17-07-2022, 12:45 AM
(This post was last modified: 17-07-2022, 01:07 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অধ্যায় ৭ঃ দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেবো!
রুদ্রা ভাবির সাথে দেখা হয়ে গেল সিড়িতে। আমি থাকি আট তলায়। এমন মান্ধাতার আমলের বাড়ি যে সিড়ি বেঁয়ে উঠতে হয়। সিগারেট ফুরালে কিংবা চা খেতে ইচ্ছে হলেই চিত্তির। ভাগ্যিস রান্না করে খাই। তবে প্রতিদিন রান্না করতে ভাল লাগে না বলে, একটা সস্তার হোটেলে খেয়ে আসি মাঝেমাঝে।
আজ সারাদিন ক্যাম্পাসে যাইনি। সন্ধ্যাবেলা নিচে নেমে চা খেয়ে এক্কেবারে আজ কালের রসদ এক প্যাকেট গোল্ডলিফ আর কাল সকালের নাস্তা নিয়ে উঠছি। এক্কেবারে গ্রাউন্ড ফ্লোরে রুদ্রা ভাবির সাথে দেখা। কথা বলছিলেন দারোয়ানের সাথে। সৈকত রুদ্রা ভাবির কোলে।
আমি ওদের দেখেই দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই সৈকতের মুখ আলোকিত হয়ে উঠল।
বলল, "রিদম চাচ্চু, আজ গল্প শোনাবে না? প্রতিদিন কাল কাল করো!"
বাচ্চাটা দারুণ চটপটে। এতদিন আমাকে ভাইয়া বলে ডাকত আর কয়েকদিন আগে একবার মাত্র মা বলেছিল চাচ্চু বলে ডাকতে, এ কয়দিনে একবারও দেখা হয়নি- আর আজ চাচ্চু বলে ডাকছে!
রুদ্রা আমাকে খেয়াল করেননি। সৈকতের কথায় আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। ভাবির ঘুরে তাকানোটা অসাধারণ, রাজহংসীর গ্রীবা ফেরানোর মত।
আমাকে বললেন হেসে, "সৈকত তো দেখছি, তোমার কাছ থেকে গল্প না শুনে ছাড়বে না! তা কোথায় গিয়েছিলে?"
আমি হাতের খরচগুলো দেখিয়ে বললাম, "সৈকতকে তো আমি গল্প শোনাবোই! আমার এত বড় ফ্যান তো আর একটাও নেই!"
রুদ্রা মুচকি হাসলেন আমার কথা শুনে।
আমরা সিড়ি বেঁয়ে ওঠা শুরু করলাম। তিন তলা উঠতেই ঘেমে গেলেন রুদ্রা। সৈকতকে কোলে নিয়ে উঠতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল ভাবির। আমি বললাম, "সৈকতকে আমার কোলে দিন না! আমি থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন!"
রুদ্রা যেন এটাই চাইছিলেন। বাচ্চা কোলে নেয়ার সময় চাইলেই দুধ ছুঁয়ে দেয়া যায়। এ কাজে আমি বিশেষ পারদর্শী। এলাকায় ভাবিদের কাছ থেকে বাচ্চাদের কোলে নেয়ার ছলে কতজনের দুধ ছুঁয়েছি!
আজও সৈকতকে কোলে নেয়ার সময় ছুঁয়ে দিলাম রুদ্রার দুধ। হাতটা শুধু একবার দুধে লাগলো। তাতেই শান্তি!
সৈকত বেশ গুল্টুস টাইপের ছেলে। যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশিই ওজন!
ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন একে?"
ভাবি পাঁচ তলায় এসেই হাফিয়ে গিয়েছেন। এই দম নিয়ে স্বামীকে রাইড করেন কেমনে? অথচ কী সুন্দর ফিগার। আমরা থামলাম একটু। একটু দম নিয়ে বলল, "ও আর্ট শেখে একজনের কাছে। ওর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম!"
"সৈকত তো গানও শেখে, তাই না?", জিজ্ঞেস করলাম আমি।
"হ্যাঁ। গানের একজন শিক্ষকও রেখেছি। সপ্তাহে তিন দিন আসেন!"
সৈকতকে আইয়ুব বাচ্চু আর এসএম সুলতান না বানিয়ে ছাড়বে না দেখছি। চার বছরের বাচ্চার উপর এত ভার চাপিয়ে দিলে তাদের বিকাশ হবে কী করে? যে বয়সে আতা পাতা মুখস্ত করার কথা, সে বয়সে সরগম আর আর্টের কারিকুরি শিখে কতদূর যেতে পারবে একটা বাচ্চা!
এসব মুখে বললাম না।
"হ্যাঁ। সৈকত দারুণ ছেলে। ভালভাবে শিখলে দুইটাতেই ভাল করতে পারবে!"
আমাদের ফ্লার্ট পাশাপাশি। আর আট তলাতেই। আট তলায় এসে নামিয়ে দিলাম রিদমকে। ওদের ফ্লাটের দরজা লাগানো, তাই হয়ত ও দৌড়ে ঘরে যেতে পারল না। দরজার তালাটা ধরে ঝুলাঝুলি শুরু করল।
আমি রুদ্রা বললাম, "ওকে নিয়ে আসুন না, আমার ওখানে। ওকেও গল্প শোনানো যাবে, আপনার সাথেও আলাপ করা যাবে ভালোভাবে!"
রুদ্রা ভাবি মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ আসব। তুমিও চা খেতে ইচ্ছে হলেই দরজায় নক করবে। এনি টাইম! সৈকতের খেলার সাথী নেই, জানো? তোমার সাথে থাকলে ও বেশ আনন্দে থাকে!"
আমি 'আচ্ছা' বলে আমার রুমে ঢুকলাম।
পরদিন সকালে ক্লাস করতে যাব, বাদ সাধলো বৃষ্টি। সন্ধ্যার অবসরে কিংবা গভীর রাতের বৃষ্টি আমার প্রিয়। কিন্তু কাজের সময়ে বৃষ্টি এলে রবীন্দ্রনাথের বর্ষাপ্রেম জাগে না। বরং আকাশকে গালি দিতে ইচ্ছে করে মুখের ভাষা খারাপ করে।
সকাল এগারোটা বাজে। ক্লাসে যেতে পারছি না, ঘরেও থাকার ইচ্ছে নেই। ভাবলাম, রুদ্রা ভাবির দরজায় একটু কড়া নেড়েই দেখি! কড়া নাড়াটা ভুল হলে সঞ্জিবের মত না হয় গাইবো, "কড়া নেড়ে গেছি, ভুল দরজায়!"
ভাবিদের ফ্লাটে কলিংবেল আছে। ওরা নিজেরাই সেট করে নিয়েছে হয়ত। টিপলাম তাই দ্বিধান্বিত হয়ে!
ভাবি দরজা খুললেন মিনিট দুয়েকের মধ্যেই। ভাবি থ্রিপিস পরে আছেন। কাজ করছিলেন হয়ত, কপালে ঘাম। ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "এসো...জুতাটা হাতে নিয়েই এসো। বাইরে রাখলে চুরি হয়ে যেতে পারে!"
আমি জুতা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। বললাম, "চা খেতে ইচ্ছে হলো। আপনার অসুবিধা করলাম না তো?"
ভাবি আমাকে বসতে দিয়ে বললেন, "আরে নাহ। আমি সারাদিন একা একা বোর হয়ে যাই! তোমাকে পেয়ে ভালই হলো। গল্প করা যাবে!"
জিজ্ঞেস করলাম, "সৈকত কোথায়?"
ভাবি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল, "ওতো কলেজে। নটা থেকে বারোটা ওর কলেজ তুমি কী চা খাবে? দুধ না লাল?"
বললাম, "দুধ খাবো!"
কথাটা বলেই নিজেই চমকে উঠলাম। কথাটা কেমন অশ্লীল শোনাল।
ভাবি বললেন, "ঠিকাছে, তোমার জন্য দুধ চা'ই আনছি!"
আমার যে শুধু 'দুধ খাব' না বলে 'দুধ চা' খাবো বলা উচিত ছিল সেটা বোঝাতেই যেন ভাবি চা শব্দটায় জোর দিলেন!
আমি বসে বসে চারপাশটা দেখতে লাগলাম। ব্যালকনিতে একটা সুন্দর সবুজ বাগান। বৃষ্টি হচ্ছে বলে, পাতাগুলো আরও বেশি সবুজ হয়ে গিয়েছে। তবে একটা গাছও চিনতে পারলাম না!
ভাবি চা নিয়ে আসতেই বললাম, "আপনাদের ব্যালকোনিতে চেয়ার নেই?"
ভাবি বললেন, "আছে তো? কেন, বৃষ্টি দেখতে দেখতে খাবে?"
"তাই তো ইচ্ছে!"
আমরা চা নিয়ে ব্যালকোনিতে এলাম। ভাবির হাতে চায়ের ট্রে। বৃষ্টিটা জমিয়ে পড়ছে না- তাই ছাট এসে আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে না।
অসাধারণ চা! স্টলের চা খেয়ে খেয়ে জিহ্বা পচে গেছে আমার। ব্যাটারা মনে করে, বেশি করে দুধ আর চিনি দিলেই চা হয়ে যায়। চা বানানোটা যে একটা শিল্প সেটার ধার থোরাই ধারে।
ভাবিকে বললাম, "আপনি কিন্তু একটা বাড়তি ঝঞ্ঝাট জুটিয়ে ফেললেন!"
"মানে!"
বললাম, "এত সুন্দর চা বানান আপনি! আমি তো এই চায়ের লোভে আপনার উপর প্রতিদিন হামলা করব! বাড়তি ঝঞ্ঝাট নয়?"
রুদা, মিষ্টি করে হেসে দিলেন। বৃষ্টি, এমন অসাধারণ চা আর রুদ্রার মত সুন্দরী রমণি- একটা দিন এর চেয়ে ভাল হতে পারে! আর আমি কিনা ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি বলে আফসোস করছিলাম!
ভাবি বললেন, "তুমি আসবে, এটা আবার ঝঞ্ঝাটের কী হলো বলো? বরং আমার ভালই লাগবে। একা থাকি তো সারাদিন!"
বললাম, "তাহলে আস্কারা দিচ্ছেন? বুঝবেন একদিন এর কুফল। এই মক্কেলকে যারাই আস্কারা দিয়েছে, তারাই পরে আফসোস করেছে কিন্তু!"
রুদ্রা হেসে ফেললেন আমার কথায়। বললেন, "দেখা যাক। আফসোস নাও তো করতে পারি আমি!"
হঠাত ফোন বেজে উঠল আমার। নীলা। নীলা নির্ঘাত ক্যাম্পাসে এসেছে আজ, এই বৃষ্টিতেও। কাউকে না পেয়ে হয়তো আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি যাইনি বলে আমাকে গালাগাল করল কিছুক্ষণ। তারপর কেটে দিল!
ফোন রাখতেই রুদ্রার প্রশ্ন, "গালফ্রেন্ড বুঝি?"
"না না। ফ্রেন্ড। ক্লাসমেট আরকি! আমার গার্লফ্রেন্ড নেই!"
রুদ্রা যেন অবাক হয়ে গেলেন আমার কথায়, এমন ভাব করে বললেন, 'বল কী! এই সময়ে প্রেম না করলে কবে করবে? বিয়ের পর?"
"কী করব বলুন! কপালটাই খারাপ। কেউ জুটছে না!"
রুদ্রার চা শেষ। চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন, "জুটানোর চেষ্টা কর, জুটে যাবে!"
আমি জবাব না দিয়ে চা'টা শেষ করলাম। বৃষ্টি আবার জোরে এসেছে। আমাদের বিল্ডিং এর পিছনে একটা মসজিদ। পুরান ঢাকায় এই একটা জিনিসের অভাব নেই। প্রতি গলিতে গলিতে মসজিদ থাকবেই, নামাজ পড়ার লোক থাক বা না থাক। মসজিদের সামনেই একটা বড় আম গাছ। এই আট তলা থেকে আম গাছটাকে একটা ফুলকপির মত লাগছে। কয়েকটা শালিক ভিজছে ছয়তলার একটা বিল্ডিং এর রেলিং এ।
"কী হলো? হঠাত চুপ মেরে গেলে যে?", রুদ্রার প্রশ্ন।
আমি আমগাছটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম, "আপনাদের ব্যালকনিটা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে!"
রুদ্রা বললেন, "একটা কাজ করো তবে। বৃষ্টি এলেই চলে এসো। একসাথে চা খেতে খেতে সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে!"
আমি জিজ্ঞেস করতে চাইলাম, "আপনার স্বামী থাকলেও আসব!", কিন্তু সে জিজ্ঞাসা কণ্ঠে উচ্চারিত হলো না।
বললাম, "অবশ্যই আসবো। আর আপনি এমন চা খাওয়ালেন! এই চা একবার খেয়ে যে বারবার খেতে চাইবে না, সে প্রকৃত চা খোরই না!"
ভাবি হেসে বললেন, "চা তো ভাল বানাবোই। আমার গ্রামের বাড়ি সিলেটে যে!"
রুদ্রার এই জবাবে, আমি হেসে ফেললাম।
হঠাত রুদ্রা ভাবিকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, "আচ্ছা, আমার বয়সে, প্রেম করতেন?"
ভাবি খানিকক্ষণ জবাব দিলেন না। মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম, "কী হাসছেন যে? বলুন না, প্রেম করতেন?"
ভাবি বললেন, "করব না? তখন নতুন নতুন সেলফোন। এখনকার মত অবশ্য হাতেহাতে হয়ে যায়নি। সারারাত জেগে কতজনের সাথে কথা বলেছি!"
আমি বললাম, "তাই নাকি? তা কতজনের সাথে প্রেম করেছেন?"
"গুণে তো রাখিনি। তবে অনেকের সাথেই কথা বলতাম। আগে রঙ নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসত খুব। রঙ নাম্বারের সাথেও প্রেম করেছি অনেক। প্রেম মানে বোঝোই তো। ঐ ফোনেই সব আরকি। দেখাটেখা খুব একটা করিনি। আর এলাকার ছেলেরাও ফোনে খুব জ্বালাতো। তাদের অনেকের সাথেই কথা বলতাম ফোনে!"
ভাবি একটানা বলে গেলেন কথাগুলো। শুনে বললাম, "ছেলেরা তো ঘুরবেই! আপনার যা চেহারা! ভাগ্যিস আপনার স্বামী উকিল নয়ত এখনও আপনার পিছনে ছেলেরা লেগেই থাকত!"
"কী যে বল না!"- ভাবি লজ্জা পেলেন যেন।
বললাম, "সত্যি, অনেক ছেলেই হয়ত ক্রাশ খেয়েছে। আগের মত বলে না আপনি বিবাহিত বলে!"
ভাবি ভেবে বললেন, "হতে পারে!"
আমি বললাম, 'আপনারা তো অনেক লাকি! ফোনে ফোনেই প্রেম করতে পারতেন। এখন তো রঙ নাম্বার থেকেও কল আসে না!"
ভাবি আমার এই কথাটা মানতে পারলেন না। "মোটেও আমরা তোমাদের মত লাকি না। এখন কত সুবিধা। ফেইসবুকে এখন কতজনের সাথে পরিচিত হওয়া যায়! আমাদের সময় কত ঝামেলা ছিল জানো? এমএমএস ছাড়া ছবি পাঠানো যেত না। সব ফোনে আবার এমএমএস পাঠানোও যেত না! আমার ফোনে এমএমএস সাপোর্ট করত না বলে কত বুড়ার সাথেও আমাকে প্রেম করতে হয়েছে জানো? দামড়ারা এত পাজি, ৫০ বছর বয়সেও এসে বলত আমি কলেজে পড়ি, অনার্স ফাইনাল দিলাম, চাকরি খুঁজছি!"
আমি রুদ্রার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলাম।
আমার সিগারেট লাগাতে ইচ্ছে করছিল।
একটা সিগারেট বের করে ভাবিকে দেখিয়ে বললাম, "আপনার সমস্যা নেই তো?"
রুদ্রা ভাবি হাত নেড়ে 'কুছ পরোয়া নেই' টাইপ কিছু একটা ইঙ্গিত করে বললেন, "আগে সহ্যই করতে পারতাম না। এখন তো বর খায়। সহ্য হয়ে গেছে! সিগারেটের গন্ধ নিতে নিতে কত কিছু করতে হয়েছে!"
আমি চমকে গেলাম জবাব শুনে। "গন্ধ নিতে নিতে কত কিছু করতে হয়েছে" মানে কী? রুদ্রা ভাবির বর কি ওকে সিগারেট টানতে টানতে লাগান নাকি? নাকি কোনদিন লাগিয়েছেন, নিয়মিত না লাগালেও? প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো। প্রথম দিনেই এত গভীরে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে, করলাম না।
আমি সিগারেট জ্বালিয়ে রিং ছুঁড়ে দিলাম।
"সেসব দিন এখন মিস করেন না?"
রুদ্রা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমার কথায় আমার দিকে তাকালেন, "মিস করি কিনা জিজ্ঞেস করছো? হ্যাঁ করি তো! এখন এই বাঁধাধরা জীবন আর ভাল লাগে না। চাকরি করলেও হত। সময়টা কেটে যেত। এখন সময় কাটানোই বিশাল সমস্যা হয়ে গেছে!"
বললাম, "আপনাকে আর সময় কাটানো নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। একা লাগলেই আমার ফোন দিয়ে দেবেন। আপনার সেবায় আমি সবসময় হাজির!"
ভাবি আমার বলার ধরণে হেসে ফেললেন। বললেন। "আচ্ছা দেখা যাবে! কেমন পারো তুমি আমার একাকিত্ব দূর করতে!"
বৃষ্টি কমে গিয়েছে। রোদও উঠে গিয়েছে এর মধ্যেই। বেরসিক আবহাওয়া। আরেকটু ঝরলে কী সমস্যা হত।
রোদ ব্যালকোনিতে ছুঁয়েছে। আমরা ঘরে এসে বসলাম।
টিভি ছাড়াই ছিল। স্টার জলসা। রুদ্রা যে সিরিয়ালখোর সেটা আমার আগেই ভাবা দরকার ছিল। সারাদিন কাজ নেই যার, সে সিরিয়াল দেখবে না তো কী করবে?
আমি বললাম, "আপনি এই বস্তাপচা জিনিসগুলো দেখেন কীকরে?"
ভাবি নাক উলটে বললেন, "কী দেখব তবে? দেখার মত কিছু নেই তো!"
আমি বললাম, "অনেক কিছু আছে। এত কিছু আছে যে চাইলে সারাজীবন সেসব দেখে কাঁটিয়ে দেয়া যাবে!"
ভাবি জবাব দিলেন না। আমি বললাম, "আচ্ছা, আপনার ভাল লাগবে এমন কিছু নিয়ে আসব কাল। আমার কম্পিউটারে অনেক টিভিসিরিজ আছে। সেসব দেখলে স্টার জলসার এসব পানসে মনে হবে!"
আমি বললেন, "আচ্ছা আনিও কাল। দেখব কেমন তোমার রুচি!"
আমি কিছু না বলে রিমোট দিয়ে শুধু চ্যানেলটা পরিবর্তন করে দিলাম।
হঠাত রুদ্রা বললেন, "এই ওর আসার সময় হয়ে গেছে। যাও তুমি এখন!"
আমি অবাক হয়ে গেলাম। বর আসলে সমস্যা কী? আমাকে বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ক্ষতি তো নেই কোন! নাকি আমাকে গোপন রাখতে চান বরের থেকে? গোপন প্রেমিকের মত?
আমি অনেক প্রশ্ন মাথায় নিয়েই উঠলাম।
ফেরার সময় বললাম, "প্রতিদিন সময় করে আসব কিন্তু। আপনার চা আমি আর একদিনও মিস করতে চাই না!"
রুদ্রা বললেন, "আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও। আমিই তোমাকে ডাকব চা বানালে!"
আমি নাম্বার দিয়ে ফিরে এলাম।
ভাবি চান না আমি যখন তখন যাই। বিশেষ করে, ওর উকিল স্বামী যখন বাসায় থাকে। তাই যখন থাকবে না ওর স্বামী, তখনই ফোন দেবে। বুঝেছি ব্যাপারটা।
আমি মজা পাওয়া শুরু করে দিয়েছি অলরেডি!
রুদ্রা ভাবির সাথে দেখা হয়ে গেল সিড়িতে। আমি থাকি আট তলায়। এমন মান্ধাতার আমলের বাড়ি যে সিড়ি বেঁয়ে উঠতে হয়। সিগারেট ফুরালে কিংবা চা খেতে ইচ্ছে হলেই চিত্তির। ভাগ্যিস রান্না করে খাই। তবে প্রতিদিন রান্না করতে ভাল লাগে না বলে, একটা সস্তার হোটেলে খেয়ে আসি মাঝেমাঝে।
আজ সারাদিন ক্যাম্পাসে যাইনি। সন্ধ্যাবেলা নিচে নেমে চা খেয়ে এক্কেবারে আজ কালের রসদ এক প্যাকেট গোল্ডলিফ আর কাল সকালের নাস্তা নিয়ে উঠছি। এক্কেবারে গ্রাউন্ড ফ্লোরে রুদ্রা ভাবির সাথে দেখা। কথা বলছিলেন দারোয়ানের সাথে। সৈকত রুদ্রা ভাবির কোলে।
আমি ওদের দেখেই দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই সৈকতের মুখ আলোকিত হয়ে উঠল।
বলল, "রিদম চাচ্চু, আজ গল্প শোনাবে না? প্রতিদিন কাল কাল করো!"
বাচ্চাটা দারুণ চটপটে। এতদিন আমাকে ভাইয়া বলে ডাকত আর কয়েকদিন আগে একবার মাত্র মা বলেছিল চাচ্চু বলে ডাকতে, এ কয়দিনে একবারও দেখা হয়নি- আর আজ চাচ্চু বলে ডাকছে!
রুদ্রা আমাকে খেয়াল করেননি। সৈকতের কথায় আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। ভাবির ঘুরে তাকানোটা অসাধারণ, রাজহংসীর গ্রীবা ফেরানোর মত।
আমাকে বললেন হেসে, "সৈকত তো দেখছি, তোমার কাছ থেকে গল্প না শুনে ছাড়বে না! তা কোথায় গিয়েছিলে?"
আমি হাতের খরচগুলো দেখিয়ে বললাম, "সৈকতকে তো আমি গল্প শোনাবোই! আমার এত বড় ফ্যান তো আর একটাও নেই!"
রুদ্রা মুচকি হাসলেন আমার কথা শুনে।
আমরা সিড়ি বেঁয়ে ওঠা শুরু করলাম। তিন তলা উঠতেই ঘেমে গেলেন রুদ্রা। সৈকতকে কোলে নিয়ে উঠতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল ভাবির। আমি বললাম, "সৈকতকে আমার কোলে দিন না! আমি থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন!"
রুদ্রা যেন এটাই চাইছিলেন। বাচ্চা কোলে নেয়ার সময় চাইলেই দুধ ছুঁয়ে দেয়া যায়। এ কাজে আমি বিশেষ পারদর্শী। এলাকায় ভাবিদের কাছ থেকে বাচ্চাদের কোলে নেয়ার ছলে কতজনের দুধ ছুঁয়েছি!
আজও সৈকতকে কোলে নেয়ার সময় ছুঁয়ে দিলাম রুদ্রার দুধ। হাতটা শুধু একবার দুধে লাগলো। তাতেই শান্তি!
সৈকত বেশ গুল্টুস টাইপের ছেলে। যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশিই ওজন!
ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন একে?"
ভাবি পাঁচ তলায় এসেই হাফিয়ে গিয়েছেন। এই দম নিয়ে স্বামীকে রাইড করেন কেমনে? অথচ কী সুন্দর ফিগার। আমরা থামলাম একটু। একটু দম নিয়ে বলল, "ও আর্ট শেখে একজনের কাছে। ওর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম!"
"সৈকত তো গানও শেখে, তাই না?", জিজ্ঞেস করলাম আমি।
"হ্যাঁ। গানের একজন শিক্ষকও রেখেছি। সপ্তাহে তিন দিন আসেন!"
সৈকতকে আইয়ুব বাচ্চু আর এসএম সুলতান না বানিয়ে ছাড়বে না দেখছি। চার বছরের বাচ্চার উপর এত ভার চাপিয়ে দিলে তাদের বিকাশ হবে কী করে? যে বয়সে আতা পাতা মুখস্ত করার কথা, সে বয়সে সরগম আর আর্টের কারিকুরি শিখে কতদূর যেতে পারবে একটা বাচ্চা!
এসব মুখে বললাম না।
"হ্যাঁ। সৈকত দারুণ ছেলে। ভালভাবে শিখলে দুইটাতেই ভাল করতে পারবে!"
আমাদের ফ্লার্ট পাশাপাশি। আর আট তলাতেই। আট তলায় এসে নামিয়ে দিলাম রিদমকে। ওদের ফ্লাটের দরজা লাগানো, তাই হয়ত ও দৌড়ে ঘরে যেতে পারল না। দরজার তালাটা ধরে ঝুলাঝুলি শুরু করল।
আমি রুদ্রা বললাম, "ওকে নিয়ে আসুন না, আমার ওখানে। ওকেও গল্প শোনানো যাবে, আপনার সাথেও আলাপ করা যাবে ভালোভাবে!"
রুদ্রা ভাবি মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ আসব। তুমিও চা খেতে ইচ্ছে হলেই দরজায় নক করবে। এনি টাইম! সৈকতের খেলার সাথী নেই, জানো? তোমার সাথে থাকলে ও বেশ আনন্দে থাকে!"
আমি 'আচ্ছা' বলে আমার রুমে ঢুকলাম।
পরদিন সকালে ক্লাস করতে যাব, বাদ সাধলো বৃষ্টি। সন্ধ্যার অবসরে কিংবা গভীর রাতের বৃষ্টি আমার প্রিয়। কিন্তু কাজের সময়ে বৃষ্টি এলে রবীন্দ্রনাথের বর্ষাপ্রেম জাগে না। বরং আকাশকে গালি দিতে ইচ্ছে করে মুখের ভাষা খারাপ করে।
সকাল এগারোটা বাজে। ক্লাসে যেতে পারছি না, ঘরেও থাকার ইচ্ছে নেই। ভাবলাম, রুদ্রা ভাবির দরজায় একটু কড়া নেড়েই দেখি! কড়া নাড়াটা ভুল হলে সঞ্জিবের মত না হয় গাইবো, "কড়া নেড়ে গেছি, ভুল দরজায়!"
ভাবিদের ফ্লাটে কলিংবেল আছে। ওরা নিজেরাই সেট করে নিয়েছে হয়ত। টিপলাম তাই দ্বিধান্বিত হয়ে!
ভাবি দরজা খুললেন মিনিট দুয়েকের মধ্যেই। ভাবি থ্রিপিস পরে আছেন। কাজ করছিলেন হয়ত, কপালে ঘাম। ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "এসো...জুতাটা হাতে নিয়েই এসো। বাইরে রাখলে চুরি হয়ে যেতে পারে!"
আমি জুতা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। বললাম, "চা খেতে ইচ্ছে হলো। আপনার অসুবিধা করলাম না তো?"
ভাবি আমাকে বসতে দিয়ে বললেন, "আরে নাহ। আমি সারাদিন একা একা বোর হয়ে যাই! তোমাকে পেয়ে ভালই হলো। গল্প করা যাবে!"
জিজ্ঞেস করলাম, "সৈকত কোথায়?"
ভাবি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল, "ওতো কলেজে। নটা থেকে বারোটা ওর কলেজ তুমি কী চা খাবে? দুধ না লাল?"
বললাম, "দুধ খাবো!"
কথাটা বলেই নিজেই চমকে উঠলাম। কথাটা কেমন অশ্লীল শোনাল।
ভাবি বললেন, "ঠিকাছে, তোমার জন্য দুধ চা'ই আনছি!"
আমার যে শুধু 'দুধ খাব' না বলে 'দুধ চা' খাবো বলা উচিত ছিল সেটা বোঝাতেই যেন ভাবি চা শব্দটায় জোর দিলেন!
আমি বসে বসে চারপাশটা দেখতে লাগলাম। ব্যালকনিতে একটা সুন্দর সবুজ বাগান। বৃষ্টি হচ্ছে বলে, পাতাগুলো আরও বেশি সবুজ হয়ে গিয়েছে। তবে একটা গাছও চিনতে পারলাম না!
ভাবি চা নিয়ে আসতেই বললাম, "আপনাদের ব্যালকোনিতে চেয়ার নেই?"
ভাবি বললেন, "আছে তো? কেন, বৃষ্টি দেখতে দেখতে খাবে?"
"তাই তো ইচ্ছে!"
আমরা চা নিয়ে ব্যালকোনিতে এলাম। ভাবির হাতে চায়ের ট্রে। বৃষ্টিটা জমিয়ে পড়ছে না- তাই ছাট এসে আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে না।
অসাধারণ চা! স্টলের চা খেয়ে খেয়ে জিহ্বা পচে গেছে আমার। ব্যাটারা মনে করে, বেশি করে দুধ আর চিনি দিলেই চা হয়ে যায়। চা বানানোটা যে একটা শিল্প সেটার ধার থোরাই ধারে।
ভাবিকে বললাম, "আপনি কিন্তু একটা বাড়তি ঝঞ্ঝাট জুটিয়ে ফেললেন!"
"মানে!"
বললাম, "এত সুন্দর চা বানান আপনি! আমি তো এই চায়ের লোভে আপনার উপর প্রতিদিন হামলা করব! বাড়তি ঝঞ্ঝাট নয়?"
রুদা, মিষ্টি করে হেসে দিলেন। বৃষ্টি, এমন অসাধারণ চা আর রুদ্রার মত সুন্দরী রমণি- একটা দিন এর চেয়ে ভাল হতে পারে! আর আমি কিনা ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি বলে আফসোস করছিলাম!
ভাবি বললেন, "তুমি আসবে, এটা আবার ঝঞ্ঝাটের কী হলো বলো? বরং আমার ভালই লাগবে। একা থাকি তো সারাদিন!"
বললাম, "তাহলে আস্কারা দিচ্ছেন? বুঝবেন একদিন এর কুফল। এই মক্কেলকে যারাই আস্কারা দিয়েছে, তারাই পরে আফসোস করেছে কিন্তু!"
রুদ্রা হেসে ফেললেন আমার কথায়। বললেন, "দেখা যাক। আফসোস নাও তো করতে পারি আমি!"
হঠাত ফোন বেজে উঠল আমার। নীলা। নীলা নির্ঘাত ক্যাম্পাসে এসেছে আজ, এই বৃষ্টিতেও। কাউকে না পেয়ে হয়তো আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি যাইনি বলে আমাকে গালাগাল করল কিছুক্ষণ। তারপর কেটে দিল!
ফোন রাখতেই রুদ্রার প্রশ্ন, "গালফ্রেন্ড বুঝি?"
"না না। ফ্রেন্ড। ক্লাসমেট আরকি! আমার গার্লফ্রেন্ড নেই!"
রুদ্রা যেন অবাক হয়ে গেলেন আমার কথায়, এমন ভাব করে বললেন, 'বল কী! এই সময়ে প্রেম না করলে কবে করবে? বিয়ের পর?"
"কী করব বলুন! কপালটাই খারাপ। কেউ জুটছে না!"
রুদ্রার চা শেষ। চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন, "জুটানোর চেষ্টা কর, জুটে যাবে!"
আমি জবাব না দিয়ে চা'টা শেষ করলাম। বৃষ্টি আবার জোরে এসেছে। আমাদের বিল্ডিং এর পিছনে একটা মসজিদ। পুরান ঢাকায় এই একটা জিনিসের অভাব নেই। প্রতি গলিতে গলিতে মসজিদ থাকবেই, নামাজ পড়ার লোক থাক বা না থাক। মসজিদের সামনেই একটা বড় আম গাছ। এই আট তলা থেকে আম গাছটাকে একটা ফুলকপির মত লাগছে। কয়েকটা শালিক ভিজছে ছয়তলার একটা বিল্ডিং এর রেলিং এ।
"কী হলো? হঠাত চুপ মেরে গেলে যে?", রুদ্রার প্রশ্ন।
আমি আমগাছটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম, "আপনাদের ব্যালকনিটা অনেক সুন্দর। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে!"
রুদ্রা বললেন, "একটা কাজ করো তবে। বৃষ্টি এলেই চলে এসো। একসাথে চা খেতে খেতে সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে!"
আমি জিজ্ঞেস করতে চাইলাম, "আপনার স্বামী থাকলেও আসব!", কিন্তু সে জিজ্ঞাসা কণ্ঠে উচ্চারিত হলো না।
বললাম, "অবশ্যই আসবো। আর আপনি এমন চা খাওয়ালেন! এই চা একবার খেয়ে যে বারবার খেতে চাইবে না, সে প্রকৃত চা খোরই না!"
ভাবি হেসে বললেন, "চা তো ভাল বানাবোই। আমার গ্রামের বাড়ি সিলেটে যে!"
রুদ্রার এই জবাবে, আমি হেসে ফেললাম।
হঠাত রুদ্রা ভাবিকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, "আচ্ছা, আমার বয়সে, প্রেম করতেন?"
ভাবি খানিকক্ষণ জবাব দিলেন না। মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম, "কী হাসছেন যে? বলুন না, প্রেম করতেন?"
ভাবি বললেন, "করব না? তখন নতুন নতুন সেলফোন। এখনকার মত অবশ্য হাতেহাতে হয়ে যায়নি। সারারাত জেগে কতজনের সাথে কথা বলেছি!"
আমি বললাম, "তাই নাকি? তা কতজনের সাথে প্রেম করেছেন?"
"গুণে তো রাখিনি। তবে অনেকের সাথেই কথা বলতাম। আগে রঙ নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসত খুব। রঙ নাম্বারের সাথেও প্রেম করেছি অনেক। প্রেম মানে বোঝোই তো। ঐ ফোনেই সব আরকি। দেখাটেখা খুব একটা করিনি। আর এলাকার ছেলেরাও ফোনে খুব জ্বালাতো। তাদের অনেকের সাথেই কথা বলতাম ফোনে!"
ভাবি একটানা বলে গেলেন কথাগুলো। শুনে বললাম, "ছেলেরা তো ঘুরবেই! আপনার যা চেহারা! ভাগ্যিস আপনার স্বামী উকিল নয়ত এখনও আপনার পিছনে ছেলেরা লেগেই থাকত!"
"কী যে বল না!"- ভাবি লজ্জা পেলেন যেন।
বললাম, "সত্যি, অনেক ছেলেই হয়ত ক্রাশ খেয়েছে। আগের মত বলে না আপনি বিবাহিত বলে!"
ভাবি ভেবে বললেন, "হতে পারে!"
আমি বললাম, 'আপনারা তো অনেক লাকি! ফোনে ফোনেই প্রেম করতে পারতেন। এখন তো রঙ নাম্বার থেকেও কল আসে না!"
ভাবি আমার এই কথাটা মানতে পারলেন না। "মোটেও আমরা তোমাদের মত লাকি না। এখন কত সুবিধা। ফেইসবুকে এখন কতজনের সাথে পরিচিত হওয়া যায়! আমাদের সময় কত ঝামেলা ছিল জানো? এমএমএস ছাড়া ছবি পাঠানো যেত না। সব ফোনে আবার এমএমএস পাঠানোও যেত না! আমার ফোনে এমএমএস সাপোর্ট করত না বলে কত বুড়ার সাথেও আমাকে প্রেম করতে হয়েছে জানো? দামড়ারা এত পাজি, ৫০ বছর বয়সেও এসে বলত আমি কলেজে পড়ি, অনার্স ফাইনাল দিলাম, চাকরি খুঁজছি!"
আমি রুদ্রার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলাম।
আমার সিগারেট লাগাতে ইচ্ছে করছিল।
একটা সিগারেট বের করে ভাবিকে দেখিয়ে বললাম, "আপনার সমস্যা নেই তো?"
রুদ্রা ভাবি হাত নেড়ে 'কুছ পরোয়া নেই' টাইপ কিছু একটা ইঙ্গিত করে বললেন, "আগে সহ্যই করতে পারতাম না। এখন তো বর খায়। সহ্য হয়ে গেছে! সিগারেটের গন্ধ নিতে নিতে কত কিছু করতে হয়েছে!"
আমি চমকে গেলাম জবাব শুনে। "গন্ধ নিতে নিতে কত কিছু করতে হয়েছে" মানে কী? রুদ্রা ভাবির বর কি ওকে সিগারেট টানতে টানতে লাগান নাকি? নাকি কোনদিন লাগিয়েছেন, নিয়মিত না লাগালেও? প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো। প্রথম দিনেই এত গভীরে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে, করলাম না।
আমি সিগারেট জ্বালিয়ে রিং ছুঁড়ে দিলাম।
"সেসব দিন এখন মিস করেন না?"
রুদ্রা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমার কথায় আমার দিকে তাকালেন, "মিস করি কিনা জিজ্ঞেস করছো? হ্যাঁ করি তো! এখন এই বাঁধাধরা জীবন আর ভাল লাগে না। চাকরি করলেও হত। সময়টা কেটে যেত। এখন সময় কাটানোই বিশাল সমস্যা হয়ে গেছে!"
বললাম, "আপনাকে আর সময় কাটানো নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। একা লাগলেই আমার ফোন দিয়ে দেবেন। আপনার সেবায় আমি সবসময় হাজির!"
ভাবি আমার বলার ধরণে হেসে ফেললেন। বললেন। "আচ্ছা দেখা যাবে! কেমন পারো তুমি আমার একাকিত্ব দূর করতে!"
বৃষ্টি কমে গিয়েছে। রোদও উঠে গিয়েছে এর মধ্যেই। বেরসিক আবহাওয়া। আরেকটু ঝরলে কী সমস্যা হত।
রোদ ব্যালকোনিতে ছুঁয়েছে। আমরা ঘরে এসে বসলাম।
টিভি ছাড়াই ছিল। স্টার জলসা। রুদ্রা যে সিরিয়ালখোর সেটা আমার আগেই ভাবা দরকার ছিল। সারাদিন কাজ নেই যার, সে সিরিয়াল দেখবে না তো কী করবে?
আমি বললাম, "আপনি এই বস্তাপচা জিনিসগুলো দেখেন কীকরে?"
ভাবি নাক উলটে বললেন, "কী দেখব তবে? দেখার মত কিছু নেই তো!"
আমি বললাম, "অনেক কিছু আছে। এত কিছু আছে যে চাইলে সারাজীবন সেসব দেখে কাঁটিয়ে দেয়া যাবে!"
ভাবি জবাব দিলেন না। আমি বললাম, "আচ্ছা, আপনার ভাল লাগবে এমন কিছু নিয়ে আসব কাল। আমার কম্পিউটারে অনেক টিভিসিরিজ আছে। সেসব দেখলে স্টার জলসার এসব পানসে মনে হবে!"
আমি বললেন, "আচ্ছা আনিও কাল। দেখব কেমন তোমার রুচি!"
আমি কিছু না বলে রিমোট দিয়ে শুধু চ্যানেলটা পরিবর্তন করে দিলাম।
হঠাত রুদ্রা বললেন, "এই ওর আসার সময় হয়ে গেছে। যাও তুমি এখন!"
আমি অবাক হয়ে গেলাম। বর আসলে সমস্যা কী? আমাকে বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ক্ষতি তো নেই কোন! নাকি আমাকে গোপন রাখতে চান বরের থেকে? গোপন প্রেমিকের মত?
আমি অনেক প্রশ্ন মাথায় নিয়েই উঠলাম।
ফেরার সময় বললাম, "প্রতিদিন সময় করে আসব কিন্তু। আপনার চা আমি আর একদিনও মিস করতে চাই না!"
রুদ্রা বললেন, "আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও। আমিই তোমাকে ডাকব চা বানালে!"
আমি নাম্বার দিয়ে ফিরে এলাম।
ভাবি চান না আমি যখন তখন যাই। বিশেষ করে, ওর উকিল স্বামী যখন বাসায় থাকে। তাই যখন থাকবে না ওর স্বামী, তখনই ফোন দেবে। বুঝেছি ব্যাপারটা।
আমি মজা পাওয়া শুরু করে দিয়েছি অলরেডি!