14-06-2022, 06:55 PM
বাঁধ ভেঙেছে
আজও বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। মিলি আবার রাগ করবে! মাঝে মাঝে মিলিকে খুব ভয় লাগে পাপনের। ঠিক মিলিকে না... মিলির মুখটাকে! মিঠি হবার পর থেকেই যখন তখন মুখ ভার থাকে মিলির। সামান্য কারণেই রেগে যায়, আর তখন কি যে বলছে, কেন বলছে, কিচ্ছু ঠিক থাকে না ওর। বিশেষ করে ওর অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেই মিলি খুব রেগে যায়। নিজের মনেই গজগজ করে বলতে থাকে "সব দোষ অফিসের, তাই না? নিজেরই ফিরতে ইচ্ছে করে না। অফিসে তো মধু আছে! বুঝিনা! আমি মিঠি হবার পর মোটা হয়ে গেছি, তুমি ফিরেও তাকাও না। সব বুঝি..."। এই পাগলের প্রলাপ এড়ানোর জন্যই চেষ্টা করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফেরার। সত্যিই তো, মেয়েটা হবার পর থেকে মিলির যা যাচ্ছে! পাপনের মা যদি এসে থাকতে পারতেন... কিন্তু মায়ের পা ভাঙল ঠিক এইসময়। মিলির তো মা কবেই নেই। একজন আয়াদিদি আছেন ঠিকই, তাও চাপ পড়ে যায় বড্ড। আর, সেজন্যই হয়ত মিলি এতটা রেগে থাকে সবসময়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, মিঠি না হলেই বোধহয় ভাল হত! আবার মিঠির মুখটা মনে পড়লেই ভিতরটা এক্কেবারে মায়ায় টইটুম্বুর হয়ে যায়।
আবার মাঝে মাঝে মিলির উপরেও রাগ হয়। মনে হয়, "ঠিক আছে, দেখিয়ে দিই না ওকে, একটা কারো সাথে প্রেম করে। বুঝবে তখন, কত ধানে, কত চাল!"
কিন্তু, তারপরেই, মিলির মুখটা মনে পড়ে যায়। মিলির হাসিহাসি মুখ। প্রেয়সী মুখ। আদুরে মুখ। তখনও মায়া হয় বড্ড।
চিনার পার্কের মোড়ে অটো থেকে নেমে ভাড়াটা দেবার পরেই চোখ আটকে গেল বিশাল হোর্ডিং টার দিকে। একজন মায়ের ছবি। ক্লান্ত মুখ। দেখেই মনে হচ্ছে সদ্য মা। হাসপাতালের পোষাক পরা। আর সেখানে লেখা 'পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান ইজ নর্ম্যাল অ্যান্ড কিওরেবেল। কন্ট্যাক্ট করুন আমাদের..."
'পোস্ট পার্টাম?' মানে? পোস্টমর্টেম শুনেছে পাপন... কিন্তু এটা কি?
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে মানে খুঁজতে থাকে।
হঠাৎ এক্কেবারে কানের কাছে "ও দাদা, ও দাদা... আরে বাবা, কানে কালা নাকি! কখন থেকে ডাকছি!" কর্কশ গলায় শুনে ফিরে তাকায় ও।
যে অটোতে এসেছিল, সেই ড্রাইভার দাদা না? কিন্তু ও তো ভাড়া দিয়েছিল! তাহলে?
"উফ দাদা, আপনি না! ডেকেই যাচ্ছি! ডেকেই যাচ্ছি! "
"বলুন?" একটু তেড়িয়া হয়েই জবাব দেয় ও।
"আরে দাদা, রাস্তায় বেরোলে এত ভুলোমনের হলে হয়? কুড়িটাকা ভাড়া, দুশো টাকা দিয়ে দিয়েছেন। এর ওর থেকে খুচরো নিয়ে দেখি আপনি নেইইই... সেই কতটা হেঁটে এসে দেখি মোবাইল ঘাঁটছেন..." রাগ রাগ গলায় বলেন উনি।
থমকে যায় পাপন। তারপর বলে "দাদা, আমি তো ভাবতেই পারছি না আপনি এতটা এলেন... এইজন্য... থ্যাংকইউ দাদা! আমি মানে... ইয়ে... আপনি এলেন কেন? আমি তো বুঝতেও পারতাম না বাড়ি যাবার আগে..."
রাগী রাগী দাদা এবার হাসেন একটু। বলেন "ওমা, এটুকু না করলে হয়। ধর্মে সইত?" বলেই চলে যান উনি।
সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাপন।
তারপর আকাশের দিকে তাকায়।
এত্তবড় চাঁদ উঠেছে।
আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। সেই বুদ্ধদেব, যিনি ভালবাসার কথা বলেছিলেন.. সেই বুদ্ধদেব, যিনি বলেছেন 'ধর্মং শরনং গচ্ছামি।'
ধর্ম কি? যা ধারণ করে। যেমন এই অটোদাদার ধর্ম কাউকে না ঠকানো।
নিজের মনে একটু হাসে পাপন।
মিলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে শিগগিরি। এই ডিপ্রেশান থেকে বের করতে হবেই ওকে। সেটাই ওর ধর্ম। ভালবাসার ধর্ম।
তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল পাপন...
মিলি আর মিঠি অপেক্ষা করে আছে।
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে...
আজও বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। মিলি আবার রাগ করবে! মাঝে মাঝে মিলিকে খুব ভয় লাগে পাপনের। ঠিক মিলিকে না... মিলির মুখটাকে! মিঠি হবার পর থেকেই যখন তখন মুখ ভার থাকে মিলির। সামান্য কারণেই রেগে যায়, আর তখন কি যে বলছে, কেন বলছে, কিচ্ছু ঠিক থাকে না ওর। বিশেষ করে ওর অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেই মিলি খুব রেগে যায়। নিজের মনেই গজগজ করে বলতে থাকে "সব দোষ অফিসের, তাই না? নিজেরই ফিরতে ইচ্ছে করে না। অফিসে তো মধু আছে! বুঝিনা! আমি মিঠি হবার পর মোটা হয়ে গেছি, তুমি ফিরেও তাকাও না। সব বুঝি..."। এই পাগলের প্রলাপ এড়ানোর জন্যই চেষ্টা করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফেরার। সত্যিই তো, মেয়েটা হবার পর থেকে মিলির যা যাচ্ছে! পাপনের মা যদি এসে থাকতে পারতেন... কিন্তু মায়ের পা ভাঙল ঠিক এইসময়। মিলির তো মা কবেই নেই। একজন আয়াদিদি আছেন ঠিকই, তাও চাপ পড়ে যায় বড্ড। আর, সেজন্যই হয়ত মিলি এতটা রেগে থাকে সবসময়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, মিঠি না হলেই বোধহয় ভাল হত! আবার মিঠির মুখটা মনে পড়লেই ভিতরটা এক্কেবারে মায়ায় টইটুম্বুর হয়ে যায়।
আবার মাঝে মাঝে মিলির উপরেও রাগ হয়। মনে হয়, "ঠিক আছে, দেখিয়ে দিই না ওকে, একটা কারো সাথে প্রেম করে। বুঝবে তখন, কত ধানে, কত চাল!"
কিন্তু, তারপরেই, মিলির মুখটা মনে পড়ে যায়। মিলির হাসিহাসি মুখ। প্রেয়সী মুখ। আদুরে মুখ। তখনও মায়া হয় বড্ড।
চিনার পার্কের মোড়ে অটো থেকে নেমে ভাড়াটা দেবার পরেই চোখ আটকে গেল বিশাল হোর্ডিং টার দিকে। একজন মায়ের ছবি। ক্লান্ত মুখ। দেখেই মনে হচ্ছে সদ্য মা। হাসপাতালের পোষাক পরা। আর সেখানে লেখা 'পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান ইজ নর্ম্যাল অ্যান্ড কিওরেবেল। কন্ট্যাক্ট করুন আমাদের..."
'পোস্ট পার্টাম?' মানে? পোস্টমর্টেম শুনেছে পাপন... কিন্তু এটা কি?
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে মানে খুঁজতে থাকে।
হঠাৎ এক্কেবারে কানের কাছে "ও দাদা, ও দাদা... আরে বাবা, কানে কালা নাকি! কখন থেকে ডাকছি!" কর্কশ গলায় শুনে ফিরে তাকায় ও।
যে অটোতে এসেছিল, সেই ড্রাইভার দাদা না? কিন্তু ও তো ভাড়া দিয়েছিল! তাহলে?
"উফ দাদা, আপনি না! ডেকেই যাচ্ছি! ডেকেই যাচ্ছি! "
"বলুন?" একটু তেড়িয়া হয়েই জবাব দেয় ও।
"আরে দাদা, রাস্তায় বেরোলে এত ভুলোমনের হলে হয়? কুড়িটাকা ভাড়া, দুশো টাকা দিয়ে দিয়েছেন। এর ওর থেকে খুচরো নিয়ে দেখি আপনি নেইইই... সেই কতটা হেঁটে এসে দেখি মোবাইল ঘাঁটছেন..." রাগ রাগ গলায় বলেন উনি।
থমকে যায় পাপন। তারপর বলে "দাদা, আমি তো ভাবতেই পারছি না আপনি এতটা এলেন... এইজন্য... থ্যাংকইউ দাদা! আমি মানে... ইয়ে... আপনি এলেন কেন? আমি তো বুঝতেও পারতাম না বাড়ি যাবার আগে..."
রাগী রাগী দাদা এবার হাসেন একটু। বলেন "ওমা, এটুকু না করলে হয়। ধর্মে সইত?" বলেই চলে যান উনি।
সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাপন।
তারপর আকাশের দিকে তাকায়।
এত্তবড় চাঁদ উঠেছে।
আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। সেই বুদ্ধদেব, যিনি ভালবাসার কথা বলেছিলেন.. সেই বুদ্ধদেব, যিনি বলেছেন 'ধর্মং শরনং গচ্ছামি।'
ধর্ম কি? যা ধারণ করে। যেমন এই অটোদাদার ধর্ম কাউকে না ঠকানো।
নিজের মনে একটু হাসে পাপন।
মিলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে শিগগিরি। এই ডিপ্রেশান থেকে বের করতে হবেই ওকে। সেটাই ওর ধর্ম। ভালবাসার ধর্ম।
তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল পাপন...
মিলি আর মিঠি অপেক্ষা করে আছে।
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে...