Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

বাচ্চা গুলোর সাথে লালিও বাচ্চাদের মতই নেচে উঠল প্রায়। কিন্তু নগেনের মনে একটা কেমন ভয় জমাট বাঁধল। এও কি সম্ভব? আর ওই কয়েক মুহুর্তের জন্য চমকে যাওয়া টা? ছেলেটা কে দেখলে তো ভয় লাগে না। কিন্তু…… নাহ থাক। কাউকে বলল না কিছু। নাট্মন্দিরে হীরা কে ঘিরে আনন্দে মত্ত লালি আর বাচ্চা গুলো কে পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা দিল নগেন। মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন।                                                             


                                                                                                   পর্ব সাত

এই গ্রামে সকলেই কোন না কোন ভাবনা নিয়ে ঘুমতে যায় রাতে। যেমন নগেন জ্যাঠা ঘুমতে যায় এক রাশ চিন্তা নিয়ে। কে বলতে পারে আজকে বাঘমুড়ো তার বাড়িতেই হানা দিল না? বা অন্য কারোর বাড়িতে। হিসাব মতন, গ্রামের সব থেকে পূর্বে মহাদেবের বাড়ি। বাঘমুড়োর সব থেকে সহজ শিকার। কিন্তু বাঘমুড়ো সহজ শিকার ছেড়ে গ্রামের দক্ষিণ দিকে ঢুকল কেন সিধু ভটচাজ এর কাছে? পরেশ কে না হয় জঙ্গলেই পেয়ে গেছিল। কিন্তু মহাদেব এর বাড়ি ছেড়ে, সিধু ভটচাজ কেন? তারপরে, মহাদেবের বাড়ির পরে ছোট রূপকুন্ড পুকুর। তারপরই পরেশ, দিবা আর কলিদের গোয়াল। মহাদেবের মাটির গোয়াল ও আছে। সে সব ছেড়ে, বাঘমুড়ো, গ্রামের উত্তরে ফজলের গোয়াল ভেঙ্গে গরু তুলে নিয়ে গেল? কেন? তারপরে পরেশ কে বাঁচাতে একটা নেকড়ে এল। সেই নেকড়ে কে কেউ দেখে নি। সিধু ভটচাজ অজ্ঞান হবার আগে কোন ধনুর্ধারী বালক কে দেখেছে। তাকেও কেউ দেখে নি সিধু ভটচাজ ছাড়া।

-      হে মধুসূদন, কে প্রভু , রক্ষা কর আমাদের।

মশারীর ভিতরে মাথায় হাত ঠেকিয়ে মধুসূদন কে প্রণাম করে শুয়ে পড়ল নগেন জ্যাঠা। বস্তুত মনের ভাবনা, চিন্তা, ভিয় সব ই অর্পণ করে দিল কৃষ্ণ কে। কিন্তু ঘুম তো আসে না। এই গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ্য হিসাবে নগেনের দায়িত্ব কম কিছু না। গ্রমের মানুষ কটা কে বিপদে সাবধান করে দেওয়া তার তো বিশেষ কর্তব্য। তার কেন জানিনা মনে হচ্ছে বাতাসে সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রের একটা গন্ধ। তার বিশ্বাস বেশ ভালোরকম সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাঘমুড়ো।

কালকেও রাতে বাথরুম করতে গিয়ে অনুভব করেছিল বাতাসে একটা ভারী ভাব ছিল। অনেক দিনের পুরোন মানুষ উনি। বুঝতে পারেন। এখন কার লোকে বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু তন্ত্রসিদ্ধ মানুষ বাঁধন দিতে জানে। উনি প্রতক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছেন আগেও। যেমন বাতাসে একটা ঠান্ডা ভাব থাকবে। সামনে আলো জ্বললেও মনে হবে আলোর পরিমান কম। যেখানে ভয় লাগবে সেখানেই আলো সহসা কমে গিয়ে জায়গা টা অন্ধকার করে দেবে। হয়ত কিছু আড়াল থাকবে। কোন গাছ পালা বা কোন কিছু বড় জিনিসের আড়াল। কিন্তু জায়গা টা অন্ধকার থাকবে। কিন্তু সেই জায়গাতেই বাঁধন না থাকলে অন্ধকার জায়গা ও খুব পরিষ্কার দেখা যাবে। কেন দুর্গাপুজোর সময়ে হয় না? এতো বড় গ্রামে দুটো পুজো হয়, একটা পশ্চিম দিকে তো আরেক টা পূব দিকে। দুটো পুজো দুই প্রান্তে। সেই ছোট থেকে এ পাড়া ও পাড়া করতে দেখেছে নগেন পুরো গ্রামের লোক কে। নিজেও অন্ধকারেই যাতায়াত করেছে অসংখ্যবার। কই ভয় তো লাগে নি। কিন্তু অন্য সময়ে মাঝে মাঝে গা ছমছম করে। তখন বুঝতে হবে যে বাঁধন পড়েছে।

যখন যখন বাঘমুড়ো আঘাত করেছে, নগেনের মন ভয় পেয়েছে। যেমন আজকেও ঘুম আসছে না তার। কেমন একটা ভয় চেপে বসেছে মনের মধ্যে। কেমন একটা গা ছমছমানি ভাব। স্ত্রী অনেক কাল আগেই মারা গেছে নগেনের। একাই শোয়। মাঝে মাঝে এমন হয়। কিন্তু আজকের টা না জানি কেমন একটা অদ্ভুত ভয়। জীবনের কোন স্থায়িত্ব নেই, বার বার এই কথা টাই মনের মধ্যে গেঁথে গেছে যেন। অন্য দিকে ভাবনা শুরু করলেও ওই মৃত্যু ভাবনা বার বার মন কে বিচলিত করছে। তা তো সম্ভব নয়। বয়েস তো কম হলো না নগেনের। সে আসতেই পারে মৃত্যু। কিন্তু আজকে এই সময়ে, ভাবনা আসার কি কারণ। নাহ মন টা কেমন বাজে হয়ে গেলো। একটা গুমোট ভাব। কই বাইরে তো এই ভাব টা ছিলো না। এক আকাশ তারা দেখেছিল শুতে আসার আগে। এমনিতেই বর্ষা কাল। ছাদে যাওয়া যাক। বয়েস হয়েছে, প্রেশার বাড়তে পারে। আবার একটা ভয় কাজ করল মনের মধ্যে। টুকটুক করে ছাদে উঠে এল নগেন।

কই বেশ তো শীতল হাওয়া! কি সুন্দর ঝক ঝক করছে আকাশ। গুমোট ভাবটা একদম নেই আর। পূব দিকে চেয়ে দেখলেন, ঝকঝক করছে একেবারে। কে বলবে, চির অন্ধকার জায়গা ওটা। দুরের থেকেও দুরের তারা নজরে চলে এলো যেন নগেনের। নীচে শোবার ঘরে যে গুমোট ভাবটা ছিল, মরনের চিন্তা হচ্ছিল, সেটা ছাদে এসে আর একদম রইল না। চারদিক ঘুরে দেখতে লাগল নগেন। নগেনের বাড়ির পিছনে পুকুরের দিকে চেয়ে রইল নগেন। সহসা নুপুরের আওয়াজ পেল নগেন। না সাধারণ ঝুমঝুম আওয়াজ নয়। নুপুর পরে কারোর দৌড়ে যাওয়ার আওয়াজ। মনে হলো আওয়াজ টা বাড়ির সামনের দিক থেকে গলি হয়ে পুকুরের দিকে গেল। সাথে সাথেই আর একটা খচ মচ করে আওয়াজ। সেটাও ও মনে হলো পুকুরের ধার বরাবর এসে , নগেনের বাড়ির পিছনে দাঁড়ালো। চোর? তাও মেয়ে চোর? না হলে কোন ছেলে নুপুর পরে রাতে ঘুরে বেড়াবে? অবাক করা ঘটনা। সবাই বাঘমুড়োর ভয়ে পাগল আর কেউ চুরি করতে বেড়িয়েছে। যে চোর সেও তো গ্রামের ছেলে বা মেয়ে। সাবধান করে দিতে হবে। না হলে বেঘোরে মাথা খানা হারাতে হবে। নগেন দেরী করল না আর।

নেমে এলো নীচে। আলতো করে পিছনের খিড়কী দরজা টা খুলে বেড়িয়ে এল পুকুরের ঘাটের কাছে। বয়েস হয়েছে সেই নজর ও আর নেই। বেড়িয়ে আসার সময়ে দরজায় যে আওয়াজ হলো অল্প, তাতেই মনে হয় ওরা পালালো। সান বাঁধানো ঘাটে ওরা দাঁড়িয়েছিল। একজনের পায়ের কাদার ছাপ স্পষ্ট। এটা তার পায়ের ছাপ যে পুকুরের ধার দিয়ে ছুটে এসেছিল। পায়ে জল কাদা লেগেছিল তার। খালি পায়ে এসেছে। কিন্তু এতো বাচ্চা ছেলের পা। না খুব ছোট না। কিন্তু বারো তেরো বছরের ছেলের পায়ের ছাপ। পায়ের পাতা বেশ চওড়া। তাই পরিষ্কার নগেনের কাছে এটা ছেলের পায়ের ছাপ আর অল্প বয়সী ছেলে। নগেন জানে, ছেলেরা ফুটবল, ক্রিকেট খেলে। দৌড়াদৌড়ি করে। তাই পায়ের পাতা চওড়া হয়ে যায় মেয়েদের তুলনায়। ওদের পালিয়ে যাওয়া নগেন পরিষ্কার দেখতেও পেল যেন । সাথে ফিসফিসানি । ওরা মহাদেবের বাড়ির দিকে চলে গেল পুকুরের ধার ধরে। নগেন পিছু নিল। ভয় করছিল না এমন না। কিন্তু ভাবল যে, সবার বাড়ির পিছন এই দিক টা, চেঁচালে শুনতে তো পাবেই  কেউ না কেউ, আর বেড়িয়েও আসবে। কিন্তু এতো রাতে একটা বাচ্চা ছেলে আর একটা মেয়ে এই রকম ভয়ের সময়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?

নেহাত ই কি চুরি? নাকি অন্য গল্প আছে। গত বেশ কয়েকদিনের ব্যাপার স্যাপারে নগেনের বদ্ধমূল ধারণা কিছু না কিছু তো চলছেই এই গ্রামে। বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। কিন্তু গ্রামের ভিতরে ঢুকে এই ভাবে ডেকে নিয়ে যাবার মতন ঘটনা আগে তো ঘটে নি। এটা ভাবতেই নগেনের ভয় লাগল। আবার এটাও ভাবল, কই চারপাশে বাঘমুড়ো থাকার কোন লক্ষণ ই নেই। না শীতলতা বিরাজ করছে, না তো বাতাস ভারী। চারিদিকে ঝরঝরে একটা পরিবেশ। আর সে রকম ভয় ও করছে না। গা ছমছম নেই। বয়সের ভারে পাল্লা দিতে না পারলেও নগেন এর দৃষ্টির আড়ালে যেতে পারছে না চোর দুটো। কিন্তু যেখানে এসে আর দেখতে পেল না নগেন চোর দুটো কে , জায়গা টা ভালো না। নগেন উত্তেজনায় ভুলেই গেছিল ও পুব দিক বরাবর দৌড়চ্ছে। অলি গলি দিয়ে বেড়িয়ে যেখানে এসে থামল সেখান থেকে সামনে টা পুরোই ফাঁকা। বিশাল জলার মাঠ যেন ডাকছে নগেন কে সামনে।

শন শন করে হাওয়া দিচ্ছে। পাশের কচুবনের বড় বড় কচুর পাতা গুলো হাওয়ায় দুলছে, মানুষের মাথা নাড়ানোর মতন করে। বাম দিকে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল অশ্বত্থ গাছ টা পাহাড়ের মতন। চাঁদের আলো যেন মুড়ে ফেলেছে মাঠ খানা কে। কিন্তু সামনে ও কী? বিশাল দু মানুষ উঁচু কেউ দাঁড়িয়ে। মাঠের মাঝে যে টিলা আছে সেই টিলার উপরে দাঁড়িয়ে। চাঁদের আলো তে বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বাঘমুড়ো? মনের মধ্যে এক দোলাচাল এখন নগেনের। কই ভয় লাগছে না তো?  মনে হলো, এই তো ভালো। যাই এগিয়ে। দেখি বাঘমুড়ো কে। ধীর কদমে এগিয়ে যেতে শুরু করল নগেন। কি আশ্চর্য্য টান। একি মৃত্যুর টান? নেশাগ্রস্তের মতন এগিয়ে যেতে লাগল সামনের দিকে।

কিন্তু বেশী দূর যাওয়া হলো না এগিয়ে তার আগেই নগেনের পাশের কচুবন থেকে একটা আওয়াজ পেল নগেন। মারাত্মক ক্রোধের বহিপ্রকাশে কোন কুকুর যেন চাপা গর্জন করছে। সেই আওয়াজে নেশা টা কেটে গেলো নগেনের। মাথা টা দুবার ঝাঁকিয়ে নিল নগেন। চারিদিকে তাকিয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। জলার বিশাল ফাঁকা মাঠে এলো কি করে নগেন? সামনে দাঁড়িয়ে বাঘমুড়ো, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নগেন শুধু শুনেইছে। দেখল এই প্রথম। ভয়ে কথা হারিয়ে ফেলল। পিছনে ফিরে পালানোর জন্য ঘুরতেই ধাক্কা খেল, নিজের থেকেও বড় একটা লোমশ কিছুর সাথে। ধাক্কা খেয়ে পড়তে পড়তে গিয়েও পরে গেলো না কারন কেউ একজন তাকে পিছন থেকে ধরে নিল। অন্ধকারে ভালো করে বুঝতে না পারলেও আকারে আর মুখের আদলে বুঝতে পারল এটা সিধুর নাতি।

-      দাদু ধীরে। কোন কথা নয় দাদু এখানে। চুপ। 

নগেন খেই হারিয়ে ফেলল এবারে। দেখল সিধুর নাতি, নগেন কে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেবার পরে, ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করার ভঙ্গিমা তে দাঁড়িয়ে আছে। অভিজ্ঞ হলেও আতঙ্কে একেবারে পাগল পারা হয়ে জিজ্ঞাসা করল,

-      তু তু তু তুই সিধুর নাতি না? এখানে কি করছিস? ভাল জায়গা নয় এটা। চ চ চ ল এখানে থেকে।

সিধুর নাতির কোন হেলদোল দেখা গেল না। ভয় তো নেই ই ওর মনে উল্টে নগেন কে ফিসফিস করে বলল,

-      জানি দাদু এটা ভালো জায়গা না। কিন্তু তুমি এখানে কেন? আর কথা বোল না। তোমার কথার তরঙ্গ ওকে আকর্ষণ করবে। কিছু আগেই তো দেখছিলে, তোমাকে একেবারে বশ করে ফেলেছিল। ও জিনিস বড় সাঙ্ঘাতিক। একদম চুপ কর। ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমরা আছি। আর হ্যাঁ, আমি অভি। আমার দাদু সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্য্যর নাতি।
-      আমরা আছি? আর কে আছে সাথে তোর?

নগেনের কথা শেষ ও হলো না। সাথে সাথেই পিছন থেকে চাপা গর্জন টা আবার শুরু হলো। নগেন চকিতে ঘুরে দেখল, একটা বিশাল সাদা কুকুর বাঘমুড়োর দিকে তাকিয়ে চাপা গর্জন শুরু করেছে আবার। নগেন বাঘমুড়োর দিকে তাকাতেই ভয়ে প্রাণ টা শুকিয়ে গেল। দেখল বাঘমুড়ো ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। বিশাল কুকুর টা চঞ্চল হলো এবারে। লেজ ফুলিয়ে, হাড় হিম করা ভঙ্গী তে ডেকে উঠল, আআআআআআউউউউউউউউউউউউউউউ…

কান চাপা দিল নগেন। কিন্তু সেই আওয়াজে বাঘমুড়ো একবার থেমে গিয়েও থামল না। এগিয়েই আসতে থাকল। কিছু কাছে আসার পরে নগেন দেখল বাঘমুড়ো কে। বিশাল দেহধারী বাঘমুড়োর হিংসা ক্রোধে পরিপূর্ন মুখ খানা। খয়েরী চোখ দুটো তে যেন সহস্র বছরের ক্রোধ। উফফ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। বেশ এগিয়ে এসেছে বাঘমুড়ো। একবার কুকুর টা কে আরেকবার সিধুর নাতি কে দেখছে আক্রোশে। কিন্তু এদের মধ্যে ভয় নেই কেন? অভি পিছনে কচুবনের আড়াল থেকে ততক্ষণে একটা বিশাল ধনুক বের করে ফেলেছে। পলকেই, কম করে ফুট চারেক লম্বা একটা ভারী তীর জুড়ে ফেলেছে ধনুকে। তীব্র শিষের মতন শব্দ করে সেই তীর অভ্রান্ত নিশানায় ছুঁড়ে দিল বাঘমুড়োর দিকে, কান অব্দি ছিলা টেনে ধরে। নগেনের মনে হলো, সেই তীর বোধ করি পাহাড় কেও ফাটিয়ে ফেলতে পারত। কিন্তু বাঘমুড়ো অদ্ভুত কায়দায় সেই তীর নিজের দুই হাতে ধরে নিয়ে ফট করে ভেঙ্গে ফেলল মাঝ বরাবর। এই তীব্র আতঙ্কে, যত টুকু ও মনোবল ফিরে পেয়েছিল নগেন, তীর ভেঙ্গে যাবার সাথে সাথে, সেই মনোবল টাও ভেঙ্গে গেল। তীর ভাঙ্গার সাথে সাথে , তীব্র নাদে ফেটে পরল বাঘমুড়ো।

এদিকে পাশের বিশাল কুকুর টা মারাত্মক চঞ্চল হয়ে উঠল তীর ব্যর্থ হতেই। ততক্ষণে, দ্বিতীয় তীর খানা জুড়ে ফেলেছে অভি। কুকুর টা কে উদ্দেশ্য করেই বলল মনে হলো,

-      এবারে এক সাথে।

সাথে সাথেই কুকুর টা তীব্র বেগে বাঘমুড়ো কে আক্রমণ করল। সে কি গর্জন দুজনের। অভি অপেক্ষা করতে লাগল সঠিক সময়ের। বাঘমুড়ো কে ব্যস্ত হতে হবে তবেই তীর টা ছুড়বে সে। ছুঁড়ল ও। কুকুর টা লাফ দিলো বাঘমুড়োর গলা লক্ষ্য করে আর সাথে সাথেই অভিও তীর টা ছুঁড়ল। কিন্তু এবারেও বাঘমুড়ো দেখাল সে শুধু নামেই বাঘমুড়ো নয়। অতো বড় দেহ নিয়ে চকিতে সরে গিয়ে কুকুরের আক্রমণ কে নস্যাৎ করল আর নিজেকে একবার পাক খাইয়ে নিয়েই ফের তীর টা কেও ধরে নিল। আর ছুঁড়ে ফেলে দিলো মাটিতে। নগেন তো বিশ্বাস করতে পারছে না , সামনে এই রকম কিছু একটা ঘটছে বলে। এও কি সম্ভব? কিন্তু ও কি? জলার দিক থেকে ও কীসের কান্না? একজনের না বহু জনের কান্না ভেসে আসছে এবারে। পরিস্থিতি ভারী হয়ে আসছে মারাত্মক। মনের মধ্যে ভয় আর সাথে কষ্ট। সামনে তিন যুযুধান একে অপরের মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে লড়তে প্রস্তুত। কুকুর টা পড়ে গিয়েছিল মাটিতে, আক্রমণ বিফলে যেতেই। এখন আবার উঠে, এক মুখ ফলার মতন দাঁত বের করে প্রস্তুতি নিচ্ছে আক্রমণের। আর অভিও ধনুকে তীর বাগিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক টা। এখন মাঝে বাঘমুড়ো আর দুই দিকে অভি আর সেই কুকুর টা। ঘুরছে ওরা। সুযোগ খুঁজছে আক্রমণের। বাঘমুড়ো এখন একদম চঞ্চল নয় এখন। বরং শান্ত। বহুদিন বাদে প্রতিপক্ষ পেয়েছে কিনা।

নগেন মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে এবারে। বাঘমুড়ো একা নয় ও বুঝতে পারছে। জলার প্রেত রা বাঘমুড়ো কে সাহায্য করছে। তা ভয়েই হোক বা ভক্তি তে। না হলে এতো করুণ কান্না কেঁদে পরিস্থিতি ভারী করে দিচ্ছে কেন? এই গহীন রাতের চাঁদ কে মনে হচ্ছে, রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। সাদা রঙের কুকুর কে মনে হচ্ছে গায়ে কেউ রক্ত ছড়িয়ে দিয়েছে। নগেন বুঝেই গেছে, পাল্লা বাঘমুড়োর দিকেই ভারী এখন। কুকুরের গর্জন বেশ কমে এসেছে। তির ছোঁড়ার শিষের শব্দ গুলোর বেশ কিছুক্ষণ পরে আসছে এবারে। আসতে আসতে পরিবেশে জাঁকিয়ে বসছে বাঘমুড়ো। 

ভয়ানক লড়াই করছে বাঘমুড়ো। একদিকে ওই বিশাল কুকুরের আক্রমণ প্রতিহত করছে আবার অভির তীর ধরে নিয়ে বল্লমের মতন অভির দিকেই ছুঁড়ে দিচ্ছে ভীষণ দ্রুত। এরাও কম যাচ্ছে না। বার বার প্রতিহত হয়েও কুকুর টা দ্বিগুন বেগে আক্রমণে যাচ্ছে। লক্ষ্য বাঘমুড়োর গলা আর অভি ও নিজের দিকে ছুটে আসা তীর কে তীর দিয়েই প্রতিহত করছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বাঘমুড়ো যেন চেপে বসছে। ঘটনা লিখছি হয়ত এতো ধীরে। কিন্তু আসলেই ঘটনা ঘটছে বেশ দ্রুত। কোন এক অজানা অক্ষয় তূণীর থেকে একের পর এক তীর, অতি দ্রুত নিক্ষেপ করছে অভি আর ততোধিক ক্ষিপ্রতায় বাঘমুড়ো সেই সব তীর কে এড়িয়ে যাচ্ছে বা প্রতিহত করে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে অভি কে ব্যস্ত রাখতে , অভির দিকে তীর ছুঁড়েও দিচ্ছে। যেটা অভি আবার প্রতিহত করছে তীর দিয়েই। কিন্তু একটা সময়ে এলো যখন বাঘমুড়ো কুকুর টা কে আছাড় মারল বেশ জোরে। মনে হল জলার মাঠ থরথর করে কেপে উঠলো। মাটিতে আছাড় খেয়ে কুকুর টা উঠে পরে পিছিয়ে এলো একটু। বাঘমুড়োর সামনে সোজাসুজি আক্রমণ থেকে বিরত হলো। আর অভির তীর বর্ষন ও কমল। সবাই ক্লান্তি তে হাঁপাচ্ছে।

ঠিক সেই সময়ে গ্রামের দিক থেকে আরেক জন কেউ বের হলো। নগেন অতো লম্বা চওড়া মানুষ দেখেছে বলে মনে হলো না কোনদিন। খালি গা। পেশীবহুল দেহ। লুঙ্গী পরা। লুঙ্গী টাকে কোঁচা দিয়ে গুটিয়ে নিল সে। নগেনের আর মাথায় ঢুকছে না কিছু। সেই লোক টার মুখ খানা চেনা তো লাগছে নগেনের কিন্তু এই চেহারা কোনদিন তো তার দেখে নি নগেন। ও '. পাড়ার রহিমের মতই দেখতে। গম্ভীর গলায় হাঁক পাড়ল সে,

-      ভয় নাই , ভয় নাই। আমি আছি। আজকে ওকে ছাড়ব না।

এই বলে ঠান্ডা মাথায় একবার নগেন কে দেখে নিয়ে দৌড়ে গেলো যুযুধান বাঘমুড়োর দিকে। রহিম দৌড়ে গিয়েই যে ভাবে বাঘমুড়ো কে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলল তাতেই পরিবেশ টা খানিক টা বদলে গেল। চাঁদ আবার সাদা হলো ক্ষনিকেই। সাদা কুকুর আবার সাদা হলো। তীব্র শিষের মতন তীর ছোঁড়ার আওয়াজ গুলো বেশ দ্রুত হতে থাকল এবারে। কুকুরের গর্জন বেড়ে গেল। বাঘমুড়ো কে বেশ কয়েকবার মাটিতে আছাড় খেতে দেখল নগেন। সেটা রহিম ই করছে। কিন্তু আক্রমণ হচ্ছে মিলিত। কুকুর কে আটকাতে গিয়ে তীরের ফলা বিঁধে যাচ্ছে বাঘমুড়োর গায়ে, আর ততক্ষণে, রহিম বাঘমুড়োর সামনে গিয়ে তীরের ফলা বেঁধা হাত টা কে নিজের কাঁধের উপরে ধরে চাপ দিয়ে, নিজে ঝুঁকে গিয়ে, বাঘমুড়ো কে মাটিতে পেড়ে ফেলছে একেবারে। তিনজনে তিন দিক থেকে আক্রমণ শানাচ্ছে। কিন্তু এবারেও বাঘমুড়ো দেখালো কেন সে বাঘমুড়ো। কোনো অদৃশ্য শক্তির বলে, একবার উঠে দাঁড়িয়েই, রহিমের বুকে যে পদাঘাত টা করল তাতে, মাটিও মনে হয় ফাঁক হয়ে যেত। রহিম সেই জোর সামলাতে না পেড়ে দুটো তিনটে ডিগবাজি খেয়ে গড়িয়ে গেল সামনের দিকে। পদাঘাতের আওয়াজেই জোর বুঝতে পেরেছিল নগেন। কেমন মন্ত্র মুগ্ধের মতন দেখছিল তিন জনের লড়াই। জীবনে কি ভাবতে পেরেছিল এই গ্রামে এমন তিনজনের জন্ম হবে যারা বাঘমুড়োর সাথে সামনা সামনি লড়াই করতে পারবে? এ নিশ্চই স্বপ্ন। ওদিকে হয়ত রহিম কে কমজোরী ভেবেছিল নগেন। রহিম গড়িয়ে গিয়েই অদ্ভুত দক্ষতায় উঠে দাঁড়িয়ে পরল এবারে। দ্বিগুণ ক্রোধে রহিম ছুটে গেল আঘাত হানার উদ্দেশ্যে।

এবারে কিন্তু বাঘমুড়ো রণে ভঙ্গ দিলো। বিপদ আঁচ করে, রহিম কে একবার মাটিতে আছাড় মেরেই সোজা জলার দিকে দৌড় দিল সে। পিছনে পিছনে রহিম আর কুকুর টা। রহিম জলার মধ্যেই চলে গেল বাঘমুড়োর পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু কুকুর টা জলার ধার থেকেই গর্জন করতে লাগল ততক্ষণ, যতক্ষন না কাদা পাঁক মেখে রহিম উঠে এলো জলা থেকে। অভি দাঁড়িয়েছিল কুকুর তার পাশে যতক্ষন না রহিম উঠে এল উপরে।

কত রাত কেউ জানে না। সবাই বসেছিল সেই বিশাল অশ্বত্থ গাছের তলায়। নগেন যে এখন অজ্ঞান হয়ে যায় নি সেটা নগেনের অভিজ্ঞতার জন্য। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে ও। কিছু উত্তর বাকী আছে এখনো। নগেনের পাশে বসে আছে অভি। রহিম পাশেই পুকুরে গা হাত পা থেকে কাদা ধুচ্ছিল। শুধু কুকুর টা কে দেখতে পাচ্ছে না নগেন। নগেনের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। এক এক করে জট খুলতে লাগল। তার মানে, সেদিনে পরেশ কে এই কুকুর টাই বাঁচিয়েছিল। আর সিধু কেও বাঁচিয়েছিল, ওর ই নাতি। এখানেও এক রাশ প্রশ্ন। সেদিনে পরেশের কথা অনুযায়ী কুকুর টা কে দেখেই পালিয়েছিল বাঘমুড়ো। বা দূর থেকে তীর দিয়ে সাবধান করার পরে বাঘমুড়ো পালিয়ে গেছিল। আজকে পালালো না কেন? আজকে তো দুজনে একসাথে ছিল। আর রহিম? ওর মধ্যে কি ভাবে এই শক্তি এলো? এই তিনজন মিলেও বাঘমুড়ো কে কায়দা করতে পারছিল না আজকে। মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন। পাশেই বসে থাকা অভি নগেনের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ওর বুঝতে বাকি নেই যে, দাদুর মনে সহস্র প্রশ্নের তীর। কিন্তু বলা টা উচিৎ হবে কিনা সেটা ও নিজেও বুঝতে পারছে না।

ততক্ষণে রহিম উঠে এসেছে পুকুর থেকে। নিজের লুঙ্গির সামনে টা ঝুঁকে নিংড়ে নিচ্ছিল। নগেন নেহাত ই বাচ্চা ছেলের মতন প্রশ্ন টা করে বসল
-      অভি বাবা বলত, কি হচ্ছে এসব? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

অভি একবার রহিম কে দেখল আর একবার পিছনের কচুবনের দিকে তাকাল। বুঝতে পারছে না দাদু কে কি বলবে এখন। তাও বলল,
-      দাদু আমরাও বিশেষ কিছু বুঝতে পারছি না। সেদিনে যখন দাদু কে বাঘমুড়ো ধরেছিল, সেদিনে আমি বেড়িয়ে ছিলাম বাইরে। আমি তো দাদুর কাছেই শুই। প্রথম বার আমি বুঝতে পারি কোন বিপদ আছে সামনে। এর আগে ওসব বুঝতাম না। ভয় ও পাই নি সেদিনে। সেদিনে আমি জানিনা আমি কি ভাবে এতো কিছু জানলাম। প্রথমেই বাড়ির পিছনে ডুব দিয়েছিলাম আমি। হাতে এই ধনুক টা ঠেকেছিল। সাথে এই তূনীর বাঁধা। ধনুক নিয়ে আমি যখন পৌঁছই দেখি দাদু হাঁটু মুড়ে বসে আর বাঘমুড়ো দাদুর সামনে। আর কিছু ভাবিনি আমি। আমি জানতাম ও না যে আমি তীর চালাতে পারি। কাউকে মারা তো দূর আমি কাউকে কোন আঘাত ও করিনি। চেয়েছিলাম, বাঘমুড়ো কে আটকাতে। সেটাই হয়েছিল।

এ আবার কেমন কথা? নগেন বেশ ঘাবড়ে গেল। তার বৃদ্ধ মাথাও পারছে না, যোগসুত্র টা ধরতে। বুঝে গেল অনেক কথা জানার আছে এখন। সে সব না জেনে কোন যোগসুত্র ই পাবে না। শুধু জিজ্ঞাসা করল,
-      ওই বিরাট কুকুর টা কোথায় গেল?
-      আসছে। পোশাক পড়তে গেছে।

রহিমের কথা শুনে নগেন আরো অবাক হলো। আর দেখতে না দেখতেই যে এলো কচুবনের ভিতর থেকে সে হলো লালি। নগেনের গলা থেকে বেরিয়ে এলো

-      হে ভগবান! লালি তুই???
-      হ্যাঁ দাদু। আমি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - চলছে- নতুন পর্ব ৬- পেইজ ৯ - by nandanadasnandana - 17-06-2022, 06:47 PM



Users browsing this thread: 23 Guest(s)