05-07-2022, 10:03 AM
আগের পর্বের কিছু অংশ......
চমক ভাঙল যখন তখন লালি দেখল চারিদিক অন্ধকার। ভয়ে পাগল পারা হয়ে, হীরা কে খুঁজতে গিয়ে দেখল ও হীরার বুকেই আছে। এতো ভয় পেল কেন ও? অন্ধকার কে, নাকি হীরা কে হারানোর ভয়। কেমন যেন গোল লেগে যাচ্ছে লালির। হীরার দিকে চেয়ে দেখল, ছোট্ট মিত্তি হাসি নিয়ে লালি কেই দেখছে। বুকে নাক টা দিয়ে বেশ করে ঘ্রাণ নিয়ে হীরা কে ছাড়ল ও। কারন রাত হয়ে গেছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। জোনাকী জ্বলছে চারিদিকে। কেমন যেন মনে হলো লালির চারিদিক দেখে। ভালো করে চেয়ে দেখল উপরে তাকিয়ে। এটা তো পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ নয়। কোথায় এটা? আবার তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এটা তো জলার মাঠ ই। তবে কি কোন ভাবে পোর্ট কী র মধ্যে দিয়ে অন্য কম্পাঙ্কে চলে এসেছে ওরা? না না নিজের জন্য ভয় নেই লালির। ভয় টা হীরা সাথে আছে। এ বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। আঁকড়ে ধরল ও হীরা কে সজোরে। ও সব পারবে, কিন্তু হীরার কোন ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে না।
পর্ব বারো
পিছন ফিরে একবার দেখে নিল ও। তারপরে হীরা কে বলল,
- চল আমরা ফিরে যাই।
কিন্তু হীরা বেঁকে বসল,
- আরে!! কেন? এই বেশ গল্প করছি দুজনে।
উফ এই এক ছেলে। যখন গল্প করতে বলি তখন করবে না। এখন বিপদ আর এখন ওনার প্রেম একেবারে উথলে উঠছে। লালি হীরার কথায় আর তোয়াক্কা করল না। প্রেমের থেকেও বড় এখন হীরা কে সাবধানে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। এখানে লালি একা। আর একলা বাঘমুড়ো কে সামলাতে পারবে না সেটা লালি নিজেও জানে। হিম হয়ে গেল বুক টা। না না আর দেরী করা ঠিক হবে না। ও কোন কথা বলল না। হীরা কে টানল উঠে আসার জন্য। কিন্তু এক চুল ও নড়ল না হীরা। লালির দিকে হাসি মুখে তাকিয়েই রইল। লালির মাথায় ছিল না, ওর এই এক টানে , গাছের ডাল ও মড়মড় করে ভেঙ্গে পরে পলকেই। আর হীরা কে সামান্য নড়াতেও পারল না সেই টান। লালি প্রায় হাত জোড় করে হীরা কে বলল,
- প্লিস চল। এখানে থাকা ঠিক নয়। তোকে আমি সব কথা বলতে পারব না হীরা। প্লিস দয়া কর, চল এখান থেকে।
হীরা যেন এই বারে নড়ল। উঠে এলো সেখান থেকে। লালির পিছনে পিছনে আসতে লাগল হীরা। কচুবনের ভিতর দিয়ে লালি তড়িৎ গতিতে দৌড়চ্ছে, হীরার হাত টা ধরে। আঁতিপাতি করে খুঁজতে লাগল লালি এবারে পোর্ট কী টা কে। গতবারে এখানে একটা বাঁক ছিল। সেই বাঁক টাই বা কোথায় আজকে। এটা কি অন্য রাস্তা নাকি? হীরার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করল লালি,
- তুই কোন রাস্তা দিয়ে এনেছিলি এখানে?
- কেন? জলার মাঠে যাবার সব থেকে শর্টকাট রাস্তা টা আমি নিয়েছিলাম।
হীরা অবাক হয়ে বলল কথাটা। লালি অস্থির হয়ে উঠল এবারে। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
- মানে মেইন রাস্তা ধরে আমরা আসিনি জলার মাঠে?
- না আসিনি তো।
লালি মাথায় হাত দিয়ে প্রায় বসে পড়ল। হীরা তুলে ধরল লালি কে। বলল,
- এই তো বেশ ভালো। দুজনে বেশ একসাথে আছি। কি ক্ষতি? কি শান্তি এখানে। কি সুন্দর পরিবেশ। আআহ।
লালি শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। জড়িয়ে ধরল হীরা কে। মনে মনে ভাবল,
- যদি জানতিস কি বিপদ লুকিয়ে আছে, এই শান্তির আড়ালে, তাহলে জীবনে আসতিস না এখানে।
কিন্তু সে সব ভাবলে চলবে না এখন। বিপদ যা হবার হয়ে গেছে, কিম্বা সামনে অপেক্ষা করছে। হে ঠাকুর, রহিম দা বা অভি কেউ একজন চলে আসুক আমাকে গ্রামে দেখতে না পেয়ে। না হলে কত বড় বিপদের সামনে ওরা আছে, ভেবেই লালি আঁতকে উঠলো। এরপরে হীরা বলল,
- চলো না সামনে দেখাই যাক কি আছে।
- তুই বুঝতে পারছিস না হীরা।
- কি বুঝব?
- যদি বাঘমুড়ো থাকে?
- হা হা, তাকে কোথায় এখানে পাবে তুমি? ওসব গল্প কথা।
আবার অবাক হয়ে হীরা কে দেখল লালি। কি বলে ছেলেটা? থাক ও না জেনেই। ভয় পাবে। আর ওর সামনে এই সব কথা খোলসা করে কাজ নেই। অন্ধকারেই এগিয়ে গেল দুজনে। আকাশে মেঘ আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই মেঘের ফাঁক দিয়ে কাস্তের থেকে একটু বড় অষ্টমীর চাঁদ ও দেখা যাচ্ছে। তাতেই পথ খুঁজতে হচ্ছে লালি কে। যদিও ওর অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু হীরার অসুবিধা হচ্ছে হয়তো। হীরার হাত টা ভালো করে ধরে লালি সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাবার পরে লালির মনে হলো একটা গ্রামের মধ্যে এসে পরেছে ও। কিন্তু এই গ্রাম টা ওদের গ্রাম নয়। এই গ্রাম টা কেমন একটা পোড়ো বাড়ির মতন নির্জন নিঃসঙ্গ। ভালোরকম বিপদে পরেছে লালি সেটা বুঝতেই পারল। ছোট ছোট মাটির বাড়ি। কিন্তু অন্ধকার। লোকজন নেই সেটা পরিষ্কার লালির কাছে। বেশ খানিক টা যাবার পরে রাস্তা টা আরো তিন ভাগ হয়ে গেল। ওদের গ্রামের মতই। ও বুঝে গেলো কোন অন্য সময়ে চলে এসেছে ওরা। গ্রাম টা এক ই।
দূরে একটা হালকা আলোর আভাষ দেখা দিতেই দুজনে সেই দিকে এগিয়ে গেল। লালি সাবধানে এগোলেও, হীরা বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল সেদিকে। লালি একটু পিছনে রইল। বিপদে পরলে যাতে ও রূপ ধারণ করতে পারে। এই শাড়ী পরে আর মেয়ে হয়ে তো লড়তে পারবে না। এগিয়ে যেতেই দেখল, একটা রোয়াকে বেশ কিছু পুরুষ আর নারী বসে। হীরা এগিয়ে গেল একেবারে সামনে। যারা বসেছিল, ভুত দেখার মতন চমকে উঠলো একেবারে। হীরা এক মুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে গেল ওদের দিকেই। লালি ও দেখল এবারে ওদের। একটা বড় মশাল জ্বলছে বাড়ির সামনের ভাঙ্গা গেট এ। রেড়ির তেলে, পুরোন কাপড় বা মোটা সুতুলি বা পাটের দড়ি দিয়ে বানানো মশাল। আলো খুব কম না। ওরা গল্প করছিল। কিন্তু হীরা কে দেখেই থেমে গেল একেবারে। আর পিছনে লালির নূপুরের আওয়াজে তাকিয়ে লালিকেও দেখল। দেখেই কেমন যেন ব্যোমকে গেল সবাই মিলে। লালিও অবাক হলো। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ ছিল দাঁড়িয়ে। আর পাশে একটি হীরার বয়সের ই ছেলে। আর এক মধ্যবয়স্কা নারীর সাথে বাচ্চা দশ এগারো বছরের মেয়ে। অবাক হবার কারন হল, পুরুষ মানুষ দুজনেই হাঁটুর উপরে ছোট ধুতি কাছা দিয়ে পরা। আর খালি গা। আর মেয়েরা শাড়ি পরিহিতা। গায়ে গয়না ও আছে। মাথায় দুজনের ই মোটা করে সিঁদুর পরা। কিন্তু ওরা কেউ ই গায়ে জামা পরে নি। লালির খেয়াল পড়ল মাঝে মাঝে বড় ঠাম্মু এমন উদোল গায়ে, শুধু শাড়ি পরে ঠাকুর পুজো করেন। ওদের দেখলেই মনে হয় ওরা স্বামী স্ত্রী আর ছেলে আর তার বউ। এতো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েটির? কোন গ্রামে এলো ওরা? দেখে তো মনে হচ্ছে দুশো বছর আগের কোন যুগ। এরা দুজনাই জানে, সেই আমলে বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল।
লালি প্রায় চমকে উঠল। মনে হলো ওরা কি অনেক আগের কোন সময়ে চলে এসেছে? উত্তেজনায় লালির কথা বন্ধ হয়ে গেল। ততক্ষণে হীরা অনেক টা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
- কাকু এটা কোন জায়গা বলতে পারেন?
ওরা মনে হয় ভয় পেয়েছিল। কিন্তু হীরা এতো সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করল, হয়ত ওদের ভয় টাই কেটে গেল। বা হীরা কে দেখলে সবার ই তো ভালো লাগে। তাই ওদের ভয় টা কেটে গেল হয়ত। কিন্তু হীরার পোশাক বা শাড়ি পরা লালি কে ওরা হাঁ করেই দেখছিল। আমতা আমতা করে জবাব দিল ওদের মধ্যেই ছোট ছেলে টা।
- এটা তো বাঘমুড়ো গ্রাম।
চমকে উঠল লালি। হীরার দিকে তাকিয়ে দেখল, হীরা ও লালি কে দেখছে। হীরা তারপরে একেবারে ভাঙ্গা গেটের সামনে চলে গেল। জিজ্ঞাসা করল,
- এটা বাঘমুড়ো গ্রাম? তাহলে গ্রামের লোকজন কোথায়?
সবাই চুপ রইল, কিন্তু মহিলা টি জবাব দিলেন। গলায় বেশ ভয় আর কান্নার আভাষ।
- গ্রামে আর কেউ আছে বাবা? তার অত্যাচারে কিছুই আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছু মানুষ রয়ে গেছি। বাস্তু ভিটে ছেড়ে যেতে পারিনি।
- কার অত্যাচার? বাঘমুড়ো??
লালির কথায় এবারে লোক টা ভারী অবাক হয়ে এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে উঠল,
- আরে! তোমরা জান না? তোমরা কি জমিদার বাড়িতে এসেছ? এখানে থেক না। এ জায়গা ভাল না। আমাদের জন্য কেউ আসে না। আমাদের জীবনের কোন দাম নেই।
লালি বলল,
- এরকম আবার হয় নাকি? বাঘমুড়ো তো ঢুকতে পারবে না গ্রামে।
পুরুষ টির কন্ঠে জীবনের উপরে আস্থা হারানোর আওয়াজ। লালির কথার উত্তরে মহিলা ভারী অবাক হয়ে তাকাল। বলল,
- তুমি জান না? বাঘমুড়ো নয় গো। সে এক পিশাচ এসেছে আমাদের গ্রামে। তাকে দেখা যায় না। তাকে চেনা যায় না। সে আসলেই মনে হয় , দুর্গন্ধে ভরে গেছে চারিদিক। উফ আর কি বীভৎস সেই রূপ। তোমরা বাছা পালাও এখান থেকে। থেক না। রাতে সে কি রূপে ঘুরে বেড়াবে কেউ জানে না। সব শেষ করে দিল সে। সব।
মহিলা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল। লালি কি বলবে খুঁজে পেল না। পিশাচ এসেছে? মানে এ কি সেই পিশাচ যে এখন, বাঘমুড়ো তে ঘুরে বেড়াচ্ছে? লালি বুঝতে তো পেরেছে, যে সময়ে ওরা এসেছে, সেই সময় টা বেশ পিছনের সময়। কিন্তু কনফার্ম করা দরকার। ও জিজ্ঞাসা করল,
- কাকি, এটা কোন সাল? মানে বাংলার কোন সাল?
ভারী অবাক হলো ওদের চার জনেই। এই রকম কথাবার্তার মাঝে এই প্রশ্ন কেউ ই আশা করে নি। হতে পারে ওরা ভাবছে এ আবার কেমন মেয়ে যে জানে না বাংলার সাল কত এখন? পোশাক আশাকে তো লালি কে বেশ সম্ভ্রান্ত আর শিক্ষিত ই মনে হয়েছে ওদের। তাও ছোট ছেলেটি উত্তর দিল,
- আজকে ২২ এ ভাদ্র, ১১২০ বঙ্গাব্দ। কৃষ্ণপক্ষ, ভাদ্রপদ, জন্মাষ্টমী।
দিনাঙ্ক শুনেই হীরা মুচকী হাসল। আর লালির চোয়াল ঝুলে গেল। বাংলা ক্যালেন্ডার এর হিসাব রাখে না আর ও। কিন্তু এটা জানে এখন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ চলছে। আর আজকে জন্মাষ্টমী ও বটে। ভাদ্র মাসের কত তারিখ ও জানে না। তার মানে হিসাব করলে ওরা তিনশ আট বছর পিছনে চলে এসেছে? কি করে হয়? লালির বাক রুদ্ধ হয়ে গেল বললেই চলে। চুপ করে গেল ও। অমিত ক্ষমতার অধিকারিণী ও নিজে সেটা জানলেও, এমন গোলমেলে ব্যাপারে সবার আগে, মাথা খানা জবাব দেয় লালির সেটা লালি নিজেও জানে। কাজেই মাথায় গোল বেঁধে যাবার পরে ও চুপ করে রইল।
এদিকে হীরা নিজের স্বভাবেই পুটুর পুটুর করে চলেছে ওদের সাথে। লালি শুনতে পাচ্ছে ওরা বলছে হীরা কে
- সে কি এক রূপে আসে বাবা রা? কখন নিশির ডাকে ডেকে নিয়ে যায়। কখনো ছোট ছেলে সেজে ভুলিয়ে নিয়ে যায় জলার মাঠে।কখনো বা সুন্দরী মেয়ে সেজে ছেলে ছোকরা কে ভুলিয়ে নিয়ে যায় বাইরে। আর খোঁজ পাওয়া যায় না গো তাদের। এক এক করে অর্ধেক গ্রাম শূন্য হয়ে গেছে। কিছু যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে সব সময়ে। কিন্তু পাচ্ছে না সে। কি যে খুঁজছে, বললেই তো গোল মিটে যায় বল? আমরা দিয়ে দি।
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরল পুরুষ টি ও। কিন্তু কথা বলা থামাল না। বলেই যেতে লাগল,
- কেউ নেই গো আমাদের বাঁচাতে। কেউ নেই। এই ভাবে চললে আমাদের মারা পরতে হবে, না হলে এই গ্রাম ছেড়ে যে কয় জন বেঁচে আছি, সবাই কেই বাবার ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র।
একটা সময় এলো, যখন ওরা ঘরে ঢুকে পরল। আর বাইরে দাঁড়িয়ে দুজন। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। ঝি ঝি ডাকছে অনবরত। বর্ষার শেষ, বাতাসে টইটম্বুর পুকুরের কুল ছাপানো জলের পাড় ভিজিয়ে দেওয়া সোঁদা গন্ধ। একটা ভ্যাপসা ভাব চারিদিকে। চারদিকে আতঙ্কের ছায়া। আর আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটা। এই তো মাঝে মাঝে ফাঁকা ছিল আকাশ। এখন একেবারে যেন তেড়ে এসেছে সব মেঘের দল। জন্মাষ্টমী আজকে। সব না ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই মহামেঘের দল। লালি আর পারল না থাকতে হীরার থেকে দূরে।এক ছুটে কাছে এসে হাত টা ধরে রইল। নিজে বলশালিনী হওয়া সত্ত্বেও হীরা কেই আঁকার করে ধরতে ইচ্ছে হলো লালির। জানে প্রয়োজনে হীরা কেই রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই কিছুক্ষণ ওর হাতে হাত দিয়ে থেকে মনে বল টা বাড়িয়ে নেওয়া আরকি। হীরার মধ্যে কোন ভয়ের লেশ মাত্র নেই। ও লালি কে বলল,
- দেখ, কি সুন্দর অন্ধকার। আমার তো বেশ লাগছে। শুধু বৃষ্টি নেমে ব্যাপার টা গুবলেট না করলেই হলো।
- কি? আমার ভয় করছে হীরা। আর তোর এখন বেশ লাগছে? তুই বুঝতে পারছিস? এখানে কিছু পাগল আছে। বলছে এটা নাকি ১১২০ বঙ্গাব্দ!! মানে তিনশ বছর আগের কোন সময়!!!!
- হাহাহা। ঠিক বলেছ। পাগল সব। কিন্তু জায়গা টা বেশ তাই না? কি করছ? ভালো করে হাত টা ধর না!
লালি রাগ ধরছে আবার হীরা কে পাশে পেয়ে গলেও যাচ্ছে। তবে লালি ভেবে নিয়েছে, যা হবে হোক, এই ছোঁড়ার এমন মুড আবার কবে হবে কে জানে? তার থেকে এখনি বেঁচে নি জীবন টা। এর পরে বাঘমুড়ো চাইলে মুড়ো ছিঁড়ে নিক। ও হীরা কে লজ্জা পেয়েই বলল,
- বাবাহ, খুব রোম্যান্টিক দেখছি আজকে তুই?
- হু হু বাবা! চল ওই দিক টায় যাই।
- কিন্তু ওই দিকে তো জলার মাঠ!
- তাতে কি? ফিরতেও তো ওই দিকেই হবে আমাদের। আমার কি মনে হয় জান?
- কি?
- কোন ব্যাপার তো আছেই। দেখ আমি ওদের পোশাক আশাক যা দেখলাম তাতে ওনারা তিনশ বছর আগের ই মানুষ। খেয়াল করে দেখ, কোন বাড়িতে লন্ঠন ও নেই। মশালের আলোতে ওরা রাত কাটাচ্ছে। আর তুমি হয়ত খেয়াল করনি, আমি ধুনোর গন্ধ পেয়েছি মশাল থেকে।
- তাতে কি?
- হিসাব বলছে, ১১২০ বঙ্গাব্দ মানে সবে আকবরের দেহাবসান হয়েছে। সেলিম রাজত্ব পেয়েছে দিল্লীর। ওই সময়ে বাংলায় এই রকম রেড়ির তেলের মশালে অনেক ধুনো চাপিয়ে আলো দেওয়া হত। দাউ দাউ করে ধুনো জ্বলত মশাল হয়ে। কথাটা ওরা কিছু ভুল বলে নি।
- তুই কি ভাবে জানলি এতো কিছু?
- কি ভাবে আবার? ইতিহাস কি বাইনারী নাকি? যে হ্যাঁ বা না তে উত্তর পাব। ইতিহাসের প্রামান্য বই পত্র পড়লেই তুমি নিজের জায়গা থেকেই দেখতে পাবে পুরো টা। বাংলায় তখন আকবরের ভাইপো রাজত্ব করছিল।
- সে তো বুঝলাম! কিন্তু তোর মনে প্রশ্ন জাগল না, যে আমরা এখানে কি ভাবে এলাম?
- উম্মম জাগে নি তা নয়। জেগেছে। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন জেগেছে, কি কারনে এলাম? আমাদের গ্রামে বহু রাস্তার একটা দিয়ে আমরা হাঁটছিলাম। অনেক মানুষ অনেক রাস্তা দিয়ে এক ই সময়ে যাতায়াত করছে। সেই অসংখ্য মানুষ আর অনেক রাস্তার মধ্যে পারমুটেশন কম্বিনেশন এ যে সকল অসংখ্য সম্ভাবনার উৎপন্ন হয়, সেই ছোট্ট প্রোবাবিলিটি থেকে আমরাই পৌছুলাম এখানে! কেন? কি দেখতে এলাম এখানে? এলাম না কি আমাদের এখানে নিয়ে আসা হলো? আমাদের নিয়ে আসা হলো, নাকি আমাকে, বা তোমাকে নিয়ে আসা হলো?
- দাঁড়া দাঁড়া! এতো প্রশ্ন করলে আমার মাথা গুলিয়ে যায়।
- হুম জানি, সেই ছোট থেকেই তোমার মাথা গোলানো।
- এক থাপ্পড় খাবি!!
সঙ্গে সঙ্গে হীরা গাল লালির দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল,
- বেশ খাওয়াও থাপ্পড়।
লালি লজ্জা পেয়ে গেল হীরার কান্ডে। ইশ আজ বাদে কাল ওকে বিয়ে করবে বলে স্বপ্ন দেখছে লালি, আর গালে থাপ্পড় কি সত্যি করে মারবে বলেছে নাকি ও? ভয়ানক লজ্জা পেয়ে একেবারে কুঁকড়ে গেল লালি। কোন রকমে বলতে পারল,
- আহা, আমি কি তাই বলেছি নাকি?
লালির কাছে হীরার গাল। হীরার গা থেকে অদ্ভুত একটা সুগন্ধ। লালি মোহিত হয়ে যাচ্ছে একেবারে। অপেক্ষা করল না লালি। মুখ টা বাড়িয়ে হীরার গালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে নিল। হীরা অবাক হয়ে গেল। বাচ্চা ছেলের মতন গালে লেগে থাকে লালির চুমু টা মুছতে মুছতে বলল,
- এটা কি হলো?
- থাপ্পড় দেওয়া হলো।
- ওয়াও, আচ্ছা কি কি করলে তুমি থাপ্পড় দাও? আমাকে দাও নাকি অনেক কে দাও এমন থাপ্পড়।
- এই রে! এই ছেলেটা এবারে বাড়াবাড়ি করছে। হ্যাঁ রে তুই তো এমন দুষ্টু ছিলি না।
- বা রে , নিজেই তো দিনের মাথায় উঠতে বসতে আমাকে দুষ্টু বল।
- উফ বাবা সে তো দুষ্টুমি। আর এখন এটা …
- কি এটা…
ততক্ষণে দুজনেই চুপ করে গেল। জলার মাঠে ওরা উঠে পরেছিল। কিন্তু দেখল মাঠের ঠিক মাঝেই অন্ধকার কেউ একজন দাঁড়িয়ে। অন্ধকারে বুঝতে তো পারছে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন ওখানে দাঁড়িয়ে। আর সে ছোট খাটো কেউ নয়। লালির ক্ষমতা ওকে জানান দিচ্ছে সামনে বিপদ। কি করবে লালি এখন? হীরা কে যে বাঁচাতেই হবে ওকে। ওর মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিতেই হবে। আজকে যে ওর জন্ম দিন! হীরা কিন্তু বেশ নির্বিকার। লালির হাত টা ধরে সামনেই এগিয়ে যেতে শুরু করল। লালি ওকে টানছে পিছনের দিকে। কিন্তু হীরা যেন যেই টান অবলীলায় উপেক্ষা করে লালির হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আগন্তুকের দিকে।
- হীরা শোন আমার ভালো লাগছে না। আর এগোস না। তোকে আমি বলিনি তুই ভয় পাবি বলে। বাঘমুড়ো কিন্তু সত্যি আছে। কোন ঘটনার মিথ্যা নয় বাঘমুড়ো নিয়ে। আমার কথা শোন তুই।
- আরে তুমি চল তো। থাকলেও সামনের জন বাঘমুড়ো না। দেখছ না মাথা টা ছোট। বাঘের মাথা অতো ছোট হয় নাকি?
- অ্যাঁ?
- হ্যাঁ, দেখ ভালো করে।
লালি তাকিয়ে দেখল ভালো করে। সত্যি কথাই, মাথাটা মানুষের। ভয় টা কিছু টা হলেও কমল। কিন্তু লালি ভাবছিল, যদি সে হয়, যে বাঘমুড়োর পিছনে আছে? ওরা যতই এগোতে লাগল, ততই বুঝতে পারল কোন একজন মানুষ দাঁড়িয়ে। পরনে সাদা কাপড়। খালি গা। মাথায় টিকি। বোঝাই যাচ্ছে ', উনি। বা কোন পন্ডিত হবেন। ততক্ষণে দুজনাই একে অপরের হাত ধরে পৌঁছে গেছে ওই ',ের সামনে। ভালো করে দেখা না গেলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, বেশ সুদর্শন উনি। ফরসা। মাথা ন্যাড়া। লম্বা টিকি একটা গিঁট দিয়ে কাঁধের উপরে ঝোলানো। হীরা আর লালি যত খানি অবাক হয়েছে ততোধিক অবাক হয়েছে ওই ', ও এদের দেখে। ভয় পেয়েছে প্রত্যেকেই। কিন্তু হীরা আগের মতই অচঞ্চল। জিজ্ঞাসা করল,
- আপনি কে? ও হ্যাঁ আমি হীরা আর এ লালি।
', বেশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
- আমি কেদার ভটচাজ। এই গ্রাম এবং আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামের পুরোহিত আর এখান কার টোলের শিক্ষক ও বটে।
টোলের শিক্ষক? লালি অবাক হয়ে তাকালো ',ের দিকে। মানে হীরা ঠিক ই বলেছে। ওরা পিছিয়ে এসেছে বেশ কয়েকশ বছর আগে ওদের ই গ্রামে।
- ও! প্রণাম নেবেন স্যার।
- স্যার?
- ও!! না, মানে মহাশয়!!
- আচ্ছা নিলাম! তা তোমরা এখানে? কারা তোমরা? এই খানে একলা এই ভাবে মহিলা নিয়ে ঘুরতে এসেছ? এ তো অসভ্যতা!! তার থেকেও বড় কথা, এখন এখানে মৃত্যু ভয় আছে। তোমরা সভ্য নও বুঝেছি, কিন্তু প্রাণের ভয় ও নেই?
লালির রাগ হল কথা টা শুনে। ভাবল, তুমি কোথাকার হরিদাস পাল যে আমাদের অসভ্য বলছ? কত কষ্ট করে মহারাজ কে নিয়ে একটু একলা সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া গেছে। আর এটা অসভ্যতা? কিন্তু দেখল, হীরার কোন বিকার নেই। দিব্বি মানিয়ে নিল। বলল,
- ক্ষমা চাইছি। আসলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আপনার কপালে, গলায় আর হাতের কব্জি আর কনুই এর উপরে চন্দনের লেপ দেখে মনে হচ্ছে আপনি বৈষ্ণব। রাধা কৃষ্ণে বিভোর। আজ থেকে তিন হাজার বছর আগের প্রেম কে পুজো করেন। রাধা কৃষ্ণের প্রেম কে অমর করে বাড়িতে সেই প্রেমের পুজো করে সেটার বৈধতা দিয়েছেন। বস্তুত, পুজো করে সবাই কে বলতেও চাইছেন, প্রেম ভালো ব্যাপার। একটা মহান ব্যাপার। তবে আমরা অসভ্যতা করলাম কি করে?
অন্ধকারেই লালি হেসে উঠল, হীরার কথায়। ভাবল, এই ছেলের যুক্তি একেবারে মোক্ষম। পাশে দাঁড়িয়ে হীরার হাত টা কেই জড়িয়ে ধরল লালি আনন্দে কারণ হীরা অদের প্রেম নিয়ে একেবারে নিসন্দেহ। ', ততক্ষণে উত্তর দিয়েছেন হীরার কথায়,
- হুম, মেনে নিলাম যুক্তি। কিন্তু তোমরা এখানে কি করে? দেখে অদ্ভুত লাগছে। পোশাক আশাক এ অঞ্চলের নয় বুঝতে পারছি। এখানে এলে কি করে? যদিও অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আশে পাশে। আর এ অঞ্চল ভাল না।
- কেন?
- এখানে বাঘমুড়ো থাকে। বড় সাঙ্ঘাতিক সে। শিকার মরনেচ্ছায় না কাতরালে তাকে হত্যা করে না বাঘমুড়ো। কিন্তু…
- কিন্তু কি স্যার?
এবারে স্যার কথা টা শুনে কেদার ঘাবড়ালো না। বুঝে গেছিল কোন অন্য ভাষা হবে হয়ত, যার মানে মহাশয়। হীরার দিকে একবার চেয়ে কেদার বলল,
- গত দিন কুড়ি এখানে, এক পিশাচের আবির্ভাব হয়েছে। সে একটা আশ্চর্য্য জিনিস চায়।
লালির মাথায় খেলে গেল নগেন এর অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন। গ্রামে একটা জিনিস আছে। যেটা রহস্য। ও হীরার পিছন থেকে বলে উঠল,
- কি জিনিস স্যার?
লালির কথায় খানিকক্ষণ চুপ করে গেল কেদার। তারপরে বলল,
- জানিনা তোমরা কে বা কোথা থেকে এসেছ। এতো কিছু বলছি ই বা কেন তোমাদের জানি না।কিন্তু জানি, আর বললেও ক্ষতি নেই কারণ সেই জিনিস সে অনেক খুঁজেও পায় নি। আর সেই ক্রোধে হত্যা করেছে নির্বিচারে গ্রামের মানুষ দের। বরং সেই জিনিস সে খুঁজে পেলে এই হত্যালীলা কমবে। কিন্তু তোমরা আগে বলবে আমাকে, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?
হীরা কেদারের হাত টা ধরে বলল,
- ও, আমরা এসেছি পাশের গ্রাম চন্ডীপুর থেকে। ওখানে আমাদের পিসির বাড়ি বেড়াতে এসেছি। আমি হীরা আর এ আমার পিসির ননদের মেয়ে লালি। হয়ত পথ হারিয়ে ফেলে এদিকে চলে এসেছি। ও আপনি ভাববেন না। আমরা চলে যাব ঠিক। কিন্তু আপনি বলুন না কি সেই জিনিস?
লালি অবাক হয়ে হীরা কে দেখতে থাকল। কত অবলীলায় মিথ্যা বলে দিল ছেলেটা। মুখে একটা হাসি খেলে গেল লালির, সবার অলক্ষ্যেই। হীরার এই দিক টা আবিষ্কার করে লালি বেশ আনন্দ পেল। কি দুষ্টু কি দুষ্টু। চন্ডীপুর , বাঘমুড়োর পাশের গ্রাম। লালি দেখল ', প্রতিবাদ করলেন না, মানে চন্ডীপুর তখনো ছিল। মনে মনে হীরার তারিফ না করে পারল না লালি। শয়তান টা খুব জায়গায় ঘা দিয়েছে। ', বিশ্বাস না করলেও কনফিউজ তো হয়েই যাবেন। ততক্ষণে ', বলতে শুরু করেছেন। বেশ অবাক উনি।বললেন,
- দেখ আমিও জানিনা ঠিক কি জিনিস সেটা। তবে এর পিছনে একটা গল্প আছে। তাই অনুমান করতে পারি। তোমাদের বলে দিয়ে যাই। জানিনা এর পরে আমি বাঁচব কিনা। হয় বাঘমুড়ো খাবে না হলে সেই পিশাচ আমাকে মারবে। কিন্তু এই কাহিনী পৌঁছতে হবে ভবিষ্যতে। না হলে এই সমস্যার সমাধান নেই।
- ভবিষ্যতে পৌঁছতে হবে মানে? – লালি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
- মানে আমি যা জানি সেটা ভবিষ্যতে না গেলে এই বিপদের থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে না। কারন কথিত আছে এই বাঘমুড়ো অবসানের যোগ, পনেরোশ বঙ্গ শতকে আছে। এই শতকেও ছিল। কিন্তু হয় নি। কিন্তু কিছু ব্যাপার আছে, যে গুলো, ওই সময়ে না পৌঁছলে বাঘমুড়ো আর সেই সম্পর্কিত রহস্য ভেদ করা যাবে না। কারন আমরা আর কেউ বাঁচব বলে মনে হয় না। আমাদের ছেলে পুলে নাতি কেউ ই থাকবে না আর। তাহলে কাহিনী হয়ে পৌঁছবে কি ভাবে সেটা সেই সময়ে?
হীরা আর লালি দুজনেই অবাক হলো এই কথায়। একে অপরের দিকে তাকাল। লালি এগিয়ে এল এবারে সামনে। কারন হীরার থেকে লালি এই বাঘমুড়ো কে নিয়ে বেশী ঘেঁটেছে। সে লড়েওছে বাঘমুড়োর সাথে। জিজ্ঞাসা করল,
- বলুন কি জানেন আপনি বাঘমুড়ো সম্পর্কে।
- না না ব্যাপার শুধু বাঘমুড়ো নয়। অনেক কিছু জড়িয়ে আছে এর পিছনে। তবে তার আগে বলে দি, যদি এখন এখানে বাঘমুড়ো আসে, তবে তোমরা ওই যে পেট কাঁটা অশ্বত্থ গাছ দেখছ, সোজা ঝাঁপ দেবে ওই পেটের ফাঁক দিয়ে। দ্বিধা করবে না। না হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
হীরা চুপ ছিল। এতোক্ষণে কথা বলল,
- আপনি সে নিয়ে ভাববেন না। আপনি বলুন, কি জানেন।
লালি দেখল, ', টি বেশ অন্যমনস্ক। হীরার কথায় যেন চমক ভাঙল ওনার। বলল,
- চল তবে ওই অশ্বত্থ গাছের নীচে বসি। বিপদে তোমরা পালিয়ে যেতে পারবে। আমার উপায় নেই। আর আমি যাব ও না। আমার স্ত্রী কে ওই পিশাচ ভক্ষণ করেছে। আমার সন্তান কোথায় আমি জানি না। কিন্তু তার বিনাশের বীজ আমি পুঁতে দিয়ে যাব তোমাদের মাধ্যমে।
গলা ধরে এলো ',ের। হীরার হাত দুখানা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
- বল তোমরা পারবে না? এই খানে যত পরিবার তাদের প্রিয়জন দের হারিয়েছে, সেই হারানোর ঋণ শোধ করতে? শুধু আজকে না। গত সহস্র বছরের অত্যাচারের বদলা নিতে পারবে না? বল???
', কেঁদেই ফেললেন হাউ হাউ করে। হীরা তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, নিয়ে এসে গাছের বেদী তে বসাল। আর লালি বসল ঠিক পাশেই। বাঘমুড়োর শক্তি আর সামর্থ্য অনেক বেশী লালির থেকে। কিছু আগেও একটা ভয় কাজ করছিল লালির মনে সেই জন্য। কিন্তু এই অত্যাচার আর হত্যালীলা শোনার পরে, লালির আর ভয় করছে না। মনে হচ্ছে আসুক তারা। সে লড়বে আজকে। হীরা কে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে এসে সে লড়বে। মনে মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে লালির। যতক্ষন না বাঘমুড়োর গলার নলী টা ও কামড়ে ছিঁড়ে নিতে পারছে যেন শান্তি নেই লালির।
চমক ভাঙল যখন তখন লালি দেখল চারিদিক অন্ধকার। ভয়ে পাগল পারা হয়ে, হীরা কে খুঁজতে গিয়ে দেখল ও হীরার বুকেই আছে। এতো ভয় পেল কেন ও? অন্ধকার কে, নাকি হীরা কে হারানোর ভয়। কেমন যেন গোল লেগে যাচ্ছে লালির। হীরার দিকে চেয়ে দেখল, ছোট্ট মিত্তি হাসি নিয়ে লালি কেই দেখছে। বুকে নাক টা দিয়ে বেশ করে ঘ্রাণ নিয়ে হীরা কে ছাড়ল ও। কারন রাত হয়ে গেছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। জোনাকী জ্বলছে চারিদিকে। কেমন যেন মনে হলো লালির চারিদিক দেখে। ভালো করে চেয়ে দেখল উপরে তাকিয়ে। এটা তো পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ নয়। কোথায় এটা? আবার তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এটা তো জলার মাঠ ই। তবে কি কোন ভাবে পোর্ট কী র মধ্যে দিয়ে অন্য কম্পাঙ্কে চলে এসেছে ওরা? না না নিজের জন্য ভয় নেই লালির। ভয় টা হীরা সাথে আছে। এ বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। আঁকড়ে ধরল ও হীরা কে সজোরে। ও সব পারবে, কিন্তু হীরার কোন ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে না।
পর্ব বারো
পিছন ফিরে একবার দেখে নিল ও। তারপরে হীরা কে বলল,
- চল আমরা ফিরে যাই।
কিন্তু হীরা বেঁকে বসল,
- আরে!! কেন? এই বেশ গল্প করছি দুজনে।
উফ এই এক ছেলে। যখন গল্প করতে বলি তখন করবে না। এখন বিপদ আর এখন ওনার প্রেম একেবারে উথলে উঠছে। লালি হীরার কথায় আর তোয়াক্কা করল না। প্রেমের থেকেও বড় এখন হীরা কে সাবধানে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। এখানে লালি একা। আর একলা বাঘমুড়ো কে সামলাতে পারবে না সেটা লালি নিজেও জানে। হিম হয়ে গেল বুক টা। না না আর দেরী করা ঠিক হবে না। ও কোন কথা বলল না। হীরা কে টানল উঠে আসার জন্য। কিন্তু এক চুল ও নড়ল না হীরা। লালির দিকে হাসি মুখে তাকিয়েই রইল। লালির মাথায় ছিল না, ওর এই এক টানে , গাছের ডাল ও মড়মড় করে ভেঙ্গে পরে পলকেই। আর হীরা কে সামান্য নড়াতেও পারল না সেই টান। লালি প্রায় হাত জোড় করে হীরা কে বলল,
- প্লিস চল। এখানে থাকা ঠিক নয়। তোকে আমি সব কথা বলতে পারব না হীরা। প্লিস দয়া কর, চল এখান থেকে।
হীরা যেন এই বারে নড়ল। উঠে এলো সেখান থেকে। লালির পিছনে পিছনে আসতে লাগল হীরা। কচুবনের ভিতর দিয়ে লালি তড়িৎ গতিতে দৌড়চ্ছে, হীরার হাত টা ধরে। আঁতিপাতি করে খুঁজতে লাগল লালি এবারে পোর্ট কী টা কে। গতবারে এখানে একটা বাঁক ছিল। সেই বাঁক টাই বা কোথায় আজকে। এটা কি অন্য রাস্তা নাকি? হীরার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করল লালি,
- তুই কোন রাস্তা দিয়ে এনেছিলি এখানে?
- কেন? জলার মাঠে যাবার সব থেকে শর্টকাট রাস্তা টা আমি নিয়েছিলাম।
হীরা অবাক হয়ে বলল কথাটা। লালি অস্থির হয়ে উঠল এবারে। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
- মানে মেইন রাস্তা ধরে আমরা আসিনি জলার মাঠে?
- না আসিনি তো।
লালি মাথায় হাত দিয়ে প্রায় বসে পড়ল। হীরা তুলে ধরল লালি কে। বলল,
- এই তো বেশ ভালো। দুজনে বেশ একসাথে আছি। কি ক্ষতি? কি শান্তি এখানে। কি সুন্দর পরিবেশ। আআহ।
লালি শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। জড়িয়ে ধরল হীরা কে। মনে মনে ভাবল,
- যদি জানতিস কি বিপদ লুকিয়ে আছে, এই শান্তির আড়ালে, তাহলে জীবনে আসতিস না এখানে।
কিন্তু সে সব ভাবলে চলবে না এখন। বিপদ যা হবার হয়ে গেছে, কিম্বা সামনে অপেক্ষা করছে। হে ঠাকুর, রহিম দা বা অভি কেউ একজন চলে আসুক আমাকে গ্রামে দেখতে না পেয়ে। না হলে কত বড় বিপদের সামনে ওরা আছে, ভেবেই লালি আঁতকে উঠলো। এরপরে হীরা বলল,
- চলো না সামনে দেখাই যাক কি আছে।
- তুই বুঝতে পারছিস না হীরা।
- কি বুঝব?
- যদি বাঘমুড়ো থাকে?
- হা হা, তাকে কোথায় এখানে পাবে তুমি? ওসব গল্প কথা।
আবার অবাক হয়ে হীরা কে দেখল লালি। কি বলে ছেলেটা? থাক ও না জেনেই। ভয় পাবে। আর ওর সামনে এই সব কথা খোলসা করে কাজ নেই। অন্ধকারেই এগিয়ে গেল দুজনে। আকাশে মেঘ আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই মেঘের ফাঁক দিয়ে কাস্তের থেকে একটু বড় অষ্টমীর চাঁদ ও দেখা যাচ্ছে। তাতেই পথ খুঁজতে হচ্ছে লালি কে। যদিও ওর অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু হীরার অসুবিধা হচ্ছে হয়তো। হীরার হাত টা ভালো করে ধরে লালি সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাবার পরে লালির মনে হলো একটা গ্রামের মধ্যে এসে পরেছে ও। কিন্তু এই গ্রাম টা ওদের গ্রাম নয়। এই গ্রাম টা কেমন একটা পোড়ো বাড়ির মতন নির্জন নিঃসঙ্গ। ভালোরকম বিপদে পরেছে লালি সেটা বুঝতেই পারল। ছোট ছোট মাটির বাড়ি। কিন্তু অন্ধকার। লোকজন নেই সেটা পরিষ্কার লালির কাছে। বেশ খানিক টা যাবার পরে রাস্তা টা আরো তিন ভাগ হয়ে গেল। ওদের গ্রামের মতই। ও বুঝে গেলো কোন অন্য সময়ে চলে এসেছে ওরা। গ্রাম টা এক ই।
দূরে একটা হালকা আলোর আভাষ দেখা দিতেই দুজনে সেই দিকে এগিয়ে গেল। লালি সাবধানে এগোলেও, হীরা বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল সেদিকে। লালি একটু পিছনে রইল। বিপদে পরলে যাতে ও রূপ ধারণ করতে পারে। এই শাড়ী পরে আর মেয়ে হয়ে তো লড়তে পারবে না। এগিয়ে যেতেই দেখল, একটা রোয়াকে বেশ কিছু পুরুষ আর নারী বসে। হীরা এগিয়ে গেল একেবারে সামনে। যারা বসেছিল, ভুত দেখার মতন চমকে উঠলো একেবারে। হীরা এক মুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে গেল ওদের দিকেই। লালি ও দেখল এবারে ওদের। একটা বড় মশাল জ্বলছে বাড়ির সামনের ভাঙ্গা গেট এ। রেড়ির তেলে, পুরোন কাপড় বা মোটা সুতুলি বা পাটের দড়ি দিয়ে বানানো মশাল। আলো খুব কম না। ওরা গল্প করছিল। কিন্তু হীরা কে দেখেই থেমে গেল একেবারে। আর পিছনে লালির নূপুরের আওয়াজে তাকিয়ে লালিকেও দেখল। দেখেই কেমন যেন ব্যোমকে গেল সবাই মিলে। লালিও অবাক হলো। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ ছিল দাঁড়িয়ে। আর পাশে একটি হীরার বয়সের ই ছেলে। আর এক মধ্যবয়স্কা নারীর সাথে বাচ্চা দশ এগারো বছরের মেয়ে। অবাক হবার কারন হল, পুরুষ মানুষ দুজনেই হাঁটুর উপরে ছোট ধুতি কাছা দিয়ে পরা। আর খালি গা। আর মেয়েরা শাড়ি পরিহিতা। গায়ে গয়না ও আছে। মাথায় দুজনের ই মোটা করে সিঁদুর পরা। কিন্তু ওরা কেউ ই গায়ে জামা পরে নি। লালির খেয়াল পড়ল মাঝে মাঝে বড় ঠাম্মু এমন উদোল গায়ে, শুধু শাড়ি পরে ঠাকুর পুজো করেন। ওদের দেখলেই মনে হয় ওরা স্বামী স্ত্রী আর ছেলে আর তার বউ। এতো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েটির? কোন গ্রামে এলো ওরা? দেখে তো মনে হচ্ছে দুশো বছর আগের কোন যুগ। এরা দুজনাই জানে, সেই আমলে বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল।
লালি প্রায় চমকে উঠল। মনে হলো ওরা কি অনেক আগের কোন সময়ে চলে এসেছে? উত্তেজনায় লালির কথা বন্ধ হয়ে গেল। ততক্ষণে হীরা অনেক টা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
- কাকু এটা কোন জায়গা বলতে পারেন?
ওরা মনে হয় ভয় পেয়েছিল। কিন্তু হীরা এতো সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করল, হয়ত ওদের ভয় টাই কেটে গেল। বা হীরা কে দেখলে সবার ই তো ভালো লাগে। তাই ওদের ভয় টা কেটে গেল হয়ত। কিন্তু হীরার পোশাক বা শাড়ি পরা লালি কে ওরা হাঁ করেই দেখছিল। আমতা আমতা করে জবাব দিল ওদের মধ্যেই ছোট ছেলে টা।
- এটা তো বাঘমুড়ো গ্রাম।
চমকে উঠল লালি। হীরার দিকে তাকিয়ে দেখল, হীরা ও লালি কে দেখছে। হীরা তারপরে একেবারে ভাঙ্গা গেটের সামনে চলে গেল। জিজ্ঞাসা করল,
- এটা বাঘমুড়ো গ্রাম? তাহলে গ্রামের লোকজন কোথায়?
সবাই চুপ রইল, কিন্তু মহিলা টি জবাব দিলেন। গলায় বেশ ভয় আর কান্নার আভাষ।
- গ্রামে আর কেউ আছে বাবা? তার অত্যাচারে কিছুই আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছু মানুষ রয়ে গেছি। বাস্তু ভিটে ছেড়ে যেতে পারিনি।
- কার অত্যাচার? বাঘমুড়ো??
লালির কথায় এবারে লোক টা ভারী অবাক হয়ে এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে উঠল,
- আরে! তোমরা জান না? তোমরা কি জমিদার বাড়িতে এসেছ? এখানে থেক না। এ জায়গা ভাল না। আমাদের জন্য কেউ আসে না। আমাদের জীবনের কোন দাম নেই।
লালি বলল,
- এরকম আবার হয় নাকি? বাঘমুড়ো তো ঢুকতে পারবে না গ্রামে।
পুরুষ টির কন্ঠে জীবনের উপরে আস্থা হারানোর আওয়াজ। লালির কথার উত্তরে মহিলা ভারী অবাক হয়ে তাকাল। বলল,
- তুমি জান না? বাঘমুড়ো নয় গো। সে এক পিশাচ এসেছে আমাদের গ্রামে। তাকে দেখা যায় না। তাকে চেনা যায় না। সে আসলেই মনে হয় , দুর্গন্ধে ভরে গেছে চারিদিক। উফ আর কি বীভৎস সেই রূপ। তোমরা বাছা পালাও এখান থেকে। থেক না। রাতে সে কি রূপে ঘুরে বেড়াবে কেউ জানে না। সব শেষ করে দিল সে। সব।
মহিলা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল। লালি কি বলবে খুঁজে পেল না। পিশাচ এসেছে? মানে এ কি সেই পিশাচ যে এখন, বাঘমুড়ো তে ঘুরে বেড়াচ্ছে? লালি বুঝতে তো পেরেছে, যে সময়ে ওরা এসেছে, সেই সময় টা বেশ পিছনের সময়। কিন্তু কনফার্ম করা দরকার। ও জিজ্ঞাসা করল,
- কাকি, এটা কোন সাল? মানে বাংলার কোন সাল?
ভারী অবাক হলো ওদের চার জনেই। এই রকম কথাবার্তার মাঝে এই প্রশ্ন কেউ ই আশা করে নি। হতে পারে ওরা ভাবছে এ আবার কেমন মেয়ে যে জানে না বাংলার সাল কত এখন? পোশাক আশাকে তো লালি কে বেশ সম্ভ্রান্ত আর শিক্ষিত ই মনে হয়েছে ওদের। তাও ছোট ছেলেটি উত্তর দিল,
- আজকে ২২ এ ভাদ্র, ১১২০ বঙ্গাব্দ। কৃষ্ণপক্ষ, ভাদ্রপদ, জন্মাষ্টমী।
দিনাঙ্ক শুনেই হীরা মুচকী হাসল। আর লালির চোয়াল ঝুলে গেল। বাংলা ক্যালেন্ডার এর হিসাব রাখে না আর ও। কিন্তু এটা জানে এখন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ চলছে। আর আজকে জন্মাষ্টমী ও বটে। ভাদ্র মাসের কত তারিখ ও জানে না। তার মানে হিসাব করলে ওরা তিনশ আট বছর পিছনে চলে এসেছে? কি করে হয়? লালির বাক রুদ্ধ হয়ে গেল বললেই চলে। চুপ করে গেল ও। অমিত ক্ষমতার অধিকারিণী ও নিজে সেটা জানলেও, এমন গোলমেলে ব্যাপারে সবার আগে, মাথা খানা জবাব দেয় লালির সেটা লালি নিজেও জানে। কাজেই মাথায় গোল বেঁধে যাবার পরে ও চুপ করে রইল।
এদিকে হীরা নিজের স্বভাবেই পুটুর পুটুর করে চলেছে ওদের সাথে। লালি শুনতে পাচ্ছে ওরা বলছে হীরা কে
- সে কি এক রূপে আসে বাবা রা? কখন নিশির ডাকে ডেকে নিয়ে যায়। কখনো ছোট ছেলে সেজে ভুলিয়ে নিয়ে যায় জলার মাঠে।কখনো বা সুন্দরী মেয়ে সেজে ছেলে ছোকরা কে ভুলিয়ে নিয়ে যায় বাইরে। আর খোঁজ পাওয়া যায় না গো তাদের। এক এক করে অর্ধেক গ্রাম শূন্য হয়ে গেছে। কিছু যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে সব সময়ে। কিন্তু পাচ্ছে না সে। কি যে খুঁজছে, বললেই তো গোল মিটে যায় বল? আমরা দিয়ে দি।
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরল পুরুষ টি ও। কিন্তু কথা বলা থামাল না। বলেই যেতে লাগল,
- কেউ নেই গো আমাদের বাঁচাতে। কেউ নেই। এই ভাবে চললে আমাদের মারা পরতে হবে, না হলে এই গ্রাম ছেড়ে যে কয় জন বেঁচে আছি, সবাই কেই বাবার ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র।
একটা সময় এলো, যখন ওরা ঘরে ঢুকে পরল। আর বাইরে দাঁড়িয়ে দুজন। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। ঝি ঝি ডাকছে অনবরত। বর্ষার শেষ, বাতাসে টইটম্বুর পুকুরের কুল ছাপানো জলের পাড় ভিজিয়ে দেওয়া সোঁদা গন্ধ। একটা ভ্যাপসা ভাব চারিদিকে। চারদিকে আতঙ্কের ছায়া। আর আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটা। এই তো মাঝে মাঝে ফাঁকা ছিল আকাশ। এখন একেবারে যেন তেড়ে এসেছে সব মেঘের দল। জন্মাষ্টমী আজকে। সব না ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই মহামেঘের দল। লালি আর পারল না থাকতে হীরার থেকে দূরে।এক ছুটে কাছে এসে হাত টা ধরে রইল। নিজে বলশালিনী হওয়া সত্ত্বেও হীরা কেই আঁকার করে ধরতে ইচ্ছে হলো লালির। জানে প্রয়োজনে হীরা কেই রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই কিছুক্ষণ ওর হাতে হাত দিয়ে থেকে মনে বল টা বাড়িয়ে নেওয়া আরকি। হীরার মধ্যে কোন ভয়ের লেশ মাত্র নেই। ও লালি কে বলল,
- দেখ, কি সুন্দর অন্ধকার। আমার তো বেশ লাগছে। শুধু বৃষ্টি নেমে ব্যাপার টা গুবলেট না করলেই হলো।
- কি? আমার ভয় করছে হীরা। আর তোর এখন বেশ লাগছে? তুই বুঝতে পারছিস? এখানে কিছু পাগল আছে। বলছে এটা নাকি ১১২০ বঙ্গাব্দ!! মানে তিনশ বছর আগের কোন সময়!!!!
- হাহাহা। ঠিক বলেছ। পাগল সব। কিন্তু জায়গা টা বেশ তাই না? কি করছ? ভালো করে হাত টা ধর না!
লালি রাগ ধরছে আবার হীরা কে পাশে পেয়ে গলেও যাচ্ছে। তবে লালি ভেবে নিয়েছে, যা হবে হোক, এই ছোঁড়ার এমন মুড আবার কবে হবে কে জানে? তার থেকে এখনি বেঁচে নি জীবন টা। এর পরে বাঘমুড়ো চাইলে মুড়ো ছিঁড়ে নিক। ও হীরা কে লজ্জা পেয়েই বলল,
- বাবাহ, খুব রোম্যান্টিক দেখছি আজকে তুই?
- হু হু বাবা! চল ওই দিক টায় যাই।
- কিন্তু ওই দিকে তো জলার মাঠ!
- তাতে কি? ফিরতেও তো ওই দিকেই হবে আমাদের। আমার কি মনে হয় জান?
- কি?
- কোন ব্যাপার তো আছেই। দেখ আমি ওদের পোশাক আশাক যা দেখলাম তাতে ওনারা তিনশ বছর আগের ই মানুষ। খেয়াল করে দেখ, কোন বাড়িতে লন্ঠন ও নেই। মশালের আলোতে ওরা রাত কাটাচ্ছে। আর তুমি হয়ত খেয়াল করনি, আমি ধুনোর গন্ধ পেয়েছি মশাল থেকে।
- তাতে কি?
- হিসাব বলছে, ১১২০ বঙ্গাব্দ মানে সবে আকবরের দেহাবসান হয়েছে। সেলিম রাজত্ব পেয়েছে দিল্লীর। ওই সময়ে বাংলায় এই রকম রেড়ির তেলের মশালে অনেক ধুনো চাপিয়ে আলো দেওয়া হত। দাউ দাউ করে ধুনো জ্বলত মশাল হয়ে। কথাটা ওরা কিছু ভুল বলে নি।
- তুই কি ভাবে জানলি এতো কিছু?
- কি ভাবে আবার? ইতিহাস কি বাইনারী নাকি? যে হ্যাঁ বা না তে উত্তর পাব। ইতিহাসের প্রামান্য বই পত্র পড়লেই তুমি নিজের জায়গা থেকেই দেখতে পাবে পুরো টা। বাংলায় তখন আকবরের ভাইপো রাজত্ব করছিল।
- সে তো বুঝলাম! কিন্তু তোর মনে প্রশ্ন জাগল না, যে আমরা এখানে কি ভাবে এলাম?
- উম্মম জাগে নি তা নয়। জেগেছে। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন জেগেছে, কি কারনে এলাম? আমাদের গ্রামে বহু রাস্তার একটা দিয়ে আমরা হাঁটছিলাম। অনেক মানুষ অনেক রাস্তা দিয়ে এক ই সময়ে যাতায়াত করছে। সেই অসংখ্য মানুষ আর অনেক রাস্তার মধ্যে পারমুটেশন কম্বিনেশন এ যে সকল অসংখ্য সম্ভাবনার উৎপন্ন হয়, সেই ছোট্ট প্রোবাবিলিটি থেকে আমরাই পৌছুলাম এখানে! কেন? কি দেখতে এলাম এখানে? এলাম না কি আমাদের এখানে নিয়ে আসা হলো? আমাদের নিয়ে আসা হলো, নাকি আমাকে, বা তোমাকে নিয়ে আসা হলো?
- দাঁড়া দাঁড়া! এতো প্রশ্ন করলে আমার মাথা গুলিয়ে যায়।
- হুম জানি, সেই ছোট থেকেই তোমার মাথা গোলানো।
- এক থাপ্পড় খাবি!!
সঙ্গে সঙ্গে হীরা গাল লালির দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল,
- বেশ খাওয়াও থাপ্পড়।
লালি লজ্জা পেয়ে গেল হীরার কান্ডে। ইশ আজ বাদে কাল ওকে বিয়ে করবে বলে স্বপ্ন দেখছে লালি, আর গালে থাপ্পড় কি সত্যি করে মারবে বলেছে নাকি ও? ভয়ানক লজ্জা পেয়ে একেবারে কুঁকড়ে গেল লালি। কোন রকমে বলতে পারল,
- আহা, আমি কি তাই বলেছি নাকি?
লালির কাছে হীরার গাল। হীরার গা থেকে অদ্ভুত একটা সুগন্ধ। লালি মোহিত হয়ে যাচ্ছে একেবারে। অপেক্ষা করল না লালি। মুখ টা বাড়িয়ে হীরার গালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে নিল। হীরা অবাক হয়ে গেল। বাচ্চা ছেলের মতন গালে লেগে থাকে লালির চুমু টা মুছতে মুছতে বলল,
- এটা কি হলো?
- থাপ্পড় দেওয়া হলো।
- ওয়াও, আচ্ছা কি কি করলে তুমি থাপ্পড় দাও? আমাকে দাও নাকি অনেক কে দাও এমন থাপ্পড়।
- এই রে! এই ছেলেটা এবারে বাড়াবাড়ি করছে। হ্যাঁ রে তুই তো এমন দুষ্টু ছিলি না।
- বা রে , নিজেই তো দিনের মাথায় উঠতে বসতে আমাকে দুষ্টু বল।
- উফ বাবা সে তো দুষ্টুমি। আর এখন এটা …
- কি এটা…
ততক্ষণে দুজনেই চুপ করে গেল। জলার মাঠে ওরা উঠে পরেছিল। কিন্তু দেখল মাঠের ঠিক মাঝেই অন্ধকার কেউ একজন দাঁড়িয়ে। অন্ধকারে বুঝতে তো পারছে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন ওখানে দাঁড়িয়ে। আর সে ছোট খাটো কেউ নয়। লালির ক্ষমতা ওকে জানান দিচ্ছে সামনে বিপদ। কি করবে লালি এখন? হীরা কে যে বাঁচাতেই হবে ওকে। ওর মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিতেই হবে। আজকে যে ওর জন্ম দিন! হীরা কিন্তু বেশ নির্বিকার। লালির হাত টা ধরে সামনেই এগিয়ে যেতে শুরু করল। লালি ওকে টানছে পিছনের দিকে। কিন্তু হীরা যেন যেই টান অবলীলায় উপেক্ষা করে লালির হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আগন্তুকের দিকে।
- হীরা শোন আমার ভালো লাগছে না। আর এগোস না। তোকে আমি বলিনি তুই ভয় পাবি বলে। বাঘমুড়ো কিন্তু সত্যি আছে। কোন ঘটনার মিথ্যা নয় বাঘমুড়ো নিয়ে। আমার কথা শোন তুই।
- আরে তুমি চল তো। থাকলেও সামনের জন বাঘমুড়ো না। দেখছ না মাথা টা ছোট। বাঘের মাথা অতো ছোট হয় নাকি?
- অ্যাঁ?
- হ্যাঁ, দেখ ভালো করে।
লালি তাকিয়ে দেখল ভালো করে। সত্যি কথাই, মাথাটা মানুষের। ভয় টা কিছু টা হলেও কমল। কিন্তু লালি ভাবছিল, যদি সে হয়, যে বাঘমুড়োর পিছনে আছে? ওরা যতই এগোতে লাগল, ততই বুঝতে পারল কোন একজন মানুষ দাঁড়িয়ে। পরনে সাদা কাপড়। খালি গা। মাথায় টিকি। বোঝাই যাচ্ছে ', উনি। বা কোন পন্ডিত হবেন। ততক্ষণে দুজনাই একে অপরের হাত ধরে পৌঁছে গেছে ওই ',ের সামনে। ভালো করে দেখা না গেলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, বেশ সুদর্শন উনি। ফরসা। মাথা ন্যাড়া। লম্বা টিকি একটা গিঁট দিয়ে কাঁধের উপরে ঝোলানো। হীরা আর লালি যত খানি অবাক হয়েছে ততোধিক অবাক হয়েছে ওই ', ও এদের দেখে। ভয় পেয়েছে প্রত্যেকেই। কিন্তু হীরা আগের মতই অচঞ্চল। জিজ্ঞাসা করল,
- আপনি কে? ও হ্যাঁ আমি হীরা আর এ লালি।
', বেশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
- আমি কেদার ভটচাজ। এই গ্রাম এবং আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামের পুরোহিত আর এখান কার টোলের শিক্ষক ও বটে।
টোলের শিক্ষক? লালি অবাক হয়ে তাকালো ',ের দিকে। মানে হীরা ঠিক ই বলেছে। ওরা পিছিয়ে এসেছে বেশ কয়েকশ বছর আগে ওদের ই গ্রামে।
- ও! প্রণাম নেবেন স্যার।
- স্যার?
- ও!! না, মানে মহাশয়!!
- আচ্ছা নিলাম! তা তোমরা এখানে? কারা তোমরা? এই খানে একলা এই ভাবে মহিলা নিয়ে ঘুরতে এসেছ? এ তো অসভ্যতা!! তার থেকেও বড় কথা, এখন এখানে মৃত্যু ভয় আছে। তোমরা সভ্য নও বুঝেছি, কিন্তু প্রাণের ভয় ও নেই?
লালির রাগ হল কথা টা শুনে। ভাবল, তুমি কোথাকার হরিদাস পাল যে আমাদের অসভ্য বলছ? কত কষ্ট করে মহারাজ কে নিয়ে একটু একলা সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া গেছে। আর এটা অসভ্যতা? কিন্তু দেখল, হীরার কোন বিকার নেই। দিব্বি মানিয়ে নিল। বলল,
- ক্ষমা চাইছি। আসলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আপনার কপালে, গলায় আর হাতের কব্জি আর কনুই এর উপরে চন্দনের লেপ দেখে মনে হচ্ছে আপনি বৈষ্ণব। রাধা কৃষ্ণে বিভোর। আজ থেকে তিন হাজার বছর আগের প্রেম কে পুজো করেন। রাধা কৃষ্ণের প্রেম কে অমর করে বাড়িতে সেই প্রেমের পুজো করে সেটার বৈধতা দিয়েছেন। বস্তুত, পুজো করে সবাই কে বলতেও চাইছেন, প্রেম ভালো ব্যাপার। একটা মহান ব্যাপার। তবে আমরা অসভ্যতা করলাম কি করে?
অন্ধকারেই লালি হেসে উঠল, হীরার কথায়। ভাবল, এই ছেলের যুক্তি একেবারে মোক্ষম। পাশে দাঁড়িয়ে হীরার হাত টা কেই জড়িয়ে ধরল লালি আনন্দে কারণ হীরা অদের প্রেম নিয়ে একেবারে নিসন্দেহ। ', ততক্ষণে উত্তর দিয়েছেন হীরার কথায়,
- হুম, মেনে নিলাম যুক্তি। কিন্তু তোমরা এখানে কি করে? দেখে অদ্ভুত লাগছে। পোশাক আশাক এ অঞ্চলের নয় বুঝতে পারছি। এখানে এলে কি করে? যদিও অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আশে পাশে। আর এ অঞ্চল ভাল না।
- কেন?
- এখানে বাঘমুড়ো থাকে। বড় সাঙ্ঘাতিক সে। শিকার মরনেচ্ছায় না কাতরালে তাকে হত্যা করে না বাঘমুড়ো। কিন্তু…
- কিন্তু কি স্যার?
এবারে স্যার কথা টা শুনে কেদার ঘাবড়ালো না। বুঝে গেছিল কোন অন্য ভাষা হবে হয়ত, যার মানে মহাশয়। হীরার দিকে একবার চেয়ে কেদার বলল,
- গত দিন কুড়ি এখানে, এক পিশাচের আবির্ভাব হয়েছে। সে একটা আশ্চর্য্য জিনিস চায়।
লালির মাথায় খেলে গেল নগেন এর অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন। গ্রামে একটা জিনিস আছে। যেটা রহস্য। ও হীরার পিছন থেকে বলে উঠল,
- কি জিনিস স্যার?
লালির কথায় খানিকক্ষণ চুপ করে গেল কেদার। তারপরে বলল,
- জানিনা তোমরা কে বা কোথা থেকে এসেছ। এতো কিছু বলছি ই বা কেন তোমাদের জানি না।কিন্তু জানি, আর বললেও ক্ষতি নেই কারণ সেই জিনিস সে অনেক খুঁজেও পায় নি। আর সেই ক্রোধে হত্যা করেছে নির্বিচারে গ্রামের মানুষ দের। বরং সেই জিনিস সে খুঁজে পেলে এই হত্যালীলা কমবে। কিন্তু তোমরা আগে বলবে আমাকে, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?
হীরা কেদারের হাত টা ধরে বলল,
- ও, আমরা এসেছি পাশের গ্রাম চন্ডীপুর থেকে। ওখানে আমাদের পিসির বাড়ি বেড়াতে এসেছি। আমি হীরা আর এ আমার পিসির ননদের মেয়ে লালি। হয়ত পথ হারিয়ে ফেলে এদিকে চলে এসেছি। ও আপনি ভাববেন না। আমরা চলে যাব ঠিক। কিন্তু আপনি বলুন না কি সেই জিনিস?
লালি অবাক হয়ে হীরা কে দেখতে থাকল। কত অবলীলায় মিথ্যা বলে দিল ছেলেটা। মুখে একটা হাসি খেলে গেল লালির, সবার অলক্ষ্যেই। হীরার এই দিক টা আবিষ্কার করে লালি বেশ আনন্দ পেল। কি দুষ্টু কি দুষ্টু। চন্ডীপুর , বাঘমুড়োর পাশের গ্রাম। লালি দেখল ', প্রতিবাদ করলেন না, মানে চন্ডীপুর তখনো ছিল। মনে মনে হীরার তারিফ না করে পারল না লালি। শয়তান টা খুব জায়গায় ঘা দিয়েছে। ', বিশ্বাস না করলেও কনফিউজ তো হয়েই যাবেন। ততক্ষণে ', বলতে শুরু করেছেন। বেশ অবাক উনি।বললেন,
- দেখ আমিও জানিনা ঠিক কি জিনিস সেটা। তবে এর পিছনে একটা গল্প আছে। তাই অনুমান করতে পারি। তোমাদের বলে দিয়ে যাই। জানিনা এর পরে আমি বাঁচব কিনা। হয় বাঘমুড়ো খাবে না হলে সেই পিশাচ আমাকে মারবে। কিন্তু এই কাহিনী পৌঁছতে হবে ভবিষ্যতে। না হলে এই সমস্যার সমাধান নেই।
- ভবিষ্যতে পৌঁছতে হবে মানে? – লালি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
- মানে আমি যা জানি সেটা ভবিষ্যতে না গেলে এই বিপদের থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে না। কারন কথিত আছে এই বাঘমুড়ো অবসানের যোগ, পনেরোশ বঙ্গ শতকে আছে। এই শতকেও ছিল। কিন্তু হয় নি। কিন্তু কিছু ব্যাপার আছে, যে গুলো, ওই সময়ে না পৌঁছলে বাঘমুড়ো আর সেই সম্পর্কিত রহস্য ভেদ করা যাবে না। কারন আমরা আর কেউ বাঁচব বলে মনে হয় না। আমাদের ছেলে পুলে নাতি কেউ ই থাকবে না আর। তাহলে কাহিনী হয়ে পৌঁছবে কি ভাবে সেটা সেই সময়ে?
হীরা আর লালি দুজনেই অবাক হলো এই কথায়। একে অপরের দিকে তাকাল। লালি এগিয়ে এল এবারে সামনে। কারন হীরার থেকে লালি এই বাঘমুড়ো কে নিয়ে বেশী ঘেঁটেছে। সে লড়েওছে বাঘমুড়োর সাথে। জিজ্ঞাসা করল,
- বলুন কি জানেন আপনি বাঘমুড়ো সম্পর্কে।
- না না ব্যাপার শুধু বাঘমুড়ো নয়। অনেক কিছু জড়িয়ে আছে এর পিছনে। তবে তার আগে বলে দি, যদি এখন এখানে বাঘমুড়ো আসে, তবে তোমরা ওই যে পেট কাঁটা অশ্বত্থ গাছ দেখছ, সোজা ঝাঁপ দেবে ওই পেটের ফাঁক দিয়ে। দ্বিধা করবে না। না হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
হীরা চুপ ছিল। এতোক্ষণে কথা বলল,
- আপনি সে নিয়ে ভাববেন না। আপনি বলুন, কি জানেন।
লালি দেখল, ', টি বেশ অন্যমনস্ক। হীরার কথায় যেন চমক ভাঙল ওনার। বলল,
- চল তবে ওই অশ্বত্থ গাছের নীচে বসি। বিপদে তোমরা পালিয়ে যেতে পারবে। আমার উপায় নেই। আর আমি যাব ও না। আমার স্ত্রী কে ওই পিশাচ ভক্ষণ করেছে। আমার সন্তান কোথায় আমি জানি না। কিন্তু তার বিনাশের বীজ আমি পুঁতে দিয়ে যাব তোমাদের মাধ্যমে।
গলা ধরে এলো ',ের। হীরার হাত দুখানা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
- বল তোমরা পারবে না? এই খানে যত পরিবার তাদের প্রিয়জন দের হারিয়েছে, সেই হারানোর ঋণ শোধ করতে? শুধু আজকে না। গত সহস্র বছরের অত্যাচারের বদলা নিতে পারবে না? বল???
', কেঁদেই ফেললেন হাউ হাউ করে। হীরা তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, নিয়ে এসে গাছের বেদী তে বসাল। আর লালি বসল ঠিক পাশেই। বাঘমুড়োর শক্তি আর সামর্থ্য অনেক বেশী লালির থেকে। কিছু আগেও একটা ভয় কাজ করছিল লালির মনে সেই জন্য। কিন্তু এই অত্যাচার আর হত্যালীলা শোনার পরে, লালির আর ভয় করছে না। মনে হচ্ছে আসুক তারা। সে লড়বে আজকে। হীরা কে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে এসে সে লড়বে। মনে মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে লালির। যতক্ষন না বাঘমুড়োর গলার নলী টা ও কামড়ে ছিঁড়ে নিতে পারছে যেন শান্তি নেই লালির।