Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

ঠিক সেই সময়ে দুটো তীব্র শিষের শব্দ হতেই দেখা গেল তাল গাছে সিধুবাবু আর বাঘমুড়োর মাঝে দুটো তীর এসে বিধে গেল। বেশ লম্বা তীর। তালগাছ কে ফুঁড়ে দিয়ে তীরের ফলা টা বেড়িয়ে গেছে উল্টো দিকে। যেন বাঘমুড়ো কে বলা হলো ,ব্যস আর এগিও না। এই তীর গুলো কিন্তু সাধারণ তীর নয়। বাস্তবিক, তালগাছ টা কে একেবারে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে তীর দুটো। বাঘমুড়ো যেন আসন্ন বিপদ বুঝতে পারল। বুঝতে পারল এই তীর ওকে সাবধান করে দেওয়া মাত্র। পরের মারা তীর গুলো বুকে বিঁধতে সময় নেবে না। তীরগুলোর মধ্যে যেন কিছু ছিল। চঞ্চল হলো বাঘমুড়ো। আতঙ্ক মনের বাইরে না এলে শরীরে যে চঞ্চলতা দেখা দেয় সেই রকম চঞ্চলতা। আর এদিকে শিকার হারানোর ক্রোধ। দুবার পা দুটো কে মাটিতে ঠুকে ,আতঙ্ক আর ক্রোধ মিলিয়ে পুকুরের জল কাঁপিয়ে ব্যাঘ্রনাদ করে উঠল বাঘমুড়ো। আর সেই নাদে, পুকুরের জলে অব্দি ঢেউ উঠল তির তির করে। ওই ভয়ানক আওয়াজে,  সিদুবাবু অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে অন্ধকারে বুঝলে পারলেন , পুকুরের ধারে খানিক দূরে , একটা কচু বনের পিছনে কোন অল্পবয়সী বালক, তীরধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
 
                                                                                               পর্ব পাঁচ
পরের দিন সকালে আগুনের মতন হুহু করে ছড়িয়ে পড়ল এই ঘটনা। সকাল গড়ায় নি। ওই ভয়ানক ব্যাঘ্র নাদে কেউ জেগে থাকবে এটা ভাবাই অস্বাভাবিক। হয়েছে তো গ্রামের ভিতরেই ঘটনা খানা। গ্রামের সব লোক তো বটেই এপাশ ওপাশের গ্রামের লোক ও ছুটে এসেছিল সিধুবাবুর বাড়িতে পরের দিন। নগেন জ্যাঠা সেই ভোর রাত থেকেই সিধু বাবুর কাছে। তার বৃদ্ধ মন খুঁজে বেড়াচ্ছে কিছু। কোন সর্বনাশের ইঙ্গিত পর পর এই দুটো ঘটনা?  মন টা খচখচ করলো আরো যখন দেখল, মহাদেবের ব্যাটা হীরা, পরেশের মেয়ে লালি আর সিধুর চৌদ্দ বছরের নাতি অভি, সিধুবাবুর বাড়ির উঠোনে হাসাহাসি করছে আর গল্প করছে। বাঘমুড়োর ভয়ে সবাই যখন প্রায় পাগলপারা, এই তিনজনের মনে এতো কীসের আনন্দ?

দিন সাতেক সব কিছু ঠিক রইল। লোকজন একেবারে জঙ্গলের রাস্তা এড়িয়ে চলতে লাগল। চার কিমি রাস্তা এড়িয়ে চল্লিশ কিমি ঘুরে আসতে লাগল মানুষ জন। দরকার কি, বাঘমুড়ো কে নেমতন্ন করে? সে যে নতুন কিছু ভাঁজছে নিজের মনে, সে নিয়ে সন্দেহের তো অবকাশ নেই।  ভোর বেলায় আর সন্ধ্যে বেলায় নিয়ম করে কৃষ্ণ নামের দল গ্রাম জুড়ে নাম কীর্তন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু একটা অজানা ভয় চেপে বসেছিল গ্রামের ভিতরে। ভগবান আছেন সে সবাই মানে। কিন্তু দেখেনি কেউ। কিন্তু বাঘমুড়োর আতঙ্ক এখন মনের বেড়া টপকে চোখের সামনে এসে হাজির। মানুষ না পেয়ে, পর পর দুদিন দুটো গাই গরু আর গোটা চারেক ছাগল নিখোঁজ হয়েছে।  সবাই ঠিক সময়েই উঠছে ঘুম থেকে , কিন্তু মনে আনন্দ নেই। নিরাশা যেন চেপে বসছে সবার মনে। মনে সর্বক্ষণ বিষাদের একটা ছায়া। ঘুমতে যাচ্ছে ক্লান্ত হয়ে কিন্তু ঘুম মনে হয় না কারোর আসছে। রাতের গান গুলো তে আর আনন্দ নেই, কেমন একটা বিষাদময় সুর নিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে রাত গুলো। বাঘমুড়ো কি পুরো গ্রাম কেই ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে নিজের মায়ায়?

 বেস্পতিবার হাট বার। হাট বসে দিনের বেলায়, জঙ্গল আর গ্রামের মাঝে বিশাল ফাঁকা মাঠে, গ্রামের কোল ঘেঁষে। তাও কম বড় হাট নয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে হাটের লোকজন বেশ কম। মহাদেব সকালেই চলে আসে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে। ওর বাড়ির সব্জি, পেঁপে, তরমুজ এর নাম আছে বাজারে। আসতে না আসতেই হাওয়া হয়ে যায়। আজকেও হয়ে গেল। পাশে বসে থাকা হীরা কে বলল,
-      চল, বাপ বেটা তে দুটি খেয়ে নি ।

হীরা একটা বই পড়ছিল। বই টা বন্ধ করে হাতে নিয়ে মহাদেব কে বলল,
-      বাবা আমি ওই সব কচুরি খাব না। আমি মাখন খাব।

মহাদেব উঠে পরে জামা টা গায়ে দিয়ে বোতাম আটকাতে আটকাতে ভাবল, - আহা গরীবের ঘরে জন্মালি বাপ! ছেলে আমার কিছুই খেতে চায় না মাখন ছাড়া।

মহাদেব হীরা কে বলল,

-      আচ্ছা আচ্ছা হবে। চল দুটি কিছু মুখে দে এখন। না হলে তোর মা আমাকে আস্ত রাখবে না। অতো করে বললাম তোকে আসতে হবে না হাটে। শুনলি না। ঠিক আছে আজকে বিকালে লালি দের বাড়ি থেকে মাখন কিনে আনব ক্ষন।

ছেলের ওই বায়না করেই শান্তি। বাপ যা খাওয়ায় ছেলে হাসি মুখে খেয়ে নেয়। ছেলেটা কাছে থাকলে মনে হয় যেন জগতে আর কিছু লাগে না মহাদেবের। মুখে বলল বটে ছেলেকে যে, হাটে আনতে চায় নি, কিন্তু ছেলে কাছে থাকলে মনে হয় সে এই দুনিয়ার সব থেকে বড়লোক। গায়ের গামছা খানা হীরার মাথায় চাপিয়ে দিল মহাদেব। পাছে ছেলের মাথায় রোদ না লাগে। বাবাহ কত মোটা মোটা বই পরে ছেলে। সব মাথার কাজ কিনা! দুজনে হেঁটে হাটের একেবারে ধারে চলে এলো। কাশী ময়রার দোকান যে এই দিকেই। পেটে কিছু দিয়ে, হীরার মায়ের জন্য কিছু মিষ্টি কিনে,  খানিক জল খেয়ে বাপ ব্যাটা তে গ্রামে ফিরবে। 

আনমনে হাঁটছিল মহাদেব।পাশে তাকিয়ে ছেলেকে দেখতে গিয়ে দেখে ছেলে নেই পাশে। ভারী অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে, পারু গয়লানীর, মাখন আর খোয়া ক্ষীরের মাটির কলসী গুলোর সামনে হীরা বসে আছে। আর গয়লানী হীরা কে একটা শালপাতার ঠোঙা তে বেশ খানিক টা মাখন তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।

মহাদেব মাথায় হাত দিয়ে গেল সেখানে নিজের মনেই বকতে বকতে।
-      উফ আর পারি না একে নিয়ে। এ নির্ঘাত কোন গোয়ালা ঘরে ছিল আগের জন্মে।

সামনে গিয়ে দেখে গয়লানী পরম মমতায় মাখন খাইয়ে দিচ্ছে হীরা কে। আর হীরা চুপটি করে কোন কথা না বলে মাখন খেয়ে নিচ্ছে। কোঁচর থেকে পয়সা বের করে গয়লানী কে দিয়ে হীরা নিয়ে চলে আসবে এই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে গয়লানী কিছু তে পয়সা তো নিলই না তার উপরে বলল,

-      পাগল হয়েছিস মহাদেব। ছেলেকে একটু মাখন খাইয়ে পয়সা নেব? আমার গরু কটা আর দুধ ই দেবে না তাহলে। যা যা, মেলা পয়সা দেখাস না।

আর হীরা কে গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে ফের মাখন খেতে যাবার নেমতন্ন করে তবে গয়লানী ছাড়ল।

-      তোকে না বলেছি, যেখানে সেখানে মাখন, মিষ্টি দেখলে হামলে পড়বি না!!

মহাদেবের রাগের কথায় কোন জবার দিলো না হীরা। এই এক সমস্যা। কথা খুব কম বলে ও। আরো বকাঝকা চলত। কোন বাপের ই বা ভালোলাগে, ছেলে গয়লানীর কাছে ফ্রী তে মাখন খেয়ে আসছে? কিন্তু বকাঝকা বন্ধ হলো কারন কাশীর দোকান সামনে চলে এসেছে আর পরেশ আর পরেশের মেয়ে লালি দুজনাই বসে আছে সামনে। কাশীর দোকানে ভিড় তখনো জমজমাট হয় নি। দুদিকে পাতা দুটি বেঞ্চি তে, একদিনে পরেশ আর লালি বসে, আর অন্য দিকে মহাদেব আর হীরা বসে পরল। লালিদের অনেক দুধ,মাখন আর ঘী বিক্রী হয়ে এই হাটে। তাই দুজনাই সকাল সকাল হাট বারে চলে আসে। এদিকে হীরা বসে চুপ করে বই পড়তে শুরু করল। আর মহাদেব কাশী কে কচুরী আর জিলাপী দিতে বলল।ইতি মধ্যে লালি উঠে এসে মহাদেব কে বলল,

-      কাকা তোমাকে না বাবা ওই দিকে বসতে বলল। কিছু কথা আছে নাকি!

মহাদেব চলে গেলো উল্টো দিকের বেঞ্চি তে। আর লালি বসে পরল হীরার পাশে। হীরা কে বলল,

-      তুই কচুরী খাবি?
-      ধুর, ওই সব তেলে ভাজা ভাল লাগে না।
-      চল তবে আমার সাথে। একটা ভালো জিনিস খাওয়াব।
-      কোথায়?
-      চল না।

ততক্ষনে লালি শুনতে পাচ্ছে মহাদেব কাকা, ওর বাবাকে বলছে
-      হ্যাঁ পরেশ দা বল, এলাম এদিকে

খানিক অবাক হয়ে পরেশ বলল
-      তা বেশ করেছিস এসেছিস। এখন দুটি খেয়ে নে।
-      যা বাবা, সে তো খাবই। কিন্তু তুমি ডাকলে যে!!
-      আমি!!!!
-      হ্যাঁ, লালি যে বলল?
-      অ্যাঁ? লালি এই লালি!!

আর শুনতে পেল না লালি। এক গাল হাসি, গজদন্তের সাজে সজ্জিত করে, হীরার হাত ধরে ছুটে ততক্ষণে চলে এসেছে বড় ঠাম্মুর ঠেলার কাছে। বিশাল রাধাচূড়া গাছে তলায় বড় ঠাম্মুর হাতের মাখন, ক্ষীর, দই আর ঘী এর ঠেলা। পরেশ এর ই ব্যবসা এটা। বড় বিখ্যাত এ অঞ্চলের। আর সব থেকে বড় কথা, বড় ঠাম্মু খুব মিষ্টি করে গান গায়। হীরা কে গাছের অন্য দিকে দাঁড় করিয়ে রেখে লালি চলে গেল বড় ঠাম্মুর কাছে। সম্পর্কে বড় ঠাম্মু পরেশের জেঠিমা হন। এই জেঠিমার ছেলে বলতে এখন পরেশ ই। লালি গিয়েই বলল,

-      ঠাম্মু, দাও তো আমার ভাগের মাখন টা।  

একটা খদ্দের কে ছেড়ে, লালির দিকে তাকিয়ে নিয়ে হেসে বড় ঠাম্মু বলল,
-      তা, মাখন টা কে খাবে? কেষ্ট টি কই?
-      উফ, তুমি দাও তো। অনেক টা দেবে বলে দিলাম।

ততক্ষনে একটা বড় মাটির সরা তে মাখন রাখতে রাখতে বড় ঠাম্মু, লালি কে বলল,

-      সে না হয় দিচ্ছি। কিন্তু রাধা কি দেখেই পেট ভরাবে নাকি, রাধার জন্য ও দেব খানিক টা?
-      ভারী বয়ে গেছে আমার রাধা হতে।
-      তা দিদি ভাই , অতো প্রেম ভালো না। কেষ্ট প্রেমে কিন্তু বুকে ব্যাথা লাগে গো। আমি যে বুঝি সব। তোর চোখ ই যে সব বলে দেয়।
-      উহ অতোই সস্তা। আমি কি সেই যুগের রাধা নাকি? আমার প্রেমের জোর ও আছে আর কেষ্ট কে নিজের করার ও জোর আছে, বুঝলে? তুমি দাও তো। ছেলেটা খাবে। একটা চামচ দিও কিন্তু।

এক মুখ হাসি নিয়ে এক মালসা ভর্তি মাখন নিয়ে হাজির হলো লালি গাছের পিছনে। দেখে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হীরা। একটা ঢিলা হলুদ জামা পরে। আর একটা আকাশী জিন্সের প্যান্ট। দুটো পা এর পাতা কে একে অপরের সাথে কাঁচি দিয়ে দাঁড়িয়ে। খাওয়াবে কি লালি। হারিয়েই গেলো মনে হয়।

-      কই রে আয়? খাবি আয়। দেখ কি এনেছি?
-      আরে ব্বাস। বড় ঠাম্মুর বানানো?
-      হুম।

আশেপাশের অনেকেই দেখছে, লালি হীরা কে মাখন খাইয়ে দিচ্ছে গাছের নিচে। আর লালি? হাঁ করে দেখছে হীরা কে। খিদে তেস্টা সব উবে যায় এই ছোঁড়া কে দেখলে যেন। মাঝে মাঝে ভুলেই যাচ্ছে খাওয়াতে। হীরা, লালির হাত টা টেনে এনে নিজেই নিজের মুখে পুরে নিচ্ছে। আর ওদিকে বড় ঠাম্মু গান ধরেছে,

-      কইয়ো কইয়ো কইয়ো রে ভ্রমর, কৃষ্ণ রে বুঝাইয়া। মুই রাধা মইর‍্যা যাইমু, কৃষ্ণ হারা হইয়ারে ভ্রমর, কইয়ো গিয়া।

সেই গানের দ্যোতনা যেন মরমে মরমে বুঝতে পারছে লালি। যেন পুরো গান টাকেই আত্মসাৎ করবে লালি। কাউকে এ কষ্টের ভাগ দেবে না। কাউকে এ বিরহের সুখ দেবে না ও। ওর চোখে চোখ মিললেই যেন বুকের মধ্যে সহস্র ভোমরার কামড়। কি যে আছে ওই চোখে কে জানে? কে বলবে, চারিদিকে মৃত্যুর আতঙ্ক? কই মৃত্যু, কই পিশাচ? এ যে মারাত্মক বাঁচার ইচ্ছে। এই ছোঁড়া কে নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে।

-       কই ক্ষমতা দেখি সেই পিশাচের, কিছু করে দেখাক হীরা কে? শেষ করে দেব।

নিজের ভাবনায় নিজের চমকে উঠল লালি। তবে কি এই কথা টা ভিতরের সাদা নেকড়ে টা বলছে? মনে পরে গেল সেদিনে হীরার বলা কথা গুলো আবার। লালির হাত খানা মুখের সামনে নিয়ে, আঙ্গুলে লেগে থাকা মাখন টা চেটে খেতে খেতে আড়চোখে তাকালো হীরা লালির দিকে। হাসল যেন একটু? উফ এবারে লজ্জা পেয়ে গেল লালি। না জানি কত লোকে দেখল হীরা কে মাখন খাইয়ে দেবার দৃশ্য।  

বলেছিলাম না, কত ঘটনা ঘটছে চারদিকে। কার সাথে সমাপতনে নতুন কি ঘটনা পাখা মেলে উড়বে, কে জানে? আমরা তো সামান্য মাত্র। ঘটনার কোপে কুপিত হয়ে এধার ওধার করি। আর যিনি ঘটাচ্ছেন, তিনি তো হাসছেন। এদিকে নিজের প্রেম প্রকাশ করতে না পারা এক প্রেমিকা, নিজের প্রেমিক কে নিয়ে জীবনের সব থেকে ভালো ক্ষণ কাটাচ্ছে। বড় ঠাম্মু গান গেয়ে গেয়ে নিজের জিনিসের বড়াই করে জিনিস বেচছেন। পরেশ আর মহাদেব গরম গরম কচুরি আর জিলাপি হাতে নিয়েছে সবে। গয়লানীর মাখন শেষের মুখে। কাশী এই ভিড়ের সময়ে চোখে দেখতে পাচ্ছে না এতো ব্যস্ত সে। আর ইসমাইল এর ছেলে ,রহিম , কাশীর দোকানের পিছনের পুকুরে নেমে , নিজের লাঙ্গল খানা কে ধুচ্ছিল। লাঙ্গল ধুয়ে , নিজের হাত পা ধুয়ে, হাটে কেনাকাটি করে বাড়ি ফিরবে এই ছিল উদ্দেশ্য। সাধারণ ব্যাপার। এই রকম প্রায় দুইশো মানুষ এই হাটে, চতুর্মাত্রিক স্পেসে নানান দিকে, নানান কাজে ব্যস্ত। কেউ বিক্রী করছে, কেউ কিনছে। কেউ খেতে এসেছে শুধু তো কেউ খাবার জিনিস কিনতে এসেছে। কেউ বা শুধু দেখতে এসেছে। আরো কত জনা কত মতলবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা মহাশিব ই জানেন।  

ঠিক সেই সময়ে আরো ঘটনার বীজ রোপিত হচ্ছিল সবার অলক্ষ্যে। যেহেতু আজকে হাট বার, নানা তরিতরকারি পরে থাকে এদিকে ওদিকে। গ্রামের ষাঁড় দু একটা সেদিনে এই হাটে ঘুরে বেড়ায়। এই সব কাঁচা তরিতরকারির জন্য। তা লোকে দেয় ও খেতে। কিন্তু আজকে যে ষাঁড় টা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে আগে কেউ দেখেনি। কিন্তু এই ব্যস্ততার সময়ে, সেই নিয়ে আলোচনা করার মতন অবকাশ কারর ছিল না। ভুল টা করল . পাড়ার নজরুল। ও ঠিক কাশীর দোকানের সামনে বসেছিল বিরাট টোঙ্গা টা নিয়ে। কাশীর ওখানে স্থায়ী দোকান। দোকান ঘর টা পাকা আর সামনে চালা টা বিশাল। সেখানেই পাতা থাকে টেবিল আর বেঞ্চি গুলো, যেখানে সবাই বসে খায়। সেই চালা ঘরের ঠিক সামনে বাম দিক ঘেঁষে, পালং শাক, লাউ শাক, লাউ, বেগুন সব কিছু নিয়েই নজরুল বসে। বিক্রী হয়ে যাওয়া সব্জির , অবাঞ্ছিত ডাল পালা , পাতা পরেছিল ওর পাশেই। রহিম উঠে গিয়ে কিছু টা পাতা, একটা ভেঙ্গে যাওয়া লাউ এর অবশিষ্টাংশ ষাঁড় টির সামনে রাখতেই , ঘটনা টা ঘটল। ষাঁড় টি, কিছু না ভেবেই, সামনে অতো গুলো খাদ্য দ্রব্য পেয়ে একটু উত্তেজিত হয়েই, মুখে একটা আওয়াজ করে মাথাটা নীচে করেছিল। নজরুল তাতে ভয় পেয়ে গিয়ে কিছু টা পিছিয়ে আসতেই, একটা জিনিসে পা টা চাপালো বেশ জোরেই। সেটা ছিল একটা বেলচার উপরে রাখা কিছু টা আগুন। কাশীর উনোন বেশ তেতে গেছিল। কচুরি খরিয়ে গিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছিল। সেই জন্য সে, কিছু গনগনে কয়লা, উনুন থেকে বের করে , লোহার বেলচার উপরে রেখে জল দিয়ে দিয়েছিল। আর বেলচা খানা রাখা ছিল রাস্তা থেকে ফুট চারেক দূরে নজরুলের কিছু টা পিছনে। কিন্তু ষাঁড়ের গুতিয়ে আসার ভঙ্গিমা তে, নজরুল এতই ভয় পেয়েছিল যে , একেবারে বাপ বলে সরে এসে বেলচার হাতলে পা দিল বেশ জোরে। ব্যস , বেলচার আগুন, একেবারে আকাশে উঠে পড়ল ষাঁড়ের গায়ে।

না, কিছু হয়ত হয় নি, কিন্তু স্তিমিত কয়লার আগুনেও বেশ তাপ থাকে। গায়ে মাথায় সেই কয়লা উপর থেকে পড়তেই, ষাঁড় টি ক্ষেপে গেল। দুবার পরিত্রাহী ডাক দিয়ে, মাথা নিচু করে সামনের দিকে দৌড়ানোর, ভঙ্গিমা তেই বোঝা গেল যে এবারে যাকে সামনে পাবে তাকেই ও গুঁতবে। সামনে বসে ছিল, পিছন করে, মহাদেব আর পরেশ। পাশাপাশি দুজনে কচুরি খাচ্ছিল আর গল্প করছিল। দৃশ্য টা সবাই দেখলেও, কি হতে পারে, আন্দাজ করতে সবাই পারে নি। একজন দেখছিল পুরো ঘটনা টা, লালির হাতে লেগে থাকা মাখন চাটতে চাটতে। দ্বিতীয় জন নজরুল। সে চেচিয়েও উঠল,

-      সরে যাও ও ও ও!!!!!! 

আর একজন দেখছিল, পুকুরের ঘাট থেকে উঠে আসতে আসতে। রহিম। জলে ভেজা ফরসা পেশীবহুল দেহ খানা গামছা দিয়ে টেনে টেনে মুছতে মুছতে উঠে আসছিল ও।ঘাটে ওঠার মুখেই দেখল, কিছু টা দূরে ষাঁড় টা, বাগিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে সব কিছু উপড়ে ফেলার। চোখ দুটো স্বাভাবিক নয় একদম ই। মারাত্মক ভয় আর ক্রোধে, দুবার সামনের একটা পা ঠুকেই , পরেশ আর মহাদেবের দিকে দৌড়তে শুরু করল শিং বাগিয়ে। এদিকে বেচারী পরেশ আর মহাদেব খাওয়ায় মগ্ন।

এদিকে পরের গ্রাসের মাখন টা মুখ নিচু করে, মাটির সরা থেকে নিয়ে, হীরার মখে তুলতে গিয়ে অবাক হয়ে লালি দেখল, হীরা নেই সামনে। ততক্ষনে রহিম ঘাটের উপরের লাঙ্গল খানা ফেলে তীব্র গতি তে পৌঁছে গেছে ষাঁড়ের সামনে। আর হীরা কাশীর চালা থেকে কিছু টা দূরে। হয়ত কেউ বুঝতেও পারল না, কিন্তু পরেশ বা মহাদেব আহত হবার আগেই কি করে যেন, সহসা থেমে গেল ষাঁড় টা। আর প্রচন্ড গতিতে ছেঁচড়ে গিয়ে ,রহিমের লাঙ্গল সুদ্দু নিয়ে পড়ল পুকুরের জলে, যেখানে রহিম হাত মুখ ধুচ্ছিল। আর আমি দেখলাম, রহিম বিশাল চেহারা নিয়ে ষাঁড়ের সামনে গতিপথ আটকে দাঁড়াল। আর ষাঁড় টি ঠিক সামনে আসতেই , হাল্কা সরে গিয়ে নিজের বাম হাত দিয়ে , ষাঁড়ের শিং টা ধরে হালকা টান দিল। আর তাতেই ষাঁড় বাবাজির মাথা খানা আটকে, পিছনের শরীর টা সামনে এগিয়ে ছেঁচড়াতে শুরু করল সামনের দিকে গতিজাড্যের নিয়মানুসারে। অতো বড় চেহারার ষাঁড়, ছেঁচড়ে যাবার সময়ে, কাশীর দোকানের আটচালাটার একটা মোটা বাঁশের থাম, যেটা পিলারের মতন ধরে রেখেছিল পুরো চালা টা কে, সেটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। আর সাথে সাথে চালাঘর টা এক দিকে মড়মড় করে নুইয়ে পরতে শুরু করল। ভিতরের বড় কাঁড়ি গুলো অল্প অল্প করে ভাঙ্গার আওয়াজ পেল আশে পাশের সকলেই। সর্বনাশ, ওই চালার নীচে অন্তত জনা সাতেক লোক আর বিশাল উনুন জ্বলছে। উনুনের উপরে বিশাল কড়া তে তেল ফুটছে।  বাঁশ, বাখারী, মোটা মোটা কাঁড়ি, পুরু খরের আস্তরণ সমেত ওই চালা নীচে পরলে একেবারে আগুন লেগে বিশাল বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ওই গরম তেল ছিটকে গিয়ে, ভিতরের সব কটা মানুষের একেবারে জীবন্ত অনলসমাধি ঘটবে। সেটা না হলেও ওই চালা ভেঙ্গে পরলে মারাত্মক জখম বা আহত হবার প্রভুত সম্ভাবনা।  

ততক্ষনে হীরা প্রায় বিদ্যুতের মতন এসে, নুইয়ে পরা চালাঘর টা ধরে নিল নিজের হাতে। আর সেটা ভেঙ্গে পরতে পরতে ও হীরার হাতের উপরে আটকে রইল আগের মতন। কিন্তু একটু নুইয়ে পরল কারন হীরা অতো লম্বা না। ততক্ষনে, রহিম ও ছুটে এসেছে। মহাদেব আর পরেশ দুজনাই খাবার ফেলে উঠে এসে হীরার সাথে হাত লাগিয়েছে। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। রহিম একটা বাঁশ নিয়ে এসে ঠেকা দিতেই পরিস্থিতি তে আপাত-স্থায়ীত্ব এল। সবাই একে অপর কে দেখছে। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই কতগুলো বিপদ একসাথে ঘটতে চলেছিল। মহাদেব হীরা কে দেখছে বারংবার। ছেলের কোথাও লেগেছে কিনা। ততক্ষনে, সবাই ছুটে এসেছে আশ পাশ থেকে। আরো গোটা চারেক বাঁশ এনে ঠেকা দিল রহিম নজরুল আরো দুই একজন মিলে। গোলেমালে কেউ ভাবলই না, একটা আঠেরো বছরের ছেলের পক্ষে দশ মন ওজনের চালা ধরে রাখা অসম্ভব ছিল।

এমন এমন ঘটনা ঘটে যার কোন বিস্বাসযোগ্যতা থাকে না। আজকের ঘটনা টা তেমন ই একটা ঘটনা ছিল। যাদের মনে দাগ কাটল তাদের কথা কেউ ই বিশ্বাস করবে না। কারন যারা এই বিশ্বাসে নেতৃত্ব দেবে তারা কেউ ই ব্যাপার টা বোঝে নি। কিন্তু আমি বুঝেছি। কিছু তো চলছে এই গ্রামের ভিতরে। হয় কোন বিশাল ষড়যন্ত্র, না হলে বাঘমুড়োর অন্তিম সময় উপস্থিত। আমি যে ইঙ্গিত পাচ্ছি তার আসার। গত দুটো শিকার বাঘমুড়ো করতে পারে নি। কেউ না কেউ তো রক্ষা করছেন গ্রামের মানুষ গুলো কে।গ্রামের মানুষ গুলো ও বুঝতে পারছে, একটা হালচাল চলছে, এই শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোর জীবনে। কিন্তু আমি তো কিছু করতে পারব না। লোকে ফালতু বলে, যে সময় মহাশক্তিশালী। কোন শক্তি ই যে আমার নেই, দেখে যাওয়া ছাড়া। সময়ের অভিজ্ঞতা অনেক হতে পারে কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা স্বরূপ কে কাজে লাগাতে পারে না। আমার দেখে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।  
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাঘমুড়োর আতঙ্ক - শুরু- পেইজ ৩ থেকে- পর্ব ৪- পেইজ ৭ - by nandanadasnandana - 14-06-2022, 07:21 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)