Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

এ আবার কেমন কথা? নগেন বেশ ঘাবড়ে গেল। তার বৃদ্ধ মাথাও পারছে না, যোগসুত্র টা ধরতে। বুঝে গেল অনেক কথা জানার আছে এখন। সে সব না জেনে কোন যোগসুত্র ই পাবে না। শুধু জিজ্ঞাসা করল,

-      ওই বিরাট কুকুর টা কোথায় গেল?
-      আসছে। পোশাক পড়তে গেছে।
রহিমের কথা শুনে নগেন আরো অবাক হলো। আর দেখতে না দেখতেই যে এলো কচুবনের ভিতর থেকে সে হলো লালি। নগেনের গলা থেকে বেরিয়ে এলো
-      হে ভগবান! লালি তুই???
-      হ্যাঁ দাদু। আমি।
                                                  
                                                                                                       পর্ব আট
লালিত গলায় ছিল আত্ম প্রত্যয়ের সুর। লালি নগেনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

-      দেখ দাদু জানিনা কি ভাবে আমাদের মধ্যে এই সব গুণ এলো। কিন্তু এসেছে যে ভাবেই হোক। প্রথম বুঝতে পারি যেদিনে আমার বাবা জলায় বাঘমুড়োর হাতে পরেছিল। আমি গন্ধ পাই বাঘমুড়োর। উদ্ভ্রান্তের মতন আমি দৌড়ে এসেছিলাম এখানে। আর একটু দেরী হলেই সব শেষ হয়ে যেত। সেদিনে সিধু দাদুর বেলাতেও আমি গেছিলাম। ততক্ষণে দেখি অভি কাজ করে ফেলেছে। সেদিনেই আমরা জেনে যাই আমাদের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আছে। আজকে রাতেও আমি ই প্রথম বুঝতে পারি বাঘমুড়ো গ্রামে ঢুকেছে। ওকে পিছু করতে করতে তোমাদের বাড়ির পিছনে পুকুরের ধারে চলে এসেছিলাম, আমরা দুজনেই। বুঝিনি রহিম দা ও আমাদের কে ফলো করতে পারবে।

তখন রহিম বলল কথা,
-      আমি আজকে রাতে বাঘমুড়োর গ্রামে ঢোকার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে গেছিলাম। পিছু নিতে নিতে এখানে চলে আসি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো লালি, সেটা হলো, আমার মনে হলো এই জায়গা টা অন্য জায়গা। মানে সব ই এক, কিন্তু মনে হচ্ছে আমাদের জলার মাঠ না।

ততক্ষণে, লালি কথা বলল,

-      না গো রহিম দা এটা সেই জায়গার ই মাঠ। আমাদের ই জলার মাঠ এটা, কিন্তু কোন আলাদা কম্পাঙ্কে মনে হয়। কিম্বা কেউ বেঁধে দিয়েছে জায়গা টা। তবে কেন জানি না আমার মনেহয় এটা আলাদা কম্পাঙ্ক। কোন দুশো তিনশো বছর আগের কিম্বা এই সময়ের ই কিন্তু আলাদা পিচ এ আছি আমরা।

নগেন এবারে সত্যি করেই ঘাবড়ে গেল। তোতলাতে লাগল কথা বলতে গিয়ে।

-      মা মা মানে? কি বলছিস তুই দিদি ভাই?
-      হ্যাঁ গো দাদু। আমাদের সেই রাস্তা দিয়েই ফিরতে হবে, না হলে আমরা সেই পোর্ট কি টা পাব না। দেখছ না, এখানে এতো লড়াই হলো, এতো আওয়াজ, তা সত্বেও গ্রাম একেবারে নীরব নিথর। কেউ জানেই না এখানে কি হয়ে গেল। হয়ত আমাদের কে না পেয়ে, খোঁজাখুঁজি শুরু হয়েছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত ওই পোর্ট কি তে কেউ পা না দিলে এখানে কেউ পৌঁছোতে পারবে না।

নগেন ভ্যোম হয়ে বসে রইল। বেশির ভাগ কথাই তো মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ওর। এবারে কথা বলল রহিম।

-      কিন্তু লালি, একটা ব্যাপার আমাকে ভাবাচ্ছে, বাঘমুড়ো কিন্তু এতো শক্তিশালী ছিল না। আজকে যেন মনে হলো, ওর গায়ে ভীম বল। অতূল বল।
-      হ্যাঁ গো রহিম দা। আমার ও মনে হলো। আমি নিশ্চিত ছিলাম , আমি আর অভি মিলে আজকেই ওর এতোদিনের খেলা আর আতঙ্ক শেষ করে দেব। কিন্তু আমি তো কাছেই ঘেঁষতে পারছিলাম না। শেষের দিক টা আমাকে রীতিমত ভয়ে ভয়ে ওর হাতের নাগালে যেতে হচ্ছিল। ভাগ্যিস তুমি এলে না হলে আজকে আমার আর অভির ই খেল খতম হয়ে যেত। পরের বারে আমাদের প্ল্যান করে এগোতে হবে রহিম দা।

নগেন শুধু শুনছে ওদের কথা। যেন তিনজন মহাবীর কথা বলছে আর তার মাঝে শিশুর মতন বসে আছে নগেন। এবারে অভি বলল কথা,

-      হ্যাঁ গো লালি দি। আমার ছোঁড়া তীর গুলো কে এমন ভাবে হাতে ধরে ফেলছিল আমার ভিতরে ভিতরে খুব ভয় লাগছিল। রহিম দা যোগ দেবার পরে একটু কনফিডেন্স পেলাম। না হলে আমার ও মনে হয়েছিল, এই লড়াই ই আমাদের শেষ লড়াই।

রহিম বলল
-      ছাড় তোরা এসব কথা। দ্যাখ আমরা ছাড়া আর তো কেউ নেই। কিন্তু আজকে আমার মনে হয়েছে আমরা যথেস্ট না। কেউ না কেউ তো আছেই বাঘমুড়োর পিছনে। এতো বলশালী তো ও ছিল না। ওর মায়া আমার উপরেও জাঁকিয়ে বসছিল সময়ে সময়ে। জলার থেকে ভেসে আসা কান্না আমাকে এতো টাই ব্যথিত করে দিচ্ছিল আমি লড়াই এ মন দিতেই পারছিলাম না।

-      মায়া?         নগেন প্রশ্ন করল রহিম কে।
-      হ্যাঁ দাদু মায়া। এই মায়া বাঘমুড়ো ও জানে। শক্তির প্রদর্শনের সাথে চারিপাশের পরিবেশ এবং প্রকৃতি কেও বশ করে শত্রুর পিছনে লেলিয়ে দিতে জানে এরা।

নগেন ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল বলতে গেলে। রহিম এক নিঃশ্বাসে কথা গুল বলে, নগেন এর দিকে তাকিয়ে বলল,

-      দাদু, আমরা তো নজরে রাখছি ই। কিন্তু তোমাকেও নজরে রাখতে হবে। তোমাকে বলছি কারন, তুমি এই গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ, তোমার কাছে অনেকেই আসে। খেয়াল রাখতে হবে তোমাকে। কোন নতুন মানুষ, বা জীব বা গাছ। জানিনা কোন রূপে সে আছে।
নগেন একেবারে ভ্যাবলা হয়ে গেলো। মানে কি নজরে রাখবে ও? বলল,

-      গাছ? গাছের রূপ ধরে কেউ থাকে নাকি?
-      হ্যাঁ দাদু থাকে।

রহিমের উত্তরে নগেন এবারে সত্যি অসহায় বোধ করতে লাগল। এ যে অসম্ভব ব্যাপার হয়ে চলেছে। রহিম নগেনের দিকে তাকিয়ে বলল,

-      ধর তুমি দেখলে যে এই গাছ টা কালকে তো ছিল না এদিকে। বা দেখলে অস্বাভাবিক পাতার আকার আর একেবারে জড়বৎ দাঁড়িয়ে। সামান্য পাতাও নড়ছে না। সাথে সাথে আমাকে বা অভি কে বা লালি কে খবর দেবে।
-      অ্যাঁ? কিন্তু কি নজরে রাখব আমি। আমার তো ভয়ে হাল খারাপ এই জন্য যে এই কিছুদিন আগে থাকতে বাঘমুড়ো গ্রামের ভিতরে ঢুকছে। আগে তো ঢুকত না।

লালি বলল এবারে কথা, নগেনের কথা টা কেড়ে নিয়ে,

-      ঢুকত না নয় দাদু, ঢুকতে পারত না। তুমি বুঝবে না আমরা তিনজন বুঝি, এই গ্রাম কোন শক্তিশালী কবচে রক্ষিত ছিল। যবে থেকে ক্ষমতা পেয়েছি আমি দেখতে পেতাম গ্রামের উপরে পুরু ধোঁয়ার চাদর। সেটা কেটে গেছে ইদানীং।

-      কিন্তু সে তো শুনেছি কোন কল্প কথা। শুনেছিলাম, কোন এক রাজা এই বাঁধন দিয়েছিলেন, জলার মধ্যে শ্রী কৃষ্ণের মন্দির বানিয়ে।

-      না দাদু আমরা দেখেছি সে কবচ।মহা শক্তিশালী সেই কবচ। এই কবচ স্বয়ং নারায়ন ছাড়া কারোর ভাঙ্গার ক্ষমতা ছিল না বলেই জানি। আমরা দেখেছি সে কবচ। আর এখন সেটা ভাঙতেও দেখছি একটু একটু করে। ভয় সেখানেই। এই কবচ যে ভেঙ্গে ফেলে তার শক্তি কম না গো দাদু। আমরা নেহাত ই শিশু।  

-      কি হবে তাহলে? – নগেনের গলায় ভয়ের সুর এবারে।

রহিম বলল,

-      কিছু না দাদু। কবচ যেমন ভাঙছে, তেমনি আমরাও তো আছি। লালি যতই বলুক আমরা ঠিক সামলে নেব।  কিন্তু লালি, এই খোঁজ পাওয়ার খুব দরকার , আর কে আছে বাঘমুড়োর পিছনে। যে কোন রূপে থাকতে পারে সে। আমাদের কিন্তু খুঁজে বের করতেই হবে। না হলে সামনে সমূহ বিপদ।

লালি তখন নগেন কে বলল,

-      দাদু তুমি সারাদিন চন্ডী মণ্ডপে বসে থাক। এই গ্রামের সব মানুষ ই একবার না একবার ওই মণ্ডপ হয়ে যায়। তুমি সবাই কে লক্ষ্য রাখ। আমরা খুঁজতে পারব না। পড়াশোনা, কলেজ সব আছে আমাদের। বাবা সন্দেহ করতে পারে। বাঘমুড়ো কে জানতে দিলে হবে না আমরা কারা। আর আমরা তো লক্ষ্য রাখবই। কিন্তু তুমি একটু মাথা কান চোখ খোলা রাখো। দেখ আমার সন্দেহ যদি ভুল না হয় তবে, আজকে বাঘমুড়ো তোমার বাড়ির পিছনেই ছিল।

নগেন মিলিয়ে দেখল কথা টা মিথ্যা না ও হতে পারে। কারন শোবার পরে একটা সময়ে একটা গুমোট ভাব ছিল ঘরের মধ্যে। মনের মধ্যে একটা বিষাদ। কেটে গেছিল সেটা ছাদে আসতেই। হয়ত সেই সময়ে লালি পৌঁছে গেছিল সেখানে। এদিকে লালি বলে চলে,

-      আর আমার স্থির বিশ্বাস বাঘমুড়ো তোমাকে মেরে ফেলত না। তোমাকে বশ করত। তোমার থেকে ওর কিছু জানার ছিল। বা তোমাকে তুলে নিয়ে যেত তার কাছে যে ওর পিছন থেকে খেলছে। জানত, আমরা কারা যারা বাঘমুড়োর সামনে চলে আসছি বারংবার।

কাঁপতে লাগল নগেন। ভয়ে আতঙ্কে একেবারে জড়বৎ হয়ে গেলো। ও জানত শুধু বাঘমুড়ো একটা পশু মাত্র। কিন্তু এতো বুদ্ধি ধরে?  কিন্তু কেন? কি আছে এই গ্রামে? কিছু তো আছে না হলে প্রায় তিন সহস্র বছর এক ই জায়গায় বাঘমুড়ো থাকবেই বা কেন? কি সেই মহা মূল্যবান জিনিস? নাহ এ বড় সহজ কাজ নয়। তবে আশার কথা একটাই যে, এই তিনজন আছে এখন গ্রামে। নিজেকে শক্ত করল নগেন। বলল

-      শোন বাবারা, আমি জানি না আমি কি করতে পারব। তবে আমি মানি তিনি আছেন। তিনি ই সব শেষ কথা। আর তিনি আমাদের ভিতরেই আছেন। আমাদের মত করেই আছেন। আর তোরা আছিস। আমি আছি তোদের সাথে। আমৃত্যু।

পাশাপাশি তিনজনে দাঁড়িয়েছিল। দেখছিল নগেন কে। তিনজনেই জড়িয়ে ধরল নগেন কে এসে। লালি বলল,

-      দাদু, আমাদের পরিচয় যেন কেউ জানতে না পারে, এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে কিন্তু। এখন চল, কত সময়ে গেল জানিনা। ভোর হয়ে গেলে আমাদের খোঁজ পরবে। পোর্ট কি খুঁজে না পেলে আরেক বিপদ। ওটা কে সরিয়ে রাখতে হবে যদি সম্ভব হয়।

আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল নগেন। মুক্ত আকাশ কিন্তু কেমন যেন ভয়ের একটা কালো রঙ লেগে আছে। তারায় ভর্তি, কিন্তু সেই তারাগুলো একে অপরের সাথে জুড়ে কোন ভয়ঙ্কর মুখ আঁকা হয়ে যাচ্ছে আপনা থেকেই। নগেনের মাথার ভিতরেই আঁকা হয়ে যাচ্ছে। মহাতঙ্কের একটা গুম গুম করে আওয়াজ, মনের কোন গহিনে বাজছে, নাকি বাইরে কোন সুদুর থেকে নাদের মতন অনবরত বেজে চলেছে বুঝতে পারছে না নগেন। শুধু বুঝতে পারছে, কোন বিশাল নাগ, তার করাল গরলে ছেয়ে ফেলছে চারিদিক। এই চরম বিপদে তিনি ই পাঠিয়েছেন এই তিন মুর্তি কে হয়ত সবাই কে রক্ষা করতে । আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রণাম করতে ভুলল না মধুসূদন কে নগেন। সেই সময়ে জলার মধ্য থেকে ভেসে এলো গম্ভীর কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ। সবাই তাকিয়ে রইল সেই দিকে। এতো বিপদের মাঝে এই কাঁসর ঘন্টাই যে ভরসা সবার। মাঝে নগেন কে রেখে তিনজনে, তিন দিক থেকে আড়াল করে নগেন কে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে প্রবেশ করল গ্রামের ভিতরে, কচুবন পেরিয়ে।

ঠিক সেই সময়ে উমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখল, একটা বিশাল সমুদ্র। সমুদ্র না বলে তাকে মহাসমুদ্র বলাই ভাল। মনে হলো পূরাণে কথিত সেই মহাসলিল এটা। আর উমা একটা ছোট নৌকা তে বসে আছে। একলা। ভয়ে উমা থর থর করে কাঁপছে। তীব্র ঝড় আর সেই ঝড়ে ওঠা বিশাল বিশাল ঢেউ এর সামনে নৌকা টা কে মনে হচ্ছে জল বিন্দু মাত্র। আর সে কি যে সে ঝড় নাকি? মনে হচ্ছে শত শত কালবৈশাখী একসাথে পৃথিবী কে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেবার ষড়যন্ত্র করছে। ওই বিশাল ঢেউ নৌকার উপরে ভেঙ্গে পরলেই নৌকা সুদ্দু অতল সলিলে সমাধি। কি ভাবে যে এগিয়ে চলেছে নৌকা উমা জানে না। সারা শরীর, আর নৌকার খোল জলে থই থই করছে। হাসি পেল উমার এই ভয়েও। কোথায় কোন অসীম অর্ণবে একটা ছোট নৌকায় ও আটকে আর শরীরে জলের বিন্দু নিয়ে ভাবছে? কিন্তু এই গর্জন উত্তরোত্তর বেড়েই চলল।  এবারে মনে হলো বিশাল বিশাল ঢেউ গুলো যেন গজরাচ্ছে ছোট্ট নৌকা টা কে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলার তাগিদে। বাঁচার আশা নেই আর। এ কি কোন স্বপ্ন? নিশ্চই তাই। ঠিক সেই সময়ে শুনতে পেল,
-      ভয় নেই মা , আমি আছি ।

তাকিয়ে দেখল এদিকে ওদিকে। হীরার গলা না?

-      হে মাধব, এই বিপদে ওকে টানলে কেন তুমি। হে ঠাকুর রক্ষে কর আমার ছেলেকে কে।  

উমা কে অবাক করে এলো একটা ছোট্ট মাছ। ঢেউ এর অতো গর্জনেও উমা শুনতে পেল,

-      মা নৌকার দড়ি টা আমার ল্যাজে বেঁধে দাও।

হাসি পেল, পুচকে মাছ টার কথায়। আহা ছেলে আমার মাছ হয়ে এসেছে এই বিশালার্নব থেকে মা কে বাঁচাতে। তাও বেঁধে দিল নৌকার দড়ি টা। উমা কে অবাক করে দিয়ে সেই ছোট্ট মাছ রূপী হীরা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলল। আর ধীরে ধীরে নিজের কায়া বড় করতে শুরু করল। একটা সময় এল মনে হলো, ঢেউ এর থেকেও বিশাল কায়া নিয়ে ছেলে, ছোট্ট নৌকা টা কে বয়ে নিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এই মনে হলো ডুবে যাবে নৌকা। ভয়ে চোখ বুজে ফেলছিল উমা মাঝে মাঝেই। কিন্তু সেই মাছ উমার ছোট্ট নৌকা টা কে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সামনে দিকে।

একটা সময় এল যখন দেখল, কোন ঝড় নেই, ঢেউ নেই কিচ্ছু নেই। সব কিছু শান্ত। প্রশান্ত মহার্ণবের মাঝে উমার নৌকা। কিন্তু ছেলে কোথায় গেলো? এদিক ওদিক তাকাতেই দেখল, আকাশে যেন গ্রহ নক্ষত্রের মেলা লেগেছে। ছোট বেলায় শনির ছবি দেখেছিল উমা। হ্যাঁ ওই তো শনি। সুর্য কে দেখে মনে হলো, কে বলবে, শীতকালে অমন মিঠে কড়া রূপ নিয়ে আকাশে থাকে। এখানে মনে হচ্ছে, লেলিহান আগুনের শিখা নিয়ে চারিদিক জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবে। নৌকা এগিয়ে যেতেই দেখল, প্রায় অর্ধেক সমুদ্র জুড়ে একটা বিশাল পালঙ্ক। আর সেই পালঙ্কের মাথার সহস্র মুখ বিশিষ্ট এক মহা নাগ। আর সেই বিছানায় শুয়ে আছেন এক নীলাভ কোমল শরীরের একজন। কিন্তু উমা তো এই সব দেখতে চাইছে না। ও তো চাইছে ওর ছেলেকে। কোথায় যে গেলো ছেলে? বিশাল সমুদ্রে চেচিয়ে উঠলো,

-      হীরা আ আ আ আ আ। কোথায় গেলি বাবা!!! এখন আয় , আর ঝড় নেই সোনা। মায়ের কাছে ফিরে আয়।

আর তখন ই অবাক করে দিয়ে, সেই মহানাগের সুশীতল পালঙ্কে শুয়ে থাকা নীল রঙের মানুষ টি উঠে বসে বলল,

-      এই তো মা আমি এখানে।

উমা দেখল, সেই মানুষ টা আর আর হীরার মুখ খানা একেবারে এক।

ধড়মড় করে উঠে বসল উমা বিছানা থেকে। এ আবার কি রকম স্বপ্ন? দরদর করে ঘামছে উমা। পরক্ষণেই, স্বপ্ন মনে করে ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে দেখল, মহারাজ ঠিক পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। বুকে হাত দিয়ে খানিক নিজেকে সামলে নিয়ে, ছেলের গায়ে হাত বুলিয়ে যখন পাশে শুতে যাবে আবার, শুনতে পেল পুব দিক থেকে ভেসে আসছে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। রাধামাধব কে প্রণাম করে যখন শুলো, হীরার গায়ে একটা হাত রেখে, তখন উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে থাকা হীরার মুখে, এক চিলতে মিষ্টি হাসি খেলে গেল।  
 
বেশ কিছুদিন সব থেথাম ছিল। নগেন রোজ চন্ডীতলায় বসে। দেখে কে আসে কে যায়। আর দেখে হীরা কে। এই ছোঁড়ার সব কিছু রহস্য ময়। লালি তবে বেশ খানিক টা সময় হীরা কে নিয়ে থাকে। কিছু বুঝলে তো লালি সাবধান হয়ে যেত। তবে প্রেম যে অন্ধ হয় সেটা নগেন জানে। এই ছোঁড়া আর লালির মধ্যে কিছু একটা চলছে, সেটা এই বয়সে এসে ভালই বুঝতে পারে নগেন। এই মৃত্যুলীলা যে সতের বছর আগে শুরু হয় নি, কেই বা বলতে পারে? ছেলেটার কান্ড কারখানাই অদ্ভুত। সেই জন্যেই নগেনের চিন্তা হয়।

 বাকিদের আর কার উপরেই বা নজর রাখবে নগেন? সবাই তো নিজের কাজ কর্ম আর সংসার নিয়ে মত্ত। এখনো মহাদেব এলো না তো? এই সময় টা মহাদেবের সাথেই বসে আড্ডা দেয় নগেন। মহাদেবের কাজ কর্ম সব সকালেই শেষ হয়ে যায়। সকাল এগারোটার মধ্যে অর কাজ শেষ। বিকালে একবার যায় বটে মাঠে তবে সেটা নেহাত ই দেখতে যায় নিজের গাছ গুলো কে। গাছ গুলো কে বড্ড ভালোবাসে কিনা মহাদেব!
বলতে না বলতেই মহাদেব এসে হাজির। নগেন বলল,

-      কি রে দেরী করলি এতো আজকে?

গামছা দিয়ে মণ্ডপের ধুলো ঝেড়ে বসে পরল মহাদেব। বলল,

-      আর জ্যাঠা!!!!  তোমার বৌমার খুব ফ্যাচাং। রোজ সকালে জলার থেকে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে আর রোজ রাধা মধবের পুজো দেবে বলে আমাকে পরেশদার বাড়ি থেকে মাখন, দুধ নিয়ে আসতে হচ্ছে। ধার হয়ে গেলো গো জ্যাঠা শ পাঁচেক টাকা।

শুনে হাসল নগেন। মনে মনে ভাবল, ওই কাঁসর ঘন্টা ই এখন সম্বল রে মহাদেব। খেচিয়ে বলল,

-      যা যাহ!! বৌমা তো ভাল কাজ ই করছে। আমি বলে দেব ক্ষণ। আমার বাড়ি থেকে দুধ দিয়ে আসিস কেজি টাক রোজ। পয়সা লাগবে না। তা তোর সকালের সংকীর্তণ কেমন চলছে?

-      আর বোল না জ্যাঠা। লোক কমছে বুঝলে, ধীরে ধীরে।
-      কি রকম?
-      এই দেখ, কাজরী টা চলে গেল ওর পিসির বাড়িতে। আবার ভোলা ও আসছে না সকালে। আগে ওই ডেকে তুলতো আমাদের ঘুম থেকে।

কাজরীর পিসি? নগেন ভোলা কে জন্মাতে দেখেছে। ভোলার বাবাও নগেন কে দাদা বলত। ভোলার বাপের মেয়ে আছে বলে তো নগেন শোনে নি কোন দিন। আর ভোলার ব্যাপার টা কেমন কেমন একটু। ভোলা মাছ না ধরলে খাচ্ছে কি? নগেন জানে ভোলা মাছ ধরছে না বেশ কিছুদিন ধরে। কারন নগেন যখন ঘুম থেকে উঠে ছাদে পায়চারী করে তখন ভোলা পিছনের পুকুরে ছোট জাল ফেলে, চিংড়ী, কাঁকড়া এই সব ধরে। সবাই ভালবাসে ভোলা কে। মাছ গুলো কিনে নেয় সকালেই। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মাছ ও ধরছে না।

-      ও জ্যাঠা কি ভাবছ?
-      উঁ???

চিন্তায় ছেদ পরল নগেনের। বলল,

-      না কিছু না । তোর ছেলে কোথায়?
-      তার কি ঠিক আছে গো কিছু? সব সময়ে বই নিয়ে বসে।
-      এখন কোথায়?
-      বাড়িতেই। কেন জ্যাঠা?
-      না না। এমনি , কোন কারণ নেই।

খানিক চুপ রইল মহাদেব। তার মধ্যেই অনেকে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নগেনের ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। নগেন ও কথা বলছে। আর তার ফাঁকে ফাঁকেই মহাদেবের সাথেও, কথার পিঠে কথা বলছে। ঠিক তখন ই, শিবমন্দিরের পিছন থেকে ভোলা কে আসতে দেখল দুজনাই। নগেন ডাকল,

-      ভোলা এদিকে আয় বাপ একবার। তোর বোন আছে তো শুনি নি আমি জম্মে।

ভোলা কোন সাড়া দিল না। যেন কোন একটা ঘোরে আছে ও। অদ্ভুত রকম ভাবে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ও। দুজনায় আবার ডাকল ভোলা কে। ভোলা শুনতেই পেল না যেন। চলে গেল রাস্তা ধরে যে দিকে মহাদেবের বাড়ির পিছন দিক সেই দিকে। নগেন আর মহাদেব একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। আর মহাদেবের নাকে এসে লাগল, সেই ভোরে ভোলা কে ডাকতে গিয়ে যে গন্ধ টা নাকে লেগেছিল। বমি চলে আসবে মনে হচ্ছে। দেখল নগেন জ্যাঠার নাকেও গামছা চাপা। কোনরকমে সামলে নিয়ে, তারপরে নগেন কে বলল,

-      জানো জ্যাঠা, সেদিন থেকে বলব বলব করে বলা হয় নি তোমাকে।

মহাদেবের গলার আওয়াজে কিছু একটা যেন ছিল। নগেন বলল,

-      কি কথা রে?
-      সেদিনে ভোরে আমি ডাকতে গেছিলাম ভোলা কে। মানে যেদিনে ও এল না প্রথম। সেই দিন ভোরে।
-      হ্যাঁ, কি হয়েছিল।
-      ওর বাড়িতে ঢুকেই একটা বিশ্রী দুর্গন্ধ পেয়েছিলাম আমি। সেটা এখনো পেলাম আমি।
-      হুম আমিও পেলাম। বকের পায়খানার গন্ধ। বর্ষাকালে জল পরলে বকের পায়খানা থেকে এমনি ই বিশ্রী গন্ধ বের হয়। পুতি গন্ধের মতন।
-      হুম। হবে হয়ত, দীর্ঘদিন মাছ ধরেছে। কিম্বা আজকেও ধরেছে, কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় কে জানে। তাই হয়ত গায়ে গন্ধ টা লেগে আছে। কিন্তু ও সাড়া দিল না কেন?
ততক্ষণে, মহাদেবের বাড়ি থেকে ডাক আসায়, মহাদেব চলে গেল। আর নগেন ভোলা যেদিকে গেছে, সেই দিক অনুসরণ করে এগিয়ে গেল। খানিক টা যেতেই দেখল, ভোলা মহাদেবের বাড়ির পিছন দিকে ঢুকে পরল, যেদিকে পুকুর টা আছে। ও এগিয়ে গেল। কারন ওই দিকে পুকুরের ধার ধরে নগেনের বাড়িও যাওয়া যায়। ও গলির ভিতরে ঢুকে দেখল একটু দূরে ভোলা ঠিক মহাদেবের বাড়ির খিড়কি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ঘটি থেকে জল নিচ্ছে আর মহাদেবের বাড়ির গায়ে ছেটাচ্ছে। আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে। কুকুরের মতন মহাদেবের বাড়ির পিছনের দেওয়ালে শুঁকছে ভোলা। নগেনের পায়ের তলায় একটা কাঠি পড়তেই পট করে আওয়াজ হলো। আর তাতেই ভোলা চেয়ে দেখল নগেনের দিকে।

চলবে........................
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- নতুন পর্ব ৭- পেইজ ১০ - by nandanadasnandana - 26-06-2022, 02:15 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)