Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লালি হীরার দিকে। কথাটা তো সত্যি। ওই স্বপ্ন দেখার পরে ঘুম ভাংতেই সবার আগে যে হীরার কথাই মনে পরেছিল লালির। আর মনে হচ্ছিল ওই কষ্ট টা, ও হীরার অনুপস্থিতি তেই পেয়েছে। নিজের বুকের দুরুদুরু ভাব খানা ঢাকতে, এক হাত দিয়ে বুক টা চেপে ধরল লালি। দেখল হীরা দাঁড়িয়ে আছে অশ্বত্থ গাছের নীচে বেদীর উপরে উঠে, গাছের গুঁড়ি তে  হেলান দিয়ে, দুটো পা কে কাঁচির মতন করে। তাকিয়ে আছে দুরের দিকে। লালি বসল বেদির উপরে ঠিক হীরার পায়ের একটু দূরে, হীরার দিকে তাকিয়ে। ভাবল দেখে নি ছোঁড়া কে। অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। হীরার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবার আগে, হালকা শুনতে পাচ্ছিল জলা থেকে ভেসে আসা কাঁসর ঘন্টা ধ্বনির আওয়াজ।


সকাল হয়ে গেছে প্রায়। পূব আকাশ লাল করে সুজ্জি মামা আড়মোড়া ভাঙছেন। গ্রামের মাঝ খান থেকে ভেসে আসছে সংকীর্তনের আওয়াজ – হরে কৃষ্ণ নাম দিল প্রিয় বলরাম, রাখাল রাজা নাম দিল ভক্ত শ্রীদাম।
 
                                                                              পর্ব এগারো
হাঁটি হাঁটি পা পা করে, চাষির দল পুব মাঠে যেতে শুরু করেছে। গোয়ালে গোয়ালে গরু দের হাঁক ডাক শুরু হয়ে গেছে। দুয়ারে জল ছড়া পরতে শুরু করেছে। নগেন জ্যাঠা, বাড়ির ছাদে উঠে সকালের বাতাস নিচ্ছিলেন। পূব আকাশে তাকিয়ে দেখলেন, ছোট্ট সূর্য ধীরে ধীরে নিজের কিরণ পাখা মেলতে শুরু করেছে। দু এক ঘর বাড়ির পরেই বিশাল ফাঁকা জলা।ছাদ থেকে দেখা না গেলেও, বিশাল শূন্যতা দেখে বোঝাই যায় বড্ড ফাঁকা ওই জলা। একটা হিমেল বাতাস যেন শরীর কে একেবারে শীতল করে দিচ্ছে। আর দূর জলা থেকে, মৃদু ভেসে আসছে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ।

রহিম সকালে কাশীর দোকানের পিছনের পুকুরে এসেছিল, লাঙল খানা ধুয়ে, মাঠে যাবে বলে। বলদ দুটো দাঁড়িয়ে ছিল ঘাটের ধারে। ভারী লাঙল টার ফলা খানা বেশ করে ঘষে ঘষে পরিস্কার করতে করতেই শুনতে পেল জলার থেকে, কাঁসর ঘন্টা বাজার শব্দ। কোন দিন ও শোনে নি ও আগে। বিশেষ পাত্তা দিল না রহিম। লাঙল খানা ধুয়ে, নিজের বজ্র মুষ্ঠি তে নিয়ে উঠে এল রাস্তায়। মুখে একটা অনাবিল মুচকী হাসি রহিমের। মুখে হাসি নিয়েই এগিয়ে গেল দক্ষিণ মাঠ বরাবর, বলদ জোড়া আর হাতে লাঙল খানা নিয়ে।

উমা আজকে যায় নি সংকীর্তনে। মহাদেব বেড়িয়েছে সাত সকালে। দরজার বাইরে গোবর ছড়া দিচ্ছিল উমা। সেই কোন ছোট বেলায় মহাদেব ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। কোনদিন ও মাথার উপরে কেউ ছিল না উমার। না শাশুরি, না মাতৃস্থানীয়া কেউ। কিন্তু গৃহস্থের কল্যান অকল্যান, কোন দিন ও উমা কে বুঝিয়ে দিতে হয় নি। আজকে গোবর ছড়া দিতে দিতে,পুব আকাশে চেয়ে দেখল , অন্য দিনের থেকে বেশ কিছু টা আলাদা। আজকে জন্মাষ্টমী। এ ছাড়াও  আজকে উমার জীবনের একটা বিশেষ দিন।আজকের সকাল, ভাল লাগার কারণ খানা হয়ত উমার ভিতরেই লুকিয়ে। আজকের দিনেই হীরা এসেছিল ওর বাড়ি আলো করে ওর কাছে। তাই আজকেই ও হীরার জন্মদিন পালন করে। ওর মনে এই আশা, আজকের দিনে যেন সকলে হীরা কে আশির্ব্বাদ করেন। কোন মা সেটা না চায়। কিন্তু সকাল সকাল এতো বড় আশীর্ব্বাদ পাবে সেটা উমা কল্পনাতেও আনে নি। ছোট্ট সুজ্জি কে প্রণাম করতে করতে, যখন দূর থেকে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ শুনল, গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল উমার। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল উমা।

সকালে সংকীর্তন সেরে, মাঠের ফসল গুলো কে দেখা দিয়ে, মহাদেব যখন বাড়িতে এলো, তখন সূর্য বেশ খানিক টা উপরে উঠে গেছে। উমা ঘরের কাজ সেরে, মহাদেব কে দেখে চা চাপালো। আর মহাদেব এসে কলপারে হাত পা ধুয়ে, গামছা দিয়ে মুছে, মাটির দুয়ারে বসেই হাঁক পাড়ল,

-      হীরা, কই গেলি বাবা, একবার আয়, মুখ খানা দেখি। সকাল থেকে দেখি নি তোকে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে প্রায় ঝাঁ ঝাঁ করে তেড়ে এলো উমা।

-      আহা ঘুমুচ্চে , ঘুমুক না খানিক ছেলে আমার। উঠলেই তো বই পত্র নিয়ে বসবে। আজকে ওর জন্ম দিন। ওকে পড়তে বসে বলে কাজ নেই বাপু।

মহাদেব হাসল উমার কথা শুনে। বলল,
-      কে তোমার ছেলেকে পড়তে বসতে বলছে বাপু? আমি ডাক ছিলাম মুখ খানা দেখব বলে একবার। তুলে দাও না ওকে ঘুম থেকে। সাত টা বাজতে চলল, উঠবে তো নাকি?

ততক্ষনে চায়ের কাপে চা নিয়ে এসে হাজির। মহাদেব কে বলল,

-      আজকে ছেলের জন্যে পরেশ দা দের বাড়ি থেকে ভাল দুধ, মাখন নিয়ে এসো না। ছেলে আমার খেতে বড্ড ভালোবাসে।
-      কোথাও থেকে আনতে যেতে হবে না। ভোগ নিয়ে আসার মতন সবাই এলো বলে যে যার বাড়ির জিনিস।
-      আচ্ছা বাপ বাপু। সবাই ছেলেকে আমার ভালোবেসে দেয়। তুমি বাপ হয়ে দেবে না কিছু?
-      আহা তাই বললাম নাকি? আচ্ছা বেশ যাচ্ছি। আমি বলে এসেছি পরেশ দার বাড়িতে। পেয়ে যাব।
-      হু। খুব করেছ। এখন চা টা খাও। আর নিয়ে এস। আজকে কিন্তু জন্মাষ্টমী। বেশি করে নিয়ে এসো। গোপীনাথের ভোগ দিতে হবে।

উমার কথা শুনে উঠে পড়ল মহাদেব। বলল
-      খুব দিনে তোমার ছেলে জন্মেছে। আর দেখ, সেই ব্যাটা ও যা খেতে ভালবাসে , তোমার ছেলেও তাই। কি যে লীলা কে জানে।

উমা মনে হয় শুনতে পেল না মহাদেবের কথা টা। মহাদেব উঠে বেরোবে চা খেয়ে, ঠিক সময়ে বকবক করতে করতে লালি ঢুকল। মহাদেব দেখল, লালির হাতে থাকে থাকে মাটির সরা সাজানো। হেসে ফেলল দেখে। নিশ্চই হীরার জন্য দুধের জিনিসপত্র এনেছে। এসেই প্রতিদিনের মতই হাঁকডাক শুরু করে দিল। এ বাড়িতে বড় জোর চলে এই মেয়ের। মা মরা মেয়ে। মহাদেব আর উমা বড ভালোবাসে লালি কে। মহাদেব বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে ধীর পায়ে।

-      কাকি ও কাকি। ধর ধর। তোমার গুনধরের, প্রিয় খাবার। বাবাহ বড় ঠাম্মুর সকাল হতে তর সয় না। আমাকে এক্ষণি আসতে হল নিয়ে এসব।

উমা এসে মাটির মালসা গুলো কে নামিয়ে রেখে দিল ঘরে। বলল,

-      তোর ও ভারী তর সয়। হাট বারে নাকি এতো খাইয়েছিস তুই ওকে, এসে দুপুরে খেতেই পারল না। জিজ্ঞাসা করতে বলল তুই নাকি অনেক মাখন খাইয়েছিস?

নিজেই নিজেকে বলল লালি। কিন্তু জোরেই বলল,
-      বাবাহ এসব ও বলে? আমি জানতাম, এই সব পার্থিব কথা ও বলে না।

উমা বুঝল না লালির কথা। মাঝে মাঝে কেন, ওর সাংসারিক কথা ছাড়া লালির কোন কথাই বোঝে না। মাঝে মাঝে কি যে সব শক্ত শক্ত কথা বলে, উমার হাঁ করে চেয়ে থাকে লালির দিকে। কি তেজ ওই মেয়ের। এই টুকু পুচকে মেয়ে একটা, শহরে পড়াতে ও যায়। পরেশ দার বাড়ি একেবারে আলো করে আছে এই মেয়ে। আর যে বাড়িতে বিয়ের পরে যাবে, সেই বাড়িও আলো করে রাখবে। ও লালি কে বলল,
-      বোস, তোর জন্য কালকে গোটা মুসুরী ভিজিয়ে রেখেছিলাম। লাউ দিয়ে করব। খাবি এখন? আর তুই কিন্তু দুপুরে এখানেই খাবি। প্রতি বার হীরার জন্মদিনে এখানেই তো খাস। বলে আসতে হবে নাকি রে তোর বাড়িতে? তিলের বড়া ভাজা করব তোর জন্য, ঝাল ঝাল করে। ছেলে আর তার বাপে তো খাবে না। তোর আর আমার জন্য করব।
-      হুম খাব। না না বলতে যেতে হবে না তোমাকে আর। জান কাকি, আমার মা থাকতে এই সব খুব করত। আর তুমি করে দাও।
-      তা আমি কি মায়ের থেকে কম? খেতে ইচ্ছে হলে চলে আসবি।
-      হুম। তা সে কই?
-      ঘুমুচ্ছে। তুলিনি আজকে। উঠলেই তো পড়তে বসে পড়বে। তার থেকে ঘুমুক। কতদিন বাদে ঘুমোচ্ছে সকাল অব্দি। না হলে তো আমার আগেই উঠে পরে।

ঘুমোচ্ছে? বুঝতেই পারল না লালি ব্যাপার টা। যতদুর জানে,হীরা, উমা কাকির কাছেই শোয়, বাচ্চাদের মতন। মহাদেব কাকা বাইরের ঘরে শোয়। সকালে হীরা লালির কাছে গেছিল, সেটা উমা কাকি জানে না? কি করে হয়? এদিকে উমা থামে না। লালি কে বলল,
-      লালি জানিস আজকে না জলার কাঁসর ঘন্টা র আওয়াজ পেয়েছি আমি। তখন সবে আমি বাইরে বেড়িয়ে দরজায় গোবর ছড়া দিচ্ছিলাম। আহা , দ্যাখ, এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার।

লালি শুনল কথা গুলো উমার, কিন্তু ব্যাপার টা মাথায় আসছে না কিছুতেই। কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ সেও শুনতে পেয়েছে, কিন্তু সেই সময়ে তো হীরা ওর সাথে ছিল। আর উমা কাকিমা ও শুনেছে ঘুম থেকে জেগে উঠে। মানে ঘুম থেকে উঠে হীরা কে, উমা কাকি দেখেছে নিজের কাছে। না হলে বলত কথা টা এখানেই।যে হীরা ছিল না কাছে। ব্যাপার টা বুঝতে পারছে না লালি। হয় কাকি ঘুমের ঘোরে ভুল ভাল দেখেছে না হলে …। আঁতকে উঠল লালি। তবে কি বাঘমুড়ো? নাহ, বাঘমুড়ো কি করে হবে? বাঘমুড়ো তো রাতেই চলাফেরা করে। আর তাছাড়া বাঘমুড়োর গন্ধ লালি চেনে। মাইল খানেক দূর থেকে টের পায় লালি বাঘমুড়োর গন্ধ। আর সকালে হীরার সাথে থাকা অবস্থাতেই লালি, জলার কাঁসর ঘন্টা শুনেছে। এদিকে উমা লালি কে ঠুকরে যাচ্ছে অনবরত।

-      কি রে বল? দেখলি? উফ লালি তোকে বলে বোঝাতে পারব না, সে যে কি অনুভুতি!!

এই বলে উমা চলে গেল ঘরে। অনেক কাজ এখন সামনে। অনেক লুচি করতে হবে। আর মোহন ভোগ করবে ও আজকে। জন্মাষ্টমীর আজকে। দ্বারকাপতির মতন ই হীরা ও খেতে ভালবাসে মোহন ভোগ। কত কথাই বলছিল উমা লালি কে। কিন্তু লালি অন্যমনস্ক। নিজের হাত পা কাঁপছে। এখনো ব্যাপার টা হজম হচ্ছে না ওর।

ঠিক সেই সময়েই হীরা উঠে এল চোখ কচলাতে কচলাতে। লালি কে দেখেও কোন ভ্রূক্ষেপ করল না। না, মানে সকালে অতক্ষণ একসাথে কাটানোর পরে, তাকিয়ে একবার তো হাসবে? কিছুই করল না, কল পারে গিয়ে ব্রাশ করে বসে পড়ল মাটির দুয়ারে।লালি ওকে হাঁ করে দেখছে রাগে ফুটছে। এই রকম বেমক্কা অধিকার নিয়ে রাগ হীরার উপরে লালি ই করে। হীরার বাবা মা ও রাগ করে না। ছেলেকে চোখে হারায় একেবারে। সেই এক ই পোশাক পরে আছে,যেটা পরে ভোর বেলায় লালির সাথে ঘুরেছে ও। আর দেখ এখন যেন দেখেও দেখতে পাচ্ছে না। কি করে হয়? হীরা কে দেখলেই কেমন একটা লজ্জা লাগছে সকালের ব্যাপার টা মনে করে, আবার উমা কাকির কথা মনে করলে ভয় লাগছে। ও হীরার সাথে কথা না বলে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে উমা কে জিজ্ঞাসা করল,

-      আচ্ছা কাকি, তুমি যখন কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ শুনেছিলেন, হীরা শুয়েছিল না উঠে পরেছিল ঘুম থেকে? সত্যি বলতে আমিও শুনেছি।

উমা লুচির আটা মাখছিল। লালির কথা গুলো শুনে বলল,

-      শুনলি তো বললাম , হীরা ঘুমোচ্ছিল।

তারপরেও অনেক কথা বলছিল উমা, লালি যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না। ধীর পায়ে উঠনে এসে বাড়ির দিকে পা চালালো। হীরা যথারীতি বসে ছিল দুয়ারে। একবার দেখবে বলে হীরার দিকে তাকাতেই দেখল, হীরা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিজের দুটো চোখ বুজে ওকে মনে হয় বোঝালো, সকালের টা আমি ই ছিলাম।

লালি প্রায় উড়তে উড়তে বাড়ি এল। মনে মনে যথেচ্ছ অকথা কুকথা বলল হীরা কে। শয়তান, বেল্লিক, ছুঁচো, ভীতু, আর ও কত কি। কিন্তু মন টা ওর খুব ভালো হয়ে গেল। কোন মেয়ের না ভালো লাগে, ভালোবাসার এমন একটা ক্ষণ। কিন্তু হীরা, উমা কাকি কে লুকিয়ে দেখা করে এসেছে মানে হীরা ও সম্পর্ক টা কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। ও আর কিছু ভাবতে পারছে না । না আগের ভাবনা না পরের ভাবনা। মন টা যেন মোহিত হয়ে আছে ওর। ও সোজা বাড়ির দিকে দৌড় দিলো এক প্রকার।

বাড়ী ঢোকার সময়ে, ওদের বাগানের পাশেই যে বড় একটা জাম গাছ ছিল, একটা মোটা ডাল রাস্তার উপরে চলে এসেছিল প্রায়। আনন্দের ধাক্কায়, ডাল ধরে দোল খেতে গিয়েই বিপত্তি টা হলো। মড়মড় করে ডাল খানা ভেঙ্গে পরে গেলো নীচে। লালি খানিক ঘাবড়ে গেলেও, চারদিক একবার দেখে নিয়ে, এক হাতে লম্বা মোটা ডাল টা কে তুলে ঘুরিয়ে লম্বা লম্বি করে রেখে দিল রাস্তায়। মাঝে মাঝে ওর শক্তির কথা ভুলে যায় ও নিজেই।

বাবা নেই বাড়িতে না হলে ছুটে আসত এখুনি। কিন্তু বড় ঠাম্মু চিৎকার করতে শুরু করল।
-      কে র‍্যা? কে?
লালি তখন ভাঙ্গা ডাল টা কে ঠিক করে রাখছিল। জবার দিল,
-      কেউ না ঠাম্মু। আমি লালি।
-      কি ভাঙলি?
-      কিছু না ।
-      নিশ্চই কিছু। হুড়মুড় করে আওয়াজ হলো, পরিষ্কার শুনলাম আমি। দিন রাত তিড়িং বিরিং করে নাচছে মেয়ে। আজ বাদে কাল বিয়ে হবে সে জ্ঞান নেই।

লালি আর কোন কথা বলল না। সোজা নিজের শোবার ঘরে গিয়ে, বিছানায় সটান শুয়ে পড়ল। ঠাম্মু খেঁকায় বটে মাঝে মাঝে। কিন্তু ভালো কথাও বলে। বিয়ের কথা তে একসাথে লজ্জা আর একটা দারুণ ভালোলাগা লালি কে সর্বতো ভাবে জড়িয়ে ফেলেছিল তখন। লালি আর কিছু ভাবলই না। শুধু গুনগুনিয়ে উঠল,

বিশ্ব বলে মনের কথা,
কাজ পড়ে আজ থাকে থাক না।
এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না।

কিন্তু মনের খটকা টা গেল না। এতো আনন্দের মাঝেও এক ই সময়ে দুই জায়গায় উপস্থিতি, এক কড়াই দুধে , এক ফোঁটা গোচনার মতন রয়েই গেল লালির মনে কোন গহিনে, সেটা হয়ত লালিও বুঝতে পারল না।

সেদিনে জন্মাষ্টমী ছিল। আকাশে বাতাসে একটা ফুরফুরে ভাব। প্রত্যেক বছরেই কষ্ঠি পাথরের , রাম কানাই কে বের করা হত, রাস মন্দিরে। কিন্তু এই বছরে করা হলো না। চারদিকে এমন ভয়ের পরিবেশে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, এ বছরে সে ব্যাটা কে বের করে কাজ নেই। কাজেই বিকালে যে একটা উৎসব মতন হতো সেটা বন্ধ রইল। অন্যান্য বছরে হীরা এই দিনে খুব হই হুল্লোর করে। সেটা হয়ত ওর জন্ম দিন বলে। কিন্তু এ বছরে আর সেটার উপায় নেই দেখেই, আজকে লালিও কলেজে যায় নি। ছুটি নিয়েছিল। আর ছুটি নিয়েছিল হীরার সাথে থাকবে বলে। দুপুরে হীরার বাড়িতে খেয়েছে। আর খেয়ে দেয়ে দুপুরে দুজনে মিলে, ঘুরতে বেড়িয়েছে। হীরার জন্মদিন বলে প্রথমবার শাড়ি পরেছে আজকে লালি। আর হীরা নীল পাঞ্জাবী আর হলুদ রঙের পাজামা। সকাল থেকে ওইটাই পরনে আছে ওর। অনেক বলা সত্বেও বদলায় নি।


বর্ষা কাল। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কিন্তু বৃষ্টি যেন কারোর আদেশের অপেক্ষা করছে। বললেই ঝরতে শুরু করবে। কালোর কালো তস্য কালো মেঘ আকাশে। বাড়িতে অনেকবার মানা করা সত্বেও দুজনে মিলে বেড়িয়েছে রাস্তায়। খুব একটা লোকজন নেই রাস্তায়। শুধু নগেন জ্যাঠা মন্ডপে বসে আছে। খবরের একটা কাগজ নিয়ে। চশমার ফাঁক দিয়ে দুটি কে দেখে নিয়েই আবার কাগজে মনো নিবেশ করেছে নগেন। এদিকে দুজনে মিলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পূব দিকে এগোতে লাগল। লালির মনে হলো ইশ কত কাছে আছে ছেলেটা। নেহাত গ্রাম এর ভিতরে তাই না হলে জড়িয়েই ধরত মনে হয় লালি। প্রথম কথা লালি ই বলল,


-      তোকে থ্যাঙ্কস।

-      কেন?

-      সকালে বাড়ীর কাউকে না বলে আমার সাথে দেখা করতে যাবার জন্য। জন্মদিন তোর আর গিফট পেলাম আমি।

-      এটা তোমার গিফট?

-      হুম সব থেকে বড় গিফট এখনো অব্দি আমার জীবনে।

-      ও ।

-      ব্যস ছোট্ট একটা ও মাত্র?

-      হুম। আমি তো ভাবলাম…

-      কি ভাবলি?

-      নাহ থাক।

-      বল না বাবা! এই জন্যেই রাগ ধরে। থাক বলতে হবে না যা। আচ্ছা সত্যি করে বল তো, তুই কি সত্যি আমার ডাকে এসেছিলি সকালে?


হেসে ফেলল হীরা। বলল,


-      মিথ্যা তো আমি বলি না। যা বলি সেটাই সত্যি হয় যে। তাই তো কথা কম বলি।

-      থাক থাক হয়েছে। নিজের অতো বড়াই করতে হবে না। কিন্তু কেন এলি? আমি ডাকলেই তোকে ছুটে আসতে হবে এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয় নি।

-      না মাথার দিব্যি কেন দেবে? আমার ও ভালো লেগেছিল আসতে। অতো ভালোবেসে ডাকলে কি করব আর?


লালি রেগে গেল কথা খানা শুনে,


-      মানে যেই অমন ভালোবেসে ডাকবে তুই তার কাছেই যাবি? আমি বলে আলাদা কিছু না?


রেগে গিয়ে খানিক টা এগিয়ে গেল লালি। লালির ই ভুল। যতই লালি ওকে ভালবাসুক। ও তো একটা ছোট ছেলেই । তাই না? পিছনে তখন হীরা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। বলল,


-      বা রে! অমন করে কি সবাই ডাকতে পারে নাকি?


লালি পিছনে তাকিয়ে বলল,

-      কি করে জানলি? ডাকতেও তো পারে।


হীরা চুপ করে গেল। লালি বুঝতেও পারল না, হীরার সাথে কথা বলতে বলতে, মেইন রাস্তা ছেড়ে একটা গলি রাস্তা নিল হীরা। ছোট সরু গলি। কোন রকমে দুটো মানুষ পাশাপাশি যেতে পারে মাত্র। লালি তো হীরার গা ঘেঁষে চলতে লাগল। খেয়াল ও করল না, সামনে বিশাল কচুবন। তার মধ্যে দিয়েই সরু পায়ে চলার রাস্তা। হীরা চেয়ে রইল লালির দিকে কিছুক্ষণ, তারপরে বলল,


-      হুম ডেকেছ বলেই তো এসেছি আমি। না হলে কি আর আসতাম?

-      ভারী তুই একেবারে।

-      হুম গো। সবাই পারে না ডাকতে।

-      তাহলে? তাই যদি হবে এখনো বললি না তো আমাকে?

-      কি বলব?

-      উম্মম……… আমাকে ভালোবাসিস কিনা?

-      ধ্যাত!!

-      বোঝ!! কোথায় আমি লজ্জা পাব। আমি মেয়ে। তা না উনি লজ্জা পাচ্ছেন। আমি তো এখনি সবার সামনে বলতে পারি।

-      কি?

-      আমি তোকে ভালোবাসি। তোর জন্য পাগল।

-      উম্ম আমিও বাসি। আমি তো সবাই কেই ভালোবাসি।

-      অ্যাঁ?

-      না মানে , মা কে বাবা কে।

-      আর?

-      আর আমার এই গ্রাম কে।

-      আর?

-      আর বড়ো ঠাম্মু কে। কি সুন্দর মাখন বানায়! আহা!


রেগে গেলো লালি আবার। যেটা শুনতে চাইছে সেটাই বদমাশ টা বলছে না। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,


-      আর????????

-      আর আবার কি? কত আর থাকবে?

-      আর আমাকে?   


হীরা হেসে উঠল শব্দ করে। বলল,

-      আরে!!! গুন্ডা নাকি? জোর করে আদায় করবে যেন ভালোবাসা।


কিন্তু খুব খুশী হয়ে কচুবনের ভিতরে দিয়ে এগিয়ে গেল হীরা এক গাল হাসি নিয়ে। লালি মরে যায় ওই হাসি একবার দেখার জন্য। মন টা ভালো হয়ে গেল লালির। মনে হলো, অধিকার টা লালি কে দিয়ে হাসতে হাসতে হীরা এগিয়ে গেল সামনে। লালি পিছন থেকে দেখছিল হীরা কে। ইশ কি সুন্দর। ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে উঠে পড়ল হীরার পিঠে। হীরা কোনরকমে নিজেকে সামলে নিল। আর লালি হীরার পিঠে উঠেই রইল,হীরা কে জড়িয়ে ধরে। হীরার কাঁধে নিজের মুখ টা গুঁজে দিয়ে বলল,


-      হুম করবই তো আদায়। তুই শুধুই আমার। আর আমি তোর। আচ্ছা !!

-      কি??

-      আমাকে ভালোবাসলি কেন?

-      উম্মম।  তুমি খুব সুন্দর তাই।


হীরার পিঠে চড়ে যেতে যেতেই লজ্জা পেল লালি, ওকে সুন্দরী বলার জন্য। কাঁধে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে হীরা কে আবার জিজ্ঞাসা করল,


-      আর যদি কোন দিন দেখলি আমার মুখ টা কুৎসিত হয়ে গেছে, তখন? তখন আমাকে আর ভালোবাসবি না?


হীরা বলল,

-      আমি তো তোমার মুখ সুন্দর এ কথা বলিনি। বলেছি তুমি খুব সুন্দর তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। মুখ ছাড়াও মানুষের আরেক টা জিনিস সুন্দর হয়, সেটা হলো মন।  


লালির মনে হলো পাগল হয়ে যাবে আনন্দে। বেশ কত গুলো চুমু খেয়ে নিল হীরার কাঁধে আর ঘাড়ে। তারপরে বলল,

-      তোকে ছাড়া আমি মনে হয় বাঁচব না রে। আমার ছেড়ে দিবি না তো?


যে ভালবাসে, তাকে ছেড়েই তো দিতে পারে না হীরা। হীরা কোন কথা বলল না। নিঃশব্দে ভরসা দিল লালি কে, লালির জড়িয়ে ধরা হাতে চুমু খেয়ে। লালি নেমে পড়ল হীরার পিছন থেকে। হীরার একটা হাত, নিজের হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। একটা বিশাল গাছের কাছে এসে, যতটা সম্ভব জোরে হীরা কে জড়িয়ে ধরল। কত কালের অপেক্ষার ফল এটা, লালি জানে না। এখন বাঘমুড়ো লালি কে মেরে ফেললেও লালির কিছু যায় আসে না। হীরার বুকে নিজেকে দেখার, লোভ যে ওর কত দিনের কেউ বলতে পারে না। জানিনা কত জন্মের তেষ্টা।


হীরার বুকে মুখ টা গুঁজে হাত দুটো দিয়ে হীরা কে নিজের বাহু বন্ধনে নেবার চেষ্টা করতেই অন্যরকম বুঝল লালি। হীরার শরীর এতোটা বিশাল নয় যে ও ধরতে পারবে না ওকে। কিন্তু মনে হচ্ছে কোন বিশাল গাছের গুঁড়ি কে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু থাক ওর তো ভালই লাগছে। কেমন একটা সুখের ওম হীরার বুকে। কি সুন্দর একটা সুবাস। হারিয়েই গেল লালি হীরার বুকে।
চমক ভাঙল যখন তখন লালি দেখল চারিদিক অন্ধকার। ভয়ে পাগল পারা হয়ে, হীরা কে খুঁজতে গিয়ে দেখল ও হীরার বুকেই আছে। এতো ভয় পেল কেন ও? অন্ধকার কে, নাকি হীরা কে হারানোর ভয়। কেমন যেন গোল লেগে যাচ্ছে লালির। হীরার দিকে চেয়ে দেখল, ছোট্ট মিত্তি হাসি নিয়ে লালি কেই দেখছে। বুকে নাক টা দিয়ে বেশ করে ঘ্রাণ নিয়ে হীরা কে ছাড়ল ও। কারন রাত হয়ে গেছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। জোনাকী জ্বলছে চারিদিকে। কেমন যেন মনে হলো লালির চারিদিক দেখে। ভালো করে চেয়ে দেখল উপরে তাকিয়ে। এটা তো পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ নয়। কোথায় এটা? আবার তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এটা তো জলার মাঠ ই। তবে কি কোন ভাবে পোর্ট কী র মধ্যে দিয়ে অন্য কম্পাঙ্কে চলে এসেছে ওরা?  না না নিজের জন্য ভয় নেই লালির। ভয় টা হীরা সাথে আছে। এ বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। আঁকড়ে ধরল ও হীরা কে সজোরে। ও সব পারবে, কিন্তু হীরার কোন ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে না। 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- নতুন অধ্যায় ২ এবং পর্ব ১০- পেইজ ১৩ - by nandanadasnandana - 03-07-2022, 10:43 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)