Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20220620-092830657.jpg]

(১৬)

বাথরুম থেকে মানিক সামন্তর কোলে চেপে বেরোনো নগ্নিকা অরুন্ধতীর ভয়ঙ্কর আকর্ষণীয় রূপ দেখে পুনরায় যৌনতাড়িত হয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর কামরাজ আবার তাকে সঙ্গমের জন্যে আহ্বান জানালো। শরীরে আর একটুও শক্তি অবশিষ্ট না থাকায় বিধ্বস্ত, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অরুন্ধতীর অনেক অনুনয়ের পর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলেও তার পরিবর্তে জিএম সাহেবের প্রকাণ্ড পুরুষাঙ্গ, পেচ্ছাপ করার ফুটো, লোমশ বিচিজোড়া আর দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা কুঁচকিদ্বয় চেটে চুষে পরিষ্কার করে দিতে হলো গোগোলের মাম্মামকে।

ঘড়িতে প্রায় সাড়ে ছ'টা বাজতে চললো .. বাড়িতে ফেরার জন্য উসখুস করতে লাগলো অরুন্ধতী .. নিজের নগ্ন শরীরে বিছানার উপর পড়ে থাকা একটা চাদর জড়িয়ে নিয়ে ঘরে উপস্থিত দুই উলঙ্গ দুর্বৃত্তের উদ্দেশ্যে মৃদুস্বরে বললো "আমার জামা কাপড়গুলো যদি পেতাম .."

"পাবে বৈকি .. অবশ্যই পাবে .. আগের দিনে তোমার পড়ে আসা শাড়ি আর ব্লাউজটা ছিঁড়ে গিয়েছে। সায়াটাও দেখো আধভেজা হয়ে বাথরুমের দরজার পাশে পড়ে আছে। তবে তোমার ব্রা আর প্যান্টি দুটো কিন্তু আমরা আমাদের কাছে রেখে দিচ্ছি সুভেনিয়ার হিসেবে .. ওটা কিন্তু ফেরত পাচ্ছো না। তাই তোমার জন্য একসেট নতুন জামা-কাপড় এসেছে .. সেগুলোই এখন পড়তে হবে তোমাকে আমাদের সামনে।" গোগোলের মাম্মামের গা থেকে বলপূর্বক চাদরটা সরিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় কথাগুলো বললেন বিধায়ক মশাই।

অরুন্ধতীকে নিয়ে মিস্টার সামন্ত যখন বাথরুমে গিয়েছিলেন তখনই অনিরুদ্ধ স্ত্রীর কাপড়জামা আনিয়ে এই ঘরে রেখে দিয়েছিলো কামরাজ। 'তার জন্য কি পোশাক এই দুই দুর্বৃত্ত এনেছে .. আবার নতুন কোনো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হবে নাকি' - এটা ভেবে মনে মনে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল অরুন্ধতী। তারপর যখন সোফার উপর রাখা একটি নতুন এক্সপেন্সিভ হাল্কা গোলাপি রঙের তাঁতের শাড়ি, হ্যান্ডলুমের থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ, তার সঙ্গে গোলাপি পেটিকোট এবং সাদা রঙের উর্ধাঙ্গের ও নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস চোখে পড়লো .. তখন কিছুটা ধাতস্ত হলো অরুন্ধতী।

কিন্তু এই দুই মাঝবয়সী উলঙ্গ পুরুষের সামনে তাকে পোশাক পরতে হবে এটা মনে করে পুনরায় লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে গেলো সে। দুই নিষ্ঠুর নারীমাংস লোভী জানোয়ারকে অনেক অনুনয় করেও যখন কোনো লাভ হলো না .. তখন তাদের সামনেই নিজের নগ্ন দেহের উপর প্রথমে প্যান্টি, তারপর ব্রা, তারপর পেটিকোট সবশেষে ব্লাউস এবং শাড়ি পড়তে বাধ্য হলো সে .. গোগোলের মাম্মামের পোশাক পরিধানের সম্পূর্ণ ক্রিয়া-কলাপ দুই মাঝবয়সী ষন্ডামার্কা উলঙ্গ পুরুষ বসে বসে উপভোগ করছিলো।

"শোনো .. আজ তো রবিবার .. তাই কলেজ ছুটি .. আজ কলেজের গভর্নিং বডির মিটিং ডাকা সম্ভব নয় এটা তো বুঝতেই পারছো .. কিন্তু ওদিকে একটা কাণ্ড ঘটে গিয়েছে .. আমিও এইমাত্র খবর পেলাম .. তাই তোমাকে এখন জানাচ্ছি .. আমি শুনে তো একেবারে অবাক হয়ে গেছি .. ওদের তো আগামীকাল ফেরার কথা ছিল মন্দারমনি থাকে .. কিন্তু গতকাল রাতে ওরা রওনা দিলো কেনো বুঝতে পারছি না .. যাইহোক, সম্ভবত তোমার স্বামীর রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে .. উল্টোদিক থেকে একটা ট্রাক এসে ওদের গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে .. যেটুকু খবর পেলাম, বৈশালী স্পটেই মারা গিয়েছে .. অনিরুদ্ধ এখনো বেঁচে আছে .. শুনেছি গতরাতে একটা এমারজেন্সি অপারেশন করতে হয়েছে ওর .. অবস্থা খুব একটা ভালো নয় .. তবে আবারো বলছি, পুরোটাই শোনা খবর .. ঠিক না ভুল এখনই বলতে পারছি না .. কলকাতার কাছে সিটি হসপিটালে সম্ভবত তোমার স্বামীকে রাখা হয়েছে .. অফিস থেকে কয়েকজন স্টাফকে পাঠানো হয়েছে খবর নিয়ে আসার জন্য .. তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও .. আমি লোক দিয়ে তোমাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি .. তবে তোমার আর কি .. তুমি তো আর ভালোবাসো না তোমার স্বামীকে আর সেও তোমাকে ভালোবাসে না .. তাই যা হওয়ার ভালোই হয়েছে .. এবার থেকে আমরাই দু'জন দিনরাত ডিউটি দেবো তোমার হাসবেন্ড হিসেবে .. " খবরের কাগজ পড়ে বা টিভিতে কোনো অচেনা ব্যক্তির দুর্ঘটনার খবর শুনে আমরা  ভাবলেশহীন ভাবে সম্পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করলেও সামান্য দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু এক্ষেত্রে সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো কামরাজ।

"চুপ করুন .. চুপ করুন আপনারা .. আমার সর্বস্ব ভোগ করেও মনের সাধ মেটেনি আপনাদের? ছিঃ ছিঃ এতটা নিষ্ঠুর আপনারা? আমার স্বামী ওখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আর আপনারা হাসছেন? এই খবরটা জানার পরেও তখনই আমাকে না জানিয়ে একটু আগেও আমার সঙ্গে নোংরামি করলেন? নরকেও স্থান হবে না আপনাদের .. আমার স্বামী যাই করুক না কেন, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আর আপনাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে আমি যে পাপ করেছি তার শাস্তিস্বরূপ ঈশ্বর আজ এইরকম শাস্তি দিলেন আমাকে .. আমি এই মুহূর্তে বাড়ি যাবো, তারপর ওখান থেকে গোগোলকে নিয়ে সিটি হসপিটালে রওনা হবো .." অরুন্ধতীর মুখে দৃঢ় কন্ঠে সাবলীল ভঙ্গিতে এইরূপ কথা শোনার পর এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে কিছু বলতে চাওয়া মানিক সামন্তকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে মিস্টার কামরাজ গোগোলের মাম্মামকে জানিয়ে দিলো - এটা একটা দুর্ঘটনা, এতে তাদের তো কিছু করার নেই। তার মানসিক অবস্থার কথা তারা বুঝতে পারছে, তাই সে যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে। কোম্পানির গাড়ি সর্বদা তাদের সঙ্গে থাকবে।

আসলে কামরাজ এন্ড কোং ভালো করেই জানে একদা প্রতিব্রতা এবং রক্ষণশীলা এই সতীলক্ষী জননী এদের দ্বারা রচিত চক্রব্যূহে তো বটেই, এমনকি যৌন আকাঙ্ক্ষার গোলকধাঁধায় আষ্টেপৃষ্ঠে এতটাই জড়িয়ে গিয়েছে যে সেখান থেকে তার মুক্তি একপ্রকার অসম্ভব। শুধু একবার অনিরুদ্ধ চোখ বুজলেই পুরো ব্যাপারটা তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তাই সাময়িক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা অনমনীয় ব্যবহারে যাতে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ বা ছন্দপতন না হয় তাই কামরাজের এইরূপ নরম মনোভাব।

★★★★

আগের দিন রাতে সিটি হসপিটালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দশ নম্বর বেডের পেশেন্টের মাথায় ব্যান্ডেজ করার সময় ডাক্তারবাবু এবং কর্মরতা মেট্রনের পিছন থেকে উঁকি মেরে এক ঝলক তার মুখটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল সুজাতার। আজ সকালে ওয়ার্ডে ডিউটিতে এসেই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য দশ নম্বর বেডের সামনে দাঁড়িয়ে অনিরুদ্ধর ব্যান্ডেজ করা ক্ষতবিক্ষত মুখটা দেখে চমকে উঠলো সে।

স্মৃতির অতলে ..

প্রতি বছরের মতোই সেবারও কনকপুর গ্রামে মুলাজোরের বিখ্যাত মেলা বসেছিল। সুজাতার বয়স তখন উনিশ কি কুড়ি বছর হবে .. কলেজের গন্ডি সবে পেরিয়েছে। শরীরে যৌবনের চিহ্নগুলি ধীরে ধীরে ফুটে উঠলেও তার কিশোরী মন চঞ্চলা হরিনীর মতো অস্থির .. সর্বদা নেচে বেড়াতে উদ্যত। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে সুজাতা। সে বাড়ির বড় মেয়ে .. তার নিচে শ্যামলী আর বিথী দুই বোন .. তারা এখনো কলেজে পড়ছে। তিন মেয়ের পড়াশোনা এবং বিয়ে নিয়ে তাদের মা-বাবার চিন্তার শেষ ছিলো না। সন্ধে হলেই পাড়ার অন্যান্য সমবয়সী বান্ধবীদের সঙ্গে মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় চড়বে, বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটাবে, পাঁপড় ভাজা আর কড়া রসের জিলিপি খেতে খেতে কাঁচের চুড়ি কিনবে, সবশেষে মেলার অন্যতম আকর্ষণ 'ভানুমতির খেল' দেখে বাড়ি ফিরবে .. এই সবকিছু ভেবে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠছিল সুজাতা।

সন্ধ্যে হতে না হতেই একটি পাটভাঙা শাড়ি পড়ে সেজেগুজে বান্ধবীদের সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলো সুজাতা। বরাবরই পড়াশোনার বিষয় এবং গুরুগম্ভীর বাক্যালাপ থেকে দূরে থাকা সুজাতা এবারে প্রথম মেলায় অনুষ্ঠিত হতে চলা একটি আলোচনা সভার আয়োজন এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলো। তবুও বন্ধুদের জোরাজুরিতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপাতভাবে ভিড় কম থাকা মঞ্চের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয় সুজাতা .. সেখানে তখন কনকপুর গ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে একটি বক্তৃতা হচ্ছিলো। মাইকে কথা বলা ব্যক্তির ব্যারিটোন ভয়েস প্রথম আকৃষ্ট করে তাকে। পরবর্তীতে গায়ের রঙ অত্যধিক ফর্সা, দীর্ঘকায়, মাথায় কোঁকড়ানো ঘন কেশযুক্ত, স্বাস্থ্যবাণ, কটা চোখের অধিকারী, বছর ছাব্বিশের ছেলেটির দিকে চোখ পড়তেই মোহিত হয়ে গিয়েছিল সুজাতা। বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর মাইকের অ্যানাউন্সমেন্টে জানতে পেরেছিলো ছেলেটির নাম অনিরুদ্ধ।

মাটি থেকে মাত্র আধ হাত লম্বা মঞ্চের একদম গা ঘেঁসে দাঁড়িয়েছিল সুজাতা। অনিরুদ্ধর দৃষ্টি গেলো কিশোরীটির দিকে। সুজাতার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না অনিরুদ্ধ নিজেও।

সেদিন বাড়িতে ফিরে রাতে ঘুম আসতে অনেকটা দেরি হয়েছিল সুজাতার। বিছানায় শুয়ে বারবার এপাশ-ওপাশ করতে থাকায় "কি রে দিদি .. আজ কি হলো তোর? নিজেও ঘুমাচ্ছিস না আর আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছিস না, ভাল্লাগেনা .." তার পাশে শুয়ে থাকা ছোট বোন শ্যামলীর বিরক্তিতে আর উসখুস না করে নিজের মন শান্ত করে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল সুজাতা। পরের দিন সন্ধ্যার কিছু আগেই মেলায় গিয়েছিলো সে .. তবে বান্ধবীদের সঙ্গে নয়, একাই গিয়েছিলো। সেদিন কোনো আলোচনা সভা না থাকলেও অনিরুদ্ধও এসেছিল সেখানে। নিতান্তই মেলার পরিবেশ উপভোগ করার জন্য, নাকি কোনো কিছু দেখার অভিলাষ নিয়ে তা সে নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলো না। ভাঙা মঞ্চের সামনে দেখা হয়েছিল দু'জনের।

আলোচনা সভা আর না থাকার দরুন মঞ্চ ভাঙা হলেও অনিরুদ্ধ আর সুজাতার পরস্পরের মনের মধ্যে একটা অদৃশ্য সেতুবন্ধন হয়তো গড়ে উঠেছিল সেই দিনই। এরপর সময় কেটেছিল ঝড়ের গতিতে। এক একটা দিন, একেক রকম ভাবে তারা মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেরিয়েছিল বাধাহীন মুক্ত আকাশে। কিন্তু সেই ভালোবাসার বুনিয়াদ কি আদৌ দৃঢ় ছিল! আদৌ কি কোনো কমিটমেন্ট ছিল পরস্পরের মধ্যে! নাকি তারা পরস্পরের কাছে এসেছিলো ধূমকেতুর ন্যায়, অজস্র প্রতিশ্রুতির বন্যাতে, ভাসিয়েছিলো সমুদ্র লহরী, দুর্নিবার আকর্ষণের ছোঁয়াতে ..

কনকপুর রেল স্টেশনের কাছে একটি ছোট মুদিখানার দোকান ছিলো সুজাতার বাবা হরিহর বাবুর। কষ্টেসৃষ্টে চলে যেতো তাদের সংসার। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে ভোগা হরিহর বাবুর চেহারা ক্রমশ ভাঙতে শুরু করলো। একসময় দোকানে যাওয়া বন্ধ হলো। একদিন রাতে বাড়াবাড়ি রকমের পিঠের নিম্নভাগের যন্ত্রণা নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে। দিন সাতেক লড়াই করার পর হরিহর বাবু চলে গেলেন এই পৃথিবী ছেড়ে। অকূল পাথারে পড়লো তার পরিবার। পুরুষবিহীন পরিবারের বাড়ীর বড় মেয়ে যেহেতু সুজাতা, তাই তাকেই তো এবার সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে .. এমনটাই মনে করতে লাগলো সবাই, বিশেষ করে তার পিসি লতিকা দেবী। ঠিক হলো নার্সিং ট্রেনিং নিতে কলকাতার কাছে তার ছোট কাকার বাড়ি গিয়ে থাকতে হবে তাকে। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে কোনো প্রবেশিকা পরীক্ষা ছাড়া অথবা কোনো সোর্স ছাড়া সরকারি ট্রেনিং নেওয়া সম্ভব নয়। শহরের সিটি হসপিটালে প্রাইভেট নার্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিলো তার ছোট কাকা। কিন্তু তার জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা জোগাড় করবে কোথা থেকে এই সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া পরিবার! মুদিখানার দোকানটা জলের দরে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে যেটুকু পুঁজি পাওয়া গেলো তার পুরোটাই সুজাতার ট্রেনিংয়ের পিছনে খরচ হয়ে গেলো। পরিবার যখন তার জন্য এতকিছু করছে তখন তারও দায়িত্ব থেকে যায় পরিবারের জন্য কিছু করার।

মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উড়তে চাওয়া একটি স্বাধীন পাখির মন এবং নিজের জীবনের প্রথম ভালবাসা .. এই সবকিছুকে গলা টিপে হত্যা করে দু'বছরের জন্য কলকাতা পাড়ি দিলো সুজাতা। মাস কয়েকের ব্যবধানে বাড়িতে আসতো সে। ততদিনে অনিরুদ্ধ বর্ধমানের কাছে একটি ফার্মে চাকরী পেয়ে এখান থেকে চলে গিয়েছে। তার কাছে মোবাইল ফোন না থাকার জন্য কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি সে অনিরুদ্ধর সঙ্গে। বছর খানেকের মাথায় খবর পেলো তার পিসি লতিকা দেবীর বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে থাকা উনার ভাগ্নি তার একমাত্র ভালো বান্ধবী অরুন্ধতীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। দু'দিনের ছুটি নিয়ে কনকপুরে এসেছিল সুজাতা। জলপানির পয়সা জমিয়ে এবার সে একটা কিপ্যাড মোবাইল কিনেছে। যে করেই হোক তাকে অনিরুদ্ধর নম্বরটা যোগাড় করতে হবে .. অনেক কথা বলার আছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ধরতে হবে তাকে, তারপর সবকিছু সামলিয়ে নিজের ভবিষ্যৎটাও ঠিক করতে হবে।

গোধূলি লগ্নে বিয়ে হয়েছিল অরুন্ধতীর। সুজাতার উপর দায়িত্ব পড়েছিল তার দিদি তথা বান্ধবীর হবু বরকে অভ্যর্থনা জানানোর। বরযাত্রী আসার পর  গাড়ি থেকে বর বেশে অনিরুদ্ধকে নামতে দেখে চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে গেলো সুজাতা। এটা কি দেখছে সে? কাকে দেখছে? মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তার .. মনে হলো সে এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে মাটিতে। নিজেকে ধীরে ধীরে সামলে নিয়েছিল সুজাতা, তারপর তার ছোট বোন বীথিকে বর এবং বরযাত্রীদের অভ্যর্থনার দায়িত্ব দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। নিজের বাড়ি গিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে সন্ধের ট্রেন ধরে সোজা কলকাতায়।

সে জানে যদি অনিরুদ্ধ তাকে দেখতে পেতো, তাহলে অবশ্যই রিয়্যাক্ট করে উঠতো। তাতে তাদের সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ তো হতোই না উল্টে তার প্রিয় বান্ধবীর বিয়েটা ভেঙে যেতো এবং তার দজ্জাল পিসিমা অর্থাৎ অরুন্ধতীর মামীর গঞ্জনা শুনতে হতো চিরকাল। তার চেয়ে এটাই বরং ঠিক হয়েছে। ভালোবাসার মানুষটিকে শুধু নিজের করে পেলেই জীবন সার্থক হয় না, অনেক সময় আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অপরকে দিয়ে দেওয়ার মধ্যেও অনেক বড় সার্থকতা লুকিয়ে থাকে।

তারপর, সময় নদীর স্রোতের মতো বয়ে গিয়েছে। একসময় তার মনের মণিকোঠায় সুজাতা জায়গা করে নিলেও বিবাহের পর অনিরুদ্ধর জীবনটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছিল। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহ এবং কর্মক্ষেত্রে উন্নতির নেশা ধীরে ধীরে একদম অন্য মানুষে পরিণত করেছিল তাকে। এদিকে সুজাতাও ততদিনে নিজের নার্সিং ট্রেনিং খুব ভালোভাবে শেষ করে সিটি হসপিটালেই জুনিয়র নার্স হিসেবে চাকরিতে ঢুকেছিল। তার নিচের দুই বোন শ্যামলী এবং বিথীর বিয়ে দিয়ে মা'কে এনে হসপিটাল কোয়ার্টারে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল সে। কিন্তু পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে যাবে না এই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলো তার মাতৃদেবী। বছর তিনেক আগে মায়ের মৃত্যুর পর এখন ঝাড়া হাত-পা অবিবাহিতা সুজাতা। হসপিটাল কোয়ার্টারের দু-কামরার ঘরের মধ্যেই তার একার ছোট্ট সংসার, সপ্তাহান্তে কনকপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখাশোনা করে আসে।

★★★★

"পুরোটা ষড়যন্ত্র .. আমি .. আমি সবকিছু বুঝতে পারছি এখন .. অরু  অরু .. কোথায় তুমি? গোগোল কোথায় .. ওকে একটু আমার কাছে নিয়ে আসবে? কতদিন দেখিনি ওকে .." অনিরুদ্ধর জরানো গলার আওয়াজে চমক ভাঙলো সুজাতার।

- "পেশেন্টের জ্ঞান এসে গেছে .. বাড়ির লোককে এবার খবর দিতে হবে .."

- "আরে এখানে উনাকে নিয়ে আসার পর থেকেই তো বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে .. কিন্তু উনার স্ত্রীর ফোন নম্বর আমাদের দেওয়া হয়নি অফিসের তরফ থেকে। অফিসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে কেউ বা কারা এখানে আসছ .. এটুকু খবর পেয়েছি।"

অনিরুদ্ধর জড়ানো গলায় অস্পষ্ট কথাগুলো শুনে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন কানে আসাতে .. দুটোর মধ্যে একটা মেলবন্ধন করে যোগসুত্র খোঁজার চেষ্টা করছিল বর্তমানে সিটি হসপিটালের এমারজেন্সি ওয়ার্ডের মেডিসিন বিভাগের ভারপ্রাপ্তা সিনিয়ার সিস্টার সুজাতা দাস।

"এ কি .. এ কি .. আমার পাআআআ .. আমার ডান পা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না কেনো? হে ঈশ্বর .. এতটা নিষ্ঠুর হতে পারলে তুমি আমার সঙ্গে? আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি? হ্যালো .. আপনারা কি কেউ শুনতে পাচ্ছেন .. আমি আমার ডান দিকের পা টা খুঁজে পাচ্ছি না .. আমাকে একটু জল দিন না .. গলাটা কি রকম শুকিয়ে আসছে আমার .." অনিরুদ্ধর আর্তনাদে ভাবনার ঘোর কাটলো সুজাতার। ততক্ষণে ডক্টর ত্রিপাঠী আর আনাস্তেসিয়া বিভাগের সিস্টার তাপসী দি চলে এসেছেন।

"ও মাই গড .. পেশেন্টের সেন্স ফিরে এসেছে .. সিস্টার সুজাতা আপনি এখানে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন কেন .. থিওপেন্টাল ইনজেকশনটা নিয়ে আসুন প্লিজ .. এখনো বাড়ির লোক এসে পৌঁছায়নি .. এই অবস্থায় ওনাকে কন্ট্রোল করা আমাদের পক্ষে খুব মুশকিল হয়ে যাবে .." ডক্টর ত্রিপাঠীর কথায় মেডিসিন বিভাগে দ্রুত গতিতে চলে গেলো সুজাতা।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ইনজেকশন দেওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লো অনিরুদ্ধ। তারপর গায়ের চাদরটা নিচের দিক থেকে সরিয়ে সুজাতা দেখলো হাঁটুর নিচ থেকে ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে অনিরুদ্ধর। হাঁটুতে জড়ানো ব্যান্ডেজ এবং ব্যান্ডেজের উপর কিছু রক্ত জমাট বেঁধে আছে এখনো। একদা তার ভালোবাসার মানুষের এইরূপ করুণ পরিণতি দেখে দু'চোখ জলে ভিজে উঠলো তার। পরবর্তীতে ডক্টর ত্রিপাঠীর কাছ থেকে সে জানতে পারলো - খড়্গপুরের কাছে হাইওয়েতে একটি ট্রাক এবং এদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই ভদ্রলোকের সঙ্গিনী এক মহিলা ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর জখম এই ব্যক্তির ডান পা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেটা বাদ না দিলে আরো ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যেত।

ততক্ষণে অনিরুদ্ধর অফিস কর্তৃপক্ষ হসপিটালে পৌঁছে তাকে সরকারিভাবে সনাক্ত করেছে এবং তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অনিরুদ্ধর সঙ্গিনীর মৃত্যুর খবর শুনে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো সুজাতার। 'তবে কি সে তার পিসির একমাত্র ভাগ্নী তার প্রিয় বান্ধবী অরুন্ধতী? কিন্তু তা কি করে হবে, হসপিটালের স্টাফেরা যে বলছিলো - উনার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভবপর হচ্ছে না। তারমানে অরুন্ধতী ওর সঙ্গে ছিল না .. তাহলে ওই মহিলাটি কে?' - দুশ্চিন্তার অতল জলে ডুবে গেলো সুজাতা।

★★★★

এমনিতে এই সময় মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের অন্তর্গত সেকেন্ড ফ্লোরে ফার্মেসির স্টোররুমে থাকার কথা সুজাতার। কিন্তু আজ সকালে এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে আসার পর থেকে সে একমুহূর্তের জন্যও অনিরুদ্ধকে নিজের দৃষ্টির বাইরে যেতে দেয়নি সে।

তখন প্রায় সকাল পৌনে দশটা বাজে। ঘুমন্ত অনিরুদ্ধর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো সুজাতা। ঠিক সেই সময় গোগোলের হাত ধরে উদভ্রান্তের মতো এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে প্রবেশ করলো অরুন্ধতী। দীর্ঘ বারো বছর পর নিজের প্রিয় বান্ধবীকে দেখে এক মুহূর্তের জন্যও চিনতে অসুবিধা হয়নি তার। তৎক্ষণাৎ অনিরুদ্ধর বেডের পাশে রাখা চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে অরুন্ধতীকে জড়িয়ে ধরলো সুজাতা।

'তার স্বামীর কি হয়েছে .. কি করে এবং কোথায় এই দুর্ঘটনা ঘটলো .. অপারেশন করতে হলো কেনো .. শারীরিকভাবে এখন তার স্বামী কতটা স্থিতিশীল .. কবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে .. সুজাতা এখানে এভাবে কি করে? এতদিন সে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি কেনো এবং ফোন নম্বর পর্যন্ত দেয়নি কেনো .. তার ছোট বোন তথা বান্ধবী সুজাতা কি বিয়ে করেছে ?" এই সমস্ত প্রশ্নোত্তরের পালা শেষ করে অরুন্ধতী অপেক্ষা করতে লাগলো তার স্বামীর ঘুম ভাঙার।

বারোটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো অনিরুদ্ধর। এমার্জেন্সি ওয়ার্ড থেকে তাকে বর্তমানে একটি কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে। প্রথমবার জ্ঞান ফেরার সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলেও এখন চোখের সামনে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলো তার সন্তান গোগোলের নিষ্পাপ মুখটি, তার পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী .. যাকে সে জীবনে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি এবং সবশেষে অরুন্ধতীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুজাতাকে দেখে তৎক্ষণাৎ চিনতে পেরে কিছুটা বিস্মিত হয়ে গেলো অনিরুদ্ধ .. এটাও কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?

কিন্তু এখন অতীতের স্মৃতি খুঁড়ে বের করার সময় নয় .. তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ যথেষ্ট সঙ্কটজনক অবস্থায় আছে .. চারপাশে শত্রুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। গতকাল হাইওয়েতে অ্যাক্সিডেন্টের পর সে মারা গেছে বা অজ্ঞান হয়ে গেছে এই ভেবে দু'জন দুষ্কৃতীর মুখে যে কথোপকথন সে শুনেছে .. এক্ষুনি তা ব্যক্ত না করলে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।  তার শরীরের যা অবস্থা তাতে সে প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকি জীবনটা তাকে হুইলচেয়ারেই কাটাতে হবে। সবকিছুই তার পাপের ফল এটা স্বীকার করতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করে না অনিরুদ্ধ। তার অনেক কথা বলার আছে .. সব কিছু বলতে হবে এখন তাকে। কেবিনের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে বলে গোগোলের উপস্থিতি উপেক্ষা করেই তার স্ত্রী অরুন্ধতী আর সুজাতার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে শুরু করলো অনিরুদ্ধ।

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 16 users Like Bumba_1's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 20-06-2022, 08:58 PM



Users browsing this thread: DrStrange, 31 Guest(s)