26-06-2022, 08:21 AM
কোথাও কোথাও দেখছি পেজমার্কার দেওয়া আছে। কোথাও আবার বিশেষ কিছু পঙক্তির নীচে সবুজ কালি দিয়ে দাগ দেওয়া। সেগুলো পড়তে পড়তে ক্রমে রাত বাড়ে। দূরে কোথাও সমবেত আর্তনাদের মতো শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। সেই ডাক শুনে লাইলং নামের মা-মুরগিটা একবার বিপদ-সংকেতের মতো আওয়াজ করে পরক্ষণেই চুপ করে যায়।
পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা জায়গায় এসে আমি আদিগন্ত চমকে উঠি। সবুজ কালি দিয়ে স্যার চিহ্নিত করে রেখেছেন খুব পরিচিত একটি রচনার কয়েকটি লাইন। যেন আমাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইছেন কিছু :
'আমি চিত্রাঙ্গদা।
দেবী নহি, নহি আমি সামান্যা রমণী।
পূজা করি রাখিবে মাথায়, সেও আমি
নই; অবহেলা করি পুষিয়া রাখিবে
পিছে, সেও আমি নহি। যদি পার্শ্বে রাখ
মোরে সংকটের পথে, দুরূহ চিন্তার
যদি অংশ দাও, যদি অনুমতি কর
কঠিন ব্রতের তব সহায় হইতে,
যদি সুখে দুঃখে মোরে কর সহচরী
আমার পাইবে তবে পরিচয়।'
চেনা লাইনগুলো হঠাৎ এই মধ্যরাতে এক নতুন আলোর বার্তা নিয়ে আমার মর্মে, আমার সমস্ত স্নায়ুতে, আমার শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ল।... প্রণাম.... শতকোটি প্রণাম আপনাকে স্যার,... হে আমার অপার্থিব আলোর দেবতা!
রাত প্রায় শেষ হয়ে এল। একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ভূতগ্রস্তের মতো কেটে গেল বিনিদ্র প্রহরগুলি। আজ আর ঘুম আসবে না। উঠে বসলাম বিছানা থেকে। ব্ল্যাংকেটটা গায়ে জড়িয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে জলের গেলাসটা নিতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল ভেরোনিকার দেওয়া রঙিন কাগজে মোড়া রিটার্ন গিফটটা। খুলেই দেখা হয়নি ওটা। মন এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, খুলে দেখতেও ইচ্ছে করেনি ফেরার পথে।
সামান্য কৌতূহল হল। কী আছে ওতে? খুলেই দেখা যাক না। সমস্ত সেলোটেপ খুলতে সময় লাগল কিছুটা। কিন্তু এটা কী? টকটকে রক্তের মতো লাল একটা ব্রা! প্যাডেড! খুব দামি মনে হল।
আমার মাথা চোখ কান সব আকস্মিক রাগে আর উত্তেজনায় লাল হয়ে উঠল। সমস্ত স্নায়ু বিদ্রোহ করে উঠল। আমি কখনো ব্রা পরি না, সবাই জানে। ফার্স্ট ইয়ার অনার্সে পরার সময় একদিন ক্লাসের টমবয় মেয়েরা সমস্ত ছেলেকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজেদের ব্রেস্ট ওপেন করে প্রমাণ করতে চাইছিল কারটা জেনুইন, আর কারটা আর্টিফিসিয়াল! যেসব মেয়ে নিজেদের ব্রেস্ট শো করতে সঙ্কোচ বোধ করছিল টমবয়রা ফোর্স করে তাদের টি শার্ট ওপেন করে দিয়েছিল হাসতে হাসতে। আমি তখন ক্লাসের এক কোণে বন্য শেয়ালের তাড়া খাওয়া রোগা কালো ছাগলছানার মতো প্রাণভয়ে সিঁটকে রয়েছি। লম্বা চওড়া স্বাস্থ্যের মস্তান টাইপ একটি মেয়েএসে একটানে আমার ওড়না ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দুহাতে বুক চেপে ধরে অবাক হয়ে বলেছিল :
'যাহসালা! তুই ব্রা পরিস না? তোর ব্রেস্ট জিরো? কী করে হলো এটা! মাই গড!.... এই তোরা দেখেছিস? এই মেয়েটার ব্রেস্ট নেই। প্যাডেড ব্রা-ও পরে না!
সবাই তখন আমাকে গোল করে ঘিরে ধরেছে। যেন স্টেশনের প্লাটফর্মে ধরা পড়েছে কোনো পকেটমার, যাকে চুরির দায়ে ধরা হয়েছে, কিন্তু সারা শরীর ঘেঁটেও কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না চুরি-যাওয়া বস্তুটি।
আর আমি তখন দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও দেখেছি মেয়েরা মাঝে মাঝেই ব্রা নিয়ে নানা ফ্যান্টাসি করত। কার বয়ফ্রেন্ড কাকে জন্মদিনে ইমপোর্টেড ব্রা গিফট করেছে, কার জামাইবাবু কাকে পুজোতে একডজন ব্রা উপহার দিয়েছে....এইসব নিয়ে হাসি তামাশা হত। আমি মুখ কালো করে ওদের একপাশে একটা বই নিয়ে বসে থাকতাম।
কত রকমের যে ব্রা-র ডিজাইনের কথা কানে ভেসে আসত : টি শার্ট ব্রা, স্পোর্টস ব্রা, বেবি ডল ব্রা, ক্যামিসোল ব্রা, প্যাডেড ব্রা, স্ট্র্যাপলেস ব্রা, স্টিকি ব্রা, করসেট ব্রা, মিনিমাইজ ব্রা, নার্সিং ব্রা, পয়েন্টেড ব্রা....। আমি এগুলো একটাও চিনি না। শুধু নামই শুনেছি। চেনার চেষ্টাও করিনি কখনো।
ভেরোনিকার দেওয়া লাল রঙের ব্রা-টিকে দেখে প্রথমে মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিল। পরে মনে হল, ও হয়ত ভালোবেসেই এটা দিয়েছে আমাকে। যাতে বাইরের লোকের কাছে আর অপ্রস্তুত না হই! যাতে মানুষের কাছে নিজের শরীরের ত্রুটি গোপন করার জন্য সবসময় বুকে ভারী ওড়না জড়িয়ে রাখতে না হয়!
একবার ইচ্ছে হলো, ওটা পরে দেখি। কেমন দেখায় আমাকে? কেউ তো আর দেখছে না এই শেষরাতের আধো অন্ধকারে।
এত দামি ব্রা কেনার সামর্থ্যও আমার নেই। কখনো কিনব বলে ভাবিওনি। অফ-ক্লাসে দুধের মতো ফর্সা আর সেক্সি চেহারার ইলোরা চৌধুরী একদিন বলছিল : 'আমার গ্রোথ বেশি ছিল বলে মা আমাকে ক্লাস সিক্সেই ব্রা কিনে দিয়েছিল। আর সবাই সেটা হাঁ করে দেখত। এইটুকু মেয়ে এই বয়সে....'
আমার মা অবশ্য এসব নিয়ে কখনো ভাবেইনি। আমিও ক্রমশ না ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ হঠাৎ মনে হলো...
কেন মনে হলো? মুহূর্তেই সমস্ত মন, সমস্ত সত্তা বিদ্রোহ করে উঠল। নাহ, এ জিনিস আমি পরব না। কক্ষনও না। জীবনে কখনো কোনো পরীক্ষায় নকল করে পাস করিনি। চিরকাল নিজের মেধার উপরে আস্থা রেখে উদাসীন মেঘ থেকে বৃষ্টি নামিয়েছি। ফসল তুলেছি ঘরে।
আজ কেন তবে মুহূর্তের দুর্বলতায় একটা দামি প্যাডেড ব্রা পরে নিজেকে কৃত্রিমভাবে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছি?
কিছু কামুক আর লম্পট পুরুষকে নিজের বানানো ব্রেস্ট দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা কি খুব প্রয়োজন? ছিঃ, ছিঃ জাগরী, এসব বিকৃত ভাবনা মাথায় ঢোকার আগে তোমার আরো একবার আগুনে পুড়ে মরা উচিত ছিল।
এতকালের সমস্ত লড়াই, সমস্ত চোখের জল, তোমার উজ্জ্বল সমস্ত মার্কশিট জলে ভাসিয়ে দাও। মরো তুমি।
পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা জায়গায় এসে আমি আদিগন্ত চমকে উঠি। সবুজ কালি দিয়ে স্যার চিহ্নিত করে রেখেছেন খুব পরিচিত একটি রচনার কয়েকটি লাইন। যেন আমাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইছেন কিছু :
'আমি চিত্রাঙ্গদা।
দেবী নহি, নহি আমি সামান্যা রমণী।
পূজা করি রাখিবে মাথায়, সেও আমি
নই; অবহেলা করি পুষিয়া রাখিবে
পিছে, সেও আমি নহি। যদি পার্শ্বে রাখ
মোরে সংকটের পথে, দুরূহ চিন্তার
যদি অংশ দাও, যদি অনুমতি কর
কঠিন ব্রতের তব সহায় হইতে,
যদি সুখে দুঃখে মোরে কর সহচরী
আমার পাইবে তবে পরিচয়।'
চেনা লাইনগুলো হঠাৎ এই মধ্যরাতে এক নতুন আলোর বার্তা নিয়ে আমার মর্মে, আমার সমস্ত স্নায়ুতে, আমার শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ল।... প্রণাম.... শতকোটি প্রণাম আপনাকে স্যার,... হে আমার অপার্থিব আলোর দেবতা!
রাত প্রায় শেষ হয়ে এল। একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ভূতগ্রস্তের মতো কেটে গেল বিনিদ্র প্রহরগুলি। আজ আর ঘুম আসবে না। উঠে বসলাম বিছানা থেকে। ব্ল্যাংকেটটা গায়ে জড়িয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে জলের গেলাসটা নিতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল ভেরোনিকার দেওয়া রঙিন কাগজে মোড়া রিটার্ন গিফটটা। খুলেই দেখা হয়নি ওটা। মন এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, খুলে দেখতেও ইচ্ছে করেনি ফেরার পথে।
সামান্য কৌতূহল হল। কী আছে ওতে? খুলেই দেখা যাক না। সমস্ত সেলোটেপ খুলতে সময় লাগল কিছুটা। কিন্তু এটা কী? টকটকে রক্তের মতো লাল একটা ব্রা! প্যাডেড! খুব দামি মনে হল।
আমার মাথা চোখ কান সব আকস্মিক রাগে আর উত্তেজনায় লাল হয়ে উঠল। সমস্ত স্নায়ু বিদ্রোহ করে উঠল। আমি কখনো ব্রা পরি না, সবাই জানে। ফার্স্ট ইয়ার অনার্সে পরার সময় একদিন ক্লাসের টমবয় মেয়েরা সমস্ত ছেলেকে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজেদের ব্রেস্ট ওপেন করে প্রমাণ করতে চাইছিল কারটা জেনুইন, আর কারটা আর্টিফিসিয়াল! যেসব মেয়ে নিজেদের ব্রেস্ট শো করতে সঙ্কোচ বোধ করছিল টমবয়রা ফোর্স করে তাদের টি শার্ট ওপেন করে দিয়েছিল হাসতে হাসতে। আমি তখন ক্লাসের এক কোণে বন্য শেয়ালের তাড়া খাওয়া রোগা কালো ছাগলছানার মতো প্রাণভয়ে সিঁটকে রয়েছি। লম্বা চওড়া স্বাস্থ্যের মস্তান টাইপ একটি মেয়েএসে একটানে আমার ওড়না ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দুহাতে বুক চেপে ধরে অবাক হয়ে বলেছিল :
'যাহসালা! তুই ব্রা পরিস না? তোর ব্রেস্ট জিরো? কী করে হলো এটা! মাই গড!.... এই তোরা দেখেছিস? এই মেয়েটার ব্রেস্ট নেই। প্যাডেড ব্রা-ও পরে না!
সবাই তখন আমাকে গোল করে ঘিরে ধরেছে। যেন স্টেশনের প্লাটফর্মে ধরা পড়েছে কোনো পকেটমার, যাকে চুরির দায়ে ধরা হয়েছে, কিন্তু সারা শরীর ঘেঁটেও কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না চুরি-যাওয়া বস্তুটি।
আর আমি তখন দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও দেখেছি মেয়েরা মাঝে মাঝেই ব্রা নিয়ে নানা ফ্যান্টাসি করত। কার বয়ফ্রেন্ড কাকে জন্মদিনে ইমপোর্টেড ব্রা গিফট করেছে, কার জামাইবাবু কাকে পুজোতে একডজন ব্রা উপহার দিয়েছে....এইসব নিয়ে হাসি তামাশা হত। আমি মুখ কালো করে ওদের একপাশে একটা বই নিয়ে বসে থাকতাম।
কত রকমের যে ব্রা-র ডিজাইনের কথা কানে ভেসে আসত : টি শার্ট ব্রা, স্পোর্টস ব্রা, বেবি ডল ব্রা, ক্যামিসোল ব্রা, প্যাডেড ব্রা, স্ট্র্যাপলেস ব্রা, স্টিকি ব্রা, করসেট ব্রা, মিনিমাইজ ব্রা, নার্সিং ব্রা, পয়েন্টেড ব্রা....। আমি এগুলো একটাও চিনি না। শুধু নামই শুনেছি। চেনার চেষ্টাও করিনি কখনো।
ভেরোনিকার দেওয়া লাল রঙের ব্রা-টিকে দেখে প্রথমে মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিল। পরে মনে হল, ও হয়ত ভালোবেসেই এটা দিয়েছে আমাকে। যাতে বাইরের লোকের কাছে আর অপ্রস্তুত না হই! যাতে মানুষের কাছে নিজের শরীরের ত্রুটি গোপন করার জন্য সবসময় বুকে ভারী ওড়না জড়িয়ে রাখতে না হয়!
একবার ইচ্ছে হলো, ওটা পরে দেখি। কেমন দেখায় আমাকে? কেউ তো আর দেখছে না এই শেষরাতের আধো অন্ধকারে।
এত দামি ব্রা কেনার সামর্থ্যও আমার নেই। কখনো কিনব বলে ভাবিওনি। অফ-ক্লাসে দুধের মতো ফর্সা আর সেক্সি চেহারার ইলোরা চৌধুরী একদিন বলছিল : 'আমার গ্রোথ বেশি ছিল বলে মা আমাকে ক্লাস সিক্সেই ব্রা কিনে দিয়েছিল। আর সবাই সেটা হাঁ করে দেখত। এইটুকু মেয়ে এই বয়সে....'
আমার মা অবশ্য এসব নিয়ে কখনো ভাবেইনি। আমিও ক্রমশ না ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ হঠাৎ মনে হলো...
কেন মনে হলো? মুহূর্তেই সমস্ত মন, সমস্ত সত্তা বিদ্রোহ করে উঠল। নাহ, এ জিনিস আমি পরব না। কক্ষনও না। জীবনে কখনো কোনো পরীক্ষায় নকল করে পাস করিনি। চিরকাল নিজের মেধার উপরে আস্থা রেখে উদাসীন মেঘ থেকে বৃষ্টি নামিয়েছি। ফসল তুলেছি ঘরে।
আজ কেন তবে মুহূর্তের দুর্বলতায় একটা দামি প্যাডেড ব্রা পরে নিজেকে কৃত্রিমভাবে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছি?
কিছু কামুক আর লম্পট পুরুষকে নিজের বানানো ব্রেস্ট দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা কি খুব প্রয়োজন? ছিঃ, ছিঃ জাগরী, এসব বিকৃত ভাবনা মাথায় ঢোকার আগে তোমার আরো একবার আগুনে পুড়ে মরা উচিত ছিল।
এতকালের সমস্ত লড়াই, সমস্ত চোখের জল, তোমার উজ্জ্বল সমস্ত মার্কশিট জলে ভাসিয়ে দাও। মরো তুমি।