Thread Rating:
  • 71 Vote(s) - 3.27 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance উপন্যাসঃ কেবল প্রান্তর জানে তাহা- নির্জন আহমেদ
#83
অধ্যায় ৭ঃ কথা ছিল সুবিনয়
ঢাকা কলেজের সামনের বিশাল জটলায় বাসটা থেমে যায় বলে নির্জন নেমে পড়ে। ও নীলক্ষেতেই নামবে ঠিক করেছিলো। শহরের নতুন মাতবরটা ঠিক করেছে রাত আটটার মধ্যেই খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুতের অপচয় রোধে, শুনেছে নির্জন। কবে থেকে হবে তা কার্যকর, জানে না।
নামলো যখন বাস থেকে, শরীরে যখন লেগে আছে বাসের গুমোট শ্বাস আর পাশে বসে থাকা বৃদ্ধের বিড়ির গন্ধ, তখন ঘড়িতে বাজে দশটা। প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা লেগেছে সময়- পুরোটা রাস্তা ও এসেছে ঘুমিয়ে। এ অসময়ে, যদিও ঠিক এই প্রথম রাতের ঘুমটাকেই বলা হয় বিউটি স্লিপ, ও ঘুমোয়নি কয়েক হাজার বছর। বাসটা যখন ছাড়লো নবিনগর থেকে, জানলা দিয়ে হাওয়া এসে ওর নাকে, মুখে, কপালে, গালে আছড়ে পড়তে লাগলো স্রোতের মতো- চোখ খোলা রাখতে পারেনি আর ও সারাদিন খাটনির পর। ঘুমে অতলে তলিয়ে যাওয়ার আগে ওর মনে আফজাল মোহাম্মদের বলা কথাগুলো ইলিবিলি কাটছিলো শুধু।
বাস থেকে নেমেই সিগারেট ধরায় নির্জন। বেশ হাওয়া দিচ্ছে সন্ধ্যার পর, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ এই মাঝ আষাঢ়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে পূর্বজন্মের শরতের কথা। ধোঁয়া ছেড়ে বড় একটা শ্বাস নেয় নির্জন। এইতো আর কয়েক পা এগুলেই মুক্তির সিংহদ্বার- মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ। তারপর? তারপর ও আর কোন স্বপ্নহীন, ভবিষ্যৎহীন পোশাক শ্রমিক নয়!
ওর শরীর থেকে উবে যাবে ক্লান্তির গন্ধ!
নীলক্ষেতের খাবারের দোকানের ছেলেগুলো খদ্দের ডাকছে। “এই কাচ্চি, মোরগ পোলাও এদিকে... পরোটা, রুটি, মাংস, মামলেট... এদিকে আসেন ভাই... উপরে স্পেশাল ব্যবস্থা আছে... এই কাচ্চি, মোরগ পোলাও, তেহারি...”
আগের মতোই আছে সব। এই অর্ধবৎসরে বদলায়নি কিছুই। গাইডের দোকানগুলোয় সমান ভিড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ শিংগুলোকে এখানে ওখানে দল বেঁধে বই দেখছে। বিশ টাকার বইয়ের স্তূপে ঝুঁকে পছন্দের বই খুঁজছে কয়েকজন।
না, খাবারের দোকানগুলোয় কোন স্মৃতি নেই নির্জনের। ওর স্মৃতিরা সব হেঁটেছে এই গলিগুলো দিয়ে। বই দেখেছে, দেখেছে ম্যাগাজিন- পাতা উল্টাতে উল্টাতে আড় চোখে দেখেছে কোন কিশোরীর মুখের গড়ন, কবিতার লাইন থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি হেনেছে কোন অপরূপার নিলাজ চোখের কাজলে অথবা স্তনের উদ্বেল উচ্ছ্বাসে।  
স্মৃতিময় গলিগুলোর দিকেই আবার পা বাড়ায় ও।
“ভাই, কী লাগবে বলেন... এই আইন বই এদিকে... ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেলের বই এদিকে... বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিসিএস, ব্যাংক ম্যাথ, জব সল্যুশন...”
বরাবরের মতো ওদের কারো ডাকেই সাড়া দেয়না নির্জন।
ও এসে থামে মোস্তফা চাচার দোকানে। না, এটা আর এখন মোস্তফা চাচার দোকান নয়। কোভিডের আগেই মোস্তফা চাচা দোকানটা বিক্রি করে চলে গিয়েছে। কিন্তু এখনো নির্জন দোকানটাকে মোস্তফা চাচার দোকান হিসেবেই চেনে। এই গাইড বই আর জব সল্যুশনের যুগে এখনো কেরোসিনের মৃদু কুপির মতো জ্বলে আছে কয়েকটি সাহিত্যের দোকান। সাহিত্যের দোকানই বটে! এই বাজারে এরা এখনো গাইড বইয়ের বদলে গল্প উপন্যাস বেচে জীবিকা নির্বাহের চিন্তা করছে, এটাও অনেক সাহসের কথা বৈকি!
কী পায়নি এখানে সে? এই পুরাতন দুতিনটি দোকানে ও মিলন-হুমায়ুন-আনিসুলের সস্তা প্রেমের উপন্যাস থেকে শুরু করে পেয়েছে আখতারুজ্জাম ইলিয়াসের খোয়াবনামার প্রথম সংস্করণ। পেয়েছে শামসুর রাহমান, রফিক আজাদের কবিতার রাজপথ থেকে রুদ্রের আকাশের ঠিকানা।
দোকানের সাজানো পুরাতন বইগুলো থেকে রুদ্রের একটা কবিতা সংগ্রহ খুঁজে নেয় নির্জন। পাতার সোঁদা গন্ধে বুক ভরে যায় ওর। পাতাগুলো খুলে খুলে আসছে, বইপোকা করেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। নিউজপ্রিন্টে ছাপানো বইয়ের অক্ষরগুলো ওকে যেন নিয়ে গেল গত শতাব্দীতে। বিগত শতাব্দীর এক তরুণ কিংবা তরুণী কোন এক ভালোবাসার চনমনে দিনে হয়তো মৃত কবির কথা ভেবে কম্পিত চিত্তে হাতে তুলে নিয়েছিলো বইটি। কবিতাগুলো থরথর কাঁপিয়েছিল তাকে। তারপর হয়তো এই কবিতাগুলিই একদিন তার কাছে হয়ে গিয়েছে অর্থহীন। কিংবা কোন ভুলে হয়ে গেছে হাতছাড়া। আজ এতদিন পর, অনেক হাত ঘুরে বইটি যখন উঠেছে নির্জনের করতলে, ততোদিনে এসেছে আরেক শতাব্দী আর খুলে খুলে আসছে পাতাগুলো, বইপোকা করেছে ছিদ্র কয়েকশো।
“খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে...
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির...“
পাতা ওল্টায় নির্জন। আরেকটি কবিতা। এবং আরেকটি তারপর। নামহীন কোন শাখানদীর চোরা স্রোত যেভাবে দোলায় তীরে বাঁধানো ডিঙি সেভাবেই দোলে ও। পুঁইডগা যেন। কবিতার রূপচিত্র ভেসে ভেসে ওঠে চোখে।
“কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বসবে না,
চিত্রল তরুণ হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।“
“এই, নির্জন না?”
চমকে ওঠে নির্জন। খুব চেনা গলার স্বরটি শুনে কেঁপে ওঠে ও। যতটা কাঁপছিল কবিতাগুলো পড়ে, তার চেয়ে বেশি। চোরা স্রোতের জায়গায় এবারে এসে আঘাত করে সুনামি। বইয়ের পাতা থেকে মুখ তোলার আগে ও খুব করে চায়, এই স্বর যার বলে জানে না, সে যেন না হয়।
“নির্জনই তো! কতো দিন পর! তুমি তো একদম নাই হয়ে গেছো!”
আজকের দিনটা এমন হবে কে জানতো? প্রথম বর্ষের জুন মাসের ৭ তারিখ থেকে- তারিখটাও মনে আছে ওর- যাকে এড়িয়ে চলতো, যার দিকে চোখ পড়লেও নামিয়ে নিত, সেই এসে দাঁড়িয়েছে আজ ওর সামনে। আজই কেন? আজ যখন ও প্রায় মাস চারেক পর পা রাখছে ক্যাম্পাসে, কেন ওকে ভাগ্য মনে করিয়ে দিলো সেই অপমানের স্মৃতি?
“এমনটা তো কথা ছিলো না, সুবিনয়!”
নির্জন মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তোলার বৃথা চেষ্টা করে।
“এইতো এলাম! অনেকদিন পর। কেমন চলছে মাস্টার্সের ক্লাস?”
অদ্বৈতা তাকিয়ে সরাসরি ওর মুখের দিকে। ওর ঠোঁটে চিলতে রোদের হাসি, নাকের পাশে ছোট্ট তিল, গালে আগুনের হালকা আঁচ, ফাগুণের কৃষ্ণচূড়ার মতো ঠোঁট।
উত্তরের আগে অবাধ্য চুল মুখ থেকে সরিয়ে নেয় অদ্বৈতা।
“একদিন খুঁজছিলাম তোমাকে। পরে স্বাধীন মোল্লার কাছে শুনলাম, তুমি নামি মাস্টার্স করছো না!”
নির্জন বইটা হাত থেমে নামিয়ে রাখে।
“হ্যাঁ। তোমাদের সাথে আর মাস্টার্স করা হলো না। দেখি পরের বছর!”
পরের বছর? যেমন চলছে, তেমন চললে, জীবনেও আর মাস্টার্স করা হয়ে উঠবে না ওর।
অদ্বৈতা আশেপাশে তাকায়। নির্জন অনুসরণ করে ওর চোখ। কান্তারের বেত কি নাটাফল নয় ওদুটো। নির্জনের মনে হয়, অদ্বৈতার চোখ শান্ত জলসিঁড়ি।
জুনের সাত তারিখ থেকে- হ্যাঁ, সে দিন থেকেই, নির্জন সরাসরি আর তাকাতে পারেনি ওই চোখের দিকে। কিন্তু আড়চোখে দেখেছে ঠিকই। অদ্বৈতা হেসেছে যখন, কুঁচকে গেছে তখন চোখের চামড়া, নির্জন খেয়াল করেছে। ক্লাসে স্যারের বিরক্তিকর লেকচারে মৃদু মুদে এসেছে যখন ওর চোখ, নির্জন চোখ রেখেছে সে চোখে। কিংবা অন্য সব বন্ধুদের সাথে যখন অদ্বৈতা ব্যস্ত চায়ের আড্ডায়, কি লিখছে পোস্টারে কোন বিপ্লবীর জ্বালাময়ী বানী, নির্জন দেখেছে ওকে।
অদ্বৈতার চোখ এখন বইয়ের নামগুলো পড়ছে বোধহয়। নির্জনকে যে ও কী ভেবে ডেকেছে হয়তো নিজেই জানে না। বেশ তো চলে যেতে পারতো পাশ কাঁটিয়ে, অন্যান্য হাজার, অযুত বা কোটি বারের মতো। গেলো না কেন?
“কোন বই খুঁজতে এসেছো?”
“হ্যাঁ।”
“কী বই?”
“শুদ্ধতম কবি। আব্দুল মান্নান সৈয়দের।”
নির্জন আবার রুদ্রের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি হাতে তুলে নিয়ে বলে, “ওটা তুমি পুরাতন পাবে না। এরা তো যা পায় তাই কালেক্ট করে, লেখক ধরে, প্রকাশনী ধরে বই তো পাবে না এদের কাছে!”
অদ্বৈতা হাসে। ও রাজহাঁসের পালকের মতো দাঁতে আলো লাগে- চিকচিক করে।
বলে, “পাবো না জানি। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, খুঁজে যাই। বইটা না পেলেও, তোমাকে তো পেলাম। এটাও একটা আবিষ্কার!”
নির্জন চমকে যায়। এভাবে আজ কথা বলছে কেন অদ্বৈতা? মালটাল খেয়েছে নাকি? যার সাথে এতোদিন কথা নেই, যে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেছে মুখোমুখি পড়ে গেলেও, সে কেন বলবে এমন কথা? মার্ভেলের ম্যাডনেস অফ মাল্টিভার্সের চরিত্র হয়ে গেছে নাকি ও?
“তাই নাকি? আমাকে এভাবে অবশ্য পাওয়ার দরকার ছিলো না। আমি তো দুর্লভ কেউ নই!”
এলোমেলো হাত চালিয়ে একটা বই তুলে নেয় অদ্বৈতা। বইটার মলাটের দিকেও তাকায় না, বইটি নাড়ানাড়া করতে করতে বলে, “ফোন করলেও পারতাম। কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়া খুব দরকার ছিলো!”
নির্জনের সবকিছুকে, নীলক্ষেত, রুদ্রের কবিতা, মেঘের মেয়ে ও অদ্বৈতাকে, পরাবাস্তব মনে হয়। যেন সুখস্বপ্ন, যেন কল্পনা, যেন কোন কাঁচা গদ্য লেখকের রোম্যান্টিক গল্প। কিংবা মার্কেজের জাদুবাস্তবতা।
“হঠাত আমি এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলাম? বিশ্বাসই হচ্ছে না!”
ঠেস দিয়ে কথাটা বলে নির্জন!
এভাবে অদ্বৈতাকে খোঁচা মেরে কথা বলবে, স্বপ্নেও তো কোনদিন ভাবেনি নির্জন!
অন্য দিকে তাকিয়ে এখন অদ্বৈতা। এবারে নির্জন ওর চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে না।
অদ্বৈতা বলে, “আসলে তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!”
আরো অবাক হয় নির্জন। কিন্তু বিস্ময়ের ঠেলায় ও ছিটকে যায় না। গত কয়েক মিনিটের অপার্থিব ঘটনাক্রম ওর কাছে স্বাভাবিক লাগতে শুরু করেছে এখন।
“বলে ফেলো। প্যারা নেয়ার কিছু নাই!”
“আসলে আমি ভাবিনি, তোমার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে। গুছিয়ে বলতে পারবো না। এখন না বলি বরং!”
অদ্বৈতাকে ওর দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে।
ওর চোখে আটকে থাকা চোখ নির্জন সরিয়ে নেয় না। বলে, “বলবে না?”
“বলব!”
“বলছো না যে?”
“আরেকদিন!”
“আমি চলে যাবো পরশু!”
“তাহলে কাল বলি?”
নির্জন এবারে হাসে। বলে, “কাল তো আমি নীলক্ষেতে আসবো না! তোমার সাথে দেখাও হবে না!”
হেসে ফেলে অদ্বৈতাও।
বলে, “আমি কি ছাই প্রতিদিন নীলক্ষেত আসি নাকি?”
নির্জন বলে, “কী বলবে তুমি?”
মাথা কাঁত করে অদ্বৈতা বলে, “কাল বলি?”
“হ্যাঁ। সমস্যা নেই!”
“তুমি তো হলেই আছো, তাই না?”
“হ্যাঁ। এখনো হল ছাড়িনি।“
“আমি তোমার হলের সামনে আসবো? বিকেলের দিকে?”
নির্জন আবারও হতচকিয়ে যায়। অদ্বৈতা আসবে ওর হলের সামনে, ওর সাথে দেখা করার জন্যে? এটাও হওয়ার ছিলো? মনে হয়, কোন এক অমোঘ বল কিংবা অদৃশ্য কোন জাদুকর অদ্বৈতাকে দিয়ে এসব বলিয়ে করিয়ে নিচ্ছে।
নির্জন উচ্চারণ করে বলে, “এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর/ যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর !“
অদ্বৈতা বলে ওঠে, “কী বললে?”
কবিতার লাইনদুটো আবার উচ্চারণ করে নির্জন।
“তোমার লেখা নাকি? খুব সুন্দর তো!”
নির্জন পিছিয়ে যাওয়ার ভান করে বলে, “ও বাবা! এ কবিতা আমার হলে তো জীবনটাই স্বার্থক হয়ে যেত। এটা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা। পরানের গহীন ভিতর সিরিজের নাম কবিতা। পড়ে দেখতে পারো।”
অদ্বৈতা বলে না কিছুই, আশেপাশে অনিশ্চিত তাকায় শুধুই। তারপর পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলে, “কাল তবে আমি তোমার হলের সামনে যাচ্ছি? বিকেলে?”
“নীল শাড়ি পরে এসো?”
“কীহ?”
“আরে না। এমনি ঠাট্টা করলাম!”
অদ্বৈতা কিছু বলে না।
“সমস্যা নেই। এসে আমাকে একটা কল দিলেই আমি হলগেটে চলে যাবো!”
“আচ্ছা। তাহলে থাকো, আমি যাই। কাল দেখা হবে!”
মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে শুরু করে অদ্বৈতা।
“বই আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে না যে? শুদ্ধতম কবি লাগবে না?”, নির্জন দ্রুত বলে।
ফিরে তাকায় অদ্বৈতা। নির্জনের ইচ্ছে করে, “ফ্রিজ” বলে পাথর করে রাখে ওকে। তারপর একজন স্কাল্পচার ডেকে প্রতিমূর্তি গড়িয়ে নেয় ওর। এমন শিল্পিত স্টাইলে অথচ এমন অবহেলায় মুখ ফেরাতে হয়তো শুধু অদ্বৈতাই পারে!
“তুমিই তো বললে, বইটা এখানে পাবো না!”
“জিজ্ঞেস করে দেখো অন্তত। বিখ্যাত বই, থাকতেও তো পারে?”
দোকানদারটা এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলো কিনা কে জানে, সে জিজ্ঞেস করে, “কী বই, আপা। নাম বলেন!”
এবারে পুরো শরীর ফিরিয়ে, নির্জনের দিকে তাকিয়ে অদ্বৈতা বলে, “থাক, আজ লাগবে না। আরেকদিন। ঐ বই না পড়লে তো অশিক্ষিত থেকে যাবো না!”
“সিরিয়াস কিছু?”, নির্জন জিজ্ঞেস করে।
“কী সিরিয়াস?”
“কাল কী বলবে? ব্যাপারটা সিরিয়াস নাকি নাকি লাইট?”
“মাঝামাঝি। তবে জীবনমরণ কোন ব্যাপার না। নিশ্চিন্ত থাকো!”
আর দাঁড়ায় না অদ্বৈতা। গলির ভেতর প্রায় ছুটে যাওয়ার মতো চলতে থাকে। নির্জনের ইচ্ছে করে ওর পিছে পিছে যেতে। কিন্তু রুদ্রের কবিতার কথাগুলো মনে পড়ে যায় তখনই।  
“খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে...”
লেখকের Wattpad Profile


আমরা আরেকটু আশাবাদী হতেই পারি!
Like Reply


Messages In This Thread
RE: উপন্যাসঃ কেবল প্রান্তর জানে তাহা- নির্জন আহমেদ - by Nirjon_ahmed - 30-06-2022, 11:58 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)