Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
পদক্ষেপ

 
মুখে বেশ শান্ত হয়ে থাকলেও মনের মাঝে ঝড় বইছে মুদ্রিকার
কাল রাতেও এক্কেবারেই ভাল ঘুম হয়নি।
খালি নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেন কিছুতেই সম্পর্কটা থেকে বেরোতে পারছে না ? আর যতবার এটা ভাবছে - বুকের ভেতরটা যেন জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ওর।
যখন এক অফিসে কাজ করত আয়ানের সাথে - ভাল লাগত আয়ানকে। সদ্য বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাবার বন্ধুর কাম্পানিতে 'ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি' হিসেবে জয়েন করেছিল আয়ান। সেখানেই সেলসে ছিল মুদ্রিকা। কাজের সুবাদেই কথাবার্তা হত। তারপর দুজন দুজনকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলো করত। তখনও শুধুমাত্র কলিগ ছিল দুজন। তারপর তো আয়ান ওর বাবার কোম্পানিতেই জয়েন করে নিল। মুদ্রিকার কয়েকদিনের ভাললাগা ওখানেই থেমে গেছিল। সেলসের চাকরি, অবিরাম টার্গেট, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকত। এরমধ্যেই দুহাজার কুড়ির সেই বিখ্যাত বাজে সময়টা এলো। সারা বিশ্ব বাড়িতে বন্দী! ওয়ার্ক ফ্রম হোম চললেও ওর কাজের যা ধরণ, তাতে বাড়ি থেকে কাজ করা সেভাবে সম্ভব না - আর সেই ফাঁকেই সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে সারাক্ষণ সময় কাটাতো মুদ্রিকা। সারাদিন কাজ নেই, তাই রাতে ঘুম আসতে চাইত না। তখন আরও বেশি করে ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম! তেমনি এক রাতে ওকে বেশ অবাক করে দিয়েই মেসেজ এসেছিল আয়ানের "হেই! অ্যাওয়েক?" বেশ একটু অবাক হলেও "ইয়েস" লিখে পাঠিয়েছিল ও। আর, মনে মনে ভেবেছিল "বোকারাম! দেখছিস অনলাইন আছি - ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চ্যাট করছি নাকি!"
"মুঝে ভী নিন্দ নেহি রাহি হ্যায়!" আয়ানের মেসেজ।
"হোয়াই?"
"তুম যো জাগি হুয়ি হো!"
আচ্ছা! ফ্লার্ট করছে আয়ান আগরওয়াল!
তা, কোন মেয়ে না চায় একটু যোগ্য পুরুষের অ্যাটেনশান পেতে? তাই মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল মুদ্রিকার। আর কথা থেকেই তো কথা বাড়ে। দুজনের মধ্যে অনেক কথাই হয়ে গেল। মুদ্রিকা জানতে পারল আয়ানের ওর গালের টোলটা খুব ভাল লাগে বরাবর। আর আয়ানও জানতে পারল ওর স্মার্টনেস মুদ্রিকার পছন্দ ছিল আগে থেকেই।
ঘি আর আগুন এক জায়গায় হলে যা হয়, তাই হয়েছিল দুজনের। চ্যাট পেরিয়ে ভিডিও কল। ভিডিও কল পেরিয়ে দেখা হওয়া। প্রথম 'ডেট' এই অনেকটা কাছে চলে এসেছিল দুজনেই। তারপর মুদ্রিকা চেয়েছিল বেরিয়ে আসতে, ভুলে যেতে। কিন্তু পারেনি। ভবিষ্যতে কিছু হবার নেই - দুজনের বেড়ে ওঠা, পারিপার্শ্বিক পরিমন্ডল সবটুকু আলাদা জেনেও কী একটা কারণে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে পড়েছিল আয়ানের সাথে। আর, যখন দেখা হত দুজনের, নিভৃতে, আয়ানের কাছে হয়ে উঠত এই পৃথিবীর স্বপ্নকন্যা। ওই মুহূর্তগুলো বড্ড দামী ছিল ওর কাছে। আয়ানের স্পর্শ, আশ্লেষ মনে পড়লেই পেটের ভিতর যেন প্রজাপতি উড়ত ওর। তবে, হারানোর ভয়টাও ছিল। বারবার মনে হত "ওর বিয়ে হয়ে গেলে কি হবে?" আয়ানকে জিজ্ঞেস করলে হেসে বলত "আব সে দিমাগ খারাব মত করো। লেট আস এনজয় দিস মোমেন্ট। দিস ইন্টিমেসি।" আর, সবটা ভুলে যেত ও। স্বীকার করতে বাধা নেই, একলা ঘরের কোণে সেই 'ইন্টিমেসি' কথা ভেবে শিহরিত হয়েছে বহুবার।
এভাবেই চলছিল। নিজেকে বোঝাত মুদ্রিকা "এটা ভালবাসা না, মোহ। আমাকে পারতে হবে!" কিন্তু আয়ানের ফোন এলেই পাগল হয়ে যেত ও। আবার সেই শিহরণ... সেই ভাললাগা...
মাসখানেক আগে আয়ান নিজে থেকেই ফোন করে একথা, সেকথার পরে জানাল ওর বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন ওর। মে মাসেই বিয়ে।
এমন একটা দিন যে আসবেই, জানত মুদ্রিকা। তবু, কী যে কষ্ট হচ্ছিল! চোখ ভেসে যাচ্ছিল জলে। আর, নিজেকেই বারবার দোষ দিয়ে ভাবছিল "কেন করলাম এরকম? এরচেয়ে হয়ত অন্য কারো সাথে আলাপ হলে ভাল হতো..."
এতসব ভেবেও বারবার স্টক করছিল আয়ানের প্রোফাইল মুদ্রিকা। ওর ছবি দেখবে বলে। 'ওদের' ছবি দেখবে বলে। আর, 'করব না করব না' করেও ফোন করেছিল আয়ানকে মুদ্রিকা আরেকবার। আয়ান খুব ভাল ভাবে কথা বলেছিল ওর সাথে। বারবার বলছিল "আই মিস ইউ" আর তাতেই গলে যাচ্ছিল , ভিতরে ভিতরে। আয়ানের বিয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে কষ্টটা বেড়ে গেছিল। ঠিক কষ্ট না - শূন্যতা। বারবার হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি দেখছিল আয়ানের। আর কাল মেসেজ করেছিল আয়ানকে "কনগ্যাচুলেশানস" লিখে। আর প্রায় সাথে সাথেই ভিডিও কল করেছিল আয়ান। আর সেই কল থেকেই আবার আগের মতো সবকিছু... টেকনোলজির সৌজন্যে কাছে আসা...
কিন্তু আজ সকাল থেকেই নিজেকে খুব ছোট লাগছে ওর। বারবার মনে হচ্ছে আরেকজন মানুষকেও আঘাত করল, তার অজান্তে। কিন্তু, বেরোতে পারল না কিছুতেই। ছিঃ! এত ঠুনকো ! আবার কিভাবে বেরোবে সেটাও বুঝতে পারছিল না ... এতটুকুও মনের জোর নেই যেন ওর...
অলস হাতে নিউজপেপারটা তুলে নিল মুদ্রিকা। ইচ্ছে করছে না তাও একটু চোখ বোলানো। মনকে একটু ঘোরানোর চেষ্টা আর কি!
হঠাৎ চোখে পড়ল একটা খবর। একটি মেয়ের কথা। সাহসিনী মেয়েটির চাকরি পাবার জন্য তার 'স্বামী' তার ডান হাত কেটে দিয়েছে। আর মেয়েটি সামান্য সুস্থ হয়েই বাম হাত দিয়েই লেখার চেষ্টা করছে। কারণ মেয়েটির নিজের প্রতি ভরসা আছে। মেয়েটি জানে, ওকে পারতে হবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটি মেয়ে, তাও সে কত আত্মবিশ্বাসী।
আচ্ছা, মুদ্রিকাও তো পারে এমনি হতে? তো ভাল চাকরি করে। বাবা আছেন। সম্ভাবনা আছে ওর মধ্যে যথেষ্ট। একটা টক্সিক, না হতে পারা সম্পর্ক, একটা ঠকানোর সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারবে না?
পারবে... পারবে... পারতেই হবে...
বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেয় মুদ্রিকা। তারপর আয়ানকে ব্লক করে দিল।
নিজের জন্য এইটুকু পদক্ষেপ নেওয়াতেই যে কী অপার শান্তি...
 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 20-06-2022, 10:21 AM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)