিয়া থেকে প্রেম উঠে গেছে!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের পড়া সেরা প্রেমের গল্প কিংবা উপন্যাসের নাম কী?
এটাই বোধহয় মৃন্ময়ীকে করা আমার প্রথম প্রশ্ন! তাও শুধু তাকেই করিনি!
নীলা উত্তর দিল, একটাও সেরা না। আগে যাদের সেরা মনে করতাম, তাদের এখন পড়লে বমি করে দেব!
মৃন্ময়ী বলল, আচ্ছা, সেরা মনে করতি কোন বইটাকে?
নীলা উত্তর দিল, অপরাজিত! এই বইটা প্রেমের না। কিন্তু এটাই একমাত্র বই যেটাকে প্রেমেরই মনে করি আমি আর এখনও পড়লে সেই সেই কিশোরীবেলার মতই ভাল লাগে! গল্পের মধ্যে, সৈয়দ মুজতবা আলীর বেঁচে থাকো সর্দিকাশি!
মৃন্ময়ী বলল, আমার এত বই আর গল্প প্রিয় যে একটার নাম বলতে পারব না! প্রেমের গল্প আমি বেশি পড়ি না, তাই মনে করতে পারছি না!
এবার আমার কিছু বলার পালা। আমি কি জানি, আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস কোনটা? খেলারাম খেলে যা'র কথা বলতে ইচ্ছে হলো! কিন্তু সেটা কি আদৌ প্রেমের উপন্যাস!
বললাম, আমার জীবনে পড়া সেরা গল্প হলো সমাপ্তি!। শুধু প্রেমের গল্প না, কোন গল্প পড়েই আমার এত ভাল লাগেনি!
সমাপ্তির কথা বলার সময় মৃন্ময়ীর দিকে তাকালাম আমি। সে ফোয়ারার দিকে তাকিয়ে ছিল। কী ভাবছিল কে জানে! সমাপ্তি নামটা শুনেই তাকাল আমার দিকে! চোখাচোখি হয়ে গেল আমাদের।
মৃন্ময়ী কি সমাপ্তি পড়েছে? আমি জানি না।
মৃন্ময়ী বলল, আঃ! সমাপ্তি! গল্পটার কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়! এত ভাল কেউ কীভাবে লিখতে পারে!
নীলা বলল, সমাপ্তি কার লেখা রে?
নীলার প্রশ্নের জবাব দেয়াটা বাহুল্য। যে সমাপ্তি পড়েনি সে সাহিত্য নিয়ে কীভাবে এত ভাব চোদায় আমি জানি না।
আমি মৃন্ময়ীর কথার সূত্র ধরে বললাম, তোমার বাবা তোমার নাম মৃন্ময়ী রাখলেন কেমন করে! কীভাবে সম্ভব!
মৃন্ময়ী আমার দিকে তাকাল আবার। আর আমি? তাকিয়েই আছি ওর মুখের দিকে। ওর দিকে তাকানোর সুযোগ পাই না। আজ তাই হাতছাড়া করছি না।
মৃন্ময়ী বলল, কেন? কারো নাম মৃন্ময়ী রাখতে সমস্যা কী?
আমি বললাম, তোমার বাবা নিশ্চয়ই গল্পটা পড়েছেন? নিজের মেয়ের নাম যে লোক মৃন্ময়ী রাখেন, তার নিঘার্ত সমাপ্তি পড়ার কথা!
মৃন্ময়ী মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলল, আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ বলতেই পাগল!
নীলা বলল, রবীন্দ্রনাথকে পূজা করে নাকি? ওকে তো পূজা করার লোকের অভাব নেই!
নীলা সমাপ্তি পড়েনি বলে ওর উপর এক প্রকার বিতৃষ্ণা জন্মে গিয়েছে আমার। তার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কথা বলার অধিকারই নেই।
পাতাকাটা একফালি রোদ এসে পড়েছে মৃন্ময়ীর গালে। হে পৃথিবী, তুমি তোমার সূর্যপ্রদক্ষিণ বন্ধ কর ঘণ্টাখানেকের জন্য। মৃন্ময়ীর গাল থেকে যেন সরে না যায় রোদের এই টুকরো!
কী? বল?
আমি ওর গালের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে কিছুক্ষণ জবাব দিতে পারিনি। তড়িঘড়ি করে বললাম, মৃন্ময়ী কোন পুরুষ পড়লে নিজেকে অপূর্ব না ভেবে পারবেই না! তোমার বাবাও পড়ার সময় নিজেকে অবশ্যই অপূর্ব ভেবেছেন! সবাই চাইবে নিজের প্রেমিকার মধ্যে মৃন্ময়ীকে দেখতে! আর তোমার বাবা কিনা মেয়ের নাম রাখলেন মৃন্ময়ী! মৃণ্ময়ী শুধু অধরা কারো নামই হতে পারে, প্রেমিকার নাম হতে পারে! কারো মেয়ের নাম হতে পারে না। কারো বোন মৃন্ময়ী হতে পারে না!
মৃন্ময়ী চোখ বড় করে আমার কথা শুনছিল। বলল, নাম নিয়ে কারো এত বড় থিওরি আছে, আমি জানতাম না!
লজ্জা পেলাম যেন। সমাপ্তি নিয়ে খোদ মৃন্ময়ীর সামনে লেকচার ঝাড়তে আছে?
তাও বললাম, এই একটা গল্প নিয়ে আমি খুব সেন্সিটিভ। আমার অপূর্ব বাঁ অপু নামের কাউকে দেখলেই হিংসে হয় জানো? আমার নিজের নাম রিদম না হয়ে অপূর্ব হতে পারত!
আমরা নীলাকে বাদ দিয়ে কথা বলছি, এটা ওর বোধহয় সহ্য হচ্ছিল না। বলল, এই তোরা কি লাগালি? নাম নিয়ে এত প্যাঁচাল পাড়ার কী আছে!
আমি যদি শিল্পি হতাম আর এখনকার এই মুহূর্তটা হত যদি আমার শিল্পকর্ম, আমি মাঝখান থেকে তুলে দিতাম নীলাকে। রাবার দিয়ে ঘষে।
মৃন্ময়ী বলল, অপূর্ব নাম হলেই মৃন্ময়ীকে পেতে নাকি?
বললাম, সমাপ্তিতেও তো অপু খুব সহজে পায়নি মৃন্ময়ীকে। আমিও না হয় সহজে পেতাম না! কিন্তু সহজে যা পাওয়া যায়, তার আর দাম কে দেয়, বলো! কষ্ট করেই অর্জন করতাম না হয়!
মৃন্ময়ী কোন জবাব দিল না আমার কথার। শুধু হাসল। এমন হাসি দেখার জন্য আমি বারবার জন্ম নিতে পারি।
নীলা বলল, সিরিয়াস, ভাই। আমি আজই সমাপ্তি পড়ব। গল্পগুচ্ছে আছে না গল্পটা?
তৃতীয় বর্ষে এসে প্রথম কোন ক্লাস মেটের সাথে ভালভাবে কথা বলা একমাত্র ছাত্র বুঝি আমিই। আচ্ছা, এমন যদি হত, মৃন্ময়ী আর সবার মত সুন্দরী, যাকে দেখার জন্য বড়জোর ঘাড় ঘোরানো যায় কিন্তু যার চেহারা হঠাত মাঝরাতে মনের পর্দায় ভেসে উঠে কাঁপন জাগায় না, তাহলে কী তার সাথে কথা বলতাম? তার দিকে এত বেশি আকর্ষিত বলেই কি দূরেদূরে থাকিনি? শরতবাবু ঠিকই বলেছিলেন তবে।
এই এখানে দইফুকচা পাওয়া যায় না? খাবি তোরা?, প্রস্তাব করল নীলা
পকেটের অবস্থা বেহাল। অবস্থা এমন এসে দাঁড়িয়েছে যে একটা সিগারেট ভেঙে দুইবার খাই। মাসের শেষে প্রতিবার আমার এমন হয়।
এমন সময়ে দইফুচকা? প্রত্যেক প্লেট আশি টাকা নেবে, মানে তিন প্লেট আড়াইশো! আর আমার পকেটে আছে বড়জোর ১০০ টাকা। নীলার সামনে আমার টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়নি কোনদিন। কিন্তু আজ মৃন্ময়ী আছে, তার সামনে নীলাকে বিল দিতে দেই কীকরে? নতুন কারো সাথে পরিচিত হলে (আমরা যদিও এঁকে অপরকে আগে থেকেই চিনি; কিন্তু কথা তো হয়নি!), খাবারের ব্যাপারে উপস্থিত ছেলেকেই বিল দিতে হয়, এটাই দেখে আসছি। আমি নিজেও দেই। কিন্তু আজ যে পকেট ফুটো!
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। দই ফুচকা আমার ভাল লাগে না। শুধু ফুচকা চলে!, আমাকে বাঁচিয়ে দিতেই যেন বলল মৃন্ময়ী!
শুধু, ফুচকাও আছে। খাবি?, আবার ওকে জিজ্ঞেস করে নীলা।
না, তুই খা। এই গরমে এসব খাব না!
নীলা আমার মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করল না। উঠে চলে গেল রেস্তোরাঁটায়। ও একাই খাবে!
এখন শুধু আমি আর মৃন্ময়ী পাশাপাশি। নীলা মাঝখান থেকে চলে যাওয়ায় খুব ভাল লাগছে। ওর জন্য কথাই বলতে পারছিলাম না ভালোভাবে।
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?, মৃন্ময়ী উৎসুক তাকায় আমার দিকে। সরাসরি আমার চোখে ওর দৃষ্টি।
আমি ওর চোখের থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম, বল!
মৃন্ময়ীর চোখ পাখির নীড়ের মত নয়, বরং শরত আকাশের সাদা মেঘের মত, এই ফেলল ছায়া, এই রোদ। ওর চোখ আমার চোখ থেকে সরতে সময় নিল না। টুনটুনির মত দৃষ্টি ওর লাফিয়ে বেরাচ্ছে পুরো সমাজবিজ্ঞান চত্ত্বর!
বলল, তোমাকে যখনই চোখে পড়েছে, দেখেছি তোমার হাতে সিগারেট। দিনে কটা খাও?
আমাকেও চোখে পড়ে তবে মৃন্ময়ীর! বললাম সে কথাটা!
মৃন্ময়ী যেন আমাকে বাগে পেয়েছে এমন করে বলল, সেটা তো আমারও প্রশ্ন! তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভান কর কেন সবসময়?
বললাম, তুমিও তো দেখো না। পাশ কাঁটিয়ে যাও। তোমার সাথে কতদিন কথা বলতে চেয়েছি!
আচ্ছা। আজ থেকে আর পাশকাটাকাটি নেই। আমি ভাল্লুক না বুঝলে! তুমি আমাকে দেখলেই এমন করে লুকাও যেন, আমার দিকে চোখ পড়লেই আমি তোমাকে ফাঁসি দিয়ে দেব তোমাকে!, মৃন্ময়ী মৃদু হেসে বলল কথাগুলো।
আমি এর জবাব দিলাম না কোন।
নীলা একটা বিশাল দইফুচকার প্লেট নিয়ে আবার এসে বসল আমাদের মাঝে। মাঝেই বসল ও। কেন, মৃন্ময়ীর বাঁ পাশে বসে, ওকে মাঝে বসালে কী হত? নীলা সবসময় মধ্যমণি হয়ে থাকতে চায়। ওর এই অভ্যাসটাই আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে।
নীলা বলল, শালা, কেউ আমাকে এই জিনিস সারাদিন খেতে বললে, সারাদিন খেতে পারব! দই ফুচকা খেলে আমার কোনদিন ক্লান্তি আসবে না!
মৃন্ময়ী বলল, যখন দেখবি, চাইলেই যখন তখন দইফুচকা খেতে পারছিস, তখন আর খাওয়ার ইচ্ছেই করবে না! ছোটবেলায় মনে হত, আমি চকলেট খেতে বসলে সারাদিন খেতে পারব। কিন্তু তখন টাকা ছিল না। আর এখন টাকা আছে, খাচ্ছি না!
বললাম, আসলে টাকার সাথে এটার সম্পর্ক নেই বোধহয়। সম্পর্কটা রুচির সাথে। যখন টাকা ছিল না, তখন রুচি আলাদা ছিল। এখন টাকা আছে, বয়সও বেড়ে গেছে, রুচিও গেছে পাল্টে। তাই আর খাচ্ছো না চকলেট!
নীলা গোটা একটা ফুচকা মুখে পুরে বলল, এতসব জানি না। আমি এখন এই পুরা প্লেট খাব!
এত খেয়েও নীলা কীভাবে নিজের ফিগার ধরে রেখেছে, সেটা একটা রহস্য। ও যে পরিমাণে খায়, তাতে ওর আশি কেজি ওজনের একটা মাংসের বস্তা হওয়ার কথা ছিল।
মৃন্ময়ীর মোবাইলে ফোন আসল কার যেন। ও রিসিভ করে কথা বলে আমাদের বলল, থাক তোরা। আমি সেমিনারে যাচ্ছি। রজনী আপু এসেছে। ডাকছে আমাকে!
যাওয়ার সময় হঠাত মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, উত্তর দিলে না তো প্রশ্নটার!
কোন প্রশ্ন?
ঐ যে দিনে কটা সিগারেট খাও?, মৃন্ময়ী মনে করিয়ে দিয়ে বলল। ও অনেকটা দূরে আমার থেকে, এর মধ্যেই নীল ছাতাটা মাথায় দিয়ে ফেলেছে ও। ছাতাটা তবে নীলার নয়, মৃন্ময়ীর!
বললাম, গুনিনি কোনদিন। একদিন হিসেব করে তোমাকে বলল!
আমার মনে ফট করে যেন লোডশেডিং হয়ে গেল। ও চলে গেলে নীলার সাথে বসে কী করব আমি!
যেভাবে আলোকিত করে এসেছিল মৃন্ময়ী, সেভাবে দিনটাকে অন্ধকার করে চলে গেল ও।
মাঝেমাঝে কারো সামান্য উপস্থিতিই মনটাকে ভাল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কোনদিন যদি মৃন্ময়ী তাকাত আমার দিকে, মনের ভুলে, সারাদিন কী উচাটনই না কাটত আমার! কত কিছু ভাবতাম। এমনও তো হতে পারে, মনে মনে ও চায় আমার কাছে আসতে; আমাকে- যার কোন গুণ নেই চোখে পড়ার মত, যে মরে গেলেও কারও ক্ষতি হবে না, আফসোস করবে না কেউ, তাকে বাসতেও পারে ভালো ও। এমন হতেও তো পারে!
সেদিন আমি প্রেমে পড়ার গান শুনি, সমাপ্তি গল্পটা আরেকবার পড়ি গল্পগুচ্ছ খুলে। এই শহর, একা থাকা, রাস্তার দুর্গন্ধ কোনটাই আমাকে ছুঁতে পারে না। রাস্তার গলিটাকেও রোম্যান্টিক সিনেমার কোন সিন মনে হয়। হাঁটার সময় ভাবি, এই বুঝি দেখা হয়ে যাবে মৃন্ময়ীর সাথে হঠাত; হয়ত ও আমার গায়ে এসে ধাক্কা দেবে। মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ পার হয়ে নীলক্ষেতে বই দেখতে গেলে বিপরীত দিক থেকে হঠাত নিষ্পাপ মুখটা নিয়ে হাজির হতেও পারে মৃন্ময়ী!
তারপর আবার কয়েকটা ক্লাস। আমি তাকাই ওর দিকে, বারবার। লুকিয়ে। কিন্তু মৃন্ময়ী আমাকে ইগনোর করে যায়। ক্লাসের প্রতিটা লেকচার ও মন দিয়ে শোনে, নোট করে। পাশে বসা কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাসের সাথে কথা বলে।
আমার অস্তিত্ব অস্বীকার করে ও! তখন আমার মনে হয়, কেন মৃন্ময়ী আমার কথা ভাববে? আমার কথা ভাবার আছেটা কী? আমি কবিতা লিখতে পারি না, গলা ছেড়ে পারি না গান গাইতে, ভাল ছাত্রের কাঁতারেও নেই আমি। তবে কী দেখে ও আমার দিকে ধাবিত হবে?
দিনগুলো আবার এলোমেলো হয়ে যায়। আমি জান্নাত কিংবা নীলা কিংবা অন্য কোন মেয়ের পিছু নেয়া শুরু করি।
নীলা ফুচকা শেষ করে ফট করে একটা বেনসন ধরালো। বলল, তোরা তুমি তুমি করে কথা বলছিলি কেন রে? ক্লাসমেটকে আবার তুমি কী?
নীলাকে কি বলে দেব আমার গোপন ভাললাগার কথা? বোকামি হবে কাজটা। নীলা সবাইকে বলে দেবে। থাক না ব্যাপারটা সবার অজানাই!
কিন্তু নীলাকে কিছু একটা জবাব দেয়া দরকার। বললাম, ওর সাথে কথা হয়নি তো খুব একটা। দেখিস না ক্লাসে, কেমন ভাব ধরে থাকে। হুট করে কাউকে আমি তুই বলতে পারি না!
নীলা সিগারেটটাকে গাঁজার মত হাতের মুঠোয় ধরে টানছিল। বড় একটা টান দিয়ে মুখ দিয়ে চুল্লির মত ধোঁয়া ছুঁড়ে বলল, তুই তো অনেকের সাথেই কথা কম বলিস ক্লাসে। মেঘের সাথেও তো তোর ভাব নেই। তাও তো বলিস তুই তুই করে!
বললাম, বললাম তো, হুট কওরে তুই বলতে পারি না! হুদাই গ্যাজাচ্ছিস কেন?
নীলা সিগারেটটা আমার হাতে দিয়ে বলল, দীপ্তর মত সবাইকে আপনি বললেই পারিস। ল্যাঠা চুকে যায়!
কলা ভবনে ক্লাস ছিল আমাদের। ক্লাসে শেষের দিকে একটা বেঞ্চে বসলাম। নীলা বসল সামনের বেঞ্চে। যতই চোদনবাজ হোক, ও ছাত্রী ভাল।
মৃন্ময়ীকে ক্লাসে দেখলাম না। চলে গেল কী তবে? ক্লাসের জন্যই এসেছিল ক্যাম্পাসে, সেটা না করেই কি ফিরে গেল? স্যার ক্লাসে ঢোকার মিনিট পাঁচেক পর ক্লাসে ঢুকল মৃন্ময়ী। ওকে আড় চোখে চোরাভাবে খুব বেশি হলে দুই তিনবার দেখতে পারব হয়ত, তাতেই খুশীতে ভরে গেল মন।
সমাজবিজ্ঞান চত্বরে নীলাকে পেলাম।
সেদিনের সেই ঘটনার পর আজই ওর সাথে প্রথম দেখা। সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে একটা বইয়ের খোঁজে এসেছিলাম; বইটার একটাই কপি ছিল, সেটাও এক অধ্যাপক গবেষণার জন্য ধার নিয়েছেন; পেলাম না তাই। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট জ্বালালাম। আমার কেন জানি না সভ্য কোন জায়গায় গেলেই দম বন্ধ লাগে; লাইব্রেরিতে আমি দুই মিনিট বসতে পারি না, সেমিনার শুনতে গেলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে; সুসজ্জিত কোন বাড়িতে কিংবা খুব বড় নামকরা কোন কোম্পানির অফিসে গেলে ইচ্ছে করে ভাঙচুর করতে, যেখানে সেখানে সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়ম ভাঙতে ইচ্ছে করে।
সিগারেটের পাছায় শেষ টানটা দিয়ে তার ধোঁয়া ছুড়েছি কেবল, এলো নীলার চিরপরিচিত গলা।
বোকাচোদা সাহেব, লাইব্রেরিতে এসেছেন কেন? বিসিএস ক্যাডার হবেন?
নীলা নীল রঙয়ের একটা ছাতা মাথায় দাঁড়িয়েছে এসে আমার পিছনে। সাথে মৃন্ময়ী।
বললাম, লাইব্রেরী বিসিএসের কারখানা বুঝি? শুধু জানার জন্য কেউ লাইব্রেরিতে আসতে পারে না?
আমার প্রশ্নের কোন উত্তরই দিল না নীলা। যেন আমি কিছু বলিইনি। মৃন্ময়ীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই তো সেমিনার রুমে যাবি? যা, আমি এর সাথে একটু গল্প করি!
ভর্তির পর প্রথম দিন ক্লাসে এসেই যাকে দেখে পাগল (অন্য কোন শব্দ পাচ্ছি না) হয়ে গিয়েছিলাম, সে মৃন্ময়ীই। তাকে দেখে মনে হয়েছিল, এত সুন্দর দেখিনি কোনদিন, কোন মেয়ের এত সুন্দরী হওয়া উচিত নয়। আমার মনে হয়েছিল, মৃণ্ময়ী এমন কেউ যার দিকে তাকালেই আমি ঝলসে যাব, পুড়ে যাব। তবুও প্রথম দিন থেকেই ওকে আড়চোখে দেখি। যখন ও ক্লাসের জন্য নোট নেয়, অবাধ্য চুল প্রায় ঢেকে দেয় মুখ, তখন না তাকিয়ে পারি না। যখন কোন প্রশ্ন করে স্যারদের হঠাত দাঁড়িয়ে, তখন চোখ দিয়ে স্ক্যান করে নেই ওর চেহারা। মাঝেমাঝে গোটা ক্লাসটায় চোখ বুলিয়ে নেয়ার ভান করেও দেখি ওকে। কয়েকদিন ধরা পড়েও গিয়েছিলাম। চোখাচোখিও হয়েছে। কিন্তু কথা বলার সাহস খুঁজে পাইনি।
কতদিন ডাকসু হয়ে কলা ভবন যাওয়ার মুখে আমরা সামনাসামনি পড়ে গিয়েছি! সে না দেখার ভান করে পাশ কাঁটিয়ে গেছে, মাঝেমাঝে পাশ কাঁটিয়ে গেছি আমি। কোন কোনদিন কথাও বলেছি সাহস করে। সামান্য কথা বললে খুব ক্ষতি হয়ে যেত? আমিই বাঁ উল্লুকের মত না চেনার ভান করতাম কেন?
মৃন্ময়ী নীলাকে বলল, এখন সেমিনার রুমে গিয়ে কী করব? কেউ নেই। চল আমরা কোথাও বসি!
আমরা গিয়ে বসলাম সমাজবিজ্ঞান চত্বরে। ফোয়ারাকে ঘিরে কাপলেরা গুচ্ছগুচ্ছ হয়ে বসে গল্প করছে, বাদাম খাচ্ছে। কিছু দূরে কয়েকজন গিটার নিয়ে গান গাইছে। ওদের কণ্ঠ এতদূর পর্যন্ত আসছে না। মাঝেমাঝে তারা সপ্তকে যাচ্ছে যখন তাদের গলা, শুনতে পাচ্ছি শব্দ কিছু।
আমরা ফোয়ারার সিড়িতেই বসলাম। নীলা মাঝে, ওর দুই পাশে আমি আর মৃন্ময়ী। এমন প্যাটার্নেই যেন আমাদের বসার কথা ছিল; মৃন্ময়ী আর আমি পাশাপাশি বসব না, বসতে পারি না এটা যেন নীলাও জানে।
শুধু একটা ক্লাসের জন্য এই গরমে ক্যাম্পাসে আসার মানেই হয় না!, বলল মৃন্ময়ী।
মৃণ্ময়ীর মত মেয়েরাও বিরক্ত হয়? আমার জানা ছিল না। আমি এতদিন জানতাম, মৃন্ময়ী পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, তার মুখ দিয়ে আলো বেরোয়, সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ! এই ভ্যাঁপসা গরম, গা চিটচিটে, ঘামে ভেজা আবহাওয়া, ঝলসে দেয়া রোদ আর উত্তপ্ত বাতাস মৃন্ময়ীকে ছুঁতে পারে তাহলে! খারাপ লাগে তারও!
আসলেই। পরপর সেক্স করলে যেমন গরম লাগে, মনে হয়, গোসল না করলে মরে যাব- তেমন লাগছে!, বললাম আমি। বলেই বুঝলাম, কী বলেছি আমি! মৃন্ময়ীর সাথে ভালভাবে বসে কথা আজই প্রথম, তাও কথা হচ্ছে নীলাকে ভায়া করে। আর আমি কিনা প্রথমেই এডাল্ট বলে ফেললাম। আর তুলনাটাও হয়নি জুতমত। নিজের গালে নিজেরই একটা চাটি মারতে ইচ্ছে হচ্ছে!
মৃন্ময়ী যদি হাসত এমন কথা শুনে, তাহলে শান্তি পেতাম। কিন্তু গম্ভীর হয়ে গেল ও। আমি প্রথম বলেই ক্লিন বোল্ড।
আচ্ছা, মৃন্ময়ীরা কি নিজেদের মধ্যেও অশ্লীল কিছু বলে না? ঐ যে ওরা কয়েকজন একসাথে থাকে সবসময়, নিচুস্বরে হাসে, তখন কী নিয়ে হাসাহাসি করে!
নীলা বলল, আমার কিন্তু ভালই লাগে। সারাদিন বাড়িতে বসে কী করব? এখন কী আর ঐ বয়স আছে যে প্রেমের উপন্যাস পড়ে বুকে বই জড়িয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাব!
মৃন্ময়ী বলল, তুইও প্রেমের উপন্যাস পড়তি নাকি? আমি তো মনে হত, তুই প্রেমের উপন্যাসের মত বাজে কিছু হাতেই নিবি না!
নীলা বইয়ের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে এটা জানতাম। হুমায়ুন আহমেদ তার কাছে সস্তা জনপ্রিয় লেখক, সমরেশ মজুমদার থার্ড ক্লাস, আনিসুল হক ছাগল ইত্যাদি। এসব নিয়ে তার সাথে ঝগড়াও করেছি অনেক। সৈয়দ শামসুল হককে একবার চেতনা বিক্রেতা বলায় সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম। সৈয়দ হকের মত ভার্সেটাইল লেখক দুই বাংলায় খুঁজে পাওয়া যায় আর একটাও? মানা যায় এমন হুটহাট গাছাড়া মন্তব্য?
আমি কিছু বললাম না। পাছে এবারও এডাল্ট কিছু বলে ফেলি!
নীলা বলল, পড়তাম প্রেমের গল্প উপন্যাস একসময়। সেই ক্লাস এইট নাইনে। তারপর তো শালার দৃষ্টিভঙ্গীটাই চেঞ্জ হয়ে গেল! এখন তো মনে হয়, প্রেম একটা মানুষের বানানো জিনিস। এটার বাস্তব অস্তিত্ব নেই!
আমরা কেউই এ নিয়ে তর্কে গেলাম না। যুদ্ধ, ম্যাসাকার, এথনিক ক্লিনজিং, দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক কলহ ইত্যাদি দেখে যে কারো মনে হতেই পারে, দুনিয়া থেকে প্রেম উঠে গেছে!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের পড়া সেরা প্রেমের গল্প কিংবা উপন্যাসের নাম কী?
এটাই বোধহয় মৃন্ময়ীকে করা আমার প্রথম প্রশ্ন! তাও শুধু তাকেই করিনি!
নীলা উত্তর দিল, একটাও সেরা না। আগে যাদের সেরা মনে করতাম, তাদের এখন পড়লে বমি করে দেব!
মৃন্ময়ী বলল, আচ্ছা, সেরা মনে করতি কোন বইটাকে?
নীলা উত্তর দিল, অপরাজিত! এই বইটা প্রেমের না। কিন্তু এটাই একমাত্র বই যেটাকে প্রেমেরই মনে করি আমি আর এখনও পড়লে সেই সেই কিশোরীবেলার মতই ভাল লাগে! গল্পের মধ্যে, সৈয়দ মুজতবা আলীর বেঁচে থাকো সর্দিকাশি!
মৃন্ময়ী বলল, আমার এত বই আর গল্প প্রিয় যে একটার নাম বলতে পারব না! প্রেমের গল্প আমি বেশি পড়ি না, তাই মনে করতে পারছি না!
এবার আমার কিছু বলার পালা। আমি কি জানি, আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস কোনটা? খেলারাম খেলে যা'র কথা বলতে ইচ্ছে হলো! কিন্তু সেটা কি আদৌ প্রেমের উপন্যাস!
বললাম, আমার জীবনে পড়া সেরা গল্প হলো সমাপ্তি!। শুধু প্রেমের গল্প না, কোন গল্প পড়েই আমার এত ভাল লাগেনি!
সমাপ্তির কথা বলার সময় মৃন্ময়ীর দিকে তাকালাম আমি। সে ফোয়ারার দিকে তাকিয়ে ছিল। কী ভাবছিল কে জানে! সমাপ্তি নামটা শুনেই তাকাল আমার দিকে! চোখাচোখি হয়ে গেল আমাদের।
মৃন্ময়ী কি সমাপ্তি পড়েছে? আমি জানি না।
মৃন্ময়ী বলল, আঃ! সমাপ্তি! গল্পটার কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়! এত ভাল কেউ কীভাবে লিখতে পারে!
নীলা বলল, সমাপ্তি কার লেখা রে?
নীলার প্রশ্নের জবাব দেয়াটা বাহুল্য। যে সমাপ্তি পড়েনি সে সাহিত্য নিয়ে কীভাবে এত ভাব চোদায় আমি জানি না।
আমি মৃন্ময়ীর কথার সূত্র ধরে বললাম, তোমার বাবা তোমার নাম মৃন্ময়ী রাখলেন কেমন করে! কীভাবে সম্ভব!
মৃন্ময়ী আমার দিকে তাকাল আবার। আর আমি? তাকিয়েই আছি ওর মুখের দিকে। ওর দিকে তাকানোর সুযোগ পাই না। আজ তাই হাতছাড়া করছি না।
মৃন্ময়ী বলল, কেন? কারো নাম মৃন্ময়ী রাখতে সমস্যা কী?
আমি বললাম, তোমার বাবা নিশ্চয়ই গল্পটা পড়েছেন? নিজের মেয়ের নাম যে লোক মৃন্ময়ী রাখেন, তার নিঘার্ত সমাপ্তি পড়ার কথা!
মৃন্ময়ী মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলল, আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ বলতেই পাগল!
নীলা বলল, রবীন্দ্রনাথকে পূজা করে নাকি? ওকে তো পূজা করার লোকের অভাব নেই!
নীলা সমাপ্তি পড়েনি বলে ওর উপর এক প্রকার বিতৃষ্ণা জন্মে গিয়েছে আমার। তার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কথা বলার অধিকারই নেই।
পাতাকাটা একফালি রোদ এসে পড়েছে মৃন্ময়ীর গালে। হে পৃথিবী, তুমি তোমার সূর্যপ্রদক্ষিণ বন্ধ কর ঘণ্টাখানেকের জন্য। মৃন্ময়ীর গাল থেকে যেন সরে না যায় রোদের এই টুকরো!
কী? বল?
আমি ওর গালের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে কিছুক্ষণ জবাব দিতে পারিনি। তড়িঘড়ি করে বললাম, মৃন্ময়ী কোন পুরুষ পড়লে নিজেকে অপূর্ব না ভেবে পারবেই না! তোমার বাবাও পড়ার সময় নিজেকে অবশ্যই অপূর্ব ভেবেছেন! সবাই চাইবে নিজের প্রেমিকার মধ্যে মৃন্ময়ীকে দেখতে! আর তোমার বাবা কিনা মেয়ের নাম রাখলেন মৃন্ময়ী! মৃণ্ময়ী শুধু অধরা কারো নামই হতে পারে, প্রেমিকার নাম হতে পারে! কারো মেয়ের নাম হতে পারে না। কারো বোন মৃন্ময়ী হতে পারে না!
মৃন্ময়ী চোখ বড় করে আমার কথা শুনছিল। বলল, নাম নিয়ে কারো এত বড় থিওরি আছে, আমি জানতাম না!
লজ্জা পেলাম যেন। সমাপ্তি নিয়ে খোদ মৃন্ময়ীর সামনে লেকচার ঝাড়তে আছে?
তাও বললাম, এই একটা গল্প নিয়ে আমি খুব সেন্সিটিভ। আমার অপূর্ব বাঁ অপু নামের কাউকে দেখলেই হিংসে হয় জানো? আমার নিজের নাম রিদম না হয়ে অপূর্ব হতে পারত!
আমরা নীলাকে বাদ দিয়ে কথা বলছি, এটা ওর বোধহয় সহ্য হচ্ছিল না। বলল, এই তোরা কি লাগালি? নাম নিয়ে এত প্যাঁচাল পাড়ার কী আছে!
আমি যদি শিল্পি হতাম আর এখনকার এই মুহূর্তটা হত যদি আমার শিল্পকর্ম, আমি মাঝখান থেকে তুলে দিতাম নীলাকে। রাবার দিয়ে ঘষে।
মৃন্ময়ী বলল, অপূর্ব নাম হলেই মৃন্ময়ীকে পেতে নাকি?
বললাম, সমাপ্তিতেও তো অপু খুব সহজে পায়নি মৃন্ময়ীকে। আমিও না হয় সহজে পেতাম না! কিন্তু সহজে যা পাওয়া যায়, তার আর দাম কে দেয়, বলো! কষ্ট করেই অর্জন করতাম না হয়!
মৃন্ময়ী কোন জবাব দিল না আমার কথার। শুধু হাসল। এমন হাসি দেখার জন্য আমি বারবার জন্ম নিতে পারি।
নীলা বলল, সিরিয়াস, ভাই। আমি আজই সমাপ্তি পড়ব। গল্পগুচ্ছে আছে না গল্পটা?
তৃতীয় বর্ষে এসে প্রথম কোন ক্লাস মেটের সাথে ভালভাবে কথা বলা একমাত্র ছাত্র বুঝি আমিই। আচ্ছা, এমন যদি হত, মৃন্ময়ী আর সবার মত সুন্দরী, যাকে দেখার জন্য বড়জোর ঘাড় ঘোরানো যায় কিন্তু যার চেহারা হঠাত মাঝরাতে মনের পর্দায় ভেসে উঠে কাঁপন জাগায় না, তাহলে কী তার সাথে কথা বলতাম? তার দিকে এত বেশি আকর্ষিত বলেই কি দূরেদূরে থাকিনি? শরতবাবু ঠিকই বলেছিলেন তবে।
এই এখানে দইফুকচা পাওয়া যায় না? খাবি তোরা?, প্রস্তাব করল নীলা
পকেটের অবস্থা বেহাল। অবস্থা এমন এসে দাঁড়িয়েছে যে একটা সিগারেট ভেঙে দুইবার খাই। মাসের শেষে প্রতিবার আমার এমন হয়।
এমন সময়ে দইফুচকা? প্রত্যেক প্লেট আশি টাকা নেবে, মানে তিন প্লেট আড়াইশো! আর আমার পকেটে আছে বড়জোর ১০০ টাকা। নীলার সামনে আমার টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়নি কোনদিন। কিন্তু আজ মৃন্ময়ী আছে, তার সামনে নীলাকে বিল দিতে দেই কীকরে? নতুন কারো সাথে পরিচিত হলে (আমরা যদিও এঁকে অপরকে আগে থেকেই চিনি; কিন্তু কথা তো হয়নি!), খাবারের ব্যাপারে উপস্থিত ছেলেকেই বিল দিতে হয়, এটাই দেখে আসছি। আমি নিজেও দেই। কিন্তু আজ যে পকেট ফুটো!
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। দই ফুচকা আমার ভাল লাগে না। শুধু ফুচকা চলে!, আমাকে বাঁচিয়ে দিতেই যেন বলল মৃন্ময়ী!
শুধু, ফুচকাও আছে। খাবি?, আবার ওকে জিজ্ঞেস করে নীলা।
না, তুই খা। এই গরমে এসব খাব না!
নীলা আমার মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করল না। উঠে চলে গেল রেস্তোরাঁটায়। ও একাই খাবে!
এখন শুধু আমি আর মৃন্ময়ী পাশাপাশি। নীলা মাঝখান থেকে চলে যাওয়ায় খুব ভাল লাগছে। ওর জন্য কথাই বলতে পারছিলাম না ভালোভাবে।
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?, মৃন্ময়ী উৎসুক তাকায় আমার দিকে। সরাসরি আমার চোখে ওর দৃষ্টি।
আমি ওর চোখের থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম, বল!
মৃন্ময়ীর চোখ পাখির নীড়ের মত নয়, বরং শরত আকাশের সাদা মেঘের মত, এই ফেলল ছায়া, এই রোদ। ওর চোখ আমার চোখ থেকে সরতে সময় নিল না। টুনটুনির মত দৃষ্টি ওর লাফিয়ে বেরাচ্ছে পুরো সমাজবিজ্ঞান চত্ত্বর!
বলল, তোমাকে যখনই চোখে পড়েছে, দেখেছি তোমার হাতে সিগারেট। দিনে কটা খাও?
আমাকেও চোখে পড়ে তবে মৃন্ময়ীর! বললাম সে কথাটা!
মৃন্ময়ী যেন আমাকে বাগে পেয়েছে এমন করে বলল, সেটা তো আমারও প্রশ্ন! তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভান কর কেন সবসময়?
বললাম, তুমিও তো দেখো না। পাশ কাঁটিয়ে যাও। তোমার সাথে কতদিন কথা বলতে চেয়েছি!
আচ্ছা। আজ থেকে আর পাশকাটাকাটি নেই। আমি ভাল্লুক না বুঝলে! তুমি আমাকে দেখলেই এমন করে লুকাও যেন, আমার দিকে চোখ পড়লেই আমি তোমাকে ফাঁসি দিয়ে দেব তোমাকে!, মৃন্ময়ী মৃদু হেসে বলল কথাগুলো।
আমি এর জবাব দিলাম না কোন।
নীলা একটা বিশাল দইফুচকার প্লেট নিয়ে আবার এসে বসল আমাদের মাঝে। মাঝেই বসল ও। কেন, মৃন্ময়ীর বাঁ পাশে বসে, ওকে মাঝে বসালে কী হত? নীলা সবসময় মধ্যমণি হয়ে থাকতে চায়। ওর এই অভ্যাসটাই আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে।
নীলা বলল, শালা, কেউ আমাকে এই জিনিস সারাদিন খেতে বললে, সারাদিন খেতে পারব! দই ফুচকা খেলে আমার কোনদিন ক্লান্তি আসবে না!
মৃন্ময়ী বলল, যখন দেখবি, চাইলেই যখন তখন দইফুচকা খেতে পারছিস, তখন আর খাওয়ার ইচ্ছেই করবে না! ছোটবেলায় মনে হত, আমি চকলেট খেতে বসলে সারাদিন খেতে পারব। কিন্তু তখন টাকা ছিল না। আর এখন টাকা আছে, খাচ্ছি না!
বললাম, আসলে টাকার সাথে এটার সম্পর্ক নেই বোধহয়। সম্পর্কটা রুচির সাথে। যখন টাকা ছিল না, তখন রুচি আলাদা ছিল। এখন টাকা আছে, বয়সও বেড়ে গেছে, রুচিও গেছে পাল্টে। তাই আর খাচ্ছো না চকলেট!
নীলা গোটা একটা ফুচকা মুখে পুরে বলল, এতসব জানি না। আমি এখন এই পুরা প্লেট খাব!
এত খেয়েও নীলা কীভাবে নিজের ফিগার ধরে রেখেছে, সেটা একটা রহস্য। ও যে পরিমাণে খায়, তাতে ওর আশি কেজি ওজনের একটা মাংসের বস্তা হওয়ার কথা ছিল।
মৃন্ময়ীর মোবাইলে ফোন আসল কার যেন। ও রিসিভ করে কথা বলে আমাদের বলল, থাক তোরা। আমি সেমিনারে যাচ্ছি। রজনী আপু এসেছে। ডাকছে আমাকে!
যাওয়ার সময় হঠাত মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, উত্তর দিলে না তো প্রশ্নটার!
কোন প্রশ্ন?
ঐ যে দিনে কটা সিগারেট খাও?, মৃন্ময়ী মনে করিয়ে দিয়ে বলল। ও অনেকটা দূরে আমার থেকে, এর মধ্যেই নীল ছাতাটা মাথায় দিয়ে ফেলেছে ও। ছাতাটা তবে নীলার নয়, মৃন্ময়ীর!
বললাম, গুনিনি কোনদিন। একদিন হিসেব করে তোমাকে বলল!
আমার মনে ফট করে যেন লোডশেডিং হয়ে গেল। ও চলে গেলে নীলার সাথে বসে কী করব আমি!
যেভাবে আলোকিত করে এসেছিল মৃন্ময়ী, সেভাবে দিনটাকে অন্ধকার করে চলে গেল ও।
মাঝেমাঝে কারো সামান্য উপস্থিতিই মনটাকে ভাল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কোনদিন যদি মৃন্ময়ী তাকাত আমার দিকে, মনের ভুলে, সারাদিন কী উচাটনই না কাটত আমার! কত কিছু ভাবতাম। এমনও তো হতে পারে, মনে মনে ও চায় আমার কাছে আসতে; আমাকে- যার কোন গুণ নেই চোখে পড়ার মত, যে মরে গেলেও কারও ক্ষতি হবে না, আফসোস করবে না কেউ, তাকে বাসতেও পারে ভালো ও। এমন হতেও তো পারে!
সেদিন আমি প্রেমে পড়ার গান শুনি, সমাপ্তি গল্পটা আরেকবার পড়ি গল্পগুচ্ছ খুলে। এই শহর, একা থাকা, রাস্তার দুর্গন্ধ কোনটাই আমাকে ছুঁতে পারে না। রাস্তার গলিটাকেও রোম্যান্টিক সিনেমার কোন সিন মনে হয়। হাঁটার সময় ভাবি, এই বুঝি দেখা হয়ে যাবে মৃন্ময়ীর সাথে হঠাত; হয়ত ও আমার গায়ে এসে ধাক্কা দেবে। মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ পার হয়ে নীলক্ষেতে বই দেখতে গেলে বিপরীত দিক থেকে হঠাত নিষ্পাপ মুখটা নিয়ে হাজির হতেও পারে মৃন্ময়ী!
তারপর আবার কয়েকটা ক্লাস। আমি তাকাই ওর দিকে, বারবার। লুকিয়ে। কিন্তু মৃন্ময়ী আমাকে ইগনোর করে যায়। ক্লাসের প্রতিটা লেকচার ও মন দিয়ে শোনে, নোট করে। পাশে বসা কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাসের সাথে কথা বলে।
আমার অস্তিত্ব অস্বীকার করে ও! তখন আমার মনে হয়, কেন মৃন্ময়ী আমার কথা ভাববে? আমার কথা ভাবার আছেটা কী? আমি কবিতা লিখতে পারি না, গলা ছেড়ে পারি না গান গাইতে, ভাল ছাত্রের কাঁতারেও নেই আমি। তবে কী দেখে ও আমার দিকে ধাবিত হবে?
দিনগুলো আবার এলোমেলো হয়ে যায়। আমি জান্নাত কিংবা নীলা কিংবা অন্য কোন মেয়ের পিছু নেয়া শুরু করি।
নীলা ফুচকা শেষ করে ফট করে একটা বেনসন ধরালো। বলল, তোরা তুমি তুমি করে কথা বলছিলি কেন রে? ক্লাসমেটকে আবার তুমি কী?
নীলাকে কি বলে দেব আমার গোপন ভাললাগার কথা? বোকামি হবে কাজটা। নীলা সবাইকে বলে দেবে। থাক না ব্যাপারটা সবার অজানাই!
কিন্তু নীলাকে কিছু একটা জবাব দেয়া দরকার। বললাম, ওর সাথে কথা হয়নি তো খুব একটা। দেখিস না ক্লাসে, কেমন ভাব ধরে থাকে। হুট করে কাউকে আমি তুই বলতে পারি না!
নীলা সিগারেটটাকে গাঁজার মত হাতের মুঠোয় ধরে টানছিল। বড় একটা টান দিয়ে মুখ দিয়ে চুল্লির মত ধোঁয়া ছুঁড়ে বলল, তুই তো অনেকের সাথেই কথা কম বলিস ক্লাসে। মেঘের সাথেও তো তোর ভাব নেই। তাও তো বলিস তুই তুই করে!
বললাম, বললাম তো, হুট কওরে তুই বলতে পারি না! হুদাই গ্যাজাচ্ছিস কেন?
নীলা সিগারেটটা আমার হাতে দিয়ে বলল, দীপ্তর মত সবাইকে আপনি বললেই পারিস। ল্যাঠা চুকে যায়!
কলা ভবনে ক্লাস ছিল আমাদের। ক্লাসে শেষের দিকে একটা বেঞ্চে বসলাম। নীলা বসল সামনের বেঞ্চে। যতই চোদনবাজ হোক, ও ছাত্রী ভাল।
মৃন্ময়ীকে ক্লাসে দেখলাম না। চলে গেল কী তবে? ক্লাসের জন্যই এসেছিল ক্যাম্পাসে, সেটা না করেই কি ফিরে গেল? স্যার ক্লাসে ঢোকার মিনিট পাঁচেক পর ক্লাসে ঢুকল মৃন্ময়ী। ওকে আড় চোখে চোরাভাবে খুব বেশি হলে দুই তিনবার দেখতে পারব হয়ত, তাতেই খুশীতে ভরে গেল মন।