16-06-2022, 12:50 AM
(This post was last modified: 26-06-2022, 01:25 AM by Nirjon_ahmed. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
যৌবনের ভাদ্র মাস
- নির্জন আহমেদ
অধ্যায়ঃ রুদ্রা
ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। এখন, এই বিকেল আর সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণটা আমার বিশেষ প্রিয়। আকাশে অজানা এক আলোর ঝলক দেখা যায়। প্রতিদিন আকাশের রংটা একই থাকে, তবু নতুন লাগে প্রতিদিন। আমি থাকি পুরান ঢাকার একটা গলিতে। এই অঞ্চলে একটা বাড়ির থেকে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব এত কম যে, ছাদগুলা প্রায় একটার সাথে আরেকটা লাগানো। প্রত্যেকটা বাড়ি থেকেই মেয়েরা এই সময় ছাদে এসে হাওয়া খায় কিংবা অন্য ফ্লাটের মহিলাদের সাথে সুখ দুঃখের আলাপ জুড়ে দেয়।
আমি ঠিক বিকেলের পর এই সময়ে আসি অনেকটা আকাশ আর মেয়ে কিংবা আন্টি দেখার লোভে। পাশের ফ্লাটের কয়েকটা মেয়ে আসে ফোনে প্রেমিকদের সাথে কথা বলতে। তাদের দেহে থাকে বাড়িতে পরার পোশাক। তাদের বুকের ঝলক দেখে আমার বাড়া মহাশয় বিশেষ আনন্দ পান!
সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিচ্ছিলাম। দেখলাম, পাশের ফ্লাটের উকিল সাহেবের বউ তার চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ছাদে এসেছেন। দাঁড়িয়েছে আমার পাশেই। বাচ্চাটা আমার সাথে বেশ পরিচিত। ছাদে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। আমি কয়েকদিন ওকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছি।
মায়ের কোল থেকেই বাচ্চাটা বলল, “রিদম ভাইয়া, কী কর!”
ছেলেটার নাম যেন কী? সৈকত না?
ভললাম, “এই তো দাঁড়িয়ে আছি, ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?”
“আমি ভাল। আজ আমাকে গল্প শোনাবে?”, আবদার করল সৈকত।
বললাম, “তোমার আম্মু তো আছে। আম্মুকে বল। গল্প শুনিয়ে দেবে!”
সৈকত বলল, “আম্মু তোমার মত গল্প বলতে পারে না! শোনাও না ভাইয়া একটা গল্প!”
আমি উকিল সাহেবের স্ত্রীর দিকে তাকালাম। মহিলা হাসি হাসি মুখে নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুযোগের সুরে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি গল্প শোনাতে পারি না, না? গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ভাত খাওয়ায় কে?
মায়ের জবাব পেয়ে কাঁধে মুখ লুকালো সৈকত।
আমি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আপনার ছেলে মারাত্মক চটপটে। এই বয়সে ডায়নোসর বোঝে!”
সন্তানের প্রশংসা করলে, সব মায়ই খুশী হয় বোধহয়। সৈকতের মাও হলেন। বললেন, “ডায়নোসর চিনবে না? সারাদিন কার্টুন দেখে তো ওসবের!”
আমি বললাম, “যাই বলুন। দারুণ মিষ্টি ছেলে ও!”
ওর মা বললেন, “আমাকে তো জ্বালিয়ে মারে। তোমার কাছে এলে হয়ত শান্ত থাকে!”
আরও কিছুক্ষণ কথা হলো সৈকতকে নিয়েই। তারপর হয়ত ভদ্রমহিলার মনে হলো, তিনি আমার নামই জানেন না কিন্তু ছেলের ব্যাপারে বেশ কথা চালিয়ে যাচ্ছেন! হঠাত আমাকে বললেন, “তোমার নামটাই জানা হলো না! আমার না রুদ্রা!”
আমি হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে ঝুঁকে বললাম, “আমি রিদম। ঢাবিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ছি!”
রুদ্রা বললেন, “হ্যাঁ। অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করছি তোমাকে। তুমি অপজিটের ফ্লাটে থাকো। কিন্তু কথা হয়নি কোনদিন!”‘
আমি বললাম, “আপনাকে কী বলে ডাকব বলুন! আপনার ছেলে তো আমাকে ভাইয়া বলে!”
রুদ্রা হেসে বলল, “হা হা। তুমি আমাকে ভাবি বলেই ডেকো। আমি বলে দেব, সৈকত আজ থেকে তোমাকে চাচ্চু বলে ডাকবে!”
কথাটা বলেই রুদ্রা সন্তানের দিকে তাকালেন। বললেন ওকে, “একে আজ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে না, আচ্ছা? চাচ্চু বলবে!”
সৈকতকে মায়ের বাধ্য সন্তান বলেই মনে হলো। সে মাথা নেড়ে সায় দিল কথাটায়।
আমি বললাম, রুদ্রার সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে, “আপনারা তো বোধহয় এই বাসায় অনেকদিন ধরেই আছেন, তাই না? আমি আসার পর থেকেই আপনাদের দেখছি!”
রুদ্রা ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। সৈকত দৌড়ে ছাদের অন্য প্রান্তে চলে গেল। ছাদটার রেলিং অনেক উঁচু করে দেয়া, তাই পড়ার ভয় নেই। তাছাড়া এখানকার ছেলেরা ছোট থেকেই এই পরিবেশে মানুষ, তাদের নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। অনেক মা বাচ্চাকে ছাদে খেলতে দিয়ে ঘরে রান্না করেন। স্বামীকে চুদতেও দেয় অনেকে হয়ত!
ছেলে চলে যেতেই, রুদ্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ। আমরা এই বাসায় প্রায় আট বছর ধরে আছি। আসলে আমি বিয়ের পরেই এই বাসায় এসেছি। তোমার ভাই আর বাসাই পরিবর্তন করল না!”
আমি বললাম, “এই বাসাটা ভালই। আমি তো ঠিক করেছি গ্রাজুয়েশন শেষ না হওয়া তক, এই বাসাতেই থাকব। আমার অবশ্য একটাই রুম। এমন জায়গা আর কোথাও পাব বলেও মনে হয় না!”
ভদ্রমহিলা হঠাত কিছু মনে পড়ার মত করে বললেন, “আরে তাইতো। তোমার দিকটায় তো একটাই রুম। কত করে ভাড়া এখন?”
আমি রুদ্রাদের বিপরীত ফ্লাটে থাকি। প্রত্যেকটা ফ্লাটেই তিনচারটা করে রুম। শুধু আমার ফ্লাটেই একটা। বাঁকি দুইটা রুমের জায়গায় পানির ট্যাংক বসানো। আমার রুমের উপরেই ছাদ। তাই ছাদে উঠতে আমার কষ্ট করতে হয় না।
ভাড়া বললাম। রুদ্রার সাথে রাত নামার আগ পর্যন্ত অনেক গল্প হলো। বেশিরপভাগই উল্লেখ করার মত না। বুঝলাম, ভদ্রমহিলা কথা বলার লোক খুঁজে পান না। তাই আজ এই আধচেনা আমাকেও অনেক কথা বলে ফেললেন। স্বামী তার মক্কেল নিয়েই ব্যস্ত। সারাদিন বাড়িতে একা। আর পরিবারের লোক বলতে স্বামী, সন্তান আর তিনি। একা লাগবে নাই বা কেন!
রুদ্রা আর সৈকত চলে গেলে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। সন্ধ্যাটা বেশ কাটল। নীলা নোটের জন্য ফোন দিচ্ছে বারবার। তাকে নোট দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে যেতে হবে।
সিগারেটটা শেষ করে ফিরে এলাম নিজের রুমে।
- নির্জন আহমেদ
অধ্যায়ঃ রুদ্রা
ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। এখন, এই বিকেল আর সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণটা আমার বিশেষ প্রিয়। আকাশে অজানা এক আলোর ঝলক দেখা যায়। প্রতিদিন আকাশের রংটা একই থাকে, তবু নতুন লাগে প্রতিদিন। আমি থাকি পুরান ঢাকার একটা গলিতে। এই অঞ্চলে একটা বাড়ির থেকে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব এত কম যে, ছাদগুলা প্রায় একটার সাথে আরেকটা লাগানো। প্রত্যেকটা বাড়ি থেকেই মেয়েরা এই সময় ছাদে এসে হাওয়া খায় কিংবা অন্য ফ্লাটের মহিলাদের সাথে সুখ দুঃখের আলাপ জুড়ে দেয়।
আমি ঠিক বিকেলের পর এই সময়ে আসি অনেকটা আকাশ আর মেয়ে কিংবা আন্টি দেখার লোভে। পাশের ফ্লাটের কয়েকটা মেয়ে আসে ফোনে প্রেমিকদের সাথে কথা বলতে। তাদের দেহে থাকে বাড়িতে পরার পোশাক। তাদের বুকের ঝলক দেখে আমার বাড়া মহাশয় বিশেষ আনন্দ পান!
সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিচ্ছিলাম। দেখলাম, পাশের ফ্লাটের উকিল সাহেবের বউ তার চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ছাদে এসেছেন। দাঁড়িয়েছে আমার পাশেই। বাচ্চাটা আমার সাথে বেশ পরিচিত। ছাদে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। আমি কয়েকদিন ওকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছি।
মায়ের কোল থেকেই বাচ্চাটা বলল, “রিদম ভাইয়া, কী কর!”
ছেলেটার নাম যেন কী? সৈকত না?
ভললাম, “এই তো দাঁড়িয়ে আছি, ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?”
“আমি ভাল। আজ আমাকে গল্প শোনাবে?”, আবদার করল সৈকত।
বললাম, “তোমার আম্মু তো আছে। আম্মুকে বল। গল্প শুনিয়ে দেবে!”
সৈকত বলল, “আম্মু তোমার মত গল্প বলতে পারে না! শোনাও না ভাইয়া একটা গল্প!”
আমি উকিল সাহেবের স্ত্রীর দিকে তাকালাম। মহিলা হাসি হাসি মুখে নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুযোগের সুরে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি গল্প শোনাতে পারি না, না? গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ভাত খাওয়ায় কে?
মায়ের জবাব পেয়ে কাঁধে মুখ লুকালো সৈকত।
আমি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আপনার ছেলে মারাত্মক চটপটে। এই বয়সে ডায়নোসর বোঝে!”
সন্তানের প্রশংসা করলে, সব মায়ই খুশী হয় বোধহয়। সৈকতের মাও হলেন। বললেন, “ডায়নোসর চিনবে না? সারাদিন কার্টুন দেখে তো ওসবের!”
আমি বললাম, “যাই বলুন। দারুণ মিষ্টি ছেলে ও!”
ওর মা বললেন, “আমাকে তো জ্বালিয়ে মারে। তোমার কাছে এলে হয়ত শান্ত থাকে!”
আরও কিছুক্ষণ কথা হলো সৈকতকে নিয়েই। তারপর হয়ত ভদ্রমহিলার মনে হলো, তিনি আমার নামই জানেন না কিন্তু ছেলের ব্যাপারে বেশ কথা চালিয়ে যাচ্ছেন! হঠাত আমাকে বললেন, “তোমার নামটাই জানা হলো না! আমার না রুদ্রা!”
আমি হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে ঝুঁকে বললাম, “আমি রিদম। ঢাবিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ছি!”
রুদ্রা বললেন, “হ্যাঁ। অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করছি তোমাকে। তুমি অপজিটের ফ্লাটে থাকো। কিন্তু কথা হয়নি কোনদিন!”‘
আমি বললাম, “আপনাকে কী বলে ডাকব বলুন! আপনার ছেলে তো আমাকে ভাইয়া বলে!”
রুদ্রা হেসে বলল, “হা হা। তুমি আমাকে ভাবি বলেই ডেকো। আমি বলে দেব, সৈকত আজ থেকে তোমাকে চাচ্চু বলে ডাকবে!”
কথাটা বলেই রুদ্রা সন্তানের দিকে তাকালেন। বললেন ওকে, “একে আজ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে না, আচ্ছা? চাচ্চু বলবে!”
সৈকতকে মায়ের বাধ্য সন্তান বলেই মনে হলো। সে মাথা নেড়ে সায় দিল কথাটায়।
আমি বললাম, রুদ্রার সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে, “আপনারা তো বোধহয় এই বাসায় অনেকদিন ধরেই আছেন, তাই না? আমি আসার পর থেকেই আপনাদের দেখছি!”
রুদ্রা ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। সৈকত দৌড়ে ছাদের অন্য প্রান্তে চলে গেল। ছাদটার রেলিং অনেক উঁচু করে দেয়া, তাই পড়ার ভয় নেই। তাছাড়া এখানকার ছেলেরা ছোট থেকেই এই পরিবেশে মানুষ, তাদের নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। অনেক মা বাচ্চাকে ছাদে খেলতে দিয়ে ঘরে রান্না করেন। স্বামীকে চুদতেও দেয় অনেকে হয়ত!
ছেলে চলে যেতেই, রুদ্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ। আমরা এই বাসায় প্রায় আট বছর ধরে আছি। আসলে আমি বিয়ের পরেই এই বাসায় এসেছি। তোমার ভাই আর বাসাই পরিবর্তন করল না!”
আমি বললাম, “এই বাসাটা ভালই। আমি তো ঠিক করেছি গ্রাজুয়েশন শেষ না হওয়া তক, এই বাসাতেই থাকব। আমার অবশ্য একটাই রুম। এমন জায়গা আর কোথাও পাব বলেও মনে হয় না!”
ভদ্রমহিলা হঠাত কিছু মনে পড়ার মত করে বললেন, “আরে তাইতো। তোমার দিকটায় তো একটাই রুম। কত করে ভাড়া এখন?”
আমি রুদ্রাদের বিপরীত ফ্লাটে থাকি। প্রত্যেকটা ফ্লাটেই তিনচারটা করে রুম। শুধু আমার ফ্লাটেই একটা। বাঁকি দুইটা রুমের জায়গায় পানির ট্যাংক বসানো। আমার রুমের উপরেই ছাদ। তাই ছাদে উঠতে আমার কষ্ট করতে হয় না।
ভাড়া বললাম। রুদ্রার সাথে রাত নামার আগ পর্যন্ত অনেক গল্প হলো। বেশিরপভাগই উল্লেখ করার মত না। বুঝলাম, ভদ্রমহিলা কথা বলার লোক খুঁজে পান না। তাই আজ এই আধচেনা আমাকেও অনেক কথা বলে ফেললেন। স্বামী তার মক্কেল নিয়েই ব্যস্ত। সারাদিন বাড়িতে একা। আর পরিবারের লোক বলতে স্বামী, সন্তান আর তিনি। একা লাগবে নাই বা কেন!
রুদ্রা আর সৈকত চলে গেলে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। সন্ধ্যাটা বেশ কাটল। নীলা নোটের জন্য ফোন দিচ্ছে বারবার। তাকে নোট দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে যেতে হবে।
সিগারেটটা শেষ করে ফিরে এলাম নিজের রুমে।